খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৬ বৈশাখ, ১৪৩২

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:১২ অপরাহ্ণ
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ

গণতন্ত্রের অন্যতম মূল ভিত্তি হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা, এবং এই স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান বাহক হলো গণমাধ্যম। একটি সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত সমাজ গঠনের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। গণমাধ্যম কেবলমাত্র তথ্য ও সংবাদ প্রচারের মাধ্যম নয়, বরং এটি জনমতের প্রতিফলন ঘটায়, সরকার ও শাসকগোষ্ঠীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে এবং নাগরিকদের সচেতন করে তোলে। গণতান্ত্রিক সমাজে নাগরিকদের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। তবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যদি হুমকির সম্মুখীন হয়, তাহলে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কেবল তথ্য সরবরাহের মাধ্যম নয়, বরং এটি একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য। যেখানে গণমাধ্যম স্বাধীন, সেখানে জনগণ সঠিক তথ্য পায় এবং ক্ষমতাসীনরা জনতার জবাবদিহিতার আওতায় থাকে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রুদ্ধ হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে, সরকারি কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা বজায় রাখে এবং দুর্নীতি, অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সাহায্য করে। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশেই গণমাধ্যম নানা বিধিনিষেধের সম্মুখীন হচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলতে বোঝায়, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইন মিডিয়া এবং অন্যান্য সংবাদমাধ্যম কোনো প্রকার সরকারি, রাজনৈতিক বা কর্পোরেট চাপের বাইরে থেকে সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচার করতে পারবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল দিকগুলো হলো : সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে তথ্য সংগ্রহ ও প্রচারের অধিকার। কোনো ধরনের সেন্সরশিপ বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে মত প্রকাশের সুযোগ।গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক প্রভাবের অনুপস্থিতি। সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যত বেশি নিশ্চিত করা যায়, তত বেশি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণমাধ্যমকে “চতুর্থ স্তম্ভ” (Fourth Estate) বলা হয়, কারণ এটি নির্বাহী, আইনসভা ও বিচার বিভাগের পর রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করে। গণমাধ্যম সমাজে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা নিম্নে আলোচনা করা হলো : গণমাধ্যম জনগণের কাছে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তথ্য পৌঁছে দেয়, যার মাধ্যমে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। নির্বাচন, নীতিনির্ধারণী প্রসঙ্গ বা সামাজিক আন্দোলনে জনগণকে সচেতন করে তুলতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গণমাধ্যম বিভিন্ন সরকারি নীতির ভালো-মন্দ বিশ্লেষণ করে এবং জনগণের মতামত তুলে ধরে। এটি সরকারের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে সাহায্য করে, যাতে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা যায়। গণমাধ্যম দুর্নীতি উন্মোচন, অবিচার ও অনিয়মের প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাংবাদিকতার কারণে অনেক সময় বড় বড় কেলেঙ্কারি উন্মোচিত হয়। গণতান্ত্রিক সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিন্নমত থাকতেই পারে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকলে এই মতামতগুলো উন্মুক্তভাবে প্রকাশিত হয়, যা সমাজে বহুমাত্রিক চিন্তার বিকাশ ঘটায়। যখন কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর অধিকার লঙ্ঘিত হয় বা রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের শিকার হয়, তখন গণমাধ্যম সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পারে। এটি নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার চ্যালেঞ্জ : গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই এটি নানা ধরনের হুমকির সম্মুখীন। বর্তমান বিশ্বে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিভিন্ন বাধা বিদ্যমান, যা গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগজনক। অনেক দেশে সরকার গণমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বাধা সৃষ্টি করে। কিছু দেশে সরকার-বিরোধী সংবাদ প্রকাশ করলেই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা হয় বা সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা হয়। গণমাধ্যমের অনেক প্রতিষ্ঠান কর্পোরেট বা রাজনৈতিক দলের মালিকানাধীন হওয়ায় সংবাদ পরিবেশনে নিরপেক্ষতা বিঘ্নিত হয়। অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে অনেক সময় সত্য গোপন করা হয় বা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারের কারণে ভুয়া সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকরা হত্যার শিকার হচ্ছেন, কারাবন্দি হচ্ছেন, কিংবা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই হুমকি ও নির্যাতন স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করে। ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। অনেক দেশে ইন্টারনেটের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ বাড়ছে, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। অনেক দেশে সরকার গণমাধ্যমের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কিছু দেশে কঠোর সেন্সরশিপের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়।রাজনৈতিক দল বা সরকারের মদতপুষ্ট মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের পরিবর্তে পক্ষপাতমূলক সংবাদ প্রচার করে, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ব্যাহত করে। অনেক সময় বড় কর্পোরেট সংস্থা গণমাধ্যমকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করে, যার ফলে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকরা হামলা, গ্রেফতার, হত্যা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বড় বাধা। ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া তথ্য বা ‘ফেক নিউজ’ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা প্রকৃত সাংবাদিকতার জন্য হুমকি স্বরূপ।

 গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। নিচে কিছু কার্যকর উপায় আলোচনা করা হলো : একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধানে অবশ্যই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিধান থাকতে হবে, যাতে সাংবাদিকরা ভয় ও প্রতিকূলতার বাইরে থেকে কাজ করতে পারেন। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত আইন প্রণয়ন এবং এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জরুরি। সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে অন্যায়মূলক মামলা বা হয়রানি বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। গণমাধ্যমের উপর রাজনৈতিক বা কর্পোরেট প্রভাব কমানোর জন্য স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠন করা উচিত, যা সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে হবে। সাংবাদিক নির্যাতন বা হত্যার ঘটনাগুলোর দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। গণমাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য যাচাই করে গ্রহণ করতে পারেন এবং ভুয়া সংবাদ থেকে দূরে থাকতে পারেন।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলতে বোঝায়, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইন মিডিয়া এবং অন্যান্য সংবাদমাধ্যম কোনো প্রকার সরকারি, রাজনৈতিক বা কর্পোরেট হস্তক্ষেপ ছাড়াই তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রচার করতে পারবে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো- স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে : সরকার ও প্রশাসনের কর্মকাণ্ড জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত রাখে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে : নাগরিকদের মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। জনগণকে সঠিক তথ্য প্রদান করে : নির্বাচনের সময় বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন রাখে।  সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায় ক: একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন গণমাধ্যম সরকারকে দায়বদ্ধ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গণমাধ্যম যদি সত্য প্রকাশে স্বাধীন না হয়, তবে ক্ষমতার অপব্যবহার বৃদ্ধি পায়, জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হয় এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  একটি গণতান্ত্রিক সমাজে জনগণকে সঠিক তথ্য না দিলে তারা সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। গণমাধ্যম নির্বাচন, আইন, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে জনগণকে আপডেট রাখে। গণমাধ্যম জনগণের মত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে বিতর্ক ও আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করে, যা জনমতের দিকনির্দেশনা দেয়। গণমাধ্যম দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখে। অনেক সময় সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে দুর্নীতির চিত্র উন্মোচিত হয় এবং প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। গণমাধ্যম বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বৈষম্য, দমন-পীড়ন ইত্যাদি বিষয় জনসমক্ষে তুলে ধরে এবং এসবের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সহায়তা করে। গণমাধ্যম নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি, নীতি এবং কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করে। এটি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এবং ভোটারদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে— গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য নিরপেক্ষ আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হয়রানি ও দমন-পীড়ন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একটি স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠন করা উচিত, যা সংবাদমাধ্যমের নীতিমালা নির্ধারণ করবে এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে। একই ব্যক্তি বা সংস্থার একাধিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকানা থাকা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। মালিকানার বৈচিত্র্য নিশ্চিত করা হলে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা নিশ্চিত হবে। গণমাধ্যমের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে তারা সঠিক তথ্য যাচাই করে গ্রহণ করতে পারে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার হতে পারে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। এটি জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে, সরকারের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করে এবং স্বচ্ছতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। তবে বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। সুতরাং, একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ গঠনের জন্য স্বাধীন গণমাধ্যম নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এজন্য সরকার, জনগণ, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকে এবং গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের অপরিহার্য উপাদান। এটি জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে, সরকারের কার্যক্রমের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করে এবং সুশাসনের ভিত্তি গড়ে তোলে। তবে বর্তমান বিশ্বে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। সুতরাং, একটি সুশৃঙ্খল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সরকার, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার নিশ্চিত হয় এবং গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়।

লেখক পরিচিতি  : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:২২ পূর্বাহ্ণ
ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, মিলন এবং নতুন করে বাঁচার প্রেরণা। এই দিনে সবাই চায় নিজেকে সাজিয়ে নিতে, নতুন কাপড় পরে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে। কিন্তু এমন অনেকের মধ্যেও থাকে এমন কেউ, যার জন্য একটি নতুন জামা শুধু পোশাক নয়, বরং স্বপ্ন, গর্ব, আত্মমর্যাদা এবং একটি আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। এই প্রবন্ধে আমরা এমন এক নতুন জামার কথা বলব, যে জামার শুধু দামী কাপড় বা ডিজাইনের গর্ব নেই, বরং রয়েছে আত্মার গভীরে জমে থাকা এক মানুষের স্বপ্নের গল্প।

শহরের এক কোণায় বাস করে ছোট্ট ছেলেটি রিয়াদ। বয়স প্রায় দশ। তার বাবা একজন দিনমজুর, মা গৃহিণী। সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যে কোনোভাবে দিন কাটে তাদের। বছরের প্রতিটি দিন কাটে সংগ্রামের মাঝে, কিন্তু ঈদ আসে স্বপ্নের আলো নিয়ে। ঈদে নতুন জামা পাবে, এই আশায় রিয়াদ এক মাস রোজা রাখে, নিজের মনকে শক্ত করে।

তবে এই জামা আসবে কি না, তা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, বাবার মুখে ভাঁজ আর চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। মা বারবার বলেন, “এবার হয়তো পুরনো জামাতেই ঈদ করতে হবে।” কিন্তু রিয়াদ বিশ্বাস করে—আল্লাহ যদি রোজা কবুল করেন, তাহলে একটা নতুন জামা হয়তো আসবেই।

এই জামার অপেক্ষা শুধু রিয়াদের নয়, এটি যেন তার মন-প্রাণের আকুতি। এই জামা তার জন্য স্বপ্নপূরণ, আত্মমর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্বের অনুভব।

আমরা অনেক সময় বুঝি না, একটি নতুন জামা একজন শিশুর জন্য কতটা অর্থবহ হতে পারে। ধনী পরিবারের শিশুর কাছে এটি হয়তো একটি চমকপ্রদ পোশাক, কিন্তু রিয়াদের কাছে এটি স্বপ্ন পূরণের মতো। সে ভাবে, ঈদের দিন সবার মতো তাকেও যদি নতুন জামায় দেখা যায়, তাহলে সে আর অবহেলিত হবে না, তার বন্ধুরা তাকে হাসবে না। তারও মুখে হাসি ফুটবে, তারও ছবি উঠবে মোবাইল ক্যামেরায়।

এই জামা তার আত্মবিশ্বাস, যেটা সে স্কুলে পড়ার সময় খুঁজে বেড়ায়, যখন ক্লাসের অন্য ছেলেরা নতুন জামা পরে আসে আর সে পড়ে থাকে একঘেয়ে মলিন কাপড়।

এখানে জামার একটি কল্পিত স্বর ও ভাষা কল্পনা করা যাক—যেখানে জামাটি যেন নিজের মনে নিজের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছে: “আমি কোনো বিলাসী দোকানের শেলফে ঝুলে থাকা দামি জামা নই। আমি সেই জামা, যাকে এক দরিদ্র বাবার কষ্টের টাকায় কিনে আনা হবে তার ছেলের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে।
আমি হয়তো রঙিন নই, হয়তো আমার ডিজাইনে জাঁকজমক নেই, কিন্তু আমি গর্বিত। কারণ আমি হব একটি শিশুর ঈদের স্বপ্ন পূরণের বাহক। আমি হব আত্মমর্যাদার প্রতীক, আমি হব ঈদের প্রাপ্তির প্রতিচ্ছবি।”

এই ভাবনার মধ্যেই ফুটে ওঠে জামার স্বপ্ন—সে চায়, তাকে কেউ ভালোবাসুক, পরিধান করুক, আর আনন্দ পাক।

রিয়াদের মা হয়তো নিজের জন্য কোনো কাপড় কিনবেন না, বাবা হয়তো একজোড়া চপ্পল না কিনে সেই টাকায় ছেলের জামা কিনে দেবেন। কারণ, সন্তানের হাসির চেয়ে বড় কিছু তাদের কাছে নেই। একটি নতুন জামার পেছনে লুকিয়ে থাকে একটি পরিবারের নীরব ত্যাগ, ভালোবাসা আর গোপন কান্না।

ঈদের নতুন জামা এই পরিবারগুলোর কাছে শুধু পোশাক নয়—এটা এক সম্মান, ভালোবাসা এবং আত্মতৃপ্তির চিহ্ন। অনেক সময় বাবা-মায়েরা নিজেদের প্রয়োজন বিসর্জন দিয়ে সন্তানের মুখে হাসি দেখতে চান। নতুন জামা যেন সেই আত্মত্যাগের স্বাক্ষর হয়ে উঠে।

ঈদের দিন আমরা যখন দেখি কেউ চকচকে কাপড় পরে বেরিয়েছে, আর কেউ পুরনো জামা পরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, তখন সামাজিক বৈষম্যের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নতুন জামার গুরুত্ব সেখানে দ্বিগুণ। এটি একধরনের সামাজিক মর্যাদা।

রিয়াদ হয়তো তার বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ভাবে—আমারও যদি এমন একটা জামা থাকত! শুধু ঈদের দিনটা নয়, পুরো জীবনজুড়ে সেই হাহাকার থেকে যায়। এই এক টুকরো জামাই তার স্বপ্নকে উঁচুতে নিয়ে যেতে পারে, আর না থাকলে আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়ে।

দরিদ্র শিশুদের জন্য ঈদে জামার প্রাপ্তি মানে কী? সমান মর্যাদা – অন্যদের মতো তাকেও দেখা হয় একজন ‘পূর্ণ’ শিশুর মতো।  আত্মবিশ্বাস – নতুন জামা পরে সে খুশি মনে বন্ধুদের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। পরিবারের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি – সে উপলব্ধি করে, তার মা-বাবা তাকে কত ভালোবাসে।

৪. ভবিষ্যতের স্বপ্ন – একজন শিশু জানে, সে যদি চেষ্টার মধ্যে থাকে, তার স্বপ্ন একদিন পূরণ হবেই।

ঈদের সকালে রিয়াদের ঘুম ভাঙে ভোরবেলা। মা হাসিমুখে এসে বলে—
“এই দেখ, তোমার নতুন জামা।”
রিয়াদ প্রথমে বিশ্বাস করতে পারে না। হাত বাড়িয়ে জামাটা নেয়, চোখে জল চলে আসে। “আমার?”
মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, “হ্যাঁ বাবা, তোমার।”
রিয়াদ তার ছোট জামাটিকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে, যেন এটিই তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

সেই জামা তখন আর শুধু সুতা ও রঙের মিশ্রণ নয়, সেটি তখন একটি ‘স্বপ্ন’। একটি সন্তুষ্টির প্রতীক, একটি ছোট শিশুর গর্বের নিশান।

আমরা যারা সমাজের ভাগ্যবান অংশ, তাদের উচিত এই বৈষম্য দূর করতে সচেষ্ট হওয়া। প্রতিবছর ঈদের আগে আমরা অনেকেই প্রচুর জামা কিনি, কিন্তু ভাবি না পাশের দরিদ্র শিশুটার কথা। যদি আমরা একটি নতুন জামা কাউকে দিতে পারি, তাহলে তার ঈদটা হয়ে উঠতে পারে জীবনের সেরা দিন।সামাজিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার—সবাই যদি চায়, তাহলে প্রত্যেক শিশুর ঈদে একটি নতুন জামা নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি দান নয়, এটি মানুষের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা।

“ঈদে একটি নতুন জামা যার স্বপ্ন” এই বাক্যটি শুধুমাত্র কোনো এক জামা বা একটি শিশুর গল্প নয়, এটি হাজারো রিয়াদের গল্প। এটি আমাদের সমাজে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য মানুষের জীবনবোধের চিত্র। একটি নতুন জামা কেবল দেহ ঢাকার উপকরণ নয়, এটি মানুষের সম্মান, আত্মবিশ্বাস এবং ভালোবাসার প্রতীক। আমরা যদি এই একটুকরো জামার ভেতর মানুষের আবেগ, স্বপ্ন ও আত্মত্যাগ দেখতে পারি, তাহলে সমাজে সত্যিকার পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। আসুন, এই ঈদে আমরা কেবল নিজেদের জন্য না, অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যও একটি নতুন জামার স্বপ্ন বুনি।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:৩৮ অপরাহ্ণ
চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভা (১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৫) নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি (২০২৫-২০২৮) ঘোষণা করা হয়েছে। সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (সর্বশেষ সংশোধন ২০১৩) ও সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ (সর্বশেষ সংশোধন ২০২০) অনুযায়ী নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন (পরিদর্শক, জেলা সমবায় কার্যালয়, চাঁদপুর) কোন পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছয় সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষণা করেন। নবনির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি- মোঃ ইকবাল আজম (প্রতিনিধি, দি চাঁদপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সহ-সভাপতি- মোঃ আফজাল হোসেন খান (প্রতিনিধি, মিলেনিয়াম বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সম্পাদক- দুলাল চন্দ্র দাস (প্রতিনিধি, বাগড়া শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- মোঃ আক্কাস ফরাজী (প্রতিনিধি, রূপসী পল্লী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- খন্দকার ফখরুল আলম (প্রতিনিধি, আশার আলো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সদস্য- মোঃ খোরশেদ আলম (প্রতিনিধি, খাজুরিয়া বাজার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ)।
জেলার বিভিন্ন সমবায় সমিতির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ও নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন এর সভাপতিত্বে নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের কৃতি সন্তান, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সমবায়ী ও বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন শেখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন জেলা সমবায় ইউনিয়ন, জেলার সমবায় সমিতি ও সমবায়ীদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব থাকলেও চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নে দীর্ঘদিন নির্বাচিত কমিটি ছিল না, যার কারণে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। আমরা বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন থেকে চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নকে কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। সমবায় বিভাগ এতে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির গঠন করে, যার ফলশ্রুতিতে আজকে আমরা একটি নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে পেরেছি। এজন্য তিনি সমবায় বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান পাশাপাশি নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানান। সভায় তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। সকলের সহযোগিতায় তা বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সভায় অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সভাপতি মুরাদ হোসেন খান, জুন হাউজিং কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর প্রতিনিধি এ ওয়াই এম জাকারিয়া, ওয়ারলেস বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি মোঃ জিয়াউদ্দিন, ইসলামীয়া সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি নাজমুল হুদা প্রমূখ।
উল্লেখ্য প্রতি ৩ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও ২০১২ সালের পর, দীর্ঘ ১৩ বছর পর এই ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হলো।

আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ
আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আগামী ২ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সম্প্রতি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, সংসদ না থাকায় এবার সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে না। অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ কারণে ২ জুন বাজেট ঘোষণার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণত আগের অর্থবছরগুলোতে বৃহস্পতিবার বাজেট দেওয়া হতো, এবার সোমবার ঘোষণা করা হবে। বাজেট ঘোষণার পর আগের রীতি অনুযায়ী অর্থ উপদেষ্টা বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।

সূত্রটি জানিয়েছে, সাধারণত প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় বড় রাখা হয়। তবে এবার বাজেট ঘাটতি কমিয়ে বাজেট ছোট কারার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

বাজেটের আকার কমানো হলেও সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিকীকরণ সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ ধরতে পারে। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। চলতি অর্থবছরেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। যদিও গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।