খুঁজুন
                               
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ২ শ্রাবণ, ১৪৩২

নানা সংকটে চাঁদপুরের ইলিশ এখন বিলাসবহুল খাবার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫, ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ
নানা সংকটে চাঁদপুরের ইলিশ এখন বিলাসবহুল খাবার

ইলিশ—বাংলাদেশের জাতীয় মাছ, যার সঙ্গে বাঙালির আবেগ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর ইলিশের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁদপুর, যেখানে পদ্মা-মেঘনার মোহনায় জন্ম নেয় রুপালি জলের রানী।  চাঁদপুরের মানুষের জীবনে ইলিশ শুধু মাছ নয়, এটি জীবিকা, গর্ব, ঐতিহ্য এবং উৎসবের নাম।  কিন্তু আজ সেই ইলিশই হয়ে উঠছে দুষ্প্রাপ্য, সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।  দাম, প্রাপ্তি এবং নিয়ন্ত্রণে নানা সংকটের কারণে চাঁদপুরে ইলিশ এখন একরকম বিলাসবহুল খাবারে পরিণত হয়েছে। এই নিবন্ধে আমরা ইলিশ সংকটের পেছনের কারণ, প্রভাব এবং সম্ভাব্য সমাধান বিশ্লেষণ করব।
ইলিশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও চাঁদপুরের গুরুত্ব ।অনেক যা অনেক আগে থেকে। ইলিশ বাংলাদেশের নদ-নদীসমূহে জন্মানো একটি স্বাদু পানির মাছ হলেও এটি সমুদ্রেও বিচরণ করে। প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে হাজার হাজার ইলিশ প্রজননের জন্য নদীতে ফিরে আসে।  চাঁদপুর জেলা পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনার অবস্থান হওয়ায় এখানেই সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। “চাঁদপুরের ইলিশ” নামেই সারাদেশে এই মাছ সুপরিচিত। ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে চাঁদপুরের হাট-বাজার ছিল ইলিশে সয়লাব।  দাম ছিল তুলনামূলক কম।  সাধারণ নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষও সহজে কিনে খেতে পারত।  কিন্তু এখন সে চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে।
ইলিশ ধরা মৌসুমভিত্তিক এবং বয়সভিত্তিক হওয়া উচিত হলেও অনেক সময় মাছের প্রজনন মৌসুমেও মাছ ধরা হয়। জাটকা নিধন, অর্থাৎ ছোট ইলিশ ধরা এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এতে ভবিষ্যতের ইলিশ উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ে। পদ্মা ও মেঘনাসহ দেশের বড় নদীগুলোর পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। শিল্পকারখানা থেকে নিঃসৃত বর্জ্য, কীটনাশকের ব্যবহার এবং নদীর তীরে অপরিকল্পিত স্থাপনার কারণে ইলিশের প্রজননের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে অত্যাধুনিক ফাইন জাল ব্যবহার করা হয় যা ছোট মাছসহ সব ধরণের মাছ ধ্বংস করে দেয়। বড় নৌকার মালিকরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরে ফেলেন, ফলে নদীতে মাছের প্রবেশ কমে যায়। চাঁদপুরের বহু জেলে পরিবার সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে ৬৫ দিনের মাছ ধরার মৌসুমে বিরত থাকেন। কিন্তু এই সময় তারা পর্যাপ্ত সহযোগিতা পান না। ফলে তাদের জীবিকা সংকটে পড়ে এবং অনেক সময় নিরুপায় হয়ে নিয়ম ভেঙে মাছ ধরতে বাধ্য হন। বাজারে ইলিশের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সিন্ডিকেটরা দাম বাড়িয়ে দেয়। একটি কিলো ইলিশের দাম অনেক সময় দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষের কেনা সম্ভব হয় না।
ইলিশের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছের বাজারে অন্য মাছের দামও বেড়ে যায়।  ফলে পুরো বাজার ব্যবস্থায় চাপ পড়ে এবং ভোক্তারা ভোগান্তির শিকার হন। ইলিশ বাঙালি সংস্কৃতির অংশ।  পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপূজা, ঈদ কিংবা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ইলিশের ব্যবহার ঐতিহ্যবাহী। ইলিশের অভাবে এই ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। যেসব পরিবার ইলিশ আহরণের ওপর নির্ভরশীল, তারা মাছ না পেয়ে ভিন্ন পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন।  কেউ কেউ শহরে এসে রিকশা চালান, আবার কেউ দিনমজুরের কাজ করেন।  চাঁদপুরের পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ হলো “ইলিশ ভোজন”।  দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে মোলহেডে এসে ইলিশ খেতেন।  এখন ইলিশের দাম ও প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
চাঁদপুরবাসী এখন কষ্ট পায় যখন শুনে, চাঁদপুরের মানুষই ইলিশ খেতে পায় না! স্থানীয় একজন গৃহিণী জানান, আগে প্রতি সপ্তাহে একবার ইলিশ রান্না করতাম, এখন ঈদ ছাড়া খাওয়াই হয় না।
একজন প্রবীণ জেলে বলেন, জীবনটা কাটাইলাম নদীতে, এখন নদীই আমাদের কিছু দেয় না। খালি পুলিশ-নিষেধ আর হুমকি। এমন অনেক গল্প রয়েছে যা বোঝায় চাঁদপুরবাসী কিভাবে নিজেদের ঐতিহ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষ করে জাটকা রক্ষা এবং প্রজনন মৌসুমে নজরদারি বাড়াতে হবে। মাছ ধরা নিষিদ্ধ মৌসুমে জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে—যেমন ক্ষুদ্র ব্যবসা, কৃষি, কিংবা নৌ-ভ্রমণ খাত। এতে তাদের জীবিকা সুরক্ষিত থাকবে। নদী দূষণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নদীর তীরে অবৈধ দখল ও শিল্প বর্জ্য নির্গমন বন্ধ করতে হবে। ইলিশের অভয়াশ্রম সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করতে হবে। ইলিশ বাজারে সিন্ডিকেট ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে। অনলাইন বাজার ব্যবস্থা উন্নত করলে মধ্যস্বত্বভোগী কমে যাবে।
চাঁদপুর—বাংলাদেশের ইলিশরাজ্য হিসেবে সুপরিচিত। এখানকার পদ্মা-মেঘনার মোহনা শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, এক বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রতি বছর লাখো কেজি ইলিশ আহরণ হয় এখান থেকে, যার একটি বড় অংশ চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাঁদপুরে ইলিশের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা সংকট, অসঙ্গতি ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মাছঘাট, পুরানবাজার, রাজরাজেশ্বর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও দক্ষিণসহ জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ইলিশ বাজার গড়ে উঠেছে। এখানে মাছ বিক্রেতা, আড়তদার, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সমন্বয়ে একটি বিশাল বাণিজ্যিক চক্র গড়ে উঠেছে। মাছ ধরা থেকে বিক্রি পর্যন্ত এই বাজার ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত রয়েছে হাজারো মানুষ।
তবে দুঃখজনকভাবে, বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও সুশাসনের অভাব প্রকট। প্রতি বছর ইলিশের মৌসুমে জেলে, আড়তদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের মধ্যে এক অস্বাভাবিক শক্তির ভারসাম্য তৈরি হয়, যেখানে প্রকৃত জেলেরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হন। তারা ন্যায্য দাম পান না, বরং আড়তদারদের খামখেয়ালিতে নির্ভরশীল থাকেন।
ইলিশের দাম নির্ধারণে সিন্ডিকেট ভূমিকা রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে। সকালেই নির্ধারিত হয় দিনের দাম, যা ক্রেতা বা জেলের হাতে প্রভাবিত হয় না। অনেক আড়তে ওজনে কম দেয়া হয়। আধুনিক ডিজিটাল স্কেল ব্যবহারের অভাব এবং মনিটরিংয়ের ঘাটতিতে এই সমস্যা রয়ে গেছে বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ দুর্বল। জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ বা ভোক্তা অধিকার সংস্থার তৎপরতা মৌসুমি এবং অল্প সময়ের জন্য কার্যকর হয়। জেলেরা সংগঠিত না থাকায় তারা দরকষাকষিতে পিছিয়ে পড়ে এবং দাম নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে না। জেলেদের সরাসরি বাজারে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এর জন্য মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিগুলোর সক্রিয়তা জরুরি। প্রতিনিয়ত ভোক্তা অধিকার সংস্থা ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। ইলিশ বিপণনে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন হাট ও ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে। নিষিদ্ধ মৌসুমে জেলেদের প্রণোদনা কার্যকরভাবে পৌঁছে দিতে হবে, যাতে তারা অবৈধভাবে মাছ ধরে বাজারকে প্রভাবিত না করে। চাঁদপুরের ইলিশ বাজার শুধু অর্থনৈতিকই নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ও গর্বের প্রতীক। এর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা ফিরিয়ে আনলে ইলিশ ব্যবসা আরও টেকসই ও লাভজনক হবে। সরকার, ব্যবসায়ী ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগেই সম্ভব একটি সুন্দর, ন্যায্য ও সুশাসনভিত্তিক ইলিশ বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
বর্তমান যুগ ডিজিটাল। গ্রাহক এখন ঘরে বসেই মোবাইল ফোনে একটি ক্লিক করে মাছ-মাংস কিনে ফেলছেন। এই প্রবণতা থেকে বাদ যায়নি ইলিশও। বিশেষ করে চাঁদপুরের ইলিশকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনলাইনে চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু এই চাহিদার সুযোগ নিয়ে গড়ে উঠেছে কিছু অসাধু প্রতারক চক্র, যারা অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ইলিশের মতো একটি উচ্চমূল্যের পণ্যের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে। বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট, ফেসবুক পেজ ও ব্যক্তিগত উদ্যোক্তারা এখন চাঁদপুর, ভোলা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ইলিশ সংগ্রহ করে দেশের শহরাঞ্চলে পৌঁছে দিচ্ছেন। এতে করে একদিকে যেমন শহরবাসী সহজে ইলিশ পাচ্ছেন, অন্যদিকে জেলেরা ও খুচরা বিক্রেতারা পাচ্ছেন লাভের নতুন পথ। বিশেষ করে প্যাকেটজাতকরণ, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ডেলিভারি এবং কাস্টমার রিভিউয়ের কারণে নির্ভরযোগ্য অনেক অনলাইন ব্যবসা সফলভাবে ইলিশ সরবরাহ করছে। তবে এই ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি এক অন্ধকার দিকও দেখা দিয়েছে—তা হলো প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য। ফেসবুকে “চাঁদপুরের আসল ইলিশ”, “ভেজালমুক্ত নদীর ইলিশ”, “ডাইরেক্ট নৌকা থেকে” ইত্যাদি আকর্ষণীয় প্রচার দিয়ে অনেকেই ফেসবুক পেজ বা অ্যাকাউন্ট খুলে মাছ বিক্রির নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য না পাঠিয়েই উধাও হয়ে যাচ্ছে। অত্যন্ত কম দামে ইলিশ বিক্রির প্রলোভন দেখানো (যেমন: ১ কেজি ইলিশ ৮০০ টাকা)। বিকাশ/নগদে অগ্রিম টাকা চাওয়া।  পণ্য না পাঠিয়ে মোবাইল বন্ধ করা বা ব্লক করে দেওয়া।  ভুয়া কুরিয়ার রশিদ পাঠানো।নকল ছবি বা পুরনো ভিডিও দিয়ে গ্রাহককে বিশ্বাসে আনা।  রাজধানীর এক শিক্ষক জানান, “একটি ফেসবুক পেজ থেকে ৪ কেজি ইলিশের অর্ডার দিই। ৩৫০০ টাকা বিকাশ করি। এরপর থেকে পেজ বন্ধ, মোবাইল বন্ধ—কোনো খোঁজ নেই।” চাঁদপুরের স্থানীয় এক ডেলিভারি কোম্পানি মালিক বলেন, “অনেক সময় প্রতারকরা আমাদের নাম ব্যবহার করেও ফেক ডেলিভারি দাবি করে গ্রাহকদের ঠকায়।”
অভিনব প্রচার দেখেই টাকা না পাঠানো-যাচাই-বাছাই ছাড়া অগ্রিম টাকা না দেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ। বিশ্বস্ত ও রিভিউযুক্ত পেজ ব্যবহার-যেসব অনলাইন ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে, কাস্টমার রিভিউ ভালো—তাদের কাছ থেকেই অর্ডার করা উচিত। প্রয়োজনে ক্যাশ অন ডেলিভারি-হাতে পণ্য পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা-ভুক্তভোগীরা পুলিশ সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ করলে প্রতারকদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করা সম্ভব। সচেতনতা বৃদ্ধি-সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে যেন কেউ এসব প্রতারক চক্রের ফাঁদে না পড়ে।
চাঁদপুরের ইলিশ অনলাইনে বিক্রির মাধ্যমে যেমন এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে, তেমনি প্রতারকদের দৌরাত্ম্য এই খাতকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। নিরাপদ ইলিশ কেনাবেচা নিশ্চিত করতে হলে যেমন ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা জরুরি, তেমনি গ্রাহকদের সচেতনতা ও সরকারের কার্যকর নজরদারি এখন সময়ের দাবি। ইলিশের জীবনচক্র নিয়ে গবেষণা বাড়ানো দরকার। কোথায়, কীভাবে তারা অবস্থান করে তা বোঝা গেলে আরও কার্যকর সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
ইলিশ শুধু মাছ নয়—চাঁদপুরের পরিচয়, গর্ব ও অস্তিত্বের প্রতীক। এই মাছের সংকট মানেই একটি সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সংকট। চাঁদপুরে যদি মানুষই ইলিশ না পায়, তবে “ইলিশের রাজ্য” নামে খ্যাতির কোনো মানে থাকে না।
সরকার, প্রশাসন, জেলে সম্প্রদায়, ব্যবসায়ী, গবেষক এবং সচেতন জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই সংকট কাটানো সম্ভব নয়। এখনই সময় এই ঐতিহ্য রক্ষা করার, নয়তো ভবিষ্যতের প্রজন্ম জানবে না—ইলিশের স্বাদ কেমন ছিল বা চাঁদপুরে একসময় কী ঐশ্বর্য ছিল।

খালেদা জিয়ার কণ্ঠ নকল করে ১১ মাসে ২৬ কোটি টাকার প্রতারণা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ
খালেদা জিয়ার কণ্ঠ নকল করে ১১ মাসে ২৬ কোটি টাকার প্রতারণা

খালেদা জিয়ার কণ্ঠ নকল করে ১১ মাসে ২৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক প্রতারক। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। তবে এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে প্রতারক মোতাল্লেছ হোসেন। বিএফআইইউ জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে ‘আমি খালেদা জিয়া বলছি’- এমন কণ্ঠে ফোন করে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেন মোতাল্লেছ।
বিষয়টি সামনে আসে, যখন সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখায় গত ৫ নভেম্বর থেকে ৩ মাসের ব্যবধানে মোতাল্লেছ হোসেন নামে জমা হয়, ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। হঠাৎ এত টাকা জমা হওয়ায় তার তথ্য চায় ব্যাংকটি। এরপরই তার আর্থিক লেনদেন নিয়ে অনুসন্ধানে নামে বিএফআইইউ। এরপরেই জব্দ করা হয়, মোতাল্লেছ ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৯ টি ব্যাংক হিসাব। অনুসন্ধান শেষে ৭টি একাউন্টে ২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার সন্ধান পায় বিএফআইইউ। এর মধ্যে নভেম্বর থেকে পরবর্তী তিন মাসে জমা হয় ১১ কোটি ১১ লাখ টাকা। তবে মোতাল্লেছের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নের তথ্য বলছে, তার মাত্র ৩৪ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে।
বিএফআইইউ অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, রাজনৈতিক পরিচিতি ভাঙিয়ে খালেদা জিয়ার কণ্ঠ নকল করে অর্থ চেয়েছেন মোতাল্লেছ। যার ফলে সরল বিশ্বাসে অনেকেই টাকা পাঠিয়েছেন তার অ্যাকাউন্টে। এ ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। বিষয়টি প্রতারণা উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী আসিফ হোসেন বলেন, “এটি স্পষ্ট প্রতারণা হলেও এখন পর্যন্ত কেউ কোনো মামলা করেনি।”
এদিকে, মোতাল্লেছের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নমিনী হিসেবে আছেন তার ভাই, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কাইয়ুমুজ্জামান। তিনি বর্তমানে নৌ পুলিশে কর্মরত।

নীতি সুদহার কমালো বাংলাদেশ ব্যাংক: আজ থেকে কার্যকর

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫, ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ
নীতি সুদহার কমালো বাংলাদেশ ব্যাংক: আজ থেকে কার্যকর

মুদ্রানীতির কাঠামো আরো কার্যকর করতে নীতি সুদের হার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার জারি করা এক সার্কুলারে জানানো হয়েছে, স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) হার ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এই হার আজ থেকে কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে কার্যক্রমে গতি আনা এবং সুদের হার কাঠামোর সুষ্ঠু পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুদ্রানীতির করিডোর ব্যবস্থার আওতায় সুদের নিম্নসীমা কমিয়ে আনা হচ্ছে, যাতে ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনা সহজ হয় এবং বাজারে সুদের হার বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।
সার্কুলারে আরো বলা হয়েছে, সুদের ঊর্ধ্বসীমা বা স্ট্যান্ডিং লাইন ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) হার ১১ দশমিক ৫০ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে। একইভাবে, ওভারনাইট রিপো হারও ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষ্য মতে, সুদের হার কমানোর মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবস্থার মধ্যে স্বল্পমেয়াদি অর্থের প্রবাহ আরো সক্রিয় হবে এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলোর মুনাফার চাপ কিছুটা কমবে এবং তারল্য ব্যবস্থাপনা সহজ হবে, যা অর্থনীতির সামগ্রিক গতিপ্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের ২২ অক্টোবর নীতি সুদের হার সংশ্লিষ্ট সর্বশেষ সার্কুলার জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকালে নতুন সিদ্ধান্ত সেই আগের সার্কুলারের ধারাবাহিকতায় হলেও এতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে এসডিএফ হারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, নতুন এই সুদের হার কাঠামো দেশের অর্থনৈতিক নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মুদ্রানীতির বাস্তবায়নকে আরো ফলপ্রসূ করবে। এই সিদ্ধান্তে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরো দক্ষতার সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি তহবিল ব্যবস্থাপনা করতে পারবে বলেও মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

১১৪ বছর বয়সে থেমে গেল জীবনের দৌড়

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ
১১৪ বছর বয়সে থেমে গেল জীবনের দৌড়

এক শতক পেরিয়েছেন, তারপরও থামেননি। বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ দৌড়বিদ হিসেবে দৌড়েছেন শতায়ুর পরও। সেই অনন্য অনুপ্রেরণার নাম ফৌজা সিং। এবার ১১৪ বছর বয়সে থেমে গেল তার জীবনের দৌড়। সোমবার ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর-পাঠানকোট মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। স্থানীয় সময় বিকেলে গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। মাথায় আঘাত পান। তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ রাখা হয়েছে জলন্ধরের একটি মর্গে। প্রবাসে থাকা সন্তানেরা দেশে ফিরলে হবে শেষকৃত্য।

দীর্ঘ জীবনজুড়ে শুধু দৌড়েই নয়, সমাজের নানা কর্মকাণ্ডে ছিলেন সচেতন মুখ। তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন পাঞ্জাবের রাজ্যপাল গুলাব চাঁদ কাটারিয়া। শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘ফৌজা সিংজির প্রয়াণে আমরা একজন অসাধারণ মানুষকে হারালাম। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নেশামুক্ত পাঞ্জাব অভিযানে তার সঙ্গে হাঁটার অভিজ্ঞতা আমার জন্য আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

১৯১১ সালের ১ এপ্রিল, পাঞ্জাবের জলন্ধরের বেয়াস গ্রামে জন্ম ফৌজা সিংয়ের। জীবনের মধ্যভাগে স্ত্রী ও সন্তান হারানোর পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। জীবনের অর্থ খুঁজতে গিয়ে ৮৯ বছর বয়সে শুরু করেন দৌড়। ২০০০ সালে লন্ডন ম্যারাথনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক দৌড়ে পা রাখেন তিনি। এরপর লন্ডন, নিউইয়র্ক, টরন্টোসহ নয়টি আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। ২০০৩ সালের টরন্টো ম্যারাথনে ৫ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ৪ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেন, যা ছিল তার দীর্ঘতম সময়ের দৌড়।

কেবল ক্রীড়াবিদ হিসেবে নয়, ফৌজা সিং ছিলেন বিশ্বব্যাপী মানবিক মূল্যবোধের প্রতীক। ২০০৪ সালের এথেন্স ও ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে অলিম্পিক মশাল বহনের সম্মান পান। ডেভিড বেকহ্যাম ও কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপনেও অংশ নিয়েছেন এই প্রবীণ দৌড়বিদ।