খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৬ বৈশাখ, ১৪৩২

জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র কিংবা কন্সপেরেসি থিওরি কল্পনা নয় বাস্তব

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৩০ অপরাহ্ণ
জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র কিংবা কন্সপেরেসি থিওরি কল্পনা নয় বাস্তব

জায়োনিজম একটি রাজনৈতিক আন্দোলন যা মূলত উনিশ শতকের শেষভাগে গড়ে ওঠে এবং ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিণতি লাভ করে। কিন্তু জায়োনিজমের সঙ্গে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (Conspiracy Theory) যুক্ত করে অনেক আলোচনা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী মনে করে যে জায়োনিস্টরা বিশ্ব রাজনীতিতে গোপনে প্রভাব বিস্তার করছে, অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং বিভিন্ন দেশ ও সমাজে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করছে। এই প্রবন্ধে জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উৎপত্তি, প্রকৃতি, প্রভাব ও বাস্তবতা বিশ্লেষণ করা হবে। জায়োনিজম শব্দটি এসেছে “জায়োন” (Zion) থেকে, যা ইহুদিদের জন্য বিশেষ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ববাহী। এটি মূলত ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে উনিশ শতকে উদ্ভূত হয়। এটি ইহুদি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, যার উদ্দেশ্য ছিল ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠা করা। ১৮৯৭ সালে থিওডোর হার্জল প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে “জায়োনিস্ট কংগ্রেস” গঠন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

তবে এই আন্দোলন শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল। অনেক মুসলিম দেশ, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিরা, এটি দখলদারি ও ঔপনিবেশিক প্রকল্প হিসেবে দেখে আসছে। জায়োনিস্টদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর শেকড় বহু পুরনো। ইউরোপীয় সমাজে মধ্যযুগ থেকেই ইহুদিদের বিরুদ্ধে নানা গুজব রটানো হতো। তারা ব্যাংকিং ও বাণিজ্যে সফল হওয়ায় অনেকেই মনে করত যে ইহুদিরা গোপনে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি একটি ভুয়া নথি, যা ১৯০৩ সালে রাশিয়ায় প্রকাশিত হয়। এতে দাবি করা হয় যে ইহুদিরা গোপনে বিশ্ব শাসনের পরিকল্পনা করছে। যদিও এটি পরবর্তীতে ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়, তবে অনেকেই এটিকে সত্য মনে করে। কিছু ষড়যন্ত্রবাদীরা বলে যে জায়োনিস্টরা বিশ্ব মিডিয়া, বিনোদন শিল্প ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন, হলিউড ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ওপর ইহুদিদের আধিপত্য রয়েছে বলে দাবি করা হয়। একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে জায়োনিস্টরা বিশ্ব সরকার গঠন করতে চায় এবং গোপনে বিভিন্ন সরকার ও সংস্থার মাধ্যমে কাজ করছে। অনেকে মনে করে যে জায়োনিস্টরা ফিলিস্তিনের জমি দখল করার পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরির ক্ষেত্রে এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বড় ভূমিকা রয়েছে।

রাজনৈতিক বিভাজন – জায়োনিস্ট আন্দোলন নিয়ে বিতর্ক বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ধরনের বিভাজন সৃষ্টি করেছে। যেমন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত। সামাজিক উত্তেজনা – সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্যান্য মাধ্যমের মাধ্যমে এই তত্ত্বগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে মুসলিম ও ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচলিত থাকলেও এগুলোর সত্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মিডিয়া ও ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ – সত্য যে কিছু ইহুদি পরিবার অর্থনীতিতে প্রভাবশালী, তবে এটা বলতে গেলে বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র চলছে তা যুক্তিযুক্ত নয়।
বিশ্ব সরকার গঠন – এ ধরনের দাবির পক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। ফিলিস্তিন প্রশ্ন – ইসরায়েলের কার্যক্রমের সমালোচনা করা যায়, তবে তা জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত প্রমাণ নয়।  জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (Zionist Conspiracy Theory) বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি ও ইতিহাসের এক বিতর্কিত বিষয়। জায়োনিজম একটি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে শুরু হলেও, এটি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, জায়োনিস্টরা বিশ্ব শাসনের গোপন পরিকল্পনা করছে এবং বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। অন্যদিকে, অনেকে এসব দাবিকে ভিত্তিহীন ও অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন। এই প্রবন্ধে জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উৎপত্তি, প্রচলিত ধরণ, বাস্তবতা এবং এর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা হবে।

জায়োনিজম মূলত ইহুদি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, যার মূল লক্ষ্য ছিল ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ইহুদিদের জন্য একটি নিরাপদ মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠা করা। বাইবেলের বিবরণ অনুসারে, ইসরায়েল হলো ইহুদিদের প্রতিশ্রুত ভূমি। উনিশ শতকের ইউরোপে ইহুদিদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ার ফলে অনেক ইহুদি নিজেদের আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।

১৮৯৭ সালে থিওডোর হার্জল প্রথম “জায়োনিস্ট কংগ্রেস” গঠন করেন এবং ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করেন। ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণা (Balfour Declaration) এবং ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা জায়োনিজমের প্রধান ফলাফল। ২. জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব: কী এবং কেন? জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মূলত ধারণা করে যে জায়োনিস্টরা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা বিস্তার করছে। প্রটোকলস অব দ্য এল্ডার্স অব জায়োন (Protocols of the Elders of Zion)। এটি ১৯০৩ সালে প্রকাশিত একটি ভুয়া দলিল, যেখানে বলা হয়েছিল ইহুদিরা বিশ্ব শাসনের ষড়যন্ত্র করছে।
যদিও এটি পরবর্তীতে ভুয়া প্রমাণিত হয়, তবু অনেক ষড়যন্ত্রবাদীরা এটি সত্য বলে বিশ্বাস করে। ষড়যন্ত্রবাদীদের মতে, জায়োনিস্টরা গণমাধ্যম, হলিউড, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও ফেডারেল রিজার্ভ নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন, কিছু বিখ্যাত মিডিয়া কোম্পানির মালিক ইহুদি হওয়ার কারণে অনেকেই মনে করেন তারা বিশ্বব্যাপী প্রচারমাধ্যমের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছে। একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে জায়োনিস্টরা একটি গোপন বিশ্ব সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে। দাবি করা হয়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা (যেমন: UN, WHO, IMF) জায়োনিস্টদের দ্বারা পরিচালিত। অনেকে মনে করেন যে জায়োনিস্টরা মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে এবং তাদের দুর্বল করার চেষ্টা করছে। ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ার অস্থিরতা এবং ফিলিস্তিনের দখলকে জায়োনিস্ট পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখা হয়।

মধ্যযুগ থেকেই ইউরোপীয় সমাজে ইহুদিদের বিরুদ্ধে নানা গুজব রটানো হতো। তাদের ব্যাংকিং ও ব্যবসায়িক সফলতা অনেকের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করেছিল। ইসরায়েলের সামরিক নীতি ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি নিপীড়ন জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে। সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ব্লগসাইটে এই ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়, যা অনেক মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। যদিও জায়োনিস্টদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে, তবে এদের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিছু ইহুদি পরিবার অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হলেও, এটি প্রমাণিত নয় যে তারা সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশ্বব্যাংক, IMF ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করে, যা ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে দুর্বল করে। ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করা যেতে পারে, তবে এটি জায়োনিস্টদের বৈশ্বিক ষড়যন্ত্রের প্রমাণ নয়। অনেক ইহুদি নিজেই ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থে কাজ করে, যা একটি বৃহৎ জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনাকে দুর্বল করে। এখন পর্যন্ত এ ধরনের ষড়যন্ত্রের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এই ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অনেক সময় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই তত্ত্বের কারণে অনেক সাধারণ মানুষ ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করতে শুরু করে। ইউরোপ ও আমেরিকায় ইহুদি সম্প্রদায়ের ওপর বিভিন্ন সময় হামলা হয়েছে। জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সংঘর্ষ সৃষ্টি করে।এটি ইসরায়েল ও মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ওপর মনোযোগ দিলে প্রকৃত সমাধান খোঁজা কঠিন হয়ে পড়ে। মানুষ বিজ্ঞান, ইতিহাস ও বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে বিভ্রান্তিকর তথ্যের ওপর নির্ভর করতে শুরু করে।

জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ইতিহাস, রাজনীতি ও ধর্মীয় অনুভূতির মিশ্রণে গড়ে ওঠা একটি জটিল বিষয়। যদিও জায়োনিজম একটি বাস্তব রাজনৈতিক আন্দোলন, তবে অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অতিরঞ্জিত এবং ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্ব রাজনীতির প্রকৃত বিশ্লেষণের জন্য বাস্তব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ওপর নয়। এই বিষয়ে গবেষণা, তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ ও সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে মতামত গঠন করা উচিত। জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব একদিকে ইতিহাস ও রাজনীতির বাস্তবতার মিশ্রণ, অন্যদিকে অনেকাংশেই অতিরঞ্জিত। যদিও ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করা স্বাভাবিক, তবে এটিকে এককভাবে একটি বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখা কতটা যৌক্তিক, তা বিবেচনার দাবি রাখে। গবেষণা ও তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা উচিত।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:২২ পূর্বাহ্ণ
ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, মিলন এবং নতুন করে বাঁচার প্রেরণা। এই দিনে সবাই চায় নিজেকে সাজিয়ে নিতে, নতুন কাপড় পরে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে। কিন্তু এমন অনেকের মধ্যেও থাকে এমন কেউ, যার জন্য একটি নতুন জামা শুধু পোশাক নয়, বরং স্বপ্ন, গর্ব, আত্মমর্যাদা এবং একটি আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। এই প্রবন্ধে আমরা এমন এক নতুন জামার কথা বলব, যে জামার শুধু দামী কাপড় বা ডিজাইনের গর্ব নেই, বরং রয়েছে আত্মার গভীরে জমে থাকা এক মানুষের স্বপ্নের গল্প।

শহরের এক কোণায় বাস করে ছোট্ট ছেলেটি রিয়াদ। বয়স প্রায় দশ। তার বাবা একজন দিনমজুর, মা গৃহিণী। সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যে কোনোভাবে দিন কাটে তাদের। বছরের প্রতিটি দিন কাটে সংগ্রামের মাঝে, কিন্তু ঈদ আসে স্বপ্নের আলো নিয়ে। ঈদে নতুন জামা পাবে, এই আশায় রিয়াদ এক মাস রোজা রাখে, নিজের মনকে শক্ত করে।

তবে এই জামা আসবে কি না, তা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, বাবার মুখে ভাঁজ আর চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। মা বারবার বলেন, “এবার হয়তো পুরনো জামাতেই ঈদ করতে হবে।” কিন্তু রিয়াদ বিশ্বাস করে—আল্লাহ যদি রোজা কবুল করেন, তাহলে একটা নতুন জামা হয়তো আসবেই।

এই জামার অপেক্ষা শুধু রিয়াদের নয়, এটি যেন তার মন-প্রাণের আকুতি। এই জামা তার জন্য স্বপ্নপূরণ, আত্মমর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্বের অনুভব।

আমরা অনেক সময় বুঝি না, একটি নতুন জামা একজন শিশুর জন্য কতটা অর্থবহ হতে পারে। ধনী পরিবারের শিশুর কাছে এটি হয়তো একটি চমকপ্রদ পোশাক, কিন্তু রিয়াদের কাছে এটি স্বপ্ন পূরণের মতো। সে ভাবে, ঈদের দিন সবার মতো তাকেও যদি নতুন জামায় দেখা যায়, তাহলে সে আর অবহেলিত হবে না, তার বন্ধুরা তাকে হাসবে না। তারও মুখে হাসি ফুটবে, তারও ছবি উঠবে মোবাইল ক্যামেরায়।

এই জামা তার আত্মবিশ্বাস, যেটা সে স্কুলে পড়ার সময় খুঁজে বেড়ায়, যখন ক্লাসের অন্য ছেলেরা নতুন জামা পরে আসে আর সে পড়ে থাকে একঘেয়ে মলিন কাপড়।

এখানে জামার একটি কল্পিত স্বর ও ভাষা কল্পনা করা যাক—যেখানে জামাটি যেন নিজের মনে নিজের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছে: “আমি কোনো বিলাসী দোকানের শেলফে ঝুলে থাকা দামি জামা নই। আমি সেই জামা, যাকে এক দরিদ্র বাবার কষ্টের টাকায় কিনে আনা হবে তার ছেলের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে।
আমি হয়তো রঙিন নই, হয়তো আমার ডিজাইনে জাঁকজমক নেই, কিন্তু আমি গর্বিত। কারণ আমি হব একটি শিশুর ঈদের স্বপ্ন পূরণের বাহক। আমি হব আত্মমর্যাদার প্রতীক, আমি হব ঈদের প্রাপ্তির প্রতিচ্ছবি।”

এই ভাবনার মধ্যেই ফুটে ওঠে জামার স্বপ্ন—সে চায়, তাকে কেউ ভালোবাসুক, পরিধান করুক, আর আনন্দ পাক।

রিয়াদের মা হয়তো নিজের জন্য কোনো কাপড় কিনবেন না, বাবা হয়তো একজোড়া চপ্পল না কিনে সেই টাকায় ছেলের জামা কিনে দেবেন। কারণ, সন্তানের হাসির চেয়ে বড় কিছু তাদের কাছে নেই। একটি নতুন জামার পেছনে লুকিয়ে থাকে একটি পরিবারের নীরব ত্যাগ, ভালোবাসা আর গোপন কান্না।

ঈদের নতুন জামা এই পরিবারগুলোর কাছে শুধু পোশাক নয়—এটা এক সম্মান, ভালোবাসা এবং আত্মতৃপ্তির চিহ্ন। অনেক সময় বাবা-মায়েরা নিজেদের প্রয়োজন বিসর্জন দিয়ে সন্তানের মুখে হাসি দেখতে চান। নতুন জামা যেন সেই আত্মত্যাগের স্বাক্ষর হয়ে উঠে।

ঈদের দিন আমরা যখন দেখি কেউ চকচকে কাপড় পরে বেরিয়েছে, আর কেউ পুরনো জামা পরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, তখন সামাজিক বৈষম্যের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নতুন জামার গুরুত্ব সেখানে দ্বিগুণ। এটি একধরনের সামাজিক মর্যাদা।

রিয়াদ হয়তো তার বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ভাবে—আমারও যদি এমন একটা জামা থাকত! শুধু ঈদের দিনটা নয়, পুরো জীবনজুড়ে সেই হাহাকার থেকে যায়। এই এক টুকরো জামাই তার স্বপ্নকে উঁচুতে নিয়ে যেতে পারে, আর না থাকলে আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়ে।

দরিদ্র শিশুদের জন্য ঈদে জামার প্রাপ্তি মানে কী? সমান মর্যাদা – অন্যদের মতো তাকেও দেখা হয় একজন ‘পূর্ণ’ শিশুর মতো।  আত্মবিশ্বাস – নতুন জামা পরে সে খুশি মনে বন্ধুদের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। পরিবারের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি – সে উপলব্ধি করে, তার মা-বাবা তাকে কত ভালোবাসে।

৪. ভবিষ্যতের স্বপ্ন – একজন শিশু জানে, সে যদি চেষ্টার মধ্যে থাকে, তার স্বপ্ন একদিন পূরণ হবেই।

ঈদের সকালে রিয়াদের ঘুম ভাঙে ভোরবেলা। মা হাসিমুখে এসে বলে—
“এই দেখ, তোমার নতুন জামা।”
রিয়াদ প্রথমে বিশ্বাস করতে পারে না। হাত বাড়িয়ে জামাটা নেয়, চোখে জল চলে আসে। “আমার?”
মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, “হ্যাঁ বাবা, তোমার।”
রিয়াদ তার ছোট জামাটিকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে, যেন এটিই তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

সেই জামা তখন আর শুধু সুতা ও রঙের মিশ্রণ নয়, সেটি তখন একটি ‘স্বপ্ন’। একটি সন্তুষ্টির প্রতীক, একটি ছোট শিশুর গর্বের নিশান।

আমরা যারা সমাজের ভাগ্যবান অংশ, তাদের উচিত এই বৈষম্য দূর করতে সচেষ্ট হওয়া। প্রতিবছর ঈদের আগে আমরা অনেকেই প্রচুর জামা কিনি, কিন্তু ভাবি না পাশের দরিদ্র শিশুটার কথা। যদি আমরা একটি নতুন জামা কাউকে দিতে পারি, তাহলে তার ঈদটা হয়ে উঠতে পারে জীবনের সেরা দিন।সামাজিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার—সবাই যদি চায়, তাহলে প্রত্যেক শিশুর ঈদে একটি নতুন জামা নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি দান নয়, এটি মানুষের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা।

“ঈদে একটি নতুন জামা যার স্বপ্ন” এই বাক্যটি শুধুমাত্র কোনো এক জামা বা একটি শিশুর গল্প নয়, এটি হাজারো রিয়াদের গল্প। এটি আমাদের সমাজে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য মানুষের জীবনবোধের চিত্র। একটি নতুন জামা কেবল দেহ ঢাকার উপকরণ নয়, এটি মানুষের সম্মান, আত্মবিশ্বাস এবং ভালোবাসার প্রতীক। আমরা যদি এই একটুকরো জামার ভেতর মানুষের আবেগ, স্বপ্ন ও আত্মত্যাগ দেখতে পারি, তাহলে সমাজে সত্যিকার পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। আসুন, এই ঈদে আমরা কেবল নিজেদের জন্য না, অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যও একটি নতুন জামার স্বপ্ন বুনি।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:৩৮ অপরাহ্ণ
চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভা (১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৫) নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি (২০২৫-২০২৮) ঘোষণা করা হয়েছে। সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (সর্বশেষ সংশোধন ২০১৩) ও সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ (সর্বশেষ সংশোধন ২০২০) অনুযায়ী নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন (পরিদর্শক, জেলা সমবায় কার্যালয়, চাঁদপুর) কোন পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছয় সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষণা করেন। নবনির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি- মোঃ ইকবাল আজম (প্রতিনিধি, দি চাঁদপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সহ-সভাপতি- মোঃ আফজাল হোসেন খান (প্রতিনিধি, মিলেনিয়াম বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সম্পাদক- দুলাল চন্দ্র দাস (প্রতিনিধি, বাগড়া শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- মোঃ আক্কাস ফরাজী (প্রতিনিধি, রূপসী পল্লী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- খন্দকার ফখরুল আলম (প্রতিনিধি, আশার আলো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সদস্য- মোঃ খোরশেদ আলম (প্রতিনিধি, খাজুরিয়া বাজার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ)।
জেলার বিভিন্ন সমবায় সমিতির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ও নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন এর সভাপতিত্বে নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের কৃতি সন্তান, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সমবায়ী ও বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন শেখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন জেলা সমবায় ইউনিয়ন, জেলার সমবায় সমিতি ও সমবায়ীদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব থাকলেও চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নে দীর্ঘদিন নির্বাচিত কমিটি ছিল না, যার কারণে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। আমরা বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন থেকে চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নকে কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। সমবায় বিভাগ এতে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির গঠন করে, যার ফলশ্রুতিতে আজকে আমরা একটি নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে পেরেছি। এজন্য তিনি সমবায় বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান পাশাপাশি নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানান। সভায় তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। সকলের সহযোগিতায় তা বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সভায় অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সভাপতি মুরাদ হোসেন খান, জুন হাউজিং কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর প্রতিনিধি এ ওয়াই এম জাকারিয়া, ওয়ারলেস বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি মোঃ জিয়াউদ্দিন, ইসলামীয়া সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি নাজমুল হুদা প্রমূখ।
উল্লেখ্য প্রতি ৩ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও ২০১২ সালের পর, দীর্ঘ ১৩ বছর পর এই ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হলো।

আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ
আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আগামী ২ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সম্প্রতি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, সংসদ না থাকায় এবার সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে না। অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ কারণে ২ জুন বাজেট ঘোষণার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণত আগের অর্থবছরগুলোতে বৃহস্পতিবার বাজেট দেওয়া হতো, এবার সোমবার ঘোষণা করা হবে। বাজেট ঘোষণার পর আগের রীতি অনুযায়ী অর্থ উপদেষ্টা বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।

সূত্রটি জানিয়েছে, সাধারণত প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় বড় রাখা হয়। তবে এবার বাজেট ঘাটতি কমিয়ে বাজেট ছোট কারার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

বাজেটের আকার কমানো হলেও সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিকীকরণ সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ ধরতে পারে। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। চলতি অর্থবছরেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। যদিও গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।