খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ৮ শ্রাবণ, ১৪৩২

যে কথা হয়নি বলা আজো

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫, ১১:৫২ অপরাহ্ণ
যে কথা হয়নি বলা আজো

দুই যুগ আগে মাধ্যমিকের শুরুত হৃদিতাকে প্রথম দেখি। সেও এসেছিল নতুন ছাত্র হিসেবে মাধ্যমিকে। তার মধ্যে ছিল আত্মবিশ্বাস, চোখে স্বপ্ন, আর মুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। তাকে দেখলে যে কেউ প্রেমে পরবে। প্রথম দেখাতেই কী এক অজানা অনুভূতি আমার বুকে ধাক্কা দিয়েছিল। আমি চুপচাপ বসে স্যারের পাঠদানের পাশাপাশি তার দিকে তাকাচ্ছিলাম, আর মনে মনে ভাবছিলাম—এই মেয়েটি যেন ক্লাসে আলাদা।

কয়েকদিন পর ওর সাথে বাসা থেকে একসাথে স্কুলে আসা, স্কুলে পাশের বেঞ্চে বসার সুযোগ হয়। বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে সে হেসে বলেছিল, তুমি খুব চুপচাপ, তাই না? আমি মাথা নেড়ে একটু হাসলাম। বলার ছিলো অনেক কিছু, কিন্তু কিছুই বলিনি। সময়টা যেন থেমে গিয়েছিল আমাদের চারপাশে।

ধীরে ধীরে একটা অদ্ভুত বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। ওর হাসি, ওর রাগ, ছোট ছোট কথায় অভিমান করা—সবই আমার জীবনের এক অভিন্ন অংশ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আমি কখনোই বলিনি আমার মনের কথা। ভাবতাম, যদি বলার পর বন্ধুত্বটাই নষ্ট হয়ে যায়? যদি ও একেবারে দূরে সরে যায়?

স্কুল জীবন শেষ হলো। সবাই ছড়িয়ে পড়লো যার যার জীবনের পথে। হৃদিতা চলে গেল ঢাকায়, আর আমি থেকে গেলাম চাঁদপুর, বাবার ব্যবসা ও কলেজ দুটো সামলাতে। মাঝে মাঝে ওর মেসেজ আসত, কেমন আছো? আর আমি এক লাইন লিখতাম—ভাল আছি। তুমি? অথচ মনের ভিতরে জমে থাকত শত শত না বলা কথা। প্রতিবারই ভাবতাম, এবার বলবো। কিন্তু বলা আর হতো না।

এরপর এক দশক কেটে যায়। একদিন হঠাৎ খবর পেলাম, হৃদিতার বিয়ে ঠিক হয়েছে। বুকের ভেতরটা হঠাৎ করে ফাঁকা হয়ে গেল। মেসেঞ্জারে শুধু লিখলাম, শুভ কামনা রইল। ও উত্তর দিল, ধন্যবাদ, জানতাম তুমি খুশি হবে। সেই দিন খুব কেঁদেছিলাম। কারো না বলা কথায় এত কষ্ট হতে পারে আগে জানতাম না।

আজ দুই যুগ পর, আমি দুই সন্তানের বাবা। স্ত্রী খুব ভালো, সংসার সুন্দর। তবুও কোনো এক একলা দুপুরে হৃদিতার কথা মনে পড়ে যায়। হঠাৎ ফেসবুকে দেখি, হৃদিতার স্বামী মারা গেছে, সেও দুই সন্তান নিয়ে বেঁচে আছে। বুকের ভেতর আবার হালকা কিছু কাঁপে।

আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকি স্ক্রিনে। লিখি—কেমন আছো, হৃদিতা? কিন্তু পাঠাই না। আবার মুছে ফেলি। কারণ আমার সেই না বলা কথাগুলো আজও আগের মতোই রয়ে গেছে—অব্যক্ত, নিঃশব্দ।

লেখক পরিচিতি: উজ্জ্বল হোসাইন, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

জাপানের সাথে বিশাল বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ১২:৩৩ অপরাহ্ণ
জাপানের সাথে বিশাল বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প

জাপানের সাথে একটি বিশাল বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এই ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ‍বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।ট্রাম্প বলেন, কয়েক মাস ধরে টানা আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র জাপান এবং ফিলিপাইনের সাথে বড় ধরনের বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছে, যা তার শুল্ক যুদ্ধের একটি বড় অগ্রগতি হবে। মঙ্গলবার ঘোষিত চুক্তির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র জাপানি পণ্য রপ্তানির উপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে এবং জাপান যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘আমরা জাপানের সাথে একটি বিশাল চুক্তি সম্পন্ন করেছি, সম্ভবত এটিই এখন পর্যন্ত করা সবচেয়ে বড় চুক্তি।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমার নির্দেশে জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে, যা লাভের ৯০ শতাংশ পাবে।’ ট্রুথ সোশ্যালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও জানান, জাপান যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি, চাল এবং কিছু কৃষিপণ্য রপ্তানির জন্যও দরজা খুলে দেবে। এই চুক্তি লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করবে বলেও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পরে মঙ্গলবার রাতে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের সাথে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, আলাস্কায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের জন্য একটি যৌথ উদ্যোগ গঠনেও উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। এদিকে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা, যার ক্ষমতাসীন জোট সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর কারণে ভেঙে পড়েছে, বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন যে এ বিষয়ে মন্তব্য করার আগে তাকে আরও ভালোভাবে বিষয়গুলো ভেবে দেখতে হবে। এদিকে, ট্রাম্প আলাদাভাবে ঘোষণা করেছেন যে, ফিলিপাইন থেকে আমদানির উপর যুক্তরাষ্ট্র ১৯ শতাংশ কর আরোপ করবে এবং ম্যানিলা মার্কিন পণ্যের উপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করবে।
১ আগস্টের সময়সীমার আগে এই ঘোষণাগুলো দেয়া হলো। যেখানে ট্রাম্প চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারার জন্য যে কোনো দেশের উপর শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি দিয়েছিলেন।

মাইলস্টোন ট্রাজেডি : মানুষরূপী পশুদের কারণে কষ্ট বেড়েছে দগ্ধদের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ২:১৫ অপরাহ্ণ
মাইলস্টোন ট্রাজেডি : মানুষরূপী পশুদের কারণে কষ্ট বেড়েছে দগ্ধদের

রাজধানীর উত্তরা-১১ নম্বর সেক্টরের মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গুরুতর আহত শিক্ষার্থী ও কর্মীদের দুর্ঘটনার পর ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে দেখা দেয় যানজট, পানির সংকট, যোগাযোগ ও সহযোগিতার মারাত্মক ঘাটতি। একইসঙ্গে দুর্ঘটনায় আহত কারোর আইডি কার্ডে ছিল না জরুরি যোগাযোগের নম্বর কিংবা রক্তের গ্রুপ। ফলে শুরুতেই সংকটে পড়ে যান উদ্ধারকারীরা। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকা ঘুরে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এমন অবস্থার কথা জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, দুপুর সোয়া ১টার পর বিমান বিধ্বস্তের শব্দে চারপাশ কেঁপে ওঠে। মুহূর্তেই ছুটে আসেন শিক্ষার্থী, পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়া। শোনা যায় কান্না আর চিৎকারের শব্দ। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার জায়গার বেশির ভাগ অংশে ছিল মাইলস্টোন কলেজের প্রাইমারি সেকশন। সে সময় চলছিল প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণির ক্লাস। ঘটনার পরপর বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অভিভাবকরাও ছুটে আসেন সন্তানদের খোঁজে।
প্রত্যক্ষদর্শী কলেজছাত্রী তাসফিয়া রহমান বলেন, আমি ক্লাসে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে বের হয়ে দেখি ধোঁয়ায় চারপাশ অন্ধকার। কেউ চিৎকার করছে, কেউ মোবাইলে কাউকে খুঁজছে। আহত কয়েকজনকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখি। তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করেও তেমন কিছু জানতে পারিনি। কারণ কারো আইডি কার্ডে ফোন নম্বর ছিল না, অভিভাবকের তথ্য ছিল না।
আবার ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধারকাজ শুরু হলেও অল্প সময়ের মধ্যে চারপাশে জনতার ভিড় জমে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি করে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে না পারায় আশঙ্কাজনক কয়েকজনের অবস্থার আরও অবনতি হয়। ঢামেকসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে অন্তত ৩৫ জনকে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় নেওয়া হয়।
মাইলস্টোনের কলেজ শাখার শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ বলেন, আগুনে দগ্ধ শিক্ষার্থীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। স্বজন, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের ভিড়ে ব্যাহত হয় আহতদের দ্রুত স্থানান্তর, চিকিৎসা শুরু করতেও দেরি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা অন্য শিক্ষার্থীরা জানান, বিমান বিধ্বস্তের স্থানটি ঘিরে মুহূর্তেই বিপুল জনসমাগম হয়। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও উৎসুক জনতার ভিড়ে রাস্তায় জট তৈরি হয়। যে অ্যাম্বুলেন্সগুলো দ্রুত রোগী বহন করতে এসেছিল, সেগুলোর গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চেষ্টা করছিল আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে কিন্তু রাস্তায় নেমে আসা মানুষের ভিড়ে সেই যাত্রা হয়ে পড়ে দুর্বিষহ।
আলভী নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা দগ্ধ কয়েকজনকে উঠিয়ে রিকশা-অ্যাম্বুলেন্সে তুলেছিলাম। কিন্তু সামান্য দূরত্ব পাড়ি দিতেই সময় লেগেছে প্রায় আধা ঘণ্টা। পথেই কয়েকজনের শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। আবার অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার পর কলেজ ক্যান্টিন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে তখন বিশুদ্ধ পানিরও সংকট দেখা দেয়।
মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন, চারদিকে ধোঁয়া, গায়ে পোড়া গন্ধ এমন পরিস্থিতিতে এক বোতল পানির জন্য ঘুরতে হয়েছে পাঁচ জায়গায়। ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় খাবার পানি মেলেনি।
অন্যদিকে, দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে রিকশা, অটো ও সিএনজি চালকরা কয়েকগুণ ভাড়া হাঁকিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একজন অভিভাবক বলেন, সিএনজি চালক ৭০ টাকার ভাড়ার জায়গায় ২০০ টাকা চাইলেন। বাধ্য হয়েই দিতে হয়েছে, কারণ সন্তান তখন হাসপাতালের পথে।
এমন পরিস্থিতিতে ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের ছয়টি দাবি হলো–
১. দুর্ঘটনায় নিহতদের সঠিক নাম ও পরিচয় প্রকাশ করতে হবে।
২. আহতদের নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
৩. ঘটনাস্থলে শিক্ষকদের গায়ে সেনাসদস্যদের ‘হাত তোলার’ অভিযোগে নিঃশর্ত প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
৪. নিহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫. বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ বিমান বাতিল করে নতুন ও নিরাপদ প্লেন চালু করতে হবে।
৬. বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ এলাকা মানবিক ও নিরাপদভাবে পুনর্বিন্যাস করতে হবে।
মাইলস্টোন আজ রাজ্যের নীরবতা, ফাঁকা ক্লাসরুমে শোকের ছায়া
বিমান বিধ্বস্ত ও আগুনে ঝলসে যাওয়ার পর আজ মাইলস্টোন কলেজ অচেনা এক রূপে। যেখানে প্রতিদিন সকাল থেকেই মুখর হয়ে উঠত ক্লাসরুম, করিডর আর ক্যান্টিন, সেখানে আজ রাজ্যের নীরবতা। নেই কোনো হৈচৈ, নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততা। দুর্ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে প্রতিষ্ঠানটি ২৪ জুলাই পর্যন্ত সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে। তবে কলেজে উপস্থিত অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বলছেন, এই শিক্ষাঙ্গনে যেন এখন শুধুই শোক, ভয়ার্ত চোখ আর দগ্ধ স্মৃতির ভার। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।

শিশুদের বাঁচাতে জীবন দিলেন মাহরীন চৌধুরী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ
শিশুদের বাঁচাতে জীবন দিলেন মাহরীন চৌধুরী

২১ জুলাই, ২০২৫। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের পরপর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনে যখন আগুন ছড়িয়ে পড়ে, সেই কঠিন সময়ে একজন শিক্ষক রয়ে গিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের পাশে। তিনি মাহরীন চৌধুরী। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সমন্বয়ক, যিনি দায়িত্বের জায়গা থেকে সরেননি।
মাহরীন চৌধুরীর শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে গিয়েছিল। রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন তিনি। মাহরীনের ছোট ভাই মুনাফ মজিব চৌধুরী বোনের মৃত্যুর খবর দিয়ে ফেসবুক পোস্টে লেখেন—
‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মাহরীন আপু (মাহরীন চৌধুরী) আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি আমার বড় বোন। যিনি আমাকে মায়ের মতো করে বড় করেছেন। তিনি মাইলস্টোন স্কুলের কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। ভবনে আগুন লাগার সময় তিনি সবার আগে নিজে বের হননি, বরং যতজন ছাত্রছাত্রীকে পারা যায়, বের করে আনার চেষ্টা করেছেন। এতে তাঁর শরীরের ১০০ শতাংশ অংশ পুড়ে যায়। আজ রাতে আমার প্রিয় বোনের জন্য দোয়া করবেন দয়া করে। তিনি রেখে গেছেন তাঁর দুই ছেলে—আমার দুটি ভাগনে। আমরা এখনো হাসপাতালে থেকে তাঁর মরদেহ বুঝে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।’
মাহরীন চৌধুরী ম্যাডামকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক পোস্ট চোখে পড়ছে। তাঁর ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে ‘বীর’ হিসেবে বর্ণনা করে লিখছে।
আমরা উত্তরা মাইলস্টোন কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় হতাহতের জন্য গভীর শোক জানাচ্ছি। আমরা যাদের হারিয়েছি, তাদের বেশির ভাগই শিশু। কত শিশু, কত মানুষ যে হাসপাতালে পোড়া শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছে, দম বন্ধ হয়ে আসে তা ভাবতে গেলে।
এই গভীর শোকে আমরা স্তব্ধ। তবু এ সময়ে মাহরীন ম্যাডামের মতো ‘বীর’ শিক্ষকদের কথা পড়ে, জেনে, শুনে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় নত হই। আমাদের চোখ ভিজে আসে। আমরা সাহসে বুক বাঁধি।
আমাদের স্কুলের বইয়ে পড়েছিলাম ফেলেসিয়া ডরোথিয়া হেমানসের লেখা ‘ক্যাসাবিয়াঙ্কা’ কবিতা—
The boy stood on the burning deck
Whence all but he had fled;
The flame that lit the battle’s wreck
Shone round him o’er the dead.
এক সাহসী ছেলের কথা ছিল কবিতায়। ছেলেটির বাবা তাকে জাহাজের একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিলেন। জাহাজে আগুন লাগে। ছেলেটি পুড়ে যায়, মারা যায়, কিন্তু তার জায়গা থেকে সরে যায়নি।
‘ছেলেটি জ্বলন্ত জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে ছিল
সরে গিয়েছিল সবাই—কেবল সে ছিল বাকি;
সেই আগুনের আলো, ধ্বংসস্তূপের ওপরে পড়ে ছিল
চারদিকে মৃতদেহ।’
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ির মাহরীন ম্যাডাম আরও বড় কাজ করেছেন। তিনি শিশুদের, তাঁর ছাত্রছাত্রীদের বাঁচানোর জন্য জীবন দিয়েছেন। আমরা তাঁকে আবারও শ্রদ্ধা জানাই।