খুঁজুন
                               
মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৭ শ্রাবণ, ১৪৩২

মাইলস্টোন ট্রাজেডি : মানুষরূপী পশুদের কারণে কষ্ট বেড়েছে দগ্ধদের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ২:১৫ অপরাহ্ণ
মাইলস্টোন ট্রাজেডি : মানুষরূপী পশুদের কারণে কষ্ট বেড়েছে দগ্ধদের

রাজধানীর উত্তরা-১১ নম্বর সেক্টরের মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গুরুতর আহত শিক্ষার্থী ও কর্মীদের দুর্ঘটনার পর ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে দেখা দেয় যানজট, পানির সংকট, যোগাযোগ ও সহযোগিতার মারাত্মক ঘাটতি। একইসঙ্গে দুর্ঘটনায় আহত কারোর আইডি কার্ডে ছিল না জরুরি যোগাযোগের নম্বর কিংবা রক্তের গ্রুপ। ফলে শুরুতেই সংকটে পড়ে যান উদ্ধারকারীরা। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকা ঘুরে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এমন অবস্থার কথা জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, দুপুর সোয়া ১টার পর বিমান বিধ্বস্তের শব্দে চারপাশ কেঁপে ওঠে। মুহূর্তেই ছুটে আসেন শিক্ষার্থী, পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়া। শোনা যায় কান্না আর চিৎকারের শব্দ। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার জায়গার বেশির ভাগ অংশে ছিল মাইলস্টোন কলেজের প্রাইমারি সেকশন। সে সময় চলছিল প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণির ক্লাস। ঘটনার পরপর বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অভিভাবকরাও ছুটে আসেন সন্তানদের খোঁজে।
প্রত্যক্ষদর্শী কলেজছাত্রী তাসফিয়া রহমান বলেন, আমি ক্লাসে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে বের হয়ে দেখি ধোঁয়ায় চারপাশ অন্ধকার। কেউ চিৎকার করছে, কেউ মোবাইলে কাউকে খুঁজছে। আহত কয়েকজনকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখি। তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করেও তেমন কিছু জানতে পারিনি। কারণ কারো আইডি কার্ডে ফোন নম্বর ছিল না, অভিভাবকের তথ্য ছিল না।
আবার ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধারকাজ শুরু হলেও অল্প সময়ের মধ্যে চারপাশে জনতার ভিড় জমে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি করে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে না পারায় আশঙ্কাজনক কয়েকজনের অবস্থার আরও অবনতি হয়। ঢামেকসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে অন্তত ৩৫ জনকে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় নেওয়া হয়।
মাইলস্টোনের কলেজ শাখার শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ বলেন, আগুনে দগ্ধ শিক্ষার্থীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। স্বজন, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের ভিড়ে ব্যাহত হয় আহতদের দ্রুত স্থানান্তর, চিকিৎসা শুরু করতেও দেরি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা অন্য শিক্ষার্থীরা জানান, বিমান বিধ্বস্তের স্থানটি ঘিরে মুহূর্তেই বিপুল জনসমাগম হয়। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও উৎসুক জনতার ভিড়ে রাস্তায় জট তৈরি হয়। যে অ্যাম্বুলেন্সগুলো দ্রুত রোগী বহন করতে এসেছিল, সেগুলোর গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চেষ্টা করছিল আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে কিন্তু রাস্তায় নেমে আসা মানুষের ভিড়ে সেই যাত্রা হয়ে পড়ে দুর্বিষহ।
আলভী নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা দগ্ধ কয়েকজনকে উঠিয়ে রিকশা-অ্যাম্বুলেন্সে তুলেছিলাম। কিন্তু সামান্য দূরত্ব পাড়ি দিতেই সময় লেগেছে প্রায় আধা ঘণ্টা। পথেই কয়েকজনের শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। আবার অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার পর কলেজ ক্যান্টিন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে তখন বিশুদ্ধ পানিরও সংকট দেখা দেয়।
মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন, চারদিকে ধোঁয়া, গায়ে পোড়া গন্ধ এমন পরিস্থিতিতে এক বোতল পানির জন্য ঘুরতে হয়েছে পাঁচ জায়গায়। ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় খাবার পানি মেলেনি।
অন্যদিকে, দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে রিকশা, অটো ও সিএনজি চালকরা কয়েকগুণ ভাড়া হাঁকিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একজন অভিভাবক বলেন, সিএনজি চালক ৭০ টাকার ভাড়ার জায়গায় ২০০ টাকা চাইলেন। বাধ্য হয়েই দিতে হয়েছে, কারণ সন্তান তখন হাসপাতালের পথে।
এমন পরিস্থিতিতে ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের ছয়টি দাবি হলো–
১. দুর্ঘটনায় নিহতদের সঠিক নাম ও পরিচয় প্রকাশ করতে হবে।
২. আহতদের নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
৩. ঘটনাস্থলে শিক্ষকদের গায়ে সেনাসদস্যদের ‘হাত তোলার’ অভিযোগে নিঃশর্ত প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
৪. নিহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫. বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ বিমান বাতিল করে নতুন ও নিরাপদ প্লেন চালু করতে হবে।
৬. বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ এলাকা মানবিক ও নিরাপদভাবে পুনর্বিন্যাস করতে হবে।
মাইলস্টোন আজ রাজ্যের নীরবতা, ফাঁকা ক্লাসরুমে শোকের ছায়া
বিমান বিধ্বস্ত ও আগুনে ঝলসে যাওয়ার পর আজ মাইলস্টোন কলেজ অচেনা এক রূপে। যেখানে প্রতিদিন সকাল থেকেই মুখর হয়ে উঠত ক্লাসরুম, করিডর আর ক্যান্টিন, সেখানে আজ রাজ্যের নীরবতা। নেই কোনো হৈচৈ, নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততা। দুর্ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে প্রতিষ্ঠানটি ২৪ জুলাই পর্যন্ত সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে। তবে কলেজে উপস্থিত অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বলছেন, এই শিক্ষাঙ্গনে যেন এখন শুধুই শোক, ভয়ার্ত চোখ আর দগ্ধ স্মৃতির ভার। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।

শিশুদের বাঁচাতে জীবন দিলেন মাহরীন চৌধুরী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ
শিশুদের বাঁচাতে জীবন দিলেন মাহরীন চৌধুরী

২১ জুলাই, ২০২৫। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের পরপর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনে যখন আগুন ছড়িয়ে পড়ে, সেই কঠিন সময়ে একজন শিক্ষক রয়ে গিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের পাশে। তিনি মাহরীন চৌধুরী। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সমন্বয়ক, যিনি দায়িত্বের জায়গা থেকে সরেননি।
মাহরীন চৌধুরীর শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে গিয়েছিল। রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন তিনি। মাহরীনের ছোট ভাই মুনাফ মজিব চৌধুরী বোনের মৃত্যুর খবর দিয়ে ফেসবুক পোস্টে লেখেন—
‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মাহরীন আপু (মাহরীন চৌধুরী) আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি আমার বড় বোন। যিনি আমাকে মায়ের মতো করে বড় করেছেন। তিনি মাইলস্টোন স্কুলের কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। ভবনে আগুন লাগার সময় তিনি সবার আগে নিজে বের হননি, বরং যতজন ছাত্রছাত্রীকে পারা যায়, বের করে আনার চেষ্টা করেছেন। এতে তাঁর শরীরের ১০০ শতাংশ অংশ পুড়ে যায়। আজ রাতে আমার প্রিয় বোনের জন্য দোয়া করবেন দয়া করে। তিনি রেখে গেছেন তাঁর দুই ছেলে—আমার দুটি ভাগনে। আমরা এখনো হাসপাতালে থেকে তাঁর মরদেহ বুঝে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।’
মাহরীন চৌধুরী ম্যাডামকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক পোস্ট চোখে পড়ছে। তাঁর ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে ‘বীর’ হিসেবে বর্ণনা করে লিখছে।
আমরা উত্তরা মাইলস্টোন কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় হতাহতের জন্য গভীর শোক জানাচ্ছি। আমরা যাদের হারিয়েছি, তাদের বেশির ভাগই শিশু। কত শিশু, কত মানুষ যে হাসপাতালে পোড়া শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছে, দম বন্ধ হয়ে আসে তা ভাবতে গেলে।
এই গভীর শোকে আমরা স্তব্ধ। তবু এ সময়ে মাহরীন ম্যাডামের মতো ‘বীর’ শিক্ষকদের কথা পড়ে, জেনে, শুনে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় নত হই। আমাদের চোখ ভিজে আসে। আমরা সাহসে বুক বাঁধি।
আমাদের স্কুলের বইয়ে পড়েছিলাম ফেলেসিয়া ডরোথিয়া হেমানসের লেখা ‘ক্যাসাবিয়াঙ্কা’ কবিতা—
The boy stood on the burning deck
Whence all but he had fled;
The flame that lit the battle’s wreck
Shone round him o’er the dead.
এক সাহসী ছেলের কথা ছিল কবিতায়। ছেলেটির বাবা তাকে জাহাজের একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিলেন। জাহাজে আগুন লাগে। ছেলেটি পুড়ে যায়, মারা যায়, কিন্তু তার জায়গা থেকে সরে যায়নি।
‘ছেলেটি জ্বলন্ত জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে ছিল
সরে গিয়েছিল সবাই—কেবল সে ছিল বাকি;
সেই আগুনের আলো, ধ্বংসস্তূপের ওপরে পড়ে ছিল
চারদিকে মৃতদেহ।’
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ির মাহরীন ম্যাডাম আরও বড় কাজ করেছেন। তিনি শিশুদের, তাঁর ছাত্রছাত্রীদের বাঁচানোর জন্য জীবন দিয়েছেন। আমরা তাঁকে আবারও শ্রদ্ধা জানাই।

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৭

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ
উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৭

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ২৭ জনে পৌঁছেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৭৮ জন। এ পর্যন্ত ২০ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল আটটার পর রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী চিকিৎসক মো. সায়েদুর রহমান এ কথা জানিয়েছেন।
সায়েদুর রহমান জানান, ৪টি হাসপাতালে ভর্তি আছে ৭৮ জন। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৫ জন শিশু এবং একজন পাইলট ও একজন শিক্ষক রয়েছেন। স্বজনদের কাছে ২০ জনের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, বার্নে গতকাল সোমবার রাতে আরও আটজন মারা যায়। দুটি হাসপাতালে হতাহত বেশি। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ২৮ জন ভর্তি আছে। সেখানে ১৫ জনের মৃতদেহ ছিল। এ ছাড়া বার্নে ভর্তি ৪২ জন।
সায়েদুর রহমান আরও জানান, মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়টি মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি। তাদের ডিএনএ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে একটি দেহাবশেষ নেওয়া হয়েছিল। ঢাকা মেডিকেলে তিনজন ভর্তি। ইউনাইটেড হাসপাতালে একজনকে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয়। বার্ন ইনস্টিটিউটে যারা আইসিইউ ও এইচডিইউতে আছে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পুরো দেশ। বার্ন ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের এমওইউ আছে। তাদের কাছে টেকনিক্যাল সহায়তার জন্য অনুরোধপত্র পাঠানো হয়েছে। তারা কেস সামারি পেয়েছে। এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার ব্যক্তিগতভাবে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে অবস্থান করছেন। এখানকার কেসগুলো দেখে পরামর্শক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
হাসপাতালে ভিড় না করার অনুরোধ জানিয়ে সায়েদুর রহমান বলেন, আহত ব্যক্তিরা বেশির ভাগ শিশু। তাদের রক্তের প্রয়োজনীয়তা কম। এ ছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে (বিএমইউ) আইসিইউ প্রস্তুত আছে। তিনি জানান, বার্ন হাসপাতাল থেকে ১০ জন, সিএমএইচ থেকে ৮ জন, ইউনাইটেড থেকে ১ জন এবং ঢাকা মেডিকেল থেকে ১ জনের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে সায়েদুর রহমান বলেন, ভর্তি ব্যক্তিদের কে কোথায় আছে, তা পাবলিক ডোমেইনে আছে। যাঁরা এখনো তাঁদের স্বজনের খোঁজ পাননি, তাঁদের সেখান থেকে দেখে নিতে অনুরোধ জানান তিনি।
আজ রোগীদের স্বার্থে বার্ন ইনস্টিটিউট ঘিরে নিরাপত্তা কড়াকড়ি করা হয়েছে। পরিচয়পত্র ও অসুস্থতার প্রমাণ ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে সেনাবাহিনী। সংবাদ সম্মেলনের আগমুহূর্তে গণমাধ্যমকর্মীদের পরিচয়পত্র দেখে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। এরপর সকালের ব্রিফিং শেষ হলে পরবর্তী ব্রিফিং বেলা দুইটায় হবে জানিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের হাসপাতাল ভবনের বাইরে অবস্থান করতে বলা হয়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, গতকাল বেলা ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বিমানটি স্কুল ভবনের ওপর এসে বিধ্বস্ত হয়। বেলা ১টা ১৮ মিনিটে এই খবর পায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। গতকাল পরে জানা যায়, বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান স্কুলটির চত্বরের একটি দোতলা ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত চীনের তৈরি এই যুদ্ধবিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উত্তরার ওই স্কুল ভবনে আছড়ে পড়েছিল। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই আগুন ধরে যায় স্কুল ভবনে। তখন দগ্ধ শিশুদের আর্তনাদ, সন্তানের খোঁজে পাগলপ্রায় মা-বাবা ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ। এ ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আহত হয়েছে অন্তত ১৭১ জন।

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত : ‘মেয়েকে ছাড়া কীভাবে স্যার বাঁচবেন?’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ
উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত : ‘মেয়েকে ছাড়া কীভাবে স্যার বাঁচবেন?’

‘স্কুলের কাছাকাছি স্যারের বাসা। প্রতিদিন সকালে স্যারকে দেখতাম মেয়ে হুমায়রাকে কখনো কোলে করে, আবার কখনো হাত চেপে ধরে স্কুলে নিয়ে আসতেন। আবার ছুটি হলে বাসায় পৌঁছে দিতেন। স্যার আবার হয়তো স্কুলে আসবেন। ক্লাস নেবেন। কিন্তু হুমায়রাকে আর স্যারের সঙ্গে দেখা যাবে না। সেই আদরের একমাত্র মেয়েকে ছাড়া কীভাবে স্যার বাঁচবেন, কীভাবে এই শোক সহ্য করবেন? হে আল্লাহ, তুমি স্যারকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দিয়ো।’ মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ শাখার শিক্ষার্থী আজমাইন অনন্য গতকাল সোমবার বিকেলে ফেসবুকে তাঁর কলেজের শিক্ষক দেলোয়ার হোসাইনের মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে এমন স্ট্যাটাস দেন।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে মেহেনাজ আক্তার ওরফে হুমায়রা (৯) নিহত হয়েছে। সে ওই বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। গতকালের ওই ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ২৭–এ পৌঁছেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৭৮ জন।  নিহত মেহেনাজের বাবা দেলোয়ার হোসাইন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। তবে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দেলোয়ার হোসাইন অক্ষত রয়েছেন। তাঁদের বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানীপাড়া গ্রামে। গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে অ্যাম্বুলেন্স করে মেহেনাজের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।
মেহেনাজের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হতেয়া গ্রামের আবদুল বাছেদ মিয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসাইন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। এরপর তিনি রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিষয়ের প্রভাষক পদে যোগ দেন। তিনি স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে উত্তরার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। মেহেনাজের পাশের বাড়ির গণমাধ্যমকর্মী সুজন বলেন, ছুটি পেলে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে দেলোয়ার হোসাইন গ্রামের বাড়িতে আসতেন। তার মৃত্যুর খবর শুনে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। গ্রামের মানুষ তাকে একনজর দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিল। রাত দুইটার দিকে অ্যাম্বুলেন্স আসার শব্দ শুনে গ্রামের মানুষ যেন জেগে ওঠে। মুহূর্তেই বাড়িতে লোকজন ভরে যায়। স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ রাতের আকাশ ভারী হয়ে ওঠে।
মেহেনাজের দাদা আবদুল বাছেদের আর্তনাদে উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তিনি শুধু বলছিলেন, ‘এবার কোরবানি ঈদে দাদু এসেছিল। দাদু সারাক্ষণ আমার সঙ্গেই থাকত। দাদু আর কোনো দিন আসবে না। আর আমাকে দাদু বলবে না।’ হতেয়া গ্রামের নেয়ামুল হক বলেন, আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টায় হতেয়া গাবলের বাজারে মেহেনাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় জামায়াতের নেতা শফিকুল ইসলাম ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সবুর রেজা উপস্থিত ছিলেন। পরে পারিবারিক কবরস্থানে মেহেনাজকে দাফন করা হয়।