খুঁজুন
                               
বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

সাহিত্য ও সমাজ : একে অপরের পরিপূরক

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:৫৮ অপরাহ্ণ
সাহিত্য ও সমাজ : একে অপরের পরিপূরক

সাহিত্য ও সমাজের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং আন্তঃসংযুক্ত। সাহিত্য সমাজের প্রতিফলন ঘটায়, আবার সাহিত্য সমাজের পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখে। ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়ে সমাজের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে, আবার সাহিত্যও সমাজকে নতুন ভাবনার আলোয় আলোকিত করেছে। সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষের আবেগ, চিন্তা, কল্পনা ও অভিজ্ঞতা ফুটে ওঠে, যা সমাজকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে শেখায়। সাহিত্য কেবল একটি শিল্প নয়, এটি মানুষের অনুভূতি, চিন্তা, সমাজ ও সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। সাহিত্য বিভিন্ন রূপে প্রকাশিত হতে পারে—কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী ইত্যাদি। সাহিত্য সমাজের ভাষা, রীতি-নীতি, সংস্কৃতি, জীবনধারা এবং সময়ের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে।

সমাজ হলো মানুষের একটি সংগঠিত কাঠামো, যেখানে ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা একসাথে মিশে থাকে। সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তা ও অভ্যাস পরিবর্তিত হয়, যা সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়।

সাহিত্য সমাজের একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানুষের চিন্তা, নৈতিকতা ও সংস্কৃতিকে গঠনে ভূমিকা রাখে। এটি বিভিন্নভাবে সমাজকে প্রভাবিত করে—সাহিত্য সমাজের অসঙ্গতি, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। উদাহরণস্বরূপ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রীকান্তদেবদাস উপন্যাসে সমাজের কুসংস্কার ও সামাজিক অবিচারের চিত্র ফুটে উঠেছে।

সাহিত্য জাতীয়তাবাদ ও সামাজিক সচেতনতার বিকাশ ঘটাতে পারে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠ উপন্যাস ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করেছিল। সাহিত্যের মাধ্যমে সমাজে সংস্কার আনা সম্ভব। ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখনী নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে, যা সমাজে পরিবর্তন এনেছে। সাহিত্য মানুষকে নৈতিক শিক্ষা দেয় এবং তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্ম ভালো-মন্দের পার্থক্য ও মানবিক গুণাবলির গুরুত্ব বোঝা। যুগে যুগে সমাজের পরিবর্তন সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়েছে। সমাজ ও সাহিত্যের সম্পর্ক বোঝার জন্য বিভিন্ন যুগের সাহিত্য বিশ্লেষণ করা যেতে পারে—প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে ধর্মীয় ও পৌরাণিক বিষয়বস্তু দেখা যায়। চর্যাপদ বাংলার আদি সাহিত্য, যেখানে তৎকালীন সমাজের ধর্মীয় ও দার্শনিক চিন্তাধারা প্রতিফলিত হয়েছে। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ছিল ধর্ম ও ভক্তিবাদের উপর ভিত্তি করে। বৈষ্ণব পদাবলী, মঙ্গলকাব্য এবং কাহিনি কাব্য তৎকালীন সমাজের সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করেছে। এই সময় সাহিত্যে সমাজ সংস্কার, জাতীয়তাবাদ ও পশ্চিমা শিক্ষার প্রভাব দেখা যায়। বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র প্রমুখ লেখকের সাহিত্য তৎকালীন সমাজের বাস্তবতা তুলে ধরেছে। বর্তমান যুগের সাহিত্য ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা, প্রযুক্তির প্রভাব, বিশ্বায়ন, রাজনৈতিক বাস্তবতা, সামাজিক অবক্ষয় ইত্যাদির চিত্র তুলে ধরে।

সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষ সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সচেতন হয়। এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলে।সাহিত্য মানুষের মধ্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তার বিকাশ ঘটায়, যা সমাজের পরিবর্তনে সহায়ক হয়। সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐক্য তৈরি হয় এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধি পায়। সাহিত্য সমাজের ইতিহাসকে সংরক্ষণ করে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অতীতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে।

সাহিত্য ও সমাজ একে অপরের পরিপূরক। সাহিত্য সমাজের প্রতিচ্ছবি, আবার সমাজও সাহিত্যকে গঠন ও প্রভাবিত করে। মানুষের জীবনযাপন, সংস্কৃতি, ইতিহাস, এবং সামাজিক বাস্তবতা সাহিত্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, ঠিক যেমন সাহিত্যও মানুষের চিন্তাধারা, নৈতিকতা, এবং মূল্যবোধ গঠনে ভূমিকা রাখে। সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে সাহিত্যও পরিবর্তিত হয় এবং নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে। এই প্রবন্ধে সাহিত্য ও সমাজের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হবে। সাহিত্য কেবল কল্পনাপ্রসূত রচনা নয়, বরং এটি মানুষের জীবন ও অভিজ্ঞতার গভীর বিশ্লেষণ। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, প্রবন্ধ—এসব সাহিত্যকর্ম সমাজের বিভিন্ন স্তরের চিত্র তুলে ধরে। অন্যদিকে, সমাজ হল মানুষের জীবনযাত্রার সমষ্টি, যা সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং অন্যান্য উপাদানের দ্বারা গঠিত।

সাহিত্য সমাজকে কীভাবে প্রভাবিত করে, তা বোঝার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। সহিত্য সমাজের অসংগতি, অন্যায়, বৈষম্য, ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলে। বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস শ্রীকান্তদেবদাস তৎকালীন সামাজিক বাস্তবতার প্রতিচিত্র। সাহিত্য সমাজের ভাষা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক। ফোকলোর, লোককাহিনি, এবং মহাকাব্য (যেমন—রামায়ণ, মহাভারত, মৈমনসিংহ গীতিকা) প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সংস্কৃতির সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে। সাহিত্য সমাজের পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির চেতনাকে জাগিয়ে তুলেছিল। সাহিত্য সমাজের বাস্তবতা প্রতিফলিত করে। বিভিন্ন সময়ের সাহিত্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতিটি সাহিত্যকর্মে তৎকালীন সমাজের চিত্র ফুটে ওঠে। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য (যেমন—মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলী) ধর্মীয় ও পৌরাণিক কাহিনির প্রভাব বহন করে। ঊনবিংশ শতকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাহিত্য সামাজিক সংস্কার ও জাতীয়তাবাদী চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আজকের সাহিত্য ব্যক্তি ও সমাজের জটিল মনস্তত্ত্ব এবং প্রযুক্তির প্রভাবের মতো বিষয় নিয়েও আলোচনা  করে।

সাহিত্য ও সমাজ একে অপরের সাথে গভীরভাবে জড়িত। সমাজ সাহিত্যকে গঠন করে, আবার সাহিত্য সমাজের বিকাশে ভূমিকা রাখে। সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে সাহিত্যও পরিবর্তিত হয় এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে। ফলে সাহিত্য ও সমাজের এই সম্পর্ক চিরন্তন ও অপরিহার্য। সাহিত্য ও সমাজের সম্পর্ক একে অপরের পরিপূরক। সাহিত্য সমাজকে প্রতিফলিত করে, আবার সাহিত্য সমাজের বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাহিত্য মানুষের চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটায়, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য শেখায়, এবং সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে। সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে সাহিত্যও পরিবর্তিত হয় এবং নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে। তাই বলা যায়, সাহিত্য ও সমাজের এই সম্পর্ক চিরন্তন, যা যুগে যুগে মানুষের জীবন ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে আসছে।

লেখক পরিচিতি  : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

বাজেট প্রতিক্রিয়া : শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে এডিপি বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক: সিপিডি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ২:৩৮ অপরাহ্ণ
বাজেট প্রতিক্রিয়া : শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে এডিপি বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক: সিপিডি

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। আজ সোমবার সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘বাজেটের যে কাঠামো উপস্থাপন করা হয়েছে, সেখানে বাজেটের আকার সামান্য ছোট করা হয়েছে। পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, সেখানেও কিছুটা কাটছাঁট করা হয়েছে। বাজেটের আকার নিয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা হয়েছে, সেটার অন্যতম কারণ হচ্ছে, আমাদের যে চলমান অর্থনৈতিক সংকট, অর্থাৎ উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ স্থবিরতা, কর্মসংস্থানে সমস্যা এবং রাজস্ব আহরণের সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা বাজেট প্রস্তাব করেছে বলে আমাদের মনে হয়েছে।’

ড. ফাহমিদা বলেন, ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির দিকে তাকালে দেখা যাবে, চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ২ শতাংশ কমানো হয়েছে এবং ১৫টি খাতের মধ্যে ১৪টি খাতেই কমানো হয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য এবং চিন্তার বিষয় হচ্ছে, তিনটি খাত—শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে টাকার অংকে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। সেটা আমাদের কাছে উদ্বেগজনক মনে হয়, কারণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আমরা সব সময় বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলে আসছি এবং কৃষি খাতে, বিশেষত খাদ্য নিরাপত্তার দিকে এখানে বরাদ্দ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘ভৌত অবকাঠামো, বিশেষ করে পরিবহন ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি বরাবরের মতো উপরের দিকে আছে যুক্তিযুক্তভাবে।’

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কর কাঠামোর মধ্যে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ দশমিক ৫ লাখ, অর্থাৎ সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে, এটা একটা ভালো পদক্ষেপ। কিন্তু প্রায় ৩ বছরের মতো সময় ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে, ১০-১১ শতাংশে উঠে গেছে। সেদিক থেকে যে খুব একটা উল্লম্ফন হয়েছে সেটা না। তবে এটাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, যারা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত, তাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে, সেটাও আমরা ভালো পদক্ষেপ মনে করি।’

‘করের বিভিন্ন স্ল্যাবগুলোতে পরিবর্তন করা হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে যারা নিম্ন মধ্যআয়ের যারা পড়েছেন, কর দেওয়ার ক্ষেত্রে হারটা তাদের মধ্যেই বেশি পড়বে। আবার যারা আয়ের উচ্চ পর্যায়ে রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে অনেক কম পড়বে। এখানে বৈষম্যের চিত্র দেখা যাচ্ছে। অঞ্চলভিত্তিক ন্যূনতম কর ধরা হয়েছে ৫ হাজার টাকা, এখানে আমরা মনে করছি বৈষম্য রয়েছে। কারণ রাজধানী ঢাকা কিংবা অন্য আরেকটি জেলার সবাইকে এক করে দেখানো; সরকারি সেবা সব জায়গায় সবাই কিন্তু সমানভাবে নেয় না। এখানে পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে আমরা মনে করি,’ যোগ করেন তিনি।

ফাহমিদা বলেন, ‘শুল্ক যৌক্তিকরণ হয়েছে এবং আমদানি শিল্প যৌক্তিকিকরণ করতে গিয়ে হয়তো কিছু কিছু শিল্প চাপে পড়তে পারে। বিশেষ করে যখন মূল্যস্ফীতি বেশি, কস্ট অব ডুইং বিজনেস বেশি। এটাকে শুল্কের যৌক্তিকিকরণ করতেই হবে, কারণ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে যাবে। আস্তে আস্তে ট্যারিফ কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। যে প্রতিঘাত আসবে, সেটা মোকাবিলা করার জন্য কস্ট অব ডুইং বিজনেসের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ-জ্বালানি সাশ্রয়ী মূল্যে কিংবা সহজ শর্তে ঋণ কিংবা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে কস্ট অব ডুইং বিজনেস কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’

প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ই-কমার্সের সুযোগ-সুবিধা এবং ই-কমার্সকে ফরমাল সেক্টরে আনা; এখানে করের আওতায় আনা এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের অধীনে যে ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন হয়েছে। আমরা মনে করি, আগেও পিপিপি মডেলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো কিন্তু খুব একটা এগোয় নাই।

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠনকে স্বাগত জানিয়েছে সিপিডি।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কালো টাকা সাদার করার সুযোগটা রয়ে গেছে। যদিও এখানে রেট বাড়ানো হয়েছে কিন্তু আমরা আগেও বলেছি, কালো টাকার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান হচ্ছে, এই সুযোগ দিয়ে যারা নৈতিকভাবে প্রতি বছর স্বচ্ছ আয় করে, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার সঙ্গে কর দিয়ে থাকেন, তাদের প্রতি নৈতিক আঘাত। কারণ তাদের আদর্শিকভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়। দুটি জিনিস সমান্তরালভাবে চলতে পারে না!’

ফাহমিদা আরও বলেন, ‘আগে করের হারটাও কম রাখা হতো, এখন করের হার বেশি রাখা হয়েছে। তারপরও এটা থেকে খুব একটা আদায় হয় না। যদি এখান থেকে সত্যি আদায় করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে কিন্তু সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া দুএকবার সুযোগ দিয়ে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’ উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় কর রেয়াত কিংবা বিভিন্ন জায়গা থেকে কমানো এবং পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে ১৪০টির মতো কার্যক্রম একসঙ্গে চলতো, সেগুলো কমিয়ে ৯৫টি করা হয়েছে এবং সেখানে অর্থ বরাদ্দ কম করা হয়েছে। খুব কম না কিন্তু বাজেটের তুলনায় ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার মতো।’ ‘আমরা বারবার বলেছি, এখানে কতগুলো উপাদান যুক্ত করা হয়, যেগুলো সামাজিক নিরাপত্তা বা সামাজিক সুরক্ষার অধীনে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ এটা একেবারেই অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য। সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, সেখানে আছে ৩৫ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। কৃষি ভর্তুকি আছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এই দুটি মিলিয়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি হয়, সেটা বাদ দিয়ে রয়ে যায় ৬৪ হাজার কোটি টাকার মতো। সেটা অনেকখানি কমে আসে। এগুলো বাদ দিয়ে যে নেট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, সেটাকে দেখাতে হবে। সেটা দেখে তুলনা করা যেতে পারে যে আসলেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কী করা হলো,’ যোগ করেন তিনি।

ফাহমিদা বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বলতে চাই, কিছু কিছু পদক্ষেপ ভালো নেওয়া হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু সামগ্রিক কাঠামোগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যে একই কাঠামোর মধ্যে এখানে একটু বেশি, ওখানে একটু কম—এ রকম করে নেওয়া হয়েছে। বাজেটের যে দর্শন, এখানে বৈষম্যহীন সমাজের কথা বলা হয়েছে, সেই উদ্দেশ্যের সঙ্গে যে বাস্তব পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সব ক্ষেত্রে সেটা সাযুজ্যপূর্ণ হয়নি।’

ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি: জামায়াতের আমির

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ২:৩৬ অপরাহ্ণ
ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি: জামায়াতের আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান।

মঙ্গলবার (৩ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পাওয়া উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি অথবা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের দাবি আমরা জানিয়েছি। রোজার আগে অথবা যদি কোনো কারণে সম্ভব না হয়, তাহলে যেন এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়া হয়। কারণ আবহাওয়ার কারণে মে মাসের পর নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘আজকেও যদি সমতল মাঠ তৈরি হয়, ফেয়ার ইলেকশন যদি সম্ভব হয়, তাহলেও আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু ফেয়ার ইলেকশনের মাঠ তৈরি না হলে এপ্রিলে নির্বাচন হলেও তো কোনো লাভ নেই।’

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার বিষয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘প্রবাসীদের অবশ্যই ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে, এ বিষয়ে আমরা ছাড় দিতে রাজি নই।’

তিনি বলেন, ‘প্রবাসীরা তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। আমরা ইসির কাছে দাবি জানিয়েছি, প্রবাসীরা যেন ভোট দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করার জন্য। এটা কোনো কঠিন বিষয় নয়। কিন্তু ইসির পক্ষ থেকে আমরা কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না।’

এর আগে গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরও বলেন, বৈঠকে তারা বলেছেন, জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। আর নির্বাচন হতে পারে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে।

তাহের বলেন, ‘আমরা বলেছি জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। বেশিরভাগ বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। সামান্য কিছু বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে। জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার শেষ হবে। এরপর একটি জুলাই সনদ হবে। সেখানে আমরা সব দল স্বাক্ষর করব।’

জুলাই সনদ করব, এটাই আমাদের লক্ষ্য : প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ
জুলাই সনদ করব, এটাই আমাদের লক্ষ্য : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‌জুলাই সনদ করব এটাই আমাদের লক্ষ্য। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার আজকে প্রথম পর্ব শেষ হলো, দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো। সোমবার (২ জুন) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিতে বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে যান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। বিকেল সাড়ে ৪টার পর থেকে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা।  ড. ইউনূস বলেন, আমি সারা দিনে যত মিটিং করি, যত মিটিং করে এসেছি, সবচাইতে আনন্দ পাই যখন এরকম বসার সুযোগ পাই। এখানে সবাই মিলে বাংলাদেশের প্রকৃত ভবিষ্যৎ রচনা করা হচ্ছে। এটা আমাকে শিহরণ জাগায় যে, এরকম কাজে আমি যুক্ত হতে পেরেছি।

তিনি বলেন, সংস্কার করার জন্য আমার ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কোথা থেকে শুরু করব। প্রথমে নানা আলাপের মাধ্যমে ঠিক হলো যে, আমরা কয়েকটি কমিশন করে দেব। তারা ভেতরে গিয়ে প্রকৃত জিনিসটা তৈরি করবে। আমরা কমিশন গঠন করলাম। দ্রুত গতিতে কাজ করার জন্য তাদেরকে ৯০ দিন আমরা সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। আমরা খুব আনন্দিত তারা করতে পেরেছে। কয়েকটা কমিশন বেশি সময় নিয়েছে, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। ‘কমিশন থেকে রিপোর্ট এল। তারপর কথা হলো আমরা ঐকমত্য গঠন করতে চাচ্ছি, এটা কীভাবে হবে? সেখান থেকে একটা আইডিয়া আসল যে আলাদা একটা ঐকমত্য কমিশন দরকার। সেটা ফলপ্রসূ হয়েছে। আলী রীয়াজ সাহেব যখনই আমার সঙ্গে বৈঠক করেন তখনই খুব আনন্দিত হই।’

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে কী হবে তা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‌অনেকগুলো বিষয় কাছাকাছি এসে গেছে। আরেকটু হলে আমাদের তালিকায় আরেকটি সুপারিশ যুক্ত হবে, সেটা হচ্ছে ঐকমত্যের সুপারিশ। সেই সুযোগ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। আমাদের জুলাই সনদের যতগুলো বিষয় আছে তাতে যদি আরও কিছু যুক্ত করতে পারি, দেখতে সুন্দর লাগবে। জাতীয় একটা সনদ হলো, অনেকগুলো বিষয়ে আমরা এক হতে পেরেছি, জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত হতে পারি। আমরা দেশের উন্নতির জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছি।