খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৬ বৈশাখ, ১৪৩২

প্রথম পিতৃত্ব: দায়িত্ব ও ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায়

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ৪:৩৭ অপরাহ্ণ
প্রথম পিতৃত্ব: দায়িত্ব ও ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায়

জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই যেন একেকটি অমূল্য গল্প। তবে কিছু গল্পের স্বাদ অন্যরকম—অপরূপ, অতুলনীয়। এমনই এক অনন্য অভিজ্ঞতা হলো পিতৃত্ব। সেই প্রথমবার, যখন একজন পুরুষের মনে আসে একটি নতুন পরিচয়ের আনন্দ, দায়িত্ব এবং ভালোবাসা, তখন তার জীবন যেন নতুন এক রঙে রঞ্জিত হয়। আমি যখন প্রথম জানতে পারি, আমি বাবা হতে চলেছি, তখন মুহূর্তটি ছিল এক মিশ্র অনুভূতির। আনন্দ, উত্তেজনা, শঙ্কা—সবকিছু একসাথে। কোনো কিছুর সাথেই সেই অনুভূতিকে তুলনা করা যায় না। মনে হয়েছিল, যেন জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে, যেখানে প্রতিটি দিনই হবে শেখার, বোঝার, এবং অনুভব করার এক অসাধারণ সুযোগ।

যে মুহূর্তে জানতে পারলাম, আমার স্ত্রী মা হতে চলেছেন আর আমি বাবা হতে চলছি, আমার মনের মধ্যে কেমন যেন একটা অদ্ভুত আলোড়ন বয়ে গেল। আমার চারপাশটা কেমন যেন বদলে গেল। তখন মনে হচ্ছিল, আমি শুধু একজন মানুষ নই, একজন বাবা হতে চলেছি। আমার বুকে নতুন দায়িত্বের এক ভার যেন ধীরে ধীরে জমা হচ্ছিল। যে মানুষটা আগে নিজের প্রয়োজন আর আরামকেই বেশি গুরুত্ব দিত, সে হঠাৎ বুঝতে পারল, এখন থেকে আমার জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত আর ভাবনা আমার সন্তানকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে।

আমার স্ত্রীর গর্ভাবস্থায় নয়টি মাস ছিল অপেক্ষার এক দীর্ঘ উৎসব। প্রতিদিনই নতুন নতুন কিছু ঘটত। স্ত্রীর শারীরিক পরিবর্তন, তার চাহিদা, তার অনুভূতিগুলো আমার মনকে আরও গভীরভাবে সংবেদনশীল করে তুলেছিল। এই সময়টাতে আমার ভেতরে একটা অন্যরকম ভালোবাসার জন্ম নিল। হঠাৎ একদিন কালো অধ্যায় শুরু হলো-আমার স্ত্রী একটি ছোট্ট দূর্ঘটনায় বাম পায়ের হাঁটুর নিচে প্রধান যে দুটি  হাড় টিবিও-ফিবুলা মাঝ বরাবর ভেঙ্গে যায়। আমি সকালের নাস্তা সেরে অন্য দিনের মতো রেডি হয়ে অফিসে চলে যাই।  গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হই মনে মধ্যে একটা

প্রতিদিনই মনে হতো, আমার সন্তানটি কেমন হবে? তার চেহারা কেমন হবে? সে কি আমার মতো হবে, নাকি তার মায়ের মতো? এই কল্পনাগুলো আমাকে এক অদ্ভুত আনন্দ দিত। আর এই অপেক্ষার প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে শিখিয়েছিল ধৈর্য আর ত্যাগের মানে।-++++

যে দিনটি আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে, সেটি হলো আমার সন্তানের জন্মদিন। সেই প্রথমবার, ১৩ জুন ২০১৩ শান্ত এক বিকেলে যখন তার কান্নার শব্দ শুনলাম, আমার মনে হলো যেন পুরো পৃথিবী আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। তাকে আমার হাতে প্রথমবার ধরে মনে হয়েছিল, আমি একটি স্বর্গীয় অনুভূতির অংশীদার। তাকে দেখে আমার মনে হচ্ছিল, এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। ছোট্ট একটি প্রাণ, যার মুখে নিষ্পাপ একটি হাসি, সেই মুহূর্তেই আমার জীবনের সকল কষ্ট, সব ক্লান্তি হারিয়ে গিয়েছিল। পিতৃত্ব মানেই শুধু আনন্দ নয়, এটি একটি বিশাল দায়িত্ব। সন্তানের প্রতি যত্ন নেওয়া, তাকে সঠিক পথে চালিত করা, তার জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা—এসব কিছুই আমার কাছে ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।

প্রথমবার, যখন রাতে সন্তানকে ঘুম পাড়াতে পারিনি, তখন বুঝেছিলাম, বাবা হওয়া কতটা কঠিন। একটি ছোট শিশুর চাহিদা, তার কান্না, তার আনন্দ, সবকিছু বুঝতে শিখতে হয়। কিন্তু সেই কঠিন মুহূর্তগুলোও আমার জন্য এক নতুন শিক্ষার দরজা খুলে দিয়েছিল। আমার সন্তান আমাকে জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখিয়েছে। ধৈর্য ধরার শিক্ষা, ত্যাগের মানে বোঝা, আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার আসল অনুভূতি—এগুলো সবই আমি শিখেছি আমার সন্তান থেকে।

আমি অনুভব করেছি, বাবা হওয়া মানে শুধুই একজন অভিভাবক হওয়া নয়। এটি মানে, একজন পথপ্রদর্শক, একজন রক্ষক, এবং একজন সঙ্গী হওয়া। আমার সন্তান আমাকে নতুনভাবে জীবনকে দেখতে শিখিয়েছে। পিতৃত্বের সবচেয়ে সুন্দর দিক হলো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। সন্তানের প্রতি ভালোবাসার কোনো শর্ত থাকে না, কোনো সীমা থাকে না। তার হাসি, তার ছোট ছোট কাণ্ডকারখানা, তার প্রথম শব্দ—বা-বা, মা এসবই জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ এনে দেয়। আমি বুঝেছি, পিতৃত্ব মানে নিজের সুখকে পেছনে রেখে সন্তানের সুখকে সামনে রাখা। তার জন্য কিছু করতে পারা মানেই জীবনের আসল তৃপ্তি।

সন্তানের আগমন শুধু আমার জীবনেই নয়, পুরো পরিবারকেই বদলে দিয়েছিল। আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্য যেন আরও কাছাকাছি এসে গেল। সন্তানের জন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করতাম, একে অপরের প্রতি আরও যত্নশীল হয়ে উঠেছিলাম। সন্তানের মাধ্যমে আমি বুঝতে পেরেছি, একটি পরিবার কীভাবে একসঙ্গে এগিয়ে যায়। পরিবার মানে কেবল রক্তের বন্ধন নয়, এটি ভালোবাসা, ত্যাগ, এবং একে অপরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস।

পিতৃত্ব একটি অনন্ত যাত্রা, যা প্রতিনিয়ত চলতে থাকে। প্রতিদিনই নতুন কিছু শেখার থাকে, নতুন কিছু অনুভব করার থাকে। আমার সন্তানের বড় হওয়া, তার বেড়ে ওঠা, তার জীবনের প্রতিটি ছোট ছোট সাফল্য আমাকে গর্বিত করে।

আমি জানি, সামনে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। কিন্তু আমি সেই চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত। কারণ আমি জানি, আমার সন্তানের হাসির জন্য, তার সুখের জন্য আমি যে কোনো কিছু করতে পারি।

পিতৃত্বের স্বাদ এমন এক অভিজ্ঞতা, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এটি এমন এক অনুভূতি, যা প্রথমবার অনুভব করার পর জীবনের সমস্ত কিছু বদলে যায়। সন্তান জন্মের আগে পর্যন্ত হয়তো নিজের জীবনকেই কেন্দ্র করে সবকিছু আবর্তিত হয়। কিন্তু বাবা হওয়ার পর, জীবন যেন অন্যরকম এক অর্থ পায়।

পিতৃত্ব আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। প্রথমেই শিখিয়েছে ধৈর্য। সন্তান লালন-পালনের প্রতিটি মুহূর্তেই ধৈর্যের প্রয়োজন। তার কান্না, খাওয়া, আরাম—সবকিছুতে আমাকে ধৈর্য ধরে তার চাহিদাগুলো বুঝতে হয়েছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। বাবা হওয়ার পর বুঝেছি, সন্তানের জন্য ত্যাগ করতে কখনোই কষ্ট হয় না। তার সুখই আমার সুখ, তার স্বস্তিই আমার স্বস্তি।

পিতৃত্বের প্রথম স্বাদ আমাকে জীবনের নতুন মানে বুঝিয়েছে। এটি কেবল একটি অনুভূতি নয়, এটি একটি যাত্রা, যা কখনো শেষ হয় না। এই যাত্রা আমাকে আরও ভালো মানুষ হতে সাহায্য করেছে। আমার সন্তান আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা। তার জন্য আমি আরও শক্তিশালী, আরও দায়িত্বশীল এবং আরও ভালো বাবা হতে চাই। পিতৃত্বের এই মধুর অভিজ্ঞতা আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অধ্যায়, যা আমি সারা জীবন মনে রাখব।

লেখক পরিচিতি: উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:২২ পূর্বাহ্ণ
ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, মিলন এবং নতুন করে বাঁচার প্রেরণা। এই দিনে সবাই চায় নিজেকে সাজিয়ে নিতে, নতুন কাপড় পরে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে। কিন্তু এমন অনেকের মধ্যেও থাকে এমন কেউ, যার জন্য একটি নতুন জামা শুধু পোশাক নয়, বরং স্বপ্ন, গর্ব, আত্মমর্যাদা এবং একটি আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। এই প্রবন্ধে আমরা এমন এক নতুন জামার কথা বলব, যে জামার শুধু দামী কাপড় বা ডিজাইনের গর্ব নেই, বরং রয়েছে আত্মার গভীরে জমে থাকা এক মানুষের স্বপ্নের গল্প।

শহরের এক কোণায় বাস করে ছোট্ট ছেলেটি রিয়াদ। বয়স প্রায় দশ। তার বাবা একজন দিনমজুর, মা গৃহিণী। সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যে কোনোভাবে দিন কাটে তাদের। বছরের প্রতিটি দিন কাটে সংগ্রামের মাঝে, কিন্তু ঈদ আসে স্বপ্নের আলো নিয়ে। ঈদে নতুন জামা পাবে, এই আশায় রিয়াদ এক মাস রোজা রাখে, নিজের মনকে শক্ত করে।

তবে এই জামা আসবে কি না, তা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, বাবার মুখে ভাঁজ আর চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। মা বারবার বলেন, “এবার হয়তো পুরনো জামাতেই ঈদ করতে হবে।” কিন্তু রিয়াদ বিশ্বাস করে—আল্লাহ যদি রোজা কবুল করেন, তাহলে একটা নতুন জামা হয়তো আসবেই।

এই জামার অপেক্ষা শুধু রিয়াদের নয়, এটি যেন তার মন-প্রাণের আকুতি। এই জামা তার জন্য স্বপ্নপূরণ, আত্মমর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্বের অনুভব।

আমরা অনেক সময় বুঝি না, একটি নতুন জামা একজন শিশুর জন্য কতটা অর্থবহ হতে পারে। ধনী পরিবারের শিশুর কাছে এটি হয়তো একটি চমকপ্রদ পোশাক, কিন্তু রিয়াদের কাছে এটি স্বপ্ন পূরণের মতো। সে ভাবে, ঈদের দিন সবার মতো তাকেও যদি নতুন জামায় দেখা যায়, তাহলে সে আর অবহেলিত হবে না, তার বন্ধুরা তাকে হাসবে না। তারও মুখে হাসি ফুটবে, তারও ছবি উঠবে মোবাইল ক্যামেরায়।

এই জামা তার আত্মবিশ্বাস, যেটা সে স্কুলে পড়ার সময় খুঁজে বেড়ায়, যখন ক্লাসের অন্য ছেলেরা নতুন জামা পরে আসে আর সে পড়ে থাকে একঘেয়ে মলিন কাপড়।

এখানে জামার একটি কল্পিত স্বর ও ভাষা কল্পনা করা যাক—যেখানে জামাটি যেন নিজের মনে নিজের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছে: “আমি কোনো বিলাসী দোকানের শেলফে ঝুলে থাকা দামি জামা নই। আমি সেই জামা, যাকে এক দরিদ্র বাবার কষ্টের টাকায় কিনে আনা হবে তার ছেলের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে।
আমি হয়তো রঙিন নই, হয়তো আমার ডিজাইনে জাঁকজমক নেই, কিন্তু আমি গর্বিত। কারণ আমি হব একটি শিশুর ঈদের স্বপ্ন পূরণের বাহক। আমি হব আত্মমর্যাদার প্রতীক, আমি হব ঈদের প্রাপ্তির প্রতিচ্ছবি।”

এই ভাবনার মধ্যেই ফুটে ওঠে জামার স্বপ্ন—সে চায়, তাকে কেউ ভালোবাসুক, পরিধান করুক, আর আনন্দ পাক।

রিয়াদের মা হয়তো নিজের জন্য কোনো কাপড় কিনবেন না, বাবা হয়তো একজোড়া চপ্পল না কিনে সেই টাকায় ছেলের জামা কিনে দেবেন। কারণ, সন্তানের হাসির চেয়ে বড় কিছু তাদের কাছে নেই। একটি নতুন জামার পেছনে লুকিয়ে থাকে একটি পরিবারের নীরব ত্যাগ, ভালোবাসা আর গোপন কান্না।

ঈদের নতুন জামা এই পরিবারগুলোর কাছে শুধু পোশাক নয়—এটা এক সম্মান, ভালোবাসা এবং আত্মতৃপ্তির চিহ্ন। অনেক সময় বাবা-মায়েরা নিজেদের প্রয়োজন বিসর্জন দিয়ে সন্তানের মুখে হাসি দেখতে চান। নতুন জামা যেন সেই আত্মত্যাগের স্বাক্ষর হয়ে উঠে।

ঈদের দিন আমরা যখন দেখি কেউ চকচকে কাপড় পরে বেরিয়েছে, আর কেউ পুরনো জামা পরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, তখন সামাজিক বৈষম্যের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নতুন জামার গুরুত্ব সেখানে দ্বিগুণ। এটি একধরনের সামাজিক মর্যাদা।

রিয়াদ হয়তো তার বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ভাবে—আমারও যদি এমন একটা জামা থাকত! শুধু ঈদের দিনটা নয়, পুরো জীবনজুড়ে সেই হাহাকার থেকে যায়। এই এক টুকরো জামাই তার স্বপ্নকে উঁচুতে নিয়ে যেতে পারে, আর না থাকলে আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়ে।

দরিদ্র শিশুদের জন্য ঈদে জামার প্রাপ্তি মানে কী? সমান মর্যাদা – অন্যদের মতো তাকেও দেখা হয় একজন ‘পূর্ণ’ শিশুর মতো।  আত্মবিশ্বাস – নতুন জামা পরে সে খুশি মনে বন্ধুদের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। পরিবারের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি – সে উপলব্ধি করে, তার মা-বাবা তাকে কত ভালোবাসে।

৪. ভবিষ্যতের স্বপ্ন – একজন শিশু জানে, সে যদি চেষ্টার মধ্যে থাকে, তার স্বপ্ন একদিন পূরণ হবেই।

ঈদের সকালে রিয়াদের ঘুম ভাঙে ভোরবেলা। মা হাসিমুখে এসে বলে—
“এই দেখ, তোমার নতুন জামা।”
রিয়াদ প্রথমে বিশ্বাস করতে পারে না। হাত বাড়িয়ে জামাটা নেয়, চোখে জল চলে আসে। “আমার?”
মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, “হ্যাঁ বাবা, তোমার।”
রিয়াদ তার ছোট জামাটিকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে, যেন এটিই তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

সেই জামা তখন আর শুধু সুতা ও রঙের মিশ্রণ নয়, সেটি তখন একটি ‘স্বপ্ন’। একটি সন্তুষ্টির প্রতীক, একটি ছোট শিশুর গর্বের নিশান।

আমরা যারা সমাজের ভাগ্যবান অংশ, তাদের উচিত এই বৈষম্য দূর করতে সচেষ্ট হওয়া। প্রতিবছর ঈদের আগে আমরা অনেকেই প্রচুর জামা কিনি, কিন্তু ভাবি না পাশের দরিদ্র শিশুটার কথা। যদি আমরা একটি নতুন জামা কাউকে দিতে পারি, তাহলে তার ঈদটা হয়ে উঠতে পারে জীবনের সেরা দিন।সামাজিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার—সবাই যদি চায়, তাহলে প্রত্যেক শিশুর ঈদে একটি নতুন জামা নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি দান নয়, এটি মানুষের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা।

“ঈদে একটি নতুন জামা যার স্বপ্ন” এই বাক্যটি শুধুমাত্র কোনো এক জামা বা একটি শিশুর গল্প নয়, এটি হাজারো রিয়াদের গল্প। এটি আমাদের সমাজে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য মানুষের জীবনবোধের চিত্র। একটি নতুন জামা কেবল দেহ ঢাকার উপকরণ নয়, এটি মানুষের সম্মান, আত্মবিশ্বাস এবং ভালোবাসার প্রতীক। আমরা যদি এই একটুকরো জামার ভেতর মানুষের আবেগ, স্বপ্ন ও আত্মত্যাগ দেখতে পারি, তাহলে সমাজে সত্যিকার পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। আসুন, এই ঈদে আমরা কেবল নিজেদের জন্য না, অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যও একটি নতুন জামার স্বপ্ন বুনি।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:৩৮ অপরাহ্ণ
চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভা (১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৫) নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি (২০২৫-২০২৮) ঘোষণা করা হয়েছে। সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (সর্বশেষ সংশোধন ২০১৩) ও সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ (সর্বশেষ সংশোধন ২০২০) অনুযায়ী নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন (পরিদর্শক, জেলা সমবায় কার্যালয়, চাঁদপুর) কোন পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছয় সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষণা করেন। নবনির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি- মোঃ ইকবাল আজম (প্রতিনিধি, দি চাঁদপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সহ-সভাপতি- মোঃ আফজাল হোসেন খান (প্রতিনিধি, মিলেনিয়াম বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সম্পাদক- দুলাল চন্দ্র দাস (প্রতিনিধি, বাগড়া শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- মোঃ আক্কাস ফরাজী (প্রতিনিধি, রূপসী পল্লী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- খন্দকার ফখরুল আলম (প্রতিনিধি, আশার আলো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সদস্য- মোঃ খোরশেদ আলম (প্রতিনিধি, খাজুরিয়া বাজার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ)।
জেলার বিভিন্ন সমবায় সমিতির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ও নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন এর সভাপতিত্বে নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের কৃতি সন্তান, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সমবায়ী ও বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন শেখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন জেলা সমবায় ইউনিয়ন, জেলার সমবায় সমিতি ও সমবায়ীদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব থাকলেও চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নে দীর্ঘদিন নির্বাচিত কমিটি ছিল না, যার কারণে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। আমরা বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন থেকে চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নকে কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। সমবায় বিভাগ এতে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির গঠন করে, যার ফলশ্রুতিতে আজকে আমরা একটি নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে পেরেছি। এজন্য তিনি সমবায় বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান পাশাপাশি নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানান। সভায় তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। সকলের সহযোগিতায় তা বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সভায় অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সভাপতি মুরাদ হোসেন খান, জুন হাউজিং কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর প্রতিনিধি এ ওয়াই এম জাকারিয়া, ওয়ারলেস বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি মোঃ জিয়াউদ্দিন, ইসলামীয়া সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি নাজমুল হুদা প্রমূখ।
উল্লেখ্য প্রতি ৩ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও ২০১২ সালের পর, দীর্ঘ ১৩ বছর পর এই ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হলো।

আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ
আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আগামী ২ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সম্প্রতি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, সংসদ না থাকায় এবার সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে না। অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ কারণে ২ জুন বাজেট ঘোষণার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণত আগের অর্থবছরগুলোতে বৃহস্পতিবার বাজেট দেওয়া হতো, এবার সোমবার ঘোষণা করা হবে। বাজেট ঘোষণার পর আগের রীতি অনুযায়ী অর্থ উপদেষ্টা বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।

সূত্রটি জানিয়েছে, সাধারণত প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় বড় রাখা হয়। তবে এবার বাজেট ঘাটতি কমিয়ে বাজেট ছোট কারার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

বাজেটের আকার কমানো হলেও সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিকীকরণ সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ ধরতে পারে। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। চলতি অর্থবছরেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। যদিও গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।