খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫, ৩ শ্রাবণ, ১৪৩২

এক স্বপ্ন ভরা জীবনের অসমাপ্ত বিদায়

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ অপরাহ্ণ
এক স্বপ্ন ভরা জীবনের অসমাপ্ত বিদায়

চাঁদপুর শহরের মমিনপাড়ার একজন সাধারণ ছাত্র আল-আমিন। সে গনি মডেল হাই স্কুল থেকে সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ভবিষ্যতের স্বপ্নে উজ্জীবিত এই তরুণের জীবনের জন্য এটি ছিল অবিস্মরণীয় সাফল্যের বছর । কিন্তু ১২ জুলাই (শনিবার) সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে চাঁদপুর শহরের লেকেরপাড়ে আড্ডার সময় বাজি ধরার নামে সাঁতার প্রতিযোগিতার এক অদ্ভুত দুর্বৃত্ততা আল-আমিনের জীবন ছিনিয়ে নেয় । তার মৃত্যুতে স্বপ্ন অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে—এটি হতে পারতো আনন্দঘন এক স্মরণযাত্রা, যা হয়ে দাঁড়ায় শোকাবহ পতনের গল্প। দুর্ঘটনা না পরিকল্পিত হত্যা—সন্ধানে এখনো অমীমাংসা। কারণ বন্ধুদের কথা অনুযায়ী ঘটেছে দুর্ঘটনা- ৫০০ টাকা বাজি ধরে সে লেকে সাঁতার কাটার চেষ্টা করছিল। আর হঠাৎ পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়। অথচ পরিবারের বক্তব্য ভিন্ন-কিশোর গ্যাং পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লেকে ফেলে দিয়েছে, চোখ ও হাতে আঘাতের চিহ্ন থেকে সন্দেহ জন্মে । এ ঘটনায় পুলিশ সাতজন সহপাঠীকে আটক করেছে এবং ময়নাতদন্তের অপেক্ষায় ঘটনা তদন্ত চলছে । লেকেরপাড় এলাকায় তরুণদের ঘোরাঘুরি কমে না। মাঝে মাঝে আড্ডা, মাঝে মাঝে বাজি, বন্ধুত্বের ছলনা—এ সবই সাধারণ দৃশ্য লেকপাড়ে। কিন্তু সেটি কী সহজেই নিরাপদ? এই ঘটনা আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক করে—পানির গভীরতা, মলিনতা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকা ও অসচেতনতার মিশ্রণে এক সময় অভিশাপে পরিণত হয়। চাঁদপুর পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত—চাঁদপুর লেকেরপাড়ে নিরাপত্তা বাড়ানো, লাইফ‌গার্ডের ব্যবস্থা, নিরাপদ সতর্কতা বার্তা, স্কুল-কলেজ পর্যায়ে জলনিরাপত্তা বিষয়ে জাগরণমূলক পাঠদান। ছোট ছোট পদক্ষেপ এ রকম অকাল মৃত্যু থেকে প্রাণে বাঁচাতে পারে।

পরিবারের দাবি—পরিকল্পিত হত্যার পেছনে সামাজিক ব্যাধি বিদ্যমান। আদালতে দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার প্রণয়ন নিশ্চিত করতে হবে। যখতে এমন অনৈতিক পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রুখতে হবে। পুলিশ ও প্রশাসন যেন চলমান ময়নাতদন্ত  প্রমাণসহ সম্পূর্ণ তদন্ত নিশ্চিত করে দ্রুত অপরাধী হলে বিচারের আওতায় আনে।

বর্তমান কালে ফেসবুক, ইউটিউব, টিভি নিউজে ট্র্যাজেডি ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। আল আমিনের পরিবারের কান্না, হতাশা, বিক্ষোভ—সবাই জানে, সবাই শোনে। কিন্তু আমরা বাস্তবে কজন এগিয়ে এসে পরিবারকে সহায়তা করলাম? আইন-আদালতের বাইরে জনবিচার কখনই স্থায়ী নয়। বরং, বজায় রাখা উচিত শুধু মানবিক সহানুভূতি ও সমাজের নৈতিক সুরক্ষা—যাতে নতুন কোনো আল আমিন আর কখনও প্রাণ না হারায়।

“জীবন বাজি নয়—নিরাপদ যাপনই জীবনের লক্ষ্য”—এই শিক্ষাটি নিশ্চয়ই যেকোনো পিতামাতার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে মৌলিক অভিযোজন। আমরা বলবো বন্ধুর প্রলুব্ধতা থেকে দূরে থাকো, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ না করো—এরকম বার্তা যারা বুঝতে পারবে তারা জীবনকে বাজি করে কোনো বড় অপকর্ম সংঘটিত হতে দিবে না। এই ক্ষতিকারক বাজি প্রতিযোগিতা স্বাভাবিক না হয়ে আবারো শিক্ষাদানের প্রকল্প হিসেবে সে এক উদাহরণ।

আল-আমিনের মর্মান্তিক এই মৃত্যু আমাদের জাতি, সমাজের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা—সমাজ কতটা সচেতন, বিপদের মুহূর্তে কতটা সজাগ, এবং কেউ কেউ কতটা উদাসীন। শিক্ষক, অভিভাবক, রাজনৈতিক নেতা সবাইকেই একত্রে কাজ করতে হবে, যাতে আর কোন তরুণ প্রকৃত মৃত্যুর মুখে না ঠেকতে হয়। বছরের পর বছর মৃত্যুর গল্প বলার আগে, এ জাতি কবে বুঝবে প্রতিটি অমীমাংসিত মৃত্যু ? বিচার, সতর্কতা ও নৈতিকতা এই তিন স্তম্ভ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

আল-আমিনের জন্য আমরা যে চোখের জল ফেলি, তা যেন নিছকই বোবা কান্নায় রূপান্তরিত না হয়—তা যেনো সচেতনতা, সহানুভুতি ও আইন‌শৃঙ্খলার উদ্ভাবনী গোড়া হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই লেকের পাড়ে আল আমিনের মৃত্যু শুধুমাত্র একটি প্রাসঙ্গিক সংবাদ নয়—এটি জাতির নিজস্বতার কম্পাস যা বলে দেয়, আল আমিন্‌দের মৃত্যু আমরা আর মেনে নিতে পারি না।

আজ সারা দেশে এনসিপির বিক্ষোভ কর্মসূচি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ
আজ সারা দেশে এনসিপির বিক্ষোভ কর্মসূচি

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় আজ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ফরিদপুরসহ সারা দেশের এনসিপির পূর্বঘোষিত পদযাত্রা অব্যাহত থাকবে। শুধুমাত্র মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে বৃহস্পতিবারের যে কর্মসূচি ছিল সেটি স্থগিত করে পরবর্তীতে তারিখ ঘোষণা করা হবে। বুধবার (১৬ জুলাই) রাতে খুলনা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপির এটি ছিল পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি। সেই লক্ষ্যে প্রশাসনকে জানিয়ে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার কথা জেনেই গোপালগঞ্জ সফরে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ হামলা করেছে। গোপালগঞ্জে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে আওয়ামী লীগের বাইরেও যে অন্য কোনো দল কর্মসূচি করতে পারে সেটি এনসিপি প্রমাণ করে দিয়েছে।
সমাবেশের আগে ও পরে দফায় দফায় হামলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ হামলা পূর্ব পরিকল্পিত সেটি প্রমাণিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও সতর্ক থাকতে পারতো উল্লেখ করে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে সহায়তা দিয়েছে সেজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোপালগঞ্জের হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান নাহিদ ইসলাম। উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের হামলার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে বুধবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনা এসে পৌঁছান।

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে নিহত ২

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ
গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে নিহত ২

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে হামলা–সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। হাসপাতাল ও পরিবার সূত্র এ কথা জানিয়েছে। নিহত দুজন হলেন গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (২৫) ও কোটালীপাড়ার রমজান কাজী (১৮)। আজ বুধবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, বিকেলে তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁরা গুলিবিদ্ধ ছিলেন।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে নিহত দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। অপরজনের মৃত্যুর বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হাসপাতালের একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই ব্যক্তির লাশ স্বজনেরা নিয়ে গেছেন। হাসপাতালের কর্মকর্তা জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, আরও ৯ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের অস্ত্রোপচার চলছে।
মৃত্যুর তথ্য জানতে গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ধরেননি। তথ্য জানতে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহম্মদ কামরুজ্জামান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. গোলাম কবিরকে কল দিলে তাঁরা কথা বলতে রাজি হননি। নিহত দীপ্ত সাহার চাচা বলেন, দীপ্ত দুপুরের খাবার খেয়ে তাঁর দোকানে যাচ্ছিলেন। শহরের চৌরঙ্গীতে তাঁর পেটে গুলি লাগে।
নিহত রমজান কাজীর বাবা কামরুল কাজী বলেন, ‘আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলছে। আমার ছেলে তো কোনো দোষ করেনি। আমি আমার সন্তানকে কোথায় পাব?’ এর আগে গোপালগঞ্জের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশ শেষে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, এনসিপির সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একদল ব্যক্তি লাঠিসোঁটা নিয়ে নেতা-কর্মীদের ঘিরে হামলা চালান। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এনসিপির নেতা-কর্মীরা অন্যদিক দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। হামলার ঘটনার পর এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছেন। এ সময় পুলিশ-সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তাদের (এনসিপি) বলা হয়েছিল, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু তাঁরা সমাবেশস্থলে এসে দেখেন, পরিস্থিতি ঠিক নেই।

গোপালগঞ্জ কারফিউয়ে থমথমে, আটক ১৪

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ
গোপালগঞ্জ কারফিউয়ে থমথমে, আটক ১৪

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় কারফিউ জারি করে প্রশাসন। কারফিউয়ের মধ্যে যৌথ বাহিনী বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে আটক করেছে। তাদের গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো মামলা দায়ের হয়নি বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মো. সাজেদুর রহমান।
এদিকে চলমান কারফিউয়ে জেলায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। গতকাল রাত থেকে সীমিত আকারে রিকশা চলাচল করলেও অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি, বন্ধ ছিল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হয়নি। রাতে শহরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি। আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এখনো পর্যন্ত রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারে মানুষের আনাগোনা নেই বললেও চলে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কারফিউয়ের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। নেই টহলও। তবে জেলা কারাগারের সামনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।