এক স্বপ্ন ভরা জীবনের অসমাপ্ত বিদায়

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশের সময়: সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫ । ৯:৩৭ অপরাহ্ণ

চাঁদপুর শহরের মমিনপাড়ার একজন সাধারণ ছাত্র আল-আমিন। সে গনি মডেল হাই স্কুল থেকে সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ভবিষ্যতের স্বপ্নে উজ্জীবিত এই তরুণের জীবনের জন্য এটি ছিল অবিস্মরণীয় সাফল্যের বছর । কিন্তু ১২ জুলাই (শনিবার) সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে চাঁদপুর শহরের লেকেরপাড়ে আড্ডার সময় বাজি ধরার নামে সাঁতার প্রতিযোগিতার এক অদ্ভুত দুর্বৃত্ততা আল-আমিনের জীবন ছিনিয়ে নেয় । তার মৃত্যুতে স্বপ্ন অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে—এটি হতে পারতো আনন্দঘন এক স্মরণযাত্রা, যা হয়ে দাঁড়ায় শোকাবহ পতনের গল্প। দুর্ঘটনা না পরিকল্পিত হত্যা—সন্ধানে এখনো অমীমাংসা। কারণ বন্ধুদের কথা অনুযায়ী ঘটেছে দুর্ঘটনা- ৫০০ টাকা বাজি ধরে সে লেকে সাঁতার কাটার চেষ্টা করছিল। আর হঠাৎ পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়। অথচ পরিবারের বক্তব্য ভিন্ন-কিশোর গ্যাং পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লেকে ফেলে দিয়েছে, চোখ ও হাতে আঘাতের চিহ্ন থেকে সন্দেহ জন্মে । এ ঘটনায় পুলিশ সাতজন সহপাঠীকে আটক করেছে এবং ময়নাতদন্তের অপেক্ষায় ঘটনা তদন্ত চলছে । লেকেরপাড় এলাকায় তরুণদের ঘোরাঘুরি কমে না। মাঝে মাঝে আড্ডা, মাঝে মাঝে বাজি, বন্ধুত্বের ছলনা—এ সবই সাধারণ দৃশ্য লেকপাড়ে। কিন্তু সেটি কী সহজেই নিরাপদ? এই ঘটনা আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক করে—পানির গভীরতা, মলিনতা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকা ও অসচেতনতার মিশ্রণে এক সময় অভিশাপে পরিণত হয়। চাঁদপুর পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত—চাঁদপুর লেকেরপাড়ে নিরাপত্তা বাড়ানো, লাইফ‌গার্ডের ব্যবস্থা, নিরাপদ সতর্কতা বার্তা, স্কুল-কলেজ পর্যায়ে জলনিরাপত্তা বিষয়ে জাগরণমূলক পাঠদান। ছোট ছোট পদক্ষেপ এ রকম অকাল মৃত্যু থেকে প্রাণে বাঁচাতে পারে।

পরিবারের দাবি—পরিকল্পিত হত্যার পেছনে সামাজিক ব্যাধি বিদ্যমান। আদালতে দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার প্রণয়ন নিশ্চিত করতে হবে। যখতে এমন অনৈতিক পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রুখতে হবে। পুলিশ ও প্রশাসন যেন চলমান ময়নাতদন্ত  প্রমাণসহ সম্পূর্ণ তদন্ত নিশ্চিত করে দ্রুত অপরাধী হলে বিচারের আওতায় আনে।

বর্তমান কালে ফেসবুক, ইউটিউব, টিভি নিউজে ট্র্যাজেডি ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। আল আমিনের পরিবারের কান্না, হতাশা, বিক্ষোভ—সবাই জানে, সবাই শোনে। কিন্তু আমরা বাস্তবে কজন এগিয়ে এসে পরিবারকে সহায়তা করলাম? আইন-আদালতের বাইরে জনবিচার কখনই স্থায়ী নয়। বরং, বজায় রাখা উচিত শুধু মানবিক সহানুভূতি ও সমাজের নৈতিক সুরক্ষা—যাতে নতুন কোনো আল আমিন আর কখনও প্রাণ না হারায়।

“জীবন বাজি নয়—নিরাপদ যাপনই জীবনের লক্ষ্য”—এই শিক্ষাটি নিশ্চয়ই যেকোনো পিতামাতার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে মৌলিক অভিযোজন। আমরা বলবো বন্ধুর প্রলুব্ধতা থেকে দূরে থাকো, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ না করো—এরকম বার্তা যারা বুঝতে পারবে তারা জীবনকে বাজি করে কোনো বড় অপকর্ম সংঘটিত হতে দিবে না। এই ক্ষতিকারক বাজি প্রতিযোগিতা স্বাভাবিক না হয়ে আবারো শিক্ষাদানের প্রকল্প হিসেবে সে এক উদাহরণ।

আল-আমিনের মর্মান্তিক এই মৃত্যু আমাদের জাতি, সমাজের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা—সমাজ কতটা সচেতন, বিপদের মুহূর্তে কতটা সজাগ, এবং কেউ কেউ কতটা উদাসীন। শিক্ষক, অভিভাবক, রাজনৈতিক নেতা সবাইকেই একত্রে কাজ করতে হবে, যাতে আর কোন তরুণ প্রকৃত মৃত্যুর মুখে না ঠেকতে হয়। বছরের পর বছর মৃত্যুর গল্প বলার আগে, এ জাতি কবে বুঝবে প্রতিটি অমীমাংসিত মৃত্যু ? বিচার, সতর্কতা ও নৈতিকতা এই তিন স্তম্ভ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

আল-আমিনের জন্য আমরা যে চোখের জল ফেলি, তা যেন নিছকই বোবা কান্নায় রূপান্তরিত না হয়—তা যেনো সচেতনতা, সহানুভুতি ও আইন‌শৃঙ্খলার উদ্ভাবনী গোড়া হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই লেকের পাড়ে আল আমিনের মৃত্যু শুধুমাত্র একটি প্রাসঙ্গিক সংবাদ নয়—এটি জাতির নিজস্বতার কম্পাস যা বলে দেয়, আল আমিন্‌দের মৃত্যু আমরা আর মেনে নিতে পারি না।

সম্পাদক ও প্রকাশক : উজ্জ্বল হোসাইন ।  কপিরাইট © রূপসী বাংলা সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন