খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতার প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠতা

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৭:৫৯ অপরাহ্ণ
গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতার প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠতা

গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। তথ্য সরবরাহ, জনমত গঠন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে গণমাধ্যমের এই শক্তির অপব্যবহার যখন শুরু হয়, তখন তা হয়ে ওঠে ‘হলুদ সাংবাদিকতা’। বর্তমানে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী হলুদ সাংবাদিকতার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। হলুদ সাংবাদিকতা বলতে এমন ধরনের সংবাদ পরিবেশনাকে বোঝায়, যেখানে সত্যের চেয়ে চাঞ্চল্য, গুজব, অর্ধসত্য, এবং অতিরঞ্জনের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়া হয়। এতে পাঠক বা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়। তবে এর মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বিকৃত হয়। সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এমনকি সামাজিক মাধ্যমেও হলুদ সাংবাদিকতার বিস্তার লক্ষ্য করা যায়।
হলুদ সাংবাদিকতা অনেকগুলো বৈশিষ্ট আছে-অতিরঞ্জিত শিরোনাম, যাচাইবিহীন তথ্য, ব্যক্তিগত চরিত্রহনন, গুজব ও ভিত্তিহীন সংবাদের প্রচার, জনসচেতনতা বৃদ্ধির পরিবর্তে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা।
মূলকত হলুদ সাংবাদিকতার শুরু মূলত ১৯ শতকের শেষদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। উইলিয়াম র‌্যান্ডলফ হার্স্ট এবং জোসেফ পুলিৎজারের মধ্যে সংবাদপত্র বিক্রির প্রতিযোগিতায় চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশের প্রবণতা দেখা দেয়। তখন “ইয়েলো কিড” নামে একটি কমিক চরিত্র জনপ্রিয় হওয়ায় ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ শব্দটির জন্ম হয়। ধীরে ধীরে এটি একটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হতে থাকে। বর্তমান সময়ে, আধুনিক প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের বিকাশের সাথে সাথে হলুদ সাংবাদিকতার বিস্তার আরও দ্রুত হয়েছে।
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের বিকাশ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে প্রিন্ট মিডিয়া ছাড়াও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং বর্তমানে অনলাইন মিডিয়া অনেক বিস্তৃত হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজার, দর্শক আকৃষ্ট করার চাপ এবং বিজ্ঞাপন আয়ের নির্ভরতাই মূলত হলুদ সাংবাদিকতার প্রসারে ভূমিকা রাখছে। কিছু সংবাদপত্র ও চ্যানেল সত্যাসত্য যাচাই না করেই চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রচার করে থাকে। যার ফলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এমনকি জাতীয় নিরাপত্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
হলুদ সাংবাদিকতার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমন-প্রতিযোগিতা এবং পাঠকসংখ্যা বাড়ানোর চাপ, বাজারে টিকে থাকার জন্য সংবাদমাধ্যমগুলো দ্রুততম এবং চিত্তাকর্ষক খবর প্রকাশের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্য-বিজ্ঞাপনদাতারা যেখানে বেশি দর্শক বা পাঠকসংখ্যা দেখেন, সেখানে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেন। ফলে গণমাধ্যমগুলো দর্শকসংখ্যা বাড়াতে সংবাদের গুণগত মানের চেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে।
সাংবাদিকতার নৈতিকতার অভাব-অনেক সাংবাদিক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষা ছাড়াই পেশায় প্রবেশ করেন, যা হলুদ সাংবাদিকতার বিস্তার ঘটায়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-কিছু সংবাদমাধ্যম রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করে। তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার-সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তা মূলধারার মিডিয়াতেও স্থান পায়, ফলে হলুদ সাংবাদিকতা বাড়ে।
হলুদ সাংবাদিকতার নানামূখী প্রভাব রয়েছে-তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জনমনে বিভ্রান্তি-ভিত্তিহীন এবং অতিরঞ্জিত সংবাদ জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, যা সামাজিক বিশৃঙ্খলা ডেকে আনতে পারে। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সুনামহানি-মিথ্যা বা অপূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশের ফলে ব্যক্তিগত জীবনে এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিতে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। গণমাধ্যমের উপর আস্থা কমে-বারবার হলুদ সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা জনগণকে গণমাধ্যমের প্রতি অবিশ্বাসী করে তোলে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ক্ষতি-প্রকৃত তথ্যের অভাবে নাগরিকরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে। সামাজিক অস্থিরতা-বিশেষ করে গুজব নির্ভর সংবাদ দ্রুত সামাজিক উত্তেজনা ও সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে।
হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধের আমাদেও অনেক করণীয় রয়েছে-যেমন নৈতিক সাংবাদিকতা চর্চা-সাংবাদিকদের উচিত নৈতিকতা ও পেশাদারিত্ব মেনে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার করা। সঠিক তথ্য যাচাই না করে কোনো সংবাদ প্রকাশ করা উচিত নয়। সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা-গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং সাংবাদিকতার মৌলিক নীতিমালার শিক্ষা প্রয়োজন। গণমাধ্যমের স্বনিয়ন্ত্রণ-গণমাধ্যমগুলো নিজেরাই নিজেদের কার্যক্রমের জন্য দায়বদ্ধ থাকতে হবে। প্রেস কাউন্সিল বা সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আরো কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। আইনগত ব্যবস্থা-ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। তবে এতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি-পাঠক ও দর্শকদের সচেতন হতে হবে। যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো খবর বিশ্বাস করা উচিত নয়। মিডিয়া লিটারেসি শিক্ষার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করে তোলা জরুরি। সত্য-নির্ভর সাংবাদিকতার উৎসাহ-সংবাদের মান ও নির্ভরযোগ্যতার জন্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি প্রদান করা হলে সাংবাদিকরা হলুদ সাংবাদিকতার পরিবর্তে গঠনমূলক সাংবাদিকতার দিকে আগ্রহী হবে। সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ-
ফেক নিউজ বা গুজব রোধে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে এবং সরকারিভাবে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করতে হবে।
হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধে বাংলাদেশে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে গণমাধ্যম নীতিমালা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে কিছুটা হলেও হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, কিছু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করে সংবাদ যাচাইয়ের পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন যেমন প্রেস কাউন্সিল, সাংবাদিক ইউনিয়ন ইত্যাদি সংগঠন সংবাদ পরিবেশনায় নৈতিকতার প্রচারণা চালাচ্ছে।
গণমাধ্যম আধুনিক সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু সংবাদ পরিবেশন করে না, বরং জনমত গঠনে, গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে গণমাধ্যমের এই শক্তি তখনই ইতিবাচক হয় যখন এটি বস্তুনিষ্ঠতার সাথে পরিচালিত হয়। বস্তুনিষ্ঠতা মানে হলো সত্যতা, নিরপেক্ষতা এবং পক্ষপাতহীনভাবে তথ্য উপস্থাপন করা। গণমাধ্যম যদি বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়, তবে তা জনগণের কাছে ভুল বার্তা প্রেরণ করে এবং সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
গণমাধ্যমের প্রধান দায়িত্ব হলো তথ্য সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করে তা যথাযথভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সংবাদ পরিবেশনের সময় ব্যক্তিগত মতাদর্শ, রাজনৈতিক পক্ষপাত কিংবা বাণিজ্যিক স্বার্থকে প্রভাবিত না করতে পারাই হলো বস্তুনিষ্ঠতা। একজন সাংবাদিকের কর্তব্য হচ্ছে তথ্যের উৎস যাচাই করা, ভিন্নমতকে সম্মান দেখানো এবং ঘটনার সবদিক তুলে ধরা। পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ পরিবেশন সমাজে বিভাজন তৈরি করে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।
আজকের বিশ্বে ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট এবং অনলাইন মাধ্যমের বিপুল বিস্তারের কারণে সংবাদ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিযোগিতার এই যুগে কিছু গণমাধ্যম দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন বা অর্থনৈতিক লাভের জন্য অতিরঞ্জিত ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করে থাকে। এতে পাঠক বা দর্শকের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। গণমাধ্যমের উচিত — সংবাদের গতি নয়, গুণগত মানের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া। একটি স্বাধীন ও দায়িত্বশীল গণমাধ্যমই পারে সঠিক তথ্য তুলে ধরে জনগণকে সচেতন করতে।
গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষার জন্য প্রয়োজন স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং নৈতিকতা। সাংবাদিকদের অবশ্যই তাদের পেশাগত নীতিমালা মেনে চলতে হবে। একই সাথে, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করতে হবে। বিজ্ঞাপনী স্বার্থ বা কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠীর চাপের কাছে নতি স্বীকার করা গণমাধ্যমের জন্য আত্মঘাতী। বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যম জনগণের আস্থা অর্জন করে, আর এই আস্থাই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি।
তাছাড়া, সাধারণ জনগণেরও গণমাধ্যমের ওপর নজরদারি রাখা প্রয়োজন। ভোক্তাদের সচেতনতা গণমাধ্যমকে বস্তুনিষ্ঠ থাকার জন্য উৎসাহিত করে। আজকের যুগে সামাজিক মাধ্যমের বিস্তারে সাধারণ মানুষও সংবাদ প্রচারের অংশ হয়ে উঠেছে। তাই সংবাদ যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা এখন আরও বেশি। মিথ্যা সংবাদ বা গুজবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এবং সত্য-ভিত্তিক তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে নাগরিকরাও গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখতে পারে।
সর্বশেষে বলা যায়, গণমাধ্যমের শক্তি তখনই প্রকৃত অর্থে সমাজের কল্যাণে আসে যখন সেটি বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখে। পক্ষপাতমুক্ত, ন্যায়সঙ্গত ও সত্যনিষ্ঠ গণমাধ্যমই পারে একটি সুস্থ, উন্নত ও গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে।
গণমাধ্যমের প্রকৃত শক্তি হলো সত্য এবং জনস্বার্থ রক্ষা। হলুদ সাংবাদিকতা সেই শক্তিকে দুর্বল করে জনগণের আস্থা বিনষ্ট করে। তাই গণমাধ্যমের উচিত সত্যের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকা এবং নৈতিকতার আদর্শ অনুসরণ করা। একইসঙ্গে পাঠক, দর্শক, সরকারি সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হলুদ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।
তথ্যভিত্তিক, নিরপেক্ষ এবং গঠনমূলক সাংবাদিকতাই পারে গণতন্ত্রকে মজবুত করতে এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে। সুতরাং, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলুদ সাংবাদিকতার বিষয়ে সচেতন থাকা, এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়া।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ব্যাচ ২০২১, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, ঢাকা।

সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪৮ অপরাহ্ণ
সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। গণমাধ্যম এখন আর শুধু তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়, বরং অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক সংকটের জটিল সমীকরণের ভেতরে বন্দী।
অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম বিজ্ঞাপননির্ভর হওয়ায় তাদের স্বাধীনতা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক প্রতিষ্ঠানের আয়ের মূল উৎস। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের বিপরীতে প্রতিবেদন প্রকাশে সাংবাদিকরা প্রায়ই বাধার সম্মুখীন হন। ডিজিটাল যুগে ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্ম বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিয়ে নেওয়ায় সংবাদমাধ্যমগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
রাজনৈতিক চাপও সাংবাদিকতার অন্যতম বড় বাধা। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় সংবাদ নিয়ন্ত্রণে প্রভাব বিস্তার করে, সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা দেয়। মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকরা প্রায়ই হয়রানি, মামলা ও হামলার শিকার হন। এতে সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এছাড়া নৈতিক দ্বন্দ্বও আজ সাংবাদিকতার মূল সমস্যা। ভিউ বা ক্লিক বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় অনেক সময় সত্যের চেয়ে আকর্ষণীয় শিরোনামকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এতে পেশাগত সততা ও জনআস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সত্য ও মানবতার পক্ষে সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তি পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে সাংবাদিকতা আবারও হতে পারে সমাজের আয়না ও রাষ্ট্রের প্রকৃত চতুর্থ স্তম্ভ।
সাংবাদিকতা একটি জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ এবং রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা আর কেবল তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়; এটি আজ অর্থনীতি, রাজনীতি এবং নৈতিকতার জটিল সম্পর্কের ভেতর আটকে পড়া একটি প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা যেখানে গণতন্ত্রের মূল শর্ত, সেখানে অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক চাপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্ব এই স্বাধীনতাকে প্রতিনিয়ত সংকুচিত করে চলেছে।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত। বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল এই শিল্প অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক ও কর্পোরেট চাপ সাংবাদিকদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ফলে সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য—সত্য প্রকাশ—প্রায়ই বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর কাছে বন্দী হয়ে পড়ছে।
সাংবাদিকতার অর্থনীতি ও স্বাধীনতার শর্ত :
একটি সংবাদমাধ্যম পরিচালনা করতে যেমন সাংবাদিকতার আদর্শ প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। সাংবাদিকতার অর্থনীতি মূলত তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে—বিজ্ঞাপন, পাঠক বা দর্শক নির্ভর আয়, এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ।
১. বিজ্ঞাপন নির্ভরতা ও তার প্রভাব : বেশিরভাগ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান আয় আসে বিজ্ঞাপন থেকে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক পত্রিকার বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। ফলে সংবাদপত্রগুলো প্রায়ই বিজ্ঞাপনদাতাদের স্বার্থের বিপরীতে যেতে পারে না।
একটি বড় কোম্পানির অনৈতিক কার্যক্রম বা পরিবেশ দূষণ নিয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন অনেক সময় চাপের মুখে বাতিল হয়ে যায়, কারণ সেই কোম্পানি পত্রিকাটির অন্যতম বিজ্ঞাপনদাতা।
২. ডিজিটাল যুগের অর্থনৈতিক রূপান্তর : অনলাইন সাংবাদিকতার যুগে বিজ্ঞাপন আয় আরও বিভক্ত হয়েছে। ইউটিউব, ফেসবুক, গুগলের মতো টেক জায়ান্টরা এখন বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিজেদের দখলে রেখেছে। ফলে সংবাদমাধ্যমগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যেখানে অ্যালগরিদম নির্ধারণ করে কোন সংবাদ বেশি প্রচার পাবে। এর ফলে গঠনমূলক সাংবাদিকতার চেয়ে ‘ক্লিকবেট’ সংবাদ, উত্তেজক শিরোনাম ও ভিউ নির্ভর কনটেন্ট বাড়ছে।
৩. সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা : অর্থনৈতিক দুরবস্থার ফলে অনেক সংবাদকর্মী ন্যায্য বেতন পান না, কিংবা নিয়মিত বেতন পেতেও সমস্যার সম্মুখীন হন। চাকরির অনিশ্চয়তা, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক, এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার অভাব সাংবাদিকদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। ফলস্বরূপ তারা পেশাগত স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন, এবং কখনও কখনও আত্মরক্ষার তাগিদে আপোষে বাধ্য হন।
রাজনৈতিক চাপ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার শত্রু : বাংলাদেশসহ বহু দেশে রাজনৈতিক প্রভাব সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমের কাজ হলো ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিত করা, কিন্তু রাজনৈতিক দল ও শাসকগোষ্ঠী সেই স্বাধীনতাকে নিজের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
১. সরকারি প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ : সরকার প্রায়ই বিজ্ঞাপন, নিবন্ধন, ফ্রিকোয়েন্সি বা লাইসেন্স ইস্যুর মাধ্যমে গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। যেসব পত্রিকা বা টেলিভিশন সরকারবিরোধী সংবাদ প্রকাশ করে, তাদের ওপর বিভিন্ন প্রশাসনিক বা আর্থিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। কখনও কখনও ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড’ বা ‘ভুয়া তথ্য প্রচার’-এর অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়, যা সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
২. রাজনৈতিক দলীয় বিভাজন : রাজনৈতিক বিভাজন সাংবাদিকতার ভেতরও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক সংবাদমাধ্যম সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের অনুগত হয়ে কাজ করছে। এতে সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতা নষ্ট হচ্ছে, আর পাঠকের আস্থা কমছে। ‘একপক্ষীয় সাংবাদিকতা’ সাধারণ মানুষের চোখে মিডিয়াকে পক্ষপাতদুষ্ট ও অবিশ্বাস্য করে তুলছে।
৩. মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক সহিংসতা : জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকরা প্রায়ই রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি ও হামলার শিকার হন। তাদের ওপর মামলা, লাঞ্ছনা, কিংবা পেশাগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ‘কথা না শোনার’ কারণে সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েন।
নৈতিক দ্বন্দ্ব ও সাংবাদিকতার আত্মার পরীক্ষা : সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়, এটি একধরনের নৈতিক দায়িত্ব। সত্য অনুসন্ধান ও সমাজের কল্যাণের জন্য সাংবাদিকের মননে থাকা চাই সততা, মানবিকতা ও সাহস। কিন্তু বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক যুগে এই নৈতিক মানদণ্ডকে রক্ষা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।
১. সত্য বনাম জনপ্রিয়তা : ডিজিটাল যুগে ক্লিক, ভিউ ও লাইকই হয়ে উঠেছে সংবাদমূল্যের মাপকাঠি। ফলে অনেক সাংবাদিক সত্যের চেয়ে ‘ট্রেন্ডিং’ বিষয়কে প্রাধান্য দেন। সংবাদে অতিরঞ্জন, ভুয়া তথ্য, এমনকি গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে ‘সেন্সেশন’ তৈরি করা এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এটি সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তিকে ক্ষয় করছে।
২. গোপন স্বার্থ ও প্রলোভন : কখনও রাজনৈতিক সুবিধা, কখনও আর্থিক প্রলোভন সাংবাদিকদের নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত করে। কোনো কোনো সাংবাদিক নির্দিষ্ট ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায় জড়িয়ে পড়েন। এর ফলে পেশাদার ন্যায়বোধ দুর্বল হয়, সংবাদপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
৩. ব্যক্তিগত ঝুঁকি ও ভয় : সত্য প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের অনেক সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে হয়। অনেক সাংবাদিক হুমকি, অপহরণ কিংবা হত্যার শিকার হয়েছেন। এই ভয় অনেককে আত্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করে যা নৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও গভীর করে তোলে।
সামাজিক মাধ্যমে নতুন যুগের নতুন চ্যালেঞ্জ : সামাজিক মাধ্যম আজ সংবাদ প্রচারের নতুন প্ল্যাটফর্ম, কিন্তু এটি সাংবাদিকতার নীতি ও পেশাদারিত্বের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জও বটে। যেকোনো ব্যক্তি এখন সংবাদ প্রচার করতে পারে, কিন্তু যাচাই-বাছাই ছাড়া তথ্য ছড়ানো সহজ হয়ে যাওয়ায় মিথ্যা সংবাদ ও বিভ্রান্তি বাড়ছে।
‘সিটিজেন জার্নালিজম’-এর ইতিবাচক দিক যেমন রয়েছে—ঘটনার দ্রুত প্রচার, তেমনি এর অপব্যবহারও ব্যাপক। অনেক ক্ষেত্রেই ফেসবুক বা ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া সংবাদই পরে ভুয়া প্রমাণিত হয়, কিন্তু ততক্ষণে সেটি জনমত প্রভাবিত করে ফেলে। পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য এটি এক কঠিন প্রতিযোগিতা—যেখানে গতি ও জনপ্রিয়তা সত্য ও দায়িত্বের চেয়ে বেশি মূল্য পায়।

নৈতিক সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা : সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবাদিকতার একটি স্পষ্ট নৈতিক কাঠামো থাকা জরুরি। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আচরণবিধি, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কোড অব কন্ডাক্ট—এসব কেবল কাগজে নয়, বাস্তবে প্রয়োগ করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।
সাংবাদিকদের উচিত :  তথ্য যাচাই না করে কিছুই প্রকাশ না করা। ব্যক্তিগত বা দলীয় পক্ষপাত এড়িয়ে নিরপেক্ষ থাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মতামত অন্তর্ভুক্ত করা। সমাজে শান্তি ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করা। একই সঙ্গে সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোরও প্রয়োজন পেশাদার প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ : সাংবাদিকতার টিকে থাকার জন্য দরকার মুক্ত চিন্তা, নিরাপদ পরিবেশ ও অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব। সরকারকে বুঝতে হবে—স্বাধীন সাংবাদিকতা কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কাজ নয়, বরং তা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।
সত্যের পক্ষে কলমই এখন সবচেয়ে বড় শক্তি। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বা সাইবার আইনের মতো বিধান সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে নয়, বরং ভুয়া সংবাদ ও ঘৃণা প্রচার রোধে ব্যবহার করা উচিত। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকে নিজস্ব ‘অভ্যন্তরীণ সেন্সরশিপ’ সংস্কৃতি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।
সাংবাদিকতার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো সমাজে সত্য, ন্যায় ও মানবতার আলো ছড়ানো। কিন্তু এই পথে রয়েছে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্বের পাহাড়। তবুও সাহসী ও নৈতিক সাংবাদিকরাই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন—যারা আপোষহীনভাবে সত্যের পক্ষে দাঁড়ান। আজকের সাংবাদিকতার সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—সে কি টিকে থাকবে স্বাধীন ও সৎভাবে, নাকি অর্থ ও ক্ষমতার দাসত্বে পরিণত হবে? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে সাংবাদিকদের সততা, সমাজের সচেতনতা, এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মনোভাবের ওপর। সত্য প্রকাশের এই কঠিন যাত্রায় সাংবাদিকদের হাতে এখনো সেই কলম রয়েছে—যা বন্দুকের চেয়েও শক্তিশালী। এই শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব।
সাংবাদিকতার অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক দুরবস্থা—এই তিনটি চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে সাংবাদিকতার অস্তিত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—যে জাতির কলম বেঁচে থাকে, তার বিবেক কখনো মরে না। আজও অনেক সাংবাদিক অন্ধকার ভেদ করে সত্যের আলো জ্বালাচ্ছেন। তাদের সংগ্রামই প্রমাণ করে, সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা নয়—এটি এক মহৎ প্রতিশ্রুতি, মানবতার প্রতি অঙ্গীকার।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও লেখক, চাঁদপুর।
সত্যের পক্ষে সেই কলমকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব, কারণ সত্য প্রকাশের শক্তি সব সময়ই বন্দুকের চেয়ে বড়।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।