খুঁজুন
                               
সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ২৯ বৈশাখ, ১৪৩২

বর্তমান বাংলাদেশে প্রেক্ষাপটে জনতন্ত্র ও গণতন্ত্র

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:২১ অপরাহ্ণ
বর্তমান বাংলাদেশে প্রেক্ষাপটে জনতন্ত্র ও গণতন্ত্র

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যার সংবিধানে জনগণকে সকল ক্ষমতার উৎস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। তবে স্বাধীনতার পর থেকে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চর্চা নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। সামরিক শাসন, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিভিন্ন আইনি ও প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার কারণে গণতন্ত্র বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে (২০২৫ সাল) বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবস্থা এবং তার ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, মানবাধিকার, আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এই প্রবন্ধে বর্তমান বাংলাদেশের জনতন্ত্র ও গণতন্ত্রের বিশদ বিশ্লেষণ করা হবে। গণতন্ত্র বলতে বোঝায় এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে জনগণের মতামত ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়। এতে মৌলিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা, আইনের শাসন ও সুশাসন নিশ্চিত করা হয়।বাংলাদেশের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : “প্রজাতন্ত্রে গণতন্ত্র ও মৌলিক মানবাধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠিত হইবে এবং মানব মর্যাদা ও মূল্যবোধ এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা হইবে।”–

জনগণের ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন।  সকল নাগরিক ও রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান আইনের অধীন। জনগণ স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করে। দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন। বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতন্ত্রের ধারা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন (বাকশাল), ১৯৮২ সালে সামরিক শাসন, এবং পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি রচিত হয়েছে। নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক চর্চা বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় সংসদ, স্থানীয় সরকার ও অন্যান্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে।

 ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ সীমিত ছিল, যা গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে সহিংসতা, অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত হলো কার্যকর বিরোধী দল ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা। তবে বাংলাদেশে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত করার অভিযোগ রয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনৈতিক সমাবেশ ও আন্দোলনে বাধা দেওয়া হয়েছে। সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা কমে গেছে, যা গণতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্রের একটি প্রধান স্তম্ভ হলো আইনের শাসন ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা।

প্রাসঙ্গিক চ্যালেঞ্জ: রাজনৈতিক প্রভাব: বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন: বেআইনি আটক, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ইত্যাদি নিয়ে উদ্বেগ আছে। দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচারের ঘাটতি: মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও বিচারের ধীরগতি নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম কারণ।
গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো মুক্ত গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতা।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (২০১৮) সাংবাদিকদের স্বাধীনতা সীমিত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেলফ-সেন্সরশিপ: অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান সরকারবিরোধী সংবাদ প্রকাশ করতে সতর্ক থাকে। নাগরিক স্বাধীনতা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতপ্রকাশের জন্য মামলা ও গ্রেফতার বেড়েছে। সুশাসন ও দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সফলতার জন্য স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন অপরিহার্য। সরকারি-বেসরকারি খাতে দুর্নীতির বিস্তার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারী নীতিমালা গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণ সীমিত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রশাসনিক সেবায় অব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক প্রভাব লক্ষণীয়।

গণতন্ত্র সুসংহত করার উপায় : সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করা। শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা। নির্বাচনে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন বা বাতিল করা। সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। গণমাধ্যমের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ কমানো। দুর্নীতি রোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া। সরকারি খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন গঠন করা। প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করা। যুবসমাজ ও সাধারণ জনগণের গণতান্ত্রিক চর্চায় সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা

বাংলাদেশের বর্তমান গণতন্ত্রের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে হলে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সামাজিক কাঠামো, নির্বাচনব্যবস্থা, মানবাধিকার, প্রশাসনিক কার্যক্রম, এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিশদভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। এ প্রবন্ধের আগের অংশে আমরা বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন আমরা আরও গভীরে গিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে পর্যালোচনা করব। বাংলাদেশ একটি সংসদীয় গণতন্ত্র, যেখানে সংসদ সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী ক্ষমতার সর্বোচ্চ নেতা। তবে বাস্তবিক অর্থে রাজনৈতিক ব্যবস্থা কতটা কার্যকরভাবে গণতন্ত্রের মৌলিক আদর্শ মেনে চলছে, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতি গণতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের প্রধান নির্বাহী (প্রধানমন্ত্রী) অত্যন্ত শক্তিশালী, ফলে নির্বাহী শাখার কার্যক্রম এককেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।
সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য হলো আইন প্রণয়ন এবং সরকারকে জবাবদিহিতার মধ্যে রাখা। বর্তমানে সংসদ কার্যকর ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে, কারণ বিরোধী দলের উপস্থিতি ও কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। সংসদীয় বিতর্ক কমে গেছে, যার ফলে নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে জনগণের মতামত পর্যাপ্তভাবে প্রতিফলিত হয় না।
বাংলাদেশে প্রধানত দুটি বড় রাজনৈতিক দল সক্রিয়: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এই দুটি দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলমান, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের অভাব গণতন্ত্রের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক সহিংসতা ও দমননীতি: বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি দমন করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করা হয় বলে সমালোচনা রয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো নির্বাচন। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। সাম্প্রতিক জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণ অনেক ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা কম থাকে। কিছু ক্ষেত্রে ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

EVM ব্যবহারের বিরুদ্ধে নানা বিতর্ক রয়েছে। বিরোধী দলগুলোর দাবি, EVM-এর মাধ্যমে কারচুপি করা সম্ভব। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার ব্যবস্থার ওপর সরকারি প্রভাব রয়েছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, অথচ সাধারণ মানুষের মামলা বছরের পর বছর ধরে আটকে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সরকারবিরোধী মত প্রকাশ করলে মামলা ও গ্রেফতারের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাংবাদিক, বিরোধী দল ও মানবাধিকার কর্মীদের ওপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। গণতন্ত্রের একটি মূল স্তম্ভ হলো মুক্ত গণমাধ্যম। তবে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সীমিত হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
সরকার-বিরোধী সংবাদ প্রকাশ করলে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো চাপে পড়ে। কিছু টেলিভিশন ও সংবাদপত্র সরকারের অনুকূলে থাকার কারণে স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ২০১৮ সালে প্রণীত এই আইন ইন্টারনেটে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করেছে। এই আইনের অধীনে অনেক সাংবাদিক ও নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেক সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক চাপের কারণে সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে সাহস পায় না। গণতন্ত্র শুধু কেন্দ্রীয় সরকার পর্যায়েই সীমাবদ্ধ নয়, এটি স্থানীয় পর্যায়েও কার্যকর হতে হবে।

প্রধান সমস্যা: ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাব বেশি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। সাধারণ মানুষ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারে না। স্থানীয় উন্নয়ন কার্যক্রম জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সব সময় সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দুর্নীতি দমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘুষ ও অনিয়ম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে নাগরিক সেবা পেতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বজনপ্রীতি প্রশাসনে দুর্নীতির অন্যতম কারণ। বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সব সময় স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। দুর্নীতিবাজদের শাস্তির হার তুলনামূলক কম।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র টিকে থাকলেও তা কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য এখনো অনেক কাজ বাকি। স্বচ্ছ নির্বাচন, কার্যকর সংসদ, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, মুক্ত গণমাধ্যম ও শক্তিশালী স্থানীয় সরকার নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গঠনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র শক্তিশালী হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র টিকে আছে, তবে তা কার্যকর ও শক্তিশালী গণতন্ত্র হয়ে উঠতে হলে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন এবং সুশাসন নিশ্চিত করা না গেলে গণতন্ত্র দুর্বল হতে পারে। জনগণের অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব। দেশ এগিয়ে নিতে হলে দায়িত্বশীল রাজনীতি, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তোলা জরুরি।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

ভারত-পাকিস্তানকে সংঘাত বন্ধের আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রসহ জি-৭ দেশগুলোর

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ১০ মে, ২০২৫, ২:০৬ অপরাহ্ণ
ভারত-পাকিস্তানকে সংঘাত বন্ধের আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রসহ জি-৭ দেশগুলোর

সংঘাত ক্রমেই বেড়ে চলেছে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। চলমান এ সংঘাত বন্ধ ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য দেশদুটিকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-৭। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসলামাবাদে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ‘গঠনমূলক আলোচনার’ জন্য সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।

এতে আরও বলা হয়, পাকিস্তান-ভারত উভয়পক্ষকে উত্তেজনা কমানোর উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন রুবিও। একই সঙ্গে ভবিষ্যতের সংঘাত এড়াতে গঠনমূলক আলোচনা শুরুর জন্য মার্কিন সহায়তা দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জি-৭ জোট। জোটের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক বিবৃতিতে ‘অবিলম্বে উত্তেজনা কমানো’ ও ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

সংঘাত চলা ভারত-পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়ে তারা বলেছেন, ‘আরও সামরিক উত্তেজনা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি। দুই দেশেরই শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে সরাসরি সংলাপে বসা উচিত।’

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। নিহত এই পর্যটকদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

এ ঘটনায় সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিলসহ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।

দুই দেশের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মিরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। এর পাল্টা জবাব দিতে ‘অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস’ শুরু করেছে পাকিস্তান। এ অভিযানের আওতায় ইতোমধ্যে গতকাল শুক্রবার রাতে ভারতের ১১টি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী।

প্লাস্টিক ব্যবহারে ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকি, বছরে মৃত্যু সাড়ে ৩ লাখ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ১০ মে, ২০২৫, ১:২৫ অপরাহ্ণ
প্লাস্টিক ব্যবহারে ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকি, বছরে মৃত্যু সাড়ে ৩ লাখ

বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্যে আছে ‘থ্যালেটস’ নামক রাসায়নিক পদার্থ। থ্যালেটস এর কারণে মৃত্যুর ঘটনা অনেক বেশি। থ্যালেটসের সংস্পর্শে আসার কারণে ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী ৩ লাখ ৫৬ হাজারেরও বেশি মানুষ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে বলে অনুমান করছে একটি গবেষণা। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ল্যাংগোন হেলথের গবেষকরা। তারা প্লাস্টিকের নানা পণ্যে ব্যবহৃত রাসায়নিকগুলোর স্বাস্থ্যগত প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষনায় তারা দেখেছেন, ডিইএইচপি শরীরে দীর্ঘদিন থেকে গিয়ে হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি তৈরি করে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী প্রায় ৩ লাখ ৫৬ হাজার ২৩৮ জন মানুষ ডিইএইচপি সংশ্লিষ্ট কারণে হৃদরোগে মারা গেছেন। এই সংখ্যা ওই বয়সসীমায় হৃদরোগজনিত মোট মৃত্যুর প্রায় ১৩ শতাংশ।

ডিইএইচপি হলো একটি প্লাস্টিসাইজার, যা প্লাস্টিককে নমনীয় ও দীর্ঘস্থায়ী করতে ব্যবহার করা হয়। এটি খাদ্য প্যাকেট, চিকিৎসা সরঞ্জাম, প্রসাধনী, শ্যাম্পু, লোশনসহ নানা পণ্যে ব্যবহৃত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করে রক্তনালিতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা হৃদরোগ, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিকের রাসায়নিক শুধু হৃদরোগ নয়, বরং মুটিয়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বন্ধ্যাত্ব এবং ক্যান্সারের মতো দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকিও তৈরি করে। যেসব দেশে রাসায়নিক ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ দুর্বল, সেসব জায়গায় স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও তীব্রভাবে দেখা দেয়। গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, ডিইএইচপি-জনিত কারণে ২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫১০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। এটি বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে প্রায় ৩.৭৪ ট্রিলিয়ন ডলার।

গবেষণার প্রধান লেখক ড. লিওনার্দো ট্রাসান্ডে বলেন, ‘এই গবেষণা শুধু একটি রাসায়নিক ও নির্দিষ্ট বয়সসীমার মানুষের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত গবেষণার প্রয়োজন, যাতে অন্যান্য প্লাস্টিকজাত রাসায়নিকের প্রভাব জানা যায়।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখনই সময় ডিইএইচপি এবং অনুরূপ ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার সীমিত করা এবং নিরাপদ বিকল্প খোঁজার। এ জন্য শুধু গবেষণাই নয়, সরকার ও নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এই গবেষণা একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়, প্রতিদিনকার ব্যবহার্য প্লাস্টিকজাত পণ্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলো শুধু স্বাস্থ্য নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতিকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। এখনই সচেতন না হলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে ‘মেডিকেল পুলিশ’ গঠনের সুপারিশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ১০ মে, ২০২৫, ১:২৩ অপরাহ্ণ
হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে ‘মেডিকেল পুলিশ’ গঠনের সুপারিশ

হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে ‘মেডিকেল পুলিশ’ নামে প্রশিক্ষিত বিশেষ ইউনিট গঠনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। সোমবার (৫ মে) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতার অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য একটি আধুনিক ডিজিটাল অভিযোগ নিষ্পত্তি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলা হবে। বিএমডিসি, বিএনএমসি, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল অ্যালাইড হেলথ প্রফেশনাল কাউন্সিল আইনগত ক্ষমতা ও কাঠামো কার্যকর করতে হবে। পেশাগত অবহেলার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না; তদন্ত ও সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

“হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে ‘মেডিকেল পুলিশ’ নামে প্রশিক্ষিত একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করতে হবে, যা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।” চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য মেডিকেল প্রফেশনাল ইন্স্যুরেন্স চালু করতে হবে। এমবিবিএস বা বিডিএস ব্যতীত কেউ ‘চিকিৎসক’ পরিচয়ে রোগী দেখলে, বিএমডিসি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।