খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৬ বৈশাখ, ১৪৩২

ঈদের দিনের ৪ রকমের স্পেশাল রেসিপি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫, ১২:১১ অপরাহ্ণ
ঈদের দিনের ৪ রকমের স্পেশাল রেসিপি

মুসলিমদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা। একমাস সিয়াম সাধনা শেষে বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সঙ্গে একত্রিত হয়ে ঈদের উৎসবে মেতে ওঠেন। আর এই দিনটিতে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে গৃহিণীর রসুইঘর। ঈদ উপলক্ষ্যে সবার ঘরেই নানা ধরনের মুখরোচক খাবারের আয়োজন করা হয়। এছাড়া আত্মীয় ও বন্ধুদের বাসাতেও ঈদে দাওয়াত থাকে। সব মিলিয়ে ঈদ ও এর পরবর্তী দিনগুলোতে সবাই কমবেশি সুস্বাদু ও মজাদার খাবার খাওয়ার মধ্যেই থাকেন।
তবে ঈদের দিনের সেই আয়োজনে যুক্ত হতে পারে আরও চারটি পদ। জেনে নিন চারটি রেসিপি-

লাচ্ছা সেমাইয়ের খিরসা

ঈদের দিনে সবার ঘরে কমবেশি সেমাই, জর্দা বা পায়েস রান্না করা হয়। সেমাইতো সবসময় একিভাবেই রান্না করা হয় তবে এবারের ঈদে চাইলে সেমাই রান্নায় আনতে পারেন নতুনত্ব। এবার ঈদে তৈরি করতে পারেন লাচ্ছা সেমাইয়ের খিরসা।

লাচ্ছা সেমাইয়ের খিরসা তৈরির রেসিপি-

উপকরণ লাচ্ছা সেমাই ২২৫ গ্রাম, ঘি ১৫০ গ্রাম, পেস্তাবাদাম ১০০ গ্রাম, জাফরান রং সামান্য, খিরসা লিকুইড দুধ ৩ কাপ, গুড়া দুধ এক কাপ, কাস্টার্ড পাউডার ২ টেবিল চামচ ও চিনি আধা কাপ, সিরার জন্য পানি এক কাপ, চিনি এক কাপ লেবুর রস এক টেবিল চামচ।

যেভাবে করবেন প্রথমে লাচ্ছা সেমাই ও ঘি দিয়ে ভেজে তুলে রাখুন। অল্প একটু ভাজা সেমাইয়ের সঙ্গে জাফরান রং মিশিয়ে রাখুন। একটা পাত্রে দুধের সঙ্গে গুঁড়া দুধ মিশিয়ে জ্বাল দিন। এতে কাস্টার্ড পাউডার, চিনি মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে খিরসা তৈরি করুন। এখন চুলায় পাত্রে পানি, চিনি ও লেবুর রস দিয়ে সিরা করুন। পাত্রে প্রথমে অর্ধেক সেমাই দিয়ে ওপরে খিরসার লেয়ার দিন। তার ওপর বাকি সেমাই দিয়ে আরেকবার খিরসা দিয়ে রঙিন সেমাই ওপরে ছড়িয়ে দিন। এবার সেমাইয়ের ওপর চিনির সিরা ছড়িয়ে দিন। সব শেষে ওভেনে ১৮০ ডিগ্রিতে বেক করুন ১৫ মিনিট। সেরা স্বাদ পেতে ব্যবহার করতে পারেন ড্যান ফুডস বা যে কোনো ভালো ব্র্যান্ডের ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই।

ঠান্ডা করে ওপরে বাদাম কুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন দারুণ মজার সেমাইয়ের খিরসা।

শাহী মোরগ মোসাল্লাম

এই ঈদে প্রিয়জন কিংবা অতিথি আপ্যায়নে তৈরি করুন দারুণ মজাদার সুস্বাদু শাহী মোরগ মোসাল্লাম। তাহলে দেখে নিন, ঈদের স্পেশাল রেসিপিটি তৈরির উপকরণ ও প্রক্রিয়া প্রণালী।

উপাদান:

১. মাঝারী আকারের মুরগী – ১টি

২. আদা ও রসুন বাটা – ২ চা চামচ

৩. পিঁয়াজ বাঁটা – ২ টেবিল চামচ

৪. পিঁয়াজ বেরেস্তা – হাফ কাপ

৫. বাদাম বাটা – ১ চা চামচ

৬. টমেটো সস – ১ চা চামচ

৭. গরম মসলার গুঁড়া – হাফ চা চামচ

৮. টক দই – ২ টেবিল চামচ

৯. ঘি – ২ টেবিল চামচ

১০. তেল – হাফ চামচ

১১. এলাচী, দারচিনি, তেজপাতা- ২/৩টি করে

১২. কেওড়া জল – ১ চা চামচ

প্রণালী: প্রথমে একটি কড়াইয়ে তেল ও ঘি মিশিয়ে পিঁয়াজ কুঁচি বেরেস্তা করে উঠিয়ে রাখতে হবে। তারপর আস্ত মুরগীর গায়ে হালকা জর্দার রং মিশিয়ে কমলা কালার করে তেলের মধ্যে হালকা লাল করে ভেজে নিতে হবে।

তারপর মুরগীটি তুলে নিয়ে ওই কড়াইয়ের তেলেই টকদই ছাড়া সব মশলাগুলোকে ভালোভাবে কষিয়ে নিতে হবে। মশল্লা কষানো হলে এতে ২ কাপ পানি দিয়ে টকদই দিয়ে ও কিছুটা বেরেস্তা দিয়ে ঝোল তৈরি করে নিতে হবে। ঝোলে মুরগিটি দিয়ে জ্বাল দিতে হবে এবং পানি শুকিয়ে এলে মশল্লা যখন ভুনা ভুনা হয়ে আসবে তখন নামিয়ে এর ওপরে বাদাম কুঁচি দিয়ে পরিবেশন করতে হবে। ব্যস, হয়ে গেল ঈদের স্পেশাল রান্না- শাহী মোরগ মোসাল্লাম।

শাহি পোলাও

ঈদের আনন্দ অনেকটাই মাটি হয়ে যেতে পারে ঝরঝরে পোলাও না হওয়ার কারণে। এ সমস্যা সমাধানে আজকের রেসিপিতে থাকছে ঝরঝরে শাহি পোলাও তৈরির সহজ একটি টেকনিক।

এ পদ্ধতিতে একেবারে রান্নায় নতুন যারা তারাও সহজেই খাবারটি ঝরঝরেভাবে তৈরি করতে পারবেন। চলুন জেনে নিই ঈদে শাহি পোলাও তৈরি করতে কী কী প্রয়োজন–

প্রয়োজনীয় উপকরণ: এ খাবারটি তৈরি করতে যে উপকরণগুলো আপনার প্রয়োজন হবে তা হলো পোলাওয়ের চাল ২৫০ গ্রাম, বড় সাইজের আলু বোখরা ১২টি, কিশমিশ ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ২ কাপ, তেল ১ কাপ, ঘি ১ চা-চামচ, আদা-রসুন কুচি ২ চা-চামচ, আদা পেস্ট ২ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ৪টি, তেজপাতা ২টি, দারুচিনি ২টি, এলাচ ২টি, লবঙ্গ ৪টি, কেওড়া জল ৩ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি বাদামি করে ভাজা বা বেরেস্তা ৩ টেবিল চামচ, জাফরান ভেজানো পানি ৩ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো।

যেভাবে তৈরি করবেন: প্রথমেই ঝরঝরে পোলাও তৈরি করার জন্য চাল ধুয়ে তা ঝরিয়ে রাখুন রান্না করার ১/২ ঘণ্টা আগেই। এবার শাহি পোলাও তৈরি করার জন্য চুলায় বসিয়ে দিন একটি সসপ্যান।

সসপ্যান হালকা গরম হয়ে এলে তাতে তেল ও ঘি দিয়ে দিন। এরপর তাতে আলু বোখরা, কিশমিশ, কাঁচা মরিচ বাদে সব উপকরণ দিয়ে দিন। বাদামি করে ভাজার পর রান্নায় এর ফ্লেভার চলে এলে তাতে দিয়ে দিন আগে থেকে ধুয়ে ঝরিয়ে রাখা পোলাওর চালগুলো।

পোলাওর চাল হালকা বাদামি হয়ে এলে তাতে দিয়ে দিন গরম পানি। মনে রাখবেন, চাল ভেজে বাদামি করা না হলে পোলাও ঝরঝরে হবে না আবার খেতেও সুস্বাদু হবে না। পানি দেওয়ার সময় সবসময় চালের দ্বিগুণ দিতে চেষ্টা করবেন।

বাজারে পাওয়া নতুন চালের পোলাও হলে এই পানির পরিমাণ আরও কমিয়ে দিন। রান্নায় পোলাওয়ের স্বাদ আরও বাড়াতে এই গরম পানির পরিবর্তে মুরগির মাংসের স্টকের পানি মেশাতে পারেন।

এ পর্যায়ে দিয়ে দিন কাঁচা মরিচ ও পরিমাণমতো লবণ। এবার মিডিয়াম আঁচে সসপ্যানে ঢাকনা দিয়ে অপেক্ষা করুন ১০ মিনিটের মতো। পানি এ পর্যায়ে পুরোপুরি শুকাবে না। তাই চালগুলোর সঙ্গে আলু বোখরা ও কেওড়ার জল ভালোভাবে মিশিয়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে লো ফ্লেমে অপেক্ষা করুন পানি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত।

পোলাও হয়ে এলে পোলাওয়ের ওপর জাফরান ভেজানো পানি, পেঁয়াজের বেরেস্তা ও কিশমিশ দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন মোগল আমলের বিখ্যাত শাহি পোলাও।

কাটা মসলায় গরুর মাংস

ঈদ মানে বাহারি সব খাবারের আয়োজন। ঈদে বাড়িতে বাড়িতে গরুর মাংস তো রান্না হয়ই, তবে স্বাদে একটু ভিন্নতা আনতে তৈরি করতে পারেন কাটা মসলায় গরুর মাংস।

উপকরণ : গরুর মাংস ১ কেজি, পেঁয়াজ বড় বড় টুকরা করা এক কাপ ,আদা কাটা এক কাপ, রসুন কোয়া ৮টি , শুকনা মরিচ ৭-৮টি, দারুচিনি ৩ টুকরা, এলাচ ৪টি, লেবুর রস ১ চামচ, জিরা ভাজা (আস্ত) ১ চা চামচ, গোল মরিচ ১০ টি, বেরেস্তা আধা কাপ, কাঁচামরিচ ৭-৮ টি, ঘি ২ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণ মতো, টক দই ২ চা চামচ, তেল পরিমাণ মতো

প্রস্তুত প্রণালি : গরুর মাংস লবণ ও টক দই দিয়ে মাখিয়ে আধা ঘণ্টা মেরিনেট করুন। এবার এর সঙ্গে আদা, রসুন, শুকনা মরিচ,এলাচ, দারুচিনি,গোল মরিচ, জিরা দিয়ে আরও আধা ঘণ্টা মেরিনেট করুন। প্যানে তেল গরম করে মাংস দিয়ে কষিয়ে নিন। কষানোর সময় লেবুর রস দিন। ভালো করে কষানো হলে পরিমাণমতো পানি দিয়ে মাংস সিদ্ধ করুন। মাংস সিদ্ধ হয়ে গেলে বেরেস্তা, ঘি ও কাঁচা মরিচ দিয়ে মৃদু আঁচে বসিয়ে রাখুন। নামিয়ে পোলাওয়ের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:২২ পূর্বাহ্ণ
ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, মিলন এবং নতুন করে বাঁচার প্রেরণা। এই দিনে সবাই চায় নিজেকে সাজিয়ে নিতে, নতুন কাপড় পরে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে। কিন্তু এমন অনেকের মধ্যেও থাকে এমন কেউ, যার জন্য একটি নতুন জামা শুধু পোশাক নয়, বরং স্বপ্ন, গর্ব, আত্মমর্যাদা এবং একটি আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। এই প্রবন্ধে আমরা এমন এক নতুন জামার কথা বলব, যে জামার শুধু দামী কাপড় বা ডিজাইনের গর্ব নেই, বরং রয়েছে আত্মার গভীরে জমে থাকা এক মানুষের স্বপ্নের গল্প।

শহরের এক কোণায় বাস করে ছোট্ট ছেলেটি রিয়াদ। বয়স প্রায় দশ। তার বাবা একজন দিনমজুর, মা গৃহিণী। সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যে কোনোভাবে দিন কাটে তাদের। বছরের প্রতিটি দিন কাটে সংগ্রামের মাঝে, কিন্তু ঈদ আসে স্বপ্নের আলো নিয়ে। ঈদে নতুন জামা পাবে, এই আশায় রিয়াদ এক মাস রোজা রাখে, নিজের মনকে শক্ত করে।

তবে এই জামা আসবে কি না, তা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, বাবার মুখে ভাঁজ আর চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। মা বারবার বলেন, “এবার হয়তো পুরনো জামাতেই ঈদ করতে হবে।” কিন্তু রিয়াদ বিশ্বাস করে—আল্লাহ যদি রোজা কবুল করেন, তাহলে একটা নতুন জামা হয়তো আসবেই।

এই জামার অপেক্ষা শুধু রিয়াদের নয়, এটি যেন তার মন-প্রাণের আকুতি। এই জামা তার জন্য স্বপ্নপূরণ, আত্মমর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্বের অনুভব।

আমরা অনেক সময় বুঝি না, একটি নতুন জামা একজন শিশুর জন্য কতটা অর্থবহ হতে পারে। ধনী পরিবারের শিশুর কাছে এটি হয়তো একটি চমকপ্রদ পোশাক, কিন্তু রিয়াদের কাছে এটি স্বপ্ন পূরণের মতো। সে ভাবে, ঈদের দিন সবার মতো তাকেও যদি নতুন জামায় দেখা যায়, তাহলে সে আর অবহেলিত হবে না, তার বন্ধুরা তাকে হাসবে না। তারও মুখে হাসি ফুটবে, তারও ছবি উঠবে মোবাইল ক্যামেরায়।

এই জামা তার আত্মবিশ্বাস, যেটা সে স্কুলে পড়ার সময় খুঁজে বেড়ায়, যখন ক্লাসের অন্য ছেলেরা নতুন জামা পরে আসে আর সে পড়ে থাকে একঘেয়ে মলিন কাপড়।

এখানে জামার একটি কল্পিত স্বর ও ভাষা কল্পনা করা যাক—যেখানে জামাটি যেন নিজের মনে নিজের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছে: “আমি কোনো বিলাসী দোকানের শেলফে ঝুলে থাকা দামি জামা নই। আমি সেই জামা, যাকে এক দরিদ্র বাবার কষ্টের টাকায় কিনে আনা হবে তার ছেলের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে।
আমি হয়তো রঙিন নই, হয়তো আমার ডিজাইনে জাঁকজমক নেই, কিন্তু আমি গর্বিত। কারণ আমি হব একটি শিশুর ঈদের স্বপ্ন পূরণের বাহক। আমি হব আত্মমর্যাদার প্রতীক, আমি হব ঈদের প্রাপ্তির প্রতিচ্ছবি।”

এই ভাবনার মধ্যেই ফুটে ওঠে জামার স্বপ্ন—সে চায়, তাকে কেউ ভালোবাসুক, পরিধান করুক, আর আনন্দ পাক।

রিয়াদের মা হয়তো নিজের জন্য কোনো কাপড় কিনবেন না, বাবা হয়তো একজোড়া চপ্পল না কিনে সেই টাকায় ছেলের জামা কিনে দেবেন। কারণ, সন্তানের হাসির চেয়ে বড় কিছু তাদের কাছে নেই। একটি নতুন জামার পেছনে লুকিয়ে থাকে একটি পরিবারের নীরব ত্যাগ, ভালোবাসা আর গোপন কান্না।

ঈদের নতুন জামা এই পরিবারগুলোর কাছে শুধু পোশাক নয়—এটা এক সম্মান, ভালোবাসা এবং আত্মতৃপ্তির চিহ্ন। অনেক সময় বাবা-মায়েরা নিজেদের প্রয়োজন বিসর্জন দিয়ে সন্তানের মুখে হাসি দেখতে চান। নতুন জামা যেন সেই আত্মত্যাগের স্বাক্ষর হয়ে উঠে।

ঈদের দিন আমরা যখন দেখি কেউ চকচকে কাপড় পরে বেরিয়েছে, আর কেউ পুরনো জামা পরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, তখন সামাজিক বৈষম্যের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নতুন জামার গুরুত্ব সেখানে দ্বিগুণ। এটি একধরনের সামাজিক মর্যাদা।

রিয়াদ হয়তো তার বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ভাবে—আমারও যদি এমন একটা জামা থাকত! শুধু ঈদের দিনটা নয়, পুরো জীবনজুড়ে সেই হাহাকার থেকে যায়। এই এক টুকরো জামাই তার স্বপ্নকে উঁচুতে নিয়ে যেতে পারে, আর না থাকলে আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়ে।

দরিদ্র শিশুদের জন্য ঈদে জামার প্রাপ্তি মানে কী? সমান মর্যাদা – অন্যদের মতো তাকেও দেখা হয় একজন ‘পূর্ণ’ শিশুর মতো।  আত্মবিশ্বাস – নতুন জামা পরে সে খুশি মনে বন্ধুদের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। পরিবারের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি – সে উপলব্ধি করে, তার মা-বাবা তাকে কত ভালোবাসে।

৪. ভবিষ্যতের স্বপ্ন – একজন শিশু জানে, সে যদি চেষ্টার মধ্যে থাকে, তার স্বপ্ন একদিন পূরণ হবেই।

ঈদের সকালে রিয়াদের ঘুম ভাঙে ভোরবেলা। মা হাসিমুখে এসে বলে—
“এই দেখ, তোমার নতুন জামা।”
রিয়াদ প্রথমে বিশ্বাস করতে পারে না। হাত বাড়িয়ে জামাটা নেয়, চোখে জল চলে আসে। “আমার?”
মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, “হ্যাঁ বাবা, তোমার।”
রিয়াদ তার ছোট জামাটিকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে, যেন এটিই তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

সেই জামা তখন আর শুধু সুতা ও রঙের মিশ্রণ নয়, সেটি তখন একটি ‘স্বপ্ন’। একটি সন্তুষ্টির প্রতীক, একটি ছোট শিশুর গর্বের নিশান।

আমরা যারা সমাজের ভাগ্যবান অংশ, তাদের উচিত এই বৈষম্য দূর করতে সচেষ্ট হওয়া। প্রতিবছর ঈদের আগে আমরা অনেকেই প্রচুর জামা কিনি, কিন্তু ভাবি না পাশের দরিদ্র শিশুটার কথা। যদি আমরা একটি নতুন জামা কাউকে দিতে পারি, তাহলে তার ঈদটা হয়ে উঠতে পারে জীবনের সেরা দিন।সামাজিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার—সবাই যদি চায়, তাহলে প্রত্যেক শিশুর ঈদে একটি নতুন জামা নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি দান নয়, এটি মানুষের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা।

“ঈদে একটি নতুন জামা যার স্বপ্ন” এই বাক্যটি শুধুমাত্র কোনো এক জামা বা একটি শিশুর গল্প নয়, এটি হাজারো রিয়াদের গল্প। এটি আমাদের সমাজে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য মানুষের জীবনবোধের চিত্র। একটি নতুন জামা কেবল দেহ ঢাকার উপকরণ নয়, এটি মানুষের সম্মান, আত্মবিশ্বাস এবং ভালোবাসার প্রতীক। আমরা যদি এই একটুকরো জামার ভেতর মানুষের আবেগ, স্বপ্ন ও আত্মত্যাগ দেখতে পারি, তাহলে সমাজে সত্যিকার পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। আসুন, এই ঈদে আমরা কেবল নিজেদের জন্য না, অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যও একটি নতুন জামার স্বপ্ন বুনি।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:৩৮ অপরাহ্ণ
চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভা (১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৫) নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি (২০২৫-২০২৮) ঘোষণা করা হয়েছে। সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (সর্বশেষ সংশোধন ২০১৩) ও সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ (সর্বশেষ সংশোধন ২০২০) অনুযায়ী নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন (পরিদর্শক, জেলা সমবায় কার্যালয়, চাঁদপুর) কোন পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছয় সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষণা করেন। নবনির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি- মোঃ ইকবাল আজম (প্রতিনিধি, দি চাঁদপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সহ-সভাপতি- মোঃ আফজাল হোসেন খান (প্রতিনিধি, মিলেনিয়াম বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সম্পাদক- দুলাল চন্দ্র দাস (প্রতিনিধি, বাগড়া শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- মোঃ আক্কাস ফরাজী (প্রতিনিধি, রূপসী পল্লী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- খন্দকার ফখরুল আলম (প্রতিনিধি, আশার আলো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সদস্য- মোঃ খোরশেদ আলম (প্রতিনিধি, খাজুরিয়া বাজার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ)।
জেলার বিভিন্ন সমবায় সমিতির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ও নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন এর সভাপতিত্বে নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের কৃতি সন্তান, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সমবায়ী ও বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন শেখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন জেলা সমবায় ইউনিয়ন, জেলার সমবায় সমিতি ও সমবায়ীদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব থাকলেও চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নে দীর্ঘদিন নির্বাচিত কমিটি ছিল না, যার কারণে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। আমরা বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন থেকে চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নকে কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। সমবায় বিভাগ এতে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির গঠন করে, যার ফলশ্রুতিতে আজকে আমরা একটি নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে পেরেছি। এজন্য তিনি সমবায় বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান পাশাপাশি নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানান। সভায় তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। সকলের সহযোগিতায় তা বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সভায় অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সভাপতি মুরাদ হোসেন খান, জুন হাউজিং কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর প্রতিনিধি এ ওয়াই এম জাকারিয়া, ওয়ারলেস বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি মোঃ জিয়াউদ্দিন, ইসলামীয়া সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি নাজমুল হুদা প্রমূখ।
উল্লেখ্য প্রতি ৩ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও ২০১২ সালের পর, দীর্ঘ ১৩ বছর পর এই ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হলো।

আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ
আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আগামী ২ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সম্প্রতি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, সংসদ না থাকায় এবার সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে না। অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ কারণে ২ জুন বাজেট ঘোষণার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণত আগের অর্থবছরগুলোতে বৃহস্পতিবার বাজেট দেওয়া হতো, এবার সোমবার ঘোষণা করা হবে। বাজেট ঘোষণার পর আগের রীতি অনুযায়ী অর্থ উপদেষ্টা বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।

সূত্রটি জানিয়েছে, সাধারণত প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় বড় রাখা হয়। তবে এবার বাজেট ঘাটতি কমিয়ে বাজেট ছোট কারার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

বাজেটের আকার কমানো হলেও সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিকীকরণ সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ ধরতে পারে। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। চলতি অর্থবছরেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। যদিও গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।