খুঁজুন
                               
বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

নতুন যুগের সাংবাদিকতা : ডিজিটাল মিডিয়া ও ভবিষ্যৎ

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ
নতুন যুগের সাংবাদিকতা : ডিজিটাল মিডিয়া ও ভবিষ্যৎ

নতুন যুগের সাংবাদিকতা : ডিজিটাল মিডিয়া ও ভবিষ্যৎ
উজ্জ্বল হোসাইন
সাংবাদিকতা সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গণ্য হয়, কারণ এটি তথ্য সরবরাহ, জনমত গঠন ও গণতন্ত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে সাংবাদিকতার ধরনেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। প্রিন্ট মিডিয়া থেকে ইলেকট্রনিক মিডিয়া, আর এখন ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে প্রবেশ করেছে সাংবাদিকতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইউটিউব চ্যানেলের উত্থান সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
সাংবাদিকতা মানব সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সময়ের সাথে সাথে এটি নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, বিশেষ করে ডিজিটাল যুগের আগমনের পর সাংবাদিকতার চেহারা একেবারেই বদলে গেছে। এরমধ্যে অন্যতম মৌখিক ও লিপিবদ্ধ সংবাদ প্রচার। রাজা-বাদশাহদের ফরমান ও বার্তাবাহক ব্যবস্থার মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান। চীনে প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র (Kaiyuan Za Bao, ৭১৩ খ্রিস্টাব্দ)।
আধুনিক মুদ্রণ সাংবাদিকতার উত্থান (১৫-২০ শতক) হয়েছে –১৪৪০ সালে গুত্তেনবার্গের মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার, ১৬০৫ সালে প্রথম আধুনিক সংবাদপত্র, ১৬০৫ সালে প্রথম আধুনিক সংবাদপত্র (Relation aller Fürnemmen und gedenckwürdigen Historien), ১৯ শতকে দৈনিক পত্রিকার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ও সম্পাদকীয় স্বাধীনতার বিকাশ, সংবাদ সংস্থার (যেমন, রয়টার্স, এপি) আবির্ভাব। সম্প্রচার সাংবাদিকতার যুগ (২০ শতক)-১৯২০-এর দশকে রেডিও সাংবাদিকতার শুরু, ১৯৫০-এর দশকে টেলিভিশন সাংবাদিকতার উত্থান, সরাসরি সম্প্রচার ও রিয়েল-টাইম সংবাদ পরিবেশনের প্রচলন। ইন্টারনেট ও অনলাইন সংবাদ (১৯৯০-এর দশক)-সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণ চালু, দ্রুতগতির তথ্যপ্রবাহ ও বৈশ্বিক তথ্য প্রবেশাধিকার, বিনামূল্যে সংবাদপাঠের অভ্যাস তৈরি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব (২০০০-এর পর থেকে)-ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে খবর প্রচার, নাগরিক সাংবাদিকতার বিকাশ যে কেউ সংবাদ পরিবেশন করতে পারে, ভুয়া সংবাদ ও গুজব ছড়ানোর ঝুঁকি বৃদ্ধি।
মোবাইল সাংবাদিকতা ও কনভার্জেন্স মিডিয়া-স্মার্টফোন ও অ্যাপ-ভিত্তিক সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টিং—ভিডিও, টেক্সট, অডিও একসাথে, ব্লগিং, পডকাস্ট ও লাইভ স্ট্রিমিং জনপ্রিয়তা লাভ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও অ্যালগরিদম-নির্ভর সাংবাদিকতা-নিউজ অ্যালগরিদম ও পার্সোনালাইজড কন্টেন্ট, ফ্যাক্ট-চেকিং ও স্বয়ংক্রিয় সংবাদ লেখা, সাংবাদিকতায় ডেটা অ্যানালিটিক্সের ব্যবহার বৃদ্ধি।

ডিজিটাল যুগে সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা : ভুয়া খবর ও মিথ্যা তথ্য, সংবাদপত্রের আর্থিক সংকট (প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষতি), সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সংক্রান্ত ঝুঁকি, নাগরিক সাংবাদিকতা ও গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশের সুযোগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা সাংবাদিকতার মাধ্যমে গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন, ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশন মডেল ও বিকল্প আয়ের উৎস।
সাংবাদিকতা আজ এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে, যেখানে তথ্য প্রবাহ দ্রুত, প্রযুক্তিনির্ভর এবং অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক। যদিও ডিজিটাল যুগ নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, তবুও এটি গণমাধ্যমের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই এবং নৈতিক সাংবাদিকতা চর্চার মাধ্যমে ডিজিটাল সাংবাদিকতা আরও কার্যকর হতে পারে।সাংবাদিকতার ইতিহাস বহু পুরোনো। পাথরের ফলক, হস্তলিখিত চিঠি, প্রিন্ট মিডিয়া, বেতার, টেলিভিশন—এসব মাধ্যম একসময় মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপায় ছিল। কিন্তু ২১শ শতাব্দীর শুরু থেকে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তির বিস্তার সাংবাদিকতায় আমূল পরিবর্তন এনেছে।
পরিবর্তনের কয়েকটি ধাপ : প্রিন্ট মিডিয়া (সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন) ১৮-২০ শতকে মানুষের তথ্যপ্রাপ্তির প্রধান মাধ্যম ছিল সংবাদপত্র। ইলেকট্রনিক মিডিয়া (রেডিও ও টেলিভিশন): ২০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রেডিও ও টেলিভিশন খবর প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: ২১ শতকে ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে সংবাদমাধ্যম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত হয়েছে।
আজকের যুগে মানুষ দ্রুততম সময়ে সংবাদ পেতে চায়, যা সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ব্লগ এবং পডকাস্ট এখন তথ্য প্রচারের অন্যতম মাধ্যম। তাৎক্ষণিক সংবাদ পরিবেশন : যেকোনো বড় ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে।
ইন্টারঅ্যাকটিভিটি : পাঠকরা মন্তব্য, শেয়ার এবং লাইভ আলোচনার মাধ্যমে সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন।
বহুমাত্রিক উপস্থাপন  : টেক্সট, ছবি, ভিডিও, অ্যানিমেশন ও লাইভ স্ট্রিমিং ব্যবহার করা হয়।
কম খরচে সংবাদ পরিবেশন: প্রচলিত সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলের তুলনায় অনলাইন সংবাদমাধ্যম পরিচালনার খরচ অনেক কম।
ডিজিটাল সাংবাদিকতার ইতিবাচক দিক : ডিজিটাল মিডিয়া সাংবাদিকতাকে দ্রুত ও কার্যকর করে তুলেছে। আগে যেখানে সংবাদপত্র ছাপতে বা টিভি সম্প্রচারের জন্য সময় লাগত, এখন তাৎক্ষণিকভাবে অনলাইনে খবর প্রকাশ করা সম্ভব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে সংবাদ এখন আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। একটি ঘটনা শুধু স্থানীয় নয়, কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তা বৈশ্বিক সংবাদে পরিণত হতে পারে। ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষও সাংবাদিকতার অংশ হতে পারছে। মোবাইল ফোনে ছবি বা ভিডিও ধারণ করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার মাধ্যমে যে কেউ সংবাদ প্রচার করতে পারছে। আগে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমের ওপর নির্ভর করতে হতো, কিন্তু এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
ডিজিটাল সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ ও নেতিবাচক দিক : অনলাইন মিডিয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভুয়া খবর বা ‘ফেক নিউজ’। অনেক সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে কেউ সংবাদ প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই করা হয় না। ফলে গুজব ও অসত্য তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ক্লিকবেইট শিরোনাম ব্যবহার করে শুধুমাত্র ট্রাফিক বাড়ানোর জন্য মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রকাশ করে। অনেক সময় ডিজিটাল সাংবাদিকরা অনলাইনে হয়রানির শিকার হন। সত্য সংবাদ প্রকাশ করায় হুমকি, সাইবার আক্রমণ বা ট্রোলিং-এর সম্মুখীন হন অনেকে। অনেক সময় অনলাইন মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যায়, যা ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে।
ডিজিটাল সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ : ডিজিটাল সাংবাদিকতা ক্রমাগত উন্নতি করছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও আধুনিক ও কার্যকর হয়ে উঠবে। এআই-ভিত্তিক প্রযুক্তি সংবাদ বিশ্লেষণ, তথ্য যাচাই ও অটোমেটেড রিপোর্টিংয়ে সহায়তা করছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত এআই সিস্টেম সাংবাদিকদের কাজ সহজ করবে। সংবাদ পরিবেশন আরও আকর্ষণীয় করতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে। ফেক নিউজ প্রতিরোধে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক সংবাদ পরিবেশনার দিকে যাচ্ছে। এটি উচ্চমানের সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে পারে। ভবিষ্যতে সংবাদমাধ্যমের জন্য নৈতিকতা বজায় রাখা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর হবে।
ডিজিটাল সাংবাদিকতা আধুনিক বিশ্বের তথ্য প্রবাহের মূল চালিকা শক্তি। এটি যেমন দ্রুত সংবাদ সরবরাহের সুযোগ দিচ্ছে, তেমনি ভুয়া খবর ও হলুদ সাংবাদিকতার মতো চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে।
তাই সাংবাদিকতা যেন বস্তুনিষ্ঠ ও নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, সে জন্য সংবাদমাধ্যম, সরকার ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ও সাংবাদিকতার আরও সমন্বিত ব্যবহার সমাজকে আরও তথ্যসমৃদ্ধ ও সুশৃঙ্খল করে তুলবে। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রচারের মাধ্যম হিসেবেই ডিজিটাল সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে—এই প্রত্যাশা করছি।
লেখক পরিচিতি : সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

বাজেট প্রতিক্রিয়া : শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে এডিপি বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক: সিপিডি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ২:৩৮ অপরাহ্ণ
বাজেট প্রতিক্রিয়া : শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে এডিপি বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক: সিপিডি

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। আজ সোমবার সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘বাজেটের যে কাঠামো উপস্থাপন করা হয়েছে, সেখানে বাজেটের আকার সামান্য ছোট করা হয়েছে। পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, সেখানেও কিছুটা কাটছাঁট করা হয়েছে। বাজেটের আকার নিয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা হয়েছে, সেটার অন্যতম কারণ হচ্ছে, আমাদের যে চলমান অর্থনৈতিক সংকট, অর্থাৎ উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ স্থবিরতা, কর্মসংস্থানে সমস্যা এবং রাজস্ব আহরণের সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা বাজেট প্রস্তাব করেছে বলে আমাদের মনে হয়েছে।’

ড. ফাহমিদা বলেন, ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির দিকে তাকালে দেখা যাবে, চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ২ শতাংশ কমানো হয়েছে এবং ১৫টি খাতের মধ্যে ১৪টি খাতেই কমানো হয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য এবং চিন্তার বিষয় হচ্ছে, তিনটি খাত—শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে টাকার অংকে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। সেটা আমাদের কাছে উদ্বেগজনক মনে হয়, কারণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আমরা সব সময় বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলে আসছি এবং কৃষি খাতে, বিশেষত খাদ্য নিরাপত্তার দিকে এখানে বরাদ্দ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘ভৌত অবকাঠামো, বিশেষ করে পরিবহন ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি বরাবরের মতো উপরের দিকে আছে যুক্তিযুক্তভাবে।’

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কর কাঠামোর মধ্যে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ দশমিক ৫ লাখ, অর্থাৎ সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে, এটা একটা ভালো পদক্ষেপ। কিন্তু প্রায় ৩ বছরের মতো সময় ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে, ১০-১১ শতাংশে উঠে গেছে। সেদিক থেকে যে খুব একটা উল্লম্ফন হয়েছে সেটা না। তবে এটাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, যারা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত, তাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে, সেটাও আমরা ভালো পদক্ষেপ মনে করি।’

‘করের বিভিন্ন স্ল্যাবগুলোতে পরিবর্তন করা হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে যারা নিম্ন মধ্যআয়ের যারা পড়েছেন, কর দেওয়ার ক্ষেত্রে হারটা তাদের মধ্যেই বেশি পড়বে। আবার যারা আয়ের উচ্চ পর্যায়ে রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে অনেক কম পড়বে। এখানে বৈষম্যের চিত্র দেখা যাচ্ছে। অঞ্চলভিত্তিক ন্যূনতম কর ধরা হয়েছে ৫ হাজার টাকা, এখানে আমরা মনে করছি বৈষম্য রয়েছে। কারণ রাজধানী ঢাকা কিংবা অন্য আরেকটি জেলার সবাইকে এক করে দেখানো; সরকারি সেবা সব জায়গায় সবাই কিন্তু সমানভাবে নেয় না। এখানে পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে আমরা মনে করি,’ যোগ করেন তিনি।

ফাহমিদা বলেন, ‘শুল্ক যৌক্তিকরণ হয়েছে এবং আমদানি শিল্প যৌক্তিকিকরণ করতে গিয়ে হয়তো কিছু কিছু শিল্প চাপে পড়তে পারে। বিশেষ করে যখন মূল্যস্ফীতি বেশি, কস্ট অব ডুইং বিজনেস বেশি। এটাকে শুল্কের যৌক্তিকিকরণ করতেই হবে, কারণ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে যাবে। আস্তে আস্তে ট্যারিফ কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। যে প্রতিঘাত আসবে, সেটা মোকাবিলা করার জন্য কস্ট অব ডুইং বিজনেসের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ-জ্বালানি সাশ্রয়ী মূল্যে কিংবা সহজ শর্তে ঋণ কিংবা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে কস্ট অব ডুইং বিজনেস কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’

প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ই-কমার্সের সুযোগ-সুবিধা এবং ই-কমার্সকে ফরমাল সেক্টরে আনা; এখানে করের আওতায় আনা এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের অধীনে যে ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন হয়েছে। আমরা মনে করি, আগেও পিপিপি মডেলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো কিন্তু খুব একটা এগোয় নাই।

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠনকে স্বাগত জানিয়েছে সিপিডি।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কালো টাকা সাদার করার সুযোগটা রয়ে গেছে। যদিও এখানে রেট বাড়ানো হয়েছে কিন্তু আমরা আগেও বলেছি, কালো টাকার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান হচ্ছে, এই সুযোগ দিয়ে যারা নৈতিকভাবে প্রতি বছর স্বচ্ছ আয় করে, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার সঙ্গে কর দিয়ে থাকেন, তাদের প্রতি নৈতিক আঘাত। কারণ তাদের আদর্শিকভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়। দুটি জিনিস সমান্তরালভাবে চলতে পারে না!’

ফাহমিদা আরও বলেন, ‘আগে করের হারটাও কম রাখা হতো, এখন করের হার বেশি রাখা হয়েছে। তারপরও এটা থেকে খুব একটা আদায় হয় না। যদি এখান থেকে সত্যি আদায় করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে কিন্তু সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া দুএকবার সুযোগ দিয়ে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’ উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় কর রেয়াত কিংবা বিভিন্ন জায়গা থেকে কমানো এবং পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে ১৪০টির মতো কার্যক্রম একসঙ্গে চলতো, সেগুলো কমিয়ে ৯৫টি করা হয়েছে এবং সেখানে অর্থ বরাদ্দ কম করা হয়েছে। খুব কম না কিন্তু বাজেটের তুলনায় ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার মতো।’ ‘আমরা বারবার বলেছি, এখানে কতগুলো উপাদান যুক্ত করা হয়, যেগুলো সামাজিক নিরাপত্তা বা সামাজিক সুরক্ষার অধীনে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ এটা একেবারেই অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য। সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, সেখানে আছে ৩৫ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। কৃষি ভর্তুকি আছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এই দুটি মিলিয়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি হয়, সেটা বাদ দিয়ে রয়ে যায় ৬৪ হাজার কোটি টাকার মতো। সেটা অনেকখানি কমে আসে। এগুলো বাদ দিয়ে যে নেট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, সেটাকে দেখাতে হবে। সেটা দেখে তুলনা করা যেতে পারে যে আসলেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কী করা হলো,’ যোগ করেন তিনি।

ফাহমিদা বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বলতে চাই, কিছু কিছু পদক্ষেপ ভালো নেওয়া হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু সামগ্রিক কাঠামোগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যে একই কাঠামোর মধ্যে এখানে একটু বেশি, ওখানে একটু কম—এ রকম করে নেওয়া হয়েছে। বাজেটের যে দর্শন, এখানে বৈষম্যহীন সমাজের কথা বলা হয়েছে, সেই উদ্দেশ্যের সঙ্গে যে বাস্তব পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সব ক্ষেত্রে সেটা সাযুজ্যপূর্ণ হয়নি।’

ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি: জামায়াতের আমির

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ২:৩৬ অপরাহ্ণ
ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি: জামায়াতের আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান।

মঙ্গলবার (৩ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পাওয়া উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি অথবা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের দাবি আমরা জানিয়েছি। রোজার আগে অথবা যদি কোনো কারণে সম্ভব না হয়, তাহলে যেন এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়া হয়। কারণ আবহাওয়ার কারণে মে মাসের পর নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘আজকেও যদি সমতল মাঠ তৈরি হয়, ফেয়ার ইলেকশন যদি সম্ভব হয়, তাহলেও আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু ফেয়ার ইলেকশনের মাঠ তৈরি না হলে এপ্রিলে নির্বাচন হলেও তো কোনো লাভ নেই।’

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার বিষয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘প্রবাসীদের অবশ্যই ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে, এ বিষয়ে আমরা ছাড় দিতে রাজি নই।’

তিনি বলেন, ‘প্রবাসীরা তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। আমরা ইসির কাছে দাবি জানিয়েছি, প্রবাসীরা যেন ভোট দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করার জন্য। এটা কোনো কঠিন বিষয় নয়। কিন্তু ইসির পক্ষ থেকে আমরা কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না।’

এর আগে গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরও বলেন, বৈঠকে তারা বলেছেন, জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। আর নির্বাচন হতে পারে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে।

তাহের বলেন, ‘আমরা বলেছি জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। বেশিরভাগ বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। সামান্য কিছু বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে। জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার শেষ হবে। এরপর একটি জুলাই সনদ হবে। সেখানে আমরা সব দল স্বাক্ষর করব।’

জুলাই সনদ করব, এটাই আমাদের লক্ষ্য : প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ
জুলাই সনদ করব, এটাই আমাদের লক্ষ্য : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‌জুলাই সনদ করব এটাই আমাদের লক্ষ্য। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার আজকে প্রথম পর্ব শেষ হলো, দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো। সোমবার (২ জুন) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিতে বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে যান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। বিকেল সাড়ে ৪টার পর থেকে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা।  ড. ইউনূস বলেন, আমি সারা দিনে যত মিটিং করি, যত মিটিং করে এসেছি, সবচাইতে আনন্দ পাই যখন এরকম বসার সুযোগ পাই। এখানে সবাই মিলে বাংলাদেশের প্রকৃত ভবিষ্যৎ রচনা করা হচ্ছে। এটা আমাকে শিহরণ জাগায় যে, এরকম কাজে আমি যুক্ত হতে পেরেছি।

তিনি বলেন, সংস্কার করার জন্য আমার ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কোথা থেকে শুরু করব। প্রথমে নানা আলাপের মাধ্যমে ঠিক হলো যে, আমরা কয়েকটি কমিশন করে দেব। তারা ভেতরে গিয়ে প্রকৃত জিনিসটা তৈরি করবে। আমরা কমিশন গঠন করলাম। দ্রুত গতিতে কাজ করার জন্য তাদেরকে ৯০ দিন আমরা সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। আমরা খুব আনন্দিত তারা করতে পেরেছে। কয়েকটা কমিশন বেশি সময় নিয়েছে, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। ‘কমিশন থেকে রিপোর্ট এল। তারপর কথা হলো আমরা ঐকমত্য গঠন করতে চাচ্ছি, এটা কীভাবে হবে? সেখান থেকে একটা আইডিয়া আসল যে আলাদা একটা ঐকমত্য কমিশন দরকার। সেটা ফলপ্রসূ হয়েছে। আলী রীয়াজ সাহেব যখনই আমার সঙ্গে বৈঠক করেন তখনই খুব আনন্দিত হই।’

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে কী হবে তা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‌অনেকগুলো বিষয় কাছাকাছি এসে গেছে। আরেকটু হলে আমাদের তালিকায় আরেকটি সুপারিশ যুক্ত হবে, সেটা হচ্ছে ঐকমত্যের সুপারিশ। সেই সুযোগ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। আমাদের জুলাই সনদের যতগুলো বিষয় আছে তাতে যদি আরও কিছু যুক্ত করতে পারি, দেখতে সুন্দর লাগবে। জাতীয় একটা সনদ হলো, অনেকগুলো বিষয়ে আমরা এক হতে পেরেছি, জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত হতে পারি। আমরা দেশের উন্নতির জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছি।