খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

নানা সংকটে চাঁদপুরের ইলিশ এখন বিলাসবহুল খাবার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫, ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ
নানা সংকটে চাঁদপুরের ইলিশ এখন বিলাসবহুল খাবার

ইলিশ—বাংলাদেশের জাতীয় মাছ, যার সঙ্গে বাঙালির আবেগ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর ইলিশের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁদপুর, যেখানে পদ্মা-মেঘনার মোহনায় জন্ম নেয় রুপালি জলের রানী।  চাঁদপুরের মানুষের জীবনে ইলিশ শুধু মাছ নয়, এটি জীবিকা, গর্ব, ঐতিহ্য এবং উৎসবের নাম।  কিন্তু আজ সেই ইলিশই হয়ে উঠছে দুষ্প্রাপ্য, সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।  দাম, প্রাপ্তি এবং নিয়ন্ত্রণে নানা সংকটের কারণে চাঁদপুরে ইলিশ এখন একরকম বিলাসবহুল খাবারে পরিণত হয়েছে। এই নিবন্ধে আমরা ইলিশ সংকটের পেছনের কারণ, প্রভাব এবং সম্ভাব্য সমাধান বিশ্লেষণ করব।
ইলিশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও চাঁদপুরের গুরুত্ব ।অনেক যা অনেক আগে থেকে। ইলিশ বাংলাদেশের নদ-নদীসমূহে জন্মানো একটি স্বাদু পানির মাছ হলেও এটি সমুদ্রেও বিচরণ করে। প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে হাজার হাজার ইলিশ প্রজননের জন্য নদীতে ফিরে আসে।  চাঁদপুর জেলা পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনার অবস্থান হওয়ায় এখানেই সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। “চাঁদপুরের ইলিশ” নামেই সারাদেশে এই মাছ সুপরিচিত। ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে চাঁদপুরের হাট-বাজার ছিল ইলিশে সয়লাব।  দাম ছিল তুলনামূলক কম।  সাধারণ নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষও সহজে কিনে খেতে পারত।  কিন্তু এখন সে চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে।
ইলিশ ধরা মৌসুমভিত্তিক এবং বয়সভিত্তিক হওয়া উচিত হলেও অনেক সময় মাছের প্রজনন মৌসুমেও মাছ ধরা হয়। জাটকা নিধন, অর্থাৎ ছোট ইলিশ ধরা এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এতে ভবিষ্যতের ইলিশ উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ে। পদ্মা ও মেঘনাসহ দেশের বড় নদীগুলোর পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। শিল্পকারখানা থেকে নিঃসৃত বর্জ্য, কীটনাশকের ব্যবহার এবং নদীর তীরে অপরিকল্পিত স্থাপনার কারণে ইলিশের প্রজননের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে অত্যাধুনিক ফাইন জাল ব্যবহার করা হয় যা ছোট মাছসহ সব ধরণের মাছ ধ্বংস করে দেয়। বড় নৌকার মালিকরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরে ফেলেন, ফলে নদীতে মাছের প্রবেশ কমে যায়। চাঁদপুরের বহু জেলে পরিবার সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে ৬৫ দিনের মাছ ধরার মৌসুমে বিরত থাকেন। কিন্তু এই সময় তারা পর্যাপ্ত সহযোগিতা পান না। ফলে তাদের জীবিকা সংকটে পড়ে এবং অনেক সময় নিরুপায় হয়ে নিয়ম ভেঙে মাছ ধরতে বাধ্য হন। বাজারে ইলিশের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সিন্ডিকেটরা দাম বাড়িয়ে দেয়। একটি কিলো ইলিশের দাম অনেক সময় দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষের কেনা সম্ভব হয় না।
ইলিশের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছের বাজারে অন্য মাছের দামও বেড়ে যায়।  ফলে পুরো বাজার ব্যবস্থায় চাপ পড়ে এবং ভোক্তারা ভোগান্তির শিকার হন। ইলিশ বাঙালি সংস্কৃতির অংশ।  পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপূজা, ঈদ কিংবা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ইলিশের ব্যবহার ঐতিহ্যবাহী। ইলিশের অভাবে এই ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। যেসব পরিবার ইলিশ আহরণের ওপর নির্ভরশীল, তারা মাছ না পেয়ে ভিন্ন পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন।  কেউ কেউ শহরে এসে রিকশা চালান, আবার কেউ দিনমজুরের কাজ করেন।  চাঁদপুরের পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ হলো “ইলিশ ভোজন”।  দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে মোলহেডে এসে ইলিশ খেতেন।  এখন ইলিশের দাম ও প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
চাঁদপুরবাসী এখন কষ্ট পায় যখন শুনে, চাঁদপুরের মানুষই ইলিশ খেতে পায় না! স্থানীয় একজন গৃহিণী জানান, আগে প্রতি সপ্তাহে একবার ইলিশ রান্না করতাম, এখন ঈদ ছাড়া খাওয়াই হয় না।
একজন প্রবীণ জেলে বলেন, জীবনটা কাটাইলাম নদীতে, এখন নদীই আমাদের কিছু দেয় না। খালি পুলিশ-নিষেধ আর হুমকি। এমন অনেক গল্প রয়েছে যা বোঝায় চাঁদপুরবাসী কিভাবে নিজেদের ঐতিহ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষ করে জাটকা রক্ষা এবং প্রজনন মৌসুমে নজরদারি বাড়াতে হবে। মাছ ধরা নিষিদ্ধ মৌসুমে জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে—যেমন ক্ষুদ্র ব্যবসা, কৃষি, কিংবা নৌ-ভ্রমণ খাত। এতে তাদের জীবিকা সুরক্ষিত থাকবে। নদী দূষণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নদীর তীরে অবৈধ দখল ও শিল্প বর্জ্য নির্গমন বন্ধ করতে হবে। ইলিশের অভয়াশ্রম সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করতে হবে। ইলিশ বাজারে সিন্ডিকেট ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে। অনলাইন বাজার ব্যবস্থা উন্নত করলে মধ্যস্বত্বভোগী কমে যাবে।
চাঁদপুর—বাংলাদেশের ইলিশরাজ্য হিসেবে সুপরিচিত। এখানকার পদ্মা-মেঘনার মোহনা শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, এক বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রতি বছর লাখো কেজি ইলিশ আহরণ হয় এখান থেকে, যার একটি বড় অংশ চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাঁদপুরে ইলিশের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা সংকট, অসঙ্গতি ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মাছঘাট, পুরানবাজার, রাজরাজেশ্বর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও দক্ষিণসহ জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ইলিশ বাজার গড়ে উঠেছে। এখানে মাছ বিক্রেতা, আড়তদার, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সমন্বয়ে একটি বিশাল বাণিজ্যিক চক্র গড়ে উঠেছে। মাছ ধরা থেকে বিক্রি পর্যন্ত এই বাজার ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত রয়েছে হাজারো মানুষ।
তবে দুঃখজনকভাবে, বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও সুশাসনের অভাব প্রকট। প্রতি বছর ইলিশের মৌসুমে জেলে, আড়তদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের মধ্যে এক অস্বাভাবিক শক্তির ভারসাম্য তৈরি হয়, যেখানে প্রকৃত জেলেরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হন। তারা ন্যায্য দাম পান না, বরং আড়তদারদের খামখেয়ালিতে নির্ভরশীল থাকেন।
ইলিশের দাম নির্ধারণে সিন্ডিকেট ভূমিকা রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে। সকালেই নির্ধারিত হয় দিনের দাম, যা ক্রেতা বা জেলের হাতে প্রভাবিত হয় না। অনেক আড়তে ওজনে কম দেয়া হয়। আধুনিক ডিজিটাল স্কেল ব্যবহারের অভাব এবং মনিটরিংয়ের ঘাটতিতে এই সমস্যা রয়ে গেছে বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ দুর্বল। জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ বা ভোক্তা অধিকার সংস্থার তৎপরতা মৌসুমি এবং অল্প সময়ের জন্য কার্যকর হয়। জেলেরা সংগঠিত না থাকায় তারা দরকষাকষিতে পিছিয়ে পড়ে এবং দাম নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে না। জেলেদের সরাসরি বাজারে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এর জন্য মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিগুলোর সক্রিয়তা জরুরি। প্রতিনিয়ত ভোক্তা অধিকার সংস্থা ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। ইলিশ বিপণনে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন হাট ও ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে। নিষিদ্ধ মৌসুমে জেলেদের প্রণোদনা কার্যকরভাবে পৌঁছে দিতে হবে, যাতে তারা অবৈধভাবে মাছ ধরে বাজারকে প্রভাবিত না করে। চাঁদপুরের ইলিশ বাজার শুধু অর্থনৈতিকই নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ও গর্বের প্রতীক। এর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা ফিরিয়ে আনলে ইলিশ ব্যবসা আরও টেকসই ও লাভজনক হবে। সরকার, ব্যবসায়ী ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগেই সম্ভব একটি সুন্দর, ন্যায্য ও সুশাসনভিত্তিক ইলিশ বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
বর্তমান যুগ ডিজিটাল। গ্রাহক এখন ঘরে বসেই মোবাইল ফোনে একটি ক্লিক করে মাছ-মাংস কিনে ফেলছেন। এই প্রবণতা থেকে বাদ যায়নি ইলিশও। বিশেষ করে চাঁদপুরের ইলিশকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনলাইনে চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু এই চাহিদার সুযোগ নিয়ে গড়ে উঠেছে কিছু অসাধু প্রতারক চক্র, যারা অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ইলিশের মতো একটি উচ্চমূল্যের পণ্যের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে। বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট, ফেসবুক পেজ ও ব্যক্তিগত উদ্যোক্তারা এখন চাঁদপুর, ভোলা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ইলিশ সংগ্রহ করে দেশের শহরাঞ্চলে পৌঁছে দিচ্ছেন। এতে করে একদিকে যেমন শহরবাসী সহজে ইলিশ পাচ্ছেন, অন্যদিকে জেলেরা ও খুচরা বিক্রেতারা পাচ্ছেন লাভের নতুন পথ। বিশেষ করে প্যাকেটজাতকরণ, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ডেলিভারি এবং কাস্টমার রিভিউয়ের কারণে নির্ভরযোগ্য অনেক অনলাইন ব্যবসা সফলভাবে ইলিশ সরবরাহ করছে। তবে এই ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি এক অন্ধকার দিকও দেখা দিয়েছে—তা হলো প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য। ফেসবুকে “চাঁদপুরের আসল ইলিশ”, “ভেজালমুক্ত নদীর ইলিশ”, “ডাইরেক্ট নৌকা থেকে” ইত্যাদি আকর্ষণীয় প্রচার দিয়ে অনেকেই ফেসবুক পেজ বা অ্যাকাউন্ট খুলে মাছ বিক্রির নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য না পাঠিয়েই উধাও হয়ে যাচ্ছে। অত্যন্ত কম দামে ইলিশ বিক্রির প্রলোভন দেখানো (যেমন: ১ কেজি ইলিশ ৮০০ টাকা)। বিকাশ/নগদে অগ্রিম টাকা চাওয়া।  পণ্য না পাঠিয়ে মোবাইল বন্ধ করা বা ব্লক করে দেওয়া।  ভুয়া কুরিয়ার রশিদ পাঠানো।নকল ছবি বা পুরনো ভিডিও দিয়ে গ্রাহককে বিশ্বাসে আনা।  রাজধানীর এক শিক্ষক জানান, “একটি ফেসবুক পেজ থেকে ৪ কেজি ইলিশের অর্ডার দিই। ৩৫০০ টাকা বিকাশ করি। এরপর থেকে পেজ বন্ধ, মোবাইল বন্ধ—কোনো খোঁজ নেই।” চাঁদপুরের স্থানীয় এক ডেলিভারি কোম্পানি মালিক বলেন, “অনেক সময় প্রতারকরা আমাদের নাম ব্যবহার করেও ফেক ডেলিভারি দাবি করে গ্রাহকদের ঠকায়।”
অভিনব প্রচার দেখেই টাকা না পাঠানো-যাচাই-বাছাই ছাড়া অগ্রিম টাকা না দেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ। বিশ্বস্ত ও রিভিউযুক্ত পেজ ব্যবহার-যেসব অনলাইন ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে, কাস্টমার রিভিউ ভালো—তাদের কাছ থেকেই অর্ডার করা উচিত। প্রয়োজনে ক্যাশ অন ডেলিভারি-হাতে পণ্য পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা-ভুক্তভোগীরা পুলিশ সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ করলে প্রতারকদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করা সম্ভব। সচেতনতা বৃদ্ধি-সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে যেন কেউ এসব প্রতারক চক্রের ফাঁদে না পড়ে।
চাঁদপুরের ইলিশ অনলাইনে বিক্রির মাধ্যমে যেমন এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে, তেমনি প্রতারকদের দৌরাত্ম্য এই খাতকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। নিরাপদ ইলিশ কেনাবেচা নিশ্চিত করতে হলে যেমন ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা জরুরি, তেমনি গ্রাহকদের সচেতনতা ও সরকারের কার্যকর নজরদারি এখন সময়ের দাবি। ইলিশের জীবনচক্র নিয়ে গবেষণা বাড়ানো দরকার। কোথায়, কীভাবে তারা অবস্থান করে তা বোঝা গেলে আরও কার্যকর সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
ইলিশ শুধু মাছ নয়—চাঁদপুরের পরিচয়, গর্ব ও অস্তিত্বের প্রতীক। এই মাছের সংকট মানেই একটি সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সংকট। চাঁদপুরে যদি মানুষই ইলিশ না পায়, তবে “ইলিশের রাজ্য” নামে খ্যাতির কোনো মানে থাকে না।
সরকার, প্রশাসন, জেলে সম্প্রদায়, ব্যবসায়ী, গবেষক এবং সচেতন জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই সংকট কাটানো সম্ভব নয়। এখনই সময় এই ঐতিহ্য রক্ষা করার, নয়তো ভবিষ্যতের প্রজন্ম জানবে না—ইলিশের স্বাদ কেমন ছিল বা চাঁদপুরে একসময় কী ঐশ্বর্য ছিল।

সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪৮ অপরাহ্ণ
সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। গণমাধ্যম এখন আর শুধু তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়, বরং অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক সংকটের জটিল সমীকরণের ভেতরে বন্দী।
অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম বিজ্ঞাপননির্ভর হওয়ায় তাদের স্বাধীনতা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক প্রতিষ্ঠানের আয়ের মূল উৎস। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের বিপরীতে প্রতিবেদন প্রকাশে সাংবাদিকরা প্রায়ই বাধার সম্মুখীন হন। ডিজিটাল যুগে ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্ম বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিয়ে নেওয়ায় সংবাদমাধ্যমগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
রাজনৈতিক চাপও সাংবাদিকতার অন্যতম বড় বাধা। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় সংবাদ নিয়ন্ত্রণে প্রভাব বিস্তার করে, সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা দেয়। মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকরা প্রায়ই হয়রানি, মামলা ও হামলার শিকার হন। এতে সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এছাড়া নৈতিক দ্বন্দ্বও আজ সাংবাদিকতার মূল সমস্যা। ভিউ বা ক্লিক বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় অনেক সময় সত্যের চেয়ে আকর্ষণীয় শিরোনামকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এতে পেশাগত সততা ও জনআস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সত্য ও মানবতার পক্ষে সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তি পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে সাংবাদিকতা আবারও হতে পারে সমাজের আয়না ও রাষ্ট্রের প্রকৃত চতুর্থ স্তম্ভ।
সাংবাদিকতা একটি জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ এবং রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা আর কেবল তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়; এটি আজ অর্থনীতি, রাজনীতি এবং নৈতিকতার জটিল সম্পর্কের ভেতর আটকে পড়া একটি প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা যেখানে গণতন্ত্রের মূল শর্ত, সেখানে অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক চাপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্ব এই স্বাধীনতাকে প্রতিনিয়ত সংকুচিত করে চলেছে।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত। বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল এই শিল্প অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক ও কর্পোরেট চাপ সাংবাদিকদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ফলে সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য—সত্য প্রকাশ—প্রায়ই বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর কাছে বন্দী হয়ে পড়ছে।
সাংবাদিকতার অর্থনীতি ও স্বাধীনতার শর্ত :
একটি সংবাদমাধ্যম পরিচালনা করতে যেমন সাংবাদিকতার আদর্শ প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। সাংবাদিকতার অর্থনীতি মূলত তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে—বিজ্ঞাপন, পাঠক বা দর্শক নির্ভর আয়, এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ।
১. বিজ্ঞাপন নির্ভরতা ও তার প্রভাব : বেশিরভাগ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান আয় আসে বিজ্ঞাপন থেকে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক পত্রিকার বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। ফলে সংবাদপত্রগুলো প্রায়ই বিজ্ঞাপনদাতাদের স্বার্থের বিপরীতে যেতে পারে না।
একটি বড় কোম্পানির অনৈতিক কার্যক্রম বা পরিবেশ দূষণ নিয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন অনেক সময় চাপের মুখে বাতিল হয়ে যায়, কারণ সেই কোম্পানি পত্রিকাটির অন্যতম বিজ্ঞাপনদাতা।
২. ডিজিটাল যুগের অর্থনৈতিক রূপান্তর : অনলাইন সাংবাদিকতার যুগে বিজ্ঞাপন আয় আরও বিভক্ত হয়েছে। ইউটিউব, ফেসবুক, গুগলের মতো টেক জায়ান্টরা এখন বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিজেদের দখলে রেখেছে। ফলে সংবাদমাধ্যমগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যেখানে অ্যালগরিদম নির্ধারণ করে কোন সংবাদ বেশি প্রচার পাবে। এর ফলে গঠনমূলক সাংবাদিকতার চেয়ে ‘ক্লিকবেট’ সংবাদ, উত্তেজক শিরোনাম ও ভিউ নির্ভর কনটেন্ট বাড়ছে।
৩. সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা : অর্থনৈতিক দুরবস্থার ফলে অনেক সংবাদকর্মী ন্যায্য বেতন পান না, কিংবা নিয়মিত বেতন পেতেও সমস্যার সম্মুখীন হন। চাকরির অনিশ্চয়তা, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক, এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার অভাব সাংবাদিকদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। ফলস্বরূপ তারা পেশাগত স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন, এবং কখনও কখনও আত্মরক্ষার তাগিদে আপোষে বাধ্য হন।
রাজনৈতিক চাপ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার শত্রু : বাংলাদেশসহ বহু দেশে রাজনৈতিক প্রভাব সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমের কাজ হলো ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিত করা, কিন্তু রাজনৈতিক দল ও শাসকগোষ্ঠী সেই স্বাধীনতাকে নিজের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
১. সরকারি প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ : সরকার প্রায়ই বিজ্ঞাপন, নিবন্ধন, ফ্রিকোয়েন্সি বা লাইসেন্স ইস্যুর মাধ্যমে গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। যেসব পত্রিকা বা টেলিভিশন সরকারবিরোধী সংবাদ প্রকাশ করে, তাদের ওপর বিভিন্ন প্রশাসনিক বা আর্থিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। কখনও কখনও ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড’ বা ‘ভুয়া তথ্য প্রচার’-এর অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়, যা সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
২. রাজনৈতিক দলীয় বিভাজন : রাজনৈতিক বিভাজন সাংবাদিকতার ভেতরও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক সংবাদমাধ্যম সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের অনুগত হয়ে কাজ করছে। এতে সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতা নষ্ট হচ্ছে, আর পাঠকের আস্থা কমছে। ‘একপক্ষীয় সাংবাদিকতা’ সাধারণ মানুষের চোখে মিডিয়াকে পক্ষপাতদুষ্ট ও অবিশ্বাস্য করে তুলছে।
৩. মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক সহিংসতা : জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকরা প্রায়ই রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি ও হামলার শিকার হন। তাদের ওপর মামলা, লাঞ্ছনা, কিংবা পেশাগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ‘কথা না শোনার’ কারণে সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েন।
নৈতিক দ্বন্দ্ব ও সাংবাদিকতার আত্মার পরীক্ষা : সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়, এটি একধরনের নৈতিক দায়িত্ব। সত্য অনুসন্ধান ও সমাজের কল্যাণের জন্য সাংবাদিকের মননে থাকা চাই সততা, মানবিকতা ও সাহস। কিন্তু বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক যুগে এই নৈতিক মানদণ্ডকে রক্ষা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।
১. সত্য বনাম জনপ্রিয়তা : ডিজিটাল যুগে ক্লিক, ভিউ ও লাইকই হয়ে উঠেছে সংবাদমূল্যের মাপকাঠি। ফলে অনেক সাংবাদিক সত্যের চেয়ে ‘ট্রেন্ডিং’ বিষয়কে প্রাধান্য দেন। সংবাদে অতিরঞ্জন, ভুয়া তথ্য, এমনকি গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে ‘সেন্সেশন’ তৈরি করা এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এটি সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তিকে ক্ষয় করছে।
২. গোপন স্বার্থ ও প্রলোভন : কখনও রাজনৈতিক সুবিধা, কখনও আর্থিক প্রলোভন সাংবাদিকদের নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত করে। কোনো কোনো সাংবাদিক নির্দিষ্ট ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায় জড়িয়ে পড়েন। এর ফলে পেশাদার ন্যায়বোধ দুর্বল হয়, সংবাদপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
৩. ব্যক্তিগত ঝুঁকি ও ভয় : সত্য প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের অনেক সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে হয়। অনেক সাংবাদিক হুমকি, অপহরণ কিংবা হত্যার শিকার হয়েছেন। এই ভয় অনেককে আত্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করে যা নৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও গভীর করে তোলে।
সামাজিক মাধ্যমে নতুন যুগের নতুন চ্যালেঞ্জ : সামাজিক মাধ্যম আজ সংবাদ প্রচারের নতুন প্ল্যাটফর্ম, কিন্তু এটি সাংবাদিকতার নীতি ও পেশাদারিত্বের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জও বটে। যেকোনো ব্যক্তি এখন সংবাদ প্রচার করতে পারে, কিন্তু যাচাই-বাছাই ছাড়া তথ্য ছড়ানো সহজ হয়ে যাওয়ায় মিথ্যা সংবাদ ও বিভ্রান্তি বাড়ছে।
‘সিটিজেন জার্নালিজম’-এর ইতিবাচক দিক যেমন রয়েছে—ঘটনার দ্রুত প্রচার, তেমনি এর অপব্যবহারও ব্যাপক। অনেক ক্ষেত্রেই ফেসবুক বা ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া সংবাদই পরে ভুয়া প্রমাণিত হয়, কিন্তু ততক্ষণে সেটি জনমত প্রভাবিত করে ফেলে। পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য এটি এক কঠিন প্রতিযোগিতা—যেখানে গতি ও জনপ্রিয়তা সত্য ও দায়িত্বের চেয়ে বেশি মূল্য পায়।

নৈতিক সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা : সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবাদিকতার একটি স্পষ্ট নৈতিক কাঠামো থাকা জরুরি। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আচরণবিধি, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কোড অব কন্ডাক্ট—এসব কেবল কাগজে নয়, বাস্তবে প্রয়োগ করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।
সাংবাদিকদের উচিত :  তথ্য যাচাই না করে কিছুই প্রকাশ না করা। ব্যক্তিগত বা দলীয় পক্ষপাত এড়িয়ে নিরপেক্ষ থাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মতামত অন্তর্ভুক্ত করা। সমাজে শান্তি ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করা। একই সঙ্গে সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোরও প্রয়োজন পেশাদার প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ : সাংবাদিকতার টিকে থাকার জন্য দরকার মুক্ত চিন্তা, নিরাপদ পরিবেশ ও অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব। সরকারকে বুঝতে হবে—স্বাধীন সাংবাদিকতা কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কাজ নয়, বরং তা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।
সত্যের পক্ষে কলমই এখন সবচেয়ে বড় শক্তি। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বা সাইবার আইনের মতো বিধান সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে নয়, বরং ভুয়া সংবাদ ও ঘৃণা প্রচার রোধে ব্যবহার করা উচিত। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকে নিজস্ব ‘অভ্যন্তরীণ সেন্সরশিপ’ সংস্কৃতি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।
সাংবাদিকতার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো সমাজে সত্য, ন্যায় ও মানবতার আলো ছড়ানো। কিন্তু এই পথে রয়েছে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্বের পাহাড়। তবুও সাহসী ও নৈতিক সাংবাদিকরাই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন—যারা আপোষহীনভাবে সত্যের পক্ষে দাঁড়ান। আজকের সাংবাদিকতার সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—সে কি টিকে থাকবে স্বাধীন ও সৎভাবে, নাকি অর্থ ও ক্ষমতার দাসত্বে পরিণত হবে? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে সাংবাদিকদের সততা, সমাজের সচেতনতা, এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মনোভাবের ওপর। সত্য প্রকাশের এই কঠিন যাত্রায় সাংবাদিকদের হাতে এখনো সেই কলম রয়েছে—যা বন্দুকের চেয়েও শক্তিশালী। এই শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব।
সাংবাদিকতার অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক দুরবস্থা—এই তিনটি চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে সাংবাদিকতার অস্তিত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—যে জাতির কলম বেঁচে থাকে, তার বিবেক কখনো মরে না। আজও অনেক সাংবাদিক অন্ধকার ভেদ করে সত্যের আলো জ্বালাচ্ছেন। তাদের সংগ্রামই প্রমাণ করে, সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা নয়—এটি এক মহৎ প্রতিশ্রুতি, মানবতার প্রতি অঙ্গীকার।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও লেখক, চাঁদপুর।
সত্যের পক্ষে সেই কলমকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব, কারণ সত্য প্রকাশের শক্তি সব সময়ই বন্দুকের চেয়ে বড়।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।