

গরমকালে শরীর ঠান্ডা রাখা ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সঠিক খাদ্য নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। আর এই সময়ের জন্য এক অনন্য সুপারফুড হলো শসা। সাধারণ একটি সবজি মনে হলেও, শসার মধ্যে এমন কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, হজমের উন্নতি, ওজন হ্রাস এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
শসার বিশেষ গুণাগুণ
ডিহাইড্রেশন রোধে সাহায্য করে
শসার ৯৫ শতাংশই পানি, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে এবং ডিহাইড্রেশন রোধে সাহায্য করে। গরমে অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে ইলেক্ট্রোলাইট হ্রাস পায়, যার কারণে ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দেয়। শসায় থাকা প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, পেশির কার্যক্ষমতা এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
কম ক্যালোরি, বেশি পুষ্টি
একটি মাঝারি আকারের শসায় মাত্র ৩০–৪০ ক্যালোরি থাকে, যা ওজন কমানোর জন্য আদর্শ। শসায় রয়েছে-
ভিটামিন সি : রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ভিটামিন কে : হাড়ের সুস্থতায় সহায়ক
পটাশিয়াম : রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর
ম্যাগনেশিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ : হজম ও কোষ প্রতিরক্ষায় সাহায্য করে
হজমে সহায়ক
শসা যদি খোসাসহ খাওয়া হয়, তবে এটি উচ্চমাত্রার ডায়েটারি ফাইবার সরবরাহ করে। এটি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এছাড়া পেট ভরা রাখায় অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
ত্বকের যত্নে শসা
শসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড ও ট্যানিন ত্বকের ওপর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। এছাড়া সিলিকা উপাদান ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়ায় এবং গ্রীষ্মকালে ত্বকের শুষ্কতা ও ফোলাভাব রোধে সহায়তা করে।
খাদ্যতালিকায় শসা যুক্ত করার সহজ উপায়
শসা খুব সহজেই বিভিন্ন রূপে খাদ্যতালিকায় রাখা যায়-
» লেবু ও বিট লবণ মিশিয়ে কাঁচা শসা
» টমেটো, পেঁয়াজ, পুদিনা ও লেবু দিয়ে সালাদ
» ঠান্ডা শসার জুস বা স্মুদি
» দই দিয়ে তৈরি রাইতা
» হুমাস বা পনিরের সঙ্গে লো-কার্ব স্ন্যাকস
» গরমে সুস্থ থাকতে শসা রাখুন ডায়েটে
গ্রীষ্মকালে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং হজম ভালো রাখতে প্রতিদিনের ডায়েটে শসা রাখা অত্যন্ত জরুরি। সহজলভ্য হলেও এর উপকারিতা অসাধারণ। প্রতিদিন একটি শসা খেলে আপনার শরীর অনেকটাই সুস্থ ও সতেজ থাকবে-নিঃসন্দেহে এটি গ্রীষ্মকালীন সুপারফুড!
কাঁঠাল এমন একটি ফল যা অনেকে খেতে ভীষণ পছন্দ করেন, অনেকের কাছে আবার মোটেই পছন্দের নয়। তা আপনি খেতে পছন্দ করেন বা না করেন, এর উপকারিতার কথা অস্বীকার করার কিন্তু কোনো উপায় নেই। আকৃতিতে বড়, মিষ্টি, রসালো এই গ্রীষ্মকালীন ফলের রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। এতে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ রয়েছে। কম চর্বি এবং কোলেস্টেরলমুক্ত কাঁঠাল হজমে সহায়তা করে, শক্তি বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কেন কাঁঠাল খাওয়া উপকারী-
১. হাইড্রেটেড রাখে
কাঁঠালে পানির পরিমাণ বেশি থাকে, যা গরমের দিনে হাইড্রেশনের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই ফল খেলে ঘামের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া তরল পদার্থ পূরণ করা যায় এবং ডিহাইড্রেশনজনিত ক্লান্তি বা মাথাব্যথা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কাঁঠাল শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। এটি শরীরকে মৌসুমী সংক্রমণ এবং ঠান্ডা বা তাপজনিত জ্বরের মতো সাধারণ গ্রীষ্মকালীন অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
৩. হজমশক্তি উন্নত করে
কাঁঠালের প্রাকৃতিক আঁশ স্বাভাবিক মলত্যাগ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে হজমে সহায়তা করে। এটি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে, যা গ্রীষ্মের তাপের কারণে হজমশক্তি ধীর হয়ে গেলে বিশেষভাবে সহায়ক।
৪. দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে
কাঁঠালে ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজের মতো প্রাকৃতিক চিনি থাকে যা প্রক্রিয়াজাত চিনির মতো নয়। এই চিনি কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করে। ওয়ার্কআউটের আগে নাস্তা হিসেবে কিংবা গ্রীষ্মের দুপুরে সতেজতার জন্য কাঁঠাল খেতে পারেন।
৫. হৃদরোগ দূরে রাখে
কাঁঠাল পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস, যা সোডিয়াম প্রতিরোধ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রক্তনালীকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকেও রক্ষা করে, এভাবে ধীরে ধীরে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সোমবার (১২ মে) চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে জুলাই গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার নাম উঠে এসেছে বলে জানা গেছে। আজ দুপুর ১টায় চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন।
এর আগে গত শুক্রবার তাজুল ইসলাম এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট আগামী সোমবার চিফ প্রসিকিউটর বরাবরে দাখিল করবে আশা করছি। তদন্ত রির্পোট দাখিল হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ অর্থাৎ ‘ফরমাল চার্জ’ দাখিলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে।
‘ইতোমধ্যে চানখারপুল হত্যাকাণ্ডের দায়ে সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। ঐ হত্যাকাণ্ডের দায়ে আনুষ্ঠানিক বিচারের জন্য ফরমাল চার্জ চলতি সপ্তাহেই দাখিল করা হবে এবং এর মাধ্যমে জুলাই গণহত্যার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।’ এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর জুলাই- আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এই আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। এরপর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
আপনার মতামত লিখুন