খুঁজুন
                               
রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩০ ভাদ্র, ১৪৩২

পদত্যাগের আলোচনায় ইউনূস কী করবেন, সেদিকে দৃষ্টি দেশবাসীর

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
পদত্যাগের আলোচনায় ইউনূস কী করবেন, সেদিকে দৃষ্টি দেশবাসীর

ক্ষোভ ও হতাশা থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে চাইছেন, এমন খবর তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সারাদেশে। এ নিয়ে বিএনপিসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগ করুন, কোনো দলই সেটা চায় না। তবে দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় চায়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় তাঁর পদত্যাগের ভাবনার কথা বলেন। জানা যায়, এ সময় তিনি সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা বলেন। প্রায়ই সড়ক আটকে আন্দোলন, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়া, রাষ্ট্রীয় কাজে নানা পক্ষের অসহযোগিতাসহ দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি। অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনার কথা জানাজানি হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। এর আগের দিন বুধবার ঢাকা সেনানিবাসে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের কিছু বক্তব্য জনসমক্ষে প্রকাশ পায়। তাতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান, তার মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠাসহ জাতীয় নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য ছিল।

এর পরদিনই অধ্যাপক ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার পদ ছাড়তে চান, এই আলোচনা আসে। এটাকে বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে কৌশলগত ‘হুমকি’ কি না, সেটিও বিবেচনায় নিচ্ছেন বলে দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে। অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা তো ওনার (প্রধান উপদেষ্টা) পদত্যাগ চাই না। আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছি। তিনি কেন সেদিকে যাচ্ছেন না, সেটা আমরা জানি না। এরপরও তিনি যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে জাতি নিশ্চয়ই বিকল্প বেছে নেবে। কারণ, এটা কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়, রাষ্ট্রীয় ব্যাপার।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি কী ভূমিকা নেয়, রাজনীতি–সচেতন ব্যক্তিরা সে দিকেই দৃষ্টি রাখছেন। তবে বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা হয়েছে, তাতে সম্ভাব্য সংকট বা অনিশ্চয়তা নিরসনে দলগুলোর মধ্যে একধরনের ঐকমত্য হয়েছে বলে জানা গেছে। সেটি হচ্ছে, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে পদত্যাগ না করতে অনুরোধ করবেন।

এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বা সরকারের বিভিন্ন কাজে যুক্ত এমন কেউ কেউ এরই মধ্যে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও অনানুষ্ঠানিক কথা বলেছেন। সবার মধ্যে একটা ঐকমত্য হয় যে অধ্যাপক ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকুন। তবে তাঁকে দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট পথনকশা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়া সরকারের একজন উপদেষ্টাকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবিও অনেকে আলোচনায় এনেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, তাঁরা একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান। এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তাঁরা পথনকশা চেয়ে আসছেন। নির্বাচনের পথনকশা দিলে অনেক সংকটের সমাধান হয়ে যায়। এ বিষয়ে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল শুক্রবার রাতে বলেন, ‘আমরা দেশের স্থিতিশীলতা চাই। একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। এর জন্য নির্বাচনের রোডম্যাপ চাওয়া কি অপরাধ? এখনকার পরিস্থিতিতে আমি বলব, সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক, সবার ধৈর্য ধরা উচিত। বিশেষ করে সরকারের।’

বিএনপি সূত্র থেকে জানা যায়, এর আগে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চেয়ে গত মঙ্গলবার তাঁর কার্যালয়ে বার্তা পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো সাড়া না পেয়ে বিএনপি জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ তিন উপদেষ্টার অব্যাহতি চায়। এরপর রাতে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে আলোচনা–সংক্রান্ত খবর ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেতে থাকে। প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করতে চান, এ খবর জানাজানির পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাওয়া হয়। গত রাতে সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, বিএনপিকে আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সাক্ষাতের সময় দেওয়া হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বৃহস্পতিবার রাতেই এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানান। জামায়াত নেতা গতকাল বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যান। তবে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ পাননি; আজ সন্ধ্যা ছয়টায় জামায়াতের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নায়েব আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গত রাতে বলেন, ‘আমরা মনে করি, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়াটা অনিবার্য। তিনি যদি পদত্যাগ করেন, তাতে যে শূন্যতা তৈরি হবে, সেটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা একেবারেই অনিশ্চিত। তাই এ ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হোক, কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিকের কাম্য হতে পারে না।’

অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও চায় বিভাজন কাটিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হোক। সে লক্ষ্যে গতকাল এক বিবৃতিতে অবিলম্বে বিচার-সংস্কার-নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সিপিবি। দলটির নেতারা গতকাল পল্টনে এক সমাবেশে বলেছেন, ‘সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করুন।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলে দাবিদাওয়া আদায়ের রাজনীতি ও পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ রেজাউল করীম। সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংকট ও জটিল পরিস্থিতিতে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগ নয়; বরং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব পক্ষকে সমঝোতামূলক সমাধানে পৌঁছার আহ্বান জানিয়েছে এবি পার্টি।

ইসলামি দলগুলোতে ঐকমত্য

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনা এখনো আগের পর্যায়ে রয়েছে। এ নিয়ে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাসহ বিভিন্ন মহল চিন্তিত। এর মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের দল এনসিপির নেতারা বৃহস্পতিবার রাতেই অন্যান্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। ওই রাতেই বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একজন নেতার সঙ্গে এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দলের নেতাদের অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা হয়।

এ ছাড়া জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ রেজাউল করীমের মধ্যেও ফোনে কথা হয় বলে জানা গেছে। আবার ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ পাঁচটি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সৈয়দ রেজাউল করীম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, এবি পার্টির মহাসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, সারোয়ার তুষার প্রমুখ।

ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা আছে, তিনি প্রত্যাশাও তৈরি করেছেন। এখন তিনি চাইলেই একটা রাষ্ট্রকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে চলে যেতে পারেন না। এটা ক্ষোভ-অভিমানের জায়গা না। তবে কেউ তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করলে বা চাপ প্রয়োগ করলে সেটা জনগণ দেখবে, রাজনৈতিক দলগুলো দেখবে। এ ছাড়া জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যেও দ্রুত যোগাযোগ গড়ে ওঠে। তারা মনে করে, অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগ করলে দেশে বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, এই মুহূর্তে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য, চলমান সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার জন্য এবং দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ বড় ধরনের সংকটের তৈরি করবে। তিনি বলেন, ‘তাই আমরা যার যার জায়গা থেকে অনুরোধ করছি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত না নেওয়ার। তবে নির্বাচনে স্পষ্ট রোডম্যাপ দেওয়ার জন্য তাঁর প্রতি আহ্বান করব। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, নিজ নিজ জায়গায় অনড় না থাকতে। অন্যথায় দেশ খুব ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

ইউনূসের নেতৃত্বেই সংস্কার ও নির্বাচন চায় এনসিপি

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বেই রাষ্ট্রের সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় এনসিপি। অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের আলোচনা ওঠার পর দলটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছে। এনসিপির নেতাদের ধারণা, প্রধান উপদেষ্টা পদে থাকার জন্য অধ্যাপক ইউনূসকে যদি বিএনপিসহ বিভিন্ন দল অনুরোধ না করে, তিনি পদত্যাগ করার সম্ভাবনা বেশি। সে ক্ষেত্রে তাঁকে রাখতে বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীসহ বিপুল মানুষ রাস্তায় নেমে আসবেন।

গতকাল এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের চারজন নেতার সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তাঁরা জানান, অধ্যাপক ইউনূস বেশ কিছু কারণে বিরক্ত। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দূরত্ব ও সেনাপ্রধানের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আগ বাড়িয়ে কথা বলা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তিতে প্রতিক্রিয়া, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বসানোর দাবির আন্দোলন যমুনা পর্যন্ত চলে আসা এবং সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য অন্যতম। এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বেই জুলাই গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে, সেটাই আমরা দেখতে চাই।’

দৃষ্টি আজকের একনেকের বৈঠকে

এদিকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক রয়েছে আজ। প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এ সভা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারাও থাকেন। এই সভায় অধ্যাপক ইউনূস উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলেন কি না; সেদিকেও রাজনীতিকদের দৃষ্টি রয়েছে। সূত্র : প্রথম আলো।

এই দেশের মানুষ ন্যায়, ইনসাফ ও কল্যাণমুখী রাজনীতি চায় : অ্যাড. শাহজাহান মিয়া

মুহাম্মদ বাদশা ভূঁইয়া,চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ
এই দেশের মানুষ ন্যায়, ইনসাফ ও কল্যাণমুখী রাজনীতি চায় : অ্যাড. শাহজাহান মিয়া

চাঁদপুর সদর উপজেলার ১ নং বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কাজীর বাজার এলাকায় চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত এমপি প্রার্থী, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী এডভোকেট শাহজাহান মিয়া ব্যাপক গণসংযোগ ও পথসভা করেছেন। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তিনি কাজীর বাজারসহ বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গণসংযোগ করেন। এ সময় সাধারণ মানুষের সাথে কুশল বিনিময় করেন এবং দাড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে সমর্থন কামনা করেন।
সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য রাখেন এডভোকেট শাহজাহান মিয়া। তিনি বলেন, “এই দেশের মানুষ ন্যায়, ইনসাফ ও কল্যাণমুখী রাজনীতি চায়। দুঃশাসন ও বৈষম্যের শিকার জনগণ শান্তি, ন্যায়বিচার এবং সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। তাই আগামী নির্বাচনে ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক দাঁড়িপাল্লাকে বিজয়ী করতে হবে। ইনশাআল্লাহ, জনগণ যদি দাড়িপাল্লার পক্ষে ভোট দেয় তবে আমরা দেশে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে পারবো।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করি। ইসলাম ও জনগণের কল্যাণই আমাদের মূলনীতি। আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা থাকলে এ আসনে বিজয় সুনিশ্চিত হবে।”
গণসংযোগ ও পথসভায় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা আমীর মাওলানা আফসার উদ্দিন মিয়াজী, ১ নং বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন প্রধানিয়া, ইউনিয়ন জামায়াত সভাপতি কাজী মোঃ আবু তাহের, সেক্রেটারী মোঃ আল আমিন আখন্দ, সহকারী সেক্রেটারী মোঃ আফজাল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মোঃ সুরুজ, ৫ নং ওয়ার্ড সেক্রেটারী আবুল কাশেম হাওলাদারসহ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ। এ সময় এলাকায় এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ মানুষ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে স্লোগান দেন।

মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে : ড. মুহাম্মদ শাহাজান মাদানী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:২১ পূর্বাহ্ণ
মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে : ড. মুহাম্মদ শাহাজান মাদানী

বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে মাদ্রাসা শিক্ষক সম্মেলন– ২০২৫” অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ১৩সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল ১০টায় চাঁদপুর চেয়ারম্যান ঘাটস্থ ইউরেশিয়া কনভেনশন হলে এই সম্মেলন এর আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ শাহাজান মাদানী। তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা শুধু ধর্মীয় জ্ঞান নয়, নৈতিকতা ও দেশপ্রেমের আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে রাখছে। শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠন, সমাজে সুশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি এবং তরুণ প্রজন্মকে অপসংস্কৃতি থেকে দূরে রাখতেও মাদ্রাসার শিক্ষকদের অবদান অনন্য। জাতীয় জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তাই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মর্যাদার ক্ষেত্রেও মাদ্রাসা শিক্ষকদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।
তিনি আরো বলেন, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক বেতন স্কেলে বৈষম্য দূর না হলে প্রকৃত শিক্ষাব্যবস্থা ভারসাম্যপূর্ণ হবে না। শিক্ষকেরা সন্তুষ্ট হলে শিক্ষা মানোন্নয়ন সহজ হবে। এ জন্য জাতীয় বাজেটে আলাদা বরাদ্দ এবং মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি আহ্বান জানান, ডিজিটাল যুগের চাহিদা অনুযায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ ও সুবিধা দিতে হবে। যাতে তারা যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান করে ছাত্রছাত্রীদের দেশ গড়ার যোগ্য নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে পারেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার প্রধান উপদেষ্টা মাওলানা বিল্লাল হোসাইন মিয়াজী, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী ও মাদ্রাসা-ই-মোহাম্মদিয়া আরবিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি আ.ন.ম মাঈন উদ্দিন সিরাজী, চাঁদপুর জেলার শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ রুহুল্লাহ, মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ জেলা শাখার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মোঃ শাহজাহান মিয়া, অধ্যাপক মোঃ আবুল হোসেন।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মোঃ ছগীর হোছাইন এর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মাওলানা নূর মোহাম্মদ খান এর পরিচালনায় আরো বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি ও আল আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক রুহুল আমিন, আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন জেলা সেক্রেটারী ফরিদগঞ্জ আদর্শ একাডেমীর অধ্যক্ষ মোঃ হারুনুর রশিদ, শাহাতলী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ বিল্লাল হোসেন, হাজীগঞ্জ সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মাওলানা আবু বকর, ভুলদিঘী কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ তৈয়বুল রহমান, আল-আমিন মহিলা মাদ্রাসার সুপার মোঃ হাফিজুর রহমান, নিশ্চিন্তপুর কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ ফখরুদ্দিন, চাপাতলী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ মনিরুল ইসলাম মজুমদার, পশ্চিম সেকদী আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ মকবুল আহমেদ, মনিহার দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা নাজির আহমেদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর শ্রমিক ফেডারেশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক শাহ আলম, চাঁদপুর শহর জামায়াতের আমীর এড: শাহজাহান খান সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার জন্য ৩১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। এতে সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা মোঃ ছগীর হোসাইন এবং সেক্রেটারী নির্বাচিত হন মাওলানা নূর মোহাম্মদ খান। চাঁদপুর জেলার আটটি উপজেলার মাদ্রাসা শিক্ষক এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

শিশু-কিশোরদের কাছে সাঁতার কেবল একটি খেলা নয়, বরং জীবন রক্ষার অনন্য কৌশল : জেলা প্রশাসক

মুহাম্মদ বাদশা ভূঁইয়া, চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ
শিশু-কিশোরদের কাছে সাঁতার কেবল একটি খেলা নয়, বরং জীবন রক্ষার অনন্য কৌশল : জেলা প্রশাসক

বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের সার্বিক সহযোগিতায় এবং জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’এর অংশ হিসেবে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক সড়স্খ অঙ্গীকার লেকে জেলা প্রশাসক কাপ সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোঃ মহসিন উদ্দিন। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমান শাহীন, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রুহুল্লাহ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এরশাদ উদ্দিন,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকুল চাকমা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চাঁদপুর জেলা সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া প্রমুখ ।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ মহসিন উদ্দিন বলেন,সাঁতার বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অংশ। নদীমাতৃক এই দেশের শিশু-কিশোরদের কাছে সাঁতার কেবল একটি খেলা নয়, বরং জীবন রক্ষার অনন্য কৌশল। চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সাঁতারের মতো জীবনঘনিষ্ঠ খেলাকে উৎসাহিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আজকের এই প্রতিযোগিতা শুধু ক্রীড়া নয়, বরং তরুণদের সুস্থ দেহ ও সুন্দর মনের বিকাশে অনন্য ভূমিকা রাখবে। তারুণ্যের শক্তিকে সঠিক পথে কাজে লাগাতে এ ধরনের উদ্যোগ ধারাবাহিকভাবে চলমান থাকবে।
জাতীয় পর্যায়ে মানসম্পন্ন সাঁতারু গড়ে তোলা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করা আমাদের মূল লক্ষ্য। এজন্য স্কুল-কলেজ পর্যায় থেকে প্রতিভা খুঁজে বের করে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বয়সের ছেলে এবং মেয়ে প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সাঁতার প্রদর্শন করে। অনুষ্ঠানের শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।