খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৯ ভাদ্র, ১৪৩২

মানুষ তাঁর কল্পনাতেই সুন্দর বাস্ববতায় সংগ্রামী

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫, ২:২৫ অপরাহ্ণ
মানুষ তাঁর কল্পনাতেই সুন্দর বাস্ববতায় সংগ্রামী

মানুষকে বলা হয় সৃষ্টিশীল জীব, কারণ তার সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা তাকে প্রকৃতির অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। সৃষ্টিশীলতা হলো এমন একটি গুণ, যা মানুষের চিন্তা, কল্পনা, এবং নতুন কিছু তৈরি করার সামর্থ্যকে তুলে ধরে। এটি শুধু শিল্প বা সাহিত্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সমাজবিজ্ঞান, এবং প্রতিদিনের জীবনযাপনেও প্রভাব ফেলে। মানুষের এই সৃজনশীল গুণের মাধ্যমে সভ্যতা এগিয়ে চলেছে এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে।  সৃষ্টিশীলতা বলতে বোঝায় এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানুষ নতুন কিছু তৈরি করে বা বিদ্যমান জিনিসে নতুনত্ব আনে। এটি হতে পারে একটি ছবি আঁকা, একটি গান রচনা করা, একটি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা, বা একটি সমস্যার অনন্য সমাধান বের করা। সৃষ্টিশীলতা কেবল শৈল্পিক কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

মানুষের কল্পনা করার শক্তি তার সৃষ্টিশীলতার মূল চালিকা শক্তি। কল্পনার মাধ্যমে মানুষ এমন জিনিস কল্পনা করতে পারে যা বাস্তবে এখনও সম্ভব হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানীরা মহাকাশ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেই কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। মানুষের সৃজনশীলতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বিদ্যমান জিনিসকে উন্নত করার ক্ষমতা। উদাহরণস্বরূপ, হুইল আবিষ্কারের পর মানুষ সেটি ব্যবহার করে গাড়ি, বাইসাইকেল এবং আরও উন্নত যানবাহন তৈরি করেছে। মানুষ তার সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার সৃজনশীলতারই ফল।
মানুষের সৃষ্টিশীলতা বিভিন্ন ধরনের শিল্প এবং সংস্কৃতির বিকাশে অবদান রেখেছে। এটি মানুষের জীবনকে আরও সুন্দর, অর্থবহ, এবং সমৃদ্ধ করেছে।

শিল্পের জগতে সৃষ্টিশীলতা মানুষের সৃজনশীলতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির “মোনালিসা” থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা, সঙ্গীত, এবং চিত্রকলা—সবই মানুষের সৃষ্টিশীলতার ফল। বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন থেকে শুরু করে এলন মাস্ক পর্যন্ত, সবাই সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে পৃথিবীকে বদলে দিয়েছেন। নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্র আবিষ্কার বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে, আর মাস্কের টেসলা এবং স্পেসএক্স প্রযুক্তির দুনিয়ায় বিপ্লব ঘটিয়েছে। মানুষের সৃজনশীলতা প্রযুক্তির অগ্রগতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, স্মার্টফোন—সবকিছুই সৃষ্টিশীলতার উদাহরণ। মানুষের সৃজনশীলতার প্রভাব সমাজের কাঠামোতেও দেখা যায়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, আইন, এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সৃষ্টিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

সৃষ্টিশীলতা বিকাশের জন্য একটি উপযোগী পরিবেশ প্রয়োজন। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, এবং সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করে। অনেক সময় মানুষ নতুন কিছু করতে ভয় পায় বা নিজেকে অক্ষম মনে করে। এটি সৃষ্টিশীলতার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। সৃষ্টিশীল কার্যক্রমের জন্য সময় এবং সম্পদের প্রয়োজন। যখন এগুলোর অভাব হয়, তখন সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ধীরগতিতে হয়। মানুষের সৃষ্টিশীলতা বিকাশের জন্য মানসম্মত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল, কলেজ, এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা উৎসাহিত করা উচিত। সৃষ্টিশীলতা বিকাশের জন্য উন্মুক্ত চিন্তাভাবনার পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। এটি মানুষের মনের সীমাবদ্ধতা দূর করতে সাহায্য করে। পরিবেশ এমন হতে হবে, যেখানে মানুষ তার সৃজনশীলতাকে প্রয়োগ করতে এবং পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন কিছু শিখতে পারে। মানুষকে তার সৃজনশীলতা প্রকাশের জন্য উৎসাহ এবং সমর্থন প্রদান করা প্রয়োজন। এটি তার আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং নতুন কিছু করার প্রেরণা যোগায়।
মানুষ প্রকৃতির একটি অনন্য সৃষ্টি। তার সৃষ্টিশীলতার জন্যই সভ্যতা আজ এতদূর এগিয়েছে। সৃষ্টিশীলতা শুধু একটি ব্যক্তিগত গুণ নয়, এটি একটি সামাজিক সম্পদ। সৃষ্টিশীল মানুষের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বিশ্ব নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে চলেছে। তাই সৃষ্টিশীলতাকে লালন এবং বিকাশ করার জন্য সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে। মানুষের সৃষ্টিশীলতা যত বৃদ্ধি পাবে, ততই সভ্যতা উন্নতির শিখরে পৌঁছাবে।

কল্পনা মানুষের সৃষ্টিশীলতার এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। এটি এমন একটি মানসিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানুষ ভবিষ্যতের ছবি আঁকতে, নতুন ধারণা তৈরি করতে এবং অজানা বিষয় সম্পর্কে চিন্তা করতে সক্ষম হয়। কল্পনার ক্ষমতা মানুষকে প্রকৃতির অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে এবং তাকে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার পথে পরিচালিত করে। কল্পনার সংজ্ঞা কল্পনা হলো মানুষের মনের এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে বাস্তবে দেখা বা উপলব্ধি করা তথ্যের ভিত্তিতে নতুন কিছু তৈরি করা হয়। এটি হতে পারে বাস্তব অভিজ্ঞতার রূপান্তর বা সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারণা।
কল্পনার মাধ্যমে মানুষ অতীত অভিজ্ঞতাকে ভবিষ্যতের পরিকল্পনার সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কৃষিকাজ শুরুর আগে মানুষ প্রকৃতির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে তা থেকে ভবিষ্যতের জন্য ধারণা তৈরি করেছে। কল্পনার ক্ষমতা মানুষের মধ্যে জিজ্ঞাসার উদ্রেক ঘটায়। এটি মানুষকে এমন বিষয় নিয়ে ভাবতে সাহায্য করে, যা সে আগে কখনও দেখেনি বা জানেনি। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানীরা কল্পনার মাধ্যমে মহাকাশ অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন। কল্পনার ক্ষমতা সৃজনশীলতাকে জ্বালানি যোগায়। নতুন শিল্পকর্ম, প্রযুক্তি, বা সাহিত্য সৃষ্টির পেছনে কল্পনার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। মানুষ তার কল্পনাশক্তি ব্যবহার করে একই সমস্যার বিভিন্ন সমাধান খুঁজে বের করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এক সমস্যার জন্য একাধিক প্রযুক্তি বা পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের কল্পনার শক্তি বিশ্বকে বদলে দিয়েছে। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব তার গভীর কল্পনার ফল। তেমনি, জুল ভার্নের বইতে মহাকাশ ভ্রমণের ধারণা বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করেছিল। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির “দ্য লাস্ট সাপার” বা মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর “ডেভিড” মূর্তি তাদের কল্পনার একটি অসাধারণ প্রকাশ। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, এবং রোবোটিকসের পেছনে মানুষের কল্পনার বড় ভূমিকা রয়েছে। স্মার্টফোনের ধারণা বাস্তবতার সঙ্গে কল্পনাকে একীভূত করার একটি উদাহরণ। অনেক সময় মানুষের কল্পনা বাস্তবতার সীমারেখায় আটকে যায়। এটি উদ্ভাবন প্রক্রিয়াকে ধীর করে। কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহস এবং প্রেরণা প্রয়োজন। অনুপ্রেরণার অভাব কল্পনাশক্তিকে দমিয়ে দিতে পারে। কখনও কখনও মানুষের কল্পনা নেতিবাচক হতে পারে, যা তাকে ভয় বা উদ্বেগের দিকে ঠেলে দেয়। এটি তার মানসিক স্বাস্থ্য ও কার্যক্ষমতায় প্রভাব ফেলে।

বই পড়া এবং নতুন বিষয় শেখার মাধ্যমে কল্পনার শক্তি বৃদ্ধি পায়। মুক্ত চিন্তা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা কল্পনাশক্তিকে প্রসারিত করে। আঁকা, লেখা, বা মিউজিকের মতো সৃজনশীল কাজ কল্পনাশক্তিকে জাগ্রত করে। পরিবেশ এমন হতে হবে, যেখানে নতুন ধারণা গ্রহণযোগ্য এবং উৎসাহিত হয়। কল্পনার ক্ষমতা মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এটি শুধু নতুন কিছু তৈরি করতেই নয়, বরং ভবিষ্যতের উন্নয়নের দিকনির্দেশনা দিতে সাহায্য করে। মানুষের কল্পনাশক্তি যতই বিকশিত হবে, ততই সভ্যতা আরও সমৃদ্ধ হবে। তাই কল্পনার শক্তিকে লালন এবং বিকাশ করার জন্য প্রয়োজন সঠিক শিক্ষা, পরিবেশ এবং মানসিক উদ্দীপনা।

মানুষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো সংশোধন এবং উন্নয়নের ক্ষমতা। এই গুণের মাধ্যমে মানুষ তার ভুলত্রুটি শুধরে নিতে পারে এবং বিদ্যমান জিনিসকে আরও ভালো ও কার্যকর করতে পারে। সংশোধন ও উন্নয়নের ক্ষমতাই মানুষের অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি। এর ফলেই সভ্যতার ক্রমোন্নতি সম্ভব হয়েছে এবং মানুষ প্রকৃতির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে পেরেছে। সংশোধনের ক্ষমতা মানুষের বুদ্ধিমত্তা এবং অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানুষ তার ভুলগুলো চিহ্নিত করে এবং সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা মানুষকে আরও উন্নত করে তোলে।
প্রতিদিনের জীবনে মানুষ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়, যেগুলোর কিছু সঠিক হয়, কিছু ভুল। ভুল সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে সংশোধনের ক্ষমতা প্রকাশ পায়। শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভুল উত্তর দিলে পরবর্তী সময়ে সঠিক উত্তর শিখে নেয়। তেমনি কর্মক্ষেত্রে ভুল কর্মপরিকল্পনা সংশোধন করে সঠিক পথে এগোনোর মাধ্যমে উন্নতি ঘটে। মানব ইতিহাসের ভুল সিদ্ধান্ত, যেমন যুদ্ধ বা পরিবেশ ধ্বংসের মতো কর্মকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে আরও টেকসই করার চেষ্টা করছে। উন্নয়ন হলো মানুষের প্রগতিশীল মানসিকতার প্রতিফলন। এটি বিদ্যমান অবস্থা থেকে আরও ভালো কিছু তৈরি করার প্রক্রিয়া। মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং সৃজনশীলতা উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি।

মানুষের উন্নয়নের ক্ষমতা নতুন নতুন প্রযুক্তি, ধারণা এবং পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। উদাহরণস্বরূপ, আগুনের ব্যবহার থেকে শুরু করে আধুনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন, সবই উন্নয়নের উদাহরণ। উন্নয়ন মানে শুধু নতুন কিছু তৈরি করা নয়, বরং সমস্যার আরও কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা। উদাহরণস্বরূপ, পরিবেশ দূষণ রোধে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার উন্নয়নের একটি দৃষ্টান্ত। উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষ এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে চায়, যা দীর্ঘস্থায়ী এবং সকলের জন্য উপকারী। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মানুষের উন্নয়ন বিস্ময়কর। টেলিগ্রাফ থেকে শুরু করে আজকের ইন্টারনেট—এটি উন্নয়নের ধারাবাহিক উদাহরণ। তেমনি, বিজ্ঞানে ভ্যাকসিনের উদ্ভাবন মানুষের জীবনের গুণগত মান উন্নত করেছে। সমাজের কাঠামো উন্নত করার জন্য মানুষ আইন, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো ক্ষেত্রগুলোতে অগ্রগতি ঘটিয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও মানুষের উন্নয়নের ক্ষমতা লক্ষণীয়। বার্টার সিস্টেম থেকে শুরু করে আজকের ডিজিটাল লেনদেন পর্যন্ত উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
কিছু মানুষ পরিবর্তন বা উন্নয়নকে ভয় পায়, যা সংশোধন এবং অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যথাযথ শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে মানুষ প্রায়ই তার ভুল বুঝতে ব্যর্থ হয় এবং উন্নয়নের সুযোগ হাতছাড়া করে। উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাব সংশোধন ও উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। সংশোধন ও উন্নয়নের ক্ষমতা বিকাশের উপায়। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে তার ভুলত্রুটি চিহ্নিত করার ক্ষমতা এবং উন্নয়নের পদ্ধতি শেখানো যায়। সমালোচনা গ্রহণ করার মানসিকতা মানুষের সংশোধন ও উন্নয়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নতুন ধারণা এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করলে মানুষ উন্নয়নের পথে আরও এগিয়ে যেতে পারে। সংশোধন ও উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার মানুষের ক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
সংশোধন এবং উন্নয়নের ক্ষমতা মানুষের সৃষ্টিশীলতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি মানুষকে তার ভুল থেকে শিক্ষা নিতে এবং উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এই ক্ষমতার মাধ্যমেই মানুষ যুগে যুগে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ভবিষ্যতেও এই গুণ মানুষের অগ্রগতি এবং পৃথিবীকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হবে।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও প্রাবন্ধিক।

জাকসুর ভিপি স্বতন্ত্র প্যানেলের জিতু, জিএস ছাত্রশিবিরের মাজহারুল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ণ
জাকসুর ভিপি স্বতন্ত্র প্যানেলের জিতু, জিএস ছাত্রশিবিরের মাজহারুল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মাজহারুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন। এজিএস (পুরুষ) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ফেরদৌস আল হাসান ও এজিএস (নারী) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা নির্বাচিত হয়েছেন।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

ভিপি পদে আব্দুর রশিদ জিতু ৩৩৩৪ ভোট, জিএস পদে মাজহারুল ইসলাম ৩৯৩০ ভোট, এজিএস (পুরুষ) পদে ফেরদৌস আল হাসান ২৩৫৮ ভোট এবং এজিএস (নারী) পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা ৩৪০২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যান্য পদে জয়ীরা হলেন- পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক তানভীর রহমান, খাদ্যনিরাপত্তা সম্পাদক হুসনি মোবারক, সহ-সমাজসেবা সম্পাদক তৌহিদ হাসান, সমাজসেবা সম্পাদক আহসান লাবিব, তথ্য-প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ) মাহাদী হাসান, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী) ফারহানা আকতার, সহ-সমাজসেবা সম্পাদক (নারী) নিগার সুলতানা, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক রায়হান উদ্দীন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মহিবুল্লাহ শেখ, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম। কার্যকরী সদস্য (নারী) পদে জয়ী তিনজন হলেন- নুসরাত জাহান, নাবিলা বিনতে হারুন ও ফাবলিহা জাহান।
কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) পদে জয়ীরা হলেন- মোহাম্মদ আলী চিশতী, আবু তালহা ও তরিকুল ইসলাম।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, স্বতন্ত্র প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু ৩৩৩৪ ভোট পেয়ে ভিপি পদে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের আরিফ উল্লাহ পেয়েছেন ২৩৯২ ভোট। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল পেয়েছেন ১২১১ ভোট। আর ছাত্রদলের মো. শেখ সাদি হাসান পেয়েছেন ৬৪৮ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী মো. মাজহারুল ইসলাম ৩৯৩০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের আবু তৌহিদ মো. সিয়াম পেয়েছেন ১২৩৮ ভোট। ছাত্রদলের তানজিলা হোসাইন বৈশাখী পেয়েছেন ৯৪১ ভোট।
ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান, সদস্য সচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম, সদস্য লুৎফুল এলাহীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, আব্দুর রশিদ জিতু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক। কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও আন্দোলনের সময় সর্বপ্রথম ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়ে আহত হন। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ৫ আগস্ট পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলন পরিচালনা করেন তিনি। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগ করে ‘গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন’ নামে প্ল্যাটফর্মের সূচনা করেন এবং এই প্ল্যাটফর্ম থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন।
ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মাজহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণ শেষে হল কেন্দ্রগুলো থেকে ব্যালট বাক্স সিনেট ভবনে আনা হয় এবং ওইদিন রাত ১০টার কিছু পর থেকে ভোট গণনা শুরু হয়। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ভোটার ৫ হাজার ৭২৮ জন এবং ছাত্র ভোটার ছিলেন ৬ হাজার ১৫ জন। ভোট পড়েছে প্রায় ৬৮ শতাংশ।

সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে : উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:১১ অপরাহ্ণ
সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে : উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত

নৌ-পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘোষিত সময় অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে। এত প্রাণের বিনিময়ে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তার মধ্য দিয়ে গঠিত গণতান্ত্রিক সরকার হবে জবাবদিহিমূলক। এটি আর অতীতের সরকারের মতো হবে না।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বরিশালে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শনে এসে দুপুরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ডাকসু নির্বাচনের প্রসঙ্গে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ডাকসু নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয় নয়। অনেকেই বলেছিল, এই নির্বাচন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে। কিন্তু আমরা দেখেছি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অক্ষুণ্ন  রেখেই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলো দেখার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা যতদিন থাকছি, ততদিন সম্ভবপর নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। তবে নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী।
এ সময় উপদেষ্টা বরিশালের নদীবন্দর, জেলখাল, পোর্ট রোড ও স্টিমার ঘাট পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, নদী ভাঙন প্রতিরোধে ইতোমধ্যেই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বরিশালে বিপিএল (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ) খেলা অনুষ্ঠিত হবে এবং আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে নৌরুটে প্যাডেলচালিত জাহাজ চলাচল শুরু হবে।
পরিদর্শনকালে বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার, জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২৭ অপরাহ্ণ
জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

জয়ে এশিয়া কাপ শুরু করল বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে হংকংকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। হংকংয়ের ১৪৩ রানের জবাবে ১৭ ওভার ৪ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
রানতাড়ায় নেমে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২৪ রান। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে পারভেজ হোসেন ইমন ১৪ বল ১৯ রান করে ফিরে গেলে জুটি ভাঙে। ৫.৪ ওভারে ৪৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তানজিদ তামিম ফেরেন ১৮ বলে ১৪ রান করে।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে লিটন ও হৃদয় মিলে ৭০ বলে ৯৫ রান যোগ করেন। জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে লিটন বোল্ড হয়ে ফিরে যান। ৬ চার ও এক ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৯ রান করেন। পরে জাকের আলি অনিককে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন হৃদয়। ১ চারে ৩৬ বলে ৩৫ রান করেন হৃদয়। রানের খাতা খোলার সুযোগ পাননি জাকের।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান সংগ্রহ করেছে হংকং। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংস খেলেছেন নিজাকাত খান। টাইগারদের পক্ষে সবচেয়ে সফল তানজিম হাসান সাকিব ২১ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেছেন। এ ম্যাচে জয় তুলে নিতে ওভারপ্রতি ৭.২০ রান করতে হবে টাইগারদের।
এদিন টস জিতে ফিল্ডিং করতে নেমে শুরু থেকে হংকংকে চাপে রেখেছিল টাইগার বোলাররা। দলের খাতায় ৩০ রান যোগ করতে ২ উইকেট হারায় তারা। বাংলাদেশকে প্রথম উইকেটটি এনে দেন তাসকিন আহমেদ। ৫ বলে ৪ রান করে টাইগার পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে কট বিহাইন্ড হন আনশুমান রাথ। আম্পায়ার যদিও শুরুতে সাড়া দেননি, রিভিউ নিয়ে উইকেটটি আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। এরপর দারুণ এক ডেলিভারিতে ১২ বলে ১৪ রান করা বাবর হায়াতকে বোল্ড করেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে হংকং। জিশান আলী ও নিজাকাত খানের ৪১ রানের জুটি শেষমেশ ভাঙেন তানজিম সাকিব। তার বাউন্সার জায়গা নিয়ে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে তুলে দেন ওপেনার জিশান। ৩৪ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রানে থামে তার ইনিংস। চতুর্থ উইকেটে নিজাকাত ও ইয়াসিম মুর্তজা হতাশায় ভোগান টাইগার বোলারদের।
অনেক চেষ্টা করেও উইকেটের দেখা মিলছিল না। শেষমেশ ১৮তম ওভারে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে ভাঙে হংকংয়ের চতুর্থ জুটি। ১৯ বলে ২ ছক্কা ও ২ চারের মারে ২৮ রান করে রান আউট হন মুর্তজা। ততক্ষণে তারা দলের সংগ্রহ শতরান পার করে দেন। অন্যদিকে ৪০ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ রান করে ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে রিশাদ হোসেনের শিকার হন নিজাকাত। পরের বলেই ক্রিজে নেমে টাইগার রিস্ট স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হন কিঞ্চিৎ শাহ।
শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রানে থামে হংকংয়ের ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন, তানজিম সাকিব ও রিশাদ।