খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

মানুষ তাঁর কল্পনাতেই সুন্দর বাস্ববতায় সংগ্রামী

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫, ২:২৫ অপরাহ্ণ
মানুষ তাঁর কল্পনাতেই সুন্দর বাস্ববতায় সংগ্রামী

মানুষকে বলা হয় সৃষ্টিশীল জীব, কারণ তার সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা তাকে প্রকৃতির অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। সৃষ্টিশীলতা হলো এমন একটি গুণ, যা মানুষের চিন্তা, কল্পনা, এবং নতুন কিছু তৈরি করার সামর্থ্যকে তুলে ধরে। এটি শুধু শিল্প বা সাহিত্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সমাজবিজ্ঞান, এবং প্রতিদিনের জীবনযাপনেও প্রভাব ফেলে। মানুষের এই সৃজনশীল গুণের মাধ্যমে সভ্যতা এগিয়ে চলেছে এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে।  সৃষ্টিশীলতা বলতে বোঝায় এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানুষ নতুন কিছু তৈরি করে বা বিদ্যমান জিনিসে নতুনত্ব আনে। এটি হতে পারে একটি ছবি আঁকা, একটি গান রচনা করা, একটি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা, বা একটি সমস্যার অনন্য সমাধান বের করা। সৃষ্টিশীলতা কেবল শৈল্পিক কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

মানুষের কল্পনা করার শক্তি তার সৃষ্টিশীলতার মূল চালিকা শক্তি। কল্পনার মাধ্যমে মানুষ এমন জিনিস কল্পনা করতে পারে যা বাস্তবে এখনও সম্ভব হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানীরা মহাকাশ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেই কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। মানুষের সৃজনশীলতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বিদ্যমান জিনিসকে উন্নত করার ক্ষমতা। উদাহরণস্বরূপ, হুইল আবিষ্কারের পর মানুষ সেটি ব্যবহার করে গাড়ি, বাইসাইকেল এবং আরও উন্নত যানবাহন তৈরি করেছে। মানুষ তার সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার সৃজনশীলতারই ফল।
মানুষের সৃষ্টিশীলতা বিভিন্ন ধরনের শিল্প এবং সংস্কৃতির বিকাশে অবদান রেখেছে। এটি মানুষের জীবনকে আরও সুন্দর, অর্থবহ, এবং সমৃদ্ধ করেছে।

শিল্পের জগতে সৃষ্টিশীলতা মানুষের সৃজনশীলতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির “মোনালিসা” থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা, সঙ্গীত, এবং চিত্রকলা—সবই মানুষের সৃষ্টিশীলতার ফল। বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন থেকে শুরু করে এলন মাস্ক পর্যন্ত, সবাই সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে পৃথিবীকে বদলে দিয়েছেন। নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্র আবিষ্কার বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে, আর মাস্কের টেসলা এবং স্পেসএক্স প্রযুক্তির দুনিয়ায় বিপ্লব ঘটিয়েছে। মানুষের সৃজনশীলতা প্রযুক্তির অগ্রগতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, স্মার্টফোন—সবকিছুই সৃষ্টিশীলতার উদাহরণ। মানুষের সৃজনশীলতার প্রভাব সমাজের কাঠামোতেও দেখা যায়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, আইন, এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সৃষ্টিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

সৃষ্টিশীলতা বিকাশের জন্য একটি উপযোগী পরিবেশ প্রয়োজন। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, এবং সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করে। অনেক সময় মানুষ নতুন কিছু করতে ভয় পায় বা নিজেকে অক্ষম মনে করে। এটি সৃষ্টিশীলতার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। সৃষ্টিশীল কার্যক্রমের জন্য সময় এবং সম্পদের প্রয়োজন। যখন এগুলোর অভাব হয়, তখন সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ধীরগতিতে হয়। মানুষের সৃষ্টিশীলতা বিকাশের জন্য মানসম্মত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল, কলেজ, এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা উৎসাহিত করা উচিত। সৃষ্টিশীলতা বিকাশের জন্য উন্মুক্ত চিন্তাভাবনার পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। এটি মানুষের মনের সীমাবদ্ধতা দূর করতে সাহায্য করে। পরিবেশ এমন হতে হবে, যেখানে মানুষ তার সৃজনশীলতাকে প্রয়োগ করতে এবং পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন কিছু শিখতে পারে। মানুষকে তার সৃজনশীলতা প্রকাশের জন্য উৎসাহ এবং সমর্থন প্রদান করা প্রয়োজন। এটি তার আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং নতুন কিছু করার প্রেরণা যোগায়।
মানুষ প্রকৃতির একটি অনন্য সৃষ্টি। তার সৃষ্টিশীলতার জন্যই সভ্যতা আজ এতদূর এগিয়েছে। সৃষ্টিশীলতা শুধু একটি ব্যক্তিগত গুণ নয়, এটি একটি সামাজিক সম্পদ। সৃষ্টিশীল মানুষের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বিশ্ব নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে চলেছে। তাই সৃষ্টিশীলতাকে লালন এবং বিকাশ করার জন্য সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে। মানুষের সৃষ্টিশীলতা যত বৃদ্ধি পাবে, ততই সভ্যতা উন্নতির শিখরে পৌঁছাবে।

কল্পনা মানুষের সৃষ্টিশীলতার এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। এটি এমন একটি মানসিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানুষ ভবিষ্যতের ছবি আঁকতে, নতুন ধারণা তৈরি করতে এবং অজানা বিষয় সম্পর্কে চিন্তা করতে সক্ষম হয়। কল্পনার ক্ষমতা মানুষকে প্রকৃতির অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে এবং তাকে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার পথে পরিচালিত করে। কল্পনার সংজ্ঞা কল্পনা হলো মানুষের মনের এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে বাস্তবে দেখা বা উপলব্ধি করা তথ্যের ভিত্তিতে নতুন কিছু তৈরি করা হয়। এটি হতে পারে বাস্তব অভিজ্ঞতার রূপান্তর বা সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারণা।
কল্পনার মাধ্যমে মানুষ অতীত অভিজ্ঞতাকে ভবিষ্যতের পরিকল্পনার সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কৃষিকাজ শুরুর আগে মানুষ প্রকৃতির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে তা থেকে ভবিষ্যতের জন্য ধারণা তৈরি করেছে। কল্পনার ক্ষমতা মানুষের মধ্যে জিজ্ঞাসার উদ্রেক ঘটায়। এটি মানুষকে এমন বিষয় নিয়ে ভাবতে সাহায্য করে, যা সে আগে কখনও দেখেনি বা জানেনি। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানীরা কল্পনার মাধ্যমে মহাকাশ অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন। কল্পনার ক্ষমতা সৃজনশীলতাকে জ্বালানি যোগায়। নতুন শিল্পকর্ম, প্রযুক্তি, বা সাহিত্য সৃষ্টির পেছনে কল্পনার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। মানুষ তার কল্পনাশক্তি ব্যবহার করে একই সমস্যার বিভিন্ন সমাধান খুঁজে বের করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এক সমস্যার জন্য একাধিক প্রযুক্তি বা পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের কল্পনার শক্তি বিশ্বকে বদলে দিয়েছে। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব তার গভীর কল্পনার ফল। তেমনি, জুল ভার্নের বইতে মহাকাশ ভ্রমণের ধারণা বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করেছিল। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির “দ্য লাস্ট সাপার” বা মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর “ডেভিড” মূর্তি তাদের কল্পনার একটি অসাধারণ প্রকাশ। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, এবং রোবোটিকসের পেছনে মানুষের কল্পনার বড় ভূমিকা রয়েছে। স্মার্টফোনের ধারণা বাস্তবতার সঙ্গে কল্পনাকে একীভূত করার একটি উদাহরণ। অনেক সময় মানুষের কল্পনা বাস্তবতার সীমারেখায় আটকে যায়। এটি উদ্ভাবন প্রক্রিয়াকে ধীর করে। কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহস এবং প্রেরণা প্রয়োজন। অনুপ্রেরণার অভাব কল্পনাশক্তিকে দমিয়ে দিতে পারে। কখনও কখনও মানুষের কল্পনা নেতিবাচক হতে পারে, যা তাকে ভয় বা উদ্বেগের দিকে ঠেলে দেয়। এটি তার মানসিক স্বাস্থ্য ও কার্যক্ষমতায় প্রভাব ফেলে।

বই পড়া এবং নতুন বিষয় শেখার মাধ্যমে কল্পনার শক্তি বৃদ্ধি পায়। মুক্ত চিন্তা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা কল্পনাশক্তিকে প্রসারিত করে। আঁকা, লেখা, বা মিউজিকের মতো সৃজনশীল কাজ কল্পনাশক্তিকে জাগ্রত করে। পরিবেশ এমন হতে হবে, যেখানে নতুন ধারণা গ্রহণযোগ্য এবং উৎসাহিত হয়। কল্পনার ক্ষমতা মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এটি শুধু নতুন কিছু তৈরি করতেই নয়, বরং ভবিষ্যতের উন্নয়নের দিকনির্দেশনা দিতে সাহায্য করে। মানুষের কল্পনাশক্তি যতই বিকশিত হবে, ততই সভ্যতা আরও সমৃদ্ধ হবে। তাই কল্পনার শক্তিকে লালন এবং বিকাশ করার জন্য প্রয়োজন সঠিক শিক্ষা, পরিবেশ এবং মানসিক উদ্দীপনা।

মানুষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো সংশোধন এবং উন্নয়নের ক্ষমতা। এই গুণের মাধ্যমে মানুষ তার ভুলত্রুটি শুধরে নিতে পারে এবং বিদ্যমান জিনিসকে আরও ভালো ও কার্যকর করতে পারে। সংশোধন ও উন্নয়নের ক্ষমতাই মানুষের অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি। এর ফলেই সভ্যতার ক্রমোন্নতি সম্ভব হয়েছে এবং মানুষ প্রকৃতির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে পেরেছে। সংশোধনের ক্ষমতা মানুষের বুদ্ধিমত্তা এবং অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানুষ তার ভুলগুলো চিহ্নিত করে এবং সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা মানুষকে আরও উন্নত করে তোলে।
প্রতিদিনের জীবনে মানুষ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়, যেগুলোর কিছু সঠিক হয়, কিছু ভুল। ভুল সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে সংশোধনের ক্ষমতা প্রকাশ পায়। শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভুল উত্তর দিলে পরবর্তী সময়ে সঠিক উত্তর শিখে নেয়। তেমনি কর্মক্ষেত্রে ভুল কর্মপরিকল্পনা সংশোধন করে সঠিক পথে এগোনোর মাধ্যমে উন্নতি ঘটে। মানব ইতিহাসের ভুল সিদ্ধান্ত, যেমন যুদ্ধ বা পরিবেশ ধ্বংসের মতো কর্মকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে আরও টেকসই করার চেষ্টা করছে। উন্নয়ন হলো মানুষের প্রগতিশীল মানসিকতার প্রতিফলন। এটি বিদ্যমান অবস্থা থেকে আরও ভালো কিছু তৈরি করার প্রক্রিয়া। মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং সৃজনশীলতা উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি।

মানুষের উন্নয়নের ক্ষমতা নতুন নতুন প্রযুক্তি, ধারণা এবং পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। উদাহরণস্বরূপ, আগুনের ব্যবহার থেকে শুরু করে আধুনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন, সবই উন্নয়নের উদাহরণ। উন্নয়ন মানে শুধু নতুন কিছু তৈরি করা নয়, বরং সমস্যার আরও কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা। উদাহরণস্বরূপ, পরিবেশ দূষণ রোধে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার উন্নয়নের একটি দৃষ্টান্ত। উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষ এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে চায়, যা দীর্ঘস্থায়ী এবং সকলের জন্য উপকারী। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মানুষের উন্নয়ন বিস্ময়কর। টেলিগ্রাফ থেকে শুরু করে আজকের ইন্টারনেট—এটি উন্নয়নের ধারাবাহিক উদাহরণ। তেমনি, বিজ্ঞানে ভ্যাকসিনের উদ্ভাবন মানুষের জীবনের গুণগত মান উন্নত করেছে। সমাজের কাঠামো উন্নত করার জন্য মানুষ আইন, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো ক্ষেত্রগুলোতে অগ্রগতি ঘটিয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও মানুষের উন্নয়নের ক্ষমতা লক্ষণীয়। বার্টার সিস্টেম থেকে শুরু করে আজকের ডিজিটাল লেনদেন পর্যন্ত উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
কিছু মানুষ পরিবর্তন বা উন্নয়নকে ভয় পায়, যা সংশোধন এবং অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যথাযথ শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে মানুষ প্রায়ই তার ভুল বুঝতে ব্যর্থ হয় এবং উন্নয়নের সুযোগ হাতছাড়া করে। উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাব সংশোধন ও উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। সংশোধন ও উন্নয়নের ক্ষমতা বিকাশের উপায়। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে তার ভুলত্রুটি চিহ্নিত করার ক্ষমতা এবং উন্নয়নের পদ্ধতি শেখানো যায়। সমালোচনা গ্রহণ করার মানসিকতা মানুষের সংশোধন ও উন্নয়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নতুন ধারণা এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করলে মানুষ উন্নয়নের পথে আরও এগিয়ে যেতে পারে। সংশোধন ও উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার মানুষের ক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
সংশোধন এবং উন্নয়নের ক্ষমতা মানুষের সৃষ্টিশীলতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি মানুষকে তার ভুল থেকে শিক্ষা নিতে এবং উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এই ক্ষমতার মাধ্যমেই মানুষ যুগে যুগে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ভবিষ্যতেও এই গুণ মানুষের অগ্রগতি এবং পৃথিবীকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হবে।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও প্রাবন্ধিক।

সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪৮ অপরাহ্ণ
সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। গণমাধ্যম এখন আর শুধু তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়, বরং অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক সংকটের জটিল সমীকরণের ভেতরে বন্দী।
অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম বিজ্ঞাপননির্ভর হওয়ায় তাদের স্বাধীনতা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক প্রতিষ্ঠানের আয়ের মূল উৎস। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের বিপরীতে প্রতিবেদন প্রকাশে সাংবাদিকরা প্রায়ই বাধার সম্মুখীন হন। ডিজিটাল যুগে ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্ম বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিয়ে নেওয়ায় সংবাদমাধ্যমগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
রাজনৈতিক চাপও সাংবাদিকতার অন্যতম বড় বাধা। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় সংবাদ নিয়ন্ত্রণে প্রভাব বিস্তার করে, সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা দেয়। মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকরা প্রায়ই হয়রানি, মামলা ও হামলার শিকার হন। এতে সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এছাড়া নৈতিক দ্বন্দ্বও আজ সাংবাদিকতার মূল সমস্যা। ভিউ বা ক্লিক বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় অনেক সময় সত্যের চেয়ে আকর্ষণীয় শিরোনামকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এতে পেশাগত সততা ও জনআস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সত্য ও মানবতার পক্ষে সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তি পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে সাংবাদিকতা আবারও হতে পারে সমাজের আয়না ও রাষ্ট্রের প্রকৃত চতুর্থ স্তম্ভ।
সাংবাদিকতা একটি জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ এবং রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা আর কেবল তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়; এটি আজ অর্থনীতি, রাজনীতি এবং নৈতিকতার জটিল সম্পর্কের ভেতর আটকে পড়া একটি প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা যেখানে গণতন্ত্রের মূল শর্ত, সেখানে অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক চাপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্ব এই স্বাধীনতাকে প্রতিনিয়ত সংকুচিত করে চলেছে।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত। বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল এই শিল্প অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক ও কর্পোরেট চাপ সাংবাদিকদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ফলে সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য—সত্য প্রকাশ—প্রায়ই বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর কাছে বন্দী হয়ে পড়ছে।
সাংবাদিকতার অর্থনীতি ও স্বাধীনতার শর্ত :
একটি সংবাদমাধ্যম পরিচালনা করতে যেমন সাংবাদিকতার আদর্শ প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। সাংবাদিকতার অর্থনীতি মূলত তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে—বিজ্ঞাপন, পাঠক বা দর্শক নির্ভর আয়, এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ।
১. বিজ্ঞাপন নির্ভরতা ও তার প্রভাব : বেশিরভাগ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান আয় আসে বিজ্ঞাপন থেকে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক পত্রিকার বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। ফলে সংবাদপত্রগুলো প্রায়ই বিজ্ঞাপনদাতাদের স্বার্থের বিপরীতে যেতে পারে না।
একটি বড় কোম্পানির অনৈতিক কার্যক্রম বা পরিবেশ দূষণ নিয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন অনেক সময় চাপের মুখে বাতিল হয়ে যায়, কারণ সেই কোম্পানি পত্রিকাটির অন্যতম বিজ্ঞাপনদাতা।
২. ডিজিটাল যুগের অর্থনৈতিক রূপান্তর : অনলাইন সাংবাদিকতার যুগে বিজ্ঞাপন আয় আরও বিভক্ত হয়েছে। ইউটিউব, ফেসবুক, গুগলের মতো টেক জায়ান্টরা এখন বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিজেদের দখলে রেখেছে। ফলে সংবাদমাধ্যমগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যেখানে অ্যালগরিদম নির্ধারণ করে কোন সংবাদ বেশি প্রচার পাবে। এর ফলে গঠনমূলক সাংবাদিকতার চেয়ে ‘ক্লিকবেট’ সংবাদ, উত্তেজক শিরোনাম ও ভিউ নির্ভর কনটেন্ট বাড়ছে।
৩. সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা : অর্থনৈতিক দুরবস্থার ফলে অনেক সংবাদকর্মী ন্যায্য বেতন পান না, কিংবা নিয়মিত বেতন পেতেও সমস্যার সম্মুখীন হন। চাকরির অনিশ্চয়তা, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক, এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার অভাব সাংবাদিকদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। ফলস্বরূপ তারা পেশাগত স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন, এবং কখনও কখনও আত্মরক্ষার তাগিদে আপোষে বাধ্য হন।
রাজনৈতিক চাপ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার শত্রু : বাংলাদেশসহ বহু দেশে রাজনৈতিক প্রভাব সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমের কাজ হলো ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিত করা, কিন্তু রাজনৈতিক দল ও শাসকগোষ্ঠী সেই স্বাধীনতাকে নিজের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
১. সরকারি প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ : সরকার প্রায়ই বিজ্ঞাপন, নিবন্ধন, ফ্রিকোয়েন্সি বা লাইসেন্স ইস্যুর মাধ্যমে গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। যেসব পত্রিকা বা টেলিভিশন সরকারবিরোধী সংবাদ প্রকাশ করে, তাদের ওপর বিভিন্ন প্রশাসনিক বা আর্থিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। কখনও কখনও ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড’ বা ‘ভুয়া তথ্য প্রচার’-এর অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়, যা সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
২. রাজনৈতিক দলীয় বিভাজন : রাজনৈতিক বিভাজন সাংবাদিকতার ভেতরও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক সংবাদমাধ্যম সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের অনুগত হয়ে কাজ করছে। এতে সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতা নষ্ট হচ্ছে, আর পাঠকের আস্থা কমছে। ‘একপক্ষীয় সাংবাদিকতা’ সাধারণ মানুষের চোখে মিডিয়াকে পক্ষপাতদুষ্ট ও অবিশ্বাস্য করে তুলছে।
৩. মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক সহিংসতা : জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকরা প্রায়ই রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি ও হামলার শিকার হন। তাদের ওপর মামলা, লাঞ্ছনা, কিংবা পেশাগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ‘কথা না শোনার’ কারণে সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েন।
নৈতিক দ্বন্দ্ব ও সাংবাদিকতার আত্মার পরীক্ষা : সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়, এটি একধরনের নৈতিক দায়িত্ব। সত্য অনুসন্ধান ও সমাজের কল্যাণের জন্য সাংবাদিকের মননে থাকা চাই সততা, মানবিকতা ও সাহস। কিন্তু বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক যুগে এই নৈতিক মানদণ্ডকে রক্ষা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।
১. সত্য বনাম জনপ্রিয়তা : ডিজিটাল যুগে ক্লিক, ভিউ ও লাইকই হয়ে উঠেছে সংবাদমূল্যের মাপকাঠি। ফলে অনেক সাংবাদিক সত্যের চেয়ে ‘ট্রেন্ডিং’ বিষয়কে প্রাধান্য দেন। সংবাদে অতিরঞ্জন, ভুয়া তথ্য, এমনকি গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে ‘সেন্সেশন’ তৈরি করা এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এটি সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তিকে ক্ষয় করছে।
২. গোপন স্বার্থ ও প্রলোভন : কখনও রাজনৈতিক সুবিধা, কখনও আর্থিক প্রলোভন সাংবাদিকদের নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত করে। কোনো কোনো সাংবাদিক নির্দিষ্ট ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায় জড়িয়ে পড়েন। এর ফলে পেশাদার ন্যায়বোধ দুর্বল হয়, সংবাদপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
৩. ব্যক্তিগত ঝুঁকি ও ভয় : সত্য প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের অনেক সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে হয়। অনেক সাংবাদিক হুমকি, অপহরণ কিংবা হত্যার শিকার হয়েছেন। এই ভয় অনেককে আত্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করে যা নৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও গভীর করে তোলে।
সামাজিক মাধ্যমে নতুন যুগের নতুন চ্যালেঞ্জ : সামাজিক মাধ্যম আজ সংবাদ প্রচারের নতুন প্ল্যাটফর্ম, কিন্তু এটি সাংবাদিকতার নীতি ও পেশাদারিত্বের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জও বটে। যেকোনো ব্যক্তি এখন সংবাদ প্রচার করতে পারে, কিন্তু যাচাই-বাছাই ছাড়া তথ্য ছড়ানো সহজ হয়ে যাওয়ায় মিথ্যা সংবাদ ও বিভ্রান্তি বাড়ছে।
‘সিটিজেন জার্নালিজম’-এর ইতিবাচক দিক যেমন রয়েছে—ঘটনার দ্রুত প্রচার, তেমনি এর অপব্যবহারও ব্যাপক। অনেক ক্ষেত্রেই ফেসবুক বা ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া সংবাদই পরে ভুয়া প্রমাণিত হয়, কিন্তু ততক্ষণে সেটি জনমত প্রভাবিত করে ফেলে। পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য এটি এক কঠিন প্রতিযোগিতা—যেখানে গতি ও জনপ্রিয়তা সত্য ও দায়িত্বের চেয়ে বেশি মূল্য পায়।

নৈতিক সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা : সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবাদিকতার একটি স্পষ্ট নৈতিক কাঠামো থাকা জরুরি। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আচরণবিধি, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কোড অব কন্ডাক্ট—এসব কেবল কাগজে নয়, বাস্তবে প্রয়োগ করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।
সাংবাদিকদের উচিত :  তথ্য যাচাই না করে কিছুই প্রকাশ না করা। ব্যক্তিগত বা দলীয় পক্ষপাত এড়িয়ে নিরপেক্ষ থাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মতামত অন্তর্ভুক্ত করা। সমাজে শান্তি ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করা। একই সঙ্গে সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোরও প্রয়োজন পেশাদার প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ : সাংবাদিকতার টিকে থাকার জন্য দরকার মুক্ত চিন্তা, নিরাপদ পরিবেশ ও অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব। সরকারকে বুঝতে হবে—স্বাধীন সাংবাদিকতা কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কাজ নয়, বরং তা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।
সত্যের পক্ষে কলমই এখন সবচেয়ে বড় শক্তি। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বা সাইবার আইনের মতো বিধান সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে নয়, বরং ভুয়া সংবাদ ও ঘৃণা প্রচার রোধে ব্যবহার করা উচিত। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকে নিজস্ব ‘অভ্যন্তরীণ সেন্সরশিপ’ সংস্কৃতি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।
সাংবাদিকতার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো সমাজে সত্য, ন্যায় ও মানবতার আলো ছড়ানো। কিন্তু এই পথে রয়েছে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্বের পাহাড়। তবুও সাহসী ও নৈতিক সাংবাদিকরাই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন—যারা আপোষহীনভাবে সত্যের পক্ষে দাঁড়ান। আজকের সাংবাদিকতার সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—সে কি টিকে থাকবে স্বাধীন ও সৎভাবে, নাকি অর্থ ও ক্ষমতার দাসত্বে পরিণত হবে? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে সাংবাদিকদের সততা, সমাজের সচেতনতা, এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মনোভাবের ওপর। সত্য প্রকাশের এই কঠিন যাত্রায় সাংবাদিকদের হাতে এখনো সেই কলম রয়েছে—যা বন্দুকের চেয়েও শক্তিশালী। এই শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব।
সাংবাদিকতার অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক দুরবস্থা—এই তিনটি চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে সাংবাদিকতার অস্তিত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—যে জাতির কলম বেঁচে থাকে, তার বিবেক কখনো মরে না। আজও অনেক সাংবাদিক অন্ধকার ভেদ করে সত্যের আলো জ্বালাচ্ছেন। তাদের সংগ্রামই প্রমাণ করে, সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা নয়—এটি এক মহৎ প্রতিশ্রুতি, মানবতার প্রতি অঙ্গীকার।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও লেখক, চাঁদপুর।
সত্যের পক্ষে সেই কলমকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব, কারণ সত্য প্রকাশের শক্তি সব সময়ই বন্দুকের চেয়ে বড়।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।