খুঁজুন
                               
বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ৯ মাঘ, ১৪৩১

আবারো নতুন দাবানল গ্রাস করছে লস অ্যাঞ্জেলেসকে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ
আবারো নতুন দাবানল গ্রাস করছে লস অ্যাঞ্জেলেসকে

ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দাবানলের ক্ষত না সারতেই নতুন আরেকটি দাবানল হানা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে। নতুন দাবানলটি দ্রুত গ্রাস করছে শহরটির উত্তরাঞ্চলকে। ফলে এ এলাকার প্রায় ৩১ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আগুনের ভয়াবহতায় ইতোমধ্যে জারি করা হয়েছে রেড-ফ্ল্যাগ সতর্কতা। সেইসঙ্গে অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার (২২ জানুয়ারি) থেকে শুরু এ দাবানল ইতোমধ্যে ৩৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা গ্রাস করেছে। প্রবল বাতাস ও শুকনো ঝোপঝাড়ের কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে আগুন। লস অ্যাঞ্জেলস থেকে প্রায় ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) উত্তরে হিউজ ফায়ার নামে পরিচিত এই আগুন ইতোমধ্যেই অঞ্চলটির দমকল বাহিনীর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। তারা ইতোমধ্যে মেট্রোপলিটন এলাকায় জ্বলতে থাকা দুটি বড় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। বুধবার (২২ জানুয়ারি) কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন এই আগুন অতি সাম্প্রতিক ইটন ফায়ারের অর্ধেক আকার ধারণ করে। ইটন ফায়ার এই মাসের শুরুর দিকে লস অ্যাঞ্জেলস অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া সবচেয়ে ভয়াবহ দুটি দাবানলের একটি। রেড-ফ্ল্যাগ জারির পর লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির কাস্টেইক লেক এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, তারা চরম মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে আছেন। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বেশিরভাগ এলাকা এখনো শক্তিশালী, শুষ্ক বাতাসের কারণে চরম অগ্নি-ঝুঁকির জন্য রেড-ফ্ল্যাগ সতর্কতার অধীনে রয়েছে।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি শেরিফ রবার্ট লুনা জানিয়েছেন, প্রায় ৩১ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আরও ২৩ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি, ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য এবং মার্কিন বন পরিষেবা তাদের দমকল কর্মীদের আগুন নিয়ন্ত্রণে পাঠিয়েছে। এদিকে অ্যাঞ্জেলেস ন্যাশনাল ফরেস্ট বিভাগ জানিয়েছে, তাদের ৭ লাখ একর (২,৮০০ বর্গকিলোমিটার) বন সম্পূর্ণভাবে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া বন ও অগ্নি সুরক্ষা বিভাগ (ক্যাল ফায়ার) জানিয়েছে, ১১০০ দমকল কর্মী দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় গত ৯ মাস ধরে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি, যা বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তবে শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত কিছু বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এই বৃষ্টি হলে দমকল কর্মীদের জন্য বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বস্তি বয়ে আনতে পারে।

স্বপ্ন পূরণ : আমার জীবনের প্রথম অনূভুতি

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ৪:৩৭ অপরাহ্ণ
স্বপ্ন পূরণ : আমার জীবনের প্রথম অনূভুতি

জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই যেন একেকটি অমূল্য গল্প। তবে কিছু গল্পের স্বাদ অন্যরকম—অপরূপ, অতুলনীয়। এমনই এক অনন্য অভিজ্ঞতা হলো পিতৃত্ব। সেই প্রথমবার, যখন একজন পুরুষের মনে আসে একটি নতুন পরিচয়ের আনন্দ, দায়িত্ব এবং ভালোবাসা, তখন তার জীবন যেন নতুন এক রঙে রঞ্জিত হয়। আমি যখন প্রথম জানতে পারি, আমি বাবা হতে চলেছি, তখন মুহূর্তটি ছিল এক মিশ্র অনুভূতির। আনন্দ, উত্তেজনা, শঙ্কা—সবকিছু একসাথে। কোনো কিছুর সাথেই সেই অনুভূতিকে তুলনা করা যায় না। মনে হয়েছিল, যেন জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে, যেখানে প্রতিটি দিনই হবে শেখার, বোঝার, এবং অনুভব করার এক অসাধারণ সুযোগ।

যে মুহূর্তে জানতে পারলাম, আমার স্ত্রী মা হতে চলেছেন আর আমি বাবা হতে চলছি, আমার মনের মধ্যে কেমন যেন একটা অদ্ভুত আলোড়ন বয়ে গেল। আমার চারপাশটা কেমন যেন বদলে গেল। তখন মনে হচ্ছিল, আমি শুধু একজন মানুষ নই, একজন বাবা হতে চলেছি। আমার বুকে নতুন দায়িত্বের এক ভার যেন ধীরে ধীরে জমা হচ্ছিল। যে মানুষটা আগে নিজের প্রয়োজন আর আরামকেই বেশি গুরুত্ব দিত, সে হঠাৎ বুঝতে পারল, এখন থেকে আমার জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত আর ভাবনা আমার সন্তানকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে।

আমার স্ত্রীর গর্ভাবস্থায় নয়টি মাস ছিল অপেক্ষার এক দীর্ঘ উৎসব। প্রতিদিনই নতুন নতুন কিছু ঘটত। স্ত্রীর শারীরিক পরিবর্তন, তার চাহিদা, তার অনুভূতিগুলো আমার মনকে আরও গভীরভাবে সংবেদনশীল করে তুলেছিল। এই সময়টাতে আমার ভেতরে একটা অন্যরকম ভালোবাসার জন্ম নিল। হঠাৎ একদিন কালো অধ্যায় শুরু হলো-আমার স্ত্রী একটি ছোট্ট দূর্ঘটনায় বাম পায়ের হাঁটুর নিচে প্রধান যে দুটি —–

প্রতিদিনই মনে হতো, আমার সন্তানটি কেমন হবে? তার চেহারা কেমন হবে? সে কি আমার মতো হবে, নাকি তার মায়ের মতো? এই কল্পনাগুলো আমাকে এক অদ্ভুত আনন্দ দিত। আর এই অপেক্ষার প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে শিখিয়েছিল ধৈর্য আর ত্যাগের মানে।-++++

যে দিনটি আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে, সেটি হলো আমার সন্তানের জন্মদিন। সেই প্রথমবার, ১৩ জুন ২০১৩ শান্ত এক বিকেলে যখন তার কান্নার শব্দ শুনলাম, আমার মনে হলো যেন পুরো পৃথিবী আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। তাকে আমার হাতে প্রথমবার ধরে মনে হয়েছিল, আমি একটি স্বর্গীয় অনুভূতির অংশীদার। তাকে দেখে আমার মনে হচ্ছিল, এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। ছোট্ট একটি প্রাণ, যার মুখে নিষ্পাপ একটি হাসি, সেই মুহূর্তেই আমার জীবনের সকল কষ্ট, সব ক্লান্তি হারিয়ে গিয়েছিল। পিতৃত্ব মানেই শুধু আনন্দ নয়, এটি একটি বিশাল দায়িত্ব। সন্তানের প্রতি যত্ন নেওয়া, তাকে সঠিক পথে চালিত করা, তার জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা—এসব কিছুই আমার কাছে ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।

প্রথমবার, যখন রাতে সন্তানকে ঘুম পাড়াতে পারিনি, তখন বুঝেছিলাম, বাবা হওয়া কতটা কঠিন। একটি ছোট শিশুর চাহিদা, তার কান্না, তার আনন্দ, সবকিছু বুঝতে শিখতে হয়। কিন্তু সেই কঠিন মুহূর্তগুলোও আমার জন্য এক নতুন শিক্ষার দরজা খুলে দিয়েছিল। আমার সন্তান আমাকে জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখিয়েছে। ধৈর্য ধরার শিক্ষা, ত্যাগের মানে বোঝা, আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার আসল অনুভূতি—এগুলো সবই আমি শিখেছি আমার সন্তান থেকে।

আমি অনুভব করেছি, বাবা হওয়া মানে শুধুই একজন অভিভাবক হওয়া নয়। এটি মানে, একজন পথপ্রদর্শক, একজন রক্ষক, এবং একজন সঙ্গী হওয়া। আমার সন্তান আমাকে নতুনভাবে জীবনকে দেখতে শিখিয়েছে। পিতৃত্বের সবচেয়ে সুন্দর দিক হলো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। সন্তানের প্রতি ভালোবাসার কোনো শর্ত থাকে না, কোনো সীমা থাকে না। তার হাসি, তার ছোট ছোট কাণ্ডকারখানা, তার প্রথম শব্দ—বা-বা, মা এসবই জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ এনে দেয়। আমি বুঝেছি, পিতৃত্ব মানে নিজের সুখকে পেছনে রেখে সন্তানের সুখকে সামনে রাখা। তার জন্য কিছু করতে পারা মানেই জীবনের আসল তৃপ্তি।

সন্তানের আগমন শুধু আমার জীবনেই নয়, পুরো পরিবারকেই বদলে দিয়েছিল। আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্য যেন আরও কাছাকাছি এসে গেল। সন্তানের জন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করতাম, একে অপরের প্রতি আরও যত্নশীল হয়ে উঠেছিলাম। সন্তানের মাধ্যমে আমি বুঝতে পেরেছি, একটি পরিবার কীভাবে একসঙ্গে এগিয়ে যায়। পরিবার মানে কেবল রক্তের বন্ধন নয়, এটি ভালোবাসা, ত্যাগ, এবং একে অপরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস।

পিতৃত্ব একটি অনন্ত যাত্রা, যা প্রতিনিয়ত চলতে থাকে। প্রতিদিনই নতুন কিছু শেখার থাকে, নতুন কিছু অনুভব করার থাকে। আমার সন্তানের বড় হওয়া, তার বেড়ে ওঠা, তার জীবনের প্রতিটি ছোট ছোট সাফল্য আমাকে গর্বিত করে।

আমি জানি, সামনে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। কিন্তু আমি সেই চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত। কারণ আমি জানি, আমার সন্তানের হাসির জন্য, তার সুখের জন্য আমি যে কোনো কিছু করতে পারি।

পিতৃত্বের স্বাদ এমন এক অভিজ্ঞতা, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এটি এমন এক অনুভূতি, যা প্রথমবার অনুভব করার পর জীবনের সমস্ত কিছু বদলে যায়। সন্তান জন্মের আগে পর্যন্ত হয়তো নিজের জীবনকেই কেন্দ্র করে সবকিছু আবর্তিত হয়। কিন্তু বাবা হওয়ার পর, জীবন যেন অন্যরকম এক অর্থ পায়।

পিতৃত্ব আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। প্রথমেই শিখিয়েছে ধৈর্য। সন্তান লালন-পালনের প্রতিটি মুহূর্তেই ধৈর্যের প্রয়োজন। তার কান্না, খাওয়া, আরাম—সবকিছুতে আমাকে ধৈর্য ধরে তার চাহিদাগুলো বুঝতে হয়েছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। বাবা হওয়ার পর বুঝেছি, সন্তানের জন্য ত্যাগ করতে কখনোই কষ্ট হয় না। তার সুখই আমার সুখ, তার স্বস্তিই আমার স্বস্তি।

পিতৃত্বের প্রথম স্বাদ আমাকে জীবনের নতুন মানে বুঝিয়েছে। এটি কেবল একটি অনুভূতি নয়, এটি একটি যাত্রা, যা কখনো শেষ হয় না। এই যাত্রা আমাকে আরও ভালো মানুষ হতে সাহায্য করেছে। আমার সন্তান আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা। তার জন্য আমি আরও শক্তিশালী, আরও দায়িত্বশীল এবং আরও ভালো বাবা হতে চাই। পিতৃত্বের এই মধুর অভিজ্ঞতা আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অধ্যায়, যা আমি সারা জীবন মনে রাখব।

লেখক পরিচিতি: উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

চুরি যাওয়া অর্থ ফেরাতে বিশ্বনেতাদের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ
চুরি যাওয়া অর্থ ফেরাতে বিশ্বনেতাদের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

চুরি হয়ে যাওয়া অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মিত্রদের সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (২২ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ২য় দিনে দেওয়া বক্তব্যে নেতাদের প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা জার্মানির ফেডারেল চ্যান্সেলারির প্রধান ও ফেডারেল মিনিস্টার ফর স্পেশাল টাস্কস ওল্ফগ্যাং স্মিড, বেলজিয়ামের রাজা কিং ফিলিপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা, সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিস, দুবাই কালচার অ্যান্ড আর্টস অথরিটির চেয়ারপারসন শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভার ফাঁকে অন্যদের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন। প্রতি বছরের জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের পার্বত্য শহর দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অধ্যাপক ইউনূস এখানে এবার ভিন্ন ভূমিকায় এসেছেন উল্লেখ করে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, তিনি এখন সরকারপ্রধান। তিনি এখনো এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় বক্তাদের একজন। তবে এবার তিনি খুব কমই তার মূল ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। ড. ইউনূস একটি নতুন বাস্তব জীবনের গল্প নিয়ে এসেছেন। কীভাবে বাংলাদেশের তরুণরা একটি ‘স্বৈরশাসক’-কে হটিয়েছিল, কীভাবে তাদের চিন্তাধারা একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরি করছে এবং কীভাবে দেশ পুনর্গঠিত হচ্ছে।

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উপসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনামলে বাংলাদেশে কীভাবে ‘প্রকাশ্য দিবালোকে ডাকাতি’ সংঘটিত হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে শীর্ষ বিশেষজ্ঞ, থিংক ট্যাংক, সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।

আজাদ মজুমদার জানান, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) লামিয়া মোরশেদ, জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

লুৎফে সিদ্দিকী চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সরকারের প্রচেষ্টা সম্পর্কে জার্মান মন্ত্রী ভোল্ফগ্যাং স্মিডকে অবহিত করে বলেন, সরকার এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে একটি সম্পদ পুনরুদ্ধার কমিটি এবং একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সরকার প্রাথমিকভাবে শীর্ষ ২০ অর্থ পাচারকারীকে টার্গেট করেছিল।

দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জার্মান মন্ত্রীকে বলেন, আমরা যখন নতুন বাংলাদেশের কথা বলি, তখন পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের কথাও বলি।

প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে জার্মানির সমর্থন কামনা করে দেশটির মন্ত্রীর সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্র নিয়েও আলোচনা করেন। এ সময় জার্মান মন্ত্রী বলেন, আগামী এপ্রিলে জার্মানির একটি নতুন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নেপালের জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে ভারত, নেপাল ও ভুটানকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ একটি অর্থনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চায়। নেপাল বিদ্যুৎ বিক্রি করতে সত্যিই প্রস্তুত এবং বাংলাদেশ তাদের জন্য একটি ভালো বাজার। এটি প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা সুইস ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিসের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও জলবায়ু অর্থায়নসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে বাংলাদেশের কার্বন ধরে রাখার প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে সুইজারল্যান্ডকে অনুরোধ জানান। ড. ইউনূস সুইজারল্যান্ডকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগান। কারণ দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকই ২৭ বছরের কম বয়সী তরুণ।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশ্বনেতাদের অবহিত করেন। এ সময় জার্মান মন্ত্রী ও সুইস কাউন্সিলরের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা করেন। বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ ও কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে অবহিত করা হয়, বেলজিয়ামের একজন যুবরাজের নেতৃত্বে একটি গ্রুপের চালু করা একটি ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি কীভাবে আফ্রিকার দেশটিতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন সংরক্ষণের আকার প্রসারিত করতে সহায়তা করেছে। প্রিন্স ইমানুয়েল ডি মেরোডের প্রতিষ্ঠিত একটি গ্রুপ সংঘাতপ্রবণ কঙ্গোলিজ অঞ্চলে ক্ষুদ্রঋণ চালু করেছিল। তিনি বলেন, সংঘাতের পর কঙ্গোলিজ বন এখন ব্রিটেনের আকারের দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আর ক্ষুদ্রঋণ সেখানে ২১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ প্রাক্তন যোদ্ধা। ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি এ অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে বড় ভূমিকা পালন করেছে বলেও জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিনাওয়াত্রার সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট ও জাহাজ চলাচলসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধান করতে চাই, কারণ আরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে। বিশ্বের অন্যতম কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী সিনাওয়াত্রা বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের পর দুই দেশের মধ্যে তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, থাই প্রধানমন্ত্রীর বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রা ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার বড় ভক্ত ছিলেন। দারিদ্র্য, সম্পদের কেন্দ্রীয়করণ, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে একটি আত্মবিধ্বংসী সভ্যতাকে বাঁচানোর ‘থ্রি জিরো’ ধারণা সম্পর্কে থাই প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা সিনাওয়াত্রাকে বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৫৮টি দেশে প্রায় পাঁচ হাজার থ্রি জিরো ক্লাব রয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছরের এপ্রিলে ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি বিমসটেকের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছেন।

বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের ৭টি দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড নিয়ে বিমসটেক গঠিত। গত সোমবার বিমসটেক সদর দপ্তর তথ্য জানিয়েছে, এটি সাতটি বিস্তৃত খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা অনুসরণ করে। এগুলো হলো কৃষি ও খাদ্য সুরক্ষা, কানেক্টিভিটি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, নিরাপত্তা, এবং বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও উন্নয়ন।এই সহযোগিতাটি ৮টি উপক্ষেত্রকেও অন্তর্ভুক্ত করে ব্লু ইকোনমি, মাউন্টেন ইকোনমি, জ্বালানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়ন। প্রধান উপদেষ্টা আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে এবং এর পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি থাইল্যান্ডের সমর্থন কামনা করেন। সূত্র : ইউএনবি

কুয়াশায় মুড়িয়ে রয়েছে সারাদেশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:১১ পূর্বাহ্ণ
কুয়াশায় মুড়িয়ে রয়েছে সারাদেশ

বুধবার (২২ জানুয়ারি) কুয়াশার দাপটে সারাদেশে সূর্য উঁকি দিতে বেলা গড়িয়েছে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি ২০২৫) সকাল থেকেই কুয়াশায় মুড়িয়ে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ। তাতে সকাল থেকেই গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ শীত একটু বেশি অনুভূত হচ্ছে। কুয়াশার এ চিত্র শুধু রাজধানীতেই নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও রয়েছে এর দাপট। সূর্যের দেখা মিলতে দেরি হওয়ায় অনেক এলাকায় তাপমাত্রার পারদও নিচের দিকে। তাতে ভোগান্তিতে পড়েছেন দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, চাঁদপুরসহ কয়েকটি জেলার মানুষ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

তবে শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে, তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া ৫ দিনের প্রথম দিকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।