খুঁজুন
                               
বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

‘অপ্রতুল’ কৈশোরবান্ধব সেবা, যৌন-প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে অজ্ঞ বড় অংশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১:৫৭ অপরাহ্ণ
‘অপ্রতুল’ কৈশোরবান্ধব সেবা, যৌন-প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে অজ্ঞ বড় অংশ

দেশের মোট কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ সরকারের কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র সম্পর্কে ধারণা রাখলেও বাকি ৩৫ শতাংশের মতো কিশোর-কিশোরী এখনো এই সেবা সম্পর্কে কিছুই জানে না। এমনকি যারা এই সেবা সম্পর্কে জানে, তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি কিশোর-কিশোরী সেবা কেন্দ্রে এসে এই সেবা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে না। ফলে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বড় অংশই তাদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ সার্ভিস ট্রেনিং অ্যান্ড এডুকেশন প্রোগ্রাম (আরএইচস্টেপ) আয়োজিত এক সেমিনারে উপস্থাপিত এক গবেষণা প্রবন্ধে এসব তথ্য জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

২০২২ সালের জরিপ অনুসারে দেশে কিশোর-কিশোরী, বয়সভিত্তিক জনসংখ্যার মধ্যে যারা ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী তাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জনের মধ্যে ১ কোটি ৭১ লাখ ৬০ হাজার ১৭৫ জনই ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী, শতাংশের হিসাবে যা ১০.১০। এর পরই আছে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী, যাদের সংখ্যা ১ কোটি ৬৮ লাখ ৪২ হাজার ৬৮২ জন। শতাংশের হিসাবে ৯.৯২। এজন্য বাংলাদেশে স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে কিশোর-কিশোরী ও যুববান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ ব্যবস্থায়।

মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ দশমিক ৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী। তাদের জন্য দেশে বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে ১২৫৩টি। তবে এত সংখ্যক সেবা কেন্দ্র থাকলেও ৩৫ শতাংশের মতো কিশোর-কিশোরী এখনো এই সেবা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। যে ৬৫ শতাংশের মতো জানে, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৭ থেকে ২৮ শতাংশ কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে সেবা নিতে আসে, বাকি অর্ধেকেরও বেশি কিশোর-কিশোরী এই সেবা নিতে আগ্রহ দেখায় না।

গবেষণায় দেখা গেছে, কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সম্পর্কে জেনেও যারা সেবা নিতে যায় না তাদের মধ্যে ১০ শতাংশ এই কার্যক্রম নিয়ে উৎসাহবোধ করেন না। এ ছাড়া প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশের মতো কিশোর-কিশোরী সোশ্যাল স্টিগমার কারণে যায় না। আর সাড়ে ৩ শতাংশের মতো কিশোর-কিশোরী বলছে এই কার্যক্রমে যেতে তাদের পরিবারের বাধা-নিষেধ রয়েছে।

গবেষণা প্রসঙ্গে ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা চারটি উপজেলায় (সাভার, নড়াইল, গাইবান্ধা, সিলেট) ৩০০ জন কিশোর-কিশোরীর উপর এই জরিপটি পরিচালনা করেছি। কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে যেসব সেবা থাকার কথা, অধিকাংশতেই সেগুলো পুরোপুরি উপস্থিতি নেই। এমনকি অসংখ্য কিশোর-কিশোরী জানেই না যে, এই সেবা কেন্দ্রে কী ধরনের সেবা পাওয়া যায়। এমনকি কার্যক্রমে শিক্ষক এবং গার্ডিয়ানদের উপস্থিতি কম পাওয়া গেছে। আমরা মনে করি, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলোতে তাদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে যৌনতা সংক্রান্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে যা আছে, এগুলো সম্পর্কে আমাদের শিক্ষকেরা ঠিকমতো ডেলিভারি দিতে পারছেন না। এমনকি সেক্সচুয়াল বিষয়গুলোর সামনে এলে সেগুলোর বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ধারণা না দিয়ে তারা ভিন্ন টপিকে চলে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, গবেষণা করতে গিয়ে আরেকটি বিষয়ে আমরা দুর্বলতা পেয়েছি, তা হলো এই ধরনের বিষয়গুলো কিশোর-কিশোরীরা শুধু বিভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমেই পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের বর্তমান যুগে দেখছি যে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো যেখানে বিভিন্ন বিষয়ে বড় ভূমিকা রাখছে, সেই জায়গাতে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য সেবা পিছিয়ে আছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমরা মনে করি বিভিন্ন অনলাইন অ্যাক্টিভিজম কিংবা বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করে সেগুলোর মাধ্যমে যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে ধারণা দিতে পারি, তাহলে কিশোর-কিশোরীরা সামাজিক স্টিগমা বা ট্যাবুটা অনুভব করবে না।

এ সময় সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এঅ্যান্ডআরএইচ) ডা. মো. মনজুর হোসেন বলেন, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আমরা যে উদ্যোগগুলো নিয়েছি, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি কিছু উন্নয়ন সহযোগী আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। আমাদের যে ৩ কোটি ২৮ লাখ কিশোর-কিশোরী রয়েছে, তাদের পুষ্টি, প্রজনন স্বাস্থ্য, সহিংসতা প্রতিরোধ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে আমরা যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছি। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আমরা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কর্নার প্রতিষ্ঠা করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে কিশোর-কিশোরীরা সেবা নিচ্ছে কি না, বা নিয়ে থাকলে তারা আমাদের সেবায় সন্তুষ্ট কি না, এমনকি কিশোরদের তুলনায় কিশোরীদের উপস্থিতি সেখানে কেন বেশি, এগুলো নিয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, ওই সেবাকেন্দ্রে যদি তিনজন কিশোরী আমাদের কেন্দ্র থেকে সেবা নেয়, তাহলে কিশোর সেবা নেয় একজন। এখন প্রশ্ন হলো, কেন কিশোরীরা বেশি নিচ্ছে আর কিশোররা কেন নিচ্ছে না? এর মূল বিষয়বস্তুগুলো আমরা লিঙ্গভেদে চিন্তা করি, তাহলে দেখব মেয়েদের এবং ছেলেদের স্বাস্থ্যসেবায় বেশ ভিন্নতা রয়েছে। কারণ মেয়েদের মাসিক ব্যবস্থাপনা সেবার প্রয়োজন হয়, যা কিশোরদের প্রয়োজন হয় না। আবার কিশোরীদের রক্তস্বল্পতার হার বেশি, যা কিশোরদের মধ্যে নেই। মেয়েদের গুণগত মাসিক ব্যবস্থাপনাগুলো নিশ্চিতে আমরা মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করি, যে ছেলেদের প্রয়োজন হয় না। বিশেষ করে মেয়েলি রোগগুলো শুধু কিশোরীদেরই হয়, কিন্তু কিশোরদের হয় না।

মনজুর হোসেন বলেন, দেশে অন্তত ৫০ শতাংশ মেয়েরই বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছরের আগে, তারাও তো কিশোরী। তাদের ফ্যামিলি প্ল্যানিং, গর্ভকালীন সেবা, প্রসব সেবা এবং প্রসব পরবর্তী সেবা সবগুলোই কিশোরীদের প্রয়োজন হয়, এ বিষয়গুলো কিশোরদের প্রয়োজন হয় না বলেই তারা আমাদের কাছে আসে না। এসব কারণেই কিশোরীদের সেবা গ্রহণের হার আমাদের সেবা কেন্দ্রগুলোতে কিশোরদের তুলনায় বেশি।

তিনি আরও বলেন, কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আমরা যে সেবাগুলো দিচ্ছি, সেগুলোতে ডিমান্ড এবং সাপ্লাই _দুটো পক্ষেরই অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আপনি আপনার প্রয়োজনটা যখন অনুভব করবেন, তখনই আমাদের কাছে আসবেন এবং আমরা সে অনুযায়ী সেবা দেব। সেক্ষেত্রে আমাদের কিশোর-কিশোরীদের হেলথ চেকিং বিহেভিয়ার এটা কেন কম, এটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।

পরিবার পরিকল্পনার এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে বাড়ি থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত কিশোর-কিশোরীদের যতটা বার্তা দেওয়া দরকার, আমরা সেটি শতভাগ দিতে পারছি না। সেটা বাড়ি থেকেও সে পাচ্ছে না, স্কুল থেকেও পর্যাপ্ত দিচ্ছে না, এমনকি যারা স্কুলে যায় না তারা তো আরও কম পাচ্ছে। এই যে বড় একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে, এই জায়গাগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে এগুলো নিয়ে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে চেষ্টা করবো এবং আমাদের পরবর্তী কার্যক্রমে সেগুলো যুক্ত করা যায় কি না এসব বিষয়ে পর্যালোচনা করব।

আরএইচস্টেপ’র আয়োজনে ‘অধিকার এখানে এখনই-২’ প্রকল্পের উদ্যোগে গবেষণার ফলাফল প্রকাশের এই আয়োজনে আরও বক্তব্য দেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (এমসিএইচ সার্ভিসেস ইউনিট) ডা. আনম মোস্তফা কামাল মজুমদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এডোলোসেন্ট অ্যান্ড স্কুল হেলথ প্রোগ্রাম) ডা. মো. শামসুল হক, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মধুছন্দা হাজরা মৌ। এ ছাড়া সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং আরএইচস্টেপ’র কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানটিতে শুভেচ্ছা ও সমাপনী বক্তব্য দেন আরএইচস্টেপ’র নির্বাহী পরিচালক কাজী সুরাইয়া সুলতানা।

বাজেট প্রতিক্রিয়া : শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে এডিপি বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক: সিপিডি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ২:৩৮ অপরাহ্ণ
বাজেট প্রতিক্রিয়া : শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে এডিপি বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক: সিপিডি

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। আজ সোমবার সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘বাজেটের যে কাঠামো উপস্থাপন করা হয়েছে, সেখানে বাজেটের আকার সামান্য ছোট করা হয়েছে। পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, সেখানেও কিছুটা কাটছাঁট করা হয়েছে। বাজেটের আকার নিয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা হয়েছে, সেটার অন্যতম কারণ হচ্ছে, আমাদের যে চলমান অর্থনৈতিক সংকট, অর্থাৎ উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ স্থবিরতা, কর্মসংস্থানে সমস্যা এবং রাজস্ব আহরণের সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা বাজেট প্রস্তাব করেছে বলে আমাদের মনে হয়েছে।’

ড. ফাহমিদা বলেন, ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির দিকে তাকালে দেখা যাবে, চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ২ শতাংশ কমানো হয়েছে এবং ১৫টি খাতের মধ্যে ১৪টি খাতেই কমানো হয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য এবং চিন্তার বিষয় হচ্ছে, তিনটি খাত—শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে টাকার অংকে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। সেটা আমাদের কাছে উদ্বেগজনক মনে হয়, কারণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আমরা সব সময় বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলে আসছি এবং কৃষি খাতে, বিশেষত খাদ্য নিরাপত্তার দিকে এখানে বরাদ্দ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘ভৌত অবকাঠামো, বিশেষ করে পরিবহন ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি বরাবরের মতো উপরের দিকে আছে যুক্তিযুক্তভাবে।’

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কর কাঠামোর মধ্যে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ দশমিক ৫ লাখ, অর্থাৎ সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে, এটা একটা ভালো পদক্ষেপ। কিন্তু প্রায় ৩ বছরের মতো সময় ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে, ১০-১১ শতাংশে উঠে গেছে। সেদিক থেকে যে খুব একটা উল্লম্ফন হয়েছে সেটা না। তবে এটাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, যারা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত, তাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে, সেটাও আমরা ভালো পদক্ষেপ মনে করি।’

‘করের বিভিন্ন স্ল্যাবগুলোতে পরিবর্তন করা হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে যারা নিম্ন মধ্যআয়ের যারা পড়েছেন, কর দেওয়ার ক্ষেত্রে হারটা তাদের মধ্যেই বেশি পড়বে। আবার যারা আয়ের উচ্চ পর্যায়ে রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে অনেক কম পড়বে। এখানে বৈষম্যের চিত্র দেখা যাচ্ছে। অঞ্চলভিত্তিক ন্যূনতম কর ধরা হয়েছে ৫ হাজার টাকা, এখানে আমরা মনে করছি বৈষম্য রয়েছে। কারণ রাজধানী ঢাকা কিংবা অন্য আরেকটি জেলার সবাইকে এক করে দেখানো; সরকারি সেবা সব জায়গায় সবাই কিন্তু সমানভাবে নেয় না। এখানে পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে আমরা মনে করি,’ যোগ করেন তিনি।

ফাহমিদা বলেন, ‘শুল্ক যৌক্তিকরণ হয়েছে এবং আমদানি শিল্প যৌক্তিকিকরণ করতে গিয়ে হয়তো কিছু কিছু শিল্প চাপে পড়তে পারে। বিশেষ করে যখন মূল্যস্ফীতি বেশি, কস্ট অব ডুইং বিজনেস বেশি। এটাকে শুল্কের যৌক্তিকিকরণ করতেই হবে, কারণ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে যাবে। আস্তে আস্তে ট্যারিফ কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। যে প্রতিঘাত আসবে, সেটা মোকাবিলা করার জন্য কস্ট অব ডুইং বিজনেসের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ-জ্বালানি সাশ্রয়ী মূল্যে কিংবা সহজ শর্তে ঋণ কিংবা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে কস্ট অব ডুইং বিজনেস কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’

প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ই-কমার্সের সুযোগ-সুবিধা এবং ই-কমার্সকে ফরমাল সেক্টরে আনা; এখানে করের আওতায় আনা এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের অধীনে যে ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন হয়েছে। আমরা মনে করি, আগেও পিপিপি মডেলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো কিন্তু খুব একটা এগোয় নাই।

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠনকে স্বাগত জানিয়েছে সিপিডি।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কালো টাকা সাদার করার সুযোগটা রয়ে গেছে। যদিও এখানে রেট বাড়ানো হয়েছে কিন্তু আমরা আগেও বলেছি, কালো টাকার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান হচ্ছে, এই সুযোগ দিয়ে যারা নৈতিকভাবে প্রতি বছর স্বচ্ছ আয় করে, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার সঙ্গে কর দিয়ে থাকেন, তাদের প্রতি নৈতিক আঘাত। কারণ তাদের আদর্শিকভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়। দুটি জিনিস সমান্তরালভাবে চলতে পারে না!’

ফাহমিদা আরও বলেন, ‘আগে করের হারটাও কম রাখা হতো, এখন করের হার বেশি রাখা হয়েছে। তারপরও এটা থেকে খুব একটা আদায় হয় না। যদি এখান থেকে সত্যি আদায় করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে কিন্তু সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া দুএকবার সুযোগ দিয়ে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’ উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় কর রেয়াত কিংবা বিভিন্ন জায়গা থেকে কমানো এবং পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে ১৪০টির মতো কার্যক্রম একসঙ্গে চলতো, সেগুলো কমিয়ে ৯৫টি করা হয়েছে এবং সেখানে অর্থ বরাদ্দ কম করা হয়েছে। খুব কম না কিন্তু বাজেটের তুলনায় ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার মতো।’ ‘আমরা বারবার বলেছি, এখানে কতগুলো উপাদান যুক্ত করা হয়, যেগুলো সামাজিক নিরাপত্তা বা সামাজিক সুরক্ষার অধীনে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ এটা একেবারেই অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য। সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, সেখানে আছে ৩৫ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। কৃষি ভর্তুকি আছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এই দুটি মিলিয়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি হয়, সেটা বাদ দিয়ে রয়ে যায় ৬৪ হাজার কোটি টাকার মতো। সেটা অনেকখানি কমে আসে। এগুলো বাদ দিয়ে যে নেট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, সেটাকে দেখাতে হবে। সেটা দেখে তুলনা করা যেতে পারে যে আসলেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কী করা হলো,’ যোগ করেন তিনি।

ফাহমিদা বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বলতে চাই, কিছু কিছু পদক্ষেপ ভালো নেওয়া হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু সামগ্রিক কাঠামোগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যে একই কাঠামোর মধ্যে এখানে একটু বেশি, ওখানে একটু কম—এ রকম করে নেওয়া হয়েছে। বাজেটের যে দর্শন, এখানে বৈষম্যহীন সমাজের কথা বলা হয়েছে, সেই উদ্দেশ্যের সঙ্গে যে বাস্তব পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সব ক্ষেত্রে সেটা সাযুজ্যপূর্ণ হয়নি।’

ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি: জামায়াতের আমির

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ২:৩৬ অপরাহ্ণ
ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি: জামায়াতের আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান।

মঙ্গলবার (৩ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পাওয়া উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি অথবা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের দাবি আমরা জানিয়েছি। রোজার আগে অথবা যদি কোনো কারণে সম্ভব না হয়, তাহলে যেন এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়া হয়। কারণ আবহাওয়ার কারণে মে মাসের পর নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘আজকেও যদি সমতল মাঠ তৈরি হয়, ফেয়ার ইলেকশন যদি সম্ভব হয়, তাহলেও আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু ফেয়ার ইলেকশনের মাঠ তৈরি না হলে এপ্রিলে নির্বাচন হলেও তো কোনো লাভ নেই।’

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার বিষয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘প্রবাসীদের অবশ্যই ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে, এ বিষয়ে আমরা ছাড় দিতে রাজি নই।’

তিনি বলেন, ‘প্রবাসীরা তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। আমরা ইসির কাছে দাবি জানিয়েছি, প্রবাসীরা যেন ভোট দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করার জন্য। এটা কোনো কঠিন বিষয় নয়। কিন্তু ইসির পক্ষ থেকে আমরা কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না।’

এর আগে গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরও বলেন, বৈঠকে তারা বলেছেন, জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। আর নির্বাচন হতে পারে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে।

তাহের বলেন, ‘আমরা বলেছি জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। বেশিরভাগ বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। সামান্য কিছু বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে। জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার শেষ হবে। এরপর একটি জুলাই সনদ হবে। সেখানে আমরা সব দল স্বাক্ষর করব।’

জুলাই সনদ করব, এটাই আমাদের লক্ষ্য : প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ
জুলাই সনদ করব, এটাই আমাদের লক্ষ্য : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‌জুলাই সনদ করব এটাই আমাদের লক্ষ্য। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার আজকে প্রথম পর্ব শেষ হলো, দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো। সোমবার (২ জুন) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিতে বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে যান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। বিকেল সাড়ে ৪টার পর থেকে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা।  ড. ইউনূস বলেন, আমি সারা দিনে যত মিটিং করি, যত মিটিং করে এসেছি, সবচাইতে আনন্দ পাই যখন এরকম বসার সুযোগ পাই। এখানে সবাই মিলে বাংলাদেশের প্রকৃত ভবিষ্যৎ রচনা করা হচ্ছে। এটা আমাকে শিহরণ জাগায় যে, এরকম কাজে আমি যুক্ত হতে পেরেছি।

তিনি বলেন, সংস্কার করার জন্য আমার ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কোথা থেকে শুরু করব। প্রথমে নানা আলাপের মাধ্যমে ঠিক হলো যে, আমরা কয়েকটি কমিশন করে দেব। তারা ভেতরে গিয়ে প্রকৃত জিনিসটা তৈরি করবে। আমরা কমিশন গঠন করলাম। দ্রুত গতিতে কাজ করার জন্য তাদেরকে ৯০ দিন আমরা সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। আমরা খুব আনন্দিত তারা করতে পেরেছে। কয়েকটা কমিশন বেশি সময় নিয়েছে, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। ‘কমিশন থেকে রিপোর্ট এল। তারপর কথা হলো আমরা ঐকমত্য গঠন করতে চাচ্ছি, এটা কীভাবে হবে? সেখান থেকে একটা আইডিয়া আসল যে আলাদা একটা ঐকমত্য কমিশন দরকার। সেটা ফলপ্রসূ হয়েছে। আলী রীয়াজ সাহেব যখনই আমার সঙ্গে বৈঠক করেন তখনই খুব আনন্দিত হই।’

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে কী হবে তা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‌অনেকগুলো বিষয় কাছাকাছি এসে গেছে। আরেকটু হলে আমাদের তালিকায় আরেকটি সুপারিশ যুক্ত হবে, সেটা হচ্ছে ঐকমত্যের সুপারিশ। সেই সুযোগ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। আমাদের জুলাই সনদের যতগুলো বিষয় আছে তাতে যদি আরও কিছু যুক্ত করতে পারি, দেখতে সুন্দর লাগবে। জাতীয় একটা সনদ হলো, অনেকগুলো বিষয়ে আমরা এক হতে পেরেছি, জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত হতে পারি। আমরা দেশের উন্নতির জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছি।