খুঁজুন
                               
শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫, ১৬ কার্তিক, ১৪৩২

শেখ হাসিনা প্রশ্নে ভারতের অবস্থান বদলাচ্ছে না

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫, ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ
শেখ হাসিনা প্রশ্নে ভারতের অবস্থান বদলাচ্ছে না

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনার অডিও ফাঁস কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ গঠন – যত যাই হোক, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ভারতের অবস্থানে এখনো কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের অনুরোধ মেনে তাকে বিচারের জন্য প্রত্যর্পণ করার যে কোনো সম্ভাবনা নেই, দিল্লিতে ওয়াকিবহাল মহল সেটাও এখনো জোর দিয়েই বলছেন। শেখ হাসিনা নিজেও এই দুটি বিষয়ের কোনোটি নিয়েই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। গত এগারো মাসেরও বেশি সময় ধরে ভারতের আশ্রয়ে থাকাকালীন তিনি নিয়মিতই দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাষণ দিচ্ছেন বা নানাভাবে ইন্টার‍্যাক্ট করছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে ও ইউটিউব চ্যানেলে তিনি শেষ ‘লাইভ’ ইন্টারঅ্যাকশন করেছেন গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যেবেলায়, কিন্তু সেখানে এই প্রসঙ্গগুলির কোনোটিই আসেনি। তবে বিবিসির যে তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনার প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশের অডিও ফাঁস করা হয়েছে, তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এক ফেসবুক পোস্টে সেটিকে ‘অপসাংবাদিকতার নির্লজ্জ নজির’ বলে দাবি করেছেন।
এই মুহুর্তে আওয়ামী লীগের যে শত শত নেতাকর্মী ভারতে অবস্থান করছেন, তাদেরও অনেকেই তাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খন্ডন করার চেষ্টায় সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তবে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ইতোমধ্যেই এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট দিয়ে দাবি করেছেন, তার ভাষায় ‘রাষ্ট্রীয় অনুমোদনপ্রাপ্ত হত্যাকান্ডে’ শেখ হাসিনা যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, সেটা বিবিসির তদন্তে প্রমাণিত। এই পরিস্থিতিতে ভারতের যে আর টালবাহানা না করে এবং শেখ হাসিনাকে আড়াল না করে তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া উচিত – শফিকুল আলম সেই দাবিও জানিয়েছেন। তবে ভারত সরকারের নীতিনির্ধারক ও শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা একান্ত আলোচনায় পরিষ্কার বলছেন, এই দাবি মেনে নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না – কারণ শেখ হাসিনাকে ‘যে পরিস্থিতিতে ও ভারতের যে নীতির ভিত্তিতে’ এ দেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, তাতে কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি।
তারা যুক্তি দিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তার যদি কোনো অডিও কেউ গোপনে রেকর্ড করে সেটা ফাঁসও করে দেয় – ভারতের সেটা দেখার বিষয় নয়, আর তাকে এদেশে আতিথেয়তা বা রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সেই অডিওর কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা-সহ অন্য অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেটা আদৌ কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে- তা নিয়েও ভারত সন্দিহান। এই পরিস্থিতিতে সেই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হলেও ভারত যে সেটাকে গুরুত্ব দেবে না, সে ইঙ্গিতও পরিষ্কার। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি, বা মন্তব্যও করেনি।
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যাতে বিচারের জন্য তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, সেই অনুরোধ জানিয়ে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার দিল্লিকে কূটনৈতিক চ্যানেলে একটি নোট ভার্বাল পাঠিয়েছিল গত ডিসেম্বর মাসেই। ভারত সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই, কিন্তু তার পর প্রায় সাত মাস হতে চললেও সে ব্যাপারে আর কোনো সাড়াশব্দ করেনি।
বাংলাদেশের ওই প্রত্যর্পণের অনুরোধকে ভারত যে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না, সেটাও আকারে ইঙ্গিতে একাধিকবার বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারত সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেছিলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে ঠিকই, কিন্তু কোনো দেশ যদি মনে করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হবেন, তাহলে প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করার অধিকারও তাদের আছে।
তার যুক্তি ছিল, বাংলাদেশে যেভাবে শেখ হাসিনা-সহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে হত্যা মামলা আনা হচ্ছে, অভিযুক্তদের আইনজীবীরা পর্যন্ত আদালতে হাজির হতে পারছেন না, কিংবা সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক বা দীপু মনির মতো সাবেক নেতা-মন্ত্রীদের আদালত প্রাঙ্গণেই শারীরিকভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে – তাতে এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।
এখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবাদী অপরাধে আনুষ্ঠানিক চার্জ গঠন সম্পন্ন হলেও তাতে বিচার প্রক্রিয়ার গুণগত মানে কোনো পরিবর্তন হয়েছে– এমনটা ভারত মনে করছে না। আর সে কারণেই চার্জ গঠন হলেও শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য ভারত বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে – এই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
তবে এগুলো সবই মূলত ‘ঘোষিত যুক্তি’। ভারতের একাধিক সাবেক কূটনীতিবিদ বিবিসিকে বলেছেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করার আসল কারণটা হলো রাজনৈতিক।
তাদের বক্তব্য হলো, দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে সবচেয়ে বেশি দিন ধরে যিনি ভারতের আস্থাভাজন ও পরীক্ষিত বন্ধুর ভূমিকায় ছিলেন, তিনি শেখ হাসিনা।
“এখন আজ তার সঙ্কটের মুহুর্তে ভারত যদি তার পাশে না দাঁড়ায়, ভবিষ্যতে প্রতিবেশী দেশের কোনো নেতা-নেত্রীই ভারতকে আর কখনো বিশ্বাস করতে পারবেন না”, বলেছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের এক সাবেক হাই কমিশনার। আর এটাই সেই প্রকৃত কারণ চার্জশিট পেশ হোক বা না হোক, অডিও লিক হোক বা না হোক – ভারত যে জন্য কখনোই শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে না। গত আটচল্লিশ ঘন্টায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নতুন করে মানবতা বিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার যে সব অভিযোগ উঠেছে বা আদালতে যে চার্জশিট পেশ হয়েছে – তা নিয়ে ভারত অবশ্য প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ প্রসঙ্গে এই প্রতিবেদককে বলেন, “আমরা শেখ হাসিনার মুখপাত্র নই। তিনি যে সব বক্তব্য রাখেন তার সঙ্গে ভারত সরকারের যে কোনো সম্পর্ক নেই, সেটা অনেক আগেই আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি।”

ওই কর্মকর্তার বক্তব্য ছিল, শেখ হাসিনা ভারতের একজন অতিথি – কোনো রাজনৈতিক বন্দি নন, কাজেই ভারত তার মুখে ‘লাগাম পরানোর’ কোনো প্রয়োজন বোধ করেনি কখনোই! বস্তুত শেখ হাসিনা তার ‘প্ররোচনামূলক’ বক্তব্যর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভেতরে উসকানি সৃষ্টি করছেন, এই যুক্তিতে তাকে সংযত রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার বহুবার ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। গত মাসেই লন্ডনের থিংকট্যাংক চ্যাথাম হাউসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জানান, “আমি যখন ব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র) মোদিকে এই কথা বলি, তিনি বললেন এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে আমরা কারও মুখ খোলা কীভাবে আটকাতে পারি!”
ফলে ভারতে থাকাকালীন শেখ হাসিনার কথা বলার অধিকার যে খর্ব করা হবে না এবং তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশন যথারীতি চালিয়ে যেতে পারবেন – এটা ভারতের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতৃত্বের তরফেই পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। “ফলে অডিও লিক বা চার্জশিট নিয়ে আপনারা যা জানতে চাইছেন, সেটা নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করলে শেখ হাসিনা নিজেই সেটা বলতে পারবেন। আমাদের সেখানে কিছু বলার থাকতে পারে না”, জানাচ্ছেন ভারতের ওই কর্মকর্তা।
সূত্র: বিবিসি।

কোন পথে বিএনপি?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫, ২:০০ অপরাহ্ণ
কোন পথে বিএনপি?

বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান পর্বটি নিঃসন্দেহে একটি সন্ধিক্ষণ। রাষ্ট্রক্ষমতার চিরচেনা খেলায় এবার যুক্ত হয়েছে সংস্কারের প্রস্তাব,জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ,আর তার মধ্য দিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক ন্যারেটিভ তৈরির চেষ্টা। এই ন্যারেটিভের কেন্দ্রে বিরোধী দল বিএনপি। দলটির জন্য এটি যেন দুই ধারালো ধারের তরবারি। কোনো সিদ্ধান্তই পুরোপুরি নিরাপদ নয়; বরং উভয় পথেই রয়েছে সংকট ও সম্ভাবনার দ্বৈত দরজা।
ঐকমত্য কমিশনের কিছু সুপারিশ বিএনপির কাছে অস্বস্তিকর বলে মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কেননা এগুলো তাদের ঘোষিত আন্দোলন-রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করে। একটি দল যখন দীর্ঘদিন ধরে দাবি তোলে -‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হলে নির্বাচন হবে না’,তখন হঠাৎ করে সেই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ভেতরেই সংস্কার আলোচনায় টেনে আনা রাজনৈতিকভাবে কঠিনই বটে। এখানে বিএনপির এখনকার অবস্থান অনেকটা এমন: সুপারিশগুলোর প্রতি দরজা খুলে দিলে নিজস্ব রাজনৈতিক বিবৃতির ধার কমে যেতে পারে, আর পুরোপুরি ঠেলে দিলে ‘সংস্কারবিরোধী’,’অসহযোগী’ তকমা লেগে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ইমেজ’একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ দিন ধরে বিএনপিকে ‘নেতিবাচক রাজনীতি’ বা বি- রাজনীতির কাঠামোতে ফেলতে চেয়েছে। কমিশনের প্রস্তাব যদি বিএনপি সোজাসুজি প্রত্যাখ্যান করে,তাহলে সেই ইমেজ ফেরে আসার সুযোগ আরও দৃঢ় হতে পারে। অন্যদিকে গ্রহণ করলেও প্রশ্ন -তাহলে গত দেড় দশকের আন্দোলন এবং তার রাজনৈতিক দাবি-দাওয়া কোথায় দাঁড়াবে?
এখানেই বিএনপির বাস্তবতা ও কৌশলের জটিল যোগসূত্র।
অনেকে বলছেন -সময়ের চাকা বদলেছে। গণআন্দোলনের জোয়ারের অপেক্ষা,কিংবা নির্বাচনী বয়কট-কেন্দ্রিক কৌশল-এগুলো অতীতে যতটা কার্যকর ছিল,বর্তমান বাস্তবতায় তা ততটা নিশ্চিত নয়। সমাজ-অর্থনীতি-প্রশাসনিক কাঠামো – সবকিছুতেই ক্ষমতার স্থায়িত্বের কৌশল আরও পরিপূর্ণ হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সামনে থাকা পথ সংকীর্ণ। এই সংকীর্ণ পথেই বিএনপিকে এখন হাঁটতে হচ্ছে।
এখানে আরেকটি বিষয় খেয়ালযোগ্য -সংস্কার প্রসঙ্গ। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কারের আলোচনা নতুন নয়,কিন্তু তা কখনো বাস্তব রূপ পায়নি। ক্ষমতার পালাবদলে প্রতিপক্ষের জন্য কাঠামো বদলানোর চেষ্টা,আর নিজের ক্ষমতার সময় সেই কাঠামো রক্ষার প্রবণতা -এটাই গত তিন দশকের ধারা। কমিশনের প্রস্তাব তাই শুধু নীতিগত আলোচনা নয়; এটি ক্ষমতার ভবিষ্যৎ বণ্টনের নতুন আখ্যান। এই আখ্যানের বাইরে থাকলে কেউ একদিন অপরিহার্যতার বাইরে চলে যেতে পারে -এই ভয় বিএনপি অনুভব করছে বলেই মনে হয়।
তবে প্রশ্ন হলো -জনগণের অবস্থান কোথায়? রাজনীতি যদি জনতাভিত্তিক শক্তির খেলা হয়,তাহলে বিএনপিকে ভাবতে হবে ভোটার-সমর্থক-সমাজের মধ্যবিত্ত অংশগুলো কী ভাবছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা,অর্থনৈতিক চাপ,কর্মসংকট -এই সময়ে সাধারণ মানুষ স্থিতি চায়। তারা পরিবর্তন চায়,কিন্তু পরিবর্তন যেন অস্থিরতার সমার্থক না হয়। বিএনপি যদি পরিবর্তনের বয়ানকে স্থিতির বয়ানের পাশে দাঁড় করাতে না পারে,তবে তাদের বার্তা জনমনে স্পষ্টভাবে পৌঁছবে না।
একই সাথে দলটির ভেতর যে কৌশলগত ভিন্নমত রয়েছে,তা গঠনতান্ত্রিক দুর্বলতার ইঙ্গিতও দেয়। সুপারিশ গ্রহণ-বর্জনের প্রশ্ন শুধু আদর্শ নয় -দলটির নেতৃত্ব,ভবিষ্যৎ প্রজন্ম,এবং কেন্দ্র-বাহিরের সংগঠনের সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন তৈরি করছে। দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের এখানেই ভূমিকা -আবেগ নয়,বাস্তবতার সঙ্গে নীতি-আদর্শের সঠিক সমন্বয়।
তাহলে কী হওয়া উচিত বিএনপির পথ? প্রথমত,যেকোনো রাজনৈতিক দলকে প্রমাণ করতে হয় -তারা শুধু ক্ষমতার জন্য নয়,রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য বিকল্প ভিশন রাখে। বিএনপি যদি সংস্কার ইস্যুকে সরাসরি অস্বীকার না করে বরং নিজের সংস্কার-রূপকল্প তুলে ধরে,তা হলে তা পরিণত রাজনীতির পরিচয় হবে। দ্বিতীয়ত,জনগণের দিকে তাকানো জরুরি। তাঁদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি,সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রশ্নে বিকল্প ব্যাখ্যা দেওয়া – এগুলো আরও জোরদার করা উচিত। তৃতীয়ত,দলীয় অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া আরও স্পষ্ট করা দরকার। বিভাজন ও সন্দেহ রাজনীতিকে দুর্বল করে।
বাংলাদেশ এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে,যখন রাজনৈতিক বলবৎ সত্যগুলো দ্রুত বদলে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের শক্ত অবস্থান,প্রশাসনিক সক্ষমতা,এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বাস্তবতা -সব মিলিয়ে এই মুহূর্ত কঠিন। কিন্তু সংকটে সুযোগ থাকে। বিএনপি যদি কৌশলগত ধৈর্য ও সৃজনশীল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে পারে,তবে তার সামনে পথ আছে। আর যদি আবার পুরোনো দ্বিধা ও প্রত্যাশাহীন পথে হাঁটে -তাহলে ইতিহাসের মোড় হয়তো অন্যদিকে ঘুরে যাবে,বিএনপিকে প্রান্তসীমায় রেখে।
রাজনীতি আসলে সময়ের সঙ্গে তাল মিলাতে পারার শিল্প। আজ সেই শিল্পের পরীক্ষায় বিএনপি দাঁড়িয়ে। উত্তীর্ণ হতে হলে শুধু স্লোগান ন-দূরদৃষ্টি,আত্মসমালোচনা,এবং জনগণের সঙ্গে গভীর সংযোগ-এই তিনটির সমন্বয়ই তাদের প্রকৃত অস্ত্র। এখন দেখার পালা -তারা সেই অস্ত্র ঘষে-মেজে নেবে,নাকি তাকেই ভুলে যাবে ইতিহাসের করিডোরে।

পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা : অনিশ্চয়তায় বিপন্ন

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫, ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ
পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা : অনিশ্চয়তায় বিপন্ন

সহ-শিক্ষা কার্যক্রম কোনো শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শুধু পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান দিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যায় না। বক্তৃতা, বিতর্ক, নাটক, আবৃত্তি, সংগীত কিংবা খেলাধুলা এসবই শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে শিশু-কিশোরদের মেধা বিকাশে সহায়তা করে। বিশেষত বিতর্ক প্রতিযোগিতা একজন শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তি, যুক্তি উপস্থাপনের দক্ষতা, বক্তৃতার গুণাবলি এবং দলগতভাবে কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়। বাংলাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনেক বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয়, তবে ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা আয়োজন খুব বেশি নেই।
চাঁদপুর জেলায় ‘পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা’  এক অনন্য উদ্যোগ। একটানা ১২ বছর ধরে এ প্রতিযোগিতা জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতর্কচর্চা, যুক্তিবাদী মনোভাব এবং মুক্তচিন্তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শিক্ষার্থীদের জন্যে এটি হয়ে উঠেছিলো বার্ষিক উৎসবের মতো। কিন্তু সম্প্রতি এ প্রতিযোগিতা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এটি কি আর চালু থাকবে, না কি এ মূল্যবান উদ্যোগটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে?
প্রতিযোগিতার সূচনা : চাঁদপুর একটি সংস্কৃতি -শিক্ষাবান্ধব জেলা। এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা বরাবরই মেধা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় সুনাম কুড়িয়েছে। কিন্তু ১৯৮৩ সালের পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের সহ-শিক্ষা কার্যক্রম ধীরে ধীরে সীমিত হতে থাকে। দীর্ঘ সময় ব্যবধানে ২০০৯ সালে চাঁদপুর কণ্ঠ একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা হিসেবে জেলার শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুরু করে। পরে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স সহযোগী হিসেবে যুক্ত হয়। এভাবেই জন্ম নেয় পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা।
প্রতিযোগিতার ইতিহাস : ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-চাঁদপুরের সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-এর অফিস যখন কালীবাড়ি মোড়ের নূর ম্যানশনে ছিলো তখন আমরা ইয়েস সদস্য হিসেবে সনাক-টিআইবির সাথে জড়িত ছিলাম। তখন সারা বাংলাদেশে মাত্র ৩৪টি সনাক ছিলো। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের দুই ধরনের কমিটি ছিলো, একটি হলো সনাক ও অন্যটি ইয়েস। তখনকার সনাক-টিআইবি, চাঁদপুর গঠিত হয়েছিল চাঁদপুরের সুধীজনদের একাংশ নিয়ে। তৎকালীন সনাক সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক মনোহর আলী (বর্তমানে প্রয়াত) এবং সনাক সদস্য ছিলেন প্রথিতযশা চিকিৎসক আলহাজ্ব ডা. এম. এ. গফুর, ডা. মো. এ কিউ রুহুল আমিন, কাজী শাহাদাত, অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খান, প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মোশারেফ হোসেন, রূপালী চম্পক ও কৃষ্ণা সাহাসহ বিশিষ্টজনরা। তখন টিআইবির আয়োজনে জাতীয়ভাবে বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। সেখানে চাঁদপুর থেকে ইয়েস সদস্য ওমর ফারুক ফাহিম (বর্তমানে জজশীপে কর্মরত) অংশগ্রহণ করেন। ফাহিম সেখানে অংশগ্রহণ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। তিনি সারাদেশের সকল বিতার্কিককে পেছনে ফেলে প্রথম হয়েছিলেন। অনুজপ্রতিম ওমর ফারুক ফাহিমের সেই বিজয় সারাদেশের সাথে চাঁদপুরে আলোচিত বিষয় ছিলো। আর এই ফাহিমের বিতর্কের জয়গানের আলোচনার মাধ্যমেই চাঁদপুরে কীভাবে বিতর্ক চর্চা শুরু করা যায় সেটি নিয়ে ভাবতে থাকেন সনাক-টিআইবির ইয়েস সদস্যরা। তখনকার ইয়েস সদস্যদের মধ্যে ইবনে আজম সাব্বির, হাবিবুর রহমান পাটোয়ারী, এহসান ফারুক ছন্দ, নাঈম হোসেন, উজ্জ্বল হোসাইন, নুরে আলম নয়ন, কেএম মাসুদ, দৌলত হোসেন শান্ত, ইকরাম হোসেন পুতুল, নেয়ামুল হক, বিপ্লব, আছমা আক্তার আঁখি, নাজিয়া আহমেদ পিকসী, ওমর ফারুক ফাহিমসহ আরো অনেকেই জড়িত ছিলেন। ইয়েস সদস্যদের মধ্যে আবার দুটি ভাগ ছিলো। এদের কিছু সংখ্যক নিয়ে সনাকের গণনাট্য দল ছিলো এবং কিছু সংখ্যককে নিয়ে ইয়েস কার্যক্রম পরিচালিত হতো। মূলত গণনাটক আর ইয়েস সদস্য সকলে ইয়েস সদস্য হিসেবেই পরিচিত ছিলো। ওমর ফারুক ফাহিমের বিতর্কের সাফল্যের কারণে ইবনে আজম সাব্বিরের নেতৃত্বে ইয়েস মিটিংয়ের আলোচনায় চাঁদপুরে বিতর্ক চর্চা এবং বিতর্ক সংগঠন করার প্রস্তাব আসে। যেহেতু টিআইবি একটি স্বতন্ত্র সংগঠন, সেহেতু সনাক-টিআইবির ব্যানারে বিতর্ক চর্চাকে সাংগঠনিক কাঠামোতে নেয়া যায়নি। কারণ, টিআইবির ব্যানারে কোনো সংগঠন করার এখতিয়ার ছিলো না। তাই ইয়েস সদস্যরা চিন্তা করে, যে কোনোভাবেই হোক একটি বিতর্ক সংগঠনের করার ব্যবস্থা করতে হবে।
পরবর্তী ইয়েস মিটিংয়ে বিতর্ক সংগঠন করার বিষয়ে ইয়েস সদস্যরা সবাই আলোচনায় মিলিত হন। সেই সভায় সনাক-টিআইবি কার্যালয়ে সকলের প্রস্তাব ও সম্মতির ভিত্তিতে একটি নাম নির্ধারণ করা হয়। নামটি হচ্ছে চাঁদপুর বিতর্ক আন্দোলন, ইংরেজিতে চাঁদপুর ডিবেট মুভমেন্ট, সংক্ষেপে সিডিএম। ইয়েস সদস্য ইবনে আজম সাব্বির, ওমর ফারুক ফাহিম, আহসান ফারুক ছন্দ, আশিক-বিন-ইকবাল আনন্দ এবং আমিসহ একটি খসড়া কমিটির তালিকাও প্রস্তুত করি। আমি বয়সে সিনিয়র হওয়ায় সকলে আমাকে সভাপতি হওয়ার জন্যে অনুরোধ জানান। কিন্তু আমি দেখেছি যে, আমার দ্বারা বিতর্কের মঞ্চে বিতর্ক করা সম্ভব নয়, তাই বিতর্ক সংগঠক হতে পারবো এটাই আমার জন্যে গর্বের বিষয় ছিলো। ইবনে আজম সাব্বিরকে সভাপতি এবং ওমর ফারুক ফাহিমকে সেক্রেটারী করে চাঁদপুর বিতর্ক আন্দোলনের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রতিষ্ঠাকালীন সহ-সভাপতি নির্বাচন করা হয় আমাকে। এভাবেই শুরু হলো চাঁদপুর বিতর্ক আন্দোলনের বিতর্ক চর্চা। বিতর্ক আন্দোলন সৃষ্টির পর থেকেই চাঁদপুর রোটারী ভবনে তখন এটির প্রথম আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা করা হয় প্রয়াত অধ্যাপক মনোহর আলী স্যারকে এবং সাথে উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তৎকালীন সনাক সদস্যদের। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ও চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী শাহাদাত, প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মোশারেফ হোসেন, অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার প্রমুখ। প্রথম বিতর্ক কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয় চাঁদপুর রোটারী ভবনে, সেখানে আমাদের সকলের উপস্থিতিতে খুব সুন্দর একটি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
এরপর আর চাঁদপুরে বিতর্ক চর্চার জন্যে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরু থেকেই চাঁদপুরে বিশিষ্টজনদের নামে বিতর্ক উৎসব করা হতো। এরপর চাঁদপুর বিতর্ক আন্দোলনের আয়োজনে চাঁদপুর ক্লাবে জাতীয় বিতর্ক উৎসব করা হয়। এ উৎসবের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক রোটারিয়ান আলহাজ্ব অ্যাড. ইকবাল-বিন-বাশার। আমরা যারা সামনে থেকে বিতর্ক যোদ্ধা হিসেবে কাজ করি, তাদের নেপথ্যে ছিলেন ইকবাল-বিন-বাশার ও শাহিদুর রহমান চৌধুরীর মতো সমাজসেবীরা। তবে বিতর্ক চর্চার প্রসার ও প্রচারের কাজটি খুবই সহজতর হয়েছে শুধুই চাঁদপুর কণ্ঠ ও কাজী শাহাদাতের মতো বিতর্ক-জ্বরে আক্রান্ত মানুষের জন্যে।
বিতর্ক আন্দোলনের শুরুতেই  দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ এবং টাইটেল স্পন্সর হিসেবে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সকে সংযুক্ত করা হয়। কয়েক বছর চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে জেলাব্যাপী একসাথে বিতর্ক চর্চা করার পর চাঁদপুর বিতর্ক আন্দোলন তাদের নিজস্ব গণ্ডিতে ফিরে যায়। ঠিক তখনই কাজী শাহাদাত চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন নামে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে সাথে ছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজন চন্দ্র দে, সাইফুল ইসলাম, আরিফ হোসেনসহ আরো অনেকে।
কাজী শাহাদাত বিতর্কের প্রাণপুরুষ। একটু রেগে গেলেও কাজের বেলায় আসলে তিনিই কাজী। তার কাজে রয়েছে একটি নিজস্বতা। কোনো কাজ সঠিকভাবে না হলে তিনি সেটি কখনোই করেনই না। আর তিনি যে কাজে হাত দেন সেটি অবশ্যই সঠিকভাবে করেই ছাড়েন। চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন শুরু থেকেই যাত্রা করে এ পর্যন্ত চাঁদপুর জেলা সদর ও উপজেলাগুলোতে বিতর্কের প্রচার-প্রসার ও বীজ বপন করে আজ ফলবান বৃক্ষ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। যার ফলস্বরূপ প্রতিবছর পাঞ্জেরী-চাঁদপুর বিতর্ক প্রতিযোগিতার মহাযজ্ঞ চলে। ২০২০ সাল পর্যন্ত টানা ১১টি প্রতিযোগিতার সফল সমাপ্তির পর করোনা মহামারীর কারণে দ্বাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আসর হয়নি। সেটি হয়েছে ২০২৩-২৪ বছরে।
স্বপ্নদ্রষ্টার ভূমিকা : এই প্রতিযোগিতার আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন চাঁদপুরের বিতর্ক জগতের কর্ণধার কাজী শাহাদাত। তিনি শুধু সংগঠকই নন, একজন দক্ষ বিতর্ক সংগঠক হিসেবে তরুণ প্রজন্মকে বিতর্কচর্চায় অনুপ্রাণিত করেছেন। তাঁর সঙ্গে আরও ক’জন নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি দীর্ঘ ১২ বছর নিরলসভাবে কাজ করেছেন। তাদের প্রচেষ্টা ছাড়া এতো বড়ো একটি প্রতিযোগিতা ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করা সম্ভব হতো না। তারা বিচারক খুঁজে বের করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্বুদ্ধ করা, শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, স্পন্সর সংগ্রহ করা সব কিছুতেই সক্রিয় ছিলেন। ফলে চাঁদপুরে একটি শক্তিশালী বিতর্ক সংস্কৃতি গড়ে উঠে।
শিক্ষার্থীদের বিকাশ ও প্রভাব : বিতর্ক প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যুক্তি-তর্কের সঠিক চর্চা গড়ে তোলে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চাঁদপুরের বহু শিক্ষার্থী পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ের বিতর্কে সাফল্য অর্জন করেছে। অনেকে আবার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিখ্যাত বিতর্ক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এ প্রতিযোগিতা শুধু মেধা বিকাশই করেনি, বরং শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী করেছে। তারা জনসম্মুখে সাবলীলভাবে বক্তব্য রাখার অভ্যাস অর্জন করেছে। অনেক শিক্ষার্থী এ প্রতিযোগিতা থেকেই নেতৃত্বের গুণাবলি শিখে নিয়েছে, যা পরবর্তীতে তাদের জীবনে কাজে লেগেছে।
১২ বছরের ধারাবাহিকতা একটি মাইলফলক : একটানা ১২ বছর ধরে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ প্রতিযোগিতা আয়োজন চাঁদপুরে একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশে খুব কম জেলায় এতো দীর্ঘ সময় ধরে জেলা পর্যায়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতা টিকেছিলো। এ কারণে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং চাঁদপুরের শিক্ষার্থীদের জন্যে এক অনন্য অর্জন।
চ্যালেঞ্জ ও সংকট : তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রতিযোগিতার সামনে নানা চ্যালেঞ্জ এসেছে। প্রধান সমস্যাগুলো হলো :
অর্থনৈতিক সংকট : স্পন্সরদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় প্রতিযোগিতা আয়োজন কঠিন হয়ে উঠেছে।
প্রশাসনিক জটিলতা : অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসন বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যাপ্ত সহযোগিতা দেয় না।
নতুন প্রজন্মের আগ্রহ কমে যাওয়া : মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতর্কের প্রতি আগ্রহ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
সংগঠকদের ক্লান্তি : দীর্ঘদিন ধরে নিরলসভাবে কাজ করলেও নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠেনি, ফলে পুরানো সংগঠকদের ওপর চাপ বেড়েছে। ফলে ১২ বছরের একটানা এই প্রতিযোগিতার ইতি টানতে হয়েছে।
ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ : প্রতিযোগিতা ভবিষ্যতে চালু হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। একদিকে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ হ্রাস এসব মিলিয়ে আয়োজন ঝুঁকির মুখে। যদি এটি বন্ধ হয়ে যায় বা চালু করা না যায়, তাহলে চাঁদপুরের শিক্ষার্থীদের জন্যে একটি বড়ো সুযোগ হারিয়ে যাবে। এক সময় হয়তো এটি ইতিহাসেই থেকে যাবে। তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা থাকলে আবারও এ প্রতিযোগিতা নবউদ্যমে শুরু হতে পারে। এর জন্যে প্রয়োজন স্থানীয় সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ, নতুন সংগঠক তৈরির উদ্যোগ এবং সরকারের সহযোগিতা।
সমাধান ও সুপারিশ : স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করতে হবে। জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করা জরুরি। পাঞ্জেরী বা অন্যান্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে নতুনভাবে যুক্ত করতে হবে। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে বিতর্ক ক্লাব গঠন করে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ জাগাতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিতর্কের প্রচার করতে হবে।
সারমর্ম : পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুধু একটি সহ-শিক্ষা কার্যক্রম নয়; এটি চাঁদপুরের তরুণ প্রজন্মের চিন্তা, যুক্তি ও সৃজনশীলতার বিকাশের প্রতীক ছিলো। একটানা ১২ বছর ধরে যে মাইলফলক অর্জিত হয়েছে, সেটি হারিয়ে গেলে শুধু একটি প্রতিযোগিতাই বন্ধ হবে না, বরং শিক্ষার্থীদের জন্যে একটি অনন্য শিক্ষার ক্ষেত্রও সংকুচিত হবে। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে এ প্রতিযোগিতা পুনরায় চালু রাখা এবং আরও প্রসারিত করা জরুরি। চাঁদপুরবাসীকে এই উদ্যোগ রক্ষার জন্যে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন।

৩১ সংস্থা প্রধানদের সঙ্গে বিকেলে ইসির বৈঠক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৫১ অপরাহ্ণ
৩১ সংস্থা প্রধানদের সঙ্গে বিকেলে ইসির বৈঠক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। এবার সংসদ নির্বাচনের ঠিক দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে আগেই জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে হিসেবে আসছে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে সংসদ ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলেই জানিয়েছে ইসি। তফসিল ঘোষণার আগে এবার সব মন্ত্রণালয়, বিভাগের সচিব ও বিভিন্ন দপ্তর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে নাসির উদ্দিন কমিশন। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সরকারের ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাথে বৈঠকে ২২টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জোর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসি।
যে ৩১ মন্ত্রণালয় ও সংস্থা থাকবে বৈঠকে
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, নৌপরিবহন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, সমন্বয় ও সংস্কার দপ্তর সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব।
আরও থাকবেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সচিব (রুটিন দায়িত্ব), সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের মহাপরিচালক, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ বেতারের চেয়ারম্যান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ঢাকার প্রধান প্রকৌশলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সচিব, কারা মহাপরিদর্শক।