খুঁজুন
                               
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ৭ বৈশাখ, ১৪৩২

শিশু-কৈশোরে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ২:১৮ অপরাহ্ণ
শিশু-কৈশোরে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ

শিশু থেকে কৈশোরে রূপান্তর হলো মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়, যেখানে মানসিক, শারীরিক, এবং সামাজিক পরিবর্তনের এক জটিল প্রক্রিয়া ঘটে। এটি জীবনের সেই সময়, যখন ব্যক্তি তার পরিচয়, চাহিদা, এবং সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের একটি ভিত্তি তৈরি করতে শুরু করে। কৈশোরকাল সাধারণত ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত বিস্তৃত, যা শৈশবের সরলতা থেকে প্রাপ্তবয়স্কের জটিল বাস্তবতায় প্রবেশের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।
এই রূপান্তরের সময়ে শিশুরা শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, যা তাদের ব্যক্তিত্ব, চিন্তাভাবনা, এবং সামাজিক আচরণের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনগুলো এই পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ববহ, কারণ এগুলোই ভবিষ্যতের ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা রাখে।
কৈশোরকালীন মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন বলতে বোঝায় শিশুদের মানসিক বিকাশের সেই ধাপগুলো, যেখানে তারা শৈশবের নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে স্বাধীন পরিচয় এবং চিন্তাধারার দিকে এগিয়ে যায়। এই সময়ে কিশোর-কিশোরীরা তাদের আবেগ, চিন্তা-ভাবনা, এবং আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন অনুভব করে। শিশু থেকে কৈশোরে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের প্রধান দিক-শিশুদের আবেগ সরল এবং প্রত্যক্ষ থাকে, কিন্তু কৈশোরে তা জটিল রূপ নিতে শুরু করে। কৈশোরে হরমোনের পরিবর্তন আবেগকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ফলে, তারা হঠাৎ রাগ, আনন্দ, দুঃখ বা উদ্বেগ অনুভব করতে পারে। কৈশোরে শিশুরা নিজের পরিচয় খুঁজতে শুরু করে। তারা “আমি কে?” এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চায়। এই সময়ে তারা কখনো খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে এবং ছোটখাটো বিষয়েও অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। জ্ঞানীয় পরিবর্তন হলো চিন্তাশক্তির বিকাশ।
শিশুরা সাধারণত কংক্রিট চিন্তাভাবনার ওপর নির্ভরশীল থাকে, তবে কৈশোরে তারা বিমূর্ত চিন্তা করতে শেখে। উদাহরণস্বরূপ, তারা ন্যায়-অন্যায়, নীতি, এবং আদর্শ নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করে। তারা যুক্তিসঙ্গত চিন্তা এবং সমস্যার সমাধানে সক্ষম হয়ে ওঠে। তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ সম্পূর্ণ না হওয়ার কারণে তারা অনেক সময় ঝুঁকি নিতে পছন্দ করে। শিশু থেকে কৈশোরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। কৈশোরীরা পরিবারের চেয়ে বন্ধুদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। তারা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে শুরু করে।
সমবয়সীদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া এবং তাদের মতো আচরণ করার প্রবণতা দেখা যায়। শিশুরা এই সময়ে পরিবারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে স্বাধীন হতে চায়।
এই সময়ে শিশুরা আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মান সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া শারীরিক পরিবর্তনের কারণে তারা আত্মবিশ্বাস হারাতে পারে। যেমন: উচ্চতা, শরীরের গঠন, বা ত্বকের সমস্যার কারণে আত্মসম্মান কমে যেতে পারে। নিজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা এই সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কৈশোরকালীন পরিবর্তনে প্রভাবক-পরিবার এই পরিবর্তনগুলোতে বড় ভূমিকা পালন করে। ইতিবাচক পারিবারিক পরিবেশ কিশোরের মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। সমাজের মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতি কৈশোরের চিন্তাভাবনা এবং আচরণকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। আজকের প্রযুক্তি-নির্ভর যুগে মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কৈশোরের মানসিকতায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। এ সময় থাকে মানসিক চাপ এবং হতাশা। পরিচয় সঙ্কট। ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, যেমন : নেশা, বিদ্রোহ। সমবয়সীদের চাপ।
উত্তরণের উপায় : পারিবারিক সমর্থন বৃদ্ধি। পজিটিভ রোল মডেল প্রদান। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা। সৃজনশীল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ।
শিশু থেকে কৈশোরে রূপান্তর শুধুমাত্র শারীরিক বা বাহ্যিক পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি মনস্তাত্ত্বিক, আবেগীয়, সামাজিক এবং জ্ঞানীয় দিক থেকে গভীর প্রভাব ফেলে। এই পর্যায়টি মানব জীবনের ভিত্তি গঠনের অন্যতম প্রধান ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়। কৈশোরের সঠিক বিকাশ ভবিষ্যৎ ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক অবস্থানের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
কৈশোরে শারীরিক পরিবর্তন, যেমন উচ্চতা বৃদ্ধি, যৌন বৈশিষ্ট্যের বিকাশ এবং শরীরে হরমোনের পরিবর্তন, শিশুদের আবেগ, আচরণ এবং মানসিকতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। কৈশোরে হরমোনের পরিবর্তন আবেগের অস্থিরতা এবং মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। টেস্টোস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেনের বৃদ্ধি: এটি আবেগপ্রবণতা এবং কখনো কখনো বিদ্রোহী আচরণে প্রভাব ফেলে। অল্পতেই খুশি হওয়া বা রাগান্বিত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। শরীরে আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারাতে পারে। শরীরের চেহারা বা ওজন নিয়ে অসন্তুষ্টি তাদের আত্মসম্মানকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে শারীরিক পরিবর্তন (যেমন : মাসিক) নতুন অভিজ্ঞতা এবং মানসিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
কিশোরদের মানসিক বিকাশ বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্ব রয়েছে। এরিকসন কৈশোরকালকে “পরিচয়ের সংকট” বা Identity vs. Role Confusion পর্যায় বলে চিহ্নিত করেন। এই সময়ে কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের পরিচয় খুঁজতে চায়। তারা নিজেদের লক্ষ্য এবং সমাজে অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করে। পরিচয় গঠনে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং সংকট দেখা দিতে পারে। পিয়াজে কৈশোরকে Formal Operational Stage হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে কিশোর-কিশোরীরা বিমূর্ত এবং যৌক্তিক চিন্তাভাবনা করতে শুরু করে। এই সময়ে তারা “কী হতে পারে” এই ধারণাগুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারে। নীতি এবং মূল্যবোধের বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করে। ফ্রয়েড কৈশোরকে Genital Stage হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে যৌন চেতনার বিকাশ ঘটে। এই পর্যায়ে যৌন আকর্ষণ এবং সম্পর্ক নিয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। সামাজিক সম্পর্ক এবং যোগাযোগ এই পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আবেগপ্রবণতা এবং মানসিক সংকট। কৈশোরীরা নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে কঠিন সময় পার করে। তারা কখনো খুশি, কখনো হতাশাগ্রস্ত হয়। তারা নিজেদের আত্মপরিচয় নিয়ে বিভ্রান্ত থাকে। কৈশোরে আত্মসম্মান এবং আত্মবিশ্বাস গঠনের কাজ শুরু হয়। শারীরিক গঠন এবং চেহারার প্রভাব, সমাজ এবং সমবয়সীদের প্রতিক্রিয়া তাদের আত্মসম্মান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্য বা ব্যর্থতা আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলে। সামাজিক সম্পর্ক এই সময়ে নতুন মাত্রা লাভ করে। কৈশোরীরা বন্ধুদের সঙ্গে নিজেদের অনুভূতি শেয়ার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এই সময়ে তারা ভালোবাসা এবং সম্পর্কের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করে। পরিবারের প্রভাব কমে যাওয়া: কিশোর-কিশোরীরা ধীরে ধীরে পরিবারের উপর নির্ভরতা কমিয়ে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যায়। এই সময়ে মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স পুরোপুরি বিকশিত না হওয়ার কারণে তারা ঝুঁকি নিতে বেশি পছন্দ করে। মাদকাসক্তি, ধূমপান, বা ঝুঁকিপূর্ণ খেলায় অংশগ্রহণ এই সময়ে বৃদ্ধি পেতে পারে। সামাজিক চাপ এবং বন্ধুবান্ধবের প্রভাব তাদের আচরণকে প্রভাবিত করে।
কৈশোরের সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেমন-কৈশোরে আবেগপ্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা ডিপ্রেশন এবং উদ্বেগে ভুগতে পারে। শিক্ষার চাপ, সম্পর্কের জটিলতা, এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে। “আমি কে?” এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কিশোর-কিশোরীরা হতাশায় পড়তে পারে। পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে দূরত্ব তৈরি হলে তারা একাকিত্ব অনুভব করতে পারে। বন্ধুদের মতামত অনুসরণ করার প্রবণতা তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে। কৈশোরে সঠিক দিকনির্দেশনা এবং সমর্থন তাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পরিবার ও সমাজের ভূমিকা-আবেগপ্রবণ মুহূর্তে তাদের পাশে থাকা। উন্মুক্ত আলোচনা এবং সমালোচনা না করা। ভালো অভ্যাস এবং মূল্যবোধ শেখানো। তাদের দক্ষতা এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা। পরীক্ষার চাপ বা অন্য কোনো মানসিক সমস্যায় সমাধান দেওয়া। ইতিবাচক রোল মডেল সৃষ্টি। শিক্ষামূলক এবং সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা।
শিশু থেকে কৈশোরে রূপান্তরের সময় মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন গভীর এবং বহুস্তরীয়। এটি এমন একটি পর্যায়, যা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে একজন সুস্থ, সৃজনশীল, এবং দায়িত্বশীল প্রাপ্তবয়স্ক তৈরি করতে সাহায্য করে। এই সময়ে পরিবার, শিক্ষক এবং সমাজের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৈশোরের চ্যালেঞ্জগুলোকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে সাফল্যময় এবং সমৃদ্ধ করা সম্ভব। শিশু থেকে কৈশোরে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন একটি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটি সঠিকভাবে পরিচালিত হলে একজন কিশোর সুস্থ এবং সফল প্রাপ্তবয়স্কে পরিণত হতে পারে। পরিবার, সমাজ, এবং শিক্ষা এই পর্যায়ে বড় ভূমিকা পালন করে। যত্ন এবং সমর্থনের মাধ্যমে এই সময়ের পরিবর্তনগুলোকে ইতিবাচক অভিজ্ঞতায় রূপ দেওয়া সম্ভব।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:২২ পূর্বাহ্ণ
ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, মিলন এবং নতুন করে বাঁচার প্রেরণা। এই দিনে সবাই চায় নিজেকে সাজিয়ে নিতে, নতুন কাপড় পরে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে। কিন্তু এমন অনেকের মধ্যেও থাকে এমন কেউ, যার জন্য একটি নতুন জামা শুধু পোশাক নয়, বরং স্বপ্ন, গর্ব, আত্মমর্যাদা এবং একটি আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। এই প্রবন্ধে আমরা এমন এক নতুন জামার কথা বলব, যে জামার শুধু দামী কাপড় বা ডিজাইনের গর্ব নেই, বরং রয়েছে আত্মার গভীরে জমে থাকা এক মানুষের স্বপ্নের গল্প।

শহরের এক কোণায় বাস করে ছোট্ট ছেলেটি রিয়াদ। বয়স প্রায় দশ। তার বাবা একজন দিনমজুর, মা গৃহিণী। সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যে কোনোভাবে দিন কাটে তাদের। বছরের প্রতিটি দিন কাটে সংগ্রামের মাঝে, কিন্তু ঈদ আসে স্বপ্নের আলো নিয়ে। ঈদে নতুন জামা পাবে, এই আশায় রিয়াদ এক মাস রোজা রাখে, নিজের মনকে শক্ত করে।

তবে এই জামা আসবে কি না, তা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, বাবার মুখে ভাঁজ আর চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। মা বারবার বলেন, “এবার হয়তো পুরনো জামাতেই ঈদ করতে হবে।” কিন্তু রিয়াদ বিশ্বাস করে—আল্লাহ যদি রোজা কবুল করেন, তাহলে একটা নতুন জামা হয়তো আসবেই।

এই জামার অপেক্ষা শুধু রিয়াদের নয়, এটি যেন তার মন-প্রাণের আকুতি। এই জামা তার জন্য স্বপ্নপূরণ, আত্মমর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্বের অনুভব।

আমরা অনেক সময় বুঝি না, একটি নতুন জামা একজন শিশুর জন্য কতটা অর্থবহ হতে পারে। ধনী পরিবারের শিশুর কাছে এটি হয়তো একটি চমকপ্রদ পোশাক, কিন্তু রিয়াদের কাছে এটি স্বপ্ন পূরণের মতো। সে ভাবে, ঈদের দিন সবার মতো তাকেও যদি নতুন জামায় দেখা যায়, তাহলে সে আর অবহেলিত হবে না, তার বন্ধুরা তাকে হাসবে না। তারও মুখে হাসি ফুটবে, তারও ছবি উঠবে মোবাইল ক্যামেরায়।

এই জামা তার আত্মবিশ্বাস, যেটা সে স্কুলে পড়ার সময় খুঁজে বেড়ায়, যখন ক্লাসের অন্য ছেলেরা নতুন জামা পরে আসে আর সে পড়ে থাকে একঘেয়ে মলিন কাপড়।

এখানে জামার একটি কল্পিত স্বর ও ভাষা কল্পনা করা যাক—যেখানে জামাটি যেন নিজের মনে নিজের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছে: “আমি কোনো বিলাসী দোকানের শেলফে ঝুলে থাকা দামি জামা নই। আমি সেই জামা, যাকে এক দরিদ্র বাবার কষ্টের টাকায় কিনে আনা হবে তার ছেলের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে।
আমি হয়তো রঙিন নই, হয়তো আমার ডিজাইনে জাঁকজমক নেই, কিন্তু আমি গর্বিত। কারণ আমি হব একটি শিশুর ঈদের স্বপ্ন পূরণের বাহক। আমি হব আত্মমর্যাদার প্রতীক, আমি হব ঈদের প্রাপ্তির প্রতিচ্ছবি।”

এই ভাবনার মধ্যেই ফুটে ওঠে জামার স্বপ্ন—সে চায়, তাকে কেউ ভালোবাসুক, পরিধান করুক, আর আনন্দ পাক।

রিয়াদের মা হয়তো নিজের জন্য কোনো কাপড় কিনবেন না, বাবা হয়তো একজোড়া চপ্পল না কিনে সেই টাকায় ছেলের জামা কিনে দেবেন। কারণ, সন্তানের হাসির চেয়ে বড় কিছু তাদের কাছে নেই। একটি নতুন জামার পেছনে লুকিয়ে থাকে একটি পরিবারের নীরব ত্যাগ, ভালোবাসা আর গোপন কান্না।

ঈদের নতুন জামা এই পরিবারগুলোর কাছে শুধু পোশাক নয়—এটা এক সম্মান, ভালোবাসা এবং আত্মতৃপ্তির চিহ্ন। অনেক সময় বাবা-মায়েরা নিজেদের প্রয়োজন বিসর্জন দিয়ে সন্তানের মুখে হাসি দেখতে চান। নতুন জামা যেন সেই আত্মত্যাগের স্বাক্ষর হয়ে উঠে।

ঈদের দিন আমরা যখন দেখি কেউ চকচকে কাপড় পরে বেরিয়েছে, আর কেউ পুরনো জামা পরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, তখন সামাজিক বৈষম্যের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নতুন জামার গুরুত্ব সেখানে দ্বিগুণ। এটি একধরনের সামাজিক মর্যাদা।

রিয়াদ হয়তো তার বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ভাবে—আমারও যদি এমন একটা জামা থাকত! শুধু ঈদের দিনটা নয়, পুরো জীবনজুড়ে সেই হাহাকার থেকে যায়। এই এক টুকরো জামাই তার স্বপ্নকে উঁচুতে নিয়ে যেতে পারে, আর না থাকলে আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়ে।

দরিদ্র শিশুদের জন্য ঈদে জামার প্রাপ্তি মানে কী? সমান মর্যাদা – অন্যদের মতো তাকেও দেখা হয় একজন ‘পূর্ণ’ শিশুর মতো।  আত্মবিশ্বাস – নতুন জামা পরে সে খুশি মনে বন্ধুদের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। পরিবারের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি – সে উপলব্ধি করে, তার মা-বাবা তাকে কত ভালোবাসে।

৪. ভবিষ্যতের স্বপ্ন – একজন শিশু জানে, সে যদি চেষ্টার মধ্যে থাকে, তার স্বপ্ন একদিন পূরণ হবেই।

ঈদের সকালে রিয়াদের ঘুম ভাঙে ভোরবেলা। মা হাসিমুখে এসে বলে—
“এই দেখ, তোমার নতুন জামা।”
রিয়াদ প্রথমে বিশ্বাস করতে পারে না। হাত বাড়িয়ে জামাটা নেয়, চোখে জল চলে আসে। “আমার?”
মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, “হ্যাঁ বাবা, তোমার।”
রিয়াদ তার ছোট জামাটিকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে, যেন এটিই তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

সেই জামা তখন আর শুধু সুতা ও রঙের মিশ্রণ নয়, সেটি তখন একটি ‘স্বপ্ন’। একটি সন্তুষ্টির প্রতীক, একটি ছোট শিশুর গর্বের নিশান।

আমরা যারা সমাজের ভাগ্যবান অংশ, তাদের উচিত এই বৈষম্য দূর করতে সচেষ্ট হওয়া। প্রতিবছর ঈদের আগে আমরা অনেকেই প্রচুর জামা কিনি, কিন্তু ভাবি না পাশের দরিদ্র শিশুটার কথা। যদি আমরা একটি নতুন জামা কাউকে দিতে পারি, তাহলে তার ঈদটা হয়ে উঠতে পারে জীবনের সেরা দিন।সামাজিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার—সবাই যদি চায়, তাহলে প্রত্যেক শিশুর ঈদে একটি নতুন জামা নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি দান নয়, এটি মানুষের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা।

“ঈদে একটি নতুন জামা যার স্বপ্ন” এই বাক্যটি শুধুমাত্র কোনো এক জামা বা একটি শিশুর গল্প নয়, এটি হাজারো রিয়াদের গল্প। এটি আমাদের সমাজে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য মানুষের জীবনবোধের চিত্র। একটি নতুন জামা কেবল দেহ ঢাকার উপকরণ নয়, এটি মানুষের সম্মান, আত্মবিশ্বাস এবং ভালোবাসার প্রতীক। আমরা যদি এই একটুকরো জামার ভেতর মানুষের আবেগ, স্বপ্ন ও আত্মত্যাগ দেখতে পারি, তাহলে সমাজে সত্যিকার পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। আসুন, এই ঈদে আমরা কেবল নিজেদের জন্য না, অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যও একটি নতুন জামার স্বপ্ন বুনি।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:৩৮ অপরাহ্ণ
চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভা (১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৫) নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি (২০২৫-২০২৮) ঘোষণা করা হয়েছে। সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (সর্বশেষ সংশোধন ২০১৩) ও সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ (সর্বশেষ সংশোধন ২০২০) অনুযায়ী নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন (পরিদর্শক, জেলা সমবায় কার্যালয়, চাঁদপুর) কোন পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছয় সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষণা করেন। নবনির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি- মোঃ ইকবাল আজম (প্রতিনিধি, দি চাঁদপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সহ-সভাপতি- মোঃ আফজাল হোসেন খান (প্রতিনিধি, মিলেনিয়াম বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সম্পাদক- দুলাল চন্দ্র দাস (প্রতিনিধি, বাগড়া শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- মোঃ আক্কাস ফরাজী (প্রতিনিধি, রূপসী পল্লী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- খন্দকার ফখরুল আলম (প্রতিনিধি, আশার আলো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সদস্য- মোঃ খোরশেদ আলম (প্রতিনিধি, খাজুরিয়া বাজার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ)।
জেলার বিভিন্ন সমবায় সমিতির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ও নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন এর সভাপতিত্বে নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের কৃতি সন্তান, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সমবায়ী ও বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন শেখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন জেলা সমবায় ইউনিয়ন, জেলার সমবায় সমিতি ও সমবায়ীদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব থাকলেও চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নে দীর্ঘদিন নির্বাচিত কমিটি ছিল না, যার কারণে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। আমরা বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন থেকে চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নকে কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। সমবায় বিভাগ এতে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির গঠন করে, যার ফলশ্রুতিতে আজকে আমরা একটি নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে পেরেছি। এজন্য তিনি সমবায় বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান পাশাপাশি নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানান। সভায় তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। সকলের সহযোগিতায় তা বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সভায় অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সভাপতি মুরাদ হোসেন খান, জুন হাউজিং কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর প্রতিনিধি এ ওয়াই এম জাকারিয়া, ওয়ারলেস বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি মোঃ জিয়াউদ্দিন, ইসলামীয়া সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি নাজমুল হুদা প্রমূখ।
উল্লেখ্য প্রতি ৩ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও ২০১২ সালের পর, দীর্ঘ ১৩ বছর পর এই ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হলো।

আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ
আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আগামী ২ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সম্প্রতি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, সংসদ না থাকায় এবার সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে না। অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ কারণে ২ জুন বাজেট ঘোষণার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণত আগের অর্থবছরগুলোতে বৃহস্পতিবার বাজেট দেওয়া হতো, এবার সোমবার ঘোষণা করা হবে। বাজেট ঘোষণার পর আগের রীতি অনুযায়ী অর্থ উপদেষ্টা বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।

সূত্রটি জানিয়েছে, সাধারণত প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় বড় রাখা হয়। তবে এবার বাজেট ঘাটতি কমিয়ে বাজেট ছোট কারার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

বাজেটের আকার কমানো হলেও সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিকীকরণ সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ ধরতে পারে। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। চলতি অর্থবছরেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। যদিও গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।