খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৬ বৈশাখ, ১৪৩২

চুরি যাওয়া অর্থ ফেরাতে বিশ্বনেতাদের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ
চুরি যাওয়া অর্থ ফেরাতে বিশ্বনেতাদের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

চুরি হয়ে যাওয়া অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মিত্রদের সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (২২ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ২য় দিনে দেওয়া বক্তব্যে নেতাদের প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা জার্মানির ফেডারেল চ্যান্সেলারির প্রধান ও ফেডারেল মিনিস্টার ফর স্পেশাল টাস্কস ওল্ফগ্যাং স্মিড, বেলজিয়ামের রাজা কিং ফিলিপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা, সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিস, দুবাই কালচার অ্যান্ড আর্টস অথরিটির চেয়ারপারসন শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভার ফাঁকে অন্যদের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন। প্রতি বছরের জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের পার্বত্য শহর দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অধ্যাপক ইউনূস এখানে এবার ভিন্ন ভূমিকায় এসেছেন উল্লেখ করে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, তিনি এখন সরকারপ্রধান। তিনি এখনো এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় বক্তাদের একজন। তবে এবার তিনি খুব কমই তার মূল ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। ড. ইউনূস একটি নতুন বাস্তব জীবনের গল্প নিয়ে এসেছেন। কীভাবে বাংলাদেশের তরুণরা একটি ‘স্বৈরশাসক’-কে হটিয়েছিল, কীভাবে তাদের চিন্তাধারা একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরি করছে এবং কীভাবে দেশ পুনর্গঠিত হচ্ছে।

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উপসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনামলে বাংলাদেশে কীভাবে ‘প্রকাশ্য দিবালোকে ডাকাতি’ সংঘটিত হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে শীর্ষ বিশেষজ্ঞ, থিংক ট্যাংক, সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।

আজাদ মজুমদার জানান, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) লামিয়া মোরশেদ, জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

লুৎফে সিদ্দিকী চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সরকারের প্রচেষ্টা সম্পর্কে জার্মান মন্ত্রী ভোল্ফগ্যাং স্মিডকে অবহিত করে বলেন, সরকার এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে একটি সম্পদ পুনরুদ্ধার কমিটি এবং একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সরকার প্রাথমিকভাবে শীর্ষ ২০ অর্থ পাচারকারীকে টার্গেট করেছিল।

দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জার্মান মন্ত্রীকে বলেন, আমরা যখন নতুন বাংলাদেশের কথা বলি, তখন পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের কথাও বলি।

প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে জার্মানির সমর্থন কামনা করে দেশটির মন্ত্রীর সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্র নিয়েও আলোচনা করেন। এ সময় জার্মান মন্ত্রী বলেন, আগামী এপ্রিলে জার্মানির একটি নতুন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নেপালের জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে ভারত, নেপাল ও ভুটানকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ একটি অর্থনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চায়। নেপাল বিদ্যুৎ বিক্রি করতে সত্যিই প্রস্তুত এবং বাংলাদেশ তাদের জন্য একটি ভালো বাজার। এটি প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা সুইস ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিসের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও জলবায়ু অর্থায়নসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে বাংলাদেশের কার্বন ধরে রাখার প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে সুইজারল্যান্ডকে অনুরোধ জানান। ড. ইউনূস সুইজারল্যান্ডকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগান। কারণ দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকই ২৭ বছরের কম বয়সী তরুণ।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশ্বনেতাদের অবহিত করেন। এ সময় জার্মান মন্ত্রী ও সুইস কাউন্সিলরের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা করেন। বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ ও কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে অবহিত করা হয়, বেলজিয়ামের একজন যুবরাজের নেতৃত্বে একটি গ্রুপের চালু করা একটি ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি কীভাবে আফ্রিকার দেশটিতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন সংরক্ষণের আকার প্রসারিত করতে সহায়তা করেছে। প্রিন্স ইমানুয়েল ডি মেরোডের প্রতিষ্ঠিত একটি গ্রুপ সংঘাতপ্রবণ কঙ্গোলিজ অঞ্চলে ক্ষুদ্রঋণ চালু করেছিল। তিনি বলেন, সংঘাতের পর কঙ্গোলিজ বন এখন ব্রিটেনের আকারের দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আর ক্ষুদ্রঋণ সেখানে ২১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ প্রাক্তন যোদ্ধা। ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি এ অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে বড় ভূমিকা পালন করেছে বলেও জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিনাওয়াত্রার সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট ও জাহাজ চলাচলসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধান করতে চাই, কারণ আরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে। বিশ্বের অন্যতম কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী সিনাওয়াত্রা বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের পর দুই দেশের মধ্যে তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, থাই প্রধানমন্ত্রীর বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রা ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার বড় ভক্ত ছিলেন। দারিদ্র্য, সম্পদের কেন্দ্রীয়করণ, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে একটি আত্মবিধ্বংসী সভ্যতাকে বাঁচানোর ‘থ্রি জিরো’ ধারণা সম্পর্কে থাই প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা সিনাওয়াত্রাকে বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৫৮টি দেশে প্রায় পাঁচ হাজার থ্রি জিরো ক্লাব রয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছরের এপ্রিলে ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি বিমসটেকের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছেন।

বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের ৭টি দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড নিয়ে বিমসটেক গঠিত। গত সোমবার বিমসটেক সদর দপ্তর তথ্য জানিয়েছে, এটি সাতটি বিস্তৃত খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা অনুসরণ করে। এগুলো হলো কৃষি ও খাদ্য সুরক্ষা, কানেক্টিভিটি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, নিরাপত্তা, এবং বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও উন্নয়ন।এই সহযোগিতাটি ৮টি উপক্ষেত্রকেও অন্তর্ভুক্ত করে ব্লু ইকোনমি, মাউন্টেন ইকোনমি, জ্বালানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়ন। প্রধান উপদেষ্টা আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে এবং এর পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি থাইল্যান্ডের সমর্থন কামনা করেন। সূত্র : ইউএনবি

ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:২২ পূর্বাহ্ণ
ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, মিলন এবং নতুন করে বাঁচার প্রেরণা। এই দিনে সবাই চায় নিজেকে সাজিয়ে নিতে, নতুন কাপড় পরে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে। কিন্তু এমন অনেকের মধ্যেও থাকে এমন কেউ, যার জন্য একটি নতুন জামা শুধু পোশাক নয়, বরং স্বপ্ন, গর্ব, আত্মমর্যাদা এবং একটি আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। এই প্রবন্ধে আমরা এমন এক নতুন জামার কথা বলব, যে জামার শুধু দামী কাপড় বা ডিজাইনের গর্ব নেই, বরং রয়েছে আত্মার গভীরে জমে থাকা এক মানুষের স্বপ্নের গল্প।

শহরের এক কোণায় বাস করে ছোট্ট ছেলেটি রিয়াদ। বয়স প্রায় দশ। তার বাবা একজন দিনমজুর, মা গৃহিণী। সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যে কোনোভাবে দিন কাটে তাদের। বছরের প্রতিটি দিন কাটে সংগ্রামের মাঝে, কিন্তু ঈদ আসে স্বপ্নের আলো নিয়ে। ঈদে নতুন জামা পাবে, এই আশায় রিয়াদ এক মাস রোজা রাখে, নিজের মনকে শক্ত করে।

তবে এই জামা আসবে কি না, তা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, বাবার মুখে ভাঁজ আর চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। মা বারবার বলেন, “এবার হয়তো পুরনো জামাতেই ঈদ করতে হবে।” কিন্তু রিয়াদ বিশ্বাস করে—আল্লাহ যদি রোজা কবুল করেন, তাহলে একটা নতুন জামা হয়তো আসবেই।

এই জামার অপেক্ষা শুধু রিয়াদের নয়, এটি যেন তার মন-প্রাণের আকুতি। এই জামা তার জন্য স্বপ্নপূরণ, আত্মমর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্বের অনুভব।

আমরা অনেক সময় বুঝি না, একটি নতুন জামা একজন শিশুর জন্য কতটা অর্থবহ হতে পারে। ধনী পরিবারের শিশুর কাছে এটি হয়তো একটি চমকপ্রদ পোশাক, কিন্তু রিয়াদের কাছে এটি স্বপ্ন পূরণের মতো। সে ভাবে, ঈদের দিন সবার মতো তাকেও যদি নতুন জামায় দেখা যায়, তাহলে সে আর অবহেলিত হবে না, তার বন্ধুরা তাকে হাসবে না। তারও মুখে হাসি ফুটবে, তারও ছবি উঠবে মোবাইল ক্যামেরায়।

এই জামা তার আত্মবিশ্বাস, যেটা সে স্কুলে পড়ার সময় খুঁজে বেড়ায়, যখন ক্লাসের অন্য ছেলেরা নতুন জামা পরে আসে আর সে পড়ে থাকে একঘেয়ে মলিন কাপড়।

এখানে জামার একটি কল্পিত স্বর ও ভাষা কল্পনা করা যাক—যেখানে জামাটি যেন নিজের মনে নিজের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছে: “আমি কোনো বিলাসী দোকানের শেলফে ঝুলে থাকা দামি জামা নই। আমি সেই জামা, যাকে এক দরিদ্র বাবার কষ্টের টাকায় কিনে আনা হবে তার ছেলের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে।
আমি হয়তো রঙিন নই, হয়তো আমার ডিজাইনে জাঁকজমক নেই, কিন্তু আমি গর্বিত। কারণ আমি হব একটি শিশুর ঈদের স্বপ্ন পূরণের বাহক। আমি হব আত্মমর্যাদার প্রতীক, আমি হব ঈদের প্রাপ্তির প্রতিচ্ছবি।”

এই ভাবনার মধ্যেই ফুটে ওঠে জামার স্বপ্ন—সে চায়, তাকে কেউ ভালোবাসুক, পরিধান করুক, আর আনন্দ পাক।

রিয়াদের মা হয়তো নিজের জন্য কোনো কাপড় কিনবেন না, বাবা হয়তো একজোড়া চপ্পল না কিনে সেই টাকায় ছেলের জামা কিনে দেবেন। কারণ, সন্তানের হাসির চেয়ে বড় কিছু তাদের কাছে নেই। একটি নতুন জামার পেছনে লুকিয়ে থাকে একটি পরিবারের নীরব ত্যাগ, ভালোবাসা আর গোপন কান্না।

ঈদের নতুন জামা এই পরিবারগুলোর কাছে শুধু পোশাক নয়—এটা এক সম্মান, ভালোবাসা এবং আত্মতৃপ্তির চিহ্ন। অনেক সময় বাবা-মায়েরা নিজেদের প্রয়োজন বিসর্জন দিয়ে সন্তানের মুখে হাসি দেখতে চান। নতুন জামা যেন সেই আত্মত্যাগের স্বাক্ষর হয়ে উঠে।

ঈদের দিন আমরা যখন দেখি কেউ চকচকে কাপড় পরে বেরিয়েছে, আর কেউ পুরনো জামা পরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, তখন সামাজিক বৈষম্যের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নতুন জামার গুরুত্ব সেখানে দ্বিগুণ। এটি একধরনের সামাজিক মর্যাদা।

রিয়াদ হয়তো তার বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ভাবে—আমারও যদি এমন একটা জামা থাকত! শুধু ঈদের দিনটা নয়, পুরো জীবনজুড়ে সেই হাহাকার থেকে যায়। এই এক টুকরো জামাই তার স্বপ্নকে উঁচুতে নিয়ে যেতে পারে, আর না থাকলে আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়ে।

দরিদ্র শিশুদের জন্য ঈদে জামার প্রাপ্তি মানে কী? সমান মর্যাদা – অন্যদের মতো তাকেও দেখা হয় একজন ‘পূর্ণ’ শিশুর মতো।  আত্মবিশ্বাস – নতুন জামা পরে সে খুশি মনে বন্ধুদের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। পরিবারের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি – সে উপলব্ধি করে, তার মা-বাবা তাকে কত ভালোবাসে।

৪. ভবিষ্যতের স্বপ্ন – একজন শিশু জানে, সে যদি চেষ্টার মধ্যে থাকে, তার স্বপ্ন একদিন পূরণ হবেই।

ঈদের সকালে রিয়াদের ঘুম ভাঙে ভোরবেলা। মা হাসিমুখে এসে বলে—
“এই দেখ, তোমার নতুন জামা।”
রিয়াদ প্রথমে বিশ্বাস করতে পারে না। হাত বাড়িয়ে জামাটা নেয়, চোখে জল চলে আসে। “আমার?”
মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, “হ্যাঁ বাবা, তোমার।”
রিয়াদ তার ছোট জামাটিকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে, যেন এটিই তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

সেই জামা তখন আর শুধু সুতা ও রঙের মিশ্রণ নয়, সেটি তখন একটি ‘স্বপ্ন’। একটি সন্তুষ্টির প্রতীক, একটি ছোট শিশুর গর্বের নিশান।

আমরা যারা সমাজের ভাগ্যবান অংশ, তাদের উচিত এই বৈষম্য দূর করতে সচেষ্ট হওয়া। প্রতিবছর ঈদের আগে আমরা অনেকেই প্রচুর জামা কিনি, কিন্তু ভাবি না পাশের দরিদ্র শিশুটার কথা। যদি আমরা একটি নতুন জামা কাউকে দিতে পারি, তাহলে তার ঈদটা হয়ে উঠতে পারে জীবনের সেরা দিন।সামাজিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার—সবাই যদি চায়, তাহলে প্রত্যেক শিশুর ঈদে একটি নতুন জামা নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি দান নয়, এটি মানুষের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা।

“ঈদে একটি নতুন জামা যার স্বপ্ন” এই বাক্যটি শুধুমাত্র কোনো এক জামা বা একটি শিশুর গল্প নয়, এটি হাজারো রিয়াদের গল্প। এটি আমাদের সমাজে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য মানুষের জীবনবোধের চিত্র। একটি নতুন জামা কেবল দেহ ঢাকার উপকরণ নয়, এটি মানুষের সম্মান, আত্মবিশ্বাস এবং ভালোবাসার প্রতীক। আমরা যদি এই একটুকরো জামার ভেতর মানুষের আবেগ, স্বপ্ন ও আত্মত্যাগ দেখতে পারি, তাহলে সমাজে সত্যিকার পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। আসুন, এই ঈদে আমরা কেবল নিজেদের জন্য না, অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যও একটি নতুন জামার স্বপ্ন বুনি।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:৩৮ অপরাহ্ণ
চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভা (১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৫) নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি (২০২৫-২০২৮) ঘোষণা করা হয়েছে। সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (সর্বশেষ সংশোধন ২০১৩) ও সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ (সর্বশেষ সংশোধন ২০২০) অনুযায়ী নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন (পরিদর্শক, জেলা সমবায় কার্যালয়, চাঁদপুর) কোন পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছয় সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষণা করেন। নবনির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি- মোঃ ইকবাল আজম (প্রতিনিধি, দি চাঁদপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সহ-সভাপতি- মোঃ আফজাল হোসেন খান (প্রতিনিধি, মিলেনিয়াম বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সম্পাদক- দুলাল চন্দ্র দাস (প্রতিনিধি, বাগড়া শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- মোঃ আক্কাস ফরাজী (প্রতিনিধি, রূপসী পল্লী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- খন্দকার ফখরুল আলম (প্রতিনিধি, আশার আলো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সদস্য- মোঃ খোরশেদ আলম (প্রতিনিধি, খাজুরিয়া বাজার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ)।
জেলার বিভিন্ন সমবায় সমিতির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ও নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন এর সভাপতিত্বে নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের কৃতি সন্তান, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সমবায়ী ও বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন শেখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন জেলা সমবায় ইউনিয়ন, জেলার সমবায় সমিতি ও সমবায়ীদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব থাকলেও চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নে দীর্ঘদিন নির্বাচিত কমিটি ছিল না, যার কারণে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। আমরা বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন থেকে চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নকে কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। সমবায় বিভাগ এতে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির গঠন করে, যার ফলশ্রুতিতে আজকে আমরা একটি নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে পেরেছি। এজন্য তিনি সমবায় বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান পাশাপাশি নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানান। সভায় তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। সকলের সহযোগিতায় তা বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সভায় অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সভাপতি মুরাদ হোসেন খান, জুন হাউজিং কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর প্রতিনিধি এ ওয়াই এম জাকারিয়া, ওয়ারলেস বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি মোঃ জিয়াউদ্দিন, ইসলামীয়া সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি নাজমুল হুদা প্রমূখ।
উল্লেখ্য প্রতি ৩ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও ২০১২ সালের পর, দীর্ঘ ১৩ বছর পর এই ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হলো।

আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ
আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আগামী ২ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সম্প্রতি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, সংসদ না থাকায় এবার সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে না। অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ কারণে ২ জুন বাজেট ঘোষণার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণত আগের অর্থবছরগুলোতে বৃহস্পতিবার বাজেট দেওয়া হতো, এবার সোমবার ঘোষণা করা হবে। বাজেট ঘোষণার পর আগের রীতি অনুযায়ী অর্থ উপদেষ্টা বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।

সূত্রটি জানিয়েছে, সাধারণত প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় বড় রাখা হয়। তবে এবার বাজেট ঘাটতি কমিয়ে বাজেট ছোট কারার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

বাজেটের আকার কমানো হলেও সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিকীকরণ সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ ধরতে পারে। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। চলতি অর্থবছরেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। যদিও গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।