খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৬ বৈশাখ, ১৪৩২

ঈদুল ফিতর : ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির প্রতীক

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ
ঈদুল ফিতর  : ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির প্রতীক

ঈদুল ফিতর ইসলামী সমাজের এক বিশেষ উৎসব যা ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি এবং মানবিকতার এক অনন্য উদাহরণ। এক মাস রমজানের সিয়াম সাধনার পর এই উৎসব আসে মুসলিম জীবনে আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে। এই দিনটি শুধু আনন্দের উৎসব নয়, বরং এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে এক গভীর তাৎপর্য বহন করে। ঈদুল ফিতর মানুষকে মিলনের, ভ্রাতৃত্বের এবং সহমর্মিতার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে।

ঈদুল ফিতর শব্দের অর্থ হলো “রোজা ভঙ্গের উৎসব”। এই উৎসব ইসলামী হিজরি ক্যালেন্ডারের শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে পালিত হয়। রমজান মাসে দীর্ঘ এক মাস ধরে মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখেন। এই সময়ে তারা নিজেকে সংযম, আত্মশুদ্ধি, এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে আত্মশক্তিতে বলিয়ান করেন। ঈদুল ফিতর সেই সংযম ও আত্মশুদ্ধির একটি পুরস্কার স্বরূপ। এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম, যা তিনি রোজাদারদের জন্য নির্ধারণ করেছেন।

ঈদুল ফিতরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো “ফিতরা” প্রদান। ফিতরা একটি বাধ্যতামূলক দান যা প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলমান রমজানের শেষ সময়ে গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করে থাকেন। এটি শুধুমাত্র দানের বিষয় নয়; বরং এটি মুসলিম সমাজে সম্প্রীতি, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ চর্চা।

ঈদুল ফিতর এমন একটি উৎসব যা মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। ঈদের দিনে ধনী-গরীবের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকে না। সবাই একত্রে ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, যা সমাজে সৌহার্দ্যের পরিবেশ সৃষ্টি করে।

ঈদের দিন সকালে ঈদের নামাজ আদায় করার আগে ফিতরা আদায় করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এর মাধ্যমে গরিবদের মধ্যেও ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস নেওয়া হয়। এই দানের অর্থ হলো, কেউ যেন ক্ষুধার্ত থেকে ঈদের উৎসবে অংশ নিতে না পারে। এটি ইসলামের সেই সাম্যের বার্তাকে বহন করে, যা সকল মানুষকে সমান মর্যাদায় দেখার শিক্ষা দেয়।

ঈদুল ফিতর পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার জন্য একটি বিশেষ দিন। পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা, একত্রে খাওয়া-দাওয়া করা এবং প্রিয়জনদের মধ্যে উপহার বিনিময় করার মাধ্যমে এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে ওঠে।

এছাড়াও, ঈদুল ফিতরের দিন প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করারও একটি বিশেষ সুযোগ। প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করা, তাদের ঘরে খাবার পাঠানো, এবং ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে এই সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।

ঈদুল ফিতরের আরেকটি বড় দিক হলো এর আন্তর্জাতিকতা। সারা বিশ্বের মুসলমানরা একসঙ্গে এই দিনটি উদযাপন করেন। এটি বিশ্বের বিভিন্ন জাতি, ভাষা এবং সংস্কৃতির মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করে। ঈদুল ফিতর দেখায় যে, ভাষা বা সংস্কৃতির ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও সবাই একই ধর্মীয় চেতনার মধ্যে ঐক্যবদ্ধ।

১. ঈদগাহে নামাজ আদায়: ঈদের দিন সকলে একত্রে ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন। এটি সমাজে ঐক্যের প্রতীক।
২. ফিতরা প্রদান: ফিতরা দিয়ে গরিবদের ঈদ উদযাপনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।
৩. সহমর্মিতা ও দান: ঈদুল ফিতর দানের গুরুত্ব শেখায়। দানশীলতা মানুষের মধ্যে সহানুভূতির জন্ম দেয়।
৪. পরিচ্ছন্নতা ও নতুন পোশাক: ঈদের দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা ইসলামী সংস্কৃতির একটি অংশ।

ঈদুল ফিতর কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ধনী ও গরীবের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। ঈদের মাধ্যমে সমাজে সম্প্রীতি ও সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়। পাশাপাশি, এটি ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ঈদুল ফিতর একটি বহুমাত্রিক উৎসব, যার গুরুত্ব ধর্মীয়, সামাজিক এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনস্বীকার্য। এটি মুসলমানদের জীবনে শুধু আনন্দ নিয়ে আসে না; বরং নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক শিক্ষা প্রদান করে। চলুন আরও গভীরে গিয়ে ঈদুল ফিতরের বিভিন্ন দিক আলোচনা করি।

রমজান মাসে দীর্ঘ এক মাসের রোজা পালনের পর ঈদুল ফিতর আসে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি বিশেষ দিন হিসেবে। এটি মানুষের আত্মশুদ্ধি এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্যের প্রতীক। ঈদের দিনে যে নামাজ আদায় করা হয়, তা কেবল এক ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ।

ঈদের নামাজে একত্রিত হওয়া এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করার মাধ্যমে মুসলমানরা নিজেদের আত্মিক জীবনে এক নতুন প্রেরণা লাভ করে। এটি মানুষকে আল্লাহর করুণা ও দয়া অনুভব করতে সহায়তা করে।

ঈদুল ফিতর কেবল ধনী বা সামর্থ্যবানদের উৎসব নয়; এটি এমন একটি দিন যা গরীবদের প্রতিও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। “ফিতরা” প্রদানের মধ্য দিয়ে সমাজে সমতা এবং সম্প্রীতির বার্তা প্রচারিত হয়। এই দানের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে, ঈদের আনন্দে কোনো গরীব বা অসহায় মানুষ যেন বঞ্চিত না হয়।

ফিতরার মাধ্যমে মানুষ গরীবদের প্রতি যে সহানুভূতি ও দয়া দেখায়, তা মানবিকতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা ও সহানুভূতির বন্ধন তৈরি করে।

ইসলাম সাম্যের ধর্ম। ধনী-গরীব, ছোট-বড়, জাতি-গোষ্ঠী—সবাই এক সৃষ্টিকর্তার কাছে সমান। ঈদুল ফিতর সেই সাম্যের বার্তাকেই আরও শক্তিশালী করে। ঈদের নামাজে সবাই একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় করেন। এখানে ধনী-গরীবের কোনো ভেদাভেদ থাকে না।

ঈদগাহে নামাজের পর মানুষ একে অপরকে কোলাকুলি করে এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করে। এই কার্যক্রম সমাজে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে। ঈদের দিনে ধনী-গরীব, শিশু-বৃদ্ধ, সবাই একত্রে আনন্দে মেতে ওঠে।

ঈদুল ফিতর কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে এক বিশেষ রূপ ধারণ করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপনের পদ্ধতি ভিন্ন হলেও এর মূল বার্তা এক।

বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপন

বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর এক বিশাল উৎসব হিসেবে পালিত হয়। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই মানুষ নতুন পোশাক কেনা, ঘরবাড়ি সাজানো এবং খাবার প্রস্তুত করার কাজ শুরু করে।

ঈদের সকালে সবাই নতুন পোশাক পরে ঈদগাহে যান। ঈদের বিশেষ খাবার, যেমন সেমাই, ফিরনি, পায়েস, এবং বিরিয়ানির মতো খাবার ঘরে ঘরে প্রস্তুত হয়। আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া এবং উপহার বিনিময়ের মধ্য দিয়ে ঈদের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে ওঠে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপনের ধরণ ভিন্ন হলেও এর আবেগ এবং উৎসবের আমেজ অভিন্ন। মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ খাবারের আয়োজন, তুরস্কে ঈদ মিছরি বিতরণ, এবং ইন্দোনেশিয়ায় বিশেষ প্রার্থনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন ঈদের উদযাপনে বৈচিত্র্য আনে।

ঈদুল ফিতর একটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক আন্দোলনের মতো। এই সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বৃদ্ধি পায়। ঈদের কেনাকাটায় দোকানপাট এবং বিপণি বিতানগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে।

অন্যদিকে, ফিতরা, যাকাত, এবং দানের মাধ্যমে অর্থ সমাজের নিম্নস্তরে প্রবাহিত হয়। এর ফলে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য কিছুটা হলেও লাঘব হয় এবং দরিদ্ররা ঈদের আনন্দে সামিল হতে পারেন।

ঈদুল ফিতর শিশুদের জন্য এক বিশেষ আনন্দের দিন। নতুন পোশাক, ঈদ সালামি, এবং নানা ধরনের খাবার তাদের জন্য উৎসবকে রঙিন করে তোলে। ঈদের দিন শিশুরা বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা এবং বিনোদনে মেতে ওঠে।

শিশুদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব এবং সম্প্রীতির শিক্ষা দেওয়ার জন্য ঈদ একটি আদর্শ সময়। এই দিন তারা শিখতে পারে কীভাবে গরীব-অসহায়দের প্রতি দয়া এবং সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে হয়।

ঈদুল ফিতর এমন একটি উৎসব যা ধর্মীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে ভ্রাতৃত্ব, সাম্য, এবং মানবিকতার এক জ্বলন্ত প্রতীক। এটি মানুষকে সংযম, দানশীলতা এবং সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়।

এই উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সমাজে ভ্রাতৃত্ব এবং সম্প্রীতির বন্ধন শক্তিশালী করার জন্য আমরা সবাই একত্রে কাজ করতে পারি। ঈদুল ফিতরের প্রকৃত সৌন্দর্য এর মূল চেতনায় নিহিত, যেখানে মানুষকে নিজের চেয়ে অন্যের কথা ভাবতে শেখানো হয়। ঈদুল ফিতরের শিক্ষা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মেনে চলা উচিত, যাতে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

“ঈদ মোবারক” শব্দ শুধু আনন্দের নয়, এটি ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা এবং সম্প্রীতির এক অনন্য বার্তা। এই বার্তাকে ধারণ করে আমরা যদি জীবনের প্রতিটি দিন উদযাপন করতে পারি, তবে আমাদের সমাজ হবে আরও সুন্দর এবং মানবিক।

ঈদুল ফিতর শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি এবং মানবিকতার এক অপূর্ব উদাহরণ। এটি মানুষকে দান, সংযম, এবং অন্যের প্রতি সহানুভূতির শিক্ষা দেয়। ঈদুল ফিতরের আনন্দ কেবলমাত্র ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না; এটি সমাজের সকল স্তরে ছড়িয়ে পড়ে।

সুতরাং, ঈদুল ফিতর এমন একটি উৎসব যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি হলো মানবজীবনের অপরিহার্য অংশ। এই বিশেষ দিনে সকলের জন্য প্রার্থনা এবং ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়াই এর মূল লক্ষ্য।

ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:২২ পূর্বাহ্ণ
ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, মিলন এবং নতুন করে বাঁচার প্রেরণা। এই দিনে সবাই চায় নিজেকে সাজিয়ে নিতে, নতুন কাপড় পরে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে। কিন্তু এমন অনেকের মধ্যেও থাকে এমন কেউ, যার জন্য একটি নতুন জামা শুধু পোশাক নয়, বরং স্বপ্ন, গর্ব, আত্মমর্যাদা এবং একটি আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। এই প্রবন্ধে আমরা এমন এক নতুন জামার কথা বলব, যে জামার শুধু দামী কাপড় বা ডিজাইনের গর্ব নেই, বরং রয়েছে আত্মার গভীরে জমে থাকা এক মানুষের স্বপ্নের গল্প।

শহরের এক কোণায় বাস করে ছোট্ট ছেলেটি রিয়াদ। বয়স প্রায় দশ। তার বাবা একজন দিনমজুর, মা গৃহিণী। সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যে কোনোভাবে দিন কাটে তাদের। বছরের প্রতিটি দিন কাটে সংগ্রামের মাঝে, কিন্তু ঈদ আসে স্বপ্নের আলো নিয়ে। ঈদে নতুন জামা পাবে, এই আশায় রিয়াদ এক মাস রোজা রাখে, নিজের মনকে শক্ত করে।

তবে এই জামা আসবে কি না, তা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, বাবার মুখে ভাঁজ আর চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। মা বারবার বলেন, “এবার হয়তো পুরনো জামাতেই ঈদ করতে হবে।” কিন্তু রিয়াদ বিশ্বাস করে—আল্লাহ যদি রোজা কবুল করেন, তাহলে একটা নতুন জামা হয়তো আসবেই।

এই জামার অপেক্ষা শুধু রিয়াদের নয়, এটি যেন তার মন-প্রাণের আকুতি। এই জামা তার জন্য স্বপ্নপূরণ, আত্মমর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্বের অনুভব।

আমরা অনেক সময় বুঝি না, একটি নতুন জামা একজন শিশুর জন্য কতটা অর্থবহ হতে পারে। ধনী পরিবারের শিশুর কাছে এটি হয়তো একটি চমকপ্রদ পোশাক, কিন্তু রিয়াদের কাছে এটি স্বপ্ন পূরণের মতো। সে ভাবে, ঈদের দিন সবার মতো তাকেও যদি নতুন জামায় দেখা যায়, তাহলে সে আর অবহেলিত হবে না, তার বন্ধুরা তাকে হাসবে না। তারও মুখে হাসি ফুটবে, তারও ছবি উঠবে মোবাইল ক্যামেরায়।

এই জামা তার আত্মবিশ্বাস, যেটা সে স্কুলে পড়ার সময় খুঁজে বেড়ায়, যখন ক্লাসের অন্য ছেলেরা নতুন জামা পরে আসে আর সে পড়ে থাকে একঘেয়ে মলিন কাপড়।

এখানে জামার একটি কল্পিত স্বর ও ভাষা কল্পনা করা যাক—যেখানে জামাটি যেন নিজের মনে নিজের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছে: “আমি কোনো বিলাসী দোকানের শেলফে ঝুলে থাকা দামি জামা নই। আমি সেই জামা, যাকে এক দরিদ্র বাবার কষ্টের টাকায় কিনে আনা হবে তার ছেলের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে।
আমি হয়তো রঙিন নই, হয়তো আমার ডিজাইনে জাঁকজমক নেই, কিন্তু আমি গর্বিত। কারণ আমি হব একটি শিশুর ঈদের স্বপ্ন পূরণের বাহক। আমি হব আত্মমর্যাদার প্রতীক, আমি হব ঈদের প্রাপ্তির প্রতিচ্ছবি।”

এই ভাবনার মধ্যেই ফুটে ওঠে জামার স্বপ্ন—সে চায়, তাকে কেউ ভালোবাসুক, পরিধান করুক, আর আনন্দ পাক।

রিয়াদের মা হয়তো নিজের জন্য কোনো কাপড় কিনবেন না, বাবা হয়তো একজোড়া চপ্পল না কিনে সেই টাকায় ছেলের জামা কিনে দেবেন। কারণ, সন্তানের হাসির চেয়ে বড় কিছু তাদের কাছে নেই। একটি নতুন জামার পেছনে লুকিয়ে থাকে একটি পরিবারের নীরব ত্যাগ, ভালোবাসা আর গোপন কান্না।

ঈদের নতুন জামা এই পরিবারগুলোর কাছে শুধু পোশাক নয়—এটা এক সম্মান, ভালোবাসা এবং আত্মতৃপ্তির চিহ্ন। অনেক সময় বাবা-মায়েরা নিজেদের প্রয়োজন বিসর্জন দিয়ে সন্তানের মুখে হাসি দেখতে চান। নতুন জামা যেন সেই আত্মত্যাগের স্বাক্ষর হয়ে উঠে।

ঈদের দিন আমরা যখন দেখি কেউ চকচকে কাপড় পরে বেরিয়েছে, আর কেউ পুরনো জামা পরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, তখন সামাজিক বৈষম্যের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নতুন জামার গুরুত্ব সেখানে দ্বিগুণ। এটি একধরনের সামাজিক মর্যাদা।

রিয়াদ হয়তো তার বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ভাবে—আমারও যদি এমন একটা জামা থাকত! শুধু ঈদের দিনটা নয়, পুরো জীবনজুড়ে সেই হাহাকার থেকে যায়। এই এক টুকরো জামাই তার স্বপ্নকে উঁচুতে নিয়ে যেতে পারে, আর না থাকলে আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়ে।

দরিদ্র শিশুদের জন্য ঈদে জামার প্রাপ্তি মানে কী? সমান মর্যাদা – অন্যদের মতো তাকেও দেখা হয় একজন ‘পূর্ণ’ শিশুর মতো।  আত্মবিশ্বাস – নতুন জামা পরে সে খুশি মনে বন্ধুদের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। পরিবারের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি – সে উপলব্ধি করে, তার মা-বাবা তাকে কত ভালোবাসে।

৪. ভবিষ্যতের স্বপ্ন – একজন শিশু জানে, সে যদি চেষ্টার মধ্যে থাকে, তার স্বপ্ন একদিন পূরণ হবেই।

ঈদের সকালে রিয়াদের ঘুম ভাঙে ভোরবেলা। মা হাসিমুখে এসে বলে—
“এই দেখ, তোমার নতুন জামা।”
রিয়াদ প্রথমে বিশ্বাস করতে পারে না। হাত বাড়িয়ে জামাটা নেয়, চোখে জল চলে আসে। “আমার?”
মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, “হ্যাঁ বাবা, তোমার।”
রিয়াদ তার ছোট জামাটিকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে, যেন এটিই তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

সেই জামা তখন আর শুধু সুতা ও রঙের মিশ্রণ নয়, সেটি তখন একটি ‘স্বপ্ন’। একটি সন্তুষ্টির প্রতীক, একটি ছোট শিশুর গর্বের নিশান।

আমরা যারা সমাজের ভাগ্যবান অংশ, তাদের উচিত এই বৈষম্য দূর করতে সচেষ্ট হওয়া। প্রতিবছর ঈদের আগে আমরা অনেকেই প্রচুর জামা কিনি, কিন্তু ভাবি না পাশের দরিদ্র শিশুটার কথা। যদি আমরা একটি নতুন জামা কাউকে দিতে পারি, তাহলে তার ঈদটা হয়ে উঠতে পারে জীবনের সেরা দিন।সামাজিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার—সবাই যদি চায়, তাহলে প্রত্যেক শিশুর ঈদে একটি নতুন জামা নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি দান নয়, এটি মানুষের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা।

“ঈদে একটি নতুন জামা যার স্বপ্ন” এই বাক্যটি শুধুমাত্র কোনো এক জামা বা একটি শিশুর গল্প নয়, এটি হাজারো রিয়াদের গল্প। এটি আমাদের সমাজে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য মানুষের জীবনবোধের চিত্র। একটি নতুন জামা কেবল দেহ ঢাকার উপকরণ নয়, এটি মানুষের সম্মান, আত্মবিশ্বাস এবং ভালোবাসার প্রতীক। আমরা যদি এই একটুকরো জামার ভেতর মানুষের আবেগ, স্বপ্ন ও আত্মত্যাগ দেখতে পারি, তাহলে সমাজে সত্যিকার পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। আসুন, এই ঈদে আমরা কেবল নিজেদের জন্য না, অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যও একটি নতুন জামার স্বপ্ন বুনি।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:৩৮ অপরাহ্ণ
চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভা (১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৫) নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি (২০২৫-২০২৮) ঘোষণা করা হয়েছে। সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (সর্বশেষ সংশোধন ২০১৩) ও সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ (সর্বশেষ সংশোধন ২০২০) অনুযায়ী নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন (পরিদর্শক, জেলা সমবায় কার্যালয়, চাঁদপুর) কোন পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছয় সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষণা করেন। নবনির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি- মোঃ ইকবাল আজম (প্রতিনিধি, দি চাঁদপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সহ-সভাপতি- মোঃ আফজাল হোসেন খান (প্রতিনিধি, মিলেনিয়াম বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সম্পাদক- দুলাল চন্দ্র দাস (প্রতিনিধি, বাগড়া শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- মোঃ আক্কাস ফরাজী (প্রতিনিধি, রূপসী পল্লী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- খন্দকার ফখরুল আলম (প্রতিনিধি, আশার আলো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সদস্য- মোঃ খোরশেদ আলম (প্রতিনিধি, খাজুরিয়া বাজার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ)।
জেলার বিভিন্ন সমবায় সমিতির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ও নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন এর সভাপতিত্বে নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের কৃতি সন্তান, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সমবায়ী ও বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন শেখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন জেলা সমবায় ইউনিয়ন, জেলার সমবায় সমিতি ও সমবায়ীদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব থাকলেও চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নে দীর্ঘদিন নির্বাচিত কমিটি ছিল না, যার কারণে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। আমরা বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন থেকে চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নকে কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। সমবায় বিভাগ এতে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির গঠন করে, যার ফলশ্রুতিতে আজকে আমরা একটি নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে পেরেছি। এজন্য তিনি সমবায় বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান পাশাপাশি নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানান। সভায় তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। সকলের সহযোগিতায় তা বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সভায় অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সভাপতি মুরাদ হোসেন খান, জুন হাউজিং কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর প্রতিনিধি এ ওয়াই এম জাকারিয়া, ওয়ারলেস বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি মোঃ জিয়াউদ্দিন, ইসলামীয়া সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি নাজমুল হুদা প্রমূখ।
উল্লেখ্য প্রতি ৩ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও ২০১২ সালের পর, দীর্ঘ ১৩ বছর পর এই ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হলো।

আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ
আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আগামী ২ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সম্প্রতি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, সংসদ না থাকায় এবার সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে না। অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ কারণে ২ জুন বাজেট ঘোষণার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণত আগের অর্থবছরগুলোতে বৃহস্পতিবার বাজেট দেওয়া হতো, এবার সোমবার ঘোষণা করা হবে। বাজেট ঘোষণার পর আগের রীতি অনুযায়ী অর্থ উপদেষ্টা বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।

সূত্রটি জানিয়েছে, সাধারণত প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় বড় রাখা হয়। তবে এবার বাজেট ঘাটতি কমিয়ে বাজেট ছোট কারার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

বাজেটের আকার কমানো হলেও সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিকীকরণ সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ ধরতে পারে। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। চলতি অর্থবছরেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। যদিও গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।