খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

শিশু-কৈশোরে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ২:১৮ অপরাহ্ণ
শিশু-কৈশোরে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ

শিশু থেকে কৈশোরে রূপান্তর হলো মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়, যেখানে মানসিক, শারীরিক, এবং সামাজিক পরিবর্তনের এক জটিল প্রক্রিয়া ঘটে। এটি জীবনের সেই সময়, যখন ব্যক্তি তার পরিচয়, চাহিদা, এবং সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের একটি ভিত্তি তৈরি করতে শুরু করে। কৈশোরকাল সাধারণত ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত বিস্তৃত, যা শৈশবের সরলতা থেকে প্রাপ্তবয়স্কের জটিল বাস্তবতায় প্রবেশের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।
এই রূপান্তরের সময়ে শিশুরা শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, যা তাদের ব্যক্তিত্ব, চিন্তাভাবনা, এবং সামাজিক আচরণের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনগুলো এই পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ববহ, কারণ এগুলোই ভবিষ্যতের ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা রাখে।
কৈশোরকালীন মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন বলতে বোঝায় শিশুদের মানসিক বিকাশের সেই ধাপগুলো, যেখানে তারা শৈশবের নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে স্বাধীন পরিচয় এবং চিন্তাধারার দিকে এগিয়ে যায়। এই সময়ে কিশোর-কিশোরীরা তাদের আবেগ, চিন্তা-ভাবনা, এবং আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন অনুভব করে। শিশু থেকে কৈশোরে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের প্রধান দিক-শিশুদের আবেগ সরল এবং প্রত্যক্ষ থাকে, কিন্তু কৈশোরে তা জটিল রূপ নিতে শুরু করে। কৈশোরে হরমোনের পরিবর্তন আবেগকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ফলে, তারা হঠাৎ রাগ, আনন্দ, দুঃখ বা উদ্বেগ অনুভব করতে পারে। কৈশোরে শিশুরা নিজের পরিচয় খুঁজতে শুরু করে। তারা “আমি কে?” এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চায়। এই সময়ে তারা কখনো খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে এবং ছোটখাটো বিষয়েও অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। জ্ঞানীয় পরিবর্তন হলো চিন্তাশক্তির বিকাশ।
শিশুরা সাধারণত কংক্রিট চিন্তাভাবনার ওপর নির্ভরশীল থাকে, তবে কৈশোরে তারা বিমূর্ত চিন্তা করতে শেখে। উদাহরণস্বরূপ, তারা ন্যায়-অন্যায়, নীতি, এবং আদর্শ নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করে। তারা যুক্তিসঙ্গত চিন্তা এবং সমস্যার সমাধানে সক্ষম হয়ে ওঠে। তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ সম্পূর্ণ না হওয়ার কারণে তারা অনেক সময় ঝুঁকি নিতে পছন্দ করে। শিশু থেকে কৈশোরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। কৈশোরীরা পরিবারের চেয়ে বন্ধুদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। তারা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে শুরু করে।
সমবয়সীদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া এবং তাদের মতো আচরণ করার প্রবণতা দেখা যায়। শিশুরা এই সময়ে পরিবারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে স্বাধীন হতে চায়।
এই সময়ে শিশুরা আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মান সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া শারীরিক পরিবর্তনের কারণে তারা আত্মবিশ্বাস হারাতে পারে। যেমন: উচ্চতা, শরীরের গঠন, বা ত্বকের সমস্যার কারণে আত্মসম্মান কমে যেতে পারে। নিজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা এই সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কৈশোরকালীন পরিবর্তনে প্রভাবক-পরিবার এই পরিবর্তনগুলোতে বড় ভূমিকা পালন করে। ইতিবাচক পারিবারিক পরিবেশ কিশোরের মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। সমাজের মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতি কৈশোরের চিন্তাভাবনা এবং আচরণকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। আজকের প্রযুক্তি-নির্ভর যুগে মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কৈশোরের মানসিকতায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। এ সময় থাকে মানসিক চাপ এবং হতাশা। পরিচয় সঙ্কট। ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, যেমন : নেশা, বিদ্রোহ। সমবয়সীদের চাপ।
উত্তরণের উপায় : পারিবারিক সমর্থন বৃদ্ধি। পজিটিভ রোল মডেল প্রদান। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা। সৃজনশীল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ।
শিশু থেকে কৈশোরে রূপান্তর শুধুমাত্র শারীরিক বা বাহ্যিক পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি মনস্তাত্ত্বিক, আবেগীয়, সামাজিক এবং জ্ঞানীয় দিক থেকে গভীর প্রভাব ফেলে। এই পর্যায়টি মানব জীবনের ভিত্তি গঠনের অন্যতম প্রধান ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়। কৈশোরের সঠিক বিকাশ ভবিষ্যৎ ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক অবস্থানের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
কৈশোরে শারীরিক পরিবর্তন, যেমন উচ্চতা বৃদ্ধি, যৌন বৈশিষ্ট্যের বিকাশ এবং শরীরে হরমোনের পরিবর্তন, শিশুদের আবেগ, আচরণ এবং মানসিকতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। কৈশোরে হরমোনের পরিবর্তন আবেগের অস্থিরতা এবং মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। টেস্টোস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেনের বৃদ্ধি: এটি আবেগপ্রবণতা এবং কখনো কখনো বিদ্রোহী আচরণে প্রভাব ফেলে। অল্পতেই খুশি হওয়া বা রাগান্বিত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। শরীরে আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারাতে পারে। শরীরের চেহারা বা ওজন নিয়ে অসন্তুষ্টি তাদের আত্মসম্মানকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে শারীরিক পরিবর্তন (যেমন : মাসিক) নতুন অভিজ্ঞতা এবং মানসিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
কিশোরদের মানসিক বিকাশ বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্ব রয়েছে। এরিকসন কৈশোরকালকে “পরিচয়ের সংকট” বা Identity vs. Role Confusion পর্যায় বলে চিহ্নিত করেন। এই সময়ে কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের পরিচয় খুঁজতে চায়। তারা নিজেদের লক্ষ্য এবং সমাজে অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করে। পরিচয় গঠনে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং সংকট দেখা দিতে পারে। পিয়াজে কৈশোরকে Formal Operational Stage হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে কিশোর-কিশোরীরা বিমূর্ত এবং যৌক্তিক চিন্তাভাবনা করতে শুরু করে। এই সময়ে তারা “কী হতে পারে” এই ধারণাগুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারে। নীতি এবং মূল্যবোধের বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করে। ফ্রয়েড কৈশোরকে Genital Stage হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে যৌন চেতনার বিকাশ ঘটে। এই পর্যায়ে যৌন আকর্ষণ এবং সম্পর্ক নিয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। সামাজিক সম্পর্ক এবং যোগাযোগ এই পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আবেগপ্রবণতা এবং মানসিক সংকট। কৈশোরীরা নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে কঠিন সময় পার করে। তারা কখনো খুশি, কখনো হতাশাগ্রস্ত হয়। তারা নিজেদের আত্মপরিচয় নিয়ে বিভ্রান্ত থাকে। কৈশোরে আত্মসম্মান এবং আত্মবিশ্বাস গঠনের কাজ শুরু হয়। শারীরিক গঠন এবং চেহারার প্রভাব, সমাজ এবং সমবয়সীদের প্রতিক্রিয়া তাদের আত্মসম্মান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্য বা ব্যর্থতা আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলে। সামাজিক সম্পর্ক এই সময়ে নতুন মাত্রা লাভ করে। কৈশোরীরা বন্ধুদের সঙ্গে নিজেদের অনুভূতি শেয়ার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এই সময়ে তারা ভালোবাসা এবং সম্পর্কের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করে। পরিবারের প্রভাব কমে যাওয়া: কিশোর-কিশোরীরা ধীরে ধীরে পরিবারের উপর নির্ভরতা কমিয়ে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যায়। এই সময়ে মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স পুরোপুরি বিকশিত না হওয়ার কারণে তারা ঝুঁকি নিতে বেশি পছন্দ করে। মাদকাসক্তি, ধূমপান, বা ঝুঁকিপূর্ণ খেলায় অংশগ্রহণ এই সময়ে বৃদ্ধি পেতে পারে। সামাজিক চাপ এবং বন্ধুবান্ধবের প্রভাব তাদের আচরণকে প্রভাবিত করে।
কৈশোরের সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেমন-কৈশোরে আবেগপ্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা ডিপ্রেশন এবং উদ্বেগে ভুগতে পারে। শিক্ষার চাপ, সম্পর্কের জটিলতা, এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে। “আমি কে?” এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কিশোর-কিশোরীরা হতাশায় পড়তে পারে। পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে দূরত্ব তৈরি হলে তারা একাকিত্ব অনুভব করতে পারে। বন্ধুদের মতামত অনুসরণ করার প্রবণতা তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে। কৈশোরে সঠিক দিকনির্দেশনা এবং সমর্থন তাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পরিবার ও সমাজের ভূমিকা-আবেগপ্রবণ মুহূর্তে তাদের পাশে থাকা। উন্মুক্ত আলোচনা এবং সমালোচনা না করা। ভালো অভ্যাস এবং মূল্যবোধ শেখানো। তাদের দক্ষতা এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা। পরীক্ষার চাপ বা অন্য কোনো মানসিক সমস্যায় সমাধান দেওয়া। ইতিবাচক রোল মডেল সৃষ্টি। শিক্ষামূলক এবং সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা।
শিশু থেকে কৈশোরে রূপান্তরের সময় মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন গভীর এবং বহুস্তরীয়। এটি এমন একটি পর্যায়, যা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে একজন সুস্থ, সৃজনশীল, এবং দায়িত্বশীল প্রাপ্তবয়স্ক তৈরি করতে সাহায্য করে। এই সময়ে পরিবার, শিক্ষক এবং সমাজের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৈশোরের চ্যালেঞ্জগুলোকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে সাফল্যময় এবং সমৃদ্ধ করা সম্ভব। শিশু থেকে কৈশোরে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন একটি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটি সঠিকভাবে পরিচালিত হলে একজন কিশোর সুস্থ এবং সফল প্রাপ্তবয়স্কে পরিণত হতে পারে। পরিবার, সমাজ, এবং শিক্ষা এই পর্যায়ে বড় ভূমিকা পালন করে। যত্ন এবং সমর্থনের মাধ্যমে এই সময়ের পরিবর্তনগুলোকে ইতিবাচক অভিজ্ঞতায় রূপ দেওয়া সম্ভব।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।