খুঁজুন
                               
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১২ কার্তিক, ১৪৩২

শিশু-কৈশোরে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ২:১৮ অপরাহ্ণ
শিশু-কৈশোরে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ

শিশু থেকে কৈশোরে রূপান্তর হলো মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়, যেখানে মানসিক, শারীরিক, এবং সামাজিক পরিবর্তনের এক জটিল প্রক্রিয়া ঘটে। এটি জীবনের সেই সময়, যখন ব্যক্তি তার পরিচয়, চাহিদা, এবং সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের একটি ভিত্তি তৈরি করতে শুরু করে। কৈশোরকাল সাধারণত ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত বিস্তৃত, যা শৈশবের সরলতা থেকে প্রাপ্তবয়স্কের জটিল বাস্তবতায় প্রবেশের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।
এই রূপান্তরের সময়ে শিশুরা শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, যা তাদের ব্যক্তিত্ব, চিন্তাভাবনা, এবং সামাজিক আচরণের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনগুলো এই পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ববহ, কারণ এগুলোই ভবিষ্যতের ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা রাখে।
কৈশোরকালীন মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন বলতে বোঝায় শিশুদের মানসিক বিকাশের সেই ধাপগুলো, যেখানে তারা শৈশবের নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে স্বাধীন পরিচয় এবং চিন্তাধারার দিকে এগিয়ে যায়। এই সময়ে কিশোর-কিশোরীরা তাদের আবেগ, চিন্তা-ভাবনা, এবং আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন অনুভব করে। শিশু থেকে কৈশোরে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের প্রধান দিক-শিশুদের আবেগ সরল এবং প্রত্যক্ষ থাকে, কিন্তু কৈশোরে তা জটিল রূপ নিতে শুরু করে। কৈশোরে হরমোনের পরিবর্তন আবেগকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ফলে, তারা হঠাৎ রাগ, আনন্দ, দুঃখ বা উদ্বেগ অনুভব করতে পারে। কৈশোরে শিশুরা নিজের পরিচয় খুঁজতে শুরু করে। তারা “আমি কে?” এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চায়। এই সময়ে তারা কখনো খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে এবং ছোটখাটো বিষয়েও অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। জ্ঞানীয় পরিবর্তন হলো চিন্তাশক্তির বিকাশ।
শিশুরা সাধারণত কংক্রিট চিন্তাভাবনার ওপর নির্ভরশীল থাকে, তবে কৈশোরে তারা বিমূর্ত চিন্তা করতে শেখে। উদাহরণস্বরূপ, তারা ন্যায়-অন্যায়, নীতি, এবং আদর্শ নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করে। তারা যুক্তিসঙ্গত চিন্তা এবং সমস্যার সমাধানে সক্ষম হয়ে ওঠে। তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ সম্পূর্ণ না হওয়ার কারণে তারা অনেক সময় ঝুঁকি নিতে পছন্দ করে। শিশু থেকে কৈশোরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। কৈশোরীরা পরিবারের চেয়ে বন্ধুদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। তারা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে শুরু করে।
সমবয়সীদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া এবং তাদের মতো আচরণ করার প্রবণতা দেখা যায়। শিশুরা এই সময়ে পরিবারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে স্বাধীন হতে চায়।
এই সময়ে শিশুরা আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মান সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া শারীরিক পরিবর্তনের কারণে তারা আত্মবিশ্বাস হারাতে পারে। যেমন: উচ্চতা, শরীরের গঠন, বা ত্বকের সমস্যার কারণে আত্মসম্মান কমে যেতে পারে। নিজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা এই সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কৈশোরকালীন পরিবর্তনে প্রভাবক-পরিবার এই পরিবর্তনগুলোতে বড় ভূমিকা পালন করে। ইতিবাচক পারিবারিক পরিবেশ কিশোরের মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। সমাজের মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতি কৈশোরের চিন্তাভাবনা এবং আচরণকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। আজকের প্রযুক্তি-নির্ভর যুগে মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কৈশোরের মানসিকতায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। এ সময় থাকে মানসিক চাপ এবং হতাশা। পরিচয় সঙ্কট। ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, যেমন : নেশা, বিদ্রোহ। সমবয়সীদের চাপ।
উত্তরণের উপায় : পারিবারিক সমর্থন বৃদ্ধি। পজিটিভ রোল মডেল প্রদান। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা। সৃজনশীল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ।
শিশু থেকে কৈশোরে রূপান্তর শুধুমাত্র শারীরিক বা বাহ্যিক পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি মনস্তাত্ত্বিক, আবেগীয়, সামাজিক এবং জ্ঞানীয় দিক থেকে গভীর প্রভাব ফেলে। এই পর্যায়টি মানব জীবনের ভিত্তি গঠনের অন্যতম প্রধান ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়। কৈশোরের সঠিক বিকাশ ভবিষ্যৎ ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক অবস্থানের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
কৈশোরে শারীরিক পরিবর্তন, যেমন উচ্চতা বৃদ্ধি, যৌন বৈশিষ্ট্যের বিকাশ এবং শরীরে হরমোনের পরিবর্তন, শিশুদের আবেগ, আচরণ এবং মানসিকতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। কৈশোরে হরমোনের পরিবর্তন আবেগের অস্থিরতা এবং মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। টেস্টোস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেনের বৃদ্ধি: এটি আবেগপ্রবণতা এবং কখনো কখনো বিদ্রোহী আচরণে প্রভাব ফেলে। অল্পতেই খুশি হওয়া বা রাগান্বিত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। শরীরে আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারাতে পারে। শরীরের চেহারা বা ওজন নিয়ে অসন্তুষ্টি তাদের আত্মসম্মানকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে শারীরিক পরিবর্তন (যেমন : মাসিক) নতুন অভিজ্ঞতা এবং মানসিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
কিশোরদের মানসিক বিকাশ বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্ব রয়েছে। এরিকসন কৈশোরকালকে “পরিচয়ের সংকট” বা Identity vs. Role Confusion পর্যায় বলে চিহ্নিত করেন। এই সময়ে কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের পরিচয় খুঁজতে চায়। তারা নিজেদের লক্ষ্য এবং সমাজে অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করে। পরিচয় গঠনে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং সংকট দেখা দিতে পারে। পিয়াজে কৈশোরকে Formal Operational Stage হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে কিশোর-কিশোরীরা বিমূর্ত এবং যৌক্তিক চিন্তাভাবনা করতে শুরু করে। এই সময়ে তারা “কী হতে পারে” এই ধারণাগুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারে। নীতি এবং মূল্যবোধের বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করে। ফ্রয়েড কৈশোরকে Genital Stage হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে যৌন চেতনার বিকাশ ঘটে। এই পর্যায়ে যৌন আকর্ষণ এবং সম্পর্ক নিয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। সামাজিক সম্পর্ক এবং যোগাযোগ এই পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আবেগপ্রবণতা এবং মানসিক সংকট। কৈশোরীরা নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে কঠিন সময় পার করে। তারা কখনো খুশি, কখনো হতাশাগ্রস্ত হয়। তারা নিজেদের আত্মপরিচয় নিয়ে বিভ্রান্ত থাকে। কৈশোরে আত্মসম্মান এবং আত্মবিশ্বাস গঠনের কাজ শুরু হয়। শারীরিক গঠন এবং চেহারার প্রভাব, সমাজ এবং সমবয়সীদের প্রতিক্রিয়া তাদের আত্মসম্মান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্য বা ব্যর্থতা আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলে। সামাজিক সম্পর্ক এই সময়ে নতুন মাত্রা লাভ করে। কৈশোরীরা বন্ধুদের সঙ্গে নিজেদের অনুভূতি শেয়ার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এই সময়ে তারা ভালোবাসা এবং সম্পর্কের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করে। পরিবারের প্রভাব কমে যাওয়া: কিশোর-কিশোরীরা ধীরে ধীরে পরিবারের উপর নির্ভরতা কমিয়ে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যায়। এই সময়ে মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স পুরোপুরি বিকশিত না হওয়ার কারণে তারা ঝুঁকি নিতে বেশি পছন্দ করে। মাদকাসক্তি, ধূমপান, বা ঝুঁকিপূর্ণ খেলায় অংশগ্রহণ এই সময়ে বৃদ্ধি পেতে পারে। সামাজিক চাপ এবং বন্ধুবান্ধবের প্রভাব তাদের আচরণকে প্রভাবিত করে।
কৈশোরের সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেমন-কৈশোরে আবেগপ্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা ডিপ্রেশন এবং উদ্বেগে ভুগতে পারে। শিক্ষার চাপ, সম্পর্কের জটিলতা, এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে। “আমি কে?” এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কিশোর-কিশোরীরা হতাশায় পড়তে পারে। পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে দূরত্ব তৈরি হলে তারা একাকিত্ব অনুভব করতে পারে। বন্ধুদের মতামত অনুসরণ করার প্রবণতা তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে। কৈশোরে সঠিক দিকনির্দেশনা এবং সমর্থন তাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পরিবার ও সমাজের ভূমিকা-আবেগপ্রবণ মুহূর্তে তাদের পাশে থাকা। উন্মুক্ত আলোচনা এবং সমালোচনা না করা। ভালো অভ্যাস এবং মূল্যবোধ শেখানো। তাদের দক্ষতা এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা। পরীক্ষার চাপ বা অন্য কোনো মানসিক সমস্যায় সমাধান দেওয়া। ইতিবাচক রোল মডেল সৃষ্টি। শিক্ষামূলক এবং সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা।
শিশু থেকে কৈশোরে রূপান্তরের সময় মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন গভীর এবং বহুস্তরীয়। এটি এমন একটি পর্যায়, যা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে একজন সুস্থ, সৃজনশীল, এবং দায়িত্বশীল প্রাপ্তবয়স্ক তৈরি করতে সাহায্য করে। এই সময়ে পরিবার, শিক্ষক এবং সমাজের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৈশোরের চ্যালেঞ্জগুলোকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে সাফল্যময় এবং সমৃদ্ধ করা সম্ভব। শিশু থেকে কৈশোরে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন একটি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটি সঠিকভাবে পরিচালিত হলে একজন কিশোর সুস্থ এবং সফল প্রাপ্তবয়স্কে পরিণত হতে পারে। পরিবার, সমাজ, এবং শিক্ষা এই পর্যায়ে বড় ভূমিকা পালন করে। যত্ন এবং সমর্থনের মাধ্যমে এই সময়ের পরিবর্তনগুলোকে ইতিবাচক অভিজ্ঞতায় রূপ দেওয়া সম্ভব।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

উত্তাল সাগর, শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ
উত্তাল সাগর, শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শক্তি সঞ্চয় করছে। এটি ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৮ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সোমবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা অথবা রাত নাগাদ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর (পুন.) ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্য কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।

হাঁটা বন্ধ করবেন না, কেনো হাঁটবেন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ
হাঁটা বন্ধ করবেন না, কেনো হাঁটবেন

হাঁটা বন্ধ করবেন না যেন, মস্তিষ্ক নয়, ডিমেনশিয়া শুরু হয় আপনার পা থেকে! বিশ্বজুড়ে বয়স্ক মানুষের অক্ষমতা ও নির্ভরশীলতার প্রধান কারণ হিসেবে ডিমেনশিয়া এখন এক ভয়াবহ বাস্তবতা। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন, এবং প্রতিবছর নতুন করে আরও প্রায় ১ কোটি মানুষ এতে ভোগেন। অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, মস্তিষ্ক সচল রাখাই ডিমেনশিয়া প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। কিন্তু ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) প্রশিক্ষিত স্নায়ুশল্য বিশেষজ্ঞ ডা. অরুণ এল. নাইক জানালেন চমকপ্রদ তথ্য—ডিমেনশিয়ার সূত্রপাত নাকি মস্তিষ্কে নয়, পা থেকেই!
ডিমেনশিয়া কী?
ডিমেনশিয়া কোনো একক রোগ নয়; এটি স্মৃতি, চিন্তাশক্তি ও দৈনন্দিন কাজের সক্ষমতাকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করে এমন একাধিক স্নায়ুরোগের সামষ্টিক নাম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও জটিল হয়ে ওঠে এবং জীবনের মান নষ্ট করে দেয়। তবে সময়মতো নির্ণয়, যত্নশীল পরিচর্যা, জীবনযাপনে পরিবর্তন ও চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর অবস্থা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডিমেনশিয়া শুরু হয় পা থেকে
ডা. নাইক এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আপনি কি জানেন, ডিমেনশিয়া আসলে শুরু হয় আপনার পা থেকে? শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা পায়ের পেশিকে দুর্বল করে, যার ফলে স্যারকোপেনিয়া বা পেশি ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে। এখানেই শুরু হয় বিপদ। গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্বল পায়ের কারণে জ্ঞানগত ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায় এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, শরীরের সক্রিয় পেশি এমন রাসায়নিক উৎপাদন করে যা মস্তিষ্ককে সচল রাখে। এই রাসায়নিকগুলোর নাম ব্রেইন-ডিরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF), যা মস্তিষ্কের স্মৃতিনির্ভর অংশ হিপোক্যাম্পাসে সংযোগ বৃদ্ধি করে। শক্তিশালী পা শুধু ভারসাম্য বজায় রাখে না, বয়স বাড়লেও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমায়। “৬৫ বছরের পর পড়ে যাওয়াই সবচেয়ে বিপজ্জনক,” বলেন ডা. নাইক।
তিনি ২০২০ সালের Neurology সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণার উদাহরণ দেন, যেখানে দেখা গেছে, যাদের হাঁটার গতি কম, তাদের মস্তিষ্কের আকারও ছোট এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকি বেশি। “হাঁটা শুধু শরীরচর্চা নয়, এটি পুরো মস্তিষ্কের এক অনুশীলন,” যোগ করেন তিনি।
কীভাবে হাঁটা মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখে
হাঁটা এমন এক সহজ ব্যায়াম যা শরীর ও মস্তিষ্ক দুটিকেই সক্রিয় রাখে। ডা. নাইক বলেন, “প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্ত থাকে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব, সেরিবেলাম, স্পাইনাল কর্ড ও স্নায়ু প্রতিক্রিয়ার সমন্বয়।” হাঁটা রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ সরবরাহ করে এবং টক্সিন দূর করে। তিনি আরও বলেন, “হাঁটার ধরনে বা ভারসাম্যে পরিবর্তন দেখা গেলে সেটি মস্তিষ্কের আগাম সতর্ক সংকেত। এটি প্রায়ই স্মৃতি সমস্যার বছরখানেক আগেই দেখা দেয়।” হাঁটা নিউরোপ্লাস্টিসিটির এক জীবন্ত উদাহরণও বটে। “হাঁটার সময় শরীরে BDNF সক্রিয় হয়, যা নিউরনগুলোর সংযোগ শক্তিশালী করে,” বলেন ডা. নাইক।
কীভাবে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করবেন ডা. নাইক কয়েকটি সহজ অভ্যাসের পরামর্শ দিয়েছেন, যা নিয়মিত চর্চা করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বজায় থাকে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন। ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম যেমন এক পায়ে দাঁড়ানো বা সরলরেখায় হাঁটার অভ্যাস করুন। হাঁটার সময় কথা বলা বা হালকা মানসিক কাজ করুন—এটি মস্তিষ্কের সমন্বয় ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত পায়ের পেশির ব্যায়াম করুন, এটি মস্তিষ্কের জন্য একপ্রকার ‘বিমা’।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা পরিহার করুন; প্রতি ঘণ্টায় কিছুটা নড়াচড়া করুন। তিনি বলেন, “যখন আপনার পা ধীরে ধীরে কাজ হারায়, তখন মস্তিষ্কও তার পথ অনুসরণ করে। আপনার হাঁটার গতি বজায় রাখুন, তাহলেই সুরক্ষিত থাকবে মস্তিষ্ক।”
ডা. নাইক আরও পরামর্শ দেন, পেশির গঠন রক্ষায় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। তার মতে, কখনোই দেরি হয়ে যায় না। “গবেষণায় দেখা গেছে, ষাট বছর বয়সেও হাঁটা ও ব্যায়াম শুরু করলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। মনে রাখবেন, শক্ত পা মানেই তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক। স্যারকোপেনিয়া মাথা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই সচেতন হোন—চল্লিশের কোঠা থেকেই শুরু করুন।”
সর্বোপরি, সক্রিয় থাকা শুধু চলাফেরার বিষয় নয়; এটি মস্তিষ্ককে তরুণ রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম ও সুষম খাদ্য—এই তিন অভ্যাসই হতে পারে বার্ধক্যের ডিমেনশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ।

বন্ধ হচ্ছে সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ
বন্ধ হচ্ছে সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। সোমবার (২৭ অক্টোবর) এ-সংক্রান্ত এক পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ। পরিপত্রে বলা হয়েছে, কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চাইতে পারবে না। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, চলমান সংকোচনমূলক নীতির প্রেক্ষাপটে গত কয়েক বছরের মতো সংশোধিত বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অব্যাহত রাখতে হবে। এর আওতায় বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি কেনাসহ বেশ কিছু ব্যয় বন্ধ থাকবে। এ নীতি অনুসরণ করে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন আগামী ৯ নভেম্বরের মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই মূল বাজেটে বরাদ্দের মধ্যেই থাকতে হবে। কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। তবে সরকারের অগ্রাধিকার কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রয়োজনে মূল বাজেটে বরাদ্দের ব্যয়সীমার মধ্যে থেকে একই ধরনের বিভিন্ন কাজে বরাদ্দ কমানো বা বাড়ানো যাবে। কিন্তু উন্নয়ন ব্যয়ের অর্থ অব্যয়িত থাকবে বলে অনুমিত হলে ওই অর্থ কোনোক্রমেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।
এতে আরও বলা হয়, সংশোধীত বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আওতায় সরকারি খরচে সব ধরনের বৈদেশিক ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিদেশ ভ্রমণ করা হবে। তা ছাড়া কেনা যাবে না গাড়ি, জাহাজ ও বিমান। তবে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে পরিচালন বাজেটের আওতায় ১০ বছরের পুরোনো গাড়ির প্রতিস্থাপন হিসেবে নতুন গাড়ি কেনা যাবে। এমনকি পরিচালন বাজেটে আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচও বন্ধ রাখতে হবে। তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় শর্তসাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে। আরও কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় স্থগিত রাখা হয়েছে আবার গুরুত্ব বিবেচনায় এসব ক্ষেত্রে ব্যয়ে কিছুটা ছাড়ও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখাসহ ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে সরকারি ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই কোনো খাতে ব্যয় সাশ্রয়ের সুযোগ রয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে সংশোধিত বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। সাধারণত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিশেষ করে মার্চে সরকার জাতীয় বাজেট সংশোধন করে। তবে এবার ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় আগেভাগে বাজেট সংশোধন করা হচ্ছে।