খুঁজুন
                               
বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ৬ কার্তিক, ১৪৩২

ভোক্তা অধিকার : আমরা কতটা সচেতন?

মায়েদা হোসেন সাফি
প্রকাশিত: সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৩৩ অপরাহ্ণ
ভোক্তা অধিকার : আমরা কতটা সচেতন?

আমরা সবাই জীবনের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত পণ্য ও সেবা গ্রহণ করি। কেউ বাজার থেকে খাদ্যসামগ্রী কিনছেন, কেউ আবার কিস্তিতে ইলেকট্রনিক পণ্য, আবার কেউ চিকিৎসা বা শিক্ষাসেবাও গ্রহণ করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব পণ্য ও সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে আমরা কি জানি আমাদের কী কী অধিকার রয়েছে? আমরা কি জানি, প্রতারণার শিকার হলে কোথায় অভিযোগ করতে হয়, অথবা আমাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে কী ধরনের আইনি সহায়তা পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে “ভোক্তা” বলতে সেই ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছাড়া, শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ব্যবহারের জন্য কোনো পণ্য ক্রয় বা সেবা গ্রহণ করেন। অর্থাৎ, আপনি যদি নিজের জন্য খাদ্য, জামাকাপড়, ওষুধ বা যেকোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে থাকেন এবং তা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে না হয়ে থাকে, তাহলে আপনি আইনত একজন “ভোক্তা”। এমনকি কেউ আত্মকর্মসংস্থান বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে ছোট পরিসরে কোনো পণ্য ব্যবহার করলেও তিনি ভোক্তার সংজ্ঞায় পড়তে পারেন।ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে “ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন” প্রণয়ন করে। এই আইনের অধীনে কিছু কার্যক্রম অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়, যেমন—ভেজাল বা মানহীন পণ্য সরবরাহ, মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পণ্য বা সেবা না দেওয়া, কম ওজনে পণ্য সরবরাহ, মেয়াদোত্তীর্ণ বা ক্ষতিকর দ্রব্য বিক্রি ইত্যাদি। এমনকি পণ্যের গায়ে সঠিক মূল্য না লেখা বা সঠিক তথ্য গোপন করাও ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে।স্বভাবত বাজার নিয়ন্ত্রণকারী বা বাজারে ব্যবসা করা ব্যক্তিরা অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকেন। বিপরীতে ভোক্তারা থাকেন তুলনামূলকভাবে অসহায় অবস্থায়। অন্যদিকে, ব্যবসায়িরা সংগঠিত হলেও ভোক্তারা সাধারণত অসংগঠিত থাকেন।কোনো প্রতারণা বা অসততাকে, যা মানুষের অধিকার খর্ব করে, তার ব্যাপকতা নিয়ে চলতে দেওয়া যায় না। ভোক্তা অধিকারকে মানবাধিকারের ধারণা থেকে আলাদা করা যায় না। এটি সামাজিক ন্যায়বিচারেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।আমেরিকার ভোক্তা আন্দোলনের পুরোধা রালফ নাদের-এর মতে, “ভোক্তা হচ্ছে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি”।যদি কোনো ভোক্তা এসব অনিয়মের শিকার হন, তাহলে তিনি সরাসরি অভিযোগ করতে পারেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। অভিযোগ করার জন্য রয়েছে কয়েকটি সহজ উপায়। প্রথমত, িি.িফহপৎঢ়.মড়া.নফ ওয়েবসাইটে গিয়ে সরাসরি অভিযোগ দাখিল করা যায়। দ্বিতীয়ত, মোবাইল ফোন থেকে ১৬১২১ নম্বরে কল করে অভিযোগ জানানো সম্ভব। তৃতীয়ত, এড়ড়মষব চষধু ঝঃড়ৎব থেকে “ঈঈগঝ” নামে একটি মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করে সেখান থেকেও অভিযোগ করা যায়।অভিযোগ করার আগে ভোক্তাকে প্রথমে ওয়েবসাইটে বা অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর অভিযোগের বিস্তারিত তথ্য লিখে, প্রয়োজনে রশিদ, ছবি বা ভিডিওসহ প্রমাণ সংযুক্ত করে তা দাখিল করা যায়। প্রতিটি অভিযোগের জন্য নির্ধারিত ট্র্যাকিং নম্বর দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে অভিযোগের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা যায়। আইন অনুযায়ী, অভিযোগ নিষ্পত্তির সর্বোচ্চ সময়সীমা ৬০ কার্যদিবস। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভোক্তা পণ্যের মূল দামের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।
দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ত্রয়োদশ অধ্যায়ে “ওজন ও মাপকাঠি সংক্রান্ত অপরাধ” নিয়ে ধারা ২৬৪ থেকে ২৬৭ পর্যন্ত বিধান রয়েছে। এ অধ্যায় ভোক্তাদের সঠিক পরিমাণে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা যন্ত্র বা মাপকাঠি ব্যবহারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রণীত।ধারা ২৬৪ অনুসারে, যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে ওজন করার জন্য মিথ্যা যন্ত্র প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহার করে, সে ব্যক্তি এক বৎসর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ অপরাধ প্রমাণের জন্য প্রমাণ করতে হবে যে— (ক) অভিযুক্ত ব্যক্তি অপ্রকৃত যন্ত্র ব্যবহার করেছেন, (খ) তা ওজন মাপার যন্ত্র ছিল, (গ) অভিযুক্ত জানতেন যে যন্ত্রটি মিথ্যা, এবং (ঘ) তিনি তা প্রতারণামূলকভাবে দখলে রেখে ব্যবহার করেছেন। এই অপরাধ আমলযোগ্য নয়, সমনযোগ্য, জামিনযোগ্য, আপসযোগ্য নয় এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচারযোগ্য।ধারা ২৬৫-এ বলা হয়েছে, যদি কেউ প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা ওজন, দৈর্ঘ্য বা ধারণক্ষমতা মাপ ব্যবহার করে, অথবা কোনো ওজন বা মাপকাঠিকে অন্য ধরনের ওজন বা মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করে, তবে তিনি একইভাবে এক বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।ধারা ২৬৬ অনুযায়ী, যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে মিথ্যা ওজন বা মাপের যন্ত্র, বাটখারা বা দৈর্ঘ্য/পরিমাণ মাপার মাপকাঠি নিজের দখলে রাখেন, যাতে তা প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, তিনি এক বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।ধারা ২৬৭-এ বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে মিথ্যা বাটখারা, মাপকাঠি বা ওজন করার যন্ত্র তৈরি, বিক্রয় বা লেনদেন করেন, যা প্রকৃত হিসাবে ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে, তিনি একইভাবে এক বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।এসব বিধান ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এগুলো বাজারে সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতারণা প্রতিরোধ করে এবং ন্যায়সঙ্গত বাণিজ্যিক পরিবেশ গড়ে তোলে।
এই আইন সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শুধুমাত্র প্রতারিত ভোক্তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এর মাধ্যমে পুরো বাজার ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল রাখা সম্ভব হয়। ব্যবসায়ীরা জানেন যে, ভোক্তারা প্রয়োজনে অভিযোগ করতে পারবেন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এই সচেতনতা ও আইনি চাপের কারণে তারা মানসম্মত পণ্য ও সেবা সরবরাহ করতে বাধ্য হন। এর ফলে ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য বাজার থেকে ধীরে ধীরে কমে আসে।একই সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি হয়, যেখানে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হলে মান বজায় রাখা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। এর প্রভাব পড়ে ভোক্তার আস্থায়—মানসম্মত সেবা পেয়ে ভোক্তারা বাজার ব্যবস্থার প্রতি আরও বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন, যা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে বুঝতে শেখেন যে প্রতারণা মেনে নেওয়া কোনো সমাধান নয়; বরং আইনগত প্রতিরোধই হলো সঠিক পথ।মানুষকে ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য প্রথমেই শিক্ষাক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে ভোক্তা অধিকার এবং প্রাসঙ্গিক আইন অন্তর্ভুক্ত করা হলে শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই নিজের অধিকার ও করণীয় সম্পর্কে অবগত হবে। শিক্ষার পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা, ফেসবুক এবং ইউটিউবের মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক তথ্য মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।এছাড়া কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনাও কার্যকর। গ্রাম, বাজার কিংবা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সেমিনার, কর্মশালা এবং সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সরাসরি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য দেওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে পণ্য বিক্রির স্থান, দোকান ও সুপারশপে ভোক্তার অধিকার এবং অভিযোগ জানানোর ঠিকানা সম্বলিত প্রচারপত্র ও পোস্টার টাঙালে ক্রেতারা সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন। এভাবে বহুমুখী উদ্যোগের মাধ্যমে ধীরে ধীরে একটি সচেতন ভোক্তা সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।বাংলাদেশে ভোক্তারা নানা উপায়ে প্রতারিত হচ্ছেন, যার বাস্তব চিত্র আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন, ঢাকার একাধিক মিষ্টির দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ দুধ ব্যবহার করে মিষ্টি তৈরির ঘটনা ধরা পড়ে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারত। অভিযানে এসব দোকানকে জরিমানা করা হয় এবং ভোক্তারা তাৎক্ষণিক প্রতিকার পান। একইভাবে এক ভোক্তা অভিযোগ করেন, তিনি ৫০০ গ্রাম গুঁড়ো দুধ কিনলেও তাতে ওজন ছিল মাত্র ৪৮০ গ্রাম; অভিযোগের ভিত্তিতে দোকানদারকে জরিমানা করা হয়।এছাড়া ভুল তথ্যযুক্ত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও ভোক্তারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। একটি প্রসাধনী কোম্পানি বিজ্ঞাপনে দাবি করেছিল যে তাদের ক্রিমে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক নেই, কিন্তু পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় এতে ত্বকের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। ভোক্তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা এবং পণ্য প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। গ্রামীণ অঞ্চলেও প্রতারণার শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, এক ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়ে, পরে ওষুধ জব্দ করে দোকানকে জরিমানা করা হয়। এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে ভোক্তাদের সচেতনতা ও আইন প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতারণা রোধ সম্ভব।বর্তমানে অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটা কর্মব্যস্ত মানুষের জন্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে বাজারে গিয়ে কেনাকাটার জন্য আলাদা সময় দেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। এতে সময় ও শ্রম—দুটোই বাঁচছে। তবে কিছু অনলাইন পেজ ও দোকান এই সুবিধাভোগী মানসিকতার সুযোগ নিচ্ছে। তারা ক্রেতাদের প্রতিশ্রুত পণ্য না দিয়ে ভেজাল, নষ্ট, নকল বা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য সরবরাহ করছে, যা ভোক্তাদের অধিকারকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই আমাদের উচিত এই ধরনের প্রতারক অনলাইন পেজ ও দোকানের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়া। আমাদের সক্রিয় পদক্ষেপই পারে আমাদের নিজেদের এবং আমাদের আশেপাশের মানুষের অধিকারকে সুরক্ষিত রাখতে।ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো আজকের সময়ের দাবি। অনেকেই এখনও জানেন না তাদের অধিকার কী, কিংবা কোথায় গেলে সঠিক প্রতিকার মিলবে। ফলে ব্যবসায়ী বা সেবা প্রদানকারীরা অনেক সময় ভোক্তাদের অধিকার লঙ্ঘন করে পার পেয়ে যান। সচেতনতা বাড়াতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভোক্তা অধিকার বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা জোরদার করা দরকার।
পরিশেষে বলা যায়, একজন ভোক্তা শুধু একজন ক্রেতা নয়, বরং দেশের বাজার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একজন সচেতন ভোক্তা যেমন নিজের অধিকার রক্ষা করতে সক্ষম, তেমনি সে অন্যদেরও সচেতন করতে পারেন। তাই পণ্য বা সেবা গ্রহণে প্রতারিত হলে চুপ না থেকে, আইনের আশ্রয় নেওয়া জরুরি। কারণ, শক্তিশালী ভোক্তা সমাজই পারে একটি ন্যায্য ও সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে।আসুন, আমি, আপনি, আমরা সচেতন হই। আমরা সচেতন হলে এই সমাজ, মানুষ সচেতন হবে। দুর্নীতি বন্ধ হবে, স্বচ্ছতা আসবে, জবাবদিহিতা বাড়বে। শুধুমাত্র একজন ভোক্তা হিসেবে নয়, সমাজের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের অধিকার যেমন আছে, তেমনি অন্য কারো অধিকার রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব। আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করি। সমাজের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সাধারণ জনগণের অধিকার লঙ্ঘন করে লাভবান হতে না পারে এবং যেন তারা সিন্ডিকেট করে পেরে উঠতে না পারে, তাই আমরা সবাই যেন সচেতন থাকি।

লেখক পরিচিতি : মাহেদা হোসেন সাফি, এলএলবি (অনার্স, চতুর্থ সেমিস্টার), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫, ১:০৮ অপরাহ্ণ
জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জুবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে পুলিশ। সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।
রোববার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর আরমানিটোলায় টিউশনিতে গিয়ে খুন হন পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ও জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জুবায়েদ হোসেন। পুলিশ জানায়, রোববার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে আরমানিটোলার পানির পাম্প গলির ‘রওশন ভিলা’ নামের বাড়ির সিঁড়ি থেকে জুবায়েদের রক্তমাখা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় সিসিটিভি ফুটেজে দুজন তরুণকে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে, তবে তাদের মুখ স্পষ্ট নয়। গত এক বছর ধরে ওই বাড়িতেই বর্ষাকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান পড়াতেন জুবায়েদ। ঘটনার পর বর্ষাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়।
বংশাল থানা সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত ছাত্রী ও সন্দেহভাজন মাহির রহমানসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। নিহত জুবায়েদ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি। ওই ছাত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ ৯ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল আটক মাহির রহমানের। সম্প্রতি সম্পর্কের অবসান ঘটান ওই ছাত্রী, যা নিয়েই শুরু হয় টানাপোড়েন।
রোববার বিকেলে ওই ছাত্রীর বাসায় টিউশনে যাওয়ার পথে জুবায়েদের সঙ্গে দেখা হয় মাহিরের। এসময় দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কিছুক্ষণ পরেই জুবায়েদ ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এদিকে, ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার দুপুরে জুবায়েদের প্রথম জানাজা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

হুন্ডি মাফিয়া চক্রের ৯৬ অ্যাকাউন্টে ৬০০ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫, ১:০৫ অপরাহ্ণ
হুন্ডি মাফিয়া চক্রের ৯৬ অ্যাকাউন্টে ৬০০ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেন

একটি হুন্ডি মাফিয়া চক্রের দুই শতাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ নানা অপরাধের তথ্য পেয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই তথ্য জানিয়ে সিআইডি সূত্র বলছে, তারা হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের পাশাপাশি স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত।
প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সিআইডি বলছে, এই চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাঁরা দেশ থেকে স্বর্ণ চোরাচালানসহ অবৈধভাবে দেশ থেকে অর্থপাচারে জড়িত। তাঁদের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬০৮ কোটি টাকার সন্দেহজনক অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৯৬ বলে সিআইডি জানিয়েছে।
সিআইডি বলছে, হুন্ডি চক্রের হোতা মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাসের অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে ৫৮২ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর সহযোগী গোলাম সারওয়ার আজাদ ও তরিকুল ইসলাম রিপন ফকিরের অ্যাকাউন্টে মিলেছে আরো ১০০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য। তাঁদের গ্রেপ্তারে এরই মধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে।
চক্রের সদস্যরা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মার্কিন মুলুকেও সক্রিয়। এর মধ্যে তাঁরা ফাঁদে ফেলে এক মার্কিন নাগরিকের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। তাঁর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে এই চক্রের সদস্যদের। এই চক্রের সদস্যরা স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এঁরা হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেন করে থাকেন।
সিআইডি সূত্র বলছে, সম্প্রতি এই অপরাধীরা ডেবোলা জন্সটোন রামলো ডেবি নামের একজন মার্কিন নাগরিককে কৌশলে তাঁদের ফাঁদে ফেলেন। তাঁর কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকার বেশি (দুই কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার ৩৫১.৭২ টাকা) আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ পেয়েছে সিআইডি। মার্কিন শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা এমন অভিযোগ পেয়ে তদন্তে সিআইডির সহযোগিতা চেয়েছে।
সিআইডির অনুসন্ধান অনুযায়ী, দেশে বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে যে পরিমাণ অর্থ পাচার করা হচ্ছে, সম্প্রতি এর চেয়ে বেশি পাচার করা হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। এভাবে প্রতিবছর ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়।

সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, হুন্ডি মানে অনেকের কাছে শুধু রেমিট্যান্স বৈধ চ্যানেলে না পাঠিয়ে অবৈধ কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠানো। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে হুন্ডির ব্যাপকতা অনেক বেশি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডি সূত্র বলছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের মাধ্যমে একজন মার্কিন নাগরিক প্রতারিত হন। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা অভিযোগ পেয়ে এই নিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সহযোগিতা চেয়ে যোগাযোগ করে।
সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে আসে, এই হুন্ডি চক্র নানা ছলচাতুরীর মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে থাকা অভিভাবকদের সঙ্গে তারা একই ধরনের প্রতারণা করে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়।
এই সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দীর্ঘদিন ধরে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন করে আসছে। অনুসন্ধানে উঠে আসা এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আইনক্স ফ্যাশন, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ, জামান এন্টারপ্রাইজ ও নোহা এন্টারপ্রাইজ। এর মধ্যে আইনক্স ফ্যাশনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।
মার্কিন নাগরিকের প্রতারিত হওয়ার অভিযোগটির অনুসন্ধানকালে আরো উঠে আসে, চক্রের সদস্যরা স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত। তাঁরা ঢাকার তাঁতীবাজারসহ বিভিন্ন দোকান থেকে ভাঙ্গারি স্বর্ণ সংগ্রহ করে তা গলিয়ে পাকা সোনার বার আকারে রূপান্তরিত করে দীর্ঘদিন ধরে পাচার করে আসছেন। এসব পাচার করা সোনার বার মূলত সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করা হয় বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে।
সুইজারল্যান্ডের সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশিদের সুইস ব্যাংকে রাখা টাকার পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালে কিছুটা কমে পাঁচ হাজার ৩৪৭ কোটি হয়। কিন্তু ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় আট হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।

খাদ্য অধিকার আন্দোলন চাঁদপুর জেলা শাখার গণজমায়েত, লিফলেট বিতরণ, আলোচনাসভা ও স্মারকলিপি প্রদান

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫, ২:২২ অপরাহ্ণ
খাদ্য অধিকার আন্দোলন চাঁদপুর জেলা শাখার গণজমায়েত, লিফলেট বিতরণ, আলোচনাসভা ও স্মারকলিপি প্রদান

‘সবার জন্য খাদ্য চাই, খাদ্য অধিকার আইন বাস্তবায়ন, সামাজিক সুরক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানো ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবিতে জনসচেতনতায় লিফলেট বিতরণ, গণজমায়েত, আলোচনা সভা ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। রোববার (১৯ অক্টোবর ২০২৫) খাদ্য অধিকার আন্দোলন, চাঁদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে কর্মসূচি পালন করা হয়।
নবরূপ মানবিক উন্নয়ন সংস্থার প্রধান নির্বাহী পিএম বিল্লাল হোসাইনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন খাদ্য অধিকার আন্দোলন চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ খোকন, ব্রাক রিজিওনাল ম্যানেজার মো. সেলিম মোল্লা, আরসিডিএস নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ সাদেক সফিউল্লাহ, স্কলার ওয়েলফেয়ারের পরিচালক বিএম হাসান সাংবাদিক ও লেখক রোটা. উজ্জ্বল হোসাইন, নারী নেত্রী নুরজাহান আক্তার, শাহরাস্তি পরিবার উন্নয়নের আব্দুল মান্নান বক্তব্য প্রদান করেন। আলোচনা সভা শেষে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন নিকট নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনের বিভিন্ন দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।