খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক অপতথ্যের গতিপ্রকৃতি

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক অপতথ্যের গতিপ্রকৃতি

গণমাধ্যম আজকের পৃথিবীতে দ্রুততম তথ্য-প্রবাহ নিশ্চিত করছে, কিন্তু একই সঙ্গে অপতথ্য (misinformation) ছড়ানোর পথও প্রসারিত হয়েছে। বাংলাদেশে সামাজিক ও প্রচারমাধ্যমে অপতথ্য রপ্তান্ত্রিক গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি, উত্তেজনা ও সামাজিক অশান্তি তৈরি করছে। এই প্রবন্ধে আমরা সাম্প্রতিক বছরগুলোর—বিশেষ করে ২০২৪-২৫-এর প্রথমার্ধের বাংলাদেশের গণমাধ্যমে অপতথ্যের প্রবণতা, এর কারণ, পরিণতি ও মোকাবেলার কৌশল বিশ্লেষণ করবো।

অপতথ্যের বিস্তার ও পরিধি : অপতথ্য (Disinformation) হলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া যার উদ্দেশ্য হলো জনমতকে প্রভাবিত করা, বিভ্রান্তি তৈরি করা কিংবা কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। এটি সাধারণত ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়ানো হয়, যা মিথ্যাচার এবং ভুল তথ্যের চেয়েও অধিকতর বিপজ্জনক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, এক্স (টুইটার)-এর মতো মাধ্যমে অপতথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অ্যালগরিদম ভিত্তিক কনটেন্ট প্রচারে ভাইরাল হবার সুযোগে তা আরও ত্বরান্বিত হয়। গণমাধ্যমে কিছু অনলাইন পোর্টাল, ইউটিউব চ্যানেল বা ভূয়া সংবাদমাধ্যম নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক স্বার্থে অপতথ্য প্রচার করে। বট ও ফেক অ্যাকাউন্টের মাধ্যম প্রযুক্তিনির্ভর অপতথ্য ছড়ানোর একটি প্রধান উপায় হলো স্বয়ংক্রিয় বট এবং ভুয়া প্রোফাইল। এগুলোর মাধ্যমে একটি মিথ্যা বার্তা সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক ও নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রোপাগান্ডা-নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলসমূহ প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষকে দুর্বল করতে মিথ্যা খবর বা তথ্যের বিকৃতি ঘটায়। কোনো একটি সম্প্রদায়কে টার্গেট করে অপতথ্য ছড়ানো হয় যাতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। বিরোধী দল বা সরকারের বিরুদ্ধে গুজব রটানো, রাজনৈতিক চরিত্র হনন ইত্যাদির মাধ্যমে অপতথ্য রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে কোভিড-১৯-এর সময়কালজুড়ে ভ্যাকসিন নিয়ে অপতথ্য মারাত্মক প্রভাব ফেলে, যার ফলে অনেকেই চিকিৎসা থেকে দূরে থাকে। ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পণ্যের দাম বাড়ানো, স্টক মার্কেটে ধস নামানো বা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করা হয়। ইতিহাস বিকৃতি, শিক্ষাবিষয়ক মিথ্যা তথ্য বা ভুল কন্টেন্ট শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়। ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্র হনন, কিংবা সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত অপতথ্য ব্যবহৃত হয়।
অপতথ্যের বিস্তার শুধু ইন্টারনেটেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর পরিধি সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে শুরু করে ব্যক্তিজীবন পর্যন্ত বিস্তৃত। সচেতনতা, তথ্য যাচাই, ডিজিটাল লিটারেসি ও নীতিগত সাংবাদিকতা এই অপতথ্য মোকাবেলার কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে।

২০২৫-এর প্রথম তিন মাসে Rumor Scanner fact-checking সংস্থা ৮৩৭টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৮% বৃদ্ধি নির্দেশ করে । ২০২৪ সালের চতুর্মাসের (অক্টোবর–ডিসেম্বর) তুলনায় ২০২৫-এর প্রথম প্রান্তিকে অপতথ্য ২১% বেড়েছে । শুধুমাত্র এপ্রিল ২০২৫-এ Rumor Scanner ২৯৬টি নতুন অপতথ্য নিশ্চিত করেছে । Facebook: মোট ৭৪৮টি অপতথ্য (মাসে গড়ে প্রতিদিন ৮ টির বেশি) X (Twitter) : ১৬২টি, YouTube: ১২৪টি, TikTok ও Instagram: প্রতি প্ল্যাটফর্মে ৬৭টি এবং প্রথাগত সংবাদমাধ্যম: ৪২টি (ছবি, ভিডিওসহ)

অপতথ্যের বিষয়বস্তু : রাজনৈতিক অপতথ্য-মোট অপতথ্যের ৪১% রাজনীতিভিত্তিক । প্রধান লক্ষ্য জামায়াতে ইসলামি (৮১টি), ক্ষমতাসীন দল ও নেতৃবৃন্দ (৩৪টি) । সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম সংবলিত অপতথ্যও ব্যাপক (প্রধানত ইতিবাচক আলোকপাতকারী) । জাতীয় ও সাম্প্রদায়িক অপতথ্য-জাতীয় প্রেক্ষাপটের অপতথ্য ২৯%, ধর্মভিত্তিক অপতথ্য ৯% (রামাদান, ঈদুল ফিতর ইত্যাদির সময় বিশেষভাবে বেড়েছে) । ৭৮টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য। এর মধ্যে ৬১% ভারতীয় আইডেন্টিটির সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ানো । সামাজিক ও মানবিক ইস্যু-ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ইত্যাদি মানবাধিকার বিষয়ে অন্তত ৩৬টি অপতথ্য ছড়িয়ে পড়েছে । শিশু নির্যাতন ইস্যুতে (যেমন, মাগুরার কেস) ৮টি মিথ্যা দাবি । প্রযুক্তিগত অপতথ্য-Deepfake/AI-ভিত্তিক মিথ্যা ভিডিও ৮টি, AI অপতথ্য (টেকনোলজি সংক্রান্ত): ৩২টি ।

ডিজিটাল সাক্ষরতার ঘাটতি-বহুলাংশে অনলাইন ব্যবহারকারী মিথ্যা তথ্য চিনতে অক্ষম। UNICEF poll যুব সমাজের ৬৬% ‘অপতথ্য’কে সবচেয়ে বড় মানসিক চাপের কারণ হিসেবে দেখেছে । আইনগত নিয়ম-নীতি ও নিয়ন্ত্রনের অভাব-বাংলা ভাষার স্থানীয় কন্টেন্টের যথাযথ মনিটরিং নেই । সামাজিক মাধ্যম পরিচালনার আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগে অনিশ্চয়তা। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রলোভন। নির্বাচনী সময়ে ভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা খবর সৃষ্টি ও প্রচার। বিজ্ঞাপন বা ভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট বিক্রির মাধ্যমে আর্থিক প্ররোচনা। ইকো-চেম্বার ও অ্যালগরিদমিক প্রভাব। ব্যবহারকারীর আগ্রহ অনুযায়ী ফিড প্রদর্শিত হওয়ায় ভুল তথ্যই অটোরেফোর্ম করে বৃদ্ধি পায় ।

অপতথ্যের প্রভাব : সামাজিক অশান্তি এবং সহিংসতা-ফেসবুক ভিত্তিক মিথ্যা পোস্টে উত্তেজিত জনস্রোতে হত্যাকাণ্ড (যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেনের Lynching) । হযরত শাহজালাল হাটে acid attack, জনদাবি বুঝে না শোনায় ভেটো বলবৎ। গণআস্থা ও সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস। ধারাবাহিক মিথ্যা তথ্যের ফলে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের প্রতি জনমনে সন্দেহ।

সাংবাদিকতার পেশা-ইমেজ নষ্ট হওয়া। মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক চাপ-যুব সমাজে স্ট্রেস, উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে ভুল তথ্যের কারণে । গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধা-নির্বাচনী প্রচারণায় অপতথ্য ব্যবহার ভোটারদের বিভ্রান্ত ও ভোটাভুটিতে প্রভাব ফেলে। সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি বিকশিত হতে বাধা।

মোকাবেলার প্রচেষ্টা : ফ্যাক্ট-চেকিং সংগঠনগুলোর ভূমিকা-Rumor Scanner, BDFactCheck ইত্যাদি fact-checking প্ল্যাটফর্ম দ্রুত সংবাদ যাচাই করছে। তাদের রিপোর্ট, স্ট্যাট ফাইল ও অনলাইন ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে তথ্যবান থাকছে । ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধির উদ্যো-স্কুল, কলেজ পর্যায়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও মিডিয়া লিটারেসি কোর্স সংযোজন। ত্রৈমাসিক বা সেমিনার আয়োজন করে ‘কিভাবে যাচাই করবেন’ বিষয়ক কর্মশালা। আইন-শৃঙ্খলা ও নীতিমালা-‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ সংশোধন ও স্থানীয় ভাষার পোস্ট মনিটরিংয়ে জোর। সামাজিক মাধ্যম অপারেটরদের স্থানীয় প্রতিনিধির বাধ্যতামূলক নিয়োগ। প্রযুক্তিগত সমাধান-AI-ভিত্তিক মিথ্যা খবর শনাক্তকরণ টুল ডেভেলপমেন্ট। প্ল্যাটফর্মে fact-check tag, warning label ইত্যাদির প্রয়োগ।ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ : বহুভাষিক মনিটরিং: বাংলা, ইংরেজিসহ অন্তত ৫টি স্থানীয় ভাষা যুক্ত করে অ্যালগরিদম উন্নত করতে হবে। সার্বজনীন ডিজিটাল সাক্ষরতা: প্রধান–মাধ্যমিক পর্যায়ে মিডিয়া, ডিজিটাল ও তথ্য সাক্ষরতার অন্তর্ভুক্তি জরুরি। নিয়মিত নিরীক্ষা ও মূল্যায়ন: স্বাধীন সংস্থার মাধ্যমে প্রস্থাপন করা ফ্যাক্ট-চেক রিপোর্টের ভিত্তিতে পতাকা-উপায় নির্ধারণ। সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ: সোশ্যাল মিডিয়া এথিকস, সাইবার আইন, fact-checking পদ্ধতি নিয়ে নিয়মিত Capacity Building.  জনসচেতনতা প্রচারণা: গণমাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয়, সেমিনার, ওয়ার্কশপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সতর্ক রাখা।—

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের অপতথ্যের পরিমাণ ও বিষয়বিস্তারের গতিবিধি উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত নানা কারণে এটি বেড়ে চলেছে, যা সমাজে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। যথাযথ নীতি, নিয়ন্ত্রণ, প্রযুক্তিগত সমাধান এবং বিশেষ করে ডিজিটাল মিডিয়া লিটারেসির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সজাগ রাখতে পারলে অপতথ্য মোকাবেলা করা সম্ভব। ফ্যাক্ট-চেক রপ্তান্ত্রিকরণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিই বলিষ্ঠ অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে আগামীর বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে সুস্থ ও গ্রহণযোগ্য রাখার।

সূত্রসমূহ : 1. Rumor Scanner: “Misinformation Surges 21% in Early 2025”  2. Dhaka Tribune: “Rumor Scanner: 837 cases of misinformation detected in Bangladesh”  3. The Daily Star: “Fight misinformation as a matter of urgency”  4. BSS News: “Rumor Scanner detects 296 misinformation cases in April”  5. Rumor Scanner (January report): “271 misinformation cases”  6. Daffodil Varsity e-learning forum: “Misinformation and Disinformation: recent trends in Bangladesh”  7. Preprints.org: “Recent Mob Violence Against Citizens of Bangladesh”  8. UNICEF Bangladesh poll: “Misinformation is the leading cause of stress for youth”

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও লেখক, চাঁদপুর।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়েও জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ১০৪ জন। তাদের ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা বলছেন আন্দোলনে সম্পৃক্তকারীরা। এসব ভুয়া ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে সরকার। তাদের নামের গেজেট বাতিল করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের আট বিভাগে ১০৪ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ছাড়াও একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, এমন ২৩ জনের একটি গেজেট রেখে অন্যটি বাতিল করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের প্রকাশিত গেজেট তালিকায় তারা আহত জুলাই-যোদ্ধা। কিন্তু তারা আসলে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে আহত হয়নি। তারা প্রতারণা করেছেন এবং কয়েকজনের নামে একাধিক গেজেট প্রকাশিত হওয়ার গেজেট বাতিলের জন্য জেলা কমিটির সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন ভুয়া ও ১ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে, সিলেট বিভাগ ২৬ জন ও ১ জনের দুবার গেজেট, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৪ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, খুলনা বিভাগে ৫ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, রংপুর ২ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা, ঢাকা বিভাগে ৭ জন ও ৭ জনের নামে দুবার গেজেট, রাজশাহী বিভাগে ৯ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, বরিশাল বিভাগের ২ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে।

সব মিলিয়ে ১২৭ জনের গেজেট বাতিল করবে সরকার। তাদের মধ্যে দুবার করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে ২৩ জনের। বাকি ১০৪ জন অহত নন ও আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে গেজেট-ভুক্ত হয়েছে। তাই নামের গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

যেসব জুলাই-যোদ্ধার গেজেট বাতিল করতে সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি, এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের ২০ জন হলেন নেত্রকোনার সৈয়দ তরিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৮০; মোহাম্মদ নুরুল আমিন, গেজেট নম্বর ৮৮; তানভীর আহমেদ, গেজেট নম্বর ১২১; আছিয়া খাতুন গেজেট, নম্বর ১২৩; রুহুল আমিন, গেজেট নম্বর ১২৭; মো. আমি হাসান রুপম, গেজেট নম্বর ১২৯, মোহাম্মদ আকিব তালুকদার, গেজেট নম্বর ১৪৬; মো. সুজন মিয়া, গেজেট নম্বর ১৫৫; মো. ইমন শাহারিয়া, গেজেট নম্বর ১৬৫; আশরাফুল ইসলাম জাসাম, গেজেট নম্বর ১৭২; মুশফিকুর রহমান, গেজেট নম্বর ১৯৭; মো সজিব, গেজেট নম্বর ১৯৮; সোহাগ মিয়া, গেজেট নম্বর ১৯৯; রুবেল মিয়া, গেজেট নম্বর ৩৬২; মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৩৬৩; রাব্বি হাসান শ্রীনি, গ্যাজেট নম্বর ৫৬৫; মোহাম্মদ আজহারুল ইসলামিক, গেজেট নম্বর ৫৬৬; মো. আবু ফরিদ আহামেদ, গেজেট নম্বর ৫৬৭; আফরিনা জান্নাত, গেজেট নম্বর ৫৭০; মাজহারুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৬৪৮।
ঢাকা বিভাগে ৭ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ও ৭ জনের নাম দুবার গেজেট-ভুক্ত হয়েছে, রাসেলে, গেজেট নম্বর ৬৭০; খন্দকার রাজ, গেজেট নম্বর ১০৬৩; রাফিউল নাঈম, গেজেট নম্বর ১১৬১; রাশেদুল ইসলাম অনিক, গেজেট নাম্বার ১১৬৩, আব্দুল্লাহ আল রাহাত, গেজেট নম্বর ১১৬৬; মো. মঞ্জমুল আলম, জিসান গেজেট নম্বর ১৯৩২; মো. সাইফুল ইসলাম শুভ, গেজেট নম্বর ২৬৮২; রিয়াজুল হাসান, গেজেট নম্বর ২৮৩৮; বেলায়াত হোসেন শাহীন, গেজেট নম্বর ২৮৩৯; মুজবর মৃধা, গেজেট নম্বর ৩৯৬৪; জিহাদ, গেজেট নম্বর ৩৪১৩; মো. রফিকুল সরদার, গেজেট নম্বর ৭৩৩; মো. মাসুদুর রহমান, গেজেট নম্বর ৬৪৫; মোছা রুমি, গেজেট নম্বর ৩৪৩১; মো. রিয়াজ শরীফ, গেজেট নম্বর ১৩৮২।
চট্টগ্রাম বিভাগ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ৩৫জন তারা হলেন, চট্টগ্রাম জেলার মো. শাগর, গেজেট নম্বর ৩২৮; আবদুল্লাহ আল নোমান গেজেট নম্বর ৪৬৯; নাইম উদ্দীন শাঈদ, গেজেট নম্বর ৪৯২; মোহা. শরিফুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫১৫; শাহাদাত ইকবাজ তাহনি, গেজেট নম্বর ৫২১; তাহমিনা ইকরার তারকি, গেজেট নম্বর ৫২২; মাহাবী তাজওয়ার, গেজেট নম্বর ৫৩৪; জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৫৪২; মো. আতিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৫২; মো. ইয়াছিন, গেজেট নম্বর ৫৬০; আরফাতুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৯৫; ফরহাদ আলম, গেজেট নম্বর ৬০১; মোদাসাদ সাহাদ কবির এমরান, গেজেট নম্বর ৬০৩; মুনজামিরুল হক চৌধুরী মামুর, গেজেট নম্বর ৬১৬; পঠন চন্দ্র নাথ, গেজেট নম্বর ৬২২; মিশকাত-আলম রিয়াদ, গেজেট নম্বর ৬৭৫; মো. এমরান, গেজেট নম্বর ৭৯৭; মাহাম্মদ সাগর, গেজেট নম্বর ৭৬৮; নুরুল্লাহ, গেজেট নম্বর ৭৮৯; সোহাম্মদ রাফি, গেজেট নম্বর ৭৯৯; ফয়সাল মোহাম্মদ শিয়াস, গেজেট নম্বর ৮০২; মোছা. ইছনিয়া আকতার, গেজেট নম্বর ৮২৪; মো. মাঈনুদ্দীন, গেজেট নম্বর ৮২৫; সাইমন, গেজেট নম্বর ৯৭৩; মো. আরিফ, গেজেট নম্বর ১৯৭৬; রাসেল, গেজেট নম্বর ১৯৮৬; রমজান আলী, গেজেট নম্বর ৯৮৭; মাহিম চৌধুরী, গেজেট নম্বর ৯৯৯; রিফাত বিন আল, গেজেট নম্বর ১৯৯৯।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে অনেকেই জুলাই যোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে, এমন অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এরপর ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই-যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া কথা বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তথ্যমতে, ক শ্রেণিতে অতি গুরুতর আহত ৬০২ জন, খ শ্রেণিতে গুরুতর আহত ১১১৮ জন, গ শ্রেণিতে আহত ১২০৮০ জন। নিহত ৮৪৪ জন। যার মধ্যে ৮ জনের গেজেট বাতিল করা হয়েছে। মোট ১৪ হাজার ৬৩৬ জনের নামে গেজেট করা প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব (জুলাই গণ অভ্যুত্থান অধিদপ্তর) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, যাদের নামে অভিযোগ ছিল সেসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের গেজেট বাতিল করা হবে এবং গেজেট বাতিল করার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গেজেট বাতিলের কাজ চলমান আছে।
জুলাই-যোদ্ধা না হয়েও যারা এককালীন অর্থসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগে গেজেট বাতিল করি, তারপর সবই পাওয়া যাবে।