খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক অপতথ্যের গতিপ্রকৃতি

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক অপতথ্যের গতিপ্রকৃতি

গণমাধ্যম আজকের পৃথিবীতে দ্রুততম তথ্য-প্রবাহ নিশ্চিত করছে, কিন্তু একই সঙ্গে অপতথ্য (misinformation) ছড়ানোর পথও প্রসারিত হয়েছে। বাংলাদেশে সামাজিক ও প্রচারমাধ্যমে অপতথ্য রপ্তান্ত্রিক গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি, উত্তেজনা ও সামাজিক অশান্তি তৈরি করছে। এই প্রবন্ধে আমরা সাম্প্রতিক বছরগুলোর—বিশেষ করে ২০২৪-২৫-এর প্রথমার্ধের বাংলাদেশের গণমাধ্যমে অপতথ্যের প্রবণতা, এর কারণ, পরিণতি ও মোকাবেলার কৌশল বিশ্লেষণ করবো।

অপতথ্যের বিস্তার ও পরিধি : অপতথ্য (Disinformation) হলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া যার উদ্দেশ্য হলো জনমতকে প্রভাবিত করা, বিভ্রান্তি তৈরি করা কিংবা কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। এটি সাধারণত ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়ানো হয়, যা মিথ্যাচার এবং ভুল তথ্যের চেয়েও অধিকতর বিপজ্জনক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, এক্স (টুইটার)-এর মতো মাধ্যমে অপতথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অ্যালগরিদম ভিত্তিক কনটেন্ট প্রচারে ভাইরাল হবার সুযোগে তা আরও ত্বরান্বিত হয়। গণমাধ্যমে কিছু অনলাইন পোর্টাল, ইউটিউব চ্যানেল বা ভূয়া সংবাদমাধ্যম নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক স্বার্থে অপতথ্য প্রচার করে। বট ও ফেক অ্যাকাউন্টের মাধ্যম প্রযুক্তিনির্ভর অপতথ্য ছড়ানোর একটি প্রধান উপায় হলো স্বয়ংক্রিয় বট এবং ভুয়া প্রোফাইল। এগুলোর মাধ্যমে একটি মিথ্যা বার্তা সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক ও নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রোপাগান্ডা-নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলসমূহ প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষকে দুর্বল করতে মিথ্যা খবর বা তথ্যের বিকৃতি ঘটায়। কোনো একটি সম্প্রদায়কে টার্গেট করে অপতথ্য ছড়ানো হয় যাতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। বিরোধী দল বা সরকারের বিরুদ্ধে গুজব রটানো, রাজনৈতিক চরিত্র হনন ইত্যাদির মাধ্যমে অপতথ্য রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে কোভিড-১৯-এর সময়কালজুড়ে ভ্যাকসিন নিয়ে অপতথ্য মারাত্মক প্রভাব ফেলে, যার ফলে অনেকেই চিকিৎসা থেকে দূরে থাকে। ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পণ্যের দাম বাড়ানো, স্টক মার্কেটে ধস নামানো বা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করা হয়। ইতিহাস বিকৃতি, শিক্ষাবিষয়ক মিথ্যা তথ্য বা ভুল কন্টেন্ট শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়। ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্র হনন, কিংবা সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত অপতথ্য ব্যবহৃত হয়।
অপতথ্যের বিস্তার শুধু ইন্টারনেটেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর পরিধি সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে শুরু করে ব্যক্তিজীবন পর্যন্ত বিস্তৃত। সচেতনতা, তথ্য যাচাই, ডিজিটাল লিটারেসি ও নীতিগত সাংবাদিকতা এই অপতথ্য মোকাবেলার কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে।

২০২৫-এর প্রথম তিন মাসে Rumor Scanner fact-checking সংস্থা ৮৩৭টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৮% বৃদ্ধি নির্দেশ করে । ২০২৪ সালের চতুর্মাসের (অক্টোবর–ডিসেম্বর) তুলনায় ২০২৫-এর প্রথম প্রান্তিকে অপতথ্য ২১% বেড়েছে । শুধুমাত্র এপ্রিল ২০২৫-এ Rumor Scanner ২৯৬টি নতুন অপতথ্য নিশ্চিত করেছে । Facebook: মোট ৭৪৮টি অপতথ্য (মাসে গড়ে প্রতিদিন ৮ টির বেশি) X (Twitter) : ১৬২টি, YouTube: ১২৪টি, TikTok ও Instagram: প্রতি প্ল্যাটফর্মে ৬৭টি এবং প্রথাগত সংবাদমাধ্যম: ৪২টি (ছবি, ভিডিওসহ)

অপতথ্যের বিষয়বস্তু : রাজনৈতিক অপতথ্য-মোট অপতথ্যের ৪১% রাজনীতিভিত্তিক । প্রধান লক্ষ্য জামায়াতে ইসলামি (৮১টি), ক্ষমতাসীন দল ও নেতৃবৃন্দ (৩৪টি) । সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম সংবলিত অপতথ্যও ব্যাপক (প্রধানত ইতিবাচক আলোকপাতকারী) । জাতীয় ও সাম্প্রদায়িক অপতথ্য-জাতীয় প্রেক্ষাপটের অপতথ্য ২৯%, ধর্মভিত্তিক অপতথ্য ৯% (রামাদান, ঈদুল ফিতর ইত্যাদির সময় বিশেষভাবে বেড়েছে) । ৭৮টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য। এর মধ্যে ৬১% ভারতীয় আইডেন্টিটির সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ানো । সামাজিক ও মানবিক ইস্যু-ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ইত্যাদি মানবাধিকার বিষয়ে অন্তত ৩৬টি অপতথ্য ছড়িয়ে পড়েছে । শিশু নির্যাতন ইস্যুতে (যেমন, মাগুরার কেস) ৮টি মিথ্যা দাবি । প্রযুক্তিগত অপতথ্য-Deepfake/AI-ভিত্তিক মিথ্যা ভিডিও ৮টি, AI অপতথ্য (টেকনোলজি সংক্রান্ত): ৩২টি ।

ডিজিটাল সাক্ষরতার ঘাটতি-বহুলাংশে অনলাইন ব্যবহারকারী মিথ্যা তথ্য চিনতে অক্ষম। UNICEF poll যুব সমাজের ৬৬% ‘অপতথ্য’কে সবচেয়ে বড় মানসিক চাপের কারণ হিসেবে দেখেছে । আইনগত নিয়ম-নীতি ও নিয়ন্ত্রনের অভাব-বাংলা ভাষার স্থানীয় কন্টেন্টের যথাযথ মনিটরিং নেই । সামাজিক মাধ্যম পরিচালনার আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগে অনিশ্চয়তা। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রলোভন। নির্বাচনী সময়ে ভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা খবর সৃষ্টি ও প্রচার। বিজ্ঞাপন বা ভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট বিক্রির মাধ্যমে আর্থিক প্ররোচনা। ইকো-চেম্বার ও অ্যালগরিদমিক প্রভাব। ব্যবহারকারীর আগ্রহ অনুযায়ী ফিড প্রদর্শিত হওয়ায় ভুল তথ্যই অটোরেফোর্ম করে বৃদ্ধি পায় ।

অপতথ্যের প্রভাব : সামাজিক অশান্তি এবং সহিংসতা-ফেসবুক ভিত্তিক মিথ্যা পোস্টে উত্তেজিত জনস্রোতে হত্যাকাণ্ড (যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেনের Lynching) । হযরত শাহজালাল হাটে acid attack, জনদাবি বুঝে না শোনায় ভেটো বলবৎ। গণআস্থা ও সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস। ধারাবাহিক মিথ্যা তথ্যের ফলে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের প্রতি জনমনে সন্দেহ।

সাংবাদিকতার পেশা-ইমেজ নষ্ট হওয়া। মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক চাপ-যুব সমাজে স্ট্রেস, উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে ভুল তথ্যের কারণে । গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধা-নির্বাচনী প্রচারণায় অপতথ্য ব্যবহার ভোটারদের বিভ্রান্ত ও ভোটাভুটিতে প্রভাব ফেলে। সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি বিকশিত হতে বাধা।

মোকাবেলার প্রচেষ্টা : ফ্যাক্ট-চেকিং সংগঠনগুলোর ভূমিকা-Rumor Scanner, BDFactCheck ইত্যাদি fact-checking প্ল্যাটফর্ম দ্রুত সংবাদ যাচাই করছে। তাদের রিপোর্ট, স্ট্যাট ফাইল ও অনলাইন ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে তথ্যবান থাকছে । ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধির উদ্যো-স্কুল, কলেজ পর্যায়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও মিডিয়া লিটারেসি কোর্স সংযোজন। ত্রৈমাসিক বা সেমিনার আয়োজন করে ‘কিভাবে যাচাই করবেন’ বিষয়ক কর্মশালা। আইন-শৃঙ্খলা ও নীতিমালা-‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ সংশোধন ও স্থানীয় ভাষার পোস্ট মনিটরিংয়ে জোর। সামাজিক মাধ্যম অপারেটরদের স্থানীয় প্রতিনিধির বাধ্যতামূলক নিয়োগ। প্রযুক্তিগত সমাধান-AI-ভিত্তিক মিথ্যা খবর শনাক্তকরণ টুল ডেভেলপমেন্ট। প্ল্যাটফর্মে fact-check tag, warning label ইত্যাদির প্রয়োগ।ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ : বহুভাষিক মনিটরিং: বাংলা, ইংরেজিসহ অন্তত ৫টি স্থানীয় ভাষা যুক্ত করে অ্যালগরিদম উন্নত করতে হবে। সার্বজনীন ডিজিটাল সাক্ষরতা: প্রধান–মাধ্যমিক পর্যায়ে মিডিয়া, ডিজিটাল ও তথ্য সাক্ষরতার অন্তর্ভুক্তি জরুরি। নিয়মিত নিরীক্ষা ও মূল্যায়ন: স্বাধীন সংস্থার মাধ্যমে প্রস্থাপন করা ফ্যাক্ট-চেক রিপোর্টের ভিত্তিতে পতাকা-উপায় নির্ধারণ। সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ: সোশ্যাল মিডিয়া এথিকস, সাইবার আইন, fact-checking পদ্ধতি নিয়ে নিয়মিত Capacity Building.  জনসচেতনতা প্রচারণা: গণমাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয়, সেমিনার, ওয়ার্কশপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সতর্ক রাখা।—

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের অপতথ্যের পরিমাণ ও বিষয়বিস্তারের গতিবিধি উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত নানা কারণে এটি বেড়ে চলেছে, যা সমাজে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। যথাযথ নীতি, নিয়ন্ত্রণ, প্রযুক্তিগত সমাধান এবং বিশেষ করে ডিজিটাল মিডিয়া লিটারেসির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সজাগ রাখতে পারলে অপতথ্য মোকাবেলা করা সম্ভব। ফ্যাক্ট-চেক রপ্তান্ত্রিকরণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিই বলিষ্ঠ অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে আগামীর বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে সুস্থ ও গ্রহণযোগ্য রাখার।

সূত্রসমূহ : 1. Rumor Scanner: “Misinformation Surges 21% in Early 2025”  2. Dhaka Tribune: “Rumor Scanner: 837 cases of misinformation detected in Bangladesh”  3. The Daily Star: “Fight misinformation as a matter of urgency”  4. BSS News: “Rumor Scanner detects 296 misinformation cases in April”  5. Rumor Scanner (January report): “271 misinformation cases”  6. Daffodil Varsity e-learning forum: “Misinformation and Disinformation: recent trends in Bangladesh”  7. Preprints.org: “Recent Mob Violence Against Citizens of Bangladesh”  8. UNICEF Bangladesh poll: “Misinformation is the leading cause of stress for youth”

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও লেখক, চাঁদপুর।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।