খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

প্রবীণ জীবন সমাজ ও অভিজ্ঞতার আয়নায়

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৩:৫১ অপরাহ্ণ
প্রবীণ জীবন সমাজ ও অভিজ্ঞতার আয়নায়

প্রবীণ জীবন সমাজ ও অভিজ্ঞতার আয়নায়
উজ্জ্বল হোসাইন
প্রবীণরা সমাজের অভিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান অংশ। তাঁদের জীবন সংগ্রাম, সাফল্য, ব্যর্থতা, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা সমাজের জন্য অমূল্য সম্পদ। প্রবীণদের জীবন কেবলই বার্ধক্যের গল্প নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘ পথচলার প্রতিচ্ছবি, যেখানে রয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী হওয়া, পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং নতুন প্রজন্মের জন্য দিকনির্দেশনা দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সমাজে প্রবীণদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত, তাঁদের অভিজ্ঞতার মূল্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এবং কীভাবে তাঁদের জীবনকে আরো সম্মানজনক ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করা যায়—এসব বিষয় প্রবন্ধে বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।
প্রবীণদের অভিজ্ঞতা একটি সমাজের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পরিচয়ের অংশ। তাঁদের সংগ্রামী জীবন, কাজের অভিজ্ঞতা, পারিবারিক দায়িত্ব, নৈতিক শিক্ষা—এসবই নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয়। একজন প্রবীণ ব্যক্তি জীবনে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছেন। তাঁরা দেখেছেন কিভাবে সমাজ পরিবর্তিত হয়েছে, জীবনযাত্রা সহজ হয়েছে, আবার কখনো কঠিন চ্যালেঞ্জ এসেছে। এই অভিজ্ঞতাগুলো ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে। প্রবীণদের কাছ থেকে পারিবারিক বন্ধন, ত্যাগ, ভালোবাসা ও দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা পাওয়া যায়। অতীত প্রজন্মের অভিজ্ঞতা পারিবারিক সম্পর্ককে মজবুত করতে সহায়ক হতে পারে। প্রবীণরা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে কঠোর পরিশ্রম করেছেন, দেশ ও সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। তাঁদের কর্মজীবনের গল্প পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারে, বিশেষ করে যখন একজন তরুণ ব্যক্তি নিজের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। একটি সভ্য সমাজের বৈশিষ্ট্য হলো প্রবীণদের যথাযথ সম্মান ও যত্ন প্রদান করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, অনেক সমাজেই প্রবীণদের অবহেলা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রবীণদের কথা গুরুত্বসহকারে শোনা হয় না। তাঁদের সিদ্ধান্ত ও মতামতকে মূল্যহীন মনে করা হয়, যা তাঁদের মানসিকভাবে কষ্ট দেয়। অনেক প্রবীণ মানুষ একাকীত্বে ভোগেন, বিশেষ করে যদি তাঁরা পরিবারের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হন। আধুনিক সমাজে কর্মব্যস্ত জীবনধারার কারণে অনেক সময় সন্তানরা বাবা-মাকে যথাযথ সময় দিতে পারেন না, যা প্রবীণদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সমাজের উচিত প্রবীণদের প্রতি যত্নশীল হওয়া। তাঁদের প্রতি সহানুভূতি, যত্ন ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা উচিত। প্রবীণদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য পরিবার, সমাজ ও সরকারকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষ বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। তাই প্রবীণদের জন্য স্বাস্থ্য সচেতনতা ও উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা জরুরি।

প্রবীনদের শারীরিক সুস্থতার জন্য-সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও হালকা ব্যায়াম করা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া
প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য পরিবার ও সমাজের সাপোর্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। একাকীত্ব, অবহেলা ও মানসিক চাপ প্রবীণদের বিষণ্ণতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই—তাঁদের সাথে সময় কাটানো, তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে যুক্ত রাখা, প্রযুক্তির এই যুগে প্রবীণদের ডিজিটাল দুনিয়ার সাথে পরিচিত করানো দরকার। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, অনলাইন ব্যাংকিং, টেলিমেডিসিন ইত্যাদি শেখানোর মাধ্যমে তাঁদের জীবনকে সহজ করা সম্ভব।অনেক প্রবীণ মানুষ প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী হলেও তাঁদের শেখানোর মতো কেউ থাকে না। তরুণ প্রজন্ম যদি তাঁদের সাহায্য করে, তাহলে তাঁরা প্রযুক্তির সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন এবং একাকীত্ব কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
প্রবীণদের জন্য করণীয় উদ্যোগ হলো- পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব, প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করা, তাঁদের সাথে সময় কাটানো, মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার খোঁজ রাখা, প্রবীণদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা, প্রবীণ ভাতা ও অন্যান্য সহায়তা নিশ্চিত করা, প্রবীণদের জন্য বিনোদনমূলক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা। অনেক দেশে প্রবীণদের জন্য বিশেষ সংগঠন রয়েছে, যেখানে তাঁরা সময় কাটাতে পারেন, বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন এবং নিজেদের মতামত ভাগ করে নিতে পারেন। আমাদের সমাজেও প্রবীণদের জন্য এমন সংগঠন গড়ে তোলা উচিত।
প্রবীণরা আমাদের সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁদের জীবনের অভিজ্ঞতা, সংগ্রাম, এবং অর্জন নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার উৎস। জীবনের প্রতিটি ধাপে তাঁরা সংগ্রাম করেছেন, সমাজ ও পরিবারের কল্যাণে কাজ করেছেন এবং দেশ ও জাতির অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর অনেক প্রবীণ মানুষ অবহেলা ও একাকীত্বের শিকার হন। প্রবীণদের জীবন শুধু দীর্ঘ সময়ের সমষ্টি নয়; এটি সংগ্রামের, অর্জনের, শিক্ষা ও মূল্যবোধের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সমাজ ও পরিবার গঠনে তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য।
পারিবারিক ও সামাজিক অবদান : প্রবীণরা পরিবারের মূল ভিত্তি। তাঁদের অভিজ্ঞতা, নৈতিকতা ও আদর্শ পরিবার ও সমাজের জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। তাঁরা সন্তানদের লালন-পালন করেন, শিক্ষা দেন, এবং তাঁদের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা : একজন প্রবীণ ব্যক্তি জীবনের বেশিরভাগ সময় কর্মক্ষেত্রে অতিবাহিত করেন। শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, কৃষক, ব্যবসায়ী, শ্রমিক—যে কোনো পেশাতেই থাকুক না কেন, তাঁরা সমাজের অগ্রগতির অংশ। তাঁদের অভিজ্ঞতা নতুন প্রজন্মের জন্য মূল্যবান হতে পারে, যদি সেটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা যায়।
ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সাক্ষী : প্রবীণরা অতীতের জীবন্ত দলিল। তাঁরা একসময়ে প্রত্যক্ষ করেছেন রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তন, যুদ্ধ, বিপ্লব, প্রযুক্তির অগ্রগতি ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এসব অভিজ্ঞতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করতে পারে।
প্রবীণদের প্রতি সমাজের দায়িত্ব : একটি উন্নত ও মানবিক সমাজের চিহ্ন হলো প্রবীণদের প্রতি যথাযথ যত্ন ও সম্মান প্রদান করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, অনেক প্রবীণ মানুষ বার্ধক্যে একাকীত্ব ও অবহেলার শিকার হন। সমাজের উচিত প্রবীণদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে সম্মানের চোখে দেখা। তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া, পারিবারিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা, এবং তাঁদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবীণরা বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হন। তাঁদের জন্য উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, এবং মানসিক প্রশান্তির ব্যবস্থা করা জরুরি। পরিবার ও সমাজের উচিত তাঁদের পাশে দাঁড়ানো এবং মানসিক সমর্থন দেওয়া। সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর উচিত প্রবীণদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা, যেমন : বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে যানবাহনে যাতায়াত, প্রবীণ ভাতা ও পেনশন সুবিধা, সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার সুযোগ
প্রবীণদের চ্যালেঞ্জ ও সমাধান : বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে অনেক প্রবীণ মানুষ একাকীত্বে ভোগেন। সন্তানরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে, বন্ধুরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়, এবং শারীরিক দুর্বলতার কারণে অনেকেই বাইরে যেতে পারেন না। ফলে তাঁরা মানসিক অবসাদে ভোগেন। পরিবারের উচিত নিয়মিত সময় দেওয়া, প্রবীণদের জন্য সামাজিক সংগঠন তৈরি করা, প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা, অনেক প্রবীণ মানুষ কর্মক্ষমতা হারানোর পর আর্থিক সংকটে পড়েন। পেনশন ব্যবস্থা না থাকলে বা পর্যাপ্ত সঞ্চয় না থাকলে তাঁদের জীবনযাপন কঠিন হয়ে যায়। প্রবীণ ভাতা ও পেনশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, বয়স্কদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা, আর্থিক সহায়তার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, যেমন : উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বাত, হৃদরোগ ইত্যাদি। অনেক প্রবীণ মানুষ সঠিক চিকিৎসা পান না। বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে প্রবীণদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা। প্রবীণদের জন্য বিশেষ হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপন করা।
বর্তমান যুগে প্রযুক্তি প্রতিটি ক্ষেত্রকে সহজ করে তুলেছে, কিন্তু প্রবীণদের অনেকেই ডিজিটাল দক্ষতার অভাবে পিছিয়ে পড়ছেন। ফলে তাঁরা ব্যাংকিং, টেলিমেডিসিন, অনলাইন যোগাযোগ ইত্যাদি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। প্রবীণদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া। সহজ ও ব্যবহারবান্ধব প্রযুক্তি তৈরি করা। পরিবারের তরুণদের উচিত প্রবীণদের ডিজিটাল দক্ষতা শেখানো।
প্রবীণদের জন্য করণীয় : প্রবীণদের জীবনকে সুন্দর ও সম্মানজনক করতে তাঁরা নিজেরাও কিছু উদ্যোগ নিতে পারেন। সক্রিয় ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। নিয়মিত ব্যায়াম করা। সুষম খাদ্য গ্রহণ করা। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া। সামাজিক কার্যক্রমে যুক্ত থাকা। বন্ধু ও পরিবারের সাথে সময় কাটানো। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা। বই পড়া, লেখালেখি করা বা নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করা। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা
ছোটখাটো ব্যবসা বা হস্তশিল্পে যুক্ত থাকা। পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করা। ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইন কাজ শেখা
প্রবীণরা আমাদের সমাজের ইতিহাসের ধারক এবং আমাদের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রেরণা। তাঁদের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও পরামর্শ আমাদের জন্য অমূল্য সম্পদ। প্রবীণদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও যত্ন নেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। একটি সুস্থ, মানবিক ও উন্নত সমাজ গড়তে হলে প্রবীণদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করা জরুরি। তাঁদের শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা হলে তাঁরা বার্ধক্যেও সম্মানজনক ও সুখী জীবনযাপন করতে পারবেন। প্রবীণরা আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতার ধারক ও বাহক। তাঁদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ আমাদের জীবনের জন্য অমূল্য সম্পদ। প্রবীণদের প্রতি যথাযথ সম্মান ও যত্ন প্রদর্শন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
সমাজের সকল স্তরের মানুষের উচিত প্রবীণদের পাশে দাঁড়ানো, তাঁদের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং তাঁদের জীবনকে সহজ ও সুন্দর করে তোলার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। প্রবীণদের প্রতি আমাদের সম্মান ও ভালোবাসাই প্রমাণ করে আমরা কতটা সভ্য ও মানবিক সমাজে বাস করি।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।