খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৯ ভাদ্র, ১৪৩২

গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতার প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠতা

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৭:৫৯ অপরাহ্ণ
গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতার প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠতা

গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। তথ্য সরবরাহ, জনমত গঠন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে গণমাধ্যমের এই শক্তির অপব্যবহার যখন শুরু হয়, তখন তা হয়ে ওঠে ‘হলুদ সাংবাদিকতা’। বর্তমানে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী হলুদ সাংবাদিকতার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। হলুদ সাংবাদিকতা বলতে এমন ধরনের সংবাদ পরিবেশনাকে বোঝায়, যেখানে সত্যের চেয়ে চাঞ্চল্য, গুজব, অর্ধসত্য, এবং অতিরঞ্জনের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়া হয়। এতে পাঠক বা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়। তবে এর মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বিকৃত হয়। সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এমনকি সামাজিক মাধ্যমেও হলুদ সাংবাদিকতার বিস্তার লক্ষ্য করা যায়।
হলুদ সাংবাদিকতা অনেকগুলো বৈশিষ্ট আছে-অতিরঞ্জিত শিরোনাম, যাচাইবিহীন তথ্য, ব্যক্তিগত চরিত্রহনন, গুজব ও ভিত্তিহীন সংবাদের প্রচার, জনসচেতনতা বৃদ্ধির পরিবর্তে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা।
মূলকত হলুদ সাংবাদিকতার শুরু মূলত ১৯ শতকের শেষদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। উইলিয়াম র‌্যান্ডলফ হার্স্ট এবং জোসেফ পুলিৎজারের মধ্যে সংবাদপত্র বিক্রির প্রতিযোগিতায় চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশের প্রবণতা দেখা দেয়। তখন “ইয়েলো কিড” নামে একটি কমিক চরিত্র জনপ্রিয় হওয়ায় ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ শব্দটির জন্ম হয়। ধীরে ধীরে এটি একটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হতে থাকে। বর্তমান সময়ে, আধুনিক প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের বিকাশের সাথে সাথে হলুদ সাংবাদিকতার বিস্তার আরও দ্রুত হয়েছে।
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের বিকাশ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে প্রিন্ট মিডিয়া ছাড়াও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং বর্তমানে অনলাইন মিডিয়া অনেক বিস্তৃত হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজার, দর্শক আকৃষ্ট করার চাপ এবং বিজ্ঞাপন আয়ের নির্ভরতাই মূলত হলুদ সাংবাদিকতার প্রসারে ভূমিকা রাখছে। কিছু সংবাদপত্র ও চ্যানেল সত্যাসত্য যাচাই না করেই চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রচার করে থাকে। যার ফলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এমনকি জাতীয় নিরাপত্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
হলুদ সাংবাদিকতার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমন-প্রতিযোগিতা এবং পাঠকসংখ্যা বাড়ানোর চাপ, বাজারে টিকে থাকার জন্য সংবাদমাধ্যমগুলো দ্রুততম এবং চিত্তাকর্ষক খবর প্রকাশের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্য-বিজ্ঞাপনদাতারা যেখানে বেশি দর্শক বা পাঠকসংখ্যা দেখেন, সেখানে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেন। ফলে গণমাধ্যমগুলো দর্শকসংখ্যা বাড়াতে সংবাদের গুণগত মানের চেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে।
সাংবাদিকতার নৈতিকতার অভাব-অনেক সাংবাদিক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষা ছাড়াই পেশায় প্রবেশ করেন, যা হলুদ সাংবাদিকতার বিস্তার ঘটায়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-কিছু সংবাদমাধ্যম রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করে। তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার-সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তা মূলধারার মিডিয়াতেও স্থান পায়, ফলে হলুদ সাংবাদিকতা বাড়ে।
হলুদ সাংবাদিকতার নানামূখী প্রভাব রয়েছে-তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জনমনে বিভ্রান্তি-ভিত্তিহীন এবং অতিরঞ্জিত সংবাদ জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, যা সামাজিক বিশৃঙ্খলা ডেকে আনতে পারে। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সুনামহানি-মিথ্যা বা অপূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশের ফলে ব্যক্তিগত জীবনে এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিতে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। গণমাধ্যমের উপর আস্থা কমে-বারবার হলুদ সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা জনগণকে গণমাধ্যমের প্রতি অবিশ্বাসী করে তোলে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ক্ষতি-প্রকৃত তথ্যের অভাবে নাগরিকরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে। সামাজিক অস্থিরতা-বিশেষ করে গুজব নির্ভর সংবাদ দ্রুত সামাজিক উত্তেজনা ও সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে।
হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধের আমাদেও অনেক করণীয় রয়েছে-যেমন নৈতিক সাংবাদিকতা চর্চা-সাংবাদিকদের উচিত নৈতিকতা ও পেশাদারিত্ব মেনে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার করা। সঠিক তথ্য যাচাই না করে কোনো সংবাদ প্রকাশ করা উচিত নয়। সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা-গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং সাংবাদিকতার মৌলিক নীতিমালার শিক্ষা প্রয়োজন। গণমাধ্যমের স্বনিয়ন্ত্রণ-গণমাধ্যমগুলো নিজেরাই নিজেদের কার্যক্রমের জন্য দায়বদ্ধ থাকতে হবে। প্রেস কাউন্সিল বা সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আরো কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। আইনগত ব্যবস্থা-ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। তবে এতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি-পাঠক ও দর্শকদের সচেতন হতে হবে। যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো খবর বিশ্বাস করা উচিত নয়। মিডিয়া লিটারেসি শিক্ষার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করে তোলা জরুরি। সত্য-নির্ভর সাংবাদিকতার উৎসাহ-সংবাদের মান ও নির্ভরযোগ্যতার জন্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি প্রদান করা হলে সাংবাদিকরা হলুদ সাংবাদিকতার পরিবর্তে গঠনমূলক সাংবাদিকতার দিকে আগ্রহী হবে। সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ-
ফেক নিউজ বা গুজব রোধে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে এবং সরকারিভাবে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করতে হবে।
হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধে বাংলাদেশে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে গণমাধ্যম নীতিমালা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে কিছুটা হলেও হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, কিছু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করে সংবাদ যাচাইয়ের পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন যেমন প্রেস কাউন্সিল, সাংবাদিক ইউনিয়ন ইত্যাদি সংগঠন সংবাদ পরিবেশনায় নৈতিকতার প্রচারণা চালাচ্ছে।
গণমাধ্যম আধুনিক সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু সংবাদ পরিবেশন করে না, বরং জনমত গঠনে, গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে গণমাধ্যমের এই শক্তি তখনই ইতিবাচক হয় যখন এটি বস্তুনিষ্ঠতার সাথে পরিচালিত হয়। বস্তুনিষ্ঠতা মানে হলো সত্যতা, নিরপেক্ষতা এবং পক্ষপাতহীনভাবে তথ্য উপস্থাপন করা। গণমাধ্যম যদি বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়, তবে তা জনগণের কাছে ভুল বার্তা প্রেরণ করে এবং সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
গণমাধ্যমের প্রধান দায়িত্ব হলো তথ্য সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করে তা যথাযথভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সংবাদ পরিবেশনের সময় ব্যক্তিগত মতাদর্শ, রাজনৈতিক পক্ষপাত কিংবা বাণিজ্যিক স্বার্থকে প্রভাবিত না করতে পারাই হলো বস্তুনিষ্ঠতা। একজন সাংবাদিকের কর্তব্য হচ্ছে তথ্যের উৎস যাচাই করা, ভিন্নমতকে সম্মান দেখানো এবং ঘটনার সবদিক তুলে ধরা। পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ পরিবেশন সমাজে বিভাজন তৈরি করে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।
আজকের বিশ্বে ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট এবং অনলাইন মাধ্যমের বিপুল বিস্তারের কারণে সংবাদ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিযোগিতার এই যুগে কিছু গণমাধ্যম দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন বা অর্থনৈতিক লাভের জন্য অতিরঞ্জিত ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করে থাকে। এতে পাঠক বা দর্শকের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। গণমাধ্যমের উচিত — সংবাদের গতি নয়, গুণগত মানের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া। একটি স্বাধীন ও দায়িত্বশীল গণমাধ্যমই পারে সঠিক তথ্য তুলে ধরে জনগণকে সচেতন করতে।
গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষার জন্য প্রয়োজন স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং নৈতিকতা। সাংবাদিকদের অবশ্যই তাদের পেশাগত নীতিমালা মেনে চলতে হবে। একই সাথে, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করতে হবে। বিজ্ঞাপনী স্বার্থ বা কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠীর চাপের কাছে নতি স্বীকার করা গণমাধ্যমের জন্য আত্মঘাতী। বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যম জনগণের আস্থা অর্জন করে, আর এই আস্থাই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি।
তাছাড়া, সাধারণ জনগণেরও গণমাধ্যমের ওপর নজরদারি রাখা প্রয়োজন। ভোক্তাদের সচেতনতা গণমাধ্যমকে বস্তুনিষ্ঠ থাকার জন্য উৎসাহিত করে। আজকের যুগে সামাজিক মাধ্যমের বিস্তারে সাধারণ মানুষও সংবাদ প্রচারের অংশ হয়ে উঠেছে। তাই সংবাদ যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা এখন আরও বেশি। মিথ্যা সংবাদ বা গুজবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এবং সত্য-ভিত্তিক তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে নাগরিকরাও গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখতে পারে।
সর্বশেষে বলা যায়, গণমাধ্যমের শক্তি তখনই প্রকৃত অর্থে সমাজের কল্যাণে আসে যখন সেটি বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখে। পক্ষপাতমুক্ত, ন্যায়সঙ্গত ও সত্যনিষ্ঠ গণমাধ্যমই পারে একটি সুস্থ, উন্নত ও গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে।
গণমাধ্যমের প্রকৃত শক্তি হলো সত্য এবং জনস্বার্থ রক্ষা। হলুদ সাংবাদিকতা সেই শক্তিকে দুর্বল করে জনগণের আস্থা বিনষ্ট করে। তাই গণমাধ্যমের উচিত সত্যের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকা এবং নৈতিকতার আদর্শ অনুসরণ করা। একইসঙ্গে পাঠক, দর্শক, সরকারি সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হলুদ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।
তথ্যভিত্তিক, নিরপেক্ষ এবং গঠনমূলক সাংবাদিকতাই পারে গণতন্ত্রকে মজবুত করতে এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে। সুতরাং, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলুদ সাংবাদিকতার বিষয়ে সচেতন থাকা, এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়া।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ব্যাচ ২০২১, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, ঢাকা।

জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২৭ অপরাহ্ণ
জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

জয়ে এশিয়া কাপ শুরু করল বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে হংকংকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। হংকংয়ের ১৪৩ রানের জবাবে ১৭ ওভার ৪ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
রানতাড়ায় নেমে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২৪ রান। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে পারভেজ হোসেন ইমন ১৪ বল ১৯ রান করে ফিরে গেলে জুটি ভাঙে। ৫.৪ ওভারে ৪৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তানজিদ তামিম ফেরেন ১৮ বলে ১৪ রান করে।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে লিটন ও হৃদয় মিলে ৭০ বলে ৯৫ রান যোগ করেন। জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে লিটন বোল্ড হয়ে ফিরে যান। ৬ চার ও এক ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৯ রান করেন। পরে জাকের আলি অনিককে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন হৃদয়। ১ চারে ৩৬ বলে ৩৫ রান করেন হৃদয়। রানের খাতা খোলার সুযোগ পাননি জাকের।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান সংগ্রহ করেছে হংকং। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংস খেলেছেন নিজাকাত খান। টাইগারদের পক্ষে সবচেয়ে সফল তানজিম হাসান সাকিব ২১ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেছেন। এ ম্যাচে জয় তুলে নিতে ওভারপ্রতি ৭.২০ রান করতে হবে টাইগারদের।
এদিন টস জিতে ফিল্ডিং করতে নেমে শুরু থেকে হংকংকে চাপে রেখেছিল টাইগার বোলাররা। দলের খাতায় ৩০ রান যোগ করতে ২ উইকেট হারায় তারা। বাংলাদেশকে প্রথম উইকেটটি এনে দেন তাসকিন আহমেদ। ৫ বলে ৪ রান করে টাইগার পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে কট বিহাইন্ড হন আনশুমান রাথ। আম্পায়ার যদিও শুরুতে সাড়া দেননি, রিভিউ নিয়ে উইকেটটি আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। এরপর দারুণ এক ডেলিভারিতে ১২ বলে ১৪ রান করা বাবর হায়াতকে বোল্ড করেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে হংকং। জিশান আলী ও নিজাকাত খানের ৪১ রানের জুটি শেষমেশ ভাঙেন তানজিম সাকিব। তার বাউন্সার জায়গা নিয়ে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে তুলে দেন ওপেনার জিশান। ৩৪ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রানে থামে তার ইনিংস। চতুর্থ উইকেটে নিজাকাত ও ইয়াসিম মুর্তজা হতাশায় ভোগান টাইগার বোলারদের।
অনেক চেষ্টা করেও উইকেটের দেখা মিলছিল না। শেষমেশ ১৮তম ওভারে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে ভাঙে হংকংয়ের চতুর্থ জুটি। ১৯ বলে ২ ছক্কা ও ২ চারের মারে ২৮ রান করে রান আউট হন মুর্তজা। ততক্ষণে তারা দলের সংগ্রহ শতরান পার করে দেন। অন্যদিকে ৪০ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ রান করে ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে রিশাদ হোসেনের শিকার হন নিজাকাত। পরের বলেই ক্রিজে নেমে টাইগার রিস্ট স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হন কিঞ্চিৎ শাহ।
শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রানে থামে হংকংয়ের ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন, তানজিম সাকিব ও রিশাদ।

স্থূলতা তরুণদের কতটা ক্ষতি করছে?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২০ অপরাহ্ণ
স্থূলতা তরুণদের কতটা ক্ষতি করছে?

বর্তমান সময়ের জীবনযাত্রা বিগত এক দশকের থেকে অনেকটাই আলাদা। এখন সবাই নিজের কাজ নিয়ে দারুণ ব্যস্ত। আর এই ব্যস্ততার প্রভাব দেখা যায় আমাদের স্বাস্থ্যেও বিশেষ করে তরুণদের মাঝে। প্রসেসড খাবার, ডিজিটাল জীবনযাপন ও শারীরিক সক্রিয়তার ঘাটতি মিলিয়ে তরুণদের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে স্থূলতা। আর এই স্থূলতা কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য বা ওজনের বিষয় নয়, বরং ডেকে আনছে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি।
হিন্দুস্তান টাইমস নয়াদিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. পিয়ুষ রঞ্জন জানান, স্থূল কিশোররা ভবিষ্যতে মারাত্মক লিভার রোগের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তার মতে, ভারতে কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার রোগের হার প্রায় ৩৮ শতাংশ। এদের অনেকেই পরবর্তীতে সিরোসিস কিংবা লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে।
স্থূলতার ঝুঁকি: ডা. রঞ্জনের মতে, চিকিৎসাবিহীন স্থূলতা ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে—কোলন, অগ্ন্যাশয়, খাদ্যনালী, স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার। তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিক ওজনের তুলনায় স্থূল মানুষের লিভার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। বিভিন্ন গবেষণায় ঝুঁকির মাত্রা ভিন্ন হলেও, স্থূলতা ও লিভার জটিলতার সম্পর্ক স্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
প্রতিরোধের উপায়: তরুণ প্রজন্মকে এই ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে ডা. রঞ্জন কয়েকটি প্রতিরোধমূলক পরামর্শ দিয়েছেন—
> সুস্থ জীবনধারা গড়ে তোলা।
> তেল–চর্বিযুক্ত ও উচ্চ-ক্যালরির খাবার এড়িয়ে চলা।
> অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত কার্বোহাইড্রেট কম খাওয়া।
> নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এবং স্থূলতার ঝুঁকি কমাবে।
তরুণদের মধ্যে স্থূলতার হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, যা শুধু আজকের নয়, ভবিষ্যতেরও ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। ডা. পিয়ুষ রঞ্জনের পরামর্শ স্পষ্ট সুস্থ জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এখনই সচেতন হলে কেবল ডায়াবেটিস, ক্যানসার বা লিভারের রোগই নয়, অসংখ্য জটিলতা থেকে নিজেদের বাঁচানো সম্ভব।

ডিজিটাল প্রতারণায় কয়েক কোটি টাকা খোয়ালেন ভারতীয় নারী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:১১ অপরাহ্ণ
ডিজিটাল প্রতারণায় কয়েক কোটি টাকা খোয়ালেন ভারতীয় নারী

অঞ্জলির (ছদ্মনাম) এই দুঃস্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল একটা ফোন কলের মাধ্যমে। যার জন্য শেষপর্যন্ত তাকে পাঁচ কোটি পঁচাশি লাখ টাকা খোয়াতে হয়। ওই ফোন কলের সময় অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজেকে একটা কুরিয়ার সংস্থার কর্মচারী বলে পরিচয় দিয়ে দাবি করেছিলেন, মুম্বাই কাস্টমস বেইজিংয়ে পাঠানোর সময় অঞ্জলির একটা পার্সেল বাজেয়াপ্ত করেছে। ওই পার্সেলে মাদক পাওয়া গেছে।
গুরুগ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলি বাস্তবে ডিজিটাল অ্যারেস্ট নামে সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। এতে অভিযুক্তরা ভিডিও কল করে নিজেদের ভারতের আর্থিক তদারকি প্রতিষ্ঠান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির কর্মকর্তা বলে দাবি ফাঁদে ফেলে।
এর জন্য প্রতারকরা সাধারণত ভুক্তভুগীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তুলে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার বা পরিবারের বাকি সদস্যদের ক্ষতি করার হুমকি দেয়। এভাবে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অঞ্জলিকে টানা পাঁচ দিন ধরে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে রাখা হয়েছিল। স্কাইপ কলের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি রেখে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল; যাতে তিনি টাকা ট্রান্সফার করতে বাধ্য হন।
অঞ্জলির কথায়, এরপর আমার মাথা কাজ করা বন্ধ দেয়। অসাড় হয়ে গিয়েছিলাম। যতক্ষণে ওই ফোনকল বন্ধ হয়, ততদিনে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন অঞ্জলি, নিজের সমস্ত সম্পত্তিও খুইয়েছেন।