খুঁজুন
                               
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১২ কার্তিক, ১৪৩২

ঈদুল ফিতর : ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির প্রতীক

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ
ঈদুল ফিতর  : ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির প্রতীক

ঈদুল ফিতর ইসলামী সমাজের এক বিশেষ উৎসব যা ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি এবং মানবিকতার এক অনন্য উদাহরণ। এক মাস রমজানের সিয়াম সাধনার পর এই উৎসব আসে মুসলিম জীবনে আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে। এই দিনটি শুধু আনন্দের উৎসব নয়, বরং এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে এক গভীর তাৎপর্য বহন করে। ঈদুল ফিতর মানুষকে মিলনের, ভ্রাতৃত্বের এবং সহমর্মিতার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে।

ঈদুল ফিতর শব্দের অর্থ হলো “রোজা ভঙ্গের উৎসব”। এই উৎসব ইসলামী হিজরি ক্যালেন্ডারের শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে পালিত হয়। রমজান মাসে দীর্ঘ এক মাস ধরে মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখেন। এই সময়ে তারা নিজেকে সংযম, আত্মশুদ্ধি, এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে আত্মশক্তিতে বলিয়ান করেন। ঈদুল ফিতর সেই সংযম ও আত্মশুদ্ধির একটি পুরস্কার স্বরূপ। এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম, যা তিনি রোজাদারদের জন্য নির্ধারণ করেছেন।

ঈদুল ফিতরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো “ফিতরা” প্রদান। ফিতরা একটি বাধ্যতামূলক দান যা প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলমান রমজানের শেষ সময়ে গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করে থাকেন। এটি শুধুমাত্র দানের বিষয় নয়; বরং এটি মুসলিম সমাজে সম্প্রীতি, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ চর্চা।

ঈদুল ফিতর এমন একটি উৎসব যা মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। ঈদের দিনে ধনী-গরীবের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকে না। সবাই একত্রে ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, যা সমাজে সৌহার্দ্যের পরিবেশ সৃষ্টি করে।

ঈদের দিন সকালে ঈদের নামাজ আদায় করার আগে ফিতরা আদায় করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এর মাধ্যমে গরিবদের মধ্যেও ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস নেওয়া হয়। এই দানের অর্থ হলো, কেউ যেন ক্ষুধার্ত থেকে ঈদের উৎসবে অংশ নিতে না পারে। এটি ইসলামের সেই সাম্যের বার্তাকে বহন করে, যা সকল মানুষকে সমান মর্যাদায় দেখার শিক্ষা দেয়।

ঈদুল ফিতর পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার জন্য একটি বিশেষ দিন। পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা, একত্রে খাওয়া-দাওয়া করা এবং প্রিয়জনদের মধ্যে উপহার বিনিময় করার মাধ্যমে এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে ওঠে।

এছাড়াও, ঈদুল ফিতরের দিন প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করারও একটি বিশেষ সুযোগ। প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করা, তাদের ঘরে খাবার পাঠানো, এবং ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে এই সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।

ঈদুল ফিতরের আরেকটি বড় দিক হলো এর আন্তর্জাতিকতা। সারা বিশ্বের মুসলমানরা একসঙ্গে এই দিনটি উদযাপন করেন। এটি বিশ্বের বিভিন্ন জাতি, ভাষা এবং সংস্কৃতির মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করে। ঈদুল ফিতর দেখায় যে, ভাষা বা সংস্কৃতির ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও সবাই একই ধর্মীয় চেতনার মধ্যে ঐক্যবদ্ধ।

১. ঈদগাহে নামাজ আদায়: ঈদের দিন সকলে একত্রে ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন। এটি সমাজে ঐক্যের প্রতীক।
২. ফিতরা প্রদান: ফিতরা দিয়ে গরিবদের ঈদ উদযাপনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।
৩. সহমর্মিতা ও দান: ঈদুল ফিতর দানের গুরুত্ব শেখায়। দানশীলতা মানুষের মধ্যে সহানুভূতির জন্ম দেয়।
৪. পরিচ্ছন্নতা ও নতুন পোশাক: ঈদের দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা ইসলামী সংস্কৃতির একটি অংশ।

ঈদুল ফিতর কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ধনী ও গরীবের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। ঈদের মাধ্যমে সমাজে সম্প্রীতি ও সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়। পাশাপাশি, এটি ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ঈদুল ফিতর একটি বহুমাত্রিক উৎসব, যার গুরুত্ব ধর্মীয়, সামাজিক এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনস্বীকার্য। এটি মুসলমানদের জীবনে শুধু আনন্দ নিয়ে আসে না; বরং নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক শিক্ষা প্রদান করে। চলুন আরও গভীরে গিয়ে ঈদুল ফিতরের বিভিন্ন দিক আলোচনা করি।

রমজান মাসে দীর্ঘ এক মাসের রোজা পালনের পর ঈদুল ফিতর আসে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি বিশেষ দিন হিসেবে। এটি মানুষের আত্মশুদ্ধি এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্যের প্রতীক। ঈদের দিনে যে নামাজ আদায় করা হয়, তা কেবল এক ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ।

ঈদের নামাজে একত্রিত হওয়া এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করার মাধ্যমে মুসলমানরা নিজেদের আত্মিক জীবনে এক নতুন প্রেরণা লাভ করে। এটি মানুষকে আল্লাহর করুণা ও দয়া অনুভব করতে সহায়তা করে।

ঈদুল ফিতর কেবল ধনী বা সামর্থ্যবানদের উৎসব নয়; এটি এমন একটি দিন যা গরীবদের প্রতিও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। “ফিতরা” প্রদানের মধ্য দিয়ে সমাজে সমতা এবং সম্প্রীতির বার্তা প্রচারিত হয়। এই দানের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে, ঈদের আনন্দে কোনো গরীব বা অসহায় মানুষ যেন বঞ্চিত না হয়।

ফিতরার মাধ্যমে মানুষ গরীবদের প্রতি যে সহানুভূতি ও দয়া দেখায়, তা মানবিকতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা ও সহানুভূতির বন্ধন তৈরি করে।

ইসলাম সাম্যের ধর্ম। ধনী-গরীব, ছোট-বড়, জাতি-গোষ্ঠী—সবাই এক সৃষ্টিকর্তার কাছে সমান। ঈদুল ফিতর সেই সাম্যের বার্তাকেই আরও শক্তিশালী করে। ঈদের নামাজে সবাই একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় করেন। এখানে ধনী-গরীবের কোনো ভেদাভেদ থাকে না।

ঈদগাহে নামাজের পর মানুষ একে অপরকে কোলাকুলি করে এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করে। এই কার্যক্রম সমাজে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে। ঈদের দিনে ধনী-গরীব, শিশু-বৃদ্ধ, সবাই একত্রে আনন্দে মেতে ওঠে।

ঈদুল ফিতর কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে এক বিশেষ রূপ ধারণ করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপনের পদ্ধতি ভিন্ন হলেও এর মূল বার্তা এক।

বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপন

বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর এক বিশাল উৎসব হিসেবে পালিত হয়। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই মানুষ নতুন পোশাক কেনা, ঘরবাড়ি সাজানো এবং খাবার প্রস্তুত করার কাজ শুরু করে।

ঈদের সকালে সবাই নতুন পোশাক পরে ঈদগাহে যান। ঈদের বিশেষ খাবার, যেমন সেমাই, ফিরনি, পায়েস, এবং বিরিয়ানির মতো খাবার ঘরে ঘরে প্রস্তুত হয়। আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া এবং উপহার বিনিময়ের মধ্য দিয়ে ঈদের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে ওঠে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপনের ধরণ ভিন্ন হলেও এর আবেগ এবং উৎসবের আমেজ অভিন্ন। মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ খাবারের আয়োজন, তুরস্কে ঈদ মিছরি বিতরণ, এবং ইন্দোনেশিয়ায় বিশেষ প্রার্থনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন ঈদের উদযাপনে বৈচিত্র্য আনে।

ঈদুল ফিতর একটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক আন্দোলনের মতো। এই সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বৃদ্ধি পায়। ঈদের কেনাকাটায় দোকানপাট এবং বিপণি বিতানগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে।

অন্যদিকে, ফিতরা, যাকাত, এবং দানের মাধ্যমে অর্থ সমাজের নিম্নস্তরে প্রবাহিত হয়। এর ফলে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য কিছুটা হলেও লাঘব হয় এবং দরিদ্ররা ঈদের আনন্দে সামিল হতে পারেন।

ঈদুল ফিতর শিশুদের জন্য এক বিশেষ আনন্দের দিন। নতুন পোশাক, ঈদ সালামি, এবং নানা ধরনের খাবার তাদের জন্য উৎসবকে রঙিন করে তোলে। ঈদের দিন শিশুরা বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা এবং বিনোদনে মেতে ওঠে।

শিশুদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব এবং সম্প্রীতির শিক্ষা দেওয়ার জন্য ঈদ একটি আদর্শ সময়। এই দিন তারা শিখতে পারে কীভাবে গরীব-অসহায়দের প্রতি দয়া এবং সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে হয়।

ঈদুল ফিতর এমন একটি উৎসব যা ধর্মীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে ভ্রাতৃত্ব, সাম্য, এবং মানবিকতার এক জ্বলন্ত প্রতীক। এটি মানুষকে সংযম, দানশীলতা এবং সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়।

এই উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সমাজে ভ্রাতৃত্ব এবং সম্প্রীতির বন্ধন শক্তিশালী করার জন্য আমরা সবাই একত্রে কাজ করতে পারি। ঈদুল ফিতরের প্রকৃত সৌন্দর্য এর মূল চেতনায় নিহিত, যেখানে মানুষকে নিজের চেয়ে অন্যের কথা ভাবতে শেখানো হয়। ঈদুল ফিতরের শিক্ষা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মেনে চলা উচিত, যাতে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

“ঈদ মোবারক” শব্দ শুধু আনন্দের নয়, এটি ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা এবং সম্প্রীতির এক অনন্য বার্তা। এই বার্তাকে ধারণ করে আমরা যদি জীবনের প্রতিটি দিন উদযাপন করতে পারি, তবে আমাদের সমাজ হবে আরও সুন্দর এবং মানবিক।

ঈদুল ফিতর শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি এবং মানবিকতার এক অপূর্ব উদাহরণ। এটি মানুষকে দান, সংযম, এবং অন্যের প্রতি সহানুভূতির শিক্ষা দেয়। ঈদুল ফিতরের আনন্দ কেবলমাত্র ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না; এটি সমাজের সকল স্তরে ছড়িয়ে পড়ে।

সুতরাং, ঈদুল ফিতর এমন একটি উৎসব যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি হলো মানবজীবনের অপরিহার্য অংশ। এই বিশেষ দিনে সকলের জন্য প্রার্থনা এবং ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়াই এর মূল লক্ষ্য।

উত্তাল সাগর, শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ
উত্তাল সাগর, শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শক্তি সঞ্চয় করছে। এটি ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৮ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সোমবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা অথবা রাত নাগাদ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর (পুন.) ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্য কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।

হাঁটা বন্ধ করবেন না, কেনো হাঁটবেন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ
হাঁটা বন্ধ করবেন না, কেনো হাঁটবেন

হাঁটা বন্ধ করবেন না যেন, মস্তিষ্ক নয়, ডিমেনশিয়া শুরু হয় আপনার পা থেকে! বিশ্বজুড়ে বয়স্ক মানুষের অক্ষমতা ও নির্ভরশীলতার প্রধান কারণ হিসেবে ডিমেনশিয়া এখন এক ভয়াবহ বাস্তবতা। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন, এবং প্রতিবছর নতুন করে আরও প্রায় ১ কোটি মানুষ এতে ভোগেন। অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, মস্তিষ্ক সচল রাখাই ডিমেনশিয়া প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। কিন্তু ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) প্রশিক্ষিত স্নায়ুশল্য বিশেষজ্ঞ ডা. অরুণ এল. নাইক জানালেন চমকপ্রদ তথ্য—ডিমেনশিয়ার সূত্রপাত নাকি মস্তিষ্কে নয়, পা থেকেই!
ডিমেনশিয়া কী?
ডিমেনশিয়া কোনো একক রোগ নয়; এটি স্মৃতি, চিন্তাশক্তি ও দৈনন্দিন কাজের সক্ষমতাকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করে এমন একাধিক স্নায়ুরোগের সামষ্টিক নাম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও জটিল হয়ে ওঠে এবং জীবনের মান নষ্ট করে দেয়। তবে সময়মতো নির্ণয়, যত্নশীল পরিচর্যা, জীবনযাপনে পরিবর্তন ও চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর অবস্থা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডিমেনশিয়া শুরু হয় পা থেকে
ডা. নাইক এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আপনি কি জানেন, ডিমেনশিয়া আসলে শুরু হয় আপনার পা থেকে? শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা পায়ের পেশিকে দুর্বল করে, যার ফলে স্যারকোপেনিয়া বা পেশি ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে। এখানেই শুরু হয় বিপদ। গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্বল পায়ের কারণে জ্ঞানগত ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায় এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, শরীরের সক্রিয় পেশি এমন রাসায়নিক উৎপাদন করে যা মস্তিষ্ককে সচল রাখে। এই রাসায়নিকগুলোর নাম ব্রেইন-ডিরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF), যা মস্তিষ্কের স্মৃতিনির্ভর অংশ হিপোক্যাম্পাসে সংযোগ বৃদ্ধি করে। শক্তিশালী পা শুধু ভারসাম্য বজায় রাখে না, বয়স বাড়লেও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমায়। “৬৫ বছরের পর পড়ে যাওয়াই সবচেয়ে বিপজ্জনক,” বলেন ডা. নাইক।
তিনি ২০২০ সালের Neurology সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণার উদাহরণ দেন, যেখানে দেখা গেছে, যাদের হাঁটার গতি কম, তাদের মস্তিষ্কের আকারও ছোট এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকি বেশি। “হাঁটা শুধু শরীরচর্চা নয়, এটি পুরো মস্তিষ্কের এক অনুশীলন,” যোগ করেন তিনি।
কীভাবে হাঁটা মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখে
হাঁটা এমন এক সহজ ব্যায়াম যা শরীর ও মস্তিষ্ক দুটিকেই সক্রিয় রাখে। ডা. নাইক বলেন, “প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্ত থাকে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব, সেরিবেলাম, স্পাইনাল কর্ড ও স্নায়ু প্রতিক্রিয়ার সমন্বয়।” হাঁটা রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ সরবরাহ করে এবং টক্সিন দূর করে। তিনি আরও বলেন, “হাঁটার ধরনে বা ভারসাম্যে পরিবর্তন দেখা গেলে সেটি মস্তিষ্কের আগাম সতর্ক সংকেত। এটি প্রায়ই স্মৃতি সমস্যার বছরখানেক আগেই দেখা দেয়।” হাঁটা নিউরোপ্লাস্টিসিটির এক জীবন্ত উদাহরণও বটে। “হাঁটার সময় শরীরে BDNF সক্রিয় হয়, যা নিউরনগুলোর সংযোগ শক্তিশালী করে,” বলেন ডা. নাইক।
কীভাবে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করবেন ডা. নাইক কয়েকটি সহজ অভ্যাসের পরামর্শ দিয়েছেন, যা নিয়মিত চর্চা করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বজায় থাকে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন। ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম যেমন এক পায়ে দাঁড়ানো বা সরলরেখায় হাঁটার অভ্যাস করুন। হাঁটার সময় কথা বলা বা হালকা মানসিক কাজ করুন—এটি মস্তিষ্কের সমন্বয় ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত পায়ের পেশির ব্যায়াম করুন, এটি মস্তিষ্কের জন্য একপ্রকার ‘বিমা’।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা পরিহার করুন; প্রতি ঘণ্টায় কিছুটা নড়াচড়া করুন। তিনি বলেন, “যখন আপনার পা ধীরে ধীরে কাজ হারায়, তখন মস্তিষ্কও তার পথ অনুসরণ করে। আপনার হাঁটার গতি বজায় রাখুন, তাহলেই সুরক্ষিত থাকবে মস্তিষ্ক।”
ডা. নাইক আরও পরামর্শ দেন, পেশির গঠন রক্ষায় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। তার মতে, কখনোই দেরি হয়ে যায় না। “গবেষণায় দেখা গেছে, ষাট বছর বয়সেও হাঁটা ও ব্যায়াম শুরু করলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। মনে রাখবেন, শক্ত পা মানেই তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক। স্যারকোপেনিয়া মাথা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই সচেতন হোন—চল্লিশের কোঠা থেকেই শুরু করুন।”
সর্বোপরি, সক্রিয় থাকা শুধু চলাফেরার বিষয় নয়; এটি মস্তিষ্ককে তরুণ রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম ও সুষম খাদ্য—এই তিন অভ্যাসই হতে পারে বার্ধক্যের ডিমেনশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ।

বন্ধ হচ্ছে সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ
বন্ধ হচ্ছে সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। সোমবার (২৭ অক্টোবর) এ-সংক্রান্ত এক পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ। পরিপত্রে বলা হয়েছে, কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চাইতে পারবে না। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, চলমান সংকোচনমূলক নীতির প্রেক্ষাপটে গত কয়েক বছরের মতো সংশোধিত বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অব্যাহত রাখতে হবে। এর আওতায় বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি কেনাসহ বেশ কিছু ব্যয় বন্ধ থাকবে। এ নীতি অনুসরণ করে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন আগামী ৯ নভেম্বরের মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই মূল বাজেটে বরাদ্দের মধ্যেই থাকতে হবে। কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। তবে সরকারের অগ্রাধিকার কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রয়োজনে মূল বাজেটে বরাদ্দের ব্যয়সীমার মধ্যে থেকে একই ধরনের বিভিন্ন কাজে বরাদ্দ কমানো বা বাড়ানো যাবে। কিন্তু উন্নয়ন ব্যয়ের অর্থ অব্যয়িত থাকবে বলে অনুমিত হলে ওই অর্থ কোনোক্রমেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।
এতে আরও বলা হয়, সংশোধীত বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আওতায় সরকারি খরচে সব ধরনের বৈদেশিক ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিদেশ ভ্রমণ করা হবে। তা ছাড়া কেনা যাবে না গাড়ি, জাহাজ ও বিমান। তবে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে পরিচালন বাজেটের আওতায় ১০ বছরের পুরোনো গাড়ির প্রতিস্থাপন হিসেবে নতুন গাড়ি কেনা যাবে। এমনকি পরিচালন বাজেটে আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচও বন্ধ রাখতে হবে। তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় শর্তসাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে। আরও কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় স্থগিত রাখা হয়েছে আবার গুরুত্ব বিবেচনায় এসব ক্ষেত্রে ব্যয়ে কিছুটা ছাড়ও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখাসহ ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে সরকারি ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই কোনো খাতে ব্যয় সাশ্রয়ের সুযোগ রয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে সংশোধিত বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। সাধারণত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিশেষ করে মার্চে সরকার জাতীয় বাজেট সংশোধন করে। তবে এবার ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় আগেভাগে বাজেট সংশোধন করা হচ্ছে।