খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

ঈদুল ফিতর : ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির প্রতীক

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ
ঈদুল ফিতর  : ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির প্রতীক

ঈদুল ফিতর ইসলামী সমাজের এক বিশেষ উৎসব যা ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি এবং মানবিকতার এক অনন্য উদাহরণ। এক মাস রমজানের সিয়াম সাধনার পর এই উৎসব আসে মুসলিম জীবনে আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে। এই দিনটি শুধু আনন্দের উৎসব নয়, বরং এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে এক গভীর তাৎপর্য বহন করে। ঈদুল ফিতর মানুষকে মিলনের, ভ্রাতৃত্বের এবং সহমর্মিতার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে।

ঈদুল ফিতর শব্দের অর্থ হলো “রোজা ভঙ্গের উৎসব”। এই উৎসব ইসলামী হিজরি ক্যালেন্ডারের শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে পালিত হয়। রমজান মাসে দীর্ঘ এক মাস ধরে মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখেন। এই সময়ে তারা নিজেকে সংযম, আত্মশুদ্ধি, এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে আত্মশক্তিতে বলিয়ান করেন। ঈদুল ফিতর সেই সংযম ও আত্মশুদ্ধির একটি পুরস্কার স্বরূপ। এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম, যা তিনি রোজাদারদের জন্য নির্ধারণ করেছেন।

ঈদুল ফিতরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো “ফিতরা” প্রদান। ফিতরা একটি বাধ্যতামূলক দান যা প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলমান রমজানের শেষ সময়ে গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করে থাকেন। এটি শুধুমাত্র দানের বিষয় নয়; বরং এটি মুসলিম সমাজে সম্প্রীতি, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ চর্চা।

ঈদুল ফিতর এমন একটি উৎসব যা মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। ঈদের দিনে ধনী-গরীবের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকে না। সবাই একত্রে ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, যা সমাজে সৌহার্দ্যের পরিবেশ সৃষ্টি করে।

ঈদের দিন সকালে ঈদের নামাজ আদায় করার আগে ফিতরা আদায় করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এর মাধ্যমে গরিবদের মধ্যেও ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস নেওয়া হয়। এই দানের অর্থ হলো, কেউ যেন ক্ষুধার্ত থেকে ঈদের উৎসবে অংশ নিতে না পারে। এটি ইসলামের সেই সাম্যের বার্তাকে বহন করে, যা সকল মানুষকে সমান মর্যাদায় দেখার শিক্ষা দেয়।

ঈদুল ফিতর পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার জন্য একটি বিশেষ দিন। পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা, একত্রে খাওয়া-দাওয়া করা এবং প্রিয়জনদের মধ্যে উপহার বিনিময় করার মাধ্যমে এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে ওঠে।

এছাড়াও, ঈদুল ফিতরের দিন প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করারও একটি বিশেষ সুযোগ। প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করা, তাদের ঘরে খাবার পাঠানো, এবং ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে এই সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।

ঈদুল ফিতরের আরেকটি বড় দিক হলো এর আন্তর্জাতিকতা। সারা বিশ্বের মুসলমানরা একসঙ্গে এই দিনটি উদযাপন করেন। এটি বিশ্বের বিভিন্ন জাতি, ভাষা এবং সংস্কৃতির মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করে। ঈদুল ফিতর দেখায় যে, ভাষা বা সংস্কৃতির ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও সবাই একই ধর্মীয় চেতনার মধ্যে ঐক্যবদ্ধ।

১. ঈদগাহে নামাজ আদায়: ঈদের দিন সকলে একত্রে ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন। এটি সমাজে ঐক্যের প্রতীক।
২. ফিতরা প্রদান: ফিতরা দিয়ে গরিবদের ঈদ উদযাপনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।
৩. সহমর্মিতা ও দান: ঈদুল ফিতর দানের গুরুত্ব শেখায়। দানশীলতা মানুষের মধ্যে সহানুভূতির জন্ম দেয়।
৪. পরিচ্ছন্নতা ও নতুন পোশাক: ঈদের দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা ইসলামী সংস্কৃতির একটি অংশ।

ঈদুল ফিতর কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ধনী ও গরীবের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। ঈদের মাধ্যমে সমাজে সম্প্রীতি ও সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়। পাশাপাশি, এটি ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ঈদুল ফিতর একটি বহুমাত্রিক উৎসব, যার গুরুত্ব ধর্মীয়, সামাজিক এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনস্বীকার্য। এটি মুসলমানদের জীবনে শুধু আনন্দ নিয়ে আসে না; বরং নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক শিক্ষা প্রদান করে। চলুন আরও গভীরে গিয়ে ঈদুল ফিতরের বিভিন্ন দিক আলোচনা করি।

রমজান মাসে দীর্ঘ এক মাসের রোজা পালনের পর ঈদুল ফিতর আসে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি বিশেষ দিন হিসেবে। এটি মানুষের আত্মশুদ্ধি এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্যের প্রতীক। ঈদের দিনে যে নামাজ আদায় করা হয়, তা কেবল এক ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ।

ঈদের নামাজে একত্রিত হওয়া এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করার মাধ্যমে মুসলমানরা নিজেদের আত্মিক জীবনে এক নতুন প্রেরণা লাভ করে। এটি মানুষকে আল্লাহর করুণা ও দয়া অনুভব করতে সহায়তা করে।

ঈদুল ফিতর কেবল ধনী বা সামর্থ্যবানদের উৎসব নয়; এটি এমন একটি দিন যা গরীবদের প্রতিও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। “ফিতরা” প্রদানের মধ্য দিয়ে সমাজে সমতা এবং সম্প্রীতির বার্তা প্রচারিত হয়। এই দানের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে, ঈদের আনন্দে কোনো গরীব বা অসহায় মানুষ যেন বঞ্চিত না হয়।

ফিতরার মাধ্যমে মানুষ গরীবদের প্রতি যে সহানুভূতি ও দয়া দেখায়, তা মানবিকতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা ও সহানুভূতির বন্ধন তৈরি করে।

ইসলাম সাম্যের ধর্ম। ধনী-গরীব, ছোট-বড়, জাতি-গোষ্ঠী—সবাই এক সৃষ্টিকর্তার কাছে সমান। ঈদুল ফিতর সেই সাম্যের বার্তাকেই আরও শক্তিশালী করে। ঈদের নামাজে সবাই একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় করেন। এখানে ধনী-গরীবের কোনো ভেদাভেদ থাকে না।

ঈদগাহে নামাজের পর মানুষ একে অপরকে কোলাকুলি করে এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করে। এই কার্যক্রম সমাজে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে। ঈদের দিনে ধনী-গরীব, শিশু-বৃদ্ধ, সবাই একত্রে আনন্দে মেতে ওঠে।

ঈদুল ফিতর কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে এক বিশেষ রূপ ধারণ করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপনের পদ্ধতি ভিন্ন হলেও এর মূল বার্তা এক।

বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপন

বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর এক বিশাল উৎসব হিসেবে পালিত হয়। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই মানুষ নতুন পোশাক কেনা, ঘরবাড়ি সাজানো এবং খাবার প্রস্তুত করার কাজ শুরু করে।

ঈদের সকালে সবাই নতুন পোশাক পরে ঈদগাহে যান। ঈদের বিশেষ খাবার, যেমন সেমাই, ফিরনি, পায়েস, এবং বিরিয়ানির মতো খাবার ঘরে ঘরে প্রস্তুত হয়। আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া এবং উপহার বিনিময়ের মধ্য দিয়ে ঈদের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে ওঠে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপনের ধরণ ভিন্ন হলেও এর আবেগ এবং উৎসবের আমেজ অভিন্ন। মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ খাবারের আয়োজন, তুরস্কে ঈদ মিছরি বিতরণ, এবং ইন্দোনেশিয়ায় বিশেষ প্রার্থনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন ঈদের উদযাপনে বৈচিত্র্য আনে।

ঈদুল ফিতর একটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক আন্দোলনের মতো। এই সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বৃদ্ধি পায়। ঈদের কেনাকাটায় দোকানপাট এবং বিপণি বিতানগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে।

অন্যদিকে, ফিতরা, যাকাত, এবং দানের মাধ্যমে অর্থ সমাজের নিম্নস্তরে প্রবাহিত হয়। এর ফলে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য কিছুটা হলেও লাঘব হয় এবং দরিদ্ররা ঈদের আনন্দে সামিল হতে পারেন।

ঈদুল ফিতর শিশুদের জন্য এক বিশেষ আনন্দের দিন। নতুন পোশাক, ঈদ সালামি, এবং নানা ধরনের খাবার তাদের জন্য উৎসবকে রঙিন করে তোলে। ঈদের দিন শিশুরা বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা এবং বিনোদনে মেতে ওঠে।

শিশুদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব এবং সম্প্রীতির শিক্ষা দেওয়ার জন্য ঈদ একটি আদর্শ সময়। এই দিন তারা শিখতে পারে কীভাবে গরীব-অসহায়দের প্রতি দয়া এবং সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে হয়।

ঈদুল ফিতর এমন একটি উৎসব যা ধর্মীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে ভ্রাতৃত্ব, সাম্য, এবং মানবিকতার এক জ্বলন্ত প্রতীক। এটি মানুষকে সংযম, দানশীলতা এবং সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়।

এই উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সমাজে ভ্রাতৃত্ব এবং সম্প্রীতির বন্ধন শক্তিশালী করার জন্য আমরা সবাই একত্রে কাজ করতে পারি। ঈদুল ফিতরের প্রকৃত সৌন্দর্য এর মূল চেতনায় নিহিত, যেখানে মানুষকে নিজের চেয়ে অন্যের কথা ভাবতে শেখানো হয়। ঈদুল ফিতরের শিক্ষা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মেনে চলা উচিত, যাতে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

“ঈদ মোবারক” শব্দ শুধু আনন্দের নয়, এটি ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা এবং সম্প্রীতির এক অনন্য বার্তা। এই বার্তাকে ধারণ করে আমরা যদি জীবনের প্রতিটি দিন উদযাপন করতে পারি, তবে আমাদের সমাজ হবে আরও সুন্দর এবং মানবিক।

ঈদুল ফিতর শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি এবং মানবিকতার এক অপূর্ব উদাহরণ। এটি মানুষকে দান, সংযম, এবং অন্যের প্রতি সহানুভূতির শিক্ষা দেয়। ঈদুল ফিতরের আনন্দ কেবলমাত্র ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না; এটি সমাজের সকল স্তরে ছড়িয়ে পড়ে।

সুতরাং, ঈদুল ফিতর এমন একটি উৎসব যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি হলো মানবজীবনের অপরিহার্য অংশ। এই বিশেষ দিনে সকলের জন্য প্রার্থনা এবং ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়াই এর মূল লক্ষ্য।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।