খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫, ৮ কার্তিক, ১৪৩২

নদীকেন্দ্রিক জেলে জীবন : সংগ্রাম, স্বপ্ন ও টিকে থাকার লড়াই

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ
নদীকেন্দ্রিক জেলে জীবন : সংগ্রাম, স্বপ্ন ও টিকে থাকার লড়াই

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ অসংখ্য নদী এ দেশের বুক চিরে বয়ে চলেছে। নদী শুধু ভূপ্রকৃতির অংশ নয়, এটি মানুষের জীবন, জীবিকা ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। বিশেষ করে জেলে সমাজের জীবন নদীকেন্দ্রিক। ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগেই যখন নদীর বুক চিরে নৌকা ভেসে ওঠে। তখন বোঝা যায় নদী ও মানুষের সম্পর্ক কতটা গভীর। তবে এই সম্পর্কের ভেতরে যেমন আছে সৌন্দর্য ও আশা, তেমনি আছে বেদনা, সংগ্রাম ও বেঁচে থাকার যুদ্ধ।
জেলেদের প্রধান জীবিকা হলো নদীতে মাছ ধরা। পদ্মা-মেঘনার বুকে ভেসে ওঠা তাদের নৌকা যেন তাদের ভাসমান সংসার। সারাদিন জাল পেতে, কখনো ভোরে কখনো গভীর রাতে, তারা নদীতে পাড়ি জমায়। কখনো প্রচুর মাছ ধরা পড়ে, আবার কখনো জাল ফাঁকা ওঠে। মাছের উপর নির্ভর করেই তাদের সংসার চলে।
তবে এই জীবিকার পথ একেবারেই অনিশ্চিত। কখনো মৌসুম ভালো গেলে পরিবারের চাহিদা কিছুটা পূরণ হয়, আবার দুর্ভাগ্যজনক সময়ে ধার-দেনা করেই দিন কাটাতে হয়। নদীর মাছ এখন আর আগের মতো নেই। অতিরিক্ত জাল পাতা, অবৈধ জাল ব্যবহার, নদী দূষণ এবং প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে মাছের উৎপাদন অনেক কমে গেছে। ফলে জেলেদের জীবন প্রতিনিয়ত কঠিন হয়ে উঠছে।
মাছ ধরা ও অনিশ্চয়তার পথবাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের নদী, খাল, বিল ও সমুদ্র উপকূলের সঙ্গে জেলেদের জীবিকা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মাছ ধরা শুধু তাদের জীবিকার মাধ্যম নয়, এটি একদিকে সংস্কৃতি, অন্যদিকে হাজার বছরের ঐতিহ্যের অংশ। কিন্তু সময়ের পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সরকার নির্ধারিত বিধিনিষেধ ও আধুনিক চাহিদার চাপে জেলেদের জীবন এখন অনিশ্চয়তার পথে এগোচ্ছে।
গ্রামের অধিকাংশ জেলে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত নদীতে বা সমুদ্রে জাল ফেলেন। ঝড়-বৃষ্টি, প্রচণ্ড রোদ কিংবা কনকনে শীত সব কিছুর মধ্যেই তাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকে। প্রতিদিন মাছ ধরতে গিয়ে কখনো তারা শূন্য হাতে ফিরে আসেন, আবার কখনো সামান্য মাছের আয়ে সংসারের নুন-ভাত চলে। অথচ এই জীবিকার ওপর নির্ভরশীল হাজারো পরিবার।
জেলেদের জীবনে বড় একটি সংকট হলো মৌসুমি নিষেধাজ্ঞা। জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজনন মৌসুমে সরকার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিঃসন্দেহে এটি মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয়, কিন্তু এর ফলে জেলেরা দীর্ঘদিন বেকার হয়ে পড়েন। সরকারি ত্রাণ পেলেও তা অনেক সময় যথেষ্ট হয় না। ফলে পরিবার চালাতে গিয়ে তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন, কেউ কেউ বিকল্প পেশায় যেতে বাধ্য হন।
অন্যদিকে, নদী ও সমুদ্রের অস্থিতিশীল আবহাওয়া জেলেদের জীবনে বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করে। অনেক সময় ঝড়ের কবলে পড়ে জেলে নৌকা ও জাল হারান, এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। এছাড়া নদীতে দস্যুতা, চাঁদাবাজি ও অবৈধ ট্রলার মালিকদের চাপও তাদের নিরাপদ জীবিকা হুমকির মুখে ঠেলে দেয়।
আধুনিক বাজার ব্যবস্থায় জেলেদের অবস্থানও দুর্বল। তারা সরাসরি মাছ বিক্রি করতে পারেন না; আড়তদার ও মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদের কষ্টার্জিত মাছ কম দামে কিনে নেন। ফলে জেলেরা প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। অনেক সময় বাজারে চাহিদা থাকলেও জেলেদের হাতে তেমন আয় থাকে না।
এত কিছুর পরও জেলেরা হাল ছাড়েন না। মাছ ধরা তাদের কাছে শুধু পেশা নয়, জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা বিশ্বাস করেন নদী বা সমুদ্রই তাদের রুজির পথ দেখাবে। তবে টেকসই সমাধানের জন্য সরকারকে জেলেদের জন্য কার্যকর সহায়তা, সহজ শর্তে ঋণ, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে জেলেদের অবদান অপরিসীম। তাদের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষিত না হলে মাছের উৎপাদন টেকসই হবে না। তাই আজ প্রয়োজন জেলেদের জীবনে স্থায়ী নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা, যাতে তারা আর অনিশ্চয়তার পথে নয়, নিশ্চিন্ত জীবিকার পথে হাঁটতে পারেন।
জেলেদের পরিবারে প্রাচুর্য নেই। অধিকাংশ পরিবার নিম্ন আয়ের হওয়ায় সংসারের চাহিদা পূরণ করা কষ্টকর। সন্তানদের পড়াশোনার খরচ, খাবার, পোশাক, চিকিৎসা সবকিছুই এক বিশাল চাপ। অনেক সময় জেলের স্ত্রীরা পরিবারের খরচ চালাতে ছোটখাটো কাজ করেন।
তাদের পরিবারের ভেতরে ভালোবাসা ও মমতা থাকলেও অভাবের কারণে প্রায়শই কলহ দেখা দেয়। সন্তানরা অনেক সময় পড়াশোনা শেষ করতে পারে না; ছোটবেলাতেই বাবার নৌকায় জাল ফেলতে শেখে। দারিদ্র্যের কারণে শিশুশ্রম, অল্প বয়সে বিয়েÑএসব সামাজিক সমস্যা তাদের পরিবারেও বিদ্যমান।
বাংলাদেশের নদী-নির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতিতে জেলেদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নদী ও সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এই জীবনের পেছনে লুকিয়ে আছে এক অজানা কষ্ট, অপূর্ণতা আর সংগ্রামের গল্প। বিশেষ করে জেলেদের পারিবারিক জীবনে অর্থনৈতিক সংকট, অনিশ্চয়তা এবং সামাজিক বৈষম্য এক অদৃশ্য শৃঙ্খল হিসেবে কাজ করে।
জেলেদের পরিবারের নারী ও শিশুরা প্রতিদিন অজানা দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটান। যখন স্বামী সমুদ্রে বা নদীতে মাছ ধরতে যান, তখন পরিবারের সদস্যরা ভয়ে অপেক্ষা করেনÑতারা নিরাপদে ফিরবেন তো? ঝড়-বৃষ্টি কিংবা দুর্ঘটনা প্রায়ই প্রাণ কেড়ে নেয় বহু জেলের। ফলে অসংখ্য পরিবার অকালেই স্বজন হারানোর শোক নিয়ে বেঁচে থাকে।
অর্থনৈতিক অনটন জেলেদের সংসারের সবচেয়ে বড় সমস্যা। মাছ না পেলে আয় হয় না, আয় না হলে সংসার চলে না। ফলে পরিবারে চাহিদা পূরণ হয় না, শিশুদের শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয়। অনেক জেলে পরিবার তাদের সন্তানদের স্কুল থেকে ঝরে পড়তে বাধ্য করে, কারণ সংসার চালাতে শিশুকেও শ্রমে যুক্ত হতে হয়। এর ফলে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে একটি বড় প্রজন্ম দারিদ্র্যের চক্রেই বন্দি হয়ে পড়ে।
নারীদের সংগ্রামও নেহাত কম নয়। স্বামী যখন নদীতে, তখন সংসার সামলানো, সন্তান লালনপালন, কখনো কখনো বাজার থেকে মাছ বিক্রি করা সব দায়িত্বই নিতে হয় তাদের। অনেক নারী বলেন, স্বামী যদি মাছ না আনতে পারে, তাহলে সংসারে কী রান্না হবে, তা নিয়েই চিন্তা করতে হয়। অর্থকষ্টের কারণে তারা প্রায়ই চিকিৎসা বা পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হন।
সামাজিক বৈষম্যও জেলেদের জীবনে বড় এক বাধা। সমাজে তারা প্রায়শই প্রান্তিক শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত হন। উন্নত সুযোগ-সুবিধা কিংবা সরকারি সহায়তার ক্ষেত্রেও তাদের বঞ্চনার অভিযোগ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার যে ত্রাণ দেয়, তা অনেক সময় সবার কাছে পৌঁছায় না। ফলে পরিবারগুলো আরও বিপদে পড়ে।
তারপরও জেলেদের পরিবার আশা ছাড়ে না। তারা বিশ্বাস করেন, নদী একদিন তাদের ভাগ্য বদলাবে। সন্তানদের পড়াশোনার মাধ্যমে জীবনের কষ্ট ঘোচানোর স্বপ্ন দেখেন। অনেক পরিবার বিকল্প আয়ের পথ খুঁজতে চেষ্টা করছে কেউ কৃষিকাজে, কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসায়, আবার কেউ নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করছেন।
তবে টেকসই সমাধানের জন্য জেলে পরিবারের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। শিশুদের শিক্ষায় প্রণোদনা, নারীদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ, জেলেদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারলে পরিবারগুলো কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে জেলেদের অবদান অমূল্য। অথচ তাদের পরিবার আজও দারিদ্র্য, অনিশ্চয়তা ও অপূর্ণতার ছায়ায় ঢাকা। তাই রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব হলো জেলে পরিবারের জীবনে স্থায়ী নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা, যাতে তারা কেবল সংগ্রামের গল্প নয়, পূর্ণতার জীবনও গড়ে তুলতে পারেন।
জেলেদের সামাজিক জীবন অন্য পেশার মানুষের তুলনায় ভিন্ন। তারা নদীকেন্দ্রিক বসতিতে বসবাস করেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা গুচ্ছগ্রামে বা নদীর তীরে ছোট ছোট ঝুপড়িতে বাস করেন। সমাজে প্রায়শই তারা অবহেলিত। অন্যদের মতো জমি বা স্থায়ী আয় তাদের নেই। ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকে।
তবুও তাদের মাঝে একধরনের ঐক্য রয়েছে। একজন জেলের বিপদে অন্যরা এগিয়ে আসে। ঝড়-বৃষ্টি বা দুর্ঘটনায় কারো নৌকা ভেসে গেলে, সবাই মিলে তাকে সাহায্য করে। উৎসব-অনুষ্ঠানও তারা মিলেমিশে পালন করে।
নদীর বুক শুধু মাছের ভাণ্ডার নয়, এটি এক বিপদের জায়গাও। হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়, বজ্রপাত, তীব্র স্রোত কিংবা বর্ষার বন্যা জেলেদের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি। প্রায়ই শোনা যায় নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনা। অনেক জেলে নদীতে নিখোঁজ হন, তাদের আর খোঁজ মেলে না। তখন অসহায় পরিবার সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই শুরু করে।
বৃষ্টির দিনে কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের সময় তারা নদীতে যেতে ভয় পেলেও জীবিকার তাগিদে অনেকেই ঝুঁকি নেন। কারণ, মাছ না ধরলে পরিবার না খেয়ে থাকে।
দেশের নদী ও সমুদ্রপাড়ের জীবনে জেলেরা অন্যতম প্রধান পেশাজীবী। তাদের প্রতিদিনের সংগ্রাম নদীর খামখেয়ালি স্বভাব আর প্রকৃতির অনিশ্চয়তার সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঝড়-বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় কিংবা হঠাৎ জলোচ্ছ্বাসÑএসব দুর্যোগ যেন জেলেদের জীবনের স্থায়ী সঙ্গী।
ভোর হতে না হতেই অনেক জেলে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে নদীতে নামেন। আকাশ পরিষ্কার থাকলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা বদলে যেতে পারে। কালো মেঘ জমে ওঠে, ঝোড়ো বাতাস শুরু হয়, নদী ফুলে-ফেঁপে ওঠে। এ সময় ছোট নৌকা চালিয়ে মাঝনদীতে থাকা জেলেরা মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই টিকে থাকার লড়াই চালান। অনেক সময় জাল, নৌকা, এমনকি জীবনও হারাতে হয়।
নদীর এই খামখেয়ালিপনা শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগেই সীমাবদ্ধ নয়। শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যায়, মাছের প্রাচুর্য কমে যায়। আবার বর্ষাকালে অতিরিক্ত স্রোত ও প্লাবনে জাল ফেলাই কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে জেলেদের আয় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। একদিন ভালো মাছ পেলে কয়েকদিন সংসার চলে, আবার টানা কয়েকদিন শূন্য হাতে ফিরতে হয়।
ঝড়ের সময় জেলে পরিবারের কষ্ট আরও বেড়ে যায়। স্বামী-সন্তান নদীতে থাকায় নারী ও শিশুরা উদ্বেগে দিন কাটান। ঝড়ের খবর শুনলেই তারা দোয়া করতে থাকেন, প্রিয়জন নিরাপদে ফিরে আসবেন কি না সেই উৎকণ্ঠা ঘিরে ধরে সবাইকে। অনেক সময় কোনো পরিবার তাদের স্বজনকে হারিয়ে সারাজীবন দুঃখে দিন কাটান।
সরকারি দপ্তরগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে নদীতে নামতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রচার করে। তবে সব জেলে তা মানতে পারেন না। কারণ, না গেলে আয় হবে না, সংসার চলবে না। তাই তারা জানেন ঝুঁকি আছে, তবুও নদীতে নামতে বাধ্য হন। অনেক জেলে বলেন, পেটে ভাত না থাকলে ঝড়-বৃষ্টি আর নদীর ভয় দেখলে কী হবে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আধুনিক নৌকা, নিরাপত্তা সরঞ্জাম, সহজ যোগাযোগব্যবস্থা ও বিকল্প কর্মসংস্থান দরকার। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ মৌসুমে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিলে জেলেরা প্রাণহানির ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নামতে বাধ্য হবেন না।
বাংলাদেশের অর্থনীতি ও খাদ্যচাহিদা পূরণে জেলেদের অবদান অনস্বীকার্য। অথচ তারা প্রতিদিন ঝড়-বৃষ্টি ও নদীর খামখেয়ালি স্বভাবের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছেন। তাই তাদের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
বন্যা ও খরার এই বৈপরীত্য তাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। একদিকে অতিরিক্ত পানি, অন্যদিকে পানির অভাব দুই অবস্থাতেই তাদের জীবন দুর্বিষহ।
অভাব-অনটনের কারণে জেলেদের পরিবারে স্বাস্থ্যসেবা প্রায় অপ্রতুল। অপুষ্টি, ডায়রিয়া, জ্বর, চর্মরোগসহ নানা রোগ তাদের পরিবারে ঘন ঘন দেখা দেয়। মহামারীর সময় যেমন কোভিড-১৯ এ অনেক জেলে নদীতে যেতে পারেননি। মাছ ধরার উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের জীবন আরও কঠিন হয়েছে। চিকিৎসার খরচ বহন করা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
জেলে পরিবারের শিশুরা অন্য শিশুদের মতো স্বপ্ন দেখতে জানে। তারাও স্কুলে যেতে চায়, পড়াশোনা করে বড় হতে চায়। কিন্তু অভাব তাদের স্বপ্নকে ভেঙে দেয়। অনেক শিশু অল্প বয়সেই পড়াশোনা ছেড়ে বাবার সাথে নদীতে নামে। কেউ আবার মাছ বিক্রি করতে বাজারে যায়। ফলে তাদের শৈশব কেটে যায় শ্রমের ভেতরে।
বাংলাদেশ সরকার জেলেদের সহায়তার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ইলিশ প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে তাদেরকে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে চাল দেওয়া হয়। তবে এই সহায়তা সব জেলের কাছে পৌঁছায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় তারা বঞ্চিত হন রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের কারণে।
এছাড়া এনজিওগুলো মাইক্রোক্রেডিট বা ছোট ঋণের মাধ্যমে তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করে। তবে ঋণ শোধ করতে গিয়ে অনেক সময় তারা নতুন করে কষ্টে পড়ে।
নদীকে ঘিরে তাদের মাঝে রয়েছে নানা বিশ্বাস ও সংস্কৃতি। কেউ নদীকে মায়ের রূপে কল্পনা করে। মাছ ধরা শুরু করার আগে প্রার্থনা করে। বিশেষ উৎসবে তারা নৌকা সাজায়, গান গায়, নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা করে। এসব তাদের জীবনে আনন্দের রঙ যোগ করে।
সব সংগ্রামের মাঝেও জেলে সমাজের মানুষ স্বপ্ন দেখে। তারা চায় সন্তানরা পড়াশোনা করে যেন ভিন্ন পেশায় যেতে পারে, অভাবের দুষ্টচক্র ভাঙতে পারে। তারা চায় নদীর মাছ আবার বেড়ে উঠুক, তাদের জীবিকা টেকসই হোক। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন, নদী ভাঙন, দূষণ ও অব্যবস্থাপনার কারণে সেই স্বপ্ন প্রতিদিনই কঠিন হয়ে উঠছে।
নদীকেন্দ্রিক জীবন মানেই সৌন্দর্যের সঙ্গে সংগ্রামের এক মিশ্র বাস্তবতা। নদী যেমন দেয়, তেমনি কেড়ে নেয়। জেলে সমাজের জীবন আমাদের সামনে তুলে ধরে মানুষ কীভাবে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকে। তাদের চোখে ভোরের নদীর আলো যেমন নতুন আশার প্রতীক, তেমনি রাতের অন্ধকার ঝড়ো হাওয়া এক অনিশ্চিত জীবনের প্রতিচ্ছবি।
তাদের গল্প শুধু জেলের গল্প নয়, এটি মানবজীবনের অদম্য সংগ্রামের গল্প। সঠিক সহায়তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও জীবিকার বিকল্প সুযোগ পেলে এই মানুষগুলো দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। নদীর মতোই তারা তখন হবে অবারিত, স্বপ্নময় ও আশাবাদী।
উজ্জ্বল হোসাইন : প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

উপদেষ্টাদের নিয়ে এত প্রশ্ন কেন?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪১ অপরাহ্ণ
উপদেষ্টাদের নিয়ে এত প্রশ্ন কেন?

বাংলাদেশে রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত নয়, বলা ভালো, গরম চুল্লির ঢাকনা সবে নড়তে শুরু করেছে। কারণ একটাই, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তিনি এবার শুধু অর্থনীতির সমীকরণ নয়, রাজনীতির সমীকরণও মেলাতে নেমেছেন। কিন্তু তার কাগজের খাতা যেন উলটেপালটে গেছে উপদেষ্টাদের নিয়েই।

গত ক’দিনে পরপর তিনটি দলের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা – বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি -এনসিপি। প্রতিটি বৈঠকই ছিল রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। আর প্রতিটি বৈঠকের পরই তিন দল এক সুরে বলেছে, উপদেষ্টাদের অনেকে নিরপেক্ষ নন, তারা দলীয় ভূমিকা পালন করছে।

একই কথা তিন দলের মুখে শুনে মনে হতে পারে, যেন পূর্বনির্ধারিত স্ক্রিপ্ট। কিন্তু স্ক্রিপ্ট লিখেছেন কে? তা নিয়ে এখনই জল্পনা তুঙ্গে।

উপদেষ্টাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় দুই নাম, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। দু’জনই তরুণ, এক সময় ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এখন সরকারের উপদেষ্টা। তাঁদের বর্তমান নিয়ে কথা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে যে, তাঁরা অন্তবর্তী নিরপেক্ষ সরকারের থেকে এনসিপির হয়ে কাজ করছেন।

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়েই সরকার প্রধানের কার্যালয় থেকে এই দুই উপদেষ্টাকে নাকি পদত্যাগের ‘পরামর্শ’ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা তা শোনেননি। এখন শোনা যাচ্ছে, মাহফুজ আলমের পরিবারের একজন আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে চলেছেন। আর আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপির স্থানীয় প্রার্থীর সঙ্গে প্রকাশ্য নির্বাচন পূর্ব দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির বক্তব্য স্পষ্ট ‘নির্বাচনের আগে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের যেতে হবে’। বিএনপির দাবি, যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর নেই,অন্তর্বর্তী সরকারকেই সেই ভূমিকা নিতে হবে। তাই অন্তত নিরপেক্ষতার আবরণটুকু বজায় থাকুক।
কিন্তু ‘নিরপেক্ষতা’ কথাটাই এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বিতর্কিত মুদ্রা। যেদিকেই উলটে ধরো, কারও না কারও মুখ সেখানে ফুটে ওঠে।
বিএনপি একা নয়। জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপিও অভিযোগ তুলেছে – সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সরাসরি রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ। কেউ কেউ তো অতীতে নির্বাচনে প্রার্থীও ছিলেন। আবার জাতীয় পার্টির একাংশ ও গণ অধিকার পরিষদও বলেছে, উপদেষ্টাদের মধ্যে নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে।
এমনটা যদি অবস্থা হয় তাহলে অধ্যাপক ইউনুস কি আসন্ন নির্বাচনে এমন এক উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আছেন, যাঁদের মধ্যে অর্ধেকই রাজনৈতিকভাবে চিহ্নিত?
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। কিন্তু দেশের ভেতরে তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, ইউনুস সাহেব হয়তো বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সরকার গঠন করতে চেয়েছিলেন,কিন্তু রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারছেন না উপদেষ্টাই।
অধ্যাপক ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই বলছে, তাদের মূল লক্ষ্য সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, এই সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা নিজেরাই রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট।
বাংলাদেশে ‘নির্দলীয়’ শব্দটির এক বিশেষ রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের পতনের পর গঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা- সেই ব্যবস্থার মূল ভিত্তিই ছিল নির্বাচনের আগে একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন। ২০১১ সালে সেই ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর থেকেই প্রশ্ন ঘুরেফিরে এক জায়গায় – এখন নির্বাচন দেখবে কে?
অধ্যাপক ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার সেই প্রশ্নের উত্তর হতে পারত। কিন্তু উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষতার মানদণ্ডই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে সেই সমীকরণ কতটা বিশ্বাসযোগ্য থাকে?
ঢাকার রাজনৈতিক চৌহদ্দি ছাড়িয়ে এখন নাগরিক সমাজও প্রশ্ন তুলছে – ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের উপদেষ্টারা আসলে কতটা নিরপেক্ষ? কেউ ব্যাংকের পরিচালক,কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি,কেউ আবার সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে কারও না কারও রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকারে বসে সেই যোগাযোগ কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, সেটা নিয়েই বড় আলোচনা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘বিশ্বাস’ নামের জিনিসটা বহুদিন আগেই অনুপস্থিত। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে বিশ্বাস করে না, প্রশাসনকে বিশ্বাস করে না, এমনকি গণমাধ্যমকেও করে না। এখন যদি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতাও প্রশ্নের মুখে পড়ে,তাহলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে কাকে?
অধ্যাপক ইউনুস এখন যে পরিস্থিতিতে আছেন, তাতে তাকে একাধারে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক ও মনস্তাত্ত্বিক— তিন ভূমিকাতেই অভিনয় করতে হচ্ছে। অর্থনীতি তিনি বোঝেন, রাজনীতি বুঝতে শুরু করেছেন, কিন্তু মনস্তত্ত্ব? সেটাই সবচেয়ে জটিল। কারণ,তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্ত এখন ব্যাখ্যা করা হচ্ছে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। কাকে উপদেষ্টা করা হলো, কোন দলের অনুরোধে করা হলো, কে কী ভূমিকা রাখছেন – সব কিছু নিয়েই চলছে ব্যাখ্যা ও প্রতিব্যাখ্যা।
তাঁর সামনে এখন দুটি পথ – হয় বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে একদম পরিষ্কার বার্তা দেওয়া, নয়তো রাজনৈতিক ঝড়ের মধ্যে নাবিকের মতো দাঁড়িয়ে থাকা। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঝড়ের গতি এমন যে,তাতে অভিজ্ঞ নাবিকও দিক হারিয়ে ফেলেন।
এখন নাগরিক সমাজের কৌতূহল একটাই – এই উপদেষ্টাদের নিয়েই কি অধ্যাপক ইউনুস নির্বাচনের পথে হাঁটবেন? যদি তাই হয়, তাহলে সেই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে আগেই যে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে, তা কি আর মুছবে?
বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই রাজনৈতিক রণক্ষেত্র। সেই মাঠে যদি রেফারির পক্ষপাত নিয়ে আগেই প্রশ্ন ওঠে,তাহলে খেলা শুরু হওয়ার আগেই ফলাফল নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। প্রধান উপদেষ্টার দফতর নিশ্চয়ই তা জানে। এখন দেখা যাক, অধ্যাপক ইউনুস এই ঝড়ের মধ্যে কীভাবে নিজের নৌকো চালান – অর্থনীতির সূত্রে,নাকি রাজনীতির কৌশলে।

নির্বাচিত সরকার ছাড়া কিস্তি ছাড় করতে রাজি নয় আইএমএফ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৩০ অপরাহ্ণ
নির্বাচিত সরকার ছাড়া কিস্তি ছাড় করতে রাজি নয় আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড় করার কথা আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির প্রথমার্ধে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, তারা আইএমএফ এর ঋণের শর্ত মানবে কি-না, সেই নিশ্চয়তা না পেয়ে কিস্তির অর্থ ছাড় করতে রাজি নয় সংস্থাটি। ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ডলার সংকটের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার আইএমএফ-এর কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সংস্থাটি থেকে আরও ৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি সই করে। ফলে মোট ৫.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে ৫তম কিস্তি পর্যন্ত প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী ডিসেম্বরে ৬ষ্ঠ কিস্তি ও আগামী জুনে ৭ম কিস্তি পাওয়ার কথা। সাধারণত প্রতি কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফ এর দেওয়া শর্তগুলোর কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে সরকার, তা যাচাই করতে সংস্থাটির একটি মিশন দুই সপ্তাহ করে বাংলাদেশে এসে রিভিউ করে থাকে। ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড় করার আগে পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ২৯ অক্টোবরে এই মিশন আসছে বাংলাদেশে। ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড়ের পূর্বশর্ত হিসেবে আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছিল, তার মধ্যে শুধু রাজস্ব আহরণের শর্ত পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। বাকি সবগুলো পূরণ করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা সব শর্ত পূরণ করলেও সময়মতো কিস্তির অর্থ নাও পেতে পারি। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সরকার ঋণের শর্তগুলো মানবে কি-না, সেটি নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ৬ষ্ঠ কিস্তির অর্থ ছাড় করবে।’ অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঋণের আগামী কিস্তির অর্থ ডিসেম্বরের বদলে মার্চ-এপ্রিলে ছাড় করবে আইএমএফ।

‘আমার পুরো শরীর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করা’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১:২৪ অপরাহ্ণ
‘আমার পুরো শরীর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করা’

বলিউড কিংবা হলিউডের অনেক তারকাই প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছেন। মার্কিন পপ তারকা কার্ডি বি থেকে বলিউড তারকা শিল্পা শেঠি, আনুশকা শর্মা—অনেকেই প্লাস্টিক সার্জারি করার কথা স্বীকারও করেছেন। যদিও ঢাকার তারকাদের মধ্যেও অনেকের প্লাস্টিক সার্জারি করানোর বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও তা নিয়ে তাদের খুব একটা কথা বলতে দেখা যায় না। তবে সম্প্রতি এক পডকাস্ট শোতে হাজির হয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান।
সেখানে জয়া আহসান বলেন, ‘মানুষ বলে, আমার পুরো শরীর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করা। এটা কিন্তু আমি শুনেছি।আমার নাকি হেড টু টো (মাথা থেকে পা পর্যন্ত) প্লাস্টিক সার্জারি করা।’ এরপর তিনি বলেন, ‘বোটক্স, এটা-সেটা (ব্যবহার করি)—এগুলো বলে মানুষ। মানুষ মনে করে, এগুলো (মন্তব্য) আমি দেখি না। আমি দেখি মাঝেমধ্যে। আমাদের কমেন্ট বক্স দেখলে আমাদের দেশের পুরুষদের স্টেট অব মাইন্ডটা (মানসিক অবস্থা) বোঝা যায়।’ তবে প্লাস্টিক সার্জারি করেছেন, নাকি করেননি—তা স্পষ্ট করেননি এই অভিনেত্রী। এ সময় ট্রল প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি। ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২’ ছবিতে তাঁর বলা ‘মারোওও’ সংলাপটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ট্রল হয়।
এই প্রসঙ্গে জয়া বলেন, এটা খুব দরকার ছিল, ভালো হয়েছে তো, পচানি খাইছি না। সব সময় সবকিছুতে সফল হব? ভুল করেছি, সেটাই ঠিক আছে। আমার জীবনে কোনো কিছু ভুল না। ওই ভুলগুলো নিয়েই আজকের জয়া আমি। ২০২৫ সাল জয়া আহসানের জন্য বেশ সফল একটি বছর। বাংলাদেশ ও ভারতে তার অভিনীত ‘তাণ্ডব’, ‘উৎসব’, ‘ডিয়ার মা’ ও ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ ছবিগুলো মুক্তি পেয়েছে। সর্বশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় তার নতুন ছবি ‘ফেরেশতে’। পাশাপাশি ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছে ‘জয়া আর শারমিন’ ও ‘নকশীকাঁথার জমিন’।