খুঁজুন
                               
বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ৬ কার্তিক, ১৪৩২

আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ৬০ গাড়ি কেনা হচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ
আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ৬০ গাড়ি কেনা হচ্ছে

আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ৬০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসি মডেলের প্রতিটি গাড়ির দাম এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এসব গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে ১০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন এমন কর্মকর্তাদের জন্য কেনা হচ্ছে ১৯৫টি পাজেরোসহ মোট ২২০টি গাড়ি। সব মিলিয়ে ২৮০টি গাড়ি কিনতে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৪৪৫ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরে যানবাহন কেনার ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ নিতে একটি পরিপত্র জারি করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। এই পদক্ষেপে তা উপেক্ষিত হলো। গত ৮ জুলাই জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের নতুন যানবাহন কেনা বন্ধ থাকবে। তবে পরিচালন বাজেটের আওতায় প্রাধিকারভুক্ত কোনো সরকারি কর্মকর্তার ব্যবহৃত গাড়ি ১০ বছরের বেশি পুরোনো হওয়ায় ব্যবহারের অযোগ্য হলে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে গাড়ি কেনা যেতে পারে। সরকারের পরিবহন পুলের হিসাবমতে, গত সরকারের মন্ত্রীদের জন্য কেনা যে গাড়িগুলো রয়েছে সেগুলো ৯ বছরের পুরোনো। এ ক্ষেত্রেও পরিপত্রের শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে।
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ক্যামরি ও ল্যান্সার গাড়ি কেনা হয়। এর মধ্যে মন্ত্রীরা ব্যবহার করতেন ক্যামরি গাড়ি। প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা ব্যবহার করতেন ল্যান্সার। বর্তমান উপদেষ্টারা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ওই গাড়িগুলো ঢাকায় ব্যবহার করছেন। ঢাকার বাইরে গেলে বিভিন্ন দপ্তরের জিপ গাড়ি ব্যবহার করছেন তারা। টয়োটা ক্যামরি হাইব্রিড মডেলের ২৫০০ সিসির গাড়ি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কেনা হয় প্রতিটি ৮৫ লাখ থেকে ৯০ লাখ টাকায়। মিতসুবিশি ল্যান্সার ইএক্স মডেলের ১৬০০ সিসির গাড়ির দাম ছিল ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এখন সবার জন্য কেনা হচ্ছে পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসির গাড়ি। প্রতিটি জিপের দাম এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে আরও একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে। আগামী মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ৬০ হবে– কীভাবে জানল সরকার। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সমকালকে বলেন, পরবর্তী সরকার বা মন্ত্রীরা কী গাড়ি ব্যবহার করবেন, কী গাড়ি কিনবেন; তার সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকার কেন নিচ্ছে? এটা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়।
এর মাধ্যমে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপের পরিপত্র উপেক্ষা করা তো বটেই, একই সঙ্গে প্রশ্ন আসবে, পরবর্তী সরকারের জন্য গাড়ি কেনার দায়িত্বটা অন্তর্বর্তী সরকারকে কে দিয়েছে?  ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের ‘ম্যান্ডেট’ এটা নয়। এ দায় তারা কেন নিচ্ছেন, বুঝে আসছে না। অনতিবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ২১ আগস্ট নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং আগামী নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ২৮০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে পাঠায়। এর মধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে জয়ী সরকারের মন্ত্রী, মন্ত্রী পদমর্যাদার উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের জন্য ৬০টি গাড়ি কেনার কথা বলা হয় প্রস্তাবে। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় এসব গাড়ি কিনবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর।
প্রস্তাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা সমপদমর্যাদার ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য সরকারি পরিবহন ‍পুলে যথাযথ মানের গাড়ি নেই। বর্তমানে উপদেষ্টারা যেসব গাড়ি ব্যবহার করছেন, সেগুলো ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কেনা। এগুলো প্রায়শ মেরামত করতে হয়, যা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।
বিদ্যমান গাড়িগুলো দিয়ে ভবিষ্যতে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদের পক্ষে নির্বাচনী এলাকা সফর, উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনসহ অন্যান্য জরুরি কাজ করা কষ্টসাধ্য হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ প্রস্তাবে সম্প্রতি সম্মতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এরপর সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ এবং সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে এসব গাড়ি কেনা হবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিয়ে অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারেরও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, গত ৬ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আগামী মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য গাড়ি কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান সমকালকে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, মন্ত্রীদের গাড়িগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। এ জন্য নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর আগে গত মে মাসে উপদেষ্টা বা মন্ত্রী ও সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য ২৫টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব প্রস্তুত করে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গঠিত কমিটি তা অনুমোদন না করে ফেরত দেয়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ ভিভিআইপি ও বিদেশি ডেলিগেটদের জন্য মার্সিডিজ বেঞ্জের ২০টি কার কেনার প্রস্তাব করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রতিটির দাম ধরা হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। আর মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য ৫০টি টয়োটা ক্যামরি হাইব্রিড সেডান কার কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, যার প্রতিটির দাম ধরা হয় প্রায় এক কোটি পাঁচ হাজার টাকা। এসব গাড়ি কেনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চেয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট ও সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির কারণে এ প্রস্তাব তখন নাকচ করে দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।
৮ সালের মে মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৫তম সম্মেলন উপলক্ষে আগত বিভিন্ন দেশের অতিথির যাতায়াতের জন্য ৩০টি মার্সিডিজ ও বিএমডব্লিউ কেনে সরকার। সম্মেলনে ব্যবহারের পর এর মধ্যে কয়েকটি বিএমডব্লিউ তৎকালীন মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যদের ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। পাঁচটি গাড়ি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দিয়ে বাকিগুলো রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ও সরকারি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য সরকারি পরিবহন পুলে হস্তান্তর করা হয়।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া সমকালকে বলেন, সরকারি কোনো গাড়ি যদি মেরামত অযোগ্য ও অলাভজনক বলে বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক প্রতিবেদন দেন, তাহলে সেটি অকেজো ঘোষণা করা হয়। এরপর ওই গাড়ির বদলে নতুন গাড়ি প্রতিস্থাপন করা যায়। তিনি বলেন, মন্ত্রীদের গাড়ি কেনার ক্ষেত্রেও এ নীতিমালা কার্যকর হবে।
আইন সংশোধন না করে কেনা হচ্ছে জিপ
১৯৭৩ সালের ‘দি মিনিস্টারস, মিনিস্টারস অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমিউনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস)’ অ্যাক্টে বলা হয়েছে, মন্ত্রী (বর্তমান উপদেষ্টারা মন্ত্রী মর্যাদার), প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য সরকারি একটি কার (গাড়ি) পাবেন। যার রক্ষণাবেক্ষণ খরচ জোগাবে সরকার। পরে সংশোধিত আইনে বলা হয়, জরুরি দাপ্তরিক কাজের জন্য কিংবা ঢাকার বাইরে নির্ধারিত কোনো সফরে গেলে অতিরিক্ত একটি জিপগাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমান নিয়ম অনুযায় মন্ত্রীদের জন্য শুধু কার কেনা যাবে। অন্য কোনো গাড়ি কিনতে হলে আইন সংশোধন করতে হবে।
নির্বাচনের জন্য কেনা হচ্ছে ২২০টি গাড়ি
আগামী নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য প্রতিস্থাপক হিসেবে ১৯৫টি মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসি মডেলের জিপ এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জন্য ২৫টি মাইক্রোবাস কেনায় সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রেও প্রতিটি জিপের দাম ধরা হয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। প্রতিটি মাইক্রোবাসের দাম পড়ছে ৫২ লাখ টাকা। এ ধরনের ২২০টি গাড়ি কিনতে সরকারকে খরচ করতে হবে ৩৪৩ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে যানবাহন অধিদপ্তরের অনুকূলে মোটরযান ক্রয় খাতে ৩২৮ কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে এই ২৮০টি গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে ৪৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বাড়তি ৯৬ কোটি ৫১ লাখ ৫ হাজার টাকা অন্য খাতের অর্থ ব্যয়েরও অনুমোদন দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
তবে গাড়ি কেনার সম্মতিপত্রে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। শর্তগুলো হলো– নতুন কেনা জিপগুলো প্রাধিকারভুক্ত হবে। একই সঙ্গে প্রতিস্থাপক হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের জন্য কেনা জিপ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জন্য প্রতিস্থাপক হিসেবে মাইক্রোবাসগুলো অকেজো ঘোষণা-সংক্রান্ত বিআরটিএর পরিদর্শক দলের অনুমোদন গ্রহণ করে তার অনুলিপি অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে। গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ অনুসরণ করতে হবে।
এদিকে নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রিসভার আকার বেঁধে দিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। সর্বোচ্চ ২৩ মন্ত্রী এবং ১২ প্রতিমন্ত্রী দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করতে বলা হয়েছে। এতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মোট সংখ্যা হবে ৩৫। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ৬০টি গাড়ি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যমান ৪৩ মন্ত্রণালয় ও ৬১ বিভাগকে ২৫ মন্ত্রণালয় ও ৪০ বিভাগে নামিয়ে আনার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর হাতে কোন কোন মন্ত্রণালয় থাকবে, তাও নির্দিষ্ট করা হয়েছে কমিশনের প্রস্তাবে।

নটমঞ্চের নাটক বিদ্যামন্ত্র মঞ্চায়ন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪৩ অপরাহ্ণ
নটমঞ্চের নাটক বিদ্যামন্ত্র মঞ্চায়ন

চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নটমঞ্চের ২০তম প্রযোজনা নাটক বিদ্যামন্ত্র মঞ্চস্থ হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর ২০২৫) রাতে চাঁদপুর জেলা বিএনপির আয়োজনে মেইড ইন কালচারাল ফেস্টিভ্যাল সাংস্কৃতিক উৎসবে নটমঞ্চের বিদ্যামন্ত্র নাটক মঞ্চায়ন করা হয় ।
মহীউদ্দিন ছড়া’র রচনায় আক্রাম খানের নির্দেশনায় ও পিএম বিল্লালের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এ নাটকটি মঞ্চায়ন করা হয়। নাটকে যারা অভিনয় করেছেন এবং নেপথ্যে যারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন গোবিন্দ মন্ডল, সাধন চন্দ্র দত্ত, মোরশেদ আলম, আহমেদ তানজিল, মরিয়ম আক্তার রাহা, আছিয়া আক্তার মিথিলা, মুক্তা আক্তার, নূরে আলম, সাইফুল ইসলাম, নূরজাহান বেগম, মৌমিতা, রিয়াদ, রিপন প্রমুখ।
নটমঞ্চের সভাপতি উজ্জ্বল হোসাইন জানান, এটি একটি শিক্ষামূলক নাটক। “বিদ্যামন্ত্র” নাটকের সূচনায় মঞ্চে উপস্থিত হন এক রহস্যময় বৃদ্ধ চরিত্র গল্পবুড়ো। তাঁর কণ্ঠে নাটকের জগত প্রাণপায়। তিনি দর্শকদের বলেন, এই যে পৃথিবী এখানে প্রেম আর অন্ধকার পাশাপাশি বাস করে। কেউ জ্ঞানের আলো খোঁজে, কেউ সেই জ্ঞানকেই মন্ত্র বানিয়ে মানুষকে বশ করে রাখে। গল্পবুড়োর কথায় পর্দা খুলে যায় এক রূপকথার রাজ্যের দরজা। সেই রাজ্যের রাজপুত্র, হৃদয়ে এক অদ্ভুত বেদনা নিয়ে বসবাস করে। প্রতিরাতে স্বপ্নে সে দেখে এক অচেনা রাজকুমারীর মুখ—তার চোখে অনন্ত স্নেহ, তবু গভীর বিষাদের ছায়া। রাজপুত্র জানে না এ প্রেম কল্পনা, না কি নিয়তির নির্দেশ। সেই অজানা মুখের টানে সে দেশ-দেশান্তর পাড়ি দেয়, পর্বত, নদী, মরুভূমি পেরিয়ে একদিন এসে পৌঁছায় এক অদ্ভুত রাজ্যে। সে রাজ্য রাক্ষসে দখলে। সে একসময় ছিল রাজ্যের পণ্ডিত, কিন্তু জ্ঞানের অপব্যবহার করে সে সৃষ্টি করেছে “বিদ্যামন্ত্র” এক অভিশপ্ত শক্তি যার দ্বারা নারীদের মন, দেহ ও চিন্তা সে বশ করে রেখেছে। তার প্রাসাদে বন্দী শত শত নারীর মধ্যে দু’জন প্রধান চরিত্র কেশবতি ও হীরামন। কেশবতি রাজ্যের প্রাক্তন নৃত্যশিল্পী, যার চোখে এখনো মুক্তির দীপ্তি জ্বলে; হীরামন এক জ্ঞানী নারী, যে বিদ্যামন্ত্রের রহস্য জানে কিন্তু তা ভাঙতে অক্ষম। রাজপুত্র এসে এই অমানবিক দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যায়। তার হৃদয়ে জ্বলে ওঠে প্রতিবাদের আগুন। কেশবতির চোখে সে চিনে ফেলে সেই স্বপ্নের রাজকুমারীকে যাকে খুঁজে সে এতদিন ঘুরেছে। কিন্তু কেশবতি এখন বিদ্যামন্ত্রে  বন্দী। তাকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় হলো “বিদ্যামন্ত্র” ভাঙা, যা কেবল সত্য প্রেম, সাহস, এবং জ্ঞানের আলোকেই সম্ভব।
গল্পবুড়োর বর্ণনায় নাটক ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। রাজপুত্র হীরামনের সহযোগিতায় রাক্ষসের রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে। সেখানে ঘটে আলো ও অন্ধকারের এক ভয়ংকর সংঘর্ষ। শেষে প্রেমের বিশুদ্ধতা ও কেশবতির আত্মত্যাগে ভেঙে যায় বিদ্যামন্ত্র। নারীরা ফিরে পায় মুক্তি, অমরাবতী রাজ্যে ফিরে আসে গান, আলো, আর মানবতার গৌরব।
নাটক “বিদ্যামন্ত্র” প্রেম, জ্ঞান ও মানবমুক্তির এক প্রতীকী কাহিনি। এখানে রাজপুত্রের অভিযান কেবল এক নারীর মুক্তি নয় এটি নারী স্বাধীনতা, জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার এবং মানবিকতার জয়গাথা।
নাটকটি চাঁদপুরের বিভিন্ন নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সুধীজন উপভোগ করেন।

মাছ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : জেলেদের দখলে নদী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৪৮ অপরাহ্ণ
মাছ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : জেলেদের দখলে নদী

নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করে নদী থেকে অবাধে ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছুতেই দমাতে পারছে না তাদের। জেলেদের নৌকায় এখন ইট-পাথরের মজুত রাখা হয়। হাতে থাকে তাদের লাঠিসোটা। বাধা দিলে যুদ্ধংদেহী মনোভাবে পাল্টা আক্রমণ করেন তারা। গত ৪ অক্টোবরের পর দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশ বিচরণের নদীগুলো কার্যত চলে গেছে জেলেদের দখলে। ইলিশের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র মেঘনার অবস্থা আরও ভয়ংকর। সামাজিক মাধ্যমে যেসব ভিডিও ছড়াচ্ছে তাতে দেখা যায়, নদীর মধ্যে জেলেরা যেন শত্রুপক্ষের সঙ্গে লড়াই করছেন। তাদের শত্রু হলো ইলিশ সম্পদ রক্ষা করতে যাওয়া প্রশাসন। মেঘনায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর জাহাজ ও র‍্যাব দিয়ে অভিযান চালিয়ে নদী জেলেদের দখলমুক্ত করা যায়নি।
মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে গত ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন সাগর-নদীতে সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও নিষেধাজ্ঞার তৃতীয় দিন থেকেই নদী জেলেরা দখলে নিয়েছেন। দিনে পরিস্থিতি কিছুটা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাতে নদীতে চলে জেলেদের রাজত্ব। জেলেদের আক্রমণ প্রতিহত করতে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া মাছ শিকারে জেলেদের বাধা দিতে গিয়ে আনসার বাহিনীর একটি আগ্নেয়াস্ত্র খোয়া গেছে। এমনকি জেলেদের হামলায় স্পিডবোট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা কোস্টগার্ড সদস্যদেরও নাস্তানাবুদ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। মেঘনার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, গত সোমবার হিজলার জেলেদের হামলা প্রতিহত করতে মেঘনায় ফায়ার সার্ভিসের জলকামান ব্যবহার করতে হয়েছে।
বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে, এ বছর নিষেধাজ্ঞা চলার সময় গত ১৭ দিনে কমপক্ষে ১৫টি হামলা হয়েছে। এরমধ্যে গত ১৯ অক্টোবর বরিশালের মুলাদী উপজেলায় ৩টি হামলার ঘটনায় পৃথক ৩টি মামলা করা হয়।  গত রোববার বিকেলে হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নসংলগ্ন মেঘনা নদীতে জেলেদের হামলা ঠেকাতে আট রাউন্ড এবং শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল সদর ও মেহেন্দীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী কালাবদর নদীতে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হয়। দুটি অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ। এ ছাড়া ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে  হিজলা ও ভোলার মধ্যবর্তী মেঘনা নদীতে হামলার শিকার হয় মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ ও উপপরিচালক মো. নাসিরউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন টিম।
নিষেধাজ্ঞার শুরুর প্রথম রাতে অভিযানে নেমে হামলার শিকার হন বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর সানি। দড়িচর-খাজুরিয়া ইউনিয়নের গজারিয়া নদীতে এ হামলা হয়। ৭ অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নের আলীগঞ্জসংলগ্ন মেঘনা নদীতে জেলেদের হামলায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমসহ কোস্টগার্ডের চার সদস্য আহত হন। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদসংলগ্ন নদীতে হামলায় এক আনসার সদস্যের আগ্নেয়াস্ত্র নদীতে পড়ে যায়। অস্ত্রটি পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসাইন।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর ৪ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬ দিনে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় অভিযানে ৮৭০টি মামলা এবং কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৫৮৯ জনকে। একই সময়ে গত বছর ৭৬৯টি মামলা ও ৪৮২ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ বছর মামলা ও কারাদণ্ড বেশি হলেও পরিস্থিতি পুরোটাই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

কেন এই পরিস্থিতি 
মৎস্যজীবী সংগঠকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও হামলার ঘটনা হয়। তবে এ বছরের মতো পরিস্থিতি আগে দেখা যায়নি। তাদের মতে, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রশাসনের মাঠ কর্মকর্তাদের শিথিলতায় পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা জেলেদের নেপথ্য শক্তি হিসেবে কাজ করেন বলেও তাদের ধারণা।
ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার সামরাজ মাছঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আজিজ পাটোয়ারী স্বীকার করেন, এবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধন ও প্রশাসনের ওপর হামলার ঘটনা নজিরবিহীন। তিনি বলেন, ‘মৌসুমে নদীতে আকাল গেছে। এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে জেলেরা কোনো আইন মানতে চান না।’ জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ইকবাল হোসেন মাতুব্বর বলেন, ‘ইলিশ সম্পদ রক্ষা নির্ভর করে মেঘনাতীরের রাজনৈতিক নেতা ও মাছঘাট মালিকদের ওপর। তারা যতক্ষণ আইনের উল্টো পথে হাঁটবেন, কোনো আইন দিয়ে ইলিশ সম্পদ রক্ষা করা যাবে না।’ জাতীয় ক্ষুদ্র জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল মীর বলেন, ইলিশ নিধনকারী জেলেদের পেছনে প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। জেলেদের ভ্রাম্যমাণ আদালত কারাদণ্ড দিলে জামিনের ব্যবস্থা ও জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন প্রভাবশালীরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বেশির ভাগ সাধারণ জেলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত না। কিছু ডাকাতের মতো, অপেশাদার লোকজন ইলিশ নিধনে যুক্ত। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এর মদদ দিচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অপরাধীদেরে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান প্রয়োজন। জনবল এবং বড় স্পিডবোট আরও দরকার।

আরসিডিএস-এর উদ্যোগে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৩৫ অপরাহ্ণ
আরসিডিএস-এর উদ্যোগে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন

২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সদস্য সংগঠনগুলো সারা দেশব্যাপী প্রতি বছর ৯ অক্টোবর জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন করে আসছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে : “কৃষি জমিতে তামাক চাষ, খাদ্য নিরাপত্তায় সর্বনাশ” অবিলম্বে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হোক” এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আরসিডিএস-এর উদ্যোগে চাঁদপুরে জন সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারাভিযান পরিচালনা করা হয় এবং ইতিমধ্যে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। আরসিডিএস নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ সাদেক সফিউল্লাহ বলেন, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের ইতিবাচক নীতিগত পদক্ষেপসমূহ প্রশংসার দাবীদার হলেও কোম্পানিগুলোর কৌশলের কারণে কৃষকরা তামাক চাষের চক্র থেকে বের হতে পারছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক চাষে স্বাভাবিক ফসলের তুলনায় ৮–১০ গুণ বেশি রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, যা মাটি ও পরিবেশকে দূষিত এবং জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। ফলে রবি মৌসুমে খাদ্য ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ায় কৃষকরা আটকা পড়ছে ঋণের ফাঁদে। অন্যদিকে, কীটপতঙ্গ, গবাদিপশু ও জীববৈচিত্র্যের ওপর তামাক চাষের নেতিবাচক প্রভাব দেশের কৃষি জমি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশকে হুমকির সম্মুখীন করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমাগত তামাক চাষ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন কৌশল, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন বিধান না থাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যথাযথ উদ্যোগের অভাব, দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি চুড়ান্তকরণে বিলম্ব এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নীতির অসামঞ্জস্যতা। উল্লেখ্য তামাক রপ্তানিতে শুল্ক ছাড়ের কারণে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেশে প্রায় ৫০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। উক্ত সংকট থেকে উত্তোরণে দ্রুত “তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া)” চূড়ান্ত করা জরুরী। উল্লেখ্য, সংবিধান ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষ ধীরে ধীরে বন্ধ করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
এ মতাবস্থায়, আমাদের প্রস্তাবনা : সরকার কর্তৃক প্রণীত “তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া)” অবিলম্বে চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিকল্প ফসল চাষে কৃষকদের কারিগরি সহায়তা, উন্নত বীজ, সার ও স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান নিশ্চিত করা। তামাক চাষের জমিতে দ্বিগুণ হারে ভূমি কর আরোপ করা। সংরক্ষিত বনভূমি ও সরকারি খাসজমিতে তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা। তামাক পাতার উপর মওকুফকৃত ২৫% রপ্তানি শুল্ক পুনর্বহাল করা।