খুঁজুন
                               
বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ৬ কার্তিক, ১৪৩২

ভোক্তা অধিকার : আমরা কতটা সচেতন?

মায়েদা হোসেন সাফি
প্রকাশিত: সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৩৩ অপরাহ্ণ
ভোক্তা অধিকার : আমরা কতটা সচেতন?

আমরা সবাই জীবনের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত পণ্য ও সেবা গ্রহণ করি। কেউ বাজার থেকে খাদ্যসামগ্রী কিনছেন, কেউ আবার কিস্তিতে ইলেকট্রনিক পণ্য, আবার কেউ চিকিৎসা বা শিক্ষাসেবাও গ্রহণ করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব পণ্য ও সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে আমরা কি জানি আমাদের কী কী অধিকার রয়েছে? আমরা কি জানি, প্রতারণার শিকার হলে কোথায় অভিযোগ করতে হয়, অথবা আমাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে কী ধরনের আইনি সহায়তা পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে “ভোক্তা” বলতে সেই ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছাড়া, শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ব্যবহারের জন্য কোনো পণ্য ক্রয় বা সেবা গ্রহণ করেন। অর্থাৎ, আপনি যদি নিজের জন্য খাদ্য, জামাকাপড়, ওষুধ বা যেকোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে থাকেন এবং তা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে না হয়ে থাকে, তাহলে আপনি আইনত একজন “ভোক্তা”। এমনকি কেউ আত্মকর্মসংস্থান বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে ছোট পরিসরে কোনো পণ্য ব্যবহার করলেও তিনি ভোক্তার সংজ্ঞায় পড়তে পারেন।ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে “ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন” প্রণয়ন করে। এই আইনের অধীনে কিছু কার্যক্রম অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়, যেমন—ভেজাল বা মানহীন পণ্য সরবরাহ, মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পণ্য বা সেবা না দেওয়া, কম ওজনে পণ্য সরবরাহ, মেয়াদোত্তীর্ণ বা ক্ষতিকর দ্রব্য বিক্রি ইত্যাদি। এমনকি পণ্যের গায়ে সঠিক মূল্য না লেখা বা সঠিক তথ্য গোপন করাও ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে।স্বভাবত বাজার নিয়ন্ত্রণকারী বা বাজারে ব্যবসা করা ব্যক্তিরা অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকেন। বিপরীতে ভোক্তারা থাকেন তুলনামূলকভাবে অসহায় অবস্থায়। অন্যদিকে, ব্যবসায়িরা সংগঠিত হলেও ভোক্তারা সাধারণত অসংগঠিত থাকেন।কোনো প্রতারণা বা অসততাকে, যা মানুষের অধিকার খর্ব করে, তার ব্যাপকতা নিয়ে চলতে দেওয়া যায় না। ভোক্তা অধিকারকে মানবাধিকারের ধারণা থেকে আলাদা করা যায় না। এটি সামাজিক ন্যায়বিচারেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।আমেরিকার ভোক্তা আন্দোলনের পুরোধা রালফ নাদের-এর মতে, “ভোক্তা হচ্ছে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি”।যদি কোনো ভোক্তা এসব অনিয়মের শিকার হন, তাহলে তিনি সরাসরি অভিযোগ করতে পারেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। অভিযোগ করার জন্য রয়েছে কয়েকটি সহজ উপায়। প্রথমত, িি.িফহপৎঢ়.মড়া.নফ ওয়েবসাইটে গিয়ে সরাসরি অভিযোগ দাখিল করা যায়। দ্বিতীয়ত, মোবাইল ফোন থেকে ১৬১২১ নম্বরে কল করে অভিযোগ জানানো সম্ভব। তৃতীয়ত, এড়ড়মষব চষধু ঝঃড়ৎব থেকে “ঈঈগঝ” নামে একটি মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করে সেখান থেকেও অভিযোগ করা যায়।অভিযোগ করার আগে ভোক্তাকে প্রথমে ওয়েবসাইটে বা অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর অভিযোগের বিস্তারিত তথ্য লিখে, প্রয়োজনে রশিদ, ছবি বা ভিডিওসহ প্রমাণ সংযুক্ত করে তা দাখিল করা যায়। প্রতিটি অভিযোগের জন্য নির্ধারিত ট্র্যাকিং নম্বর দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে অভিযোগের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা যায়। আইন অনুযায়ী, অভিযোগ নিষ্পত্তির সর্বোচ্চ সময়সীমা ৬০ কার্যদিবস। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভোক্তা পণ্যের মূল দামের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।
দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ত্রয়োদশ অধ্যায়ে “ওজন ও মাপকাঠি সংক্রান্ত অপরাধ” নিয়ে ধারা ২৬৪ থেকে ২৬৭ পর্যন্ত বিধান রয়েছে। এ অধ্যায় ভোক্তাদের সঠিক পরিমাণে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা যন্ত্র বা মাপকাঠি ব্যবহারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রণীত।ধারা ২৬৪ অনুসারে, যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে ওজন করার জন্য মিথ্যা যন্ত্র প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহার করে, সে ব্যক্তি এক বৎসর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ অপরাধ প্রমাণের জন্য প্রমাণ করতে হবে যে— (ক) অভিযুক্ত ব্যক্তি অপ্রকৃত যন্ত্র ব্যবহার করেছেন, (খ) তা ওজন মাপার যন্ত্র ছিল, (গ) অভিযুক্ত জানতেন যে যন্ত্রটি মিথ্যা, এবং (ঘ) তিনি তা প্রতারণামূলকভাবে দখলে রেখে ব্যবহার করেছেন। এই অপরাধ আমলযোগ্য নয়, সমনযোগ্য, জামিনযোগ্য, আপসযোগ্য নয় এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচারযোগ্য।ধারা ২৬৫-এ বলা হয়েছে, যদি কেউ প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা ওজন, দৈর্ঘ্য বা ধারণক্ষমতা মাপ ব্যবহার করে, অথবা কোনো ওজন বা মাপকাঠিকে অন্য ধরনের ওজন বা মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করে, তবে তিনি একইভাবে এক বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।ধারা ২৬৬ অনুযায়ী, যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে মিথ্যা ওজন বা মাপের যন্ত্র, বাটখারা বা দৈর্ঘ্য/পরিমাণ মাপার মাপকাঠি নিজের দখলে রাখেন, যাতে তা প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, তিনি এক বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।ধারা ২৬৭-এ বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে মিথ্যা বাটখারা, মাপকাঠি বা ওজন করার যন্ত্র তৈরি, বিক্রয় বা লেনদেন করেন, যা প্রকৃত হিসাবে ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে, তিনি একইভাবে এক বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।এসব বিধান ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এগুলো বাজারে সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতারণা প্রতিরোধ করে এবং ন্যায়সঙ্গত বাণিজ্যিক পরিবেশ গড়ে তোলে।
এই আইন সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শুধুমাত্র প্রতারিত ভোক্তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এর মাধ্যমে পুরো বাজার ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল রাখা সম্ভব হয়। ব্যবসায়ীরা জানেন যে, ভোক্তারা প্রয়োজনে অভিযোগ করতে পারবেন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এই সচেতনতা ও আইনি চাপের কারণে তারা মানসম্মত পণ্য ও সেবা সরবরাহ করতে বাধ্য হন। এর ফলে ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য বাজার থেকে ধীরে ধীরে কমে আসে।একই সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি হয়, যেখানে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হলে মান বজায় রাখা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। এর প্রভাব পড়ে ভোক্তার আস্থায়—মানসম্মত সেবা পেয়ে ভোক্তারা বাজার ব্যবস্থার প্রতি আরও বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন, যা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে বুঝতে শেখেন যে প্রতারণা মেনে নেওয়া কোনো সমাধান নয়; বরং আইনগত প্রতিরোধই হলো সঠিক পথ।মানুষকে ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য প্রথমেই শিক্ষাক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে ভোক্তা অধিকার এবং প্রাসঙ্গিক আইন অন্তর্ভুক্ত করা হলে শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই নিজের অধিকার ও করণীয় সম্পর্কে অবগত হবে। শিক্ষার পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা, ফেসবুক এবং ইউটিউবের মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক তথ্য মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।এছাড়া কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনাও কার্যকর। গ্রাম, বাজার কিংবা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সেমিনার, কর্মশালা এবং সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সরাসরি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য দেওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে পণ্য বিক্রির স্থান, দোকান ও সুপারশপে ভোক্তার অধিকার এবং অভিযোগ জানানোর ঠিকানা সম্বলিত প্রচারপত্র ও পোস্টার টাঙালে ক্রেতারা সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন। এভাবে বহুমুখী উদ্যোগের মাধ্যমে ধীরে ধীরে একটি সচেতন ভোক্তা সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।বাংলাদেশে ভোক্তারা নানা উপায়ে প্রতারিত হচ্ছেন, যার বাস্তব চিত্র আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন, ঢাকার একাধিক মিষ্টির দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ দুধ ব্যবহার করে মিষ্টি তৈরির ঘটনা ধরা পড়ে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারত। অভিযানে এসব দোকানকে জরিমানা করা হয় এবং ভোক্তারা তাৎক্ষণিক প্রতিকার পান। একইভাবে এক ভোক্তা অভিযোগ করেন, তিনি ৫০০ গ্রাম গুঁড়ো দুধ কিনলেও তাতে ওজন ছিল মাত্র ৪৮০ গ্রাম; অভিযোগের ভিত্তিতে দোকানদারকে জরিমানা করা হয়।এছাড়া ভুল তথ্যযুক্ত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও ভোক্তারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। একটি প্রসাধনী কোম্পানি বিজ্ঞাপনে দাবি করেছিল যে তাদের ক্রিমে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক নেই, কিন্তু পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় এতে ত্বকের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। ভোক্তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা এবং পণ্য প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। গ্রামীণ অঞ্চলেও প্রতারণার শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, এক ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়ে, পরে ওষুধ জব্দ করে দোকানকে জরিমানা করা হয়। এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে ভোক্তাদের সচেতনতা ও আইন প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতারণা রোধ সম্ভব।বর্তমানে অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটা কর্মব্যস্ত মানুষের জন্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে বাজারে গিয়ে কেনাকাটার জন্য আলাদা সময় দেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। এতে সময় ও শ্রম—দুটোই বাঁচছে। তবে কিছু অনলাইন পেজ ও দোকান এই সুবিধাভোগী মানসিকতার সুযোগ নিচ্ছে। তারা ক্রেতাদের প্রতিশ্রুত পণ্য না দিয়ে ভেজাল, নষ্ট, নকল বা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য সরবরাহ করছে, যা ভোক্তাদের অধিকারকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই আমাদের উচিত এই ধরনের প্রতারক অনলাইন পেজ ও দোকানের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়া। আমাদের সক্রিয় পদক্ষেপই পারে আমাদের নিজেদের এবং আমাদের আশেপাশের মানুষের অধিকারকে সুরক্ষিত রাখতে।ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো আজকের সময়ের দাবি। অনেকেই এখনও জানেন না তাদের অধিকার কী, কিংবা কোথায় গেলে সঠিক প্রতিকার মিলবে। ফলে ব্যবসায়ী বা সেবা প্রদানকারীরা অনেক সময় ভোক্তাদের অধিকার লঙ্ঘন করে পার পেয়ে যান। সচেতনতা বাড়াতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভোক্তা অধিকার বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা জোরদার করা দরকার।
পরিশেষে বলা যায়, একজন ভোক্তা শুধু একজন ক্রেতা নয়, বরং দেশের বাজার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একজন সচেতন ভোক্তা যেমন নিজের অধিকার রক্ষা করতে সক্ষম, তেমনি সে অন্যদেরও সচেতন করতে পারেন। তাই পণ্য বা সেবা গ্রহণে প্রতারিত হলে চুপ না থেকে, আইনের আশ্রয় নেওয়া জরুরি। কারণ, শক্তিশালী ভোক্তা সমাজই পারে একটি ন্যায্য ও সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে।আসুন, আমি, আপনি, আমরা সচেতন হই। আমরা সচেতন হলে এই সমাজ, মানুষ সচেতন হবে। দুর্নীতি বন্ধ হবে, স্বচ্ছতা আসবে, জবাবদিহিতা বাড়বে। শুধুমাত্র একজন ভোক্তা হিসেবে নয়, সমাজের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের অধিকার যেমন আছে, তেমনি অন্য কারো অধিকার রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব। আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করি। সমাজের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সাধারণ জনগণের অধিকার লঙ্ঘন করে লাভবান হতে না পারে এবং যেন তারা সিন্ডিকেট করে পেরে উঠতে না পারে, তাই আমরা সবাই যেন সচেতন থাকি।

লেখক পরিচিতি : মাহেদা হোসেন সাফি, এলএলবি (অনার্স, চতুর্থ সেমিস্টার), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

নটমঞ্চের নাটক বিদ্যামন্ত্র মঞ্চায়ন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪৩ অপরাহ্ণ
নটমঞ্চের নাটক বিদ্যামন্ত্র মঞ্চায়ন

চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নটমঞ্চের ২০তম প্রযোজনা নাটক বিদ্যামন্ত্র মঞ্চস্থ হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর ২০২৫) রাতে চাঁদপুর জেলা বিএনপির আয়োজনে মেইড ইন কালচারাল ফেস্টিভ্যাল সাংস্কৃতিক উৎসবে নটমঞ্চের বিদ্যামন্ত্র নাটক মঞ্চায়ন করা হয় ।
মহীউদ্দিন ছড়া’র রচনায় আক্রাম খানের নির্দেশনায় ও পিএম বিল্লালের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এ নাটকটি মঞ্চায়ন করা হয়। নাটকে যারা অভিনয় করেছেন এবং নেপথ্যে যারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন গোবিন্দ মন্ডল, সাধন চন্দ্র দত্ত, মোরশেদ আলম, আহমেদ তানজিল, মরিয়ম আক্তার রাহা, আছিয়া আক্তার মিথিলা, মুক্তা আক্তার, নূরে আলম, সাইফুল ইসলাম, নূরজাহান বেগম, মৌমিতা, রিয়াদ, রিপন প্রমুখ।
নটমঞ্চের সভাপতি উজ্জ্বল হোসাইন জানান, এটি একটি শিক্ষামূলক নাটক। “বিদ্যামন্ত্র” নাটকের সূচনায় মঞ্চে উপস্থিত হন এক রহস্যময় বৃদ্ধ চরিত্র গল্পবুড়ো। তাঁর কণ্ঠে নাটকের জগত প্রাণপায়। তিনি দর্শকদের বলেন, এই যে পৃথিবী এখানে প্রেম আর অন্ধকার পাশাপাশি বাস করে। কেউ জ্ঞানের আলো খোঁজে, কেউ সেই জ্ঞানকেই মন্ত্র বানিয়ে মানুষকে বশ করে রাখে। গল্পবুড়োর কথায় পর্দা খুলে যায় এক রূপকথার রাজ্যের দরজা। সেই রাজ্যের রাজপুত্র, হৃদয়ে এক অদ্ভুত বেদনা নিয়ে বসবাস করে। প্রতিরাতে স্বপ্নে সে দেখে এক অচেনা রাজকুমারীর মুখ—তার চোখে অনন্ত স্নেহ, তবু গভীর বিষাদের ছায়া। রাজপুত্র জানে না এ প্রেম কল্পনা, না কি নিয়তির নির্দেশ। সেই অজানা মুখের টানে সে দেশ-দেশান্তর পাড়ি দেয়, পর্বত, নদী, মরুভূমি পেরিয়ে একদিন এসে পৌঁছায় এক অদ্ভুত রাজ্যে। সে রাজ্য রাক্ষসে দখলে। সে একসময় ছিল রাজ্যের পণ্ডিত, কিন্তু জ্ঞানের অপব্যবহার করে সে সৃষ্টি করেছে “বিদ্যামন্ত্র” এক অভিশপ্ত শক্তি যার দ্বারা নারীদের মন, দেহ ও চিন্তা সে বশ করে রেখেছে। তার প্রাসাদে বন্দী শত শত নারীর মধ্যে দু’জন প্রধান চরিত্র কেশবতি ও হীরামন। কেশবতি রাজ্যের প্রাক্তন নৃত্যশিল্পী, যার চোখে এখনো মুক্তির দীপ্তি জ্বলে; হীরামন এক জ্ঞানী নারী, যে বিদ্যামন্ত্রের রহস্য জানে কিন্তু তা ভাঙতে অক্ষম। রাজপুত্র এসে এই অমানবিক দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যায়। তার হৃদয়ে জ্বলে ওঠে প্রতিবাদের আগুন। কেশবতির চোখে সে চিনে ফেলে সেই স্বপ্নের রাজকুমারীকে যাকে খুঁজে সে এতদিন ঘুরেছে। কিন্তু কেশবতি এখন বিদ্যামন্ত্রে  বন্দী। তাকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় হলো “বিদ্যামন্ত্র” ভাঙা, যা কেবল সত্য প্রেম, সাহস, এবং জ্ঞানের আলোকেই সম্ভব।
গল্পবুড়োর বর্ণনায় নাটক ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। রাজপুত্র হীরামনের সহযোগিতায় রাক্ষসের রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে। সেখানে ঘটে আলো ও অন্ধকারের এক ভয়ংকর সংঘর্ষ। শেষে প্রেমের বিশুদ্ধতা ও কেশবতির আত্মত্যাগে ভেঙে যায় বিদ্যামন্ত্র। নারীরা ফিরে পায় মুক্তি, অমরাবতী রাজ্যে ফিরে আসে গান, আলো, আর মানবতার গৌরব।
নাটক “বিদ্যামন্ত্র” প্রেম, জ্ঞান ও মানবমুক্তির এক প্রতীকী কাহিনি। এখানে রাজপুত্রের অভিযান কেবল এক নারীর মুক্তি নয় এটি নারী স্বাধীনতা, জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার এবং মানবিকতার জয়গাথা।
নাটকটি চাঁদপুরের বিভিন্ন নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সুধীজন উপভোগ করেন।

মাছ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : জেলেদের দখলে নদী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৪৮ অপরাহ্ণ
মাছ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : জেলেদের দখলে নদী

নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করে নদী থেকে অবাধে ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছুতেই দমাতে পারছে না তাদের। জেলেদের নৌকায় এখন ইট-পাথরের মজুত রাখা হয়। হাতে থাকে তাদের লাঠিসোটা। বাধা দিলে যুদ্ধংদেহী মনোভাবে পাল্টা আক্রমণ করেন তারা। গত ৪ অক্টোবরের পর দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশ বিচরণের নদীগুলো কার্যত চলে গেছে জেলেদের দখলে। ইলিশের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র মেঘনার অবস্থা আরও ভয়ংকর। সামাজিক মাধ্যমে যেসব ভিডিও ছড়াচ্ছে তাতে দেখা যায়, নদীর মধ্যে জেলেরা যেন শত্রুপক্ষের সঙ্গে লড়াই করছেন। তাদের শত্রু হলো ইলিশ সম্পদ রক্ষা করতে যাওয়া প্রশাসন। মেঘনায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর জাহাজ ও র‍্যাব দিয়ে অভিযান চালিয়ে নদী জেলেদের দখলমুক্ত করা যায়নি।
মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে গত ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন সাগর-নদীতে সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও নিষেধাজ্ঞার তৃতীয় দিন থেকেই নদী জেলেরা দখলে নিয়েছেন। দিনে পরিস্থিতি কিছুটা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাতে নদীতে চলে জেলেদের রাজত্ব। জেলেদের আক্রমণ প্রতিহত করতে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া মাছ শিকারে জেলেদের বাধা দিতে গিয়ে আনসার বাহিনীর একটি আগ্নেয়াস্ত্র খোয়া গেছে। এমনকি জেলেদের হামলায় স্পিডবোট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা কোস্টগার্ড সদস্যদেরও নাস্তানাবুদ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। মেঘনার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, গত সোমবার হিজলার জেলেদের হামলা প্রতিহত করতে মেঘনায় ফায়ার সার্ভিসের জলকামান ব্যবহার করতে হয়েছে।
বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে, এ বছর নিষেধাজ্ঞা চলার সময় গত ১৭ দিনে কমপক্ষে ১৫টি হামলা হয়েছে। এরমধ্যে গত ১৯ অক্টোবর বরিশালের মুলাদী উপজেলায় ৩টি হামলার ঘটনায় পৃথক ৩টি মামলা করা হয়।  গত রোববার বিকেলে হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নসংলগ্ন মেঘনা নদীতে জেলেদের হামলা ঠেকাতে আট রাউন্ড এবং শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল সদর ও মেহেন্দীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী কালাবদর নদীতে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হয়। দুটি অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ। এ ছাড়া ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে  হিজলা ও ভোলার মধ্যবর্তী মেঘনা নদীতে হামলার শিকার হয় মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ ও উপপরিচালক মো. নাসিরউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন টিম।
নিষেধাজ্ঞার শুরুর প্রথম রাতে অভিযানে নেমে হামলার শিকার হন বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর সানি। দড়িচর-খাজুরিয়া ইউনিয়নের গজারিয়া নদীতে এ হামলা হয়। ৭ অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নের আলীগঞ্জসংলগ্ন মেঘনা নদীতে জেলেদের হামলায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমসহ কোস্টগার্ডের চার সদস্য আহত হন। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদসংলগ্ন নদীতে হামলায় এক আনসার সদস্যের আগ্নেয়াস্ত্র নদীতে পড়ে যায়। অস্ত্রটি পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসাইন।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর ৪ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬ দিনে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় অভিযানে ৮৭০টি মামলা এবং কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৫৮৯ জনকে। একই সময়ে গত বছর ৭৬৯টি মামলা ও ৪৮২ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ বছর মামলা ও কারাদণ্ড বেশি হলেও পরিস্থিতি পুরোটাই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

কেন এই পরিস্থিতি 
মৎস্যজীবী সংগঠকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও হামলার ঘটনা হয়। তবে এ বছরের মতো পরিস্থিতি আগে দেখা যায়নি। তাদের মতে, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রশাসনের মাঠ কর্মকর্তাদের শিথিলতায় পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা জেলেদের নেপথ্য শক্তি হিসেবে কাজ করেন বলেও তাদের ধারণা।
ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার সামরাজ মাছঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আজিজ পাটোয়ারী স্বীকার করেন, এবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধন ও প্রশাসনের ওপর হামলার ঘটনা নজিরবিহীন। তিনি বলেন, ‘মৌসুমে নদীতে আকাল গেছে। এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে জেলেরা কোনো আইন মানতে চান না।’ জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ইকবাল হোসেন মাতুব্বর বলেন, ‘ইলিশ সম্পদ রক্ষা নির্ভর করে মেঘনাতীরের রাজনৈতিক নেতা ও মাছঘাট মালিকদের ওপর। তারা যতক্ষণ আইনের উল্টো পথে হাঁটবেন, কোনো আইন দিয়ে ইলিশ সম্পদ রক্ষা করা যাবে না।’ জাতীয় ক্ষুদ্র জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল মীর বলেন, ইলিশ নিধনকারী জেলেদের পেছনে প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। জেলেদের ভ্রাম্যমাণ আদালত কারাদণ্ড দিলে জামিনের ব্যবস্থা ও জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন প্রভাবশালীরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বেশির ভাগ সাধারণ জেলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত না। কিছু ডাকাতের মতো, অপেশাদার লোকজন ইলিশ নিধনে যুক্ত। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এর মদদ দিচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অপরাধীদেরে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান প্রয়োজন। জনবল এবং বড় স্পিডবোট আরও দরকার।

আরসিডিএস-এর উদ্যোগে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৩৫ অপরাহ্ণ
আরসিডিএস-এর উদ্যোগে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন

২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সদস্য সংগঠনগুলো সারা দেশব্যাপী প্রতি বছর ৯ অক্টোবর জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন করে আসছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে : “কৃষি জমিতে তামাক চাষ, খাদ্য নিরাপত্তায় সর্বনাশ” অবিলম্বে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হোক” এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আরসিডিএস-এর উদ্যোগে চাঁদপুরে জন সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারাভিযান পরিচালনা করা হয় এবং ইতিমধ্যে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। আরসিডিএস নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ সাদেক সফিউল্লাহ বলেন, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের ইতিবাচক নীতিগত পদক্ষেপসমূহ প্রশংসার দাবীদার হলেও কোম্পানিগুলোর কৌশলের কারণে কৃষকরা তামাক চাষের চক্র থেকে বের হতে পারছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক চাষে স্বাভাবিক ফসলের তুলনায় ৮–১০ গুণ বেশি রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, যা মাটি ও পরিবেশকে দূষিত এবং জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। ফলে রবি মৌসুমে খাদ্য ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ায় কৃষকরা আটকা পড়ছে ঋণের ফাঁদে। অন্যদিকে, কীটপতঙ্গ, গবাদিপশু ও জীববৈচিত্র্যের ওপর তামাক চাষের নেতিবাচক প্রভাব দেশের কৃষি জমি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশকে হুমকির সম্মুখীন করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমাগত তামাক চাষ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন কৌশল, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন বিধান না থাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যথাযথ উদ্যোগের অভাব, দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি চুড়ান্তকরণে বিলম্ব এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নীতির অসামঞ্জস্যতা। উল্লেখ্য তামাক রপ্তানিতে শুল্ক ছাড়ের কারণে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেশে প্রায় ৫০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। উক্ত সংকট থেকে উত্তোরণে দ্রুত “তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া)” চূড়ান্ত করা জরুরী। উল্লেখ্য, সংবিধান ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষ ধীরে ধীরে বন্ধ করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
এ মতাবস্থায়, আমাদের প্রস্তাবনা : সরকার কর্তৃক প্রণীত “তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া)” অবিলম্বে চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিকল্প ফসল চাষে কৃষকদের কারিগরি সহায়তা, উন্নত বীজ, সার ও স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান নিশ্চিত করা। তামাক চাষের জমিতে দ্বিগুণ হারে ভূমি কর আরোপ করা। সংরক্ষিত বনভূমি ও সরকারি খাসজমিতে তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা। তামাক পাতার উপর মওকুফকৃত ২৫% রপ্তানি শুল্ক পুনর্বহাল করা।