খুঁজুন
                               
শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১১ শ্রাবণ, ১৪৩২

নারী দিবস : সকল নারীর জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী চাই

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ৮ মার্চ, ২০২৫, ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ
নারী দিবস : সকল নারীর জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী চাই

নারী মানবজাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে যুগের পর যুগ ধরে নারীকে নানাভাবে বৈষম্য, নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। আজকের আধুনিক বিশ্বেও নারীরা সমান সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত। নারী দিবস কেবলমাত্র উৎসবের দিন নয়, এটি একটি সংগ্রামের দিন, একটি অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন। তাই নারী দিবসে আমাদের দাবি—নারীদের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী, যেখানে তারা স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারবে, তাদের অধিকার নিশ্চিত হবে, এবং তারা সমাজের প্রতিটি স্তরে সমানভাবে অংশ নিতে পারবে। নারী অধিকার বলতে বোঝানো হয় সেই মৌলিক ও মানবিক অধিকারসমূহ, যা প্রত্যেক নারীর জন্য অপরিহার্য। নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকারসহ সকল ক্ষেত্রে তাদের সমান সুযোগ থাকা উচিত। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী নারী উন্নয়নের অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। কিন্তু এখনও নারীরা বহুবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। অনেক দেশেই নারীরা এখনও বেতন বৈষম্যের শিকার, কর্মস্থলে যৌন হয়রানির শিকার হয়, গৃহস্থালি ও পারিবারিক দায়িত্ব নারীদের ওপর বেশি চাপিয়ে দেওয়া হয়, এবং অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হতে হয়। নারীদের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী বলতে বোঝায় এমন এক সমাজ যেখানে নারীরা স্বাধীনভাবে, নিরাপদে এবং মর্যাদার সাথে জীবনযাপন করতে পারে। নারী দিবসের মূল লক্ষ্য হলো নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে সামনে এগিয়ে নেওয়া। যদিও বিশ্বজুড়ে নারীর অবস্থার উন্নতি হয়েছে, তবুও এখনও বহু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে

নারীর জন্য বাসযোগ্য পৃথিবীর গুরুত্ব : নারীর জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরি করা শুধু নারীর জন্যই নয়, বরং সমাজের সামগ্রিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য। যদি নারীরা সুরক্ষিত পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে, তাদের সম্পূর্ণ অধিকার পায়, তাহলে তারা নিজেদের প্রতিভা ও শ্রম দিয়ে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। বাসযোগ্য পৃথিবী বলতে বোঝায় এমন একটি সমাজ, যেখানে—নারীরা রাস্তায়, কর্মস্থলে, বাসায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে। প্রতিটি মেয়ে শিশুকে সমান শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে, যেন তারা নিজের জীবন নিজের মতো করে গড়তে পারে। নারী-পুরুষের সমান কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে, এবং কাজের ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূর করতে হবে। নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, গার্হস্থ্য সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সমাজে নারীর প্রতি যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, তা দূর করতে হবে। পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছোটবেলা থেকেই নারীর প্রতি সম্মান ও সমতার শিক্ষা দিতে হবে।

নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ ও প্রতিকার : নারীদের প্রতি বৈষম্যের মূল কারণ হলো প্রাচীন কুসংস্কার, পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যা, ও দারিদ্র্য। নারীদের সমান অধিকারের পথে এগিয়ে যেতে হলে এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নের প্রথম শর্ত হলো শিক্ষা। শিক্ষিত নারী নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করতে পারে, সচেতন হতে পারে, এবং সমাজে নেতৃত্ব দিতে পারে। নারীদের আত্মনির্ভরশীল হতে হলে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা বাড়াতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার জন্য সহজ ঋণের ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। নারী নির্যাতনের ঘটনায় দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যেন অন্যরা এমন অপরাধ করতে সাহস না পায়। পরিবারে ছেলে-মেয়ের মধ্যে কোনো বৈষম্য না রেখে সমান সুযোগ দিতে হবে। সমাজে নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য পুরুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

নারীর জন্য নিরাপদ পৃথিবী গড়তে করণীয় : নারীদের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরি করতে হলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একযোগে কাজ করতে হবে। নারীর প্রতি সম্মান ও সমতা নিশ্চিত করতে হবে। নারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে সরকার ও প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করতে হবে। নারী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রসার ঘটাতে হবে। নারীদের মতামত ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

নারীর প্রতি বৈষম্যের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা : ইতিহাসের পাতায় দেখা যায়, বিভিন্ন সমাজে নারীদের অধিকার ও স্বাধীনতা বিভিন্নভাবে খর্ব করা হয়েছে। মধ্যযুগে নারী শিক্ষা, সম্পত্তির অধিকার, এমনকি সামাজিকভাবে নিজের মত প্রকাশের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত ছিল। বর্তমানে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হলেও, বৈষম্য ও নির্যাতন আজও রয়ে গেছে।বিশ্বব্যাপী নারীরা পুরুষদের তুলনায় ২০-৩০% কম বেতন পায় একই ধরনের কাজের জন্য। প্রতি তিনজনে একজন নারী জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে যৌন বা শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়। অনেক দেশে নারী এখনো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, যেমন— শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সম্পত্তির অধিকার।

নারীর ক্ষমতায়ন ও সমাজের উন্নয়ন : নারীর ক্ষমতায়ন শুধু নারী নয়, পুরো সমাজের উন্নতির সঙ্গে সম্পর্কিত। একটি দেশ তখনই উন্নত হতে পারে যখন তার জনসংখ্যার অর্ধেক অংশ— অর্থাৎ নারীরা— সমান সুযোগ ও মর্যাদা পায়। নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে—নারীরা যদি পুরুষদের সমানভাবে আয়-উপার্জনের সুযোগ পায়, তাহলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। একজন শিক্ষিত ও স্বনির্ভর নারী তার পরিবারের জন্য ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা বজায় থাকলে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয় এবং সামগ্রিকভাবে মানবাধিকার রক্ষা পায়।

নারীর জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গঠনের চ্যালেঞ্জসমূহ : একটি বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরি করতে হলে কয়েকটি বড় বাধা দূর করতে হবে— পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। অনেক সমাজেই নারীদের ভূমিকা এখনো গৃহস্থালির কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা হয়। কর্মসংস্থান, রাজনীতি ও উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত হয়। নারীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অনেক দেশেই এখনো নারী শিক্ষার হার পুরুষদের তুলনায় কম। শিক্ষা না থাকলে নারীরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারে না এবং সহজেই বঞ্চনার শিকার হয়। মেয়েশিশুদের জন্য বাধ্যতামূলক শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং নারীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা। নারীদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকির মধ্যে অন্যতম হলো যৌন হয়রানি, গার্হস্থ্য সহিংসতা ও পাচার। অনেক সময় সামাজিক সংস্কার ও আইনের দুর্বলতার কারণে অপরাধীরা শাস্তি পায়। কঠোর আইন প্রণয়ন, দ্রুত বিচার ব্যবস্থা চালু করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা। নারীদের কর্মসংস্থানে এখনো অনেক বাধা রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানেই নারী নেতৃত্বকে বাধাগ্রস্ত করা হয়, এবং অনেক সময় মাতৃত্বকালীন ছুটির কারণে নারীদের ক্যারিয়ারে বাধা আসে। নারীদের জন্য সমান মজুরি, মাতৃত্বকালীন সুবিধা বৃদ্ধি ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা।

বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে আমাদের করণীয় : নারীদের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরি করতে হলে সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা ও পরিবর্তন আনতে হবে। ছেলেমেয়ের মধ্যে পার্থক্য না করে সমান অধিকার নিশ্চিত করা।মেয়েদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। নারী কর্মীদের জন্য নিরাপদ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা।লিঙ্গভিত্তিক বেতন বৈষম্য দূর করা। নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা। নারীবান্ধব আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

নারী দিবস : প্রতিজ্ঞার দিন। নারী দিবস শুধুমাত্র উদযাপনের জন্য নয়, এটি প্রতিজ্ঞার দিন— একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার শপথ নেওয়ার দিন। আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত—নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন। নারীর অধিকার রক্ষার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি। নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। নারীর ক্ষমতায়ন ও আত্মনির্ভরশীলতা নিশ্চিত করা।

নারীদের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে হলে কেবল নারীরাই নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা ও সহযোগিতা ছাড়া একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ এবং উন্নত বিশ্ব গঠন সম্ভব নয়। নারী দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক—একটি সমতার সমাজ গড়ার, যেখানে প্রতিটি নারী নিরাপদ, সম্মানিত ও স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। তাহলেই আমরা একটি সত্যিকারের বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে পারব, যেখানে নারী ও পুরুষ উভয়ে সমান সুযোগ ও অধিকার নিয়ে এগিয়ে যাবে এক নতুন ভোরের পথে। নারী দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক—একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার, যেখানে প্রতিটি নারী স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারবে, তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, এবং সে সমান সুযোগ ও মর্যাদা পাবে। শুধু একদিন নয়, প্রতিদিনই নারীর অধিকারের কথা ভাবতে হবে, কাজ করতে হবে। নারীর উন্নয়ন মানেই সমাজের উন্নয়ন, এবং নারীর জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে পারলেই আমাদের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল ও সুন্দর হবে।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১:০৮ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ (ইউএসসিআইআরএফ) নামের একটি ফেডারেল সংস্থা। জুলাই মাসে নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তারা। চলতি বছরের মে মাসে ঢাকায় সংস্থাটির সফরের ভিত্তিতে রিপোর্টটি তৈরি করা হয়। তখন তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। পুরো রিপোর্টটি লিখেছেন সীমা হাসান, যিনি ইউএসসিআইআরএফ-এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে এবং আগস্টে সেনাবাহিনীর সমর্থনে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন। যদিও নতুন সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কার প্রস্তাব করেছে, তারপরও দেশে ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এখনো অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ থেকে ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও সরকার পতনের সময় দেশে কার্যকর কোনো প্রশাসন না থাকায় ভয়াবহ সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর একাধিক হামলার খবর পাওয়া যায়, যেগুলো মূলত আওয়ামী লীগের সমর্থক বা সদস্য ভেবে প্রতিশোধমূলকভাবে চালানো হয়।
পুলিশের একটি রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে ইউএসসিআইআরএফ জানায়, ৫ থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে মোট ১,৭৬৯টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১,২৩৪টি রাজনৈতিক, ২০টি সাম্প্রদায়িক ও ১৬১টি ভুয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সংঘটিত হয়। এই সময়ে অনেক মুসলিম শিক্ষার্থী ও নাগরিক সংখ্যালঘু মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় পাহারা দিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।
রিপোর্টে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে, যার সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কমিশন সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ বা ‘বহুত্ববাদ’ শব্দ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটি প্রস্তাবিত শব্দের পরিবর্তে ‘আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা’ শব্দবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আংশিক সমর্থন জানিয়ে ‘বহুত্ববাদ’-এর পরিবর্তে বাংলা বিকল্প ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে।
২০২৪ সালের আগস্টে নারী সংস্কার কমিশন গঠনের পর চলতি বছরের মে মাসে কমিশনটি ৪৩৩টি সুপারিশ দেয়। এর মধ্যে একটি হলো ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব, যা ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইনকে সম্পূরক করবে। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেছে ইসলামপন্থি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তারা কমিশনকে ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দেয় এবং কমিশনের সদস্যদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে। নারীদের উদ্দেশ করে কটূক্তি করার অভিযোগে ৬ নারী হেফাজতের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দেন। পরে সংগঠনটি ক্ষমা চায়। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ফেব্রুয়ারিতে একটি নারী ফুটবল ম্যাচ বাতিল করতে বাধ্য করে এবং নাদিরা ইয়াসমিন নামের এক নারী অধ্যাপককে হুমকির মুখে কলেজ বদল করতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিচালিত এই সংস্থার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে এখনো ব্লাসফেমি সংক্রান্ত ধারা (দণ্ডবিধি ১৯৫এ) বলবৎ রয়েছে, যেখানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০২৩ সালের সাইবার সিকিউরিটি আইন অনুযায়ী, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন ডিজিটাল কনটেন্ট প্রকাশ করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। এসব বিষয় নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউএসসিআইআরএফ।
সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় সহনশীলতার ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। সংবিধান সংস্কারে সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত না হলে, এই প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদে বৈষম্য আরও গভীর করতে পারে। ইউএসসিআইআরএফ-এর মতে, বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা রক্ষায় একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। সংবিধান সংস্কারের এই পর্যায়ে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই দীর্ঘস্থায়ী শান্তির মূল চাবিকাঠি হতে পারে।

শিগগিরই গঠিত হচ্ছে তথ্য কমিশন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১:০৫ অপরাহ্ণ
শিগগিরই গঠিত হচ্ছে তথ্য কমিশন

তথ্য কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। কয়েক দিনের মধ্যে তথ্য কমিশন গঠন-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। শনিবার (২৬ জুলাই) তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ অনুযায়ী একজন প্রধান তথ্য কমিশনার এবং দুজন তথ্য কমিশনার নিয়ে এই কমিশন গঠিত হবে। দুই জন তথ্য কমিশনারের মধ্যে ন্যূনতম এক জন নারী হবেন।

কোথাও কোনো সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই: মির্জা ফখরুল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১:০৩ অপরাহ্ণ
কোথাও কোনো সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই: মির্জা ফখরুল

দেশের কোথাও কোনো সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আগে যে ব্যবসায়ীকে তিন লাখ টাকা চাঁদা দিতে হতো, এখন তাকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। কোথাও কোনো সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের লেখা বই ‌’অর্থনীতি শাসন ও ক্ষমতা: যাপিত জীবনের আলেখ্য’-এর প্রকাশ ও আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সংস্কারে সময় লাগবে জানিয়ে ফখরুল বলেন, রাতারাতি সংস্কার করে ফেলা সম্ভব নয়। তবে সে জন্য গণতান্ত্রিক চর্চা বাদ দিয়ে বসে থাকা যাবে না। কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। এ জন্য কোনো রকম বিলম্ব না করে অতি দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠিয়ে সংস্কার করতে হবে। তিনি বলেন, ট্রাম্পের ট্যারিফ (শুল্ক) সামনে বড় বিপদে ফেলতে পারে। মনে রাখবেন, রাজনৈতিক দল দেশের উন্নয়নে জনস্বার্থে সব সময় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।