খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৬ বৈশাখ, ১৪৩২

কবি নজরুলের রাজনৈতিক ও সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:১৬ অপরাহ্ণ
কবি নজরুলের রাজনৈতিক ও সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য কবি, যিনি কেবল সাহিত্যিক সৃষ্টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং তাঁর রচনাগুলোর মাধ্যমে সমাজ ও রাজনীতির পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন। তিনি ছিলেন বিদ্রোহী, মানবতাবাদী এবং সাম্যবাদী চিন্তাধারার এক উজ্জ্বল প্রতিনিধি। তাঁর সাহিত্য, গান ও বক্তৃতায় শোষণ, সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ, নারীর প্রতি বৈষম্য এবং ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ প্রকাশ পেয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সাহিত্য ও কর্মের মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর বিখ্যাত কবিতা “বিদ্রোহী” (১৯২২) উপনিবেশবাদী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের এক অনন্য দলিল। তিনি ব্রিটিশ শাসনের নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলেছিলেন এবং তাঁর সাহিত্য জনগণের মাঝে চেতনা ছড়িয়ে দেয়। তাঁর “আনন্দময়ীর আগমনে” কবিতায় তিনি ব্রিটিশদের তুলনা করেছেন অত্যাচারী শক্তির সঙ্গে এবং ভারতকে মায়েরূপে কল্পনা করে ব্রিটিশ শাসকদের নির্মমতার চিত্র এঁকেছেন। এজন্য তাঁকে কারাবরণও করতে হয়েছে। নজরুল কেবল কলম দিয়েই নয়, তরুণ বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯১৭ সালে তিনি ব্রিটিশ ভারতের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং সামরিক জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিপ্লবী চেতনার উন্মেষ ঘটান। বিপ্লবের ডাক দিয়ে তিনি লিখেছিলেন “চল্ চল্ চল্”, যা পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রণসঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তাঁর বিভিন্ন গান ও কবিতায় তিনি যুবসমাজকে স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করেছেন। নজরুল ইসলাম ছিলেন মেহনতি মানুষের কবি। তিনি সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিলেন এবং সমাজতন্ত্রের আদর্শকে সমর্থন করতেন। তাঁর কবিতা “দুর্দিনের যাত্রী”, “কাণ্ডারী হুঁশিয়ার” ও “সমবেত বিদ্রোহী রণধ্বনি” তে তিনি শোষিত মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন।
তিনি বলেছিলেন
গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।
এই চেতনা সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতিফলন। তিনি মনে করতেন, শ্রমিক, কৃষক ও নিম্নবর্গের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা উচিত।
নজরুলের সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা : কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি শুধু কবি বা সাহিত্যিকই ছিলেন না, বরং ছিলেন এক সমাজচিন্তক ও সংস্কারক। তাঁর সাহিত্য, কবিতা, গান, প্রবন্ধ ও উপন্যাসের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে সমাজ পরিবর্তনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি শুধু রাজনৈতিক বিদ্রোহেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার, অসাম্য, নারীর প্রতি বৈষম্য, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। নজরুলের সাহিত্যিক কর্মজীবন ছিল বৈচিত্র্যময়, যেখানে তিনি সমকালীন সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা মূলত মানবতাবাদ, সাম্য, স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার মতো বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। এই প্রবন্ধে তাঁর সমাজ সংস্কারমূলক দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হবে। নজরুলের সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সাম্য ও মানবতা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সমাজে কেউ ছোট-বড় নয়, ধর্ম-বর্ণ-জাতিগত পরিচয় মানুষের প্রকৃত পরিচয় নয়, বরং মানবতাই মানুষের প্রকৃত পরিচয়।
তিনি বলেছিলেন-
গাহি সাম্যের গান,
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।
এই পংক্তির মাধ্যমে তিনি ঘোষণা করেছেন যে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। তিনি সমাজের ধনী-গরিব, জাত-পাতের বিভেদকে অস্বীকার করেছেন এবং প্রত্যেক মানুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন।
তাঁর কবিতা ও গানে বারবার ফুটে উঠেছে সামাজিক সাম্যের চেতনা। “সাম্যবাদী” কবিতায় তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন
আমি সেই দিন হবো শান্ত, যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল
আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ
ভীম রণভূমে রণিবে না!
এই কবিতায় তিনি সমাজের সব শোষিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে শোষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক অনন্য প্রতিভূ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ধর্ম মানুষের কল্যাণের জন্য, বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য নয়। তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন এবং তাঁর লেখায় উভয় ধর্মের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সমন্বয় ঘটিয়েছেন।
তিনি লিখেছিলেন-
মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম, হিন্দু-মুসলমান,

হিন্দু আর মুসলমান, মুসলমান আর হিন্দু,
এই সত্য জেনে গিয়েছে বিশ্ব, জানে ভারত-ভূ।
এই ধরনের বক্তব্য ও সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তিনি বারবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন। তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলতেন, ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো মানবতার সেবা, কিন্তু সমাজে এটি প্রায়ই ভুলভাবে ব্যবহৃত হয়। “ধর্ম ও মানবতা” শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি বলেছেন-
মানুষের কল্যাণই যদি ধর্ম না হয়, তবে সে ধর্ম ধর্ম নয়—সেটা অধর্ম।
তাঁর রচিত গজল, শ্যামাসংগীত ও হামদ-নাতের মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় সংগীতের এক অনন্য সমন্বয় ঘটিয়েছেন, যা আজও অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির উজ্জ্বল উদাহরণ।
নারী মুক্তি ও নারীর অধিকারের পক্ষে তাঁর অবস্থান
নজরুল ছিলেন নারীর অধিকারের অন্যতম শক্তিশালী প্রবক্তা। তিনি মনে করতেন যে সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার থাকা উচিত এবং নারীকে অবদমিত রেখে সমাজ কখনো উন্নত হতে পারে না।
তাঁর কবিতায় নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সমতার ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে। “নারী” কবিতায় তিনি লিখেছেন-
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
তিনি নারীর স্বাধীনতার জন্য জোর দাবি তুলেছিলেন এবং নারীকে শুধু সংসারের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ না রেখে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
“বিদ্রোহী নারী” কবিতায় তিনি নারীর শক্তি ও স্বাধীনতার কথা বলেছেন-
আমি চির বিদ্রোহিনী বীর
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!
এছাড়াও, নজরুল কন্যাসন্তানকে অবহেলা করার প্রবণতার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন এবং নারীশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের পক্ষে কথা বলেছেন। তাঁর অনেক গান ও কবিতায় নারীর প্রতি সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠে এসেছে।
নজরুল ছিলেন শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর। তিনি কৃষক, শ্রমিক, মজুর, দারিদ্র্যপীড়িত সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন এবং তাঁদের অধিকার আদায়ের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন।

তাঁর কবিতা “দুর্দিনের যাত্রী”, “কাণ্ডারী হুঁশিয়ার” ও “সাম্যবাদী” তে তিনি সমাজের বঞ্চিত শ্রেণির দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন।
তিনি লিখেছেন-
ওরে চাষী, জাগরে তোরা!
মাটির বুকের প্রাণের ধন
লুটেরারা লুটে খায়!
ওরে মজুর, কুলি, মাল্লা,
সকল শোষিত, নিপীড়িত, নিঃস্ব জাতি
জেগে ওঠো! লও শক্তি হাতে!
এই কথাগুলো প্রমাণ করে যে তিনি শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য সাহিত্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
নজরুল এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে কোনো জাতিভেদ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, লিঙ্গবৈষম্য কিংবা অর্থনৈতিক শোষণ থাকবে না। তিনি সমাজের সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং একটি মানবিক ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি ঘোষণা করেছেন-
দেখিনু সেদিন রেলে
কুলি বলে এক বাবু বসাতে চায়নি সাথে
কহিলাম আমি, আছে নাকি মোর চামড়া তার চেয়ে খাঁটি?
এই ধরনের সাহিত্যকর্ম তাঁর সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক
কাজী নজরুল ইসলামের সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা কেবল তাঁর সময়ের জন্য নয়, বরং আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তিনি মানবতার কবি, যিনি অন্যায়, শোষণ, সাম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন।
তাঁর সাহিত্য আমাদের শিখিয়েছেন-
সাম্যের জন্য লড়াই করা উচিত
ধর্মকে বিভেদ নয়, ঐক্যের মাধ্যম হিসেবে দেখা উচিত
নারীর অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন
শ্রমিক ও কৃষকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি

তাঁর আদর্শ আজও আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। সমাজকে বদলাতে হলে নজরুলের মতো বিদ্রোহী মনোভাব ধারণ করাই হবে প্রকৃত শ্রদ্ধার প্রকাশ।
কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক ও সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা আজও প্রাসঙ্গিক। তাঁর সাহিত্য, কবিতা ও গান আমাদের স্বাধীনতা, সাম্য, মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়ের জন্য সংগ্রামের শিক্ষা দেয়। তিনি কেবল একজন কবি ছিলেন না, ছিলেন এক সমাজচেতক, যিনি নিজের কলমকে অস্ত্র বানিয়ে শোষিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। নজরুলের ভাবনা আমাদের বর্তমান সমাজেও আলো ছড়ায়। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করলেই আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক, সাম্যভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে পারব।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:২২ পূর্বাহ্ণ
ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, মিলন এবং নতুন করে বাঁচার প্রেরণা। এই দিনে সবাই চায় নিজেকে সাজিয়ে নিতে, নতুন কাপড় পরে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে। কিন্তু এমন অনেকের মধ্যেও থাকে এমন কেউ, যার জন্য একটি নতুন জামা শুধু পোশাক নয়, বরং স্বপ্ন, গর্ব, আত্মমর্যাদা এবং একটি আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। এই প্রবন্ধে আমরা এমন এক নতুন জামার কথা বলব, যে জামার শুধু দামী কাপড় বা ডিজাইনের গর্ব নেই, বরং রয়েছে আত্মার গভীরে জমে থাকা এক মানুষের স্বপ্নের গল্প।

শহরের এক কোণায় বাস করে ছোট্ট ছেলেটি রিয়াদ। বয়স প্রায় দশ। তার বাবা একজন দিনমজুর, মা গৃহিণী। সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যে কোনোভাবে দিন কাটে তাদের। বছরের প্রতিটি দিন কাটে সংগ্রামের মাঝে, কিন্তু ঈদ আসে স্বপ্নের আলো নিয়ে। ঈদে নতুন জামা পাবে, এই আশায় রিয়াদ এক মাস রোজা রাখে, নিজের মনকে শক্ত করে।

তবে এই জামা আসবে কি না, তা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, বাবার মুখে ভাঁজ আর চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। মা বারবার বলেন, “এবার হয়তো পুরনো জামাতেই ঈদ করতে হবে।” কিন্তু রিয়াদ বিশ্বাস করে—আল্লাহ যদি রোজা কবুল করেন, তাহলে একটা নতুন জামা হয়তো আসবেই।

এই জামার অপেক্ষা শুধু রিয়াদের নয়, এটি যেন তার মন-প্রাণের আকুতি। এই জামা তার জন্য স্বপ্নপূরণ, আত্মমর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্বের অনুভব।

আমরা অনেক সময় বুঝি না, একটি নতুন জামা একজন শিশুর জন্য কতটা অর্থবহ হতে পারে। ধনী পরিবারের শিশুর কাছে এটি হয়তো একটি চমকপ্রদ পোশাক, কিন্তু রিয়াদের কাছে এটি স্বপ্ন পূরণের মতো। সে ভাবে, ঈদের দিন সবার মতো তাকেও যদি নতুন জামায় দেখা যায়, তাহলে সে আর অবহেলিত হবে না, তার বন্ধুরা তাকে হাসবে না। তারও মুখে হাসি ফুটবে, তারও ছবি উঠবে মোবাইল ক্যামেরায়।

এই জামা তার আত্মবিশ্বাস, যেটা সে স্কুলে পড়ার সময় খুঁজে বেড়ায়, যখন ক্লাসের অন্য ছেলেরা নতুন জামা পরে আসে আর সে পড়ে থাকে একঘেয়ে মলিন কাপড়।

এখানে জামার একটি কল্পিত স্বর ও ভাষা কল্পনা করা যাক—যেখানে জামাটি যেন নিজের মনে নিজের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছে: “আমি কোনো বিলাসী দোকানের শেলফে ঝুলে থাকা দামি জামা নই। আমি সেই জামা, যাকে এক দরিদ্র বাবার কষ্টের টাকায় কিনে আনা হবে তার ছেলের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে।
আমি হয়তো রঙিন নই, হয়তো আমার ডিজাইনে জাঁকজমক নেই, কিন্তু আমি গর্বিত। কারণ আমি হব একটি শিশুর ঈদের স্বপ্ন পূরণের বাহক। আমি হব আত্মমর্যাদার প্রতীক, আমি হব ঈদের প্রাপ্তির প্রতিচ্ছবি।”

এই ভাবনার মধ্যেই ফুটে ওঠে জামার স্বপ্ন—সে চায়, তাকে কেউ ভালোবাসুক, পরিধান করুক, আর আনন্দ পাক।

রিয়াদের মা হয়তো নিজের জন্য কোনো কাপড় কিনবেন না, বাবা হয়তো একজোড়া চপ্পল না কিনে সেই টাকায় ছেলের জামা কিনে দেবেন। কারণ, সন্তানের হাসির চেয়ে বড় কিছু তাদের কাছে নেই। একটি নতুন জামার পেছনে লুকিয়ে থাকে একটি পরিবারের নীরব ত্যাগ, ভালোবাসা আর গোপন কান্না।

ঈদের নতুন জামা এই পরিবারগুলোর কাছে শুধু পোশাক নয়—এটা এক সম্মান, ভালোবাসা এবং আত্মতৃপ্তির চিহ্ন। অনেক সময় বাবা-মায়েরা নিজেদের প্রয়োজন বিসর্জন দিয়ে সন্তানের মুখে হাসি দেখতে চান। নতুন জামা যেন সেই আত্মত্যাগের স্বাক্ষর হয়ে উঠে।

ঈদের দিন আমরা যখন দেখি কেউ চকচকে কাপড় পরে বেরিয়েছে, আর কেউ পুরনো জামা পরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, তখন সামাজিক বৈষম্যের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নতুন জামার গুরুত্ব সেখানে দ্বিগুণ। এটি একধরনের সামাজিক মর্যাদা।

রিয়াদ হয়তো তার বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ভাবে—আমারও যদি এমন একটা জামা থাকত! শুধু ঈদের দিনটা নয়, পুরো জীবনজুড়ে সেই হাহাকার থেকে যায়। এই এক টুকরো জামাই তার স্বপ্নকে উঁচুতে নিয়ে যেতে পারে, আর না থাকলে আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়ে।

দরিদ্র শিশুদের জন্য ঈদে জামার প্রাপ্তি মানে কী? সমান মর্যাদা – অন্যদের মতো তাকেও দেখা হয় একজন ‘পূর্ণ’ শিশুর মতো।  আত্মবিশ্বাস – নতুন জামা পরে সে খুশি মনে বন্ধুদের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। পরিবারের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি – সে উপলব্ধি করে, তার মা-বাবা তাকে কত ভালোবাসে।

৪. ভবিষ্যতের স্বপ্ন – একজন শিশু জানে, সে যদি চেষ্টার মধ্যে থাকে, তার স্বপ্ন একদিন পূরণ হবেই।

ঈদের সকালে রিয়াদের ঘুম ভাঙে ভোরবেলা। মা হাসিমুখে এসে বলে—
“এই দেখ, তোমার নতুন জামা।”
রিয়াদ প্রথমে বিশ্বাস করতে পারে না। হাত বাড়িয়ে জামাটা নেয়, চোখে জল চলে আসে। “আমার?”
মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, “হ্যাঁ বাবা, তোমার।”
রিয়াদ তার ছোট জামাটিকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে, যেন এটিই তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

সেই জামা তখন আর শুধু সুতা ও রঙের মিশ্রণ নয়, সেটি তখন একটি ‘স্বপ্ন’। একটি সন্তুষ্টির প্রতীক, একটি ছোট শিশুর গর্বের নিশান।

আমরা যারা সমাজের ভাগ্যবান অংশ, তাদের উচিত এই বৈষম্য দূর করতে সচেষ্ট হওয়া। প্রতিবছর ঈদের আগে আমরা অনেকেই প্রচুর জামা কিনি, কিন্তু ভাবি না পাশের দরিদ্র শিশুটার কথা। যদি আমরা একটি নতুন জামা কাউকে দিতে পারি, তাহলে তার ঈদটা হয়ে উঠতে পারে জীবনের সেরা দিন।সামাজিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার—সবাই যদি চায়, তাহলে প্রত্যেক শিশুর ঈদে একটি নতুন জামা নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি দান নয়, এটি মানুষের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা।

“ঈদে একটি নতুন জামা যার স্বপ্ন” এই বাক্যটি শুধুমাত্র কোনো এক জামা বা একটি শিশুর গল্প নয়, এটি হাজারো রিয়াদের গল্প। এটি আমাদের সমাজে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য মানুষের জীবনবোধের চিত্র। একটি নতুন জামা কেবল দেহ ঢাকার উপকরণ নয়, এটি মানুষের সম্মান, আত্মবিশ্বাস এবং ভালোবাসার প্রতীক। আমরা যদি এই একটুকরো জামার ভেতর মানুষের আবেগ, স্বপ্ন ও আত্মত্যাগ দেখতে পারি, তাহলে সমাজে সত্যিকার পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। আসুন, এই ঈদে আমরা কেবল নিজেদের জন্য না, অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যও একটি নতুন জামার স্বপ্ন বুনি।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:৩৮ অপরাহ্ণ
চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভা (১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৫) নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি (২০২৫-২০২৮) ঘোষণা করা হয়েছে। সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (সর্বশেষ সংশোধন ২০১৩) ও সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ (সর্বশেষ সংশোধন ২০২০) অনুযায়ী নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন (পরিদর্শক, জেলা সমবায় কার্যালয়, চাঁদপুর) কোন পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছয় সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষণা করেন। নবনির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি- মোঃ ইকবাল আজম (প্রতিনিধি, দি চাঁদপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সহ-সভাপতি- মোঃ আফজাল হোসেন খান (প্রতিনিধি, মিলেনিয়াম বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সম্পাদক- দুলাল চন্দ্র দাস (প্রতিনিধি, বাগড়া শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- মোঃ আক্কাস ফরাজী (প্রতিনিধি, রূপসী পল্লী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- খন্দকার ফখরুল আলম (প্রতিনিধি, আশার আলো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সদস্য- মোঃ খোরশেদ আলম (প্রতিনিধি, খাজুরিয়া বাজার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ)।
জেলার বিভিন্ন সমবায় সমিতির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ও নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন এর সভাপতিত্বে নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের কৃতি সন্তান, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সমবায়ী ও বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন শেখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন জেলা সমবায় ইউনিয়ন, জেলার সমবায় সমিতি ও সমবায়ীদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব থাকলেও চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নে দীর্ঘদিন নির্বাচিত কমিটি ছিল না, যার কারণে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। আমরা বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন থেকে চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নকে কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। সমবায় বিভাগ এতে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির গঠন করে, যার ফলশ্রুতিতে আজকে আমরা একটি নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে পেরেছি। এজন্য তিনি সমবায় বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান পাশাপাশি নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানান। সভায় তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। সকলের সহযোগিতায় তা বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সভায় অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সভাপতি মুরাদ হোসেন খান, জুন হাউজিং কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর প্রতিনিধি এ ওয়াই এম জাকারিয়া, ওয়ারলেস বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি মোঃ জিয়াউদ্দিন, ইসলামীয়া সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি নাজমুল হুদা প্রমূখ।
উল্লেখ্য প্রতি ৩ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও ২০১২ সালের পর, দীর্ঘ ১৩ বছর পর এই ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হলো।

আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ
আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আগামী ২ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সম্প্রতি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, সংসদ না থাকায় এবার সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে না। অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ কারণে ২ জুন বাজেট ঘোষণার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণত আগের অর্থবছরগুলোতে বৃহস্পতিবার বাজেট দেওয়া হতো, এবার সোমবার ঘোষণা করা হবে। বাজেট ঘোষণার পর আগের রীতি অনুযায়ী অর্থ উপদেষ্টা বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।

সূত্রটি জানিয়েছে, সাধারণত প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় বড় রাখা হয়। তবে এবার বাজেট ঘাটতি কমিয়ে বাজেট ছোট কারার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

বাজেটের আকার কমানো হলেও সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিকীকরণ সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ ধরতে পারে। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। চলতি অর্থবছরেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। যদিও গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।