খুঁজুন
                               
শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১১ শ্রাবণ, ১৪৩২

কবি নজরুলের রাজনৈতিক ও সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:১৬ অপরাহ্ণ
কবি নজরুলের রাজনৈতিক ও সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য কবি, যিনি কেবল সাহিত্যিক সৃষ্টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং তাঁর রচনাগুলোর মাধ্যমে সমাজ ও রাজনীতির পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন। তিনি ছিলেন বিদ্রোহী, মানবতাবাদী এবং সাম্যবাদী চিন্তাধারার এক উজ্জ্বল প্রতিনিধি। তাঁর সাহিত্য, গান ও বক্তৃতায় শোষণ, সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ, নারীর প্রতি বৈষম্য এবং ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ প্রকাশ পেয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সাহিত্য ও কর্মের মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর বিখ্যাত কবিতা “বিদ্রোহী” (১৯২২) উপনিবেশবাদী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের এক অনন্য দলিল। তিনি ব্রিটিশ শাসনের নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলেছিলেন এবং তাঁর সাহিত্য জনগণের মাঝে চেতনা ছড়িয়ে দেয়। তাঁর “আনন্দময়ীর আগমনে” কবিতায় তিনি ব্রিটিশদের তুলনা করেছেন অত্যাচারী শক্তির সঙ্গে এবং ভারতকে মায়েরূপে কল্পনা করে ব্রিটিশ শাসকদের নির্মমতার চিত্র এঁকেছেন। এজন্য তাঁকে কারাবরণও করতে হয়েছে। নজরুল কেবল কলম দিয়েই নয়, তরুণ বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯১৭ সালে তিনি ব্রিটিশ ভারতের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং সামরিক জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিপ্লবী চেতনার উন্মেষ ঘটান। বিপ্লবের ডাক দিয়ে তিনি লিখেছিলেন “চল্ চল্ চল্”, যা পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রণসঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তাঁর বিভিন্ন গান ও কবিতায় তিনি যুবসমাজকে স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করেছেন। নজরুল ইসলাম ছিলেন মেহনতি মানুষের কবি। তিনি সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিলেন এবং সমাজতন্ত্রের আদর্শকে সমর্থন করতেন। তাঁর কবিতা “দুর্দিনের যাত্রী”, “কাণ্ডারী হুঁশিয়ার” ও “সমবেত বিদ্রোহী রণধ্বনি” তে তিনি শোষিত মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন।
তিনি বলেছিলেন
গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।
এই চেতনা সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতিফলন। তিনি মনে করতেন, শ্রমিক, কৃষক ও নিম্নবর্গের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা উচিত।
নজরুলের সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা : কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি শুধু কবি বা সাহিত্যিকই ছিলেন না, বরং ছিলেন এক সমাজচিন্তক ও সংস্কারক। তাঁর সাহিত্য, কবিতা, গান, প্রবন্ধ ও উপন্যাসের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে সমাজ পরিবর্তনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি শুধু রাজনৈতিক বিদ্রোহেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার, অসাম্য, নারীর প্রতি বৈষম্য, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। নজরুলের সাহিত্যিক কর্মজীবন ছিল বৈচিত্র্যময়, যেখানে তিনি সমকালীন সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা মূলত মানবতাবাদ, সাম্য, স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার মতো বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। এই প্রবন্ধে তাঁর সমাজ সংস্কারমূলক দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হবে। নজরুলের সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সাম্য ও মানবতা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সমাজে কেউ ছোট-বড় নয়, ধর্ম-বর্ণ-জাতিগত পরিচয় মানুষের প্রকৃত পরিচয় নয়, বরং মানবতাই মানুষের প্রকৃত পরিচয়।
তিনি বলেছিলেন-
গাহি সাম্যের গান,
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।
এই পংক্তির মাধ্যমে তিনি ঘোষণা করেছেন যে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। তিনি সমাজের ধনী-গরিব, জাত-পাতের বিভেদকে অস্বীকার করেছেন এবং প্রত্যেক মানুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন।
তাঁর কবিতা ও গানে বারবার ফুটে উঠেছে সামাজিক সাম্যের চেতনা। “সাম্যবাদী” কবিতায় তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন
আমি সেই দিন হবো শান্ত, যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল
আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ
ভীম রণভূমে রণিবে না!
এই কবিতায় তিনি সমাজের সব শোষিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে শোষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক অনন্য প্রতিভূ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ধর্ম মানুষের কল্যাণের জন্য, বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য নয়। তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন এবং তাঁর লেখায় উভয় ধর্মের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সমন্বয় ঘটিয়েছেন।
তিনি লিখেছিলেন-
মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম, হিন্দু-মুসলমান,

হিন্দু আর মুসলমান, মুসলমান আর হিন্দু,
এই সত্য জেনে গিয়েছে বিশ্ব, জানে ভারত-ভূ।
এই ধরনের বক্তব্য ও সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তিনি বারবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন। তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলতেন, ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো মানবতার সেবা, কিন্তু সমাজে এটি প্রায়ই ভুলভাবে ব্যবহৃত হয়। “ধর্ম ও মানবতা” শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি বলেছেন-
মানুষের কল্যাণই যদি ধর্ম না হয়, তবে সে ধর্ম ধর্ম নয়—সেটা অধর্ম।
তাঁর রচিত গজল, শ্যামাসংগীত ও হামদ-নাতের মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় সংগীতের এক অনন্য সমন্বয় ঘটিয়েছেন, যা আজও অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির উজ্জ্বল উদাহরণ।
নারী মুক্তি ও নারীর অধিকারের পক্ষে তাঁর অবস্থান
নজরুল ছিলেন নারীর অধিকারের অন্যতম শক্তিশালী প্রবক্তা। তিনি মনে করতেন যে সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার থাকা উচিত এবং নারীকে অবদমিত রেখে সমাজ কখনো উন্নত হতে পারে না।
তাঁর কবিতায় নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সমতার ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে। “নারী” কবিতায় তিনি লিখেছেন-
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
তিনি নারীর স্বাধীনতার জন্য জোর দাবি তুলেছিলেন এবং নারীকে শুধু সংসারের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ না রেখে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
“বিদ্রোহী নারী” কবিতায় তিনি নারীর শক্তি ও স্বাধীনতার কথা বলেছেন-
আমি চির বিদ্রোহিনী বীর
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!
এছাড়াও, নজরুল কন্যাসন্তানকে অবহেলা করার প্রবণতার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন এবং নারীশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের পক্ষে কথা বলেছেন। তাঁর অনেক গান ও কবিতায় নারীর প্রতি সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠে এসেছে।
নজরুল ছিলেন শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর। তিনি কৃষক, শ্রমিক, মজুর, দারিদ্র্যপীড়িত সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন এবং তাঁদের অধিকার আদায়ের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন।

তাঁর কবিতা “দুর্দিনের যাত্রী”, “কাণ্ডারী হুঁশিয়ার” ও “সাম্যবাদী” তে তিনি সমাজের বঞ্চিত শ্রেণির দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন।
তিনি লিখেছেন-
ওরে চাষী, জাগরে তোরা!
মাটির বুকের প্রাণের ধন
লুটেরারা লুটে খায়!
ওরে মজুর, কুলি, মাল্লা,
সকল শোষিত, নিপীড়িত, নিঃস্ব জাতি
জেগে ওঠো! লও শক্তি হাতে!
এই কথাগুলো প্রমাণ করে যে তিনি শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য সাহিত্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
নজরুল এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে কোনো জাতিভেদ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, লিঙ্গবৈষম্য কিংবা অর্থনৈতিক শোষণ থাকবে না। তিনি সমাজের সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং একটি মানবিক ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি ঘোষণা করেছেন-
দেখিনু সেদিন রেলে
কুলি বলে এক বাবু বসাতে চায়নি সাথে
কহিলাম আমি, আছে নাকি মোর চামড়া তার চেয়ে খাঁটি?
এই ধরনের সাহিত্যকর্ম তাঁর সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক
কাজী নজরুল ইসলামের সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা কেবল তাঁর সময়ের জন্য নয়, বরং আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তিনি মানবতার কবি, যিনি অন্যায়, শোষণ, সাম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন।
তাঁর সাহিত্য আমাদের শিখিয়েছেন-
সাম্যের জন্য লড়াই করা উচিত
ধর্মকে বিভেদ নয়, ঐক্যের মাধ্যম হিসেবে দেখা উচিত
নারীর অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন
শ্রমিক ও কৃষকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি

তাঁর আদর্শ আজও আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। সমাজকে বদলাতে হলে নজরুলের মতো বিদ্রোহী মনোভাব ধারণ করাই হবে প্রকৃত শ্রদ্ধার প্রকাশ।
কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক ও সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা আজও প্রাসঙ্গিক। তাঁর সাহিত্য, কবিতা ও গান আমাদের স্বাধীনতা, সাম্য, মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়ের জন্য সংগ্রামের শিক্ষা দেয়। তিনি কেবল একজন কবি ছিলেন না, ছিলেন এক সমাজচেতক, যিনি নিজের কলমকে অস্ত্র বানিয়ে শোষিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। নজরুলের ভাবনা আমাদের বর্তমান সমাজেও আলো ছড়ায়। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করলেই আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক, সাম্যভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে পারব।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১:০৮ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ (ইউএসসিআইআরএফ) নামের একটি ফেডারেল সংস্থা। জুলাই মাসে নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তারা। চলতি বছরের মে মাসে ঢাকায় সংস্থাটির সফরের ভিত্তিতে রিপোর্টটি তৈরি করা হয়। তখন তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। পুরো রিপোর্টটি লিখেছেন সীমা হাসান, যিনি ইউএসসিআইআরএফ-এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে এবং আগস্টে সেনাবাহিনীর সমর্থনে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন। যদিও নতুন সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কার প্রস্তাব করেছে, তারপরও দেশে ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এখনো অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ থেকে ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও সরকার পতনের সময় দেশে কার্যকর কোনো প্রশাসন না থাকায় ভয়াবহ সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর একাধিক হামলার খবর পাওয়া যায়, যেগুলো মূলত আওয়ামী লীগের সমর্থক বা সদস্য ভেবে প্রতিশোধমূলকভাবে চালানো হয়।
পুলিশের একটি রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে ইউএসসিআইআরএফ জানায়, ৫ থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে মোট ১,৭৬৯টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১,২৩৪টি রাজনৈতিক, ২০টি সাম্প্রদায়িক ও ১৬১টি ভুয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সংঘটিত হয়। এই সময়ে অনেক মুসলিম শিক্ষার্থী ও নাগরিক সংখ্যালঘু মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় পাহারা দিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।
রিপোর্টে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে, যার সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কমিশন সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ বা ‘বহুত্ববাদ’ শব্দ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটি প্রস্তাবিত শব্দের পরিবর্তে ‘আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা’ শব্দবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আংশিক সমর্থন জানিয়ে ‘বহুত্ববাদ’-এর পরিবর্তে বাংলা বিকল্প ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে।
২০২৪ সালের আগস্টে নারী সংস্কার কমিশন গঠনের পর চলতি বছরের মে মাসে কমিশনটি ৪৩৩টি সুপারিশ দেয়। এর মধ্যে একটি হলো ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব, যা ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইনকে সম্পূরক করবে। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেছে ইসলামপন্থি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তারা কমিশনকে ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দেয় এবং কমিশনের সদস্যদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে। নারীদের উদ্দেশ করে কটূক্তি করার অভিযোগে ৬ নারী হেফাজতের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দেন। পরে সংগঠনটি ক্ষমা চায়। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ফেব্রুয়ারিতে একটি নারী ফুটবল ম্যাচ বাতিল করতে বাধ্য করে এবং নাদিরা ইয়াসমিন নামের এক নারী অধ্যাপককে হুমকির মুখে কলেজ বদল করতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিচালিত এই সংস্থার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে এখনো ব্লাসফেমি সংক্রান্ত ধারা (দণ্ডবিধি ১৯৫এ) বলবৎ রয়েছে, যেখানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০২৩ সালের সাইবার সিকিউরিটি আইন অনুযায়ী, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন ডিজিটাল কনটেন্ট প্রকাশ করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। এসব বিষয় নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউএসসিআইআরএফ।
সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় সহনশীলতার ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। সংবিধান সংস্কারে সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত না হলে, এই প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদে বৈষম্য আরও গভীর করতে পারে। ইউএসসিআইআরএফ-এর মতে, বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা রক্ষায় একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। সংবিধান সংস্কারের এই পর্যায়ে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই দীর্ঘস্থায়ী শান্তির মূল চাবিকাঠি হতে পারে।

শিগগিরই গঠিত হচ্ছে তথ্য কমিশন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১:০৫ অপরাহ্ণ
শিগগিরই গঠিত হচ্ছে তথ্য কমিশন

তথ্য কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। কয়েক দিনের মধ্যে তথ্য কমিশন গঠন-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। শনিবার (২৬ জুলাই) তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ অনুযায়ী একজন প্রধান তথ্য কমিশনার এবং দুজন তথ্য কমিশনার নিয়ে এই কমিশন গঠিত হবে। দুই জন তথ্য কমিশনারের মধ্যে ন্যূনতম এক জন নারী হবেন।

কোথাও কোনো সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই: মির্জা ফখরুল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১:০৩ অপরাহ্ণ
কোথাও কোনো সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই: মির্জা ফখরুল

দেশের কোথাও কোনো সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আগে যে ব্যবসায়ীকে তিন লাখ টাকা চাঁদা দিতে হতো, এখন তাকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। কোথাও কোনো সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের লেখা বই ‌’অর্থনীতি শাসন ও ক্ষমতা: যাপিত জীবনের আলেখ্য’-এর প্রকাশ ও আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সংস্কারে সময় লাগবে জানিয়ে ফখরুল বলেন, রাতারাতি সংস্কার করে ফেলা সম্ভব নয়। তবে সে জন্য গণতান্ত্রিক চর্চা বাদ দিয়ে বসে থাকা যাবে না। কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। এ জন্য কোনো রকম বিলম্ব না করে অতি দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠিয়ে সংস্কার করতে হবে। তিনি বলেন, ট্রাম্পের ট্যারিফ (শুল্ক) সামনে বড় বিপদে ফেলতে পারে। মনে রাখবেন, রাজনৈতিক দল দেশের উন্নয়নে জনস্বার্থে সব সময় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।