খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:১২ অপরাহ্ণ
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ

গণতন্ত্রের অন্যতম মূল ভিত্তি হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা, এবং এই স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান বাহক হলো গণমাধ্যম। একটি সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত সমাজ গঠনের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। গণমাধ্যম কেবলমাত্র তথ্য ও সংবাদ প্রচারের মাধ্যম নয়, বরং এটি জনমতের প্রতিফলন ঘটায়, সরকার ও শাসকগোষ্ঠীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে এবং নাগরিকদের সচেতন করে তোলে। গণতান্ত্রিক সমাজে নাগরিকদের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। তবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যদি হুমকির সম্মুখীন হয়, তাহলে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কেবল তথ্য সরবরাহের মাধ্যম নয়, বরং এটি একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য। যেখানে গণমাধ্যম স্বাধীন, সেখানে জনগণ সঠিক তথ্য পায় এবং ক্ষমতাসীনরা জনতার জবাবদিহিতার আওতায় থাকে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রুদ্ধ হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে, সরকারি কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা বজায় রাখে এবং দুর্নীতি, অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সাহায্য করে। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশেই গণমাধ্যম নানা বিধিনিষেধের সম্মুখীন হচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলতে বোঝায়, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইন মিডিয়া এবং অন্যান্য সংবাদমাধ্যম কোনো প্রকার সরকারি, রাজনৈতিক বা কর্পোরেট চাপের বাইরে থেকে সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচার করতে পারবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল দিকগুলো হলো : সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে তথ্য সংগ্রহ ও প্রচারের অধিকার। কোনো ধরনের সেন্সরশিপ বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে মত প্রকাশের সুযোগ।গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক প্রভাবের অনুপস্থিতি। সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যত বেশি নিশ্চিত করা যায়, তত বেশি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণমাধ্যমকে “চতুর্থ স্তম্ভ” (Fourth Estate) বলা হয়, কারণ এটি নির্বাহী, আইনসভা ও বিচার বিভাগের পর রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করে। গণমাধ্যম সমাজে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা নিম্নে আলোচনা করা হলো : গণমাধ্যম জনগণের কাছে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তথ্য পৌঁছে দেয়, যার মাধ্যমে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। নির্বাচন, নীতিনির্ধারণী প্রসঙ্গ বা সামাজিক আন্দোলনে জনগণকে সচেতন করে তুলতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গণমাধ্যম বিভিন্ন সরকারি নীতির ভালো-মন্দ বিশ্লেষণ করে এবং জনগণের মতামত তুলে ধরে। এটি সরকারের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে সাহায্য করে, যাতে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা যায়। গণমাধ্যম দুর্নীতি উন্মোচন, অবিচার ও অনিয়মের প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাংবাদিকতার কারণে অনেক সময় বড় বড় কেলেঙ্কারি উন্মোচিত হয়। গণতান্ত্রিক সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিন্নমত থাকতেই পারে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকলে এই মতামতগুলো উন্মুক্তভাবে প্রকাশিত হয়, যা সমাজে বহুমাত্রিক চিন্তার বিকাশ ঘটায়। যখন কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর অধিকার লঙ্ঘিত হয় বা রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের শিকার হয়, তখন গণমাধ্যম সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পারে। এটি নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার চ্যালেঞ্জ : গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই এটি নানা ধরনের হুমকির সম্মুখীন। বর্তমান বিশ্বে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিভিন্ন বাধা বিদ্যমান, যা গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগজনক। অনেক দেশে সরকার গণমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বাধা সৃষ্টি করে। কিছু দেশে সরকার-বিরোধী সংবাদ প্রকাশ করলেই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা হয় বা সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা হয়। গণমাধ্যমের অনেক প্রতিষ্ঠান কর্পোরেট বা রাজনৈতিক দলের মালিকানাধীন হওয়ায় সংবাদ পরিবেশনে নিরপেক্ষতা বিঘ্নিত হয়। অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে অনেক সময় সত্য গোপন করা হয় বা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারের কারণে ভুয়া সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকরা হত্যার শিকার হচ্ছেন, কারাবন্দি হচ্ছেন, কিংবা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই হুমকি ও নির্যাতন স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করে। ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। অনেক দেশে ইন্টারনেটের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ বাড়ছে, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। অনেক দেশে সরকার গণমাধ্যমের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কিছু দেশে কঠোর সেন্সরশিপের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়।রাজনৈতিক দল বা সরকারের মদতপুষ্ট মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের পরিবর্তে পক্ষপাতমূলক সংবাদ প্রচার করে, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ব্যাহত করে। অনেক সময় বড় কর্পোরেট সংস্থা গণমাধ্যমকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করে, যার ফলে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকরা হামলা, গ্রেফতার, হত্যা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বড় বাধা। ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া তথ্য বা ‘ফেক নিউজ’ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা প্রকৃত সাংবাদিকতার জন্য হুমকি স্বরূপ।

 গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। নিচে কিছু কার্যকর উপায় আলোচনা করা হলো : একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধানে অবশ্যই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিধান থাকতে হবে, যাতে সাংবাদিকরা ভয় ও প্রতিকূলতার বাইরে থেকে কাজ করতে পারেন। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত আইন প্রণয়ন এবং এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জরুরি। সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে অন্যায়মূলক মামলা বা হয়রানি বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। গণমাধ্যমের উপর রাজনৈতিক বা কর্পোরেট প্রভাব কমানোর জন্য স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠন করা উচিত, যা সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে হবে। সাংবাদিক নির্যাতন বা হত্যার ঘটনাগুলোর দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। গণমাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য যাচাই করে গ্রহণ করতে পারেন এবং ভুয়া সংবাদ থেকে দূরে থাকতে পারেন।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলতে বোঝায়, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইন মিডিয়া এবং অন্যান্য সংবাদমাধ্যম কোনো প্রকার সরকারি, রাজনৈতিক বা কর্পোরেট হস্তক্ষেপ ছাড়াই তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রচার করতে পারবে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো- স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে : সরকার ও প্রশাসনের কর্মকাণ্ড জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত রাখে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে : নাগরিকদের মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। জনগণকে সঠিক তথ্য প্রদান করে : নির্বাচনের সময় বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন রাখে।  সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায় ক: একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন গণমাধ্যম সরকারকে দায়বদ্ধ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গণমাধ্যম যদি সত্য প্রকাশে স্বাধীন না হয়, তবে ক্ষমতার অপব্যবহার বৃদ্ধি পায়, জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হয় এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  একটি গণতান্ত্রিক সমাজে জনগণকে সঠিক তথ্য না দিলে তারা সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। গণমাধ্যম নির্বাচন, আইন, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে জনগণকে আপডেট রাখে। গণমাধ্যম জনগণের মত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে বিতর্ক ও আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করে, যা জনমতের দিকনির্দেশনা দেয়। গণমাধ্যম দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখে। অনেক সময় সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে দুর্নীতির চিত্র উন্মোচিত হয় এবং প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। গণমাধ্যম বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বৈষম্য, দমন-পীড়ন ইত্যাদি বিষয় জনসমক্ষে তুলে ধরে এবং এসবের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সহায়তা করে। গণমাধ্যম নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি, নীতি এবং কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করে। এটি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এবং ভোটারদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে— গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য নিরপেক্ষ আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হয়রানি ও দমন-পীড়ন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একটি স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠন করা উচিত, যা সংবাদমাধ্যমের নীতিমালা নির্ধারণ করবে এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে। একই ব্যক্তি বা সংস্থার একাধিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকানা থাকা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। মালিকানার বৈচিত্র্য নিশ্চিত করা হলে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা নিশ্চিত হবে। গণমাধ্যমের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে তারা সঠিক তথ্য যাচাই করে গ্রহণ করতে পারে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার হতে পারে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। এটি জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে, সরকারের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করে এবং স্বচ্ছতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। তবে বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। সুতরাং, একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ গঠনের জন্য স্বাধীন গণমাধ্যম নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এজন্য সরকার, জনগণ, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকে এবং গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের অপরিহার্য উপাদান। এটি জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে, সরকারের কার্যক্রমের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করে এবং সুশাসনের ভিত্তি গড়ে তোলে। তবে বর্তমান বিশ্বে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। সুতরাং, একটি সুশৃঙ্খল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সরকার, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার নিশ্চিত হয় এবং গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়।

লেখক পরিচিতি  : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪৮ অপরাহ্ণ
সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। গণমাধ্যম এখন আর শুধু তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়, বরং অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক সংকটের জটিল সমীকরণের ভেতরে বন্দী।
অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম বিজ্ঞাপননির্ভর হওয়ায় তাদের স্বাধীনতা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক প্রতিষ্ঠানের আয়ের মূল উৎস। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের বিপরীতে প্রতিবেদন প্রকাশে সাংবাদিকরা প্রায়ই বাধার সম্মুখীন হন। ডিজিটাল যুগে ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্ম বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিয়ে নেওয়ায় সংবাদমাধ্যমগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
রাজনৈতিক চাপও সাংবাদিকতার অন্যতম বড় বাধা। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় সংবাদ নিয়ন্ত্রণে প্রভাব বিস্তার করে, সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা দেয়। মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকরা প্রায়ই হয়রানি, মামলা ও হামলার শিকার হন। এতে সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এছাড়া নৈতিক দ্বন্দ্বও আজ সাংবাদিকতার মূল সমস্যা। ভিউ বা ক্লিক বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় অনেক সময় সত্যের চেয়ে আকর্ষণীয় শিরোনামকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এতে পেশাগত সততা ও জনআস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সত্য ও মানবতার পক্ষে সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তি পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে সাংবাদিকতা আবারও হতে পারে সমাজের আয়না ও রাষ্ট্রের প্রকৃত চতুর্থ স্তম্ভ।
সাংবাদিকতা একটি জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ এবং রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা আর কেবল তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়; এটি আজ অর্থনীতি, রাজনীতি এবং নৈতিকতার জটিল সম্পর্কের ভেতর আটকে পড়া একটি প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা যেখানে গণতন্ত্রের মূল শর্ত, সেখানে অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক চাপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্ব এই স্বাধীনতাকে প্রতিনিয়ত সংকুচিত করে চলেছে।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত। বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল এই শিল্প অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক ও কর্পোরেট চাপ সাংবাদিকদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ফলে সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য—সত্য প্রকাশ—প্রায়ই বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর কাছে বন্দী হয়ে পড়ছে।
সাংবাদিকতার অর্থনীতি ও স্বাধীনতার শর্ত :
একটি সংবাদমাধ্যম পরিচালনা করতে যেমন সাংবাদিকতার আদর্শ প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। সাংবাদিকতার অর্থনীতি মূলত তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে—বিজ্ঞাপন, পাঠক বা দর্শক নির্ভর আয়, এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ।
১. বিজ্ঞাপন নির্ভরতা ও তার প্রভাব : বেশিরভাগ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান আয় আসে বিজ্ঞাপন থেকে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক পত্রিকার বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। ফলে সংবাদপত্রগুলো প্রায়ই বিজ্ঞাপনদাতাদের স্বার্থের বিপরীতে যেতে পারে না।
একটি বড় কোম্পানির অনৈতিক কার্যক্রম বা পরিবেশ দূষণ নিয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন অনেক সময় চাপের মুখে বাতিল হয়ে যায়, কারণ সেই কোম্পানি পত্রিকাটির অন্যতম বিজ্ঞাপনদাতা।
২. ডিজিটাল যুগের অর্থনৈতিক রূপান্তর : অনলাইন সাংবাদিকতার যুগে বিজ্ঞাপন আয় আরও বিভক্ত হয়েছে। ইউটিউব, ফেসবুক, গুগলের মতো টেক জায়ান্টরা এখন বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিজেদের দখলে রেখেছে। ফলে সংবাদমাধ্যমগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যেখানে অ্যালগরিদম নির্ধারণ করে কোন সংবাদ বেশি প্রচার পাবে। এর ফলে গঠনমূলক সাংবাদিকতার চেয়ে ‘ক্লিকবেট’ সংবাদ, উত্তেজক শিরোনাম ও ভিউ নির্ভর কনটেন্ট বাড়ছে।
৩. সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা : অর্থনৈতিক দুরবস্থার ফলে অনেক সংবাদকর্মী ন্যায্য বেতন পান না, কিংবা নিয়মিত বেতন পেতেও সমস্যার সম্মুখীন হন। চাকরির অনিশ্চয়তা, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক, এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার অভাব সাংবাদিকদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। ফলস্বরূপ তারা পেশাগত স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন, এবং কখনও কখনও আত্মরক্ষার তাগিদে আপোষে বাধ্য হন।
রাজনৈতিক চাপ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার শত্রু : বাংলাদেশসহ বহু দেশে রাজনৈতিক প্রভাব সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমের কাজ হলো ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিত করা, কিন্তু রাজনৈতিক দল ও শাসকগোষ্ঠী সেই স্বাধীনতাকে নিজের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
১. সরকারি প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ : সরকার প্রায়ই বিজ্ঞাপন, নিবন্ধন, ফ্রিকোয়েন্সি বা লাইসেন্স ইস্যুর মাধ্যমে গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। যেসব পত্রিকা বা টেলিভিশন সরকারবিরোধী সংবাদ প্রকাশ করে, তাদের ওপর বিভিন্ন প্রশাসনিক বা আর্থিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। কখনও কখনও ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড’ বা ‘ভুয়া তথ্য প্রচার’-এর অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়, যা সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
২. রাজনৈতিক দলীয় বিভাজন : রাজনৈতিক বিভাজন সাংবাদিকতার ভেতরও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক সংবাদমাধ্যম সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের অনুগত হয়ে কাজ করছে। এতে সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতা নষ্ট হচ্ছে, আর পাঠকের আস্থা কমছে। ‘একপক্ষীয় সাংবাদিকতা’ সাধারণ মানুষের চোখে মিডিয়াকে পক্ষপাতদুষ্ট ও অবিশ্বাস্য করে তুলছে।
৩. মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক সহিংসতা : জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকরা প্রায়ই রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি ও হামলার শিকার হন। তাদের ওপর মামলা, লাঞ্ছনা, কিংবা পেশাগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ‘কথা না শোনার’ কারণে সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েন।
নৈতিক দ্বন্দ্ব ও সাংবাদিকতার আত্মার পরীক্ষা : সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়, এটি একধরনের নৈতিক দায়িত্ব। সত্য অনুসন্ধান ও সমাজের কল্যাণের জন্য সাংবাদিকের মননে থাকা চাই সততা, মানবিকতা ও সাহস। কিন্তু বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক যুগে এই নৈতিক মানদণ্ডকে রক্ষা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।
১. সত্য বনাম জনপ্রিয়তা : ডিজিটাল যুগে ক্লিক, ভিউ ও লাইকই হয়ে উঠেছে সংবাদমূল্যের মাপকাঠি। ফলে অনেক সাংবাদিক সত্যের চেয়ে ‘ট্রেন্ডিং’ বিষয়কে প্রাধান্য দেন। সংবাদে অতিরঞ্জন, ভুয়া তথ্য, এমনকি গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে ‘সেন্সেশন’ তৈরি করা এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এটি সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তিকে ক্ষয় করছে।
২. গোপন স্বার্থ ও প্রলোভন : কখনও রাজনৈতিক সুবিধা, কখনও আর্থিক প্রলোভন সাংবাদিকদের নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত করে। কোনো কোনো সাংবাদিক নির্দিষ্ট ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায় জড়িয়ে পড়েন। এর ফলে পেশাদার ন্যায়বোধ দুর্বল হয়, সংবাদপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
৩. ব্যক্তিগত ঝুঁকি ও ভয় : সত্য প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের অনেক সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে হয়। অনেক সাংবাদিক হুমকি, অপহরণ কিংবা হত্যার শিকার হয়েছেন। এই ভয় অনেককে আত্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করে যা নৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও গভীর করে তোলে।
সামাজিক মাধ্যমে নতুন যুগের নতুন চ্যালেঞ্জ : সামাজিক মাধ্যম আজ সংবাদ প্রচারের নতুন প্ল্যাটফর্ম, কিন্তু এটি সাংবাদিকতার নীতি ও পেশাদারিত্বের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জও বটে। যেকোনো ব্যক্তি এখন সংবাদ প্রচার করতে পারে, কিন্তু যাচাই-বাছাই ছাড়া তথ্য ছড়ানো সহজ হয়ে যাওয়ায় মিথ্যা সংবাদ ও বিভ্রান্তি বাড়ছে।
‘সিটিজেন জার্নালিজম’-এর ইতিবাচক দিক যেমন রয়েছে—ঘটনার দ্রুত প্রচার, তেমনি এর অপব্যবহারও ব্যাপক। অনেক ক্ষেত্রেই ফেসবুক বা ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া সংবাদই পরে ভুয়া প্রমাণিত হয়, কিন্তু ততক্ষণে সেটি জনমত প্রভাবিত করে ফেলে। পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য এটি এক কঠিন প্রতিযোগিতা—যেখানে গতি ও জনপ্রিয়তা সত্য ও দায়িত্বের চেয়ে বেশি মূল্য পায়।

নৈতিক সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা : সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবাদিকতার একটি স্পষ্ট নৈতিক কাঠামো থাকা জরুরি। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আচরণবিধি, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কোড অব কন্ডাক্ট—এসব কেবল কাগজে নয়, বাস্তবে প্রয়োগ করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।
সাংবাদিকদের উচিত :  তথ্য যাচাই না করে কিছুই প্রকাশ না করা। ব্যক্তিগত বা দলীয় পক্ষপাত এড়িয়ে নিরপেক্ষ থাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মতামত অন্তর্ভুক্ত করা। সমাজে শান্তি ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করা। একই সঙ্গে সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোরও প্রয়োজন পেশাদার প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ : সাংবাদিকতার টিকে থাকার জন্য দরকার মুক্ত চিন্তা, নিরাপদ পরিবেশ ও অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব। সরকারকে বুঝতে হবে—স্বাধীন সাংবাদিকতা কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কাজ নয়, বরং তা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।
সত্যের পক্ষে কলমই এখন সবচেয়ে বড় শক্তি। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বা সাইবার আইনের মতো বিধান সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে নয়, বরং ভুয়া সংবাদ ও ঘৃণা প্রচার রোধে ব্যবহার করা উচিত। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকে নিজস্ব ‘অভ্যন্তরীণ সেন্সরশিপ’ সংস্কৃতি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।
সাংবাদিকতার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো সমাজে সত্য, ন্যায় ও মানবতার আলো ছড়ানো। কিন্তু এই পথে রয়েছে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্বের পাহাড়। তবুও সাহসী ও নৈতিক সাংবাদিকরাই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন—যারা আপোষহীনভাবে সত্যের পক্ষে দাঁড়ান। আজকের সাংবাদিকতার সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—সে কি টিকে থাকবে স্বাধীন ও সৎভাবে, নাকি অর্থ ও ক্ষমতার দাসত্বে পরিণত হবে? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে সাংবাদিকদের সততা, সমাজের সচেতনতা, এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মনোভাবের ওপর। সত্য প্রকাশের এই কঠিন যাত্রায় সাংবাদিকদের হাতে এখনো সেই কলম রয়েছে—যা বন্দুকের চেয়েও শক্তিশালী। এই শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব।
সাংবাদিকতার অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক দুরবস্থা—এই তিনটি চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে সাংবাদিকতার অস্তিত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—যে জাতির কলম বেঁচে থাকে, তার বিবেক কখনো মরে না। আজও অনেক সাংবাদিক অন্ধকার ভেদ করে সত্যের আলো জ্বালাচ্ছেন। তাদের সংগ্রামই প্রমাণ করে, সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা নয়—এটি এক মহৎ প্রতিশ্রুতি, মানবতার প্রতি অঙ্গীকার।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও লেখক, চাঁদপুর।
সত্যের পক্ষে সেই কলমকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব, কারণ সত্য প্রকাশের শক্তি সব সময়ই বন্দুকের চেয়ে বড়।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।