খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৯ ভাদ্র, ১৪৩২

মানবিক কাজের সাংবাদিকতা ও আমাদের সমাজ

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ৮:৫২ অপরাহ্ণ
মানবিক কাজের সাংবাদিকতা ও আমাদের সমাজ

মানবিক কাজ এবং সাংবাদিকতা মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। সাংবাদিকতা একটি শক্তিশালী মাধ্যম যা মানুষের কষ্ট, দুর্ভোগ এবং অধিকার লঙ্ঘনের কথা তুলে ধরে। এটি মানবিক কাজের প্রভাব বৃদ্ধি করে এবং বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টি করে। মানবিক সাংবাদিকতা শুধু খবর পরিবেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি মানবতার সেবায় একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়ায়। সাংবাদিকতা সমাজের এমন শ্রেণির মানুষের সমস্যাগুলো তুলে ধরে, যাদের কথা সাধারণত শোনা যায় না। এটি ক্ষতিগ্রস্ত, দারিদ্র্যপীড়িত, বা নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মানবিক বিপর্যয়, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বা সঙ্কটের সময় সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করে। এই তথ্য ভবিষ্যতে নীতি প্রণয়ন, সাহায্য কার্যক্রম এবং মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাংবাদিকতা জনগণকে সচেতন করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, দারিদ্র্য, ক্ষুধা, বা শরণার্থী সংকট নিয়ে রিপোর্টিং বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং মানুষকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করে।সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং ডকুমেন্টারি সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে নীতিনির্ধারণে সহায়তা করে।

বিভিন্ন এনজিও, সাহায্য সংস্থা, এবং মানবিক কার্যক্রমে সাংবাদিকতা প্রয়োজনীয় প্রচার নিশ্চিত করে। এটি তহবিল সংগ্রহ এবং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়ক। সংঘাতপূর্ণ এলাকা, যুদ্ধক্ষেত্র, বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সাংবাদিকদের জীবনের ঝুঁকি থাকে। মানবিক প্রতিবেদনে ভুল তথ্য উপস্থাপন বা পক্ষপাতিত্ব বিশ্বাসযোগ্যতাকে হ্রাস করতে পারে। সাংবাদিকতার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও সম্পদের অভাব অনেক সময় মানবিক কভারেজকে বাধাগ্রস্ত করে। কিছু ক্ষেত্রে সরকার বা প্রতিষ্ঠান সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে বাধা দেয়, যা তাদের কার্যক্রমকে সীমিত করে। রোহিঙ্গা সংকট ও সাংবাদিকতার ভূমিকা-২০১৭ সালে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত নির্যাতন ও গণহত্যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেয়। আন্তর্জাতিক মিডিয়া যেমন বিবিসি, সিএনএন, এবং আল-জাজিরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশা তুলে ধরেছিল। স্থানীয় সাংবাদিকরাও কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিতি এবং চাহিদা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেন। এই প্রতিবেদনগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়েছিল এবং ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়ক হয়েছিল।সাংবাদিকতা প্রমাণ হিসেবে কাজ করেছে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা পরিচালনার ভিত্তি তৈরি করেছে।

সংঘাতপূর্ণ এলাকায় রিপোর্ট সংগ্রহের সময় সাংবাদিকরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। যেমন-সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং সাংবাদিকতার ভূমিকা : ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই সংঘাতে লক্ষাধিক মানুষ নিহত এবং মিলিয়ন মানুষ শরণার্থী হয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং বেসামরিক জনগণের দুর্দশা তুলে ধরেছে। বিবিসি, আল-জাজিরা, এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো আন্তর্জাতিক মিডিয়া সিরিয়ার শরণার্থী সংকট নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। ইউএন এবং এনজিও সংস্থাগুলোর জন্য এই প্রতিবেদনগুলো সাহায্যের আবেদন এবং ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়ক হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য নথিভুক্ত করতে সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যুদ্ধক্ষেত্রের বিপজ্জনক পরিবেশে সাংবাদিকদের কাজ করতে হয়েছে। অনেক সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন বা আহত হয়েছেন। সেন্সরশিপ এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

ডিজিটাল প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থান সাংবাদিকতাকে আরও সহজ ও কার্যকর করে তুলেছে। ড্রোন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, এবং ডেটা জার্নালিজম মানবিক কাজকে উন্নত করছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের চেয়ে ভালোভাবে স্থানীয় পরিস্থিতি তুলে ধরতে সক্ষম। তাদের গুরুত্ব ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ সাংবাদিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। মানবিক সাংবাদিকতা আরও কার্যকর করতে এনজিও, সরকার, এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। মানবিক সাংবাদিকতা মানুষের দুর্দশার কথা তুলে ধরে এবং মানবাধিকার রক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। এটি শুধু সমস্যার চিত্রায়ন নয়, বরং সমস্যার সমাধানে সমাজ ও সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করে। সাংবাদিকতা মানুষের দুঃখ-দুর্দশা এবং অবহেলার কথা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেয়। একই সঙ্গে এটি সচেতনতা বৃদ্ধি, তহবিল সংগ্রহ এবং মানবিক সাহায্য কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে সহায়ক হয়।

মানবিক সাংবাদিকতার প্রসার এবং তার গভীরতা অনেক। সাংবাদিকরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করেন এবং এটি জাতিসংঘ বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে উপস্থাপন করেন। উদাহরণস্বরূপ, সিরিয়া, ইয়েমেন, এবং আফগানিস্তানে সংঘাতের সময় মানবিক সাংবাদিকতা বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরি করেছে।উদাহরণ: ২০১০ সালের হাইতির ভূমিকম্পের সময় সাংবাদিকতা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চাহিদা এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্রুত তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে মানুষকে প্রস্তুত করতে এবং পরবর্তী সময়ে পুনর্বাসন কার্যক্রমে সাহায্য করে। বিশ্বজুড়ে শরণার্থী সংকট—যেমন রোহিঙ্গা শরণার্থী, সিরিয়ার উদ্বাস্তু এবং আফগান শরণার্থীদের দুর্দশা—সাংবাদিকতা মানুষকে সচেতন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাকে শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সাংবাদিকতা দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা তুলে ধরে। দারিদ্র্যের কারণে শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া, বেকারত্ব, এবং স্বাস্থ্যসেবার অভাব নিয়ে রিপোর্ট জনগণের সচেতনতা বাড়ায়। যুদ্ধ বা সংঘাত শুধু রাজনৈতিক বা সামরিক সমস্যা নয়, এটি একটি মানবিক বিপর্যয়। উদাহরণ: ইরাক এবং আফগানিস্তানে যুদ্ধের সময় সাংবাদিকতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ তুলে ধরা হয়েছিল।

সাংবাদিকতার নীতিগত দিক : মানবিক সাংবাদিকতায় নিরপেক্ষতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন মানবিক কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের গোপনীয়তা রক্ষা করা মানবিক সাংবাদিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং পরিবেশন করা সাংবাদিকতার মূল দায়িত্ব। অতিরঞ্জিত তথ্য বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে পারে। মানবিক সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য হলো সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। এজন্য সাংবাদিকদের একটি নৈতিক কাঠামোর মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। যেমন-ইয়েমেনের মানবিক সংকট-২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনের সংঘাতের ফলে লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাদ্য সংকট, অপুষ্টি এবং চিকিৎসার অভাবে ইয়েমেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর (বিবিসি, সিএনএন) প্রতিবেদন ইয়েমেনের ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরেছিল। ইয়েমেনের শিশুদের অপুষ্টি এবং মৃত্যুহারের ভয়াবহতা বিশ্বের মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।
৩. এই প্রতিবেদনগুলো সাহায্য সংস্থাগুলোর কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করেছে। এতে তুলে ধরা হয়-যুদ্ধক্ষেত্রে রিপোর্টিংয়ের ঝুঁকি। তথ্য সংগ্রহে স্থানীয় সরকার ও গোষ্ঠীর বাধা।

এছাড়াও বাংলাদেশে নদীভাঙন ও স্থানচ্যুতি-বাংলাদেশে নদীভাঙন প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষকে বাস্তুহীন করে তুলছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জীবিকার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কষ্টের চিত্র তুলে ধরেছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। সরকারের পুনর্বাসন কার্যক্রমকে গতিশীল করতে মিডিয়া রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এতে চ্যালেঞ্জ ছিলো দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের অভাব। বিষয়টিকে স্থায়ীভাবে আলোচনায় রাখা কঠিন।

মানবিক সাংবাদিকতার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা : যুদ্ধ বা সংঘাতপূর্ণ এলাকায় কাজ করার সময় সাহস এবং কৌশল প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় সহানুভূতি এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে আচরণ করতে হয়। ড্রোন এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দূরবর্তী অঞ্চলে তথ্য সংগ্রহ করা যায়। গভীর গবেষণার মাধ্যমে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা মানবিক সাংবাদিকতার একটি অপরিহার্য অংশ।

মানবিক সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ করণীয় : ডেটা জার্নালিজম, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ভিআর প্রযুক্তি সাংবাদিকতাকে আরও কার্যকর করে তুলবে। মানবিক সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ সাংবাদিকদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। স্থানীয় সাংবাদিকরা স্থানীয় পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারেন। তাদের গুরুত্ব আরও বাড়াতে হবে। সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন।

মানবিক কাজে সাংবাদিকতা শুধুমাত্র তথ্য পরিবেশনের একটি মাধ্যম নয়, এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব। যুদ্ধ, সংঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং সামাজিক বৈষম্যের মতো সমস্যাগুলোতে সাংবাদিকতা সচেতনতা তৈরি করে এবং সমাধানের পথ দেখায়। তবে এই কাজ ঝুঁকিপূর্ণ এবং জটিল। সঠিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে মানবিক সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল করা সম্ভব। বিশ্বকে আরও মানবিক এবং সহানুভূতিশীল করে তুলতে সাংবাদিকতার ভূমিকা অমূল্য। এটি কেবল সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে না, বরং বিশ্ববাসীর মধ্যে সংহতির বোধও জাগ্রত করে। মানবিক কাজে সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা নয়, এটি একটি মানবিক দায়িত্ব। এটি অবহেলিত মানুষের কণ্ঠস্বর তুলে ধরে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। রোহিঙ্গা সংকট, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, বা অন্যান্য মানবিক বিপর্যয়—সব ক্ষেত্রেই সাংবাদিকতা মানবিক সেবার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তবে সাংবাদিকতায় নিরাপত্তা, নিরপেক্ষতা এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মানবিক কাজের প্রতি দায়বদ্ধ সাংবাদিকতা বিশ্বকে আরও সহানুভূতিশীল এবং ন্যায়পরায়ণ সমাজ গঠনে সহায়ক হবে।

লেখক পরিচিতি : বিএসসি, এলএলবি, এমসিএস, গনমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ২০২১ (পিআইবি)।

জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২৭ অপরাহ্ণ
জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

জয়ে এশিয়া কাপ শুরু করল বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে হংকংকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। হংকংয়ের ১৪৩ রানের জবাবে ১৭ ওভার ৪ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
রানতাড়ায় নেমে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২৪ রান। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে পারভেজ হোসেন ইমন ১৪ বল ১৯ রান করে ফিরে গেলে জুটি ভাঙে। ৫.৪ ওভারে ৪৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তানজিদ তামিম ফেরেন ১৮ বলে ১৪ রান করে।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে লিটন ও হৃদয় মিলে ৭০ বলে ৯৫ রান যোগ করেন। জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে লিটন বোল্ড হয়ে ফিরে যান। ৬ চার ও এক ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৯ রান করেন। পরে জাকের আলি অনিককে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন হৃদয়। ১ চারে ৩৬ বলে ৩৫ রান করেন হৃদয়। রানের খাতা খোলার সুযোগ পাননি জাকের।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান সংগ্রহ করেছে হংকং। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংস খেলেছেন নিজাকাত খান। টাইগারদের পক্ষে সবচেয়ে সফল তানজিম হাসান সাকিব ২১ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেছেন। এ ম্যাচে জয় তুলে নিতে ওভারপ্রতি ৭.২০ রান করতে হবে টাইগারদের।
এদিন টস জিতে ফিল্ডিং করতে নেমে শুরু থেকে হংকংকে চাপে রেখেছিল টাইগার বোলাররা। দলের খাতায় ৩০ রান যোগ করতে ২ উইকেট হারায় তারা। বাংলাদেশকে প্রথম উইকেটটি এনে দেন তাসকিন আহমেদ। ৫ বলে ৪ রান করে টাইগার পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে কট বিহাইন্ড হন আনশুমান রাথ। আম্পায়ার যদিও শুরুতে সাড়া দেননি, রিভিউ নিয়ে উইকেটটি আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। এরপর দারুণ এক ডেলিভারিতে ১২ বলে ১৪ রান করা বাবর হায়াতকে বোল্ড করেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে হংকং। জিশান আলী ও নিজাকাত খানের ৪১ রানের জুটি শেষমেশ ভাঙেন তানজিম সাকিব। তার বাউন্সার জায়গা নিয়ে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে তুলে দেন ওপেনার জিশান। ৩৪ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রানে থামে তার ইনিংস। চতুর্থ উইকেটে নিজাকাত ও ইয়াসিম মুর্তজা হতাশায় ভোগান টাইগার বোলারদের।
অনেক চেষ্টা করেও উইকেটের দেখা মিলছিল না। শেষমেশ ১৮তম ওভারে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে ভাঙে হংকংয়ের চতুর্থ জুটি। ১৯ বলে ২ ছক্কা ও ২ চারের মারে ২৮ রান করে রান আউট হন মুর্তজা। ততক্ষণে তারা দলের সংগ্রহ শতরান পার করে দেন। অন্যদিকে ৪০ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ রান করে ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে রিশাদ হোসেনের শিকার হন নিজাকাত। পরের বলেই ক্রিজে নেমে টাইগার রিস্ট স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হন কিঞ্চিৎ শাহ।
শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রানে থামে হংকংয়ের ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন, তানজিম সাকিব ও রিশাদ।

স্থূলতা তরুণদের কতটা ক্ষতি করছে?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২০ অপরাহ্ণ
স্থূলতা তরুণদের কতটা ক্ষতি করছে?

বর্তমান সময়ের জীবনযাত্রা বিগত এক দশকের থেকে অনেকটাই আলাদা। এখন সবাই নিজের কাজ নিয়ে দারুণ ব্যস্ত। আর এই ব্যস্ততার প্রভাব দেখা যায় আমাদের স্বাস্থ্যেও বিশেষ করে তরুণদের মাঝে। প্রসেসড খাবার, ডিজিটাল জীবনযাপন ও শারীরিক সক্রিয়তার ঘাটতি মিলিয়ে তরুণদের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে স্থূলতা। আর এই স্থূলতা কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য বা ওজনের বিষয় নয়, বরং ডেকে আনছে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি।
হিন্দুস্তান টাইমস নয়াদিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. পিয়ুষ রঞ্জন জানান, স্থূল কিশোররা ভবিষ্যতে মারাত্মক লিভার রোগের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তার মতে, ভারতে কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার রোগের হার প্রায় ৩৮ শতাংশ। এদের অনেকেই পরবর্তীতে সিরোসিস কিংবা লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে।
স্থূলতার ঝুঁকি: ডা. রঞ্জনের মতে, চিকিৎসাবিহীন স্থূলতা ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে—কোলন, অগ্ন্যাশয়, খাদ্যনালী, স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার। তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিক ওজনের তুলনায় স্থূল মানুষের লিভার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। বিভিন্ন গবেষণায় ঝুঁকির মাত্রা ভিন্ন হলেও, স্থূলতা ও লিভার জটিলতার সম্পর্ক স্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
প্রতিরোধের উপায়: তরুণ প্রজন্মকে এই ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে ডা. রঞ্জন কয়েকটি প্রতিরোধমূলক পরামর্শ দিয়েছেন—
> সুস্থ জীবনধারা গড়ে তোলা।
> তেল–চর্বিযুক্ত ও উচ্চ-ক্যালরির খাবার এড়িয়ে চলা।
> অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত কার্বোহাইড্রেট কম খাওয়া।
> নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এবং স্থূলতার ঝুঁকি কমাবে।
তরুণদের মধ্যে স্থূলতার হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, যা শুধু আজকের নয়, ভবিষ্যতেরও ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। ডা. পিয়ুষ রঞ্জনের পরামর্শ স্পষ্ট সুস্থ জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এখনই সচেতন হলে কেবল ডায়াবেটিস, ক্যানসার বা লিভারের রোগই নয়, অসংখ্য জটিলতা থেকে নিজেদের বাঁচানো সম্ভব।

ডিজিটাল প্রতারণায় কয়েক কোটি টাকা খোয়ালেন ভারতীয় নারী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:১১ অপরাহ্ণ
ডিজিটাল প্রতারণায় কয়েক কোটি টাকা খোয়ালেন ভারতীয় নারী

অঞ্জলির (ছদ্মনাম) এই দুঃস্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল একটা ফোন কলের মাধ্যমে। যার জন্য শেষপর্যন্ত তাকে পাঁচ কোটি পঁচাশি লাখ টাকা খোয়াতে হয়। ওই ফোন কলের সময় অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজেকে একটা কুরিয়ার সংস্থার কর্মচারী বলে পরিচয় দিয়ে দাবি করেছিলেন, মুম্বাই কাস্টমস বেইজিংয়ে পাঠানোর সময় অঞ্জলির একটা পার্সেল বাজেয়াপ্ত করেছে। ওই পার্সেলে মাদক পাওয়া গেছে।
গুরুগ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলি বাস্তবে ডিজিটাল অ্যারেস্ট নামে সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। এতে অভিযুক্তরা ভিডিও কল করে নিজেদের ভারতের আর্থিক তদারকি প্রতিষ্ঠান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির কর্মকর্তা বলে দাবি ফাঁদে ফেলে।
এর জন্য প্রতারকরা সাধারণত ভুক্তভুগীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তুলে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার বা পরিবারের বাকি সদস্যদের ক্ষতি করার হুমকি দেয়। এভাবে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অঞ্জলিকে টানা পাঁচ দিন ধরে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে রাখা হয়েছিল। স্কাইপ কলের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি রেখে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল; যাতে তিনি টাকা ট্রান্সফার করতে বাধ্য হন।
অঞ্জলির কথায়, এরপর আমার মাথা কাজ করা বন্ধ দেয়। অসাড় হয়ে গিয়েছিলাম। যতক্ষণে ওই ফোনকল বন্ধ হয়, ততদিনে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন অঞ্জলি, নিজের সমস্ত সম্পত্তিও খুইয়েছেন।