খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

রাষ্ট্র রূপান্তরের ভূমিকায় সাংবাদিকতা

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫, ৬:১৫ অপরাহ্ণ
রাষ্ট্র রূপান্তরের ভূমিকায় সাংবাদিকতা

রাষ্ট্র রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় সাংবাদিকতা একটি অপরিহার্য এবং প্রভাবশালী মাধ্যম। এটি সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে এবং তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের কাঠামো ও নীতির পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাংবাদিকতা শুধুমাত্র তথ্য সরবরাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি জনমত গঠন, নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং গণতান্ত্রিক চর্চাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রাষ্ট্রের রূপান্তর প্রক্রিয়ায় জনমত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকতা তথ্য ও বিশ্লেষণ উপস্থাপনের মাধ্যমে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত প্রভাবিত করে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসা সমস্যাগুলি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি সমাধানের পথও নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন বা সামাজিক বৈষম্যের মতো বিষয়গুলিকে সামনে তুলে ধরে সাংবাদিকতা নাগরিকদের সচেতন করে এবং তাদের মতামত গঠন করে। সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। এটি সরকারের কর্মকাণ্ড ও নীতির ওপর নজরদারি করে এবং সেগুলির স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। দুর্নীতির মতো অপকর্ম উন্মোচনের মাধ্যমে সাংবাদিকতা সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনা সাংবাদিকতার মাধ্যমে উন্মোচিত হওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে। সাংবাদিকতা রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এটি নীতিনির্ধারকদের কাছে জনগণের দাবিদাওয়া পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি সম্পর্কে জনগণকে অবগত রাখে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নয়ন প্রকল্পগুলির তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরলে তারা সেগুলিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারে। রাষ্ট্র রূপান্তরের ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতা একটি অপরিহার্য উপাদান। সাংবাদিকতা সমাজে বিদ্যমান সমস্যাগুলি তুলে ধরে এবং জনগণকে সচেতন করে। এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী অধিকার, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মতো বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনে সহায়তা করে।

গণতন্ত্রের চর্চা সাংবাদিকতার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এটি মুক্ত মত প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে এবং জনগণকে তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সময় সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি জনগণের সামনে প্রার্থীদের যোগ্যতা ও নীতিগুলি তুলে ধরে, যা জনগণকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। সংকটকালীন সময়ে সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের নীতিগত পরিবর্তনে ত্বরান্বিত ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, অর্থনৈতিক সংকট বা রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়, সাংবাদিকতা তথ্য সরবরাহ এবং সমস্যার প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে। উদাহরণস্বরূপ, COVID-19 মহামারির সময় সাংবাদিকতা সঠিক তথ্য সরবরাহ করে এবং সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে জনগণকে অবগত রাখে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ করার মাধ্যমে সাংবাদিকতা রাষ্ট্রকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সাহায্য করে। এটি নিপীড়িত জনগণের পক্ষে কথা বলে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। যেমন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সাংবাদিকতার প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক মহলে সচেতনতা সৃষ্টি করে এবং সমাধানের প্রচেষ্টা জোরদার করে। বৈশ্বিক পরিসরে সাংবাদিকতা রাষ্ট্র রূপান্তরের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি তুলে ধরে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করে। ডিজিটাল যুগে সাংবাদিকতা রাষ্ট্র রূপান্তরে আরও কার্যকর হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অনলাইন সংবাদমাধ্যম তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ ও গতিশীল করেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পরিবর্তন ও উদ্যোগ সহজে পৌঁছে যাচ্ছে।

সাংবাদিকতার ভূমিকাকে কার্যকর করার পথে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন: অনেক দেশে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। তাদের ওপর সরকারের বা কর্পোরেট সংস্থার চাপ থাকে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ভুয়া খবর ও তথ্য বিকৃতির সমস্যা বেড়েছে, যা রাষ্ট্র রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।অনেক সাংবাদিক তাদের কাজ করতে গিয়ে জীবনঝুঁকিতে পড়েন। রাষ্ট্র রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় সাংবাদিকতার ভূমিকা আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি শুধুমাত্র তথ্য প্রদান বা সমস্যার দিক নির্দেশনায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং নৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কার্যকর শক্তি হিসেবে কাজ করে।

সাংবাদিকতা রাজনৈতিক সংস্কারের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রাজনৈতিক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির তথ্য উন্মোচন করে। পাশাপাশি সাংবাদিকতা জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায়, যাতে তারা সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১১ সালে আরব বসন্তে সাংবাদিকতার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা ও দাবি-দাওয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা এক কার্যকর মাধ্যম। অনেক সময় রাষ্ট্রের মূলধারার কাঠামোর বাইরে থাকা গোষ্ঠীগুলোর সমস্যা উপেক্ষিত হয়। সাংবাদিকতা এই শোষিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলে এবং তাদের দাবিকে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন বা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমির অধিকারের লড়াইয়ে সাংবাদিকতার ভূমিকা অপরিসীম। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক রূপান্তরেও সাংবাদিকতা বিশাল ভূমিকা রাখে। এটি ব্যবসা, শিল্প এবং অর্থনৈতিক নীতির সঠিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে। এটি অর্থনৈতিক দুর্নীতি উন্মোচন করে এবং নীতিগত সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর সাংবাদিকতা বৈশ্বিক শ্রম অধিকার এবং স্থানীয় শিল্পখাতের সংস্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শিক্ষাক্ষেত্রের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে এবং সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় আলোচনার পথ তৈরি করে। সাংবাদিকতা উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য জনমত তৈরি করতে সাহায্য করে। জলবায়ু পরিবর্তন রাষ্ট্র রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সাংবাদিকতা এই বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে এবং নীতিনির্ধারকদের পরিবেশবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলোর সমস্যাগুলি তুলে ধরে এবং পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করে। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন রাষ্ট্রের রূপান্তরের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সাংবাদিকতা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য আরও দ্রুত এবং সঠিকভাবে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে ডেটা সাংবাদিকতা এবং অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিভাজনের অবসান ঘটিয়ে সংলাপ এবং বোঝাপড়ার পথ তৈরি করে। যুদ্ধ বা সশস্ত্র সংঘাতের সময় সাংবাদিকতা প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরে, যা সমাধানের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। উদাহরণস্বরূপ, রুয়ান্ডার গণহত্যার সময় সাংবাদিকতা বিশ্ববাসীকে সঠিক তথ্য দিতে পারলে আরও দ্রুত হস্তক্ষেপ সম্ভব হতো। সাংবাদিকতা সমাজের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনেও ভূমিকা পালন করে। এটি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে উদযাপন এবং প্রচার করে। এছাড়া সমাজের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ এবং সহিষ্ণুতার ধারণা জাগিয়ে তোলে।

সাংবাদিকতা যেমন রাষ্ট্র রূপান্তরে অবদান রাখে, তেমনি এটি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। রাজনৈতিক চাপ : অনেক সময় সাংবাদিকতা রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ে, যা তাদের স্বাধীনতা সীমিত করে।প্রতিযোগিতা ও বাজার কেন্দ্রিকতা: বর্তমান বিশ্বে বাণিজ্যিক লাভের জন্য কিছু সংবাদমাধ্যম সত্যতার বদলে দর্শক টানার জন্য বিভ্রান্তিকর খবর পরিবেশন করে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা: অনেক দেশে সাংবাদিকরা কাজের জন্য হুমকি, নির্যাতন এবং হত্যার শিকার হন।

ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্রমবিকাশ সাংবাদিকতার নতুন পথ উন্মুক্ত করছে। বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন তৈরির জন্য ডেটার ব্যবহার বাড়ছে। তথ্য দ্রুত ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সংবাদ সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপনার ক্ষেত্রে এআই-এর ব্যবহার সাংবাদিকতাকে আরও কার্যকর করে তুলেছে।

রাষ্ট্র রূপান্তরের ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা একটি অপরিহার্য মাধ্যম। এটি কেবলমাত্র তথ্য সরবরাহকারী নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তনের জন্য শক্তিশালী হাতিয়ার। সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে সাংবাদিকতা রাষ্ট্রকে আরও জবাবদিহিমূলক, স্বচ্ছ এবং মানবিক করে তুলতে পারে। তবে এর জন্য সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং নৈতিক দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিকতার এই ভূমিকা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রূপান্তরের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সক্ষম। রাষ্ট্র রূপান্তরের ভূমিকায় সাংবাদিকতার অবদান অস্বীকার করা যায় না। এটি শুধুমাত্র তথ্যের যোগানদাতা নয়, বরং একটি সক্রিয় পরিবর্তন সৃষ্টিকারী মাধ্যম। তবে সাংবাদিকতা তার ভূমিকা সফলভাবে পালন করতে পারবে তখনই, যখন এটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং নৈতিক মানদণ্ড অনুসরণ করবে। সাংবাদিকতার উন্নয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সার্বিক অগ্রগতি ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর শক্তিশালীকরণ সম্ভব।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় মাস্টার্স (ব্যাচ ২০২১), পিআইবি।

সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪৮ অপরাহ্ণ
সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। গণমাধ্যম এখন আর শুধু তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়, বরং অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক সংকটের জটিল সমীকরণের ভেতরে বন্দী।
অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম বিজ্ঞাপননির্ভর হওয়ায় তাদের স্বাধীনতা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক প্রতিষ্ঠানের আয়ের মূল উৎস। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের বিপরীতে প্রতিবেদন প্রকাশে সাংবাদিকরা প্রায়ই বাধার সম্মুখীন হন। ডিজিটাল যুগে ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্ম বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিয়ে নেওয়ায় সংবাদমাধ্যমগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
রাজনৈতিক চাপও সাংবাদিকতার অন্যতম বড় বাধা। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় সংবাদ নিয়ন্ত্রণে প্রভাব বিস্তার করে, সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা দেয়। মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকরা প্রায়ই হয়রানি, মামলা ও হামলার শিকার হন। এতে সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এছাড়া নৈতিক দ্বন্দ্বও আজ সাংবাদিকতার মূল সমস্যা। ভিউ বা ক্লিক বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় অনেক সময় সত্যের চেয়ে আকর্ষণীয় শিরোনামকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এতে পেশাগত সততা ও জনআস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সত্য ও মানবতার পক্ষে সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তি পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে সাংবাদিকতা আবারও হতে পারে সমাজের আয়না ও রাষ্ট্রের প্রকৃত চতুর্থ স্তম্ভ।
সাংবাদিকতা একটি জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ এবং রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা আর কেবল তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়; এটি আজ অর্থনীতি, রাজনীতি এবং নৈতিকতার জটিল সম্পর্কের ভেতর আটকে পড়া একটি প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা যেখানে গণতন্ত্রের মূল শর্ত, সেখানে অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক চাপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্ব এই স্বাধীনতাকে প্রতিনিয়ত সংকুচিত করে চলেছে।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত। বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল এই শিল্প অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক ও কর্পোরেট চাপ সাংবাদিকদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ফলে সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য—সত্য প্রকাশ—প্রায়ই বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর কাছে বন্দী হয়ে পড়ছে।
সাংবাদিকতার অর্থনীতি ও স্বাধীনতার শর্ত :
একটি সংবাদমাধ্যম পরিচালনা করতে যেমন সাংবাদিকতার আদর্শ প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। সাংবাদিকতার অর্থনীতি মূলত তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে—বিজ্ঞাপন, পাঠক বা দর্শক নির্ভর আয়, এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ।
১. বিজ্ঞাপন নির্ভরতা ও তার প্রভাব : বেশিরভাগ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান আয় আসে বিজ্ঞাপন থেকে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক পত্রিকার বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। ফলে সংবাদপত্রগুলো প্রায়ই বিজ্ঞাপনদাতাদের স্বার্থের বিপরীতে যেতে পারে না।
একটি বড় কোম্পানির অনৈতিক কার্যক্রম বা পরিবেশ দূষণ নিয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন অনেক সময় চাপের মুখে বাতিল হয়ে যায়, কারণ সেই কোম্পানি পত্রিকাটির অন্যতম বিজ্ঞাপনদাতা।
২. ডিজিটাল যুগের অর্থনৈতিক রূপান্তর : অনলাইন সাংবাদিকতার যুগে বিজ্ঞাপন আয় আরও বিভক্ত হয়েছে। ইউটিউব, ফেসবুক, গুগলের মতো টেক জায়ান্টরা এখন বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিজেদের দখলে রেখেছে। ফলে সংবাদমাধ্যমগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যেখানে অ্যালগরিদম নির্ধারণ করে কোন সংবাদ বেশি প্রচার পাবে। এর ফলে গঠনমূলক সাংবাদিকতার চেয়ে ‘ক্লিকবেট’ সংবাদ, উত্তেজক শিরোনাম ও ভিউ নির্ভর কনটেন্ট বাড়ছে।
৩. সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা : অর্থনৈতিক দুরবস্থার ফলে অনেক সংবাদকর্মী ন্যায্য বেতন পান না, কিংবা নিয়মিত বেতন পেতেও সমস্যার সম্মুখীন হন। চাকরির অনিশ্চয়তা, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক, এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার অভাব সাংবাদিকদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। ফলস্বরূপ তারা পেশাগত স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন, এবং কখনও কখনও আত্মরক্ষার তাগিদে আপোষে বাধ্য হন।
রাজনৈতিক চাপ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার শত্রু : বাংলাদেশসহ বহু দেশে রাজনৈতিক প্রভাব সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমের কাজ হলো ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিত করা, কিন্তু রাজনৈতিক দল ও শাসকগোষ্ঠী সেই স্বাধীনতাকে নিজের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
১. সরকারি প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ : সরকার প্রায়ই বিজ্ঞাপন, নিবন্ধন, ফ্রিকোয়েন্সি বা লাইসেন্স ইস্যুর মাধ্যমে গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। যেসব পত্রিকা বা টেলিভিশন সরকারবিরোধী সংবাদ প্রকাশ করে, তাদের ওপর বিভিন্ন প্রশাসনিক বা আর্থিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। কখনও কখনও ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড’ বা ‘ভুয়া তথ্য প্রচার’-এর অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়, যা সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
২. রাজনৈতিক দলীয় বিভাজন : রাজনৈতিক বিভাজন সাংবাদিকতার ভেতরও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক সংবাদমাধ্যম সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের অনুগত হয়ে কাজ করছে। এতে সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতা নষ্ট হচ্ছে, আর পাঠকের আস্থা কমছে। ‘একপক্ষীয় সাংবাদিকতা’ সাধারণ মানুষের চোখে মিডিয়াকে পক্ষপাতদুষ্ট ও অবিশ্বাস্য করে তুলছে।
৩. মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক সহিংসতা : জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকরা প্রায়ই রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি ও হামলার শিকার হন। তাদের ওপর মামলা, লাঞ্ছনা, কিংবা পেশাগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ‘কথা না শোনার’ কারণে সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েন।
নৈতিক দ্বন্দ্ব ও সাংবাদিকতার আত্মার পরীক্ষা : সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়, এটি একধরনের নৈতিক দায়িত্ব। সত্য অনুসন্ধান ও সমাজের কল্যাণের জন্য সাংবাদিকের মননে থাকা চাই সততা, মানবিকতা ও সাহস। কিন্তু বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক যুগে এই নৈতিক মানদণ্ডকে রক্ষা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।
১. সত্য বনাম জনপ্রিয়তা : ডিজিটাল যুগে ক্লিক, ভিউ ও লাইকই হয়ে উঠেছে সংবাদমূল্যের মাপকাঠি। ফলে অনেক সাংবাদিক সত্যের চেয়ে ‘ট্রেন্ডিং’ বিষয়কে প্রাধান্য দেন। সংবাদে অতিরঞ্জন, ভুয়া তথ্য, এমনকি গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে ‘সেন্সেশন’ তৈরি করা এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এটি সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তিকে ক্ষয় করছে।
২. গোপন স্বার্থ ও প্রলোভন : কখনও রাজনৈতিক সুবিধা, কখনও আর্থিক প্রলোভন সাংবাদিকদের নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত করে। কোনো কোনো সাংবাদিক নির্দিষ্ট ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায় জড়িয়ে পড়েন। এর ফলে পেশাদার ন্যায়বোধ দুর্বল হয়, সংবাদপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
৩. ব্যক্তিগত ঝুঁকি ও ভয় : সত্য প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের অনেক সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে হয়। অনেক সাংবাদিক হুমকি, অপহরণ কিংবা হত্যার শিকার হয়েছেন। এই ভয় অনেককে আত্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করে যা নৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও গভীর করে তোলে।
সামাজিক মাধ্যমে নতুন যুগের নতুন চ্যালেঞ্জ : সামাজিক মাধ্যম আজ সংবাদ প্রচারের নতুন প্ল্যাটফর্ম, কিন্তু এটি সাংবাদিকতার নীতি ও পেশাদারিত্বের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জও বটে। যেকোনো ব্যক্তি এখন সংবাদ প্রচার করতে পারে, কিন্তু যাচাই-বাছাই ছাড়া তথ্য ছড়ানো সহজ হয়ে যাওয়ায় মিথ্যা সংবাদ ও বিভ্রান্তি বাড়ছে।
‘সিটিজেন জার্নালিজম’-এর ইতিবাচক দিক যেমন রয়েছে—ঘটনার দ্রুত প্রচার, তেমনি এর অপব্যবহারও ব্যাপক। অনেক ক্ষেত্রেই ফেসবুক বা ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া সংবাদই পরে ভুয়া প্রমাণিত হয়, কিন্তু ততক্ষণে সেটি জনমত প্রভাবিত করে ফেলে। পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য এটি এক কঠিন প্রতিযোগিতা—যেখানে গতি ও জনপ্রিয়তা সত্য ও দায়িত্বের চেয়ে বেশি মূল্য পায়।

নৈতিক সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা : সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবাদিকতার একটি স্পষ্ট নৈতিক কাঠামো থাকা জরুরি। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আচরণবিধি, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কোড অব কন্ডাক্ট—এসব কেবল কাগজে নয়, বাস্তবে প্রয়োগ করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।
সাংবাদিকদের উচিত :  তথ্য যাচাই না করে কিছুই প্রকাশ না করা। ব্যক্তিগত বা দলীয় পক্ষপাত এড়িয়ে নিরপেক্ষ থাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মতামত অন্তর্ভুক্ত করা। সমাজে শান্তি ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করা। একই সঙ্গে সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোরও প্রয়োজন পেশাদার প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ : সাংবাদিকতার টিকে থাকার জন্য দরকার মুক্ত চিন্তা, নিরাপদ পরিবেশ ও অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব। সরকারকে বুঝতে হবে—স্বাধীন সাংবাদিকতা কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কাজ নয়, বরং তা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।
সত্যের পক্ষে কলমই এখন সবচেয়ে বড় শক্তি। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বা সাইবার আইনের মতো বিধান সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে নয়, বরং ভুয়া সংবাদ ও ঘৃণা প্রচার রোধে ব্যবহার করা উচিত। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকে নিজস্ব ‘অভ্যন্তরীণ সেন্সরশিপ’ সংস্কৃতি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।
সাংবাদিকতার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো সমাজে সত্য, ন্যায় ও মানবতার আলো ছড়ানো। কিন্তু এই পথে রয়েছে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্বের পাহাড়। তবুও সাহসী ও নৈতিক সাংবাদিকরাই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন—যারা আপোষহীনভাবে সত্যের পক্ষে দাঁড়ান। আজকের সাংবাদিকতার সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—সে কি টিকে থাকবে স্বাধীন ও সৎভাবে, নাকি অর্থ ও ক্ষমতার দাসত্বে পরিণত হবে? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে সাংবাদিকদের সততা, সমাজের সচেতনতা, এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মনোভাবের ওপর। সত্য প্রকাশের এই কঠিন যাত্রায় সাংবাদিকদের হাতে এখনো সেই কলম রয়েছে—যা বন্দুকের চেয়েও শক্তিশালী। এই শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব।
সাংবাদিকতার অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক দুরবস্থা—এই তিনটি চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে সাংবাদিকতার অস্তিত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—যে জাতির কলম বেঁচে থাকে, তার বিবেক কখনো মরে না। আজও অনেক সাংবাদিক অন্ধকার ভেদ করে সত্যের আলো জ্বালাচ্ছেন। তাদের সংগ্রামই প্রমাণ করে, সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা নয়—এটি এক মহৎ প্রতিশ্রুতি, মানবতার প্রতি অঙ্গীকার।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও লেখক, চাঁদপুর।
সত্যের পক্ষে সেই কলমকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব, কারণ সত্য প্রকাশের শক্তি সব সময়ই বন্দুকের চেয়ে বড়।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।