খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

মানবিক কাজের সাংবাদিকতা ও আমাদের সমাজ

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ৮:৫২ অপরাহ্ণ
মানবিক কাজের সাংবাদিকতা ও আমাদের সমাজ

মানবিক কাজ এবং সাংবাদিকতা মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। সাংবাদিকতা একটি শক্তিশালী মাধ্যম যা মানুষের কষ্ট, দুর্ভোগ এবং অধিকার লঙ্ঘনের কথা তুলে ধরে। এটি মানবিক কাজের প্রভাব বৃদ্ধি করে এবং বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টি করে। মানবিক সাংবাদিকতা শুধু খবর পরিবেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি মানবতার সেবায় একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়ায়। সাংবাদিকতা সমাজের এমন শ্রেণির মানুষের সমস্যাগুলো তুলে ধরে, যাদের কথা সাধারণত শোনা যায় না। এটি ক্ষতিগ্রস্ত, দারিদ্র্যপীড়িত, বা নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মানবিক বিপর্যয়, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বা সঙ্কটের সময় সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করে। এই তথ্য ভবিষ্যতে নীতি প্রণয়ন, সাহায্য কার্যক্রম এবং মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাংবাদিকতা জনগণকে সচেতন করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, দারিদ্র্য, ক্ষুধা, বা শরণার্থী সংকট নিয়ে রিপোর্টিং বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং মানুষকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করে।সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং ডকুমেন্টারি সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে নীতিনির্ধারণে সহায়তা করে।

বিভিন্ন এনজিও, সাহায্য সংস্থা, এবং মানবিক কার্যক্রমে সাংবাদিকতা প্রয়োজনীয় প্রচার নিশ্চিত করে। এটি তহবিল সংগ্রহ এবং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়ক। সংঘাতপূর্ণ এলাকা, যুদ্ধক্ষেত্র, বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সাংবাদিকদের জীবনের ঝুঁকি থাকে। মানবিক প্রতিবেদনে ভুল তথ্য উপস্থাপন বা পক্ষপাতিত্ব বিশ্বাসযোগ্যতাকে হ্রাস করতে পারে। সাংবাদিকতার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও সম্পদের অভাব অনেক সময় মানবিক কভারেজকে বাধাগ্রস্ত করে। কিছু ক্ষেত্রে সরকার বা প্রতিষ্ঠান সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে বাধা দেয়, যা তাদের কার্যক্রমকে সীমিত করে। রোহিঙ্গা সংকট ও সাংবাদিকতার ভূমিকা-২০১৭ সালে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত নির্যাতন ও গণহত্যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেয়। আন্তর্জাতিক মিডিয়া যেমন বিবিসি, সিএনএন, এবং আল-জাজিরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশা তুলে ধরেছিল। স্থানীয় সাংবাদিকরাও কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিতি এবং চাহিদা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেন। এই প্রতিবেদনগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়েছিল এবং ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়ক হয়েছিল।সাংবাদিকতা প্রমাণ হিসেবে কাজ করেছে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা পরিচালনার ভিত্তি তৈরি করেছে।

সংঘাতপূর্ণ এলাকায় রিপোর্ট সংগ্রহের সময় সাংবাদিকরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। যেমন-সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং সাংবাদিকতার ভূমিকা : ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই সংঘাতে লক্ষাধিক মানুষ নিহত এবং মিলিয়ন মানুষ শরণার্থী হয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং বেসামরিক জনগণের দুর্দশা তুলে ধরেছে। বিবিসি, আল-জাজিরা, এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো আন্তর্জাতিক মিডিয়া সিরিয়ার শরণার্থী সংকট নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। ইউএন এবং এনজিও সংস্থাগুলোর জন্য এই প্রতিবেদনগুলো সাহায্যের আবেদন এবং ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়ক হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য নথিভুক্ত করতে সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যুদ্ধক্ষেত্রের বিপজ্জনক পরিবেশে সাংবাদিকদের কাজ করতে হয়েছে। অনেক সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন বা আহত হয়েছেন। সেন্সরশিপ এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

ডিজিটাল প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থান সাংবাদিকতাকে আরও সহজ ও কার্যকর করে তুলেছে। ড্রোন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, এবং ডেটা জার্নালিজম মানবিক কাজকে উন্নত করছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের চেয়ে ভালোভাবে স্থানীয় পরিস্থিতি তুলে ধরতে সক্ষম। তাদের গুরুত্ব ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ সাংবাদিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। মানবিক সাংবাদিকতা আরও কার্যকর করতে এনজিও, সরকার, এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। মানবিক সাংবাদিকতা মানুষের দুর্দশার কথা তুলে ধরে এবং মানবাধিকার রক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। এটি শুধু সমস্যার চিত্রায়ন নয়, বরং সমস্যার সমাধানে সমাজ ও সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করে। সাংবাদিকতা মানুষের দুঃখ-দুর্দশা এবং অবহেলার কথা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেয়। একই সঙ্গে এটি সচেতনতা বৃদ্ধি, তহবিল সংগ্রহ এবং মানবিক সাহায্য কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে সহায়ক হয়।

মানবিক সাংবাদিকতার প্রসার এবং তার গভীরতা অনেক। সাংবাদিকরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করেন এবং এটি জাতিসংঘ বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে উপস্থাপন করেন। উদাহরণস্বরূপ, সিরিয়া, ইয়েমেন, এবং আফগানিস্তানে সংঘাতের সময় মানবিক সাংবাদিকতা বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরি করেছে।উদাহরণ: ২০১০ সালের হাইতির ভূমিকম্পের সময় সাংবাদিকতা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চাহিদা এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্রুত তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে মানুষকে প্রস্তুত করতে এবং পরবর্তী সময়ে পুনর্বাসন কার্যক্রমে সাহায্য করে। বিশ্বজুড়ে শরণার্থী সংকট—যেমন রোহিঙ্গা শরণার্থী, সিরিয়ার উদ্বাস্তু এবং আফগান শরণার্থীদের দুর্দশা—সাংবাদিকতা মানুষকে সচেতন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাকে শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সাংবাদিকতা দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা তুলে ধরে। দারিদ্র্যের কারণে শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া, বেকারত্ব, এবং স্বাস্থ্যসেবার অভাব নিয়ে রিপোর্ট জনগণের সচেতনতা বাড়ায়। যুদ্ধ বা সংঘাত শুধু রাজনৈতিক বা সামরিক সমস্যা নয়, এটি একটি মানবিক বিপর্যয়। উদাহরণ: ইরাক এবং আফগানিস্তানে যুদ্ধের সময় সাংবাদিকতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ তুলে ধরা হয়েছিল।

সাংবাদিকতার নীতিগত দিক : মানবিক সাংবাদিকতায় নিরপেক্ষতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন মানবিক কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের গোপনীয়তা রক্ষা করা মানবিক সাংবাদিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং পরিবেশন করা সাংবাদিকতার মূল দায়িত্ব। অতিরঞ্জিত তথ্য বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে পারে। মানবিক সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য হলো সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। এজন্য সাংবাদিকদের একটি নৈতিক কাঠামোর মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। যেমন-ইয়েমেনের মানবিক সংকট-২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনের সংঘাতের ফলে লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাদ্য সংকট, অপুষ্টি এবং চিকিৎসার অভাবে ইয়েমেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর (বিবিসি, সিএনএন) প্রতিবেদন ইয়েমেনের ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরেছিল। ইয়েমেনের শিশুদের অপুষ্টি এবং মৃত্যুহারের ভয়াবহতা বিশ্বের মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।
৩. এই প্রতিবেদনগুলো সাহায্য সংস্থাগুলোর কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করেছে। এতে তুলে ধরা হয়-যুদ্ধক্ষেত্রে রিপোর্টিংয়ের ঝুঁকি। তথ্য সংগ্রহে স্থানীয় সরকার ও গোষ্ঠীর বাধা।

এছাড়াও বাংলাদেশে নদীভাঙন ও স্থানচ্যুতি-বাংলাদেশে নদীভাঙন প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষকে বাস্তুহীন করে তুলছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জীবিকার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কষ্টের চিত্র তুলে ধরেছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। সরকারের পুনর্বাসন কার্যক্রমকে গতিশীল করতে মিডিয়া রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এতে চ্যালেঞ্জ ছিলো দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের অভাব। বিষয়টিকে স্থায়ীভাবে আলোচনায় রাখা কঠিন।

মানবিক সাংবাদিকতার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা : যুদ্ধ বা সংঘাতপূর্ণ এলাকায় কাজ করার সময় সাহস এবং কৌশল প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় সহানুভূতি এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে আচরণ করতে হয়। ড্রোন এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দূরবর্তী অঞ্চলে তথ্য সংগ্রহ করা যায়। গভীর গবেষণার মাধ্যমে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা মানবিক সাংবাদিকতার একটি অপরিহার্য অংশ।

মানবিক সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ করণীয় : ডেটা জার্নালিজম, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ভিআর প্রযুক্তি সাংবাদিকতাকে আরও কার্যকর করে তুলবে। মানবিক সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ সাংবাদিকদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। স্থানীয় সাংবাদিকরা স্থানীয় পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারেন। তাদের গুরুত্ব আরও বাড়াতে হবে। সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন।

মানবিক কাজে সাংবাদিকতা শুধুমাত্র তথ্য পরিবেশনের একটি মাধ্যম নয়, এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব। যুদ্ধ, সংঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং সামাজিক বৈষম্যের মতো সমস্যাগুলোতে সাংবাদিকতা সচেতনতা তৈরি করে এবং সমাধানের পথ দেখায়। তবে এই কাজ ঝুঁকিপূর্ণ এবং জটিল। সঠিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে মানবিক সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল করা সম্ভব। বিশ্বকে আরও মানবিক এবং সহানুভূতিশীল করে তুলতে সাংবাদিকতার ভূমিকা অমূল্য। এটি কেবল সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে না, বরং বিশ্ববাসীর মধ্যে সংহতির বোধও জাগ্রত করে। মানবিক কাজে সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা নয়, এটি একটি মানবিক দায়িত্ব। এটি অবহেলিত মানুষের কণ্ঠস্বর তুলে ধরে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। রোহিঙ্গা সংকট, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, বা অন্যান্য মানবিক বিপর্যয়—সব ক্ষেত্রেই সাংবাদিকতা মানবিক সেবার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তবে সাংবাদিকতায় নিরাপত্তা, নিরপেক্ষতা এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মানবিক কাজের প্রতি দায়বদ্ধ সাংবাদিকতা বিশ্বকে আরও সহানুভূতিশীল এবং ন্যায়পরায়ণ সমাজ গঠনে সহায়ক হবে।

লেখক পরিচিতি : বিএসসি, এলএলবি, এমসিএস, গনমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ২০২১ (পিআইবি)।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।