খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

স্বপ্নপুরীর রাজা ও কাল্পনিক প্রেমের গল্প

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:৩৩ অপরাহ্ণ
স্বপ্নপুরীর রাজা ও কাল্পনিক প্রেমের গল্প

পনেরো বছরের কিশোর রোহান ছিল গ্রামাঞ্চলের একজন সাধারণ ছেলে। প্রতিদিনের মতো সেদিনও বিকেলে সে তার প্রিয় বাঁশি নিয়ে গ্রামের পাশের বনের ধারে গিয়ে বসেছিল। আকাশ লালচে হয়ে গিয়েছিল, পাখিরা ফিরছিল তাদের নীড়ে। হঠাৎ করেই তার চোখে পড়ল এক বর্ণিল আলো। গাছপালার ফাঁক দিয়ে আলোটা ঠিক যেন কোনো সোনার বাক্স থেকে বেরিয়ে আসছিল। রোহান কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গেল।
অবাক হয়ে সে দেখল, বনের মাটিতে একটা ছোট, চকচকে বাক্স পড়ে আছে। বাক্সটা খুলতেই ঝলমলে আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো এক ছোট্ট, মায়াবী প্রাণী। প্রাণীটি বলল, “আমি স্বপ্নপুরীর দূত। তুমিই আমাদের রাজ্যকে রক্ষা করতে পারবে।”
রোহান কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রাণীটি তাকে হাত ধরে টেনে এক ঝলমলে গুহার দিকে নিয়ে গেল। গুহার ভেতর ঢুকতেই চারপাশ বদলে গেল। রোহান নিজেকে আবিষ্কার করল এক অদ্ভুত জায়গায়—স্বপ্নপুরী। এটি ছিল এক রঙিন রাজ্য যেখানে সবকিছুই স্বপ্নের মতো সুন্দর। কিন্তু এখানকার বাসিন্দাদের মুখে ছিল গভীর দুশ্চিন্তার ছাপ।
প্রাণীটি জানাল, স্বপ্নপুরীর রাজা কোনো অজ্ঞাত শক্তির কারণে ঘুমিয়ে পড়েছেন। যদি তিনি জাগ্রত না হন, তবে স্বপ্নপুরী ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের একমাত্র ভরসা তুমি।
রোহান প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। সে তো একজন সাধারণ ছেলে, রাজাকে জাগানোর মতো কাজ কীভাবে করবে? কিন্তু প্রাণীটির অনুরোধে এবং স্বপ্নপুরীর বাসিন্দাদের দুঃখ দেখে সে সাহস সঞ্চয় করল। তাকে বলা হলো, রাজাকে জাগানোর জন্য “জীবনের ফুল” আনতে হবে। ফুলটি স্বপ্নপুরীর পূর্ব প্রান্তে থাকা কালের গুহাতে রয়েছে।
প্রাণীটি তাকে একটি যাদুর মানচিত্র দিল, যা তাকে সঠিক পথে নিয়ে যাবে। রোহান যাত্রা শুরু করল। পথে তার সঙ্গে যুক্ত হলো আরও কিছু সাহসী বাসিন্দা—টুকু, একজন কথা বলা কাক; মিষ্টি, এক ছোট্ট মেয়ে, যার হাসি মানুষকে শক্তি দেয়।
যাত্রার পথে তাদের প্রথম বাধা আসে এক ধোঁয়াশার জঙ্গলে। জঙ্গলটি ছিল প্রহরীদের দ্বারা সুরক্ষিত, যারা কেবল ধাঁধার উত্তর দিতে পারলেই পথ ছাড়ত। রোহান এবং তার সঙ্গীরা মিলে ধাঁধাগুলোর উত্তর দিল।
প্রহরী একবার জিজ্ঞাসা করল : যে জিনিসটি যত বেশি নেওয়া হয়, তত কমে যায়। সেটি কী?
রোহান উত্তর দিল, শ্বাস।
প্রহরীরা তাদের পথ ছেড়ে দিল।
এরপর তারা পৌঁছাল এক ভাঙা সেতুর কাছে। সেতু পার হতে হলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। রোহান সবার সঙ্গে সমন্বয় করে সেতু মেরামত করল। এই কাজ করতে গিয়ে তারা বুঝল, দলবদ্ধভাবে কাজ করলে বড়ো বড়ো বাধাও অতিক্রম করা যায়।
অবশেষে তারা কালের গুহার প্রবেশদ্বারে পৌঁছাল। কিন্তু সেখানে অপেক্ষা করছিল এক বিশাল দৈত্য। দৈত্যটি বলল, যদি আমার তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারো, তবে আমি তোমাক রাজ্য দান করবো।…..

অরণী ও আদ্রিত—দুজনের জীবন একদম ভিন্ন জগৎ থেকে শুরু। অরণী শহরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী, আর আদ্রিত পেশায় একজন চিত্রশিল্পী। অরণীর বইয়ের প্রতি ভালোবাসা, আর আদ্রিতের রঙের প্রতি নেশা তাদের দুজনকে ভিন্ন ভিন্ন পথে নিয়ে চলেছে।
তবে এক বিকেলে, বৃষ্টির পর আকাশে যখন রোদ মেখে উঠেছিল, ঠিক তখনই তাদের প্রথম দেখা। অরণী ক্যাম্পাসের পাশের পুরোনো বইয়ের দোকানে একটা কবিতার বই খুঁজছিল। বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে হঠাৎ তার হাত গিয়ে ছুঁল আরেকটি হাতে। “সরি!” বলে মুখ তুলে তাকাতেই অরণী দেখতে পেল আদ্রিতের মায়াময় চোখ।
আদ্রিত তখন একটু হাসল। “আপনি কি হিউগো-র কবিতা পড়তে চান?”
অরণী হেসে বলল, “হ্যাঁ, তবে এই কপিটা হয়তো আপনার আগে আমি ধরেছি।”
সেই ছোট্ট হাসির বিনিময়েই শুরু হয়েছিল তাদের গল্প।
আদ্রিত আর অরণীর মধ্যে একটা অদ্ভুত সংযোগ তৈরি হয়েছিল। ফোন বা মেসেজ নয়, তারা চিঠি লিখত একে অপরকে। পুরোনো দিনের কাগজে কালির গন্ধে ভরা চিঠি। অরণী লিখত নিজের অনুভূতি, পড়া কবিতা, আর দিনযাপনের কথা। আদ্রিত তার জবাবে আঁকত কিছু স্কেচ, কিছু কবিতা, আর নিজের চিত্রশিল্পের ভাবনা।
চিঠিগুলো হয়ে উঠেছিল তাদের হৃদয়ের আয়না। প্রতিটি বাক্যে ছিল নতুন অনুভূতির স্পর্শ।
তাদের জীবনে সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন আদ্রিত জানাল, তাকে অন্য শহরে যেতে হবে একটা বড় আর্ট এক্সিবিশনে। “এটা আমার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ, অরণী। কিন্তু আমি জানি, এই দূরত্ব আমাদের গল্পকে কঠিন করে তুলবে।”
অরণী মুচকি হেসে বলল, “তোমার স্বপ্ন আমারও স্বপ্ন, আদ্রিত। চিঠিগুলোই তো আমাদের কাছে থাকছে। দূরত্ব কিছুই নয়।”
তবে বাস্তবতা সবসময় গল্পের মতো সুন্দর নয়। দূরত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের চিঠির সংখ্যা কমে এলো। আদ্রিত কাজের চাপে ডুবে গেল, আর অরণীর মন কিছুটা ভারী হয়ে উঠল।
একদিন, কয়েক মাস পরে, অরণী একটি চিঠি পেল। খামের উপর আদ্রিতের হাতের লেখা। ভিতরে শুধু একটি বাক্য:
“যদি সময়ের সঙ্গে সব বদলে যায়, তবে কি ভালোবাসাও বদলে যায়?”
অরণীর হাত কাঁপছিল। চিঠির সঙ্গে ছিল একটি ছোট্ট পেইন্টিং—একটি মেয়ে, যার চোখে অশ্রু। অরণী বুঝতে পারল, আদ্রিত হয়তো এই গল্পের ইতি টানতে চাইছে।
কয়েক মাস কেটে গেল। অরণী নিজেকে কাজ আর পড়াশোনায় ডুবিয়ে রাখল। তবে একদিন হঠাৎ ক্যাম্পাসে একটি আর্ট গ্যালারির পোস্টার দেখতে পেল। “আদ্রিতের একক প্রদর্শনী।”
অরণী দ্বিধা নিয়েই প্রদর্শনীতে গেল। দেয়ালে ঝুলানো প্রতিটি ছবির মাঝে নিজের আর আদ্রিতের গল্পের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেল। একটি ছবির সামনে থেমে গেল সে—ছবিতে ছিল তার মুখ। নিচে লেখা ছিল : আমার চিঠির শেষ বাক্য।
পেছন থেকে একটি কণ্ঠ ভেসে এলো, “তুমি কি জানো, শেষ বাক্যটা তখনো অসম্পূর্ণ ছিল।
অরণী ঘুরে দেখল, আদ্রিত দাঁড়িয়ে আছে। তাদের চোখে চোখ পড়ল, আর বুঝতে পারল, কিছু গল্পের সত্যি কোনো শেষ হয় না।
তাদের গল্প আবার নতুন করে শুরু হলো। ভালোবাসা সময়ের সঙ্গে বদলায় না, বরং সময় তার গভীরতা বাড়ায়। চিঠির শেষ বাক্যও নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।
নিশ্চয়ই! গল্পটি আরও বিস্তারিতভাবে প্রসারিত করছি। নিচের অংশে তাদের জীবনের নানা নতুন মোড়, সম্পর্কের গভীরতা, এবং কাহিনির উত্তেজনা যোগ করছি।
আদ্রিত আর অরণী দেখা করার পর তাদের কথোপকথন শুরু হলো এক অদ্ভুত জড়তা নিয়ে।
“তুমি কীভাবে এতদিন আমার খোঁজ নাওনি?” অরণী প্রশ্ন করল।
আদ্রিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমি চেয়েছিলাম তোমার জন্য কিছু হয়ে উঠতে, অরণী। কিন্তু যতই নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটেছি, ততই তোমার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছি। অরণীর চোখে পানি চলে এল। তুমি ভাবলে, দূরে সরে গিয়ে আমাকে সুখী করতে পারবে? ভালোবাসা তো একসঙ্গে লড়াই করার জিনিস। দূরত্ব তৈরি করার নয়।
তাদের কথোপকথন চলতে থাকল। গ্যালারি থেকে বের হয়ে তারা বৃষ্টির মধ্যে হাঁটতে লাগল। পুরোনো স্মৃতি ভেসে উঠল দুজনের মনে।
সেদিনের পর তারা নতুন করে কথা বলা শুরু করল। তবে এবার তাদের সম্পর্কের ভিত আরও গভীর ছিল। আগের মতো চিঠি লিখতে শুরু করল তারা। চিঠির ভাষা আরেকটু পরিণত হলো। এখন শুধু অনুভূতির কথা নয়, ভবিষ্যৎ নিয়েও কথা হতে লাগল।
আদ্রিত বলল, আমাদের এই গল্পটা যেন কোনো দিন অসমাপ্ত না হয়। আমি আর তোমাকে হারাতে চাই না।
অরণী মুচকি হেসে বলল, তাহলে একটা প্রতিজ্ঞা কর। আমাদের গল্পটাকে এবার থেকে একসঙ্গে লিখব।
তাদের সম্পর্ক যখন ভালোই চলছিল, তখন এক নতুন সমস্যা দেখা দিল। আদ্রিতের আর্ট গ্যালারির জন্য একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান তার কাজ নিয়ে আগ্রহ দেখাল। তবে শর্ত ছিল, তাকে অন্তত দুই বছরের জন্য বিদেশে থাকতে হবে।
আদ্রিত বিষয়টি অরণীকে জানাল। তুমি কি মনে কর, আমি এই সুযোগ গ্রহণ করলে আমাদের গল্পে আবার দূরত্ব আসবে?
অরণী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, দূরত্ব গল্প বদলে দিতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার গভীরতা থাকলে গল্পটা কখনো শেষ হয় না। তুমি যাও। আমি অপেক্ষা করব।
বিদেশে থাকা অবস্থায় আদ্রিত প্রতিদিন ভিডিও কল করত, চিঠি লিখত। কিন্তু দূরত্বের কারণে মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হতো।
একদিন, আদ্রিত বলল, তুমি জানো, তোমার না থাকাটা আমাকে কীভাবে একা করে দেয়?
অরণী মৃদু হেসে বলল, তুমি হয়তো দূরে আছ, কিন্তু তোমার প্রতিটি চিঠি আর প্রতিটি কথা আমাকে বলছে, তুমি এখনো আমারই সঙ্গে আছ।
এই ধৈর্য আর ভালোবাসার সঙ্গে তারা দুই বছর পার করে ফেলল।
দুই বছর পর, এক বিকেলে অরণী একটি চিঠি পেল। চিঠির সঙ্গে একটি বিমানের টিকিট আর একটি নোট ছিল :
তোমার কাছে আর ফিরে আসছি না। এবার তোমাকে আমার কাছে আনতে চাই। এই টিকিটটা তোমার জন্য।
অরণী বিমানে চড়ে আদ্রিতের কাছে গেল। তাকে দেখে আদ্রিত বলল, “আমি হয়তো দূরে থেকে অনেক ভুল করেছি, কিন্তু এবার আর তোমাকে কোনো দিন একা রাখব না।”
তাদের গল্প এবার সত্যিই পূর্ণতা পেল। চিঠির শেষ বাক্যটি আর কোনো প্রশ্নে শেষ হলো না, বরং তা হয়ে উঠল একটি প্রতিজ্ঞার প্রতীক।
ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না, তা শুধু রঙ, শব্দ আর অনুভূতির ভিন্নতায় ধরা দেয়।
এভাবেই রোহান আর অরণীর গল্প সময়ের পরীক্ষায় টিকে গেল, আর তাদের ভালোবাসা হয়ে রইল এক অনন্ত অধ্যায়।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, প্রাবন্ধিক ও গল্পকার, মোবাইল : 01675127483, ই-মেইল : rtrujjal@gmail.com

উত্তাল সাগর, শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ
উত্তাল সাগর, শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শক্তি সঞ্চয় করছে। এটি ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৮ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সোমবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা অথবা রাত নাগাদ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর (পুন.) ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্য কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।

হাঁটা বন্ধ করবেন না, কেনো হাঁটবেন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ
হাঁটা বন্ধ করবেন না, কেনো হাঁটবেন

হাঁটা বন্ধ করবেন না যেন, মস্তিষ্ক নয়, ডিমেনশিয়া শুরু হয় আপনার পা থেকে! বিশ্বজুড়ে বয়স্ক মানুষের অক্ষমতা ও নির্ভরশীলতার প্রধান কারণ হিসেবে ডিমেনশিয়া এখন এক ভয়াবহ বাস্তবতা। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন, এবং প্রতিবছর নতুন করে আরও প্রায় ১ কোটি মানুষ এতে ভোগেন। অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, মস্তিষ্ক সচল রাখাই ডিমেনশিয়া প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। কিন্তু ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) প্রশিক্ষিত স্নায়ুশল্য বিশেষজ্ঞ ডা. অরুণ এল. নাইক জানালেন চমকপ্রদ তথ্য—ডিমেনশিয়ার সূত্রপাত নাকি মস্তিষ্কে নয়, পা থেকেই!
ডিমেনশিয়া কী?
ডিমেনশিয়া কোনো একক রোগ নয়; এটি স্মৃতি, চিন্তাশক্তি ও দৈনন্দিন কাজের সক্ষমতাকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করে এমন একাধিক স্নায়ুরোগের সামষ্টিক নাম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও জটিল হয়ে ওঠে এবং জীবনের মান নষ্ট করে দেয়। তবে সময়মতো নির্ণয়, যত্নশীল পরিচর্যা, জীবনযাপনে পরিবর্তন ও চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর অবস্থা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডিমেনশিয়া শুরু হয় পা থেকে
ডা. নাইক এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আপনি কি জানেন, ডিমেনশিয়া আসলে শুরু হয় আপনার পা থেকে? শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা পায়ের পেশিকে দুর্বল করে, যার ফলে স্যারকোপেনিয়া বা পেশি ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে। এখানেই শুরু হয় বিপদ। গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্বল পায়ের কারণে জ্ঞানগত ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায় এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, শরীরের সক্রিয় পেশি এমন রাসায়নিক উৎপাদন করে যা মস্তিষ্ককে সচল রাখে। এই রাসায়নিকগুলোর নাম ব্রেইন-ডিরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF), যা মস্তিষ্কের স্মৃতিনির্ভর অংশ হিপোক্যাম্পাসে সংযোগ বৃদ্ধি করে। শক্তিশালী পা শুধু ভারসাম্য বজায় রাখে না, বয়স বাড়লেও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমায়। “৬৫ বছরের পর পড়ে যাওয়াই সবচেয়ে বিপজ্জনক,” বলেন ডা. নাইক।
তিনি ২০২০ সালের Neurology সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণার উদাহরণ দেন, যেখানে দেখা গেছে, যাদের হাঁটার গতি কম, তাদের মস্তিষ্কের আকারও ছোট এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকি বেশি। “হাঁটা শুধু শরীরচর্চা নয়, এটি পুরো মস্তিষ্কের এক অনুশীলন,” যোগ করেন তিনি।
কীভাবে হাঁটা মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখে
হাঁটা এমন এক সহজ ব্যায়াম যা শরীর ও মস্তিষ্ক দুটিকেই সক্রিয় রাখে। ডা. নাইক বলেন, “প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্ত থাকে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব, সেরিবেলাম, স্পাইনাল কর্ড ও স্নায়ু প্রতিক্রিয়ার সমন্বয়।” হাঁটা রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ সরবরাহ করে এবং টক্সিন দূর করে। তিনি আরও বলেন, “হাঁটার ধরনে বা ভারসাম্যে পরিবর্তন দেখা গেলে সেটি মস্তিষ্কের আগাম সতর্ক সংকেত। এটি প্রায়ই স্মৃতি সমস্যার বছরখানেক আগেই দেখা দেয়।” হাঁটা নিউরোপ্লাস্টিসিটির এক জীবন্ত উদাহরণও বটে। “হাঁটার সময় শরীরে BDNF সক্রিয় হয়, যা নিউরনগুলোর সংযোগ শক্তিশালী করে,” বলেন ডা. নাইক।
কীভাবে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করবেন ডা. নাইক কয়েকটি সহজ অভ্যাসের পরামর্শ দিয়েছেন, যা নিয়মিত চর্চা করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বজায় থাকে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন। ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম যেমন এক পায়ে দাঁড়ানো বা সরলরেখায় হাঁটার অভ্যাস করুন। হাঁটার সময় কথা বলা বা হালকা মানসিক কাজ করুন—এটি মস্তিষ্কের সমন্বয় ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত পায়ের পেশির ব্যায়াম করুন, এটি মস্তিষ্কের জন্য একপ্রকার ‘বিমা’।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা পরিহার করুন; প্রতি ঘণ্টায় কিছুটা নড়াচড়া করুন। তিনি বলেন, “যখন আপনার পা ধীরে ধীরে কাজ হারায়, তখন মস্তিষ্কও তার পথ অনুসরণ করে। আপনার হাঁটার গতি বজায় রাখুন, তাহলেই সুরক্ষিত থাকবে মস্তিষ্ক।”
ডা. নাইক আরও পরামর্শ দেন, পেশির গঠন রক্ষায় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। তার মতে, কখনোই দেরি হয়ে যায় না। “গবেষণায় দেখা গেছে, ষাট বছর বয়সেও হাঁটা ও ব্যায়াম শুরু করলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। মনে রাখবেন, শক্ত পা মানেই তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক। স্যারকোপেনিয়া মাথা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই সচেতন হোন—চল্লিশের কোঠা থেকেই শুরু করুন।”
সর্বোপরি, সক্রিয় থাকা শুধু চলাফেরার বিষয় নয়; এটি মস্তিষ্ককে তরুণ রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম ও সুষম খাদ্য—এই তিন অভ্যাসই হতে পারে বার্ধক্যের ডিমেনশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ।

বন্ধ হচ্ছে সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ
বন্ধ হচ্ছে সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। সোমবার (২৭ অক্টোবর) এ-সংক্রান্ত এক পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ। পরিপত্রে বলা হয়েছে, কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চাইতে পারবে না। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, চলমান সংকোচনমূলক নীতির প্রেক্ষাপটে গত কয়েক বছরের মতো সংশোধিত বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অব্যাহত রাখতে হবে। এর আওতায় বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি কেনাসহ বেশ কিছু ব্যয় বন্ধ থাকবে। এ নীতি অনুসরণ করে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন আগামী ৯ নভেম্বরের মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই মূল বাজেটে বরাদ্দের মধ্যেই থাকতে হবে। কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। তবে সরকারের অগ্রাধিকার কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রয়োজনে মূল বাজেটে বরাদ্দের ব্যয়সীমার মধ্যে থেকে একই ধরনের বিভিন্ন কাজে বরাদ্দ কমানো বা বাড়ানো যাবে। কিন্তু উন্নয়ন ব্যয়ের অর্থ অব্যয়িত থাকবে বলে অনুমিত হলে ওই অর্থ কোনোক্রমেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।
এতে আরও বলা হয়, সংশোধীত বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আওতায় সরকারি খরচে সব ধরনের বৈদেশিক ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিদেশ ভ্রমণ করা হবে। তা ছাড়া কেনা যাবে না গাড়ি, জাহাজ ও বিমান। তবে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে পরিচালন বাজেটের আওতায় ১০ বছরের পুরোনো গাড়ির প্রতিস্থাপন হিসেবে নতুন গাড়ি কেনা যাবে। এমনকি পরিচালন বাজেটে আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচও বন্ধ রাখতে হবে। তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় শর্তসাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে। আরও কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় স্থগিত রাখা হয়েছে আবার গুরুত্ব বিবেচনায় এসব ক্ষেত্রে ব্যয়ে কিছুটা ছাড়ও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখাসহ ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে সরকারি ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই কোনো খাতে ব্যয় সাশ্রয়ের সুযোগ রয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে সংশোধিত বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। সাধারণত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিশেষ করে মার্চে সরকার জাতীয় বাজেট সংশোধন করে। তবে এবার ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় আগেভাগে বাজেট সংশোধন করা হচ্ছে।