খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

রাষ্ট্র রূপান্তরের ভূমিকায় সাংবাদিকতা

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫, ৬:১৫ অপরাহ্ণ
রাষ্ট্র রূপান্তরের ভূমিকায় সাংবাদিকতা

রাষ্ট্র রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় সাংবাদিকতা একটি অপরিহার্য এবং প্রভাবশালী মাধ্যম। এটি সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে এবং তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের কাঠামো ও নীতির পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাংবাদিকতা শুধুমাত্র তথ্য সরবরাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি জনমত গঠন, নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং গণতান্ত্রিক চর্চাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রাষ্ট্রের রূপান্তর প্রক্রিয়ায় জনমত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকতা তথ্য ও বিশ্লেষণ উপস্থাপনের মাধ্যমে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত প্রভাবিত করে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসা সমস্যাগুলি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি সমাধানের পথও নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন বা সামাজিক বৈষম্যের মতো বিষয়গুলিকে সামনে তুলে ধরে সাংবাদিকতা নাগরিকদের সচেতন করে এবং তাদের মতামত গঠন করে। সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। এটি সরকারের কর্মকাণ্ড ও নীতির ওপর নজরদারি করে এবং সেগুলির স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। দুর্নীতির মতো অপকর্ম উন্মোচনের মাধ্যমে সাংবাদিকতা সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনা সাংবাদিকতার মাধ্যমে উন্মোচিত হওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে। সাংবাদিকতা রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এটি নীতিনির্ধারকদের কাছে জনগণের দাবিদাওয়া পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি সম্পর্কে জনগণকে অবগত রাখে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নয়ন প্রকল্পগুলির তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরলে তারা সেগুলিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারে। রাষ্ট্র রূপান্তরের ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতা একটি অপরিহার্য উপাদান। সাংবাদিকতা সমাজে বিদ্যমান সমস্যাগুলি তুলে ধরে এবং জনগণকে সচেতন করে। এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী অধিকার, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মতো বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনে সহায়তা করে।

গণতন্ত্রের চর্চা সাংবাদিকতার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এটি মুক্ত মত প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে এবং জনগণকে তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সময় সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি জনগণের সামনে প্রার্থীদের যোগ্যতা ও নীতিগুলি তুলে ধরে, যা জনগণকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। সংকটকালীন সময়ে সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের নীতিগত পরিবর্তনে ত্বরান্বিত ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, অর্থনৈতিক সংকট বা রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়, সাংবাদিকতা তথ্য সরবরাহ এবং সমস্যার প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে। উদাহরণস্বরূপ, COVID-19 মহামারির সময় সাংবাদিকতা সঠিক তথ্য সরবরাহ করে এবং সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে জনগণকে অবগত রাখে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ করার মাধ্যমে সাংবাদিকতা রাষ্ট্রকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সাহায্য করে। এটি নিপীড়িত জনগণের পক্ষে কথা বলে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। যেমন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সাংবাদিকতার প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক মহলে সচেতনতা সৃষ্টি করে এবং সমাধানের প্রচেষ্টা জোরদার করে। বৈশ্বিক পরিসরে সাংবাদিকতা রাষ্ট্র রূপান্তরের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি তুলে ধরে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করে। ডিজিটাল যুগে সাংবাদিকতা রাষ্ট্র রূপান্তরে আরও কার্যকর হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অনলাইন সংবাদমাধ্যম তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ ও গতিশীল করেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পরিবর্তন ও উদ্যোগ সহজে পৌঁছে যাচ্ছে।

সাংবাদিকতার ভূমিকাকে কার্যকর করার পথে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন: অনেক দেশে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। তাদের ওপর সরকারের বা কর্পোরেট সংস্থার চাপ থাকে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ভুয়া খবর ও তথ্য বিকৃতির সমস্যা বেড়েছে, যা রাষ্ট্র রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।অনেক সাংবাদিক তাদের কাজ করতে গিয়ে জীবনঝুঁকিতে পড়েন। রাষ্ট্র রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় সাংবাদিকতার ভূমিকা আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি শুধুমাত্র তথ্য প্রদান বা সমস্যার দিক নির্দেশনায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং নৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কার্যকর শক্তি হিসেবে কাজ করে।

সাংবাদিকতা রাজনৈতিক সংস্কারের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রাজনৈতিক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির তথ্য উন্মোচন করে। পাশাপাশি সাংবাদিকতা জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায়, যাতে তারা সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১১ সালে আরব বসন্তে সাংবাদিকতার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা ও দাবি-দাওয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা এক কার্যকর মাধ্যম। অনেক সময় রাষ্ট্রের মূলধারার কাঠামোর বাইরে থাকা গোষ্ঠীগুলোর সমস্যা উপেক্ষিত হয়। সাংবাদিকতা এই শোষিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলে এবং তাদের দাবিকে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন বা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমির অধিকারের লড়াইয়ে সাংবাদিকতার ভূমিকা অপরিসীম। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক রূপান্তরেও সাংবাদিকতা বিশাল ভূমিকা রাখে। এটি ব্যবসা, শিল্প এবং অর্থনৈতিক নীতির সঠিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে। এটি অর্থনৈতিক দুর্নীতি উন্মোচন করে এবং নীতিগত সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর সাংবাদিকতা বৈশ্বিক শ্রম অধিকার এবং স্থানীয় শিল্পখাতের সংস্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শিক্ষাক্ষেত্রের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে এবং সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় আলোচনার পথ তৈরি করে। সাংবাদিকতা উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য জনমত তৈরি করতে সাহায্য করে। জলবায়ু পরিবর্তন রাষ্ট্র রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সাংবাদিকতা এই বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে এবং নীতিনির্ধারকদের পরিবেশবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলোর সমস্যাগুলি তুলে ধরে এবং পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করে। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন রাষ্ট্রের রূপান্তরের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সাংবাদিকতা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য আরও দ্রুত এবং সঠিকভাবে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে ডেটা সাংবাদিকতা এবং অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিভাজনের অবসান ঘটিয়ে সংলাপ এবং বোঝাপড়ার পথ তৈরি করে। যুদ্ধ বা সশস্ত্র সংঘাতের সময় সাংবাদিকতা প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরে, যা সমাধানের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। উদাহরণস্বরূপ, রুয়ান্ডার গণহত্যার সময় সাংবাদিকতা বিশ্ববাসীকে সঠিক তথ্য দিতে পারলে আরও দ্রুত হস্তক্ষেপ সম্ভব হতো। সাংবাদিকতা সমাজের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনেও ভূমিকা পালন করে। এটি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে উদযাপন এবং প্রচার করে। এছাড়া সমাজের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ এবং সহিষ্ণুতার ধারণা জাগিয়ে তোলে।

সাংবাদিকতা যেমন রাষ্ট্র রূপান্তরে অবদান রাখে, তেমনি এটি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। রাজনৈতিক চাপ : অনেক সময় সাংবাদিকতা রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ে, যা তাদের স্বাধীনতা সীমিত করে।প্রতিযোগিতা ও বাজার কেন্দ্রিকতা: বর্তমান বিশ্বে বাণিজ্যিক লাভের জন্য কিছু সংবাদমাধ্যম সত্যতার বদলে দর্শক টানার জন্য বিভ্রান্তিকর খবর পরিবেশন করে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা: অনেক দেশে সাংবাদিকরা কাজের জন্য হুমকি, নির্যাতন এবং হত্যার শিকার হন।

ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্রমবিকাশ সাংবাদিকতার নতুন পথ উন্মুক্ত করছে। বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন তৈরির জন্য ডেটার ব্যবহার বাড়ছে। তথ্য দ্রুত ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সংবাদ সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপনার ক্ষেত্রে এআই-এর ব্যবহার সাংবাদিকতাকে আরও কার্যকর করে তুলেছে।

রাষ্ট্র রূপান্তরের ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা একটি অপরিহার্য মাধ্যম। এটি কেবলমাত্র তথ্য সরবরাহকারী নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তনের জন্য শক্তিশালী হাতিয়ার। সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে সাংবাদিকতা রাষ্ট্রকে আরও জবাবদিহিমূলক, স্বচ্ছ এবং মানবিক করে তুলতে পারে। তবে এর জন্য সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং নৈতিক দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিকতার এই ভূমিকা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রূপান্তরের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সক্ষম। রাষ্ট্র রূপান্তরের ভূমিকায় সাংবাদিকতার অবদান অস্বীকার করা যায় না। এটি শুধুমাত্র তথ্যের যোগানদাতা নয়, বরং একটি সক্রিয় পরিবর্তন সৃষ্টিকারী মাধ্যম। তবে সাংবাদিকতা তার ভূমিকা সফলভাবে পালন করতে পারবে তখনই, যখন এটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং নৈতিক মানদণ্ড অনুসরণ করবে। সাংবাদিকতার উন্নয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সার্বিক অগ্রগতি ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর শক্তিশালীকরণ সম্ভব।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় মাস্টার্স (ব্যাচ ২০২১), পিআইবি।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।