খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৯ ভাদ্র, ১৪৩২

রাষ্ট্র রূপান্তরের ভূমিকায় সাংবাদিকতা

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫, ৬:১৫ অপরাহ্ণ
রাষ্ট্র রূপান্তরের ভূমিকায় সাংবাদিকতা

রাষ্ট্র রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় সাংবাদিকতা একটি অপরিহার্য এবং প্রভাবশালী মাধ্যম। এটি সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে এবং তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের কাঠামো ও নীতির পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাংবাদিকতা শুধুমাত্র তথ্য সরবরাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি জনমত গঠন, নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং গণতান্ত্রিক চর্চাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রাষ্ট্রের রূপান্তর প্রক্রিয়ায় জনমত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকতা তথ্য ও বিশ্লেষণ উপস্থাপনের মাধ্যমে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত প্রভাবিত করে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসা সমস্যাগুলি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি সমাধানের পথও নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন বা সামাজিক বৈষম্যের মতো বিষয়গুলিকে সামনে তুলে ধরে সাংবাদিকতা নাগরিকদের সচেতন করে এবং তাদের মতামত গঠন করে। সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। এটি সরকারের কর্মকাণ্ড ও নীতির ওপর নজরদারি করে এবং সেগুলির স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। দুর্নীতির মতো অপকর্ম উন্মোচনের মাধ্যমে সাংবাদিকতা সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনা সাংবাদিকতার মাধ্যমে উন্মোচিত হওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে। সাংবাদিকতা রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এটি নীতিনির্ধারকদের কাছে জনগণের দাবিদাওয়া পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি সম্পর্কে জনগণকে অবগত রাখে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নয়ন প্রকল্পগুলির তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরলে তারা সেগুলিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারে। রাষ্ট্র রূপান্তরের ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতা একটি অপরিহার্য উপাদান। সাংবাদিকতা সমাজে বিদ্যমান সমস্যাগুলি তুলে ধরে এবং জনগণকে সচেতন করে। এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী অধিকার, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মতো বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনে সহায়তা করে।

গণতন্ত্রের চর্চা সাংবাদিকতার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এটি মুক্ত মত প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে এবং জনগণকে তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সময় সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি জনগণের সামনে প্রার্থীদের যোগ্যতা ও নীতিগুলি তুলে ধরে, যা জনগণকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। সংকটকালীন সময়ে সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের নীতিগত পরিবর্তনে ত্বরান্বিত ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, অর্থনৈতিক সংকট বা রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়, সাংবাদিকতা তথ্য সরবরাহ এবং সমস্যার প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে। উদাহরণস্বরূপ, COVID-19 মহামারির সময় সাংবাদিকতা সঠিক তথ্য সরবরাহ করে এবং সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে জনগণকে অবগত রাখে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ করার মাধ্যমে সাংবাদিকতা রাষ্ট্রকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সাহায্য করে। এটি নিপীড়িত জনগণের পক্ষে কথা বলে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। যেমন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সাংবাদিকতার প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক মহলে সচেতনতা সৃষ্টি করে এবং সমাধানের প্রচেষ্টা জোরদার করে। বৈশ্বিক পরিসরে সাংবাদিকতা রাষ্ট্র রূপান্তরের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি তুলে ধরে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করে। ডিজিটাল যুগে সাংবাদিকতা রাষ্ট্র রূপান্তরে আরও কার্যকর হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অনলাইন সংবাদমাধ্যম তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ ও গতিশীল করেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পরিবর্তন ও উদ্যোগ সহজে পৌঁছে যাচ্ছে।

সাংবাদিকতার ভূমিকাকে কার্যকর করার পথে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন: অনেক দেশে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। তাদের ওপর সরকারের বা কর্পোরেট সংস্থার চাপ থাকে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ভুয়া খবর ও তথ্য বিকৃতির সমস্যা বেড়েছে, যা রাষ্ট্র রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।অনেক সাংবাদিক তাদের কাজ করতে গিয়ে জীবনঝুঁকিতে পড়েন। রাষ্ট্র রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় সাংবাদিকতার ভূমিকা আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি শুধুমাত্র তথ্য প্রদান বা সমস্যার দিক নির্দেশনায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং নৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কার্যকর শক্তি হিসেবে কাজ করে।

সাংবাদিকতা রাজনৈতিক সংস্কারের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রাজনৈতিক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির তথ্য উন্মোচন করে। পাশাপাশি সাংবাদিকতা জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায়, যাতে তারা সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১১ সালে আরব বসন্তে সাংবাদিকতার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা ও দাবি-দাওয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা এক কার্যকর মাধ্যম। অনেক সময় রাষ্ট্রের মূলধারার কাঠামোর বাইরে থাকা গোষ্ঠীগুলোর সমস্যা উপেক্ষিত হয়। সাংবাদিকতা এই শোষিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলে এবং তাদের দাবিকে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন বা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমির অধিকারের লড়াইয়ে সাংবাদিকতার ভূমিকা অপরিসীম। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক রূপান্তরেও সাংবাদিকতা বিশাল ভূমিকা রাখে। এটি ব্যবসা, শিল্প এবং অর্থনৈতিক নীতির সঠিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে। এটি অর্থনৈতিক দুর্নীতি উন্মোচন করে এবং নীতিগত সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর সাংবাদিকতা বৈশ্বিক শ্রম অধিকার এবং স্থানীয় শিল্পখাতের সংস্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শিক্ষাক্ষেত্রের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে এবং সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় আলোচনার পথ তৈরি করে। সাংবাদিকতা উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য জনমত তৈরি করতে সাহায্য করে। জলবায়ু পরিবর্তন রাষ্ট্র রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সাংবাদিকতা এই বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে এবং নীতিনির্ধারকদের পরিবেশবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলোর সমস্যাগুলি তুলে ধরে এবং পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করে। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন রাষ্ট্রের রূপান্তরের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সাংবাদিকতা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য আরও দ্রুত এবং সঠিকভাবে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে ডেটা সাংবাদিকতা এবং অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিভাজনের অবসান ঘটিয়ে সংলাপ এবং বোঝাপড়ার পথ তৈরি করে। যুদ্ধ বা সশস্ত্র সংঘাতের সময় সাংবাদিকতা প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরে, যা সমাধানের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। উদাহরণস্বরূপ, রুয়ান্ডার গণহত্যার সময় সাংবাদিকতা বিশ্ববাসীকে সঠিক তথ্য দিতে পারলে আরও দ্রুত হস্তক্ষেপ সম্ভব হতো। সাংবাদিকতা সমাজের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনেও ভূমিকা পালন করে। এটি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে উদযাপন এবং প্রচার করে। এছাড়া সমাজের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ এবং সহিষ্ণুতার ধারণা জাগিয়ে তোলে।

সাংবাদিকতা যেমন রাষ্ট্র রূপান্তরে অবদান রাখে, তেমনি এটি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। রাজনৈতিক চাপ : অনেক সময় সাংবাদিকতা রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ে, যা তাদের স্বাধীনতা সীমিত করে।প্রতিযোগিতা ও বাজার কেন্দ্রিকতা: বর্তমান বিশ্বে বাণিজ্যিক লাভের জন্য কিছু সংবাদমাধ্যম সত্যতার বদলে দর্শক টানার জন্য বিভ্রান্তিকর খবর পরিবেশন করে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা: অনেক দেশে সাংবাদিকরা কাজের জন্য হুমকি, নির্যাতন এবং হত্যার শিকার হন।

ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্রমবিকাশ সাংবাদিকতার নতুন পথ উন্মুক্ত করছে। বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন তৈরির জন্য ডেটার ব্যবহার বাড়ছে। তথ্য দ্রুত ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সংবাদ সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপনার ক্ষেত্রে এআই-এর ব্যবহার সাংবাদিকতাকে আরও কার্যকর করে তুলেছে।

রাষ্ট্র রূপান্তরের ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা একটি অপরিহার্য মাধ্যম। এটি কেবলমাত্র তথ্য সরবরাহকারী নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তনের জন্য শক্তিশালী হাতিয়ার। সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে সাংবাদিকতা রাষ্ট্রকে আরও জবাবদিহিমূলক, স্বচ্ছ এবং মানবিক করে তুলতে পারে। তবে এর জন্য সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং নৈতিক দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিকতার এই ভূমিকা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রূপান্তরের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সক্ষম। রাষ্ট্র রূপান্তরের ভূমিকায় সাংবাদিকতার অবদান অস্বীকার করা যায় না। এটি শুধুমাত্র তথ্যের যোগানদাতা নয়, বরং একটি সক্রিয় পরিবর্তন সৃষ্টিকারী মাধ্যম। তবে সাংবাদিকতা তার ভূমিকা সফলভাবে পালন করতে পারবে তখনই, যখন এটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং নৈতিক মানদণ্ড অনুসরণ করবে। সাংবাদিকতার উন্নয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সার্বিক অগ্রগতি ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর শক্তিশালীকরণ সম্ভব।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় মাস্টার্স (ব্যাচ ২০২১), পিআইবি।

জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২৭ অপরাহ্ণ
জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

জয়ে এশিয়া কাপ শুরু করল বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে হংকংকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। হংকংয়ের ১৪৩ রানের জবাবে ১৭ ওভার ৪ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
রানতাড়ায় নেমে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২৪ রান। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে পারভেজ হোসেন ইমন ১৪ বল ১৯ রান করে ফিরে গেলে জুটি ভাঙে। ৫.৪ ওভারে ৪৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তানজিদ তামিম ফেরেন ১৮ বলে ১৪ রান করে।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে লিটন ও হৃদয় মিলে ৭০ বলে ৯৫ রান যোগ করেন। জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে লিটন বোল্ড হয়ে ফিরে যান। ৬ চার ও এক ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৯ রান করেন। পরে জাকের আলি অনিককে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন হৃদয়। ১ চারে ৩৬ বলে ৩৫ রান করেন হৃদয়। রানের খাতা খোলার সুযোগ পাননি জাকের।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান সংগ্রহ করেছে হংকং। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংস খেলেছেন নিজাকাত খান। টাইগারদের পক্ষে সবচেয়ে সফল তানজিম হাসান সাকিব ২১ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেছেন। এ ম্যাচে জয় তুলে নিতে ওভারপ্রতি ৭.২০ রান করতে হবে টাইগারদের।
এদিন টস জিতে ফিল্ডিং করতে নেমে শুরু থেকে হংকংকে চাপে রেখেছিল টাইগার বোলাররা। দলের খাতায় ৩০ রান যোগ করতে ২ উইকেট হারায় তারা। বাংলাদেশকে প্রথম উইকেটটি এনে দেন তাসকিন আহমেদ। ৫ বলে ৪ রান করে টাইগার পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে কট বিহাইন্ড হন আনশুমান রাথ। আম্পায়ার যদিও শুরুতে সাড়া দেননি, রিভিউ নিয়ে উইকেটটি আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। এরপর দারুণ এক ডেলিভারিতে ১২ বলে ১৪ রান করা বাবর হায়াতকে বোল্ড করেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে হংকং। জিশান আলী ও নিজাকাত খানের ৪১ রানের জুটি শেষমেশ ভাঙেন তানজিম সাকিব। তার বাউন্সার জায়গা নিয়ে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে তুলে দেন ওপেনার জিশান। ৩৪ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রানে থামে তার ইনিংস। চতুর্থ উইকেটে নিজাকাত ও ইয়াসিম মুর্তজা হতাশায় ভোগান টাইগার বোলারদের।
অনেক চেষ্টা করেও উইকেটের দেখা মিলছিল না। শেষমেশ ১৮তম ওভারে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে ভাঙে হংকংয়ের চতুর্থ জুটি। ১৯ বলে ২ ছক্কা ও ২ চারের মারে ২৮ রান করে রান আউট হন মুর্তজা। ততক্ষণে তারা দলের সংগ্রহ শতরান পার করে দেন। অন্যদিকে ৪০ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ রান করে ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে রিশাদ হোসেনের শিকার হন নিজাকাত। পরের বলেই ক্রিজে নেমে টাইগার রিস্ট স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হন কিঞ্চিৎ শাহ।
শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রানে থামে হংকংয়ের ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন, তানজিম সাকিব ও রিশাদ।

স্থূলতা তরুণদের কতটা ক্ষতি করছে?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২০ অপরাহ্ণ
স্থূলতা তরুণদের কতটা ক্ষতি করছে?

বর্তমান সময়ের জীবনযাত্রা বিগত এক দশকের থেকে অনেকটাই আলাদা। এখন সবাই নিজের কাজ নিয়ে দারুণ ব্যস্ত। আর এই ব্যস্ততার প্রভাব দেখা যায় আমাদের স্বাস্থ্যেও বিশেষ করে তরুণদের মাঝে। প্রসেসড খাবার, ডিজিটাল জীবনযাপন ও শারীরিক সক্রিয়তার ঘাটতি মিলিয়ে তরুণদের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে স্থূলতা। আর এই স্থূলতা কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য বা ওজনের বিষয় নয়, বরং ডেকে আনছে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি।
হিন্দুস্তান টাইমস নয়াদিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. পিয়ুষ রঞ্জন জানান, স্থূল কিশোররা ভবিষ্যতে মারাত্মক লিভার রোগের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তার মতে, ভারতে কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার রোগের হার প্রায় ৩৮ শতাংশ। এদের অনেকেই পরবর্তীতে সিরোসিস কিংবা লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে।
স্থূলতার ঝুঁকি: ডা. রঞ্জনের মতে, চিকিৎসাবিহীন স্থূলতা ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে—কোলন, অগ্ন্যাশয়, খাদ্যনালী, স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার। তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিক ওজনের তুলনায় স্থূল মানুষের লিভার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। বিভিন্ন গবেষণায় ঝুঁকির মাত্রা ভিন্ন হলেও, স্থূলতা ও লিভার জটিলতার সম্পর্ক স্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
প্রতিরোধের উপায়: তরুণ প্রজন্মকে এই ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে ডা. রঞ্জন কয়েকটি প্রতিরোধমূলক পরামর্শ দিয়েছেন—
> সুস্থ জীবনধারা গড়ে তোলা।
> তেল–চর্বিযুক্ত ও উচ্চ-ক্যালরির খাবার এড়িয়ে চলা।
> অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত কার্বোহাইড্রেট কম খাওয়া।
> নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এবং স্থূলতার ঝুঁকি কমাবে।
তরুণদের মধ্যে স্থূলতার হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, যা শুধু আজকের নয়, ভবিষ্যতেরও ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। ডা. পিয়ুষ রঞ্জনের পরামর্শ স্পষ্ট সুস্থ জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এখনই সচেতন হলে কেবল ডায়াবেটিস, ক্যানসার বা লিভারের রোগই নয়, অসংখ্য জটিলতা থেকে নিজেদের বাঁচানো সম্ভব।

ডিজিটাল প্রতারণায় কয়েক কোটি টাকা খোয়ালেন ভারতীয় নারী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:১১ অপরাহ্ণ
ডিজিটাল প্রতারণায় কয়েক কোটি টাকা খোয়ালেন ভারতীয় নারী

অঞ্জলির (ছদ্মনাম) এই দুঃস্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল একটা ফোন কলের মাধ্যমে। যার জন্য শেষপর্যন্ত তাকে পাঁচ কোটি পঁচাশি লাখ টাকা খোয়াতে হয়। ওই ফোন কলের সময় অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজেকে একটা কুরিয়ার সংস্থার কর্মচারী বলে পরিচয় দিয়ে দাবি করেছিলেন, মুম্বাই কাস্টমস বেইজিংয়ে পাঠানোর সময় অঞ্জলির একটা পার্সেল বাজেয়াপ্ত করেছে। ওই পার্সেলে মাদক পাওয়া গেছে।
গুরুগ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলি বাস্তবে ডিজিটাল অ্যারেস্ট নামে সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। এতে অভিযুক্তরা ভিডিও কল করে নিজেদের ভারতের আর্থিক তদারকি প্রতিষ্ঠান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির কর্মকর্তা বলে দাবি ফাঁদে ফেলে।
এর জন্য প্রতারকরা সাধারণত ভুক্তভুগীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তুলে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার বা পরিবারের বাকি সদস্যদের ক্ষতি করার হুমকি দেয়। এভাবে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অঞ্জলিকে টানা পাঁচ দিন ধরে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে রাখা হয়েছিল। স্কাইপ কলের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি রেখে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল; যাতে তিনি টাকা ট্রান্সফার করতে বাধ্য হন।
অঞ্জলির কথায়, এরপর আমার মাথা কাজ করা বন্ধ দেয়। অসাড় হয়ে গিয়েছিলাম। যতক্ষণে ওই ফোনকল বন্ধ হয়, ততদিনে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন অঞ্জলি, নিজের সমস্ত সম্পত্তিও খুইয়েছেন।