খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের বিরোধী : ফিরে আসবে ভয়ের সংস্কৃতি

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:৫২ অপরাহ্ণ
মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের বিরোধী : ফিরে আসবে ভয়ের সংস্কৃতি

মানব সভ্যতার অগ্রগতি ও বিকাশের প্রধান চালিকা শক্তি হলো মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। গণতান্ত্রিক ও উদারনৈতিক সমাজব্যবস্থা এই দুই মূলনীতির ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে। ইতিহাস সাক্ষী, যখনই মুক্তচিন্তার উপর দমননীতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তখনই সমাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে, বিজ্ঞান, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আধুনিক যুগেও বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজে মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দমনমূলক সংস্কৃতি পুনরায় ফিরে আসছে। ভয় ও নিপীড়নের এই সংস্কৃতি ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নতুন কোনো ধারণা নয়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বিভিন্ন সময় এই অধিকার রক্ষার জন্য ব্যক্তি ও সমাজকে বিরাট মূল্য দিতে হয়েছে। প্রাচীন গ্রিসে সক্রেটিস মুক্তচিন্তার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু তার অনুসন্ধিৎসু মনোভাব ও প্রচলিত বিশ্বাসকে প্রশ্ন করার ক্ষমতা শাসকদের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। ফলে, তাকে হেমলক বিষপান করিয়ে হত্যা করা হয়। রেনেসাঁ যুগে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলেই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতার মুখে পড়েন, কারণ তিনি সূর্যের চারদিকে পৃথিবী ঘোরে এই বৈজ্ঞানিক সত্য প্রচার করেছিলেন। তাকে বাধ্য করা হয়েছিল নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করতে, যা মুক্তচিন্তার বিরুদ্ধে দমননীতির একটি অন্যতম দৃষ্টান্ত।
মুক্তচিন্তা হলো এমন একটি মানসিক প্রবণতা, যেখানে ব্যক্তি নিজস্ব যুক্তি, অভিজ্ঞতা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশ্বাস ও মতামত গড়ে তোলে, বাইরের চাপ বা প্রচলিত মতামতের উপর নির্ভর না করে। অন্যদিকে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হলো সমাজের যে কোনো বিষয় নিয়ে দ্বিধাহীনভাবে মতামত প্রকাশ করার অধিকার, যা ব্যক্তি ও গণমাধ্যম উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। এই দুই নীতির গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তি যখন মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারে, তখনই নতুন নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের পথ উন্মোচিত হয়। আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকলে গণতন্ত্র সুসংহত হয়, কারণ জনগণ সরকারের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলতে পারে এবং সমাজের বিভিন্ন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারে।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে ও সমাজে মুক্তচিন্তার বিরোধী শক্তিগুলো আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই প্রবণতার পেছনে কাজ করছে— স্বাধীন মতপ্রকাশ ও মুক্তচিন্তা সবসময়ই স্বৈরাচারী শাসকদের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কারণ গণতান্ত্রিক পরিসরে প্রশ্ন তোলা হলে তাদের কর্তৃত্ব দুর্বল হয়। ফলে, তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করে— যেমন, বিরোধী মত দমন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংকুচিত করা এবং ডিজিটাল নজরদারির মাধ্যমে নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণ করা। মুক্তচিন্তা অনেক সময়ই ধর্মীয় গোঁড়ামি ও রাজনৈতিক উগ্রবাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। বিভিন্ন দেশে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দল বা প্রভাবশালী ধর্মীয় গোষ্ঠী মুক্তচিন্তার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করে, মুক্তচিন্তকদের অনৈতিক বা অবিশ্বাসী বলে আক্রমণ করে। ফলস্বরূপ, সমাজে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যেখানে মানুষ মুক্তভাবে চিন্তা ও মতপ্রকাশ করতে সাহস পায় না। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সামাজিক মাধ্যম মুক্ত মতপ্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। কিন্তু একইসঙ্গে এটি ভুল তথ্য প্রচার ও মতপ্রকাশ নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক সরকার ও রাজনৈতিক দল সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রল বাহিনী নিয়োগ করে মুক্তচিন্তকদের হেনস্তা করে, তাদের মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত করে দেয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অন্যতম মাধ্যম হলো গণমাধ্যম। কিন্তু অনেক দেশে সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন, হত্যার হুমকি এবং গ্রেফতারের মতো ঘটনাগুলো ঘটছে। এর ফলে, সাংবাদিকরা সাহসী প্রতিবেদন প্রকাশ করতে ভয় পায় এবং স্বাভাবিকভাবেই সমাজের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন থেকে যায়। ভয়ের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার অন্যতম পদ্ধতি হলো জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। যখন নাগরিকরা দেখে যে, সরকারের সমালোচনা করলে কারাবরণ বা আক্রমণের শিকার হতে হয়, তখন তারা নিজেদের মতপ্রকাশ করা থেকে বিরত থাকে। এভাবে, ক্ষমতাসীনরা এক ধরনের স্ব-নিয়ন্ত্রিত নিপীড়নব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়।
ভয়ের সংস্কৃতি ও সমাজের উপর প্রভাব : মুক্তচিন্তার দমন এবং ভয়ের সংস্কৃতির বিস্তার সমাজের উপর বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে—যে সমাজে মুক্তচিন্তা নেই, সেখানে বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন ও প্রযুক্তির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করার পরিবেশ না থাকলে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সৃজনশীল হয়ে উঠতে পারে না, ফলে সামগ্রিক অগ্রগতি শ্লথ হয়ে যায়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র কার্যকর থাকে না। যখন জনগণের কণ্ঠরোধ করা হয়, তখন শাসকদের জবাবদিহিতা কমে যায় এবং একনায়কত্বের পথ সুগম হয়। ভয়ের সংস্কৃতি সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে জনগণ তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারে না, ফলে ক্ষোভ জমতে জমতে একসময় সহিংসতায় রূপ নেয়। মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের দমন মানবাধিকারের অন্যতম গুরুতর লঙ্ঘন। এটি ব্যক্তি স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ কমিয়ে দেয় এবং সামগ্রিকভাবে সমাজকে দমনমূলক ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দেয়।
মুক্তচিন্তা রক্ষার উপায় : মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে—গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুসংহত থাকলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করা সহজ হয়। শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে হবে এবং সংবাদপত্র ও অনলাইন মাধ্যমের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ কমাতে হবে। একটি সমাজে মুক্তচিন্তা বিকাশের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্তিবাদ, আলোচনা ও বিতর্কের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য নাগরিকদের সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজন হলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মানবাধিকার সংগঠন ও বুদ্ধিজীবীদের এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানেও মতপ্রকাশের অধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশে এই অধিকার সংকুচিত করা হচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি। বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপট ১. চীন : চীনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। ইন্টারনেট সেন্সরশিপ (গ্রেট ফায়ারওয়াল) এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করার জন্য সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৮৯ সালের তিয়েনআনমেন স্কয়ার গণহত্যার কথা উল্লেখ করা নিষিদ্ধ, এবং যারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলে, তাদের জেলে পাঠানো হয়। ২. রাশিয়া : রাশিয়ায় ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাধীন সাংবাদিক ও বিরোধী নেতারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বা কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। রাষ্ট্রীয় প্রচারণার মাধ্যমে ভিন্নমতকে দমন করা হয়। ৩. মধ্যপ্রাচ্য : মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কারণে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয় এবং গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ৪. বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপমহাদেশ : বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে ব্লগার, লেখক ও সাংবাদিকদের উপর হামলা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন দমনমূলক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মতপ্রকাশের সুযোগ সীমিত করা হচ্ছে।
ভয়ের সংস্কৃতির চক্র, ভয়ের সংস্কৃতি ধাপে ধাপে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপ : সরকার বা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ভিন্নমতের বিরুদ্ধে প্রচার চালায়। দ্বিতীয় ধাপ : স্বাধীন সাংবাদিক, লেখক, মানবাধিকার কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। তৃতীয় ধাপ : সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে তারা সাহস করে কিছু বলতে না পারে। চতুর্থ ধাপ : রাষ্ট্রীয় নীতিতে স্বৈরাচারী মনোভাব দৃশ্যমান হয় এবং মতপ্রকাশের সব পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।
মুক্তচিন্তার দমন রোধে করণীয় : আইনের শাসন কার্যকর হলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব। বিচারব্যবস্থা স্বাধীন হলে নাগরিকরা নির্ভয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে জনগণ সত্যিকারের তথ্য পায় এবং সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। শিক্ষায় মুক্তবুদ্ধি ও প্রশ্ন করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যাতে মানুষ চিন্তা করতে শেখে এবং সহজেই প্রভাবিত না হয়। মানবাধিকার সংগঠন, এনজিও, নাগরিক আন্দোলন এসব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আঘাত মানব সভ্যতার অগ্রগতির পথে বিরাট বাধা। ইতিহাসের অভিজ্ঞতা বলে, যখনই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাস পেয়েছে, তখনই সমাজ স্থবির হয়েছে, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি পিছিয়ে গেছে। ভয়ের সংস্কৃতি ধ্বংসাত্মক এবং তা দমন করতে হলে গণতন্ত্র, আইন, শিক্ষা ও নাগরিক সচেতনতার বিকাশ ঘটাতে হবে। মুক্তচিন্তা রক্ষার লড়াই কখনো থামানো যাবে না, কারণ এর উপরই ভবিষ্যৎ নির্ভর করে।
মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একটি সমাজের অন্যতম মৌলিক অধিকার। যখনই এই অধিকার সংকুচিত হয়, তখনই সমাজ পিছিয়ে পড়ে এবং দমনমূলক ব্যবস্থা চালু হয়। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন দেশে মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করছে। তবে, ইতিহাস সাক্ষী যে, জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে দমনমূলক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব। এজন্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা, শিক্ষার প্রসার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই আমরা ভয়কে জয় করে মুক্তচিন্তার সমাজ গড়ে তুলতে পারবো।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।