খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে সাংবাদিকদের ভূমিকা

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫, ৫:৩৭ অপরাহ্ণ
বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে সাংবাদিকদের ভূমিকা

বৈষম্যহীন সমাজ গঠন একটি রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। এটি কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন নয়; এটি ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, ও সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। বাংলাদেশ, একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে, বৈষম্যের নানা রূপের সঙ্গে লড়াই করছে—যেমন অর্থনৈতিক বৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য, ধর্মীয় বৈষম্য এবং শহর-গ্রামের উন্নয়ন বৈষম্য। এই প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের কার্যক্রম কেবল তথ্য সরবরাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তারা সমাজ পরিবর্তনের জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যমও।

সাংবাদিকতার মাধ্যমে বৈষম্যের উৎস চিহ্নিত করা, জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা এবং নীতি-নির্ধারকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। নিচে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে সাংবাদিকদের ভূমিকা বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:

বাংলাদেশের সমাজে বৈষম্যের বিভিন্ন রূপ বিদ্যমান। অর্থনৈতিক বৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য, শিক্ষার অপ্রতুলতা, স্বাস্থ্যসেবার অসমতা, এবং ধর্মীয় ও জাতিগত বৈষম্য—এসব বিষয় নিয়ে সাংবাদিকরা যদি তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদন করেন, তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ ধনী-গরিবের মধ্যে সম্পদের ফারাক প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সংবাদপত্র বা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যদি এই বৈষম্যের মূল কারণ এবং এর প্রভাব তুলে ধরে, তাহলে নীতিনির্ধারকরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। নারী ও পুরুষের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে সুযোগের অপ্রতুলতা, বেতন বৈষম্য এবং নারীর প্রতি সহিংসতা—এসব ইস্যুতে সাংবাদিকরা বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এ বিষয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে সাহায্য করবে। শহরাঞ্চলে যেখানে আধুনিক শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য, সেখানে গ্রামীণ অঞ্চলে এর অভাব প্রকট। সাংবাদিকরা এ বিষয়গুলো তুলে ধরে যদি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তাহলে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।

সাংবাদিকরা জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য জনগণের মধ্যে মানবাধিকার, সমতা এবং সাম্যবাদের ধারণা প্রচার করা অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ  টকশো, ডকুমেন্টারি, ফিচার আর্টিকেল, এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে সাংবাদিকরা সাধারণ মানুষের মধ্যে বৈষম্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে পারেন। সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আছে যারা বৈষম্য দূর করতে কাজ করছে। সাংবাদিকরা তাদের কাজ তুলে ধরে জনগণকে উৎসাহিত করতে পারেন। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা, নীতিমালা, এবং প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা সাংবাদিকদের দায়িত্ব। তারা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে বৈষম্য দূরীকরণের প্রক্রিয়ার ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ সরকারি বাজেট বা প্রকল্পের বরাদ্দ যদি কোনো বিশেষ অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীর পক্ষে থাকে, তবে সাংবাদিকরা এটি প্রকাশ করে সকলের মধ্যে ন্যায়বিচারের দাবি জানাতে পারেন। বৈষম্যের অন্যতম প্রধান কারণ হলো দুর্নীতি। সাংবাদিকরা যদি এই দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্প বা কর্মকর্তাদের উন্মোচন করেন, তাহলে রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা বাড়বে। বাংলাদেশে অনেক প্রান্তিক জনগোষ্ঠী রয়েছে, যেমন- হরিজন, আদিবাসী, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, এবং সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। তাদের সমস্যা, চাহিদা, এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। এই জনগোষ্ঠীগুলোর প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, তা যদি সাংবাদিকরা তুলে ধরেন, তবে তাদের প্রতি সহানুভূতি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সাংবাদিকরা বিশেষ প্রতিবেদনের মাধ্যমে জনমত গঠন করতে পারেন। কর্মজীবী নারীদের অধিকার সংরক্ষণেও সাংবাদিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

সাংবাদিকদের কেবল সমস্যা প্রকাশ করলেই চলবে না; পাশাপাশি তারা নীতিগত সুপারিশ প্রদান করতে পারেন। যেমন- অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমাধানের দিকনির্দেশনা দেওয়া। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য সাফল্যের গল্প তুলে ধরা, যাতে অন্যরা তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়।

বর্তমানে সাংবাদিকরা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বৈষম্যবিরোধী প্রচারণা চালাতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন সংবাদমাধ্যম, এবং পডকাস্টের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো সহজ হয়েছে।বৈষম্যের শিকার মানুষের গল্প যদি সাংবাদিকরা তথ্যপূর্ণ ও আবেগময় উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরেন, তবে তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে সমাজে প্রভাব ফেলতে পারে। বিভিন্ন বৈষম্যের পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে সমস্যার গভীরতা বোঝানো যায়, যা নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করতে পারে।

সাংবাদিকদের কাজ শুধুমাত্র তথ্য প্রচার নয়; তাদের উচিত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজের দুর্বল ও বৈষম্যের শিকার মানুষদের পক্ষে দাঁড়ানো। যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সংকটকালীন সময়ে ত্রাণসামগ্রী বণ্টনে বৈষম্য নিয়ে প্রতিবেদন করা। ধর্ম, জাতি, বা গোষ্ঠীর কারণে বৈষম্যের শিকার মানুষদের কাহিনী তুলে ধরা।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাংবাদিকরা বৈষম্য মোকাবিলার সফল উদাহরণগুলো তুলে ধরতে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে পারে। অন্য দেশে কীভাবে বৈষম্য দূর করার জন্য কাজ করা হচ্ছে, তা তুলে ধরে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের অনুপ্রাণিত করা। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের মতো আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বৈষম্যের নতুন দিক উন্মোচনে সহায়ক হতে পারে।

বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে বৈষম্য এখনো প্রকট। শহরাঞ্চলে যেখানে আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সহজলভ্য, গ্রামীণ এবং দরিদ্র অঞ্চলে শিক্ষার মান অত্যন্ত নিম্ন। সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। সরকারি স্কুলের মান ও বেসরকারি স্কুলের উচ্চতর শিক্ষার সুযোগের মধ্যে বিশাল ফারাক রয়েছে। সাংবাদিকরা যদি এই বৈষম্যের কারণগুলো প্রকাশ করেন এবং সমাধানের প্রস্তাব দেন, তবে তা নীতিনির্ধারকদের চাপ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে এখনো মেয়েদের শিক্ষার প্রতি উদাসীনতা দেখা যায়। সাংবাদিকরা এই ইস্যুতে সচেতনতা তৈরি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। বাংলাদেশের শ্রমজীবী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী নানা বৈষম্যের শিকার। তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলা প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। সাংবাদিকরা তাদের সমস্যা তুলে ধরে সমাধানের রাস্তা খুঁজে বের করতে পারেন। গার্মেন্টস শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা প্রায়ই বেতন বৈষম্য ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার শিকার হন। সাংবাদিকরা এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করলে তা শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার লড়াইকে ত্বরান্বিত করতে পারে। গ্রামীণ ও শহুরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্টিং বৈষম্য দূরীকরণে সরকারের পদক্ষেপকে জোরদার করতে পারে।

বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে প্রকৃত গণতন্ত্র অপরিহার্য। সাংবাদিকরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রচার করে এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে কাজ করতে পারেন। নির্বাচনী অনিয়ম, দুর্নীতি, ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করলে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সমাজে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা প্রায়ই কঠিন হয়। সাংবাদিকরা নির্ভীকভাবে সত্য কথা তুলে ধরে জনগণের কণ্ঠস্বর হতে পারেন।

বাংলাদেশে পরিবেশগত বৈষম্যও গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। শহরের উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে গ্রামীণ পরিবেশ প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদী দূষণ, বন উজাড়, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে কাজ করতে পারেন সাংবাদিকরা। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অনেক মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। তাদের জীবনযাত্রার বাস্তবতা তুলে ধরলে বৈষম্যের চিত্র পরিষ্কার হবে। শিল্প কারখানার কারণে নদী দূষণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করলে সরকার ও জনগণ সচেতন হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে, যা বৈষম্য সৃষ্টি করে। সাংবাদিকরা এই ধরনের ইস্যুতে নিরপেক্ষ ও সাহসী ভূমিকা পালন করতে পারেন। সাংবাদিকরা যদি বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর উদ্যোগে কাজ করেন, তবে সমাজে সহিংসতার আশঙ্কা কমবে। সাংবাদিকরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে সহিংসতার আসল কারণ বের করে জনসচেতনতা বাড়াতে পারেন। বাংলাদেশের অনেক মানুষ আইন সম্পর্কে সচেতন নয়। ফলে তারা বৈষম্যের শিকার হলেও আইনি সহায়তা নিতে পারে না। সাংবাদিকরা আইন ও অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারেন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কীভাবে সহজে আইনি সহায়তা নিতে পারে, তা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা।

বৈষম্য নিয়ে কাজ করতে হলে সাংবাদিকদেরও প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সাংবাদিকদের উচিত নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করার দক্ষতা অর্জন করা। সংবাদ পরিবেশনের সময় নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা বজায় রাখা জরুরি, যাতে সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য সফল হয়।

বাংলাদেশে বৈষম্য দূরীকরণে সাংবাদিকদের ভূমিকা সীমাহীন। তারা সমাজের অসাম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে একটি নির্ভীক কণ্ঠস্বর। সাংবাদিকতার মাধ্যমে বৈষম্য চিহ্নিত করা, জনগণকে সচেতন করা এবং নীতিনির্ধারকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব। তবে এটি করতে হলে সাংবাদিকদের অবশ্যই তথ্যভিত্তিক, নৈতিক এবং মানবিক হতে হবে। এভাবে সাংবাদিকরা বৈষম্যহীন, সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক একটি বাংলাদেশ গড়ার পথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যেখানে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের নিরপেক্ষ, নৈতিক এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করে, বৈষম্যের মূল কারণ চিহ্নিত করে, এবং সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। একই সঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় সাংবাদিকদের অবদান বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের পথকে সুগম করে। একজন দক্ষ সাংবাদিকের কাজের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব, যা একটি সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশের ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

লেখক পরিচিতি: উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।