খুঁজুন
                               
মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ, ১৪৩২

ফরিদগঞ্জের চাচার হাতে ভাতিজা খুন, আটক ৩

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ১০:৩২ অপরাহ্ণ
ফরিদগঞ্জের চাচার হাতে ভাতিজা খুন, আটক ৩

ফরিদগঞ্জের চাচার হাতে ভাতিজা খুন এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। প্রবাসে নেয়ার নামে আদম ব্যবসার ঘটনা এবং এ নিয়ে মামলা-মোকাদ্দমা, হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা চলছিলো অহরহ। স্থানীয়ভাবে, থানা ও আদালতে এমনকি প্রবাসেও চলে দেনদরবার। কিন্তু এই টাকার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফরিদগঞ্জের সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামে নির্মম ঘটনা ঘটলো। একই বাড়ির চাচা হাসান জবাই করে হত্যা করলো ভাতিজা বাহার হোসেন বাবু (২৪)কে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তের বন্যা বয়ে যায় বড়গাঁও গাজী বাড়িতে। ছেলে বাবুকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয় নিহতের বাবা রওশন আলী (৫৫) ও সহোদর আরমান হোসেন (২৭)। এদের মধ্যে রওশন আলী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ও আরমান ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা গণধোলাই দিয়ে ঘাতক হাসান (৪৫)কে আটক করে পরবর্তীতে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। অন্যদিকে ঘাতক হাসানের ছেলে সাকিল পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতা তাকে আটক করে। ঘটনাটি সোমবার (১১ আগস্ট ২০২৫) দুপুর আড়াইটার দিকে ঘটে। আরেক ঘাতক রাকিব হোসেন (১৯) পালিয়ে গেছে। এদিকে ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ কয়েক হাজার জনতা ঘাতকের বাড়ি ঘিরে রাখে। হাজার হাজার লোকজনকে নিয়ন্ত্রণ করতে বাড়তি পুলিশ ফোর্স, সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। তারপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, অতিরিক্ত পুলিশ (সার্কেল) মুকুর চাকমা, ওসি মোহাম্মদ শাহ আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এই ঘটনায় এই পর্যন্ত ৩ জন আটক রয়েছে বলে জানা গেছে। এরা হলেন : হাসান গাজী, তার ছেলে সাকিল গাজী ও পুত্রবধূ সুমাইয়া আক্তার। অন্যদিকে আরেক ঘাতক রাকিব পলাতক রয়েছে। পরিবারের বরাত দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ওবায়দুল হক জানান, বড়গাঁও গ্রামের গাজী বাড়ির প্রবাসী হাসানের সাথে একই বাড়ির বাসিন্দা বাহার হোসেন বাবুর বিদেশে পাঠানোর টাকা নিয়ে লেনদেন ছিলো। গত প্রায় একমাস পূর্বে বাবুু ওমান থেকে দেশে আসলে হাসানের সাথে বিরোধ বাঁধে। এ নিয়ে এলাকায় কয়েক দফা সমঝোতা বৈঠক হলেও সমাধান হয়নি। সোমবার (১১ আগস্ট ২০২৫) পুনরায় সমঝোতা বৈঠক হওয়ার কথা ছিলো। এরই মধ্যে হাসান দুপুরে বাবুকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে অন্য সহযোগীদের সহযোগিতায় নিজের ঘরের সামনে ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করে। এ সময়ে বাবুকে বাঁচাতে তার সহোদর আরমান হোসেন গাজী ও তার বাবা রওশন আলী গাজী এগিয়ে আসলে ঘাতক হাসান, তার ছেলে রাকিব, সাকিল ও তার পুত্রবধূ সুমাইয়া তাদের উপর হামলা করে। এ সময় আরমানের বুকে ছুরিকাঘাত ও রওশন আলীকে মাথায়সহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। ঘটনা প্রকাশ পেলে স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে হাসানকে আটকে রেখে পুলিশে সোপর্দ করে। এছাড়া ঘাতক সাকিল পালিয়ে যাওয়ার সময় মুন্সিরহাট এলাকা থেকে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

নিহত বাবুর স্ত্রী রেখা আক্তার বলেন, আমার স্বামীকে হাসান কাকা বিদেশে নিয়েছিল। তার সাথে চুক্তি অনুযায়ী পুরো টাকাই দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি বাড়তি টাকা দাবি করে। আমার ছেলেকে দেখতে গত একমাস পূর্বে প্রবাস থেকে বাড়ি আসে স্বামী। এরপর থেকে হাসান কাকা ও তার ছেলেরা আমার স্বামীকে বিভিন্ন জায়গায় কথিত পাওনা টাকা চেয়ে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিল। এ নিয়ে সামাজিকভাবে কয়েকবার বৈঠকও হয়েছিলো। কিন্তু হাসান কাকারা বৈঠকের সিদ্ধান্ত মানেননি। সোমবার (১১ আগস্ট ২০২৫) দুুপুরে সালিসি বৈঠকের কথা বলে আমার স্বামীকে হাসান কাকাদের ঘরের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আমার স্বামীকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হাসান কাকাসহ অন্যরা জবাই করে হত্যা করে। তার ডাক চিৎকারে আমার ভাসুর আরমান গাজী ও শ্বশুর রওশন আলী দৌড়ে সেখানে গেলে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, এই ঘটনায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনী প্রক্রিয়া চলছে।

শেরপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা ও সারাদেশে সাংবাদিক হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাকিবুল আওয়াল পাপুল, শেরপুর জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৩৬ অপরাহ্ণ
শেরপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা ও সারাদেশে সাংবাদিক হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তায় দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে নৃশংস ভাবে হত্যা ও সারাদেশে সাংবাদিকদের উপর হামলা, নির্যাতন,হুমকি ও হয়রানি মূলক মামলার প্রতিবাদ ও তুহিন হত্যা জড়িতদের দ্রুত দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবীতে শেরপুর প্রেসক্লাবের আয়োজনে মানববন্ধন অনষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার(১০আগষ্ট)দুপুর ১২ টায় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কাকন রেজার সভাপতিত্বে প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন সোহেলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন,প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান বাদল,সিনিয়র সহসভাপতি মুগনিউর রহমান মনি, সিনিয়র সাংবাদিক জিএম বাবুল, সিনিয়র সাংবাদিক দেবাশীষ সাহা রায়, দপ্তর সম্পাদক নাঈম মিয়া,সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক মনিরুজ্জামান রিপন ও সাংবাদিক জাহিদুল হক মনির প্রমূখ। ট
এসময় শেরপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন, প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হানিফ, কোষাধক্ষ্য জুবাইদুল ইসলাম ও কার্য়কারী সদস্য শাহরিয়ার শাকির সহ জেলা ও উপজেলা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা সাংবাদিক তুহিন হত্যায় জড়িতদের ফাঁসির দাবী জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে বিভিন্ন জায়গায় হামলা মামলার শিকার হয়। সাগর রুনির মত অনেককেই হত্যার বিচার দীর্ঘায়িত হচ্ছে । এসব হত্যার ঘটনায় বিচারের নামে শুধুমাত্র তদন্ত ও ট্রায়াল চলে। একারণে তুহিন হত্যাকারীদের বিচারের নামে কোন ট্রায়াল না করে সরাসরি শাস্তির দাবী জানান বক্তারা ।

ভোক্তা অধিকার : আমরা কতটা সচেতন?

মায়েদা হোসেন সাফি
প্রকাশিত: সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৩৩ অপরাহ্ণ
ভোক্তা অধিকার : আমরা কতটা সচেতন?

আমরা সবাই জীবনের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত পণ্য ও সেবা গ্রহণ করি। কেউ বাজার থেকে খাদ্যসামগ্রী কিনছেন, কেউ আবার কিস্তিতে ইলেকট্রনিক পণ্য, আবার কেউ চিকিৎসা বা শিক্ষাসেবাও গ্রহণ করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব পণ্য ও সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে আমরা কি জানি আমাদের কী কী অধিকার রয়েছে? আমরা কি জানি, প্রতারণার শিকার হলে কোথায় অভিযোগ করতে হয়, অথবা আমাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে কী ধরনের আইনি সহায়তা পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে “ভোক্তা” বলতে সেই ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছাড়া, শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ব্যবহারের জন্য কোনো পণ্য ক্রয় বা সেবা গ্রহণ করেন। অর্থাৎ, আপনি যদি নিজের জন্য খাদ্য, জামাকাপড়, ওষুধ বা যেকোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে থাকেন এবং তা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে না হয়ে থাকে, তাহলে আপনি আইনত একজন “ভোক্তা”। এমনকি কেউ আত্মকর্মসংস্থান বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে ছোট পরিসরে কোনো পণ্য ব্যবহার করলেও তিনি ভোক্তার সংজ্ঞায় পড়তে পারেন।ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে “ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন” প্রণয়ন করে। এই আইনের অধীনে কিছু কার্যক্রম অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়, যেমন—ভেজাল বা মানহীন পণ্য সরবরাহ, মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পণ্য বা সেবা না দেওয়া, কম ওজনে পণ্য সরবরাহ, মেয়াদোত্তীর্ণ বা ক্ষতিকর দ্রব্য বিক্রি ইত্যাদি। এমনকি পণ্যের গায়ে সঠিক মূল্য না লেখা বা সঠিক তথ্য গোপন করাও ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে।স্বভাবত বাজার নিয়ন্ত্রণকারী বা বাজারে ব্যবসা করা ব্যক্তিরা অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকেন। বিপরীতে ভোক্তারা থাকেন তুলনামূলকভাবে অসহায় অবস্থায়। অন্যদিকে, ব্যবসায়িরা সংগঠিত হলেও ভোক্তারা সাধারণত অসংগঠিত থাকেন।কোনো প্রতারণা বা অসততাকে, যা মানুষের অধিকার খর্ব করে, তার ব্যাপকতা নিয়ে চলতে দেওয়া যায় না। ভোক্তা অধিকারকে মানবাধিকারের ধারণা থেকে আলাদা করা যায় না। এটি সামাজিক ন্যায়বিচারেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।আমেরিকার ভোক্তা আন্দোলনের পুরোধা রালফ নাদের-এর মতে, “ভোক্তা হচ্ছে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি”।যদি কোনো ভোক্তা এসব অনিয়মের শিকার হন, তাহলে তিনি সরাসরি অভিযোগ করতে পারেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। অভিযোগ করার জন্য রয়েছে কয়েকটি সহজ উপায়। প্রথমত, িি.িফহপৎঢ়.মড়া.নফ ওয়েবসাইটে গিয়ে সরাসরি অভিযোগ দাখিল করা যায়। দ্বিতীয়ত, মোবাইল ফোন থেকে ১৬১২১ নম্বরে কল করে অভিযোগ জানানো সম্ভব। তৃতীয়ত, এড়ড়মষব চষধু ঝঃড়ৎব থেকে “ঈঈগঝ” নামে একটি মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করে সেখান থেকেও অভিযোগ করা যায়।অভিযোগ করার আগে ভোক্তাকে প্রথমে ওয়েবসাইটে বা অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর অভিযোগের বিস্তারিত তথ্য লিখে, প্রয়োজনে রশিদ, ছবি বা ভিডিওসহ প্রমাণ সংযুক্ত করে তা দাখিল করা যায়। প্রতিটি অভিযোগের জন্য নির্ধারিত ট্র্যাকিং নম্বর দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে অভিযোগের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা যায়। আইন অনুযায়ী, অভিযোগ নিষ্পত্তির সর্বোচ্চ সময়সীমা ৬০ কার্যদিবস। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভোক্তা পণ্যের মূল দামের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।
দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ত্রয়োদশ অধ্যায়ে “ওজন ও মাপকাঠি সংক্রান্ত অপরাধ” নিয়ে ধারা ২৬৪ থেকে ২৬৭ পর্যন্ত বিধান রয়েছে। এ অধ্যায় ভোক্তাদের সঠিক পরিমাণে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা যন্ত্র বা মাপকাঠি ব্যবহারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রণীত।ধারা ২৬৪ অনুসারে, যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে ওজন করার জন্য মিথ্যা যন্ত্র প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহার করে, সে ব্যক্তি এক বৎসর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ অপরাধ প্রমাণের জন্য প্রমাণ করতে হবে যে— (ক) অভিযুক্ত ব্যক্তি অপ্রকৃত যন্ত্র ব্যবহার করেছেন, (খ) তা ওজন মাপার যন্ত্র ছিল, (গ) অভিযুক্ত জানতেন যে যন্ত্রটি মিথ্যা, এবং (ঘ) তিনি তা প্রতারণামূলকভাবে দখলে রেখে ব্যবহার করেছেন। এই অপরাধ আমলযোগ্য নয়, সমনযোগ্য, জামিনযোগ্য, আপসযোগ্য নয় এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচারযোগ্য।ধারা ২৬৫-এ বলা হয়েছে, যদি কেউ প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা ওজন, দৈর্ঘ্য বা ধারণক্ষমতা মাপ ব্যবহার করে, অথবা কোনো ওজন বা মাপকাঠিকে অন্য ধরনের ওজন বা মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করে, তবে তিনি একইভাবে এক বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।ধারা ২৬৬ অনুযায়ী, যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে মিথ্যা ওজন বা মাপের যন্ত্র, বাটখারা বা দৈর্ঘ্য/পরিমাণ মাপার মাপকাঠি নিজের দখলে রাখেন, যাতে তা প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, তিনি এক বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।ধারা ২৬৭-এ বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে মিথ্যা বাটখারা, মাপকাঠি বা ওজন করার যন্ত্র তৈরি, বিক্রয় বা লেনদেন করেন, যা প্রকৃত হিসাবে ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে, তিনি একইভাবে এক বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।এসব বিধান ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এগুলো বাজারে সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতারণা প্রতিরোধ করে এবং ন্যায়সঙ্গত বাণিজ্যিক পরিবেশ গড়ে তোলে।
এই আইন সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শুধুমাত্র প্রতারিত ভোক্তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এর মাধ্যমে পুরো বাজার ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল রাখা সম্ভব হয়। ব্যবসায়ীরা জানেন যে, ভোক্তারা প্রয়োজনে অভিযোগ করতে পারবেন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এই সচেতনতা ও আইনি চাপের কারণে তারা মানসম্মত পণ্য ও সেবা সরবরাহ করতে বাধ্য হন। এর ফলে ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য বাজার থেকে ধীরে ধীরে কমে আসে।একই সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি হয়, যেখানে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হলে মান বজায় রাখা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। এর প্রভাব পড়ে ভোক্তার আস্থায়—মানসম্মত সেবা পেয়ে ভোক্তারা বাজার ব্যবস্থার প্রতি আরও বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন, যা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে বুঝতে শেখেন যে প্রতারণা মেনে নেওয়া কোনো সমাধান নয়; বরং আইনগত প্রতিরোধই হলো সঠিক পথ।মানুষকে ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য প্রথমেই শিক্ষাক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে ভোক্তা অধিকার এবং প্রাসঙ্গিক আইন অন্তর্ভুক্ত করা হলে শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই নিজের অধিকার ও করণীয় সম্পর্কে অবগত হবে। শিক্ষার পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা, ফেসবুক এবং ইউটিউবের মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক তথ্য মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।এছাড়া কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনাও কার্যকর। গ্রাম, বাজার কিংবা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সেমিনার, কর্মশালা এবং সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সরাসরি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য দেওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে পণ্য বিক্রির স্থান, দোকান ও সুপারশপে ভোক্তার অধিকার এবং অভিযোগ জানানোর ঠিকানা সম্বলিত প্রচারপত্র ও পোস্টার টাঙালে ক্রেতারা সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন। এভাবে বহুমুখী উদ্যোগের মাধ্যমে ধীরে ধীরে একটি সচেতন ভোক্তা সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।বাংলাদেশে ভোক্তারা নানা উপায়ে প্রতারিত হচ্ছেন, যার বাস্তব চিত্র আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন, ঢাকার একাধিক মিষ্টির দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ দুধ ব্যবহার করে মিষ্টি তৈরির ঘটনা ধরা পড়ে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারত। অভিযানে এসব দোকানকে জরিমানা করা হয় এবং ভোক্তারা তাৎক্ষণিক প্রতিকার পান। একইভাবে এক ভোক্তা অভিযোগ করেন, তিনি ৫০০ গ্রাম গুঁড়ো দুধ কিনলেও তাতে ওজন ছিল মাত্র ৪৮০ গ্রাম; অভিযোগের ভিত্তিতে দোকানদারকে জরিমানা করা হয়।এছাড়া ভুল তথ্যযুক্ত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও ভোক্তারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। একটি প্রসাধনী কোম্পানি বিজ্ঞাপনে দাবি করেছিল যে তাদের ক্রিমে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক নেই, কিন্তু পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় এতে ত্বকের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। ভোক্তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা এবং পণ্য প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। গ্রামীণ অঞ্চলেও প্রতারণার শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, এক ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়ে, পরে ওষুধ জব্দ করে দোকানকে জরিমানা করা হয়। এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে ভোক্তাদের সচেতনতা ও আইন প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতারণা রোধ সম্ভব।বর্তমানে অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটা কর্মব্যস্ত মানুষের জন্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে বাজারে গিয়ে কেনাকাটার জন্য আলাদা সময় দেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। এতে সময় ও শ্রম—দুটোই বাঁচছে। তবে কিছু অনলাইন পেজ ও দোকান এই সুবিধাভোগী মানসিকতার সুযোগ নিচ্ছে। তারা ক্রেতাদের প্রতিশ্রুত পণ্য না দিয়ে ভেজাল, নষ্ট, নকল বা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য সরবরাহ করছে, যা ভোক্তাদের অধিকারকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই আমাদের উচিত এই ধরনের প্রতারক অনলাইন পেজ ও দোকানের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়া। আমাদের সক্রিয় পদক্ষেপই পারে আমাদের নিজেদের এবং আমাদের আশেপাশের মানুষের অধিকারকে সুরক্ষিত রাখতে।ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো আজকের সময়ের দাবি। অনেকেই এখনও জানেন না তাদের অধিকার কী, কিংবা কোথায় গেলে সঠিক প্রতিকার মিলবে। ফলে ব্যবসায়ী বা সেবা প্রদানকারীরা অনেক সময় ভোক্তাদের অধিকার লঙ্ঘন করে পার পেয়ে যান। সচেতনতা বাড়াতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভোক্তা অধিকার বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা জোরদার করা দরকার।
পরিশেষে বলা যায়, একজন ভোক্তা শুধু একজন ক্রেতা নয়, বরং দেশের বাজার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একজন সচেতন ভোক্তা যেমন নিজের অধিকার রক্ষা করতে সক্ষম, তেমনি সে অন্যদেরও সচেতন করতে পারেন। তাই পণ্য বা সেবা গ্রহণে প্রতারিত হলে চুপ না থেকে, আইনের আশ্রয় নেওয়া জরুরি। কারণ, শক্তিশালী ভোক্তা সমাজই পারে একটি ন্যায্য ও সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে।আসুন, আমি, আপনি, আমরা সচেতন হই। আমরা সচেতন হলে এই সমাজ, মানুষ সচেতন হবে। দুর্নীতি বন্ধ হবে, স্বচ্ছতা আসবে, জবাবদিহিতা বাড়বে। শুধুমাত্র একজন ভোক্তা হিসেবে নয়, সমাজের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের অধিকার যেমন আছে, তেমনি অন্য কারো অধিকার রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব। আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করি। সমাজের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সাধারণ জনগণের অধিকার লঙ্ঘন করে লাভবান হতে না পারে এবং যেন তারা সিন্ডিকেট করে পেরে উঠতে না পারে, তাই আমরা সবাই যেন সচেতন থাকি।

লেখক পরিচিতি : মাহেদা হোসেন সাফি, এলএলবি (অনার্স, চতুর্থ সেমিস্টার), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

‘নাটক কম করো পিও’, তিশার উদ্দেশে বললেন শাওন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ৯:১৪ পূর্বাহ্ণ
‘নাটক কম করো পিও’, তিশার উদ্দেশে বললেন শাওন

জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বর্তমানে পর্দায় সেভাবে দেখা না গেলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় সব সময়ই সরব তিনি। প্রায়ই বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন। শোবিজ অঙ্গন হোক বা রাজনীতি, শাওনকে প্রায়ই লিখতে দেখা যায় ফেসবুকে। এবার ‘মুজিব’ সিনেমায় শেখ ফজিলাতুননেসা চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশার সমালোচনা করে পোস্ট করলেন শাওন। তিশার একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন যেখানে তিশাকে ‘মুজিব একটি জাতির রুপকার’-তে অভিনয়ের বিষয়ে নিজের ভালোলাগা শেয়ার করতে দেখা গেছে। এছাড়াও শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও তিশার বেশ কিছু ছবি সেই ভিডিওতে দেখানো হয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করে শাওন লিখেছেন, ‘এই মেয়েটাকে ছোটবেলা থেকে চিনতাম। নতুন কুঁড়িতে আমার ছোট বোনের সঙ্গে এক ব‍্যাচে ছিল, একই গানের শিক্ষকের কাছে তালিম নিয়েছে।
আমার বোন আমাকে আপুনি ডাকে- এই চটপটে মেয়েটাও আপুনি ডাকত। আর আমিও তাকে আমার বোনের মতোই দেখতাম।’ তিশা প্রসঙ্গে শাওন আরো লেখেন, ‘১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদে আমার মায়ের সহকর্মী শাহিন মনোয়ারা হক (এমপি) ওর কেমন যেন আত্মীয় ছিল (খুব সম্ভবত খালা)। তখনো প্রায়ই কমন প্ল্যাটফরমে এই মিশুক মেয়েটার সঙ্গে দেখা হতো।
আমার পরিচালনায় ‘একলা পাখী’ ধারাবাহিকে অভিনয় করার সময় অনেকটা দিন কাছাকাছি ছিল। এফডিসির কোনো কোনো সভায় দেখতাম তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে ‘ইনু মামা ইনু মামা’ ডেকে শ্রদ্ধাভরে বিভিন্ন আবদার করছে। মন্ত্রী মহোদয়ও মেয়েটাকে বেশ স্নেহ করতেন।’ ‘মুজিব- একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিশা। তবে সেই সিনেমাটি এখনো দেখা হয়নি জানিয়ে শাওন আরো লেখেন, ‘ছবিটি দেখা হয়নি।
দেখার ইচ্ছাও নেই। বাস্তবজীবনে মেয়েটার যে অভিনয় দেখলাম! শখ মিটে গেছে।’ সবশেষে হ্যাশট্যাগ দিয়ে তিশার উদ্দেশে শাওন লেখেন, ‘নাটক কম করো পিও।’ উল্লেখ্য, ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। সিনেমাটি মুক্তির পর, বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিশাকে নানা ধরনের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। এটি মুক্তি পায় ২০২৩ সালে। সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন ভারতের খ্যাতনামা নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। শেখ মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ।