ফরিদগঞ্জের চাচার হাতে ভাতিজা খুন এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। প্রবাসে নেয়ার নামে আদম ব্যবসার ঘটনা এবং এ নিয়ে মামলা-মোকাদ্দমা, হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা চলছিলো অহরহ। স্থানীয়ভাবে, থানা ও আদালতে এমনকি প্রবাসেও চলে দেনদরবার। কিন্তু এই টাকার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফরিদগঞ্জের সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামে নির্মম ঘটনা ঘটলো। একই বাড়ির চাচা হাসান জবাই করে হত্যা করলো ভাতিজা বাহার হোসেন বাবু (২৪)কে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তের বন্যা বয়ে যায় বড়গাঁও গাজী বাড়িতে। ছেলে বাবুকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয় নিহতের বাবা রওশন আলী (৫৫) ও সহোদর আরমান হোসেন (২৭)। এদের মধ্যে রওশন আলী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ও আরমান ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা গণধোলাই দিয়ে ঘাতক হাসান (৪৫)কে আটক করে পরবর্তীতে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। অন্যদিকে ঘাতক হাসানের ছেলে সাকিল পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতা তাকে আটক করে। ঘটনাটি সোমবার (১১ আগস্ট ২০২৫) দুপুর আড়াইটার দিকে ঘটে। আরেক ঘাতক রাকিব হোসেন (১৯) পালিয়ে গেছে। এদিকে ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ কয়েক হাজার জনতা ঘাতকের বাড়ি ঘিরে রাখে। হাজার হাজার লোকজনকে নিয়ন্ত্রণ করতে বাড়তি পুলিশ ফোর্স, সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। তারপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, অতিরিক্ত পুলিশ (সার্কেল) মুকুর চাকমা, ওসি মোহাম্মদ শাহ আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এই ঘটনায় এই পর্যন্ত ৩ জন আটক রয়েছে বলে জানা গেছে। এরা হলেন : হাসান গাজী, তার ছেলে সাকিল গাজী ও পুত্রবধূ সুমাইয়া আক্তার। অন্যদিকে আরেক ঘাতক রাকিব পলাতক রয়েছে। পরিবারের বরাত দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ওবায়দুল হক জানান, বড়গাঁও গ্রামের গাজী বাড়ির প্রবাসী হাসানের সাথে একই বাড়ির বাসিন্দা বাহার হোসেন বাবুর বিদেশে পাঠানোর টাকা নিয়ে লেনদেন ছিলো। গত প্রায় একমাস পূর্বে বাবুু ওমান থেকে দেশে আসলে হাসানের সাথে বিরোধ বাঁধে। এ নিয়ে এলাকায় কয়েক দফা সমঝোতা বৈঠক হলেও সমাধান হয়নি। সোমবার (১১ আগস্ট ২০২৫) পুনরায় সমঝোতা বৈঠক হওয়ার কথা ছিলো। এরই মধ্যে হাসান দুপুরে বাবুকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে অন্য সহযোগীদের সহযোগিতায় নিজের ঘরের সামনে ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করে। এ সময়ে বাবুকে বাঁচাতে তার সহোদর আরমান হোসেন গাজী ও তার বাবা রওশন আলী গাজী এগিয়ে আসলে ঘাতক হাসান, তার ছেলে রাকিব, সাকিল ও তার পুত্রবধূ সুমাইয়া তাদের উপর হামলা করে। এ সময় আরমানের বুকে ছুরিকাঘাত ও রওশন আলীকে মাথায়সহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। ঘটনা প্রকাশ পেলে স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে হাসানকে আটকে রেখে পুলিশে সোপর্দ করে। এছাড়া ঘাতক সাকিল পালিয়ে যাওয়ার সময় মুন্সিরহাট এলাকা থেকে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
নিহত বাবুর স্ত্রী রেখা আক্তার বলেন, আমার স্বামীকে হাসান কাকা বিদেশে নিয়েছিল। তার সাথে চুক্তি অনুযায়ী পুরো টাকাই দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি বাড়তি টাকা দাবি করে। আমার ছেলেকে দেখতে গত একমাস পূর্বে প্রবাস থেকে বাড়ি আসে স্বামী। এরপর থেকে হাসান কাকা ও তার ছেলেরা আমার স্বামীকে বিভিন্ন জায়গায় কথিত পাওনা টাকা চেয়ে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিল। এ নিয়ে সামাজিকভাবে কয়েকবার বৈঠকও হয়েছিলো। কিন্তু হাসান কাকারা বৈঠকের সিদ্ধান্ত মানেননি। সোমবার (১১ আগস্ট ২০২৫) দুুপুরে সালিসি বৈঠকের কথা বলে আমার স্বামীকে হাসান কাকাদের ঘরের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আমার স্বামীকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হাসান কাকাসহ অন্যরা জবাই করে হত্যা করে। তার ডাক চিৎকারে আমার ভাসুর আরমান গাজী ও শ্বশুর রওশন আলী দৌড়ে সেখানে গেলে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, এই ঘটনায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনী প্রক্রিয়া চলছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : উজ্ব্বল হোসাইন
ভিজিট : www.dailyruposhibangla.com