খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

প্রবীণ জীবন ও আমাদের ভাবনা

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫, ৪:০৪ অপরাহ্ণ
প্রবীণ জীবন ও আমাদের ভাবনা

সমাজের প্রতিটি ধাপেই মানুষ বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়। জীবনের একেকটি পর্যায় একেক ধরনের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাদের সমৃদ্ধ করে। প্রবীণ জীবনও তেমনই একটি অধ্যায়। তবে, এই জীবনের প্রতি আমাদের ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত? এ প্রশ্নটি আমাদের সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রবীণ বয়স মানেই জীবনের একটি বিশাল সময় অতিক্রম করে আসা। এই সময় একজন মানুষ তার জীবনের অর্জিত অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, সুখ-দুঃখ, ব্যর্থতা ও সফলতার কথা নিয়ে এগিয়ে চলে। প্রবীণ ব্যক্তিরা জীবনের প্রতিটি দিক থেকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারী। তাদের অভিজ্ঞতা সমাজের জন্য অমূল্য সম্পদ। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেক সময় প্রবীণ ব্যক্তিদের অবহেলা করা হয় বা তাদের কথা শোনার গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এই মনোভাব পরিবর্তন জরুরি। প্রবীণ ব্যক্তিরা তাদের সারা জীবনের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন। তারা পরিবারের জন্য অভিভাবকের মতো ছায়া। পরিবারে তাদের উপস্থিতি শুধু একটি ভারসাম্য সৃষ্টি করে না, বরং তারা তরুণ প্রজন্মকে নৈতিক শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

তাদের অভিজ্ঞতা সমাজের নানা সমস্যার সমাধানে কাজে আসতে পারে। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে—গ্রামীণ সমাজে প্রবীণ ব্যক্তিরা নানা প্রথা ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। তারা সমাজের সঠিক দিক নির্দেশক হিসেবেও কাজ করে।

সমাজের প্রবীণদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে, যা কখনোই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। তারা আমাদের জীবনের পথপ্রদর্শক। আজ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, তার পেছনে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। তাই প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা, যত্ন ও ভালোবাসা প্রদর্শন আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

প্রবীণরা অনেক সময় সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাদের কাজ এবং অভিজ্ঞতাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা উচিত। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যেতে পারে। প্রবীণ জীবনে স্বাস্থ্যের যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। এ কারণে তাদের জন্য সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা জরুরি। প্রবীণরা অনেক সময় একাকীত্বে ভোগেন। এই একাকীত্ব তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। পরিবার ও সমাজের উচিত তাদের সাথে বেশি সময় কাটানো এবং তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা। অবসরের পর অনেক প্রবীণ ব্যক্তি অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তায় ভোগেন। তাদের জন্য একটি সুষ্ঠু পেনশন ব্যবস্থা বা আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা উচিত।

একটি পরিবারে প্রবীণ সদস্যদের উপস্থিতি সেই পরিবারকে সমৃদ্ধ করে। তারা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে নতুন প্রজন্মকে পথ দেখান। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় রাখতে প্রবীণরা একটি সেতুবন্ধনের কাজ করেন। তবে বর্তমান সময়ে অনেক পরিবারে প্রবীণদের সঠিক সম্মান দেওয়া হয় না। বিশেষ করে যারা শহরে বসবাস করেন, সেখানে প্রবীণদের অনেক সময় একা ফেলে রাখা হয়। তাদের প্রতি উদাসীনতা দূর করা পরিবারগুলোর দায়িত্ব।

দেশের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা জরুরি। এ ধরনের নীতিমালার মাধ্যমে তাদের অধিকার সংরক্ষণ করা সম্ভব।

সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা: প্রবীণদের চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য করতে সরকারি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বৃদ্ধাশ্রমের উন্নয়ন: বৃদ্ধাশ্রমগুলোর মানোন্নয়ন করা উচিত। এগুলো যেন কেবল একটি থাকার জায়গা না হয়ে বরং তাদের মানসিক ও শারীরিক চাহিদা পূরণের স্থান হয়।

জনসচেতনতা বৃদ্ধি: প্রবীণদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর জন্য সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি।

তরুণ প্রজন্মের উচিত প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা প্রদর্শন করা। তাদের জীবনযাত্রা ও সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নেওয়া তরুণদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তরুণ প্রজন্মের উচিত—প্রবীণদের সময় দেওয়া। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া। তাদের প্রতি ধৈর্যশীল ও যত্নবান হওয়া।

প্রবীনদের যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় তাদের মধ্যে একাকীত্ব ও মানসিক অবসাদ। আর্থিক নিরাপত্তার অভাব।স্বাস্থ্য সমস্যার অবহেলা। পারিবারিক অবহেলা। প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে তাল মেলাতে না পারা।

রবীন্দ্র এ সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা আমাদের করণীয় হলো : প্রবীণদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা। তাদের আর্থিক সুরক্ষার জন্য সরকারি পেনশন বা ভাতা চালু করা। নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। পরিবার ও সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি। প্রযুক্তি ব্যবহার শেখানোর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

বর্তমান সমাজে প্রবীণদের প্রতি উদাসীনতা এবং অবহেলার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম একদিকে কর্মব্যস্ত জীবনে মগ্ন, অন্যদিকে তারা ডিজিটাল দুনিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকে। ফলে পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের প্রতি সময় দেওয়া এবং তাদের প্রয়োজনগুলো বোঝার চেষ্টাও কমে যাচ্ছে।
অনেক পরিবারে প্রবীণদের শুধুমাত্র বোঝা হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশেষ করে আর্থিকভাবে নির্ভরশীল প্রবীণরা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অযত্ন এবং অপমানজনক আচরণের শিকার হন। এই সামাজিক অবক্ষয় আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বৃদ্ধাশ্রমের ধারণা আমাদের সমাজে একসময় অচেনা ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এটি এখন পরিচিত একটি বাস্তবতা। বৃদ্ধাশ্রম অনেক প্রবীণ ব্যক্তির জন্য শেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু এর নেপথ্যে যে কারণগুলো কাজ করে, তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার। পরিবারের সাথে মতানৈক্য। সন্তানদের ব্যস্ত জীবনযাপন। আর্থিক অসচ্ছলতা। প্রবীণদের প্রতি উদাসীনতা।

বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে অনেক প্রবীণ ব্যক্তি ন্যূনতম যত্ন পেলেও সেখানে তাদের মানসিক চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। তাদের একাকীত্ব, পরিবারের প্রতি হাহাকার এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তাদের জীবনে হতাশা তৈরি করে।

তবে এটি বলা উচিত, সব বৃদ্ধাশ্রমের অভিজ্ঞতা খারাপ নয়। উন্নতমানের বৃদ্ধাশ্রমে প্রবীণদের আর্থিক ও মানসিক যত্ন নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে বৃদ্ধাশ্রমের ভূমিকা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা দরকার।

প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, তবে প্রবীণদের জন্য এটি অনেক সময় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। অনেক প্রবীণ ব্যক্তি প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়াতে পারেন না। ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোন ব্যবহারের অজ্ঞতার কারণে তারা নিজেকে সমাজের বাইরে অনুভব করেন। তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে যোগাযোগের দূরত্ব আরও বাড়ে।

প্রবীণদের প্রযুক্তিগত শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। যেমন—স্মার্টফোন ব্যবহার শেখানো। ইন্টারনেটের সাহায্যে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করা। ডিজিটাল বিনোদনের সঙ্গে তাদের পরিচিত করা।

প্রবীণ ব্যক্তিরা অবসরের পরেও সমাজের জন্য অনেক কিছু করতে পারেন। তাদের সৃজনশীলতা ও দক্ষতা বিভিন্ন সামাজিক কাজে লাগানো সম্ভব।

শিক্ষা: প্রবীণরা তরুণ প্রজন্মকে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা দিতে পারেন। যেমন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা টিউশন বা কোচিং করতে পারেন।
সমাজসেবা: প্রবীণরা সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
হস্তশিল্প বা কৃষি: অনেক প্রবীণ ব্যক্তি তাদের দক্ষতা ব্যবহার করে সৃজনশীল কাজ করতে পারেন, যা তাদের মানসিক তৃপ্তি এনে দেবে।

বাংলাদেশসহ অনেক দেশে প্রবীণদের অধিকার সুরক্ষার জন্য আইন রয়েছে। তবে এই আইনগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় না। ্প্রবীণ নাগরিকদের সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রবীণদের প্রতি নির্যাতন বা অবহেলার ক্ষেত্রে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবীণদের জন্য বিশেষ ভাতা এবং চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া নিশ্চিত করতে হব।

বর্তমানে অনেক পরিবার পারিবারিক মূল্যবোধের পরিবর্তনের কারণে প্রবীণদের যথাযথ সম্মান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, বরং সামাজিক ও নৈতিক সংকট। পরিবারে প্রবীণদের মূল্যায়ন করতে হলে আমাদের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত— ছোটবেলা থেকে সন্তানদের প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং যত্নের শিক্ষা দেওয়া।
পরিবারের প্রতিটি সিদ্ধান্তে প্রবীণদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। পারিবারিক মিলনমেলা ও অনুষ্ঠানে প্রবীণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতি প্রবীণদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দেয়। ইসলাম ধর্মে প্রবীণদের সেবা ও যত্ন নেওয়াকে অত্যন্ত মহৎ কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হিন্দু ধর্মে পিতা-মাতাকে দেবতুল্য মনে করা হয় এবং তাদের প্রতি সেবা প্রদানের গুরুত্ব দেওয়া হয়। বৌদ্ধ ও খ্রিস্ট ধর্মেও প্রবীণদের প্রতি যত্ন ও সহানুভূতি প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রবীণ জীবন আমাদের জন্য একদিন অনিবার্য সত্য হয়ে দাঁড়াবে। প্রবীণদের প্রতি আমাদের যে মনোভাব ও আচরণ, তা শুধু তাদের জন্য নয়, ভবিষ্যতে আমাদের নিজেদের জন্যও প্রাসঙ্গিক।
প্রবীণদের সঠিক যত্ন, মানসিক সমর্থন, আর্থিক নিরাপত্তা এবং সম্মান প্রদান সমাজের মানবিকতার পরিচায়ক। তাই আসুন, প্রবীণদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাই এবং তাদের জন্য একটি সুন্দর, সম্মানজনক ও সুখী জীবন নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হই।
এই পৃথিবী আমাদের সবার, এবং প্রতিটি বয়সের মানুষই এখানে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রবীণদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশের মাধ্যমেই একটি নৈতিক ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। প্রবীণ জীবন আমাদের সবার জীবনেরই একটি অবধারিত অংশ। আজ যারা প্রবীণ, একদিন তারাই ছিলেন তরুণ। তেমনি আজ যারা তরুণ, একদিন তারাই প্রবীণ হবে। তাই প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং সহানুভূতিশীল হওয়া মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের উচিত, প্রবীণদের জীবনকে সুখী ও সম্মানজনক করে তোলার জন্য নিজেদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো।

প্রবীণদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলালে সমাজে সত্যিকার অর্থে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তাদের জন্য ভালোবাসা ও যত্ন প্রদর্শনের মধ্য দিয়েই আমরা একটি সুন্দর ও সহমর্মী সমাজ গড়ে তুলতে পারি।

লেখক পরিচিতি: উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

উত্তাল সাগর, শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ
উত্তাল সাগর, শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শক্তি সঞ্চয় করছে। এটি ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৮ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সোমবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা অথবা রাত নাগাদ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর (পুন.) ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্য কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।

হাঁটা বন্ধ করবেন না, কেনো হাঁটবেন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ
হাঁটা বন্ধ করবেন না, কেনো হাঁটবেন

হাঁটা বন্ধ করবেন না যেন, মস্তিষ্ক নয়, ডিমেনশিয়া শুরু হয় আপনার পা থেকে! বিশ্বজুড়ে বয়স্ক মানুষের অক্ষমতা ও নির্ভরশীলতার প্রধান কারণ হিসেবে ডিমেনশিয়া এখন এক ভয়াবহ বাস্তবতা। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন, এবং প্রতিবছর নতুন করে আরও প্রায় ১ কোটি মানুষ এতে ভোগেন। অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, মস্তিষ্ক সচল রাখাই ডিমেনশিয়া প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। কিন্তু ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) প্রশিক্ষিত স্নায়ুশল্য বিশেষজ্ঞ ডা. অরুণ এল. নাইক জানালেন চমকপ্রদ তথ্য—ডিমেনশিয়ার সূত্রপাত নাকি মস্তিষ্কে নয়, পা থেকেই!
ডিমেনশিয়া কী?
ডিমেনশিয়া কোনো একক রোগ নয়; এটি স্মৃতি, চিন্তাশক্তি ও দৈনন্দিন কাজের সক্ষমতাকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করে এমন একাধিক স্নায়ুরোগের সামষ্টিক নাম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও জটিল হয়ে ওঠে এবং জীবনের মান নষ্ট করে দেয়। তবে সময়মতো নির্ণয়, যত্নশীল পরিচর্যা, জীবনযাপনে পরিবর্তন ও চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর অবস্থা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডিমেনশিয়া শুরু হয় পা থেকে
ডা. নাইক এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আপনি কি জানেন, ডিমেনশিয়া আসলে শুরু হয় আপনার পা থেকে? শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা পায়ের পেশিকে দুর্বল করে, যার ফলে স্যারকোপেনিয়া বা পেশি ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে। এখানেই শুরু হয় বিপদ। গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্বল পায়ের কারণে জ্ঞানগত ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায় এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, শরীরের সক্রিয় পেশি এমন রাসায়নিক উৎপাদন করে যা মস্তিষ্ককে সচল রাখে। এই রাসায়নিকগুলোর নাম ব্রেইন-ডিরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF), যা মস্তিষ্কের স্মৃতিনির্ভর অংশ হিপোক্যাম্পাসে সংযোগ বৃদ্ধি করে। শক্তিশালী পা শুধু ভারসাম্য বজায় রাখে না, বয়স বাড়লেও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমায়। “৬৫ বছরের পর পড়ে যাওয়াই সবচেয়ে বিপজ্জনক,” বলেন ডা. নাইক।
তিনি ২০২০ সালের Neurology সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণার উদাহরণ দেন, যেখানে দেখা গেছে, যাদের হাঁটার গতি কম, তাদের মস্তিষ্কের আকারও ছোট এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকি বেশি। “হাঁটা শুধু শরীরচর্চা নয়, এটি পুরো মস্তিষ্কের এক অনুশীলন,” যোগ করেন তিনি।
কীভাবে হাঁটা মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখে
হাঁটা এমন এক সহজ ব্যায়াম যা শরীর ও মস্তিষ্ক দুটিকেই সক্রিয় রাখে। ডা. নাইক বলেন, “প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্ত থাকে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব, সেরিবেলাম, স্পাইনাল কর্ড ও স্নায়ু প্রতিক্রিয়ার সমন্বয়।” হাঁটা রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ সরবরাহ করে এবং টক্সিন দূর করে। তিনি আরও বলেন, “হাঁটার ধরনে বা ভারসাম্যে পরিবর্তন দেখা গেলে সেটি মস্তিষ্কের আগাম সতর্ক সংকেত। এটি প্রায়ই স্মৃতি সমস্যার বছরখানেক আগেই দেখা দেয়।” হাঁটা নিউরোপ্লাস্টিসিটির এক জীবন্ত উদাহরণও বটে। “হাঁটার সময় শরীরে BDNF সক্রিয় হয়, যা নিউরনগুলোর সংযোগ শক্তিশালী করে,” বলেন ডা. নাইক।
কীভাবে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করবেন ডা. নাইক কয়েকটি সহজ অভ্যাসের পরামর্শ দিয়েছেন, যা নিয়মিত চর্চা করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বজায় থাকে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন। ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম যেমন এক পায়ে দাঁড়ানো বা সরলরেখায় হাঁটার অভ্যাস করুন। হাঁটার সময় কথা বলা বা হালকা মানসিক কাজ করুন—এটি মস্তিষ্কের সমন্বয় ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত পায়ের পেশির ব্যায়াম করুন, এটি মস্তিষ্কের জন্য একপ্রকার ‘বিমা’।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা পরিহার করুন; প্রতি ঘণ্টায় কিছুটা নড়াচড়া করুন। তিনি বলেন, “যখন আপনার পা ধীরে ধীরে কাজ হারায়, তখন মস্তিষ্কও তার পথ অনুসরণ করে। আপনার হাঁটার গতি বজায় রাখুন, তাহলেই সুরক্ষিত থাকবে মস্তিষ্ক।”
ডা. নাইক আরও পরামর্শ দেন, পেশির গঠন রক্ষায় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। তার মতে, কখনোই দেরি হয়ে যায় না। “গবেষণায় দেখা গেছে, ষাট বছর বয়সেও হাঁটা ও ব্যায়াম শুরু করলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। মনে রাখবেন, শক্ত পা মানেই তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক। স্যারকোপেনিয়া মাথা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই সচেতন হোন—চল্লিশের কোঠা থেকেই শুরু করুন।”
সর্বোপরি, সক্রিয় থাকা শুধু চলাফেরার বিষয় নয়; এটি মস্তিষ্ককে তরুণ রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম ও সুষম খাদ্য—এই তিন অভ্যাসই হতে পারে বার্ধক্যের ডিমেনশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ।

বন্ধ হচ্ছে সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ
বন্ধ হচ্ছে সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। সোমবার (২৭ অক্টোবর) এ-সংক্রান্ত এক পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ। পরিপত্রে বলা হয়েছে, কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চাইতে পারবে না। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, চলমান সংকোচনমূলক নীতির প্রেক্ষাপটে গত কয়েক বছরের মতো সংশোধিত বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অব্যাহত রাখতে হবে। এর আওতায় বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি কেনাসহ বেশ কিছু ব্যয় বন্ধ থাকবে। এ নীতি অনুসরণ করে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন আগামী ৯ নভেম্বরের মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই মূল বাজেটে বরাদ্দের মধ্যেই থাকতে হবে। কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। তবে সরকারের অগ্রাধিকার কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রয়োজনে মূল বাজেটে বরাদ্দের ব্যয়সীমার মধ্যে থেকে একই ধরনের বিভিন্ন কাজে বরাদ্দ কমানো বা বাড়ানো যাবে। কিন্তু উন্নয়ন ব্যয়ের অর্থ অব্যয়িত থাকবে বলে অনুমিত হলে ওই অর্থ কোনোক্রমেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।
এতে আরও বলা হয়, সংশোধীত বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আওতায় সরকারি খরচে সব ধরনের বৈদেশিক ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিদেশ ভ্রমণ করা হবে। তা ছাড়া কেনা যাবে না গাড়ি, জাহাজ ও বিমান। তবে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে পরিচালন বাজেটের আওতায় ১০ বছরের পুরোনো গাড়ির প্রতিস্থাপন হিসেবে নতুন গাড়ি কেনা যাবে। এমনকি পরিচালন বাজেটে আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচও বন্ধ রাখতে হবে। তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় শর্তসাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে। আরও কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় স্থগিত রাখা হয়েছে আবার গুরুত্ব বিবেচনায় এসব ক্ষেত্রে ব্যয়ে কিছুটা ছাড়ও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখাসহ ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে সরকারি ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই কোনো খাতে ব্যয় সাশ্রয়ের সুযোগ রয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে সংশোধিত বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। সাধারণত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিশেষ করে মার্চে সরকার জাতীয় বাজেট সংশোধন করে। তবে এবার ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় আগেভাগে বাজেট সংশোধন করা হচ্ছে।