খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

নানা সংকটে চাঁদপুরের ইলিশ এখন বিলাসবহুল খাবার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫, ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ
নানা সংকটে চাঁদপুরের ইলিশ এখন বিলাসবহুল খাবার

ইলিশ—বাংলাদেশের জাতীয় মাছ, যার সঙ্গে বাঙালির আবেগ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর ইলিশের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁদপুর, যেখানে পদ্মা-মেঘনার মোহনায় জন্ম নেয় রুপালি জলের রানী।  চাঁদপুরের মানুষের জীবনে ইলিশ শুধু মাছ নয়, এটি জীবিকা, গর্ব, ঐতিহ্য এবং উৎসবের নাম।  কিন্তু আজ সেই ইলিশই হয়ে উঠছে দুষ্প্রাপ্য, সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।  দাম, প্রাপ্তি এবং নিয়ন্ত্রণে নানা সংকটের কারণে চাঁদপুরে ইলিশ এখন একরকম বিলাসবহুল খাবারে পরিণত হয়েছে। এই নিবন্ধে আমরা ইলিশ সংকটের পেছনের কারণ, প্রভাব এবং সম্ভাব্য সমাধান বিশ্লেষণ করব।
ইলিশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও চাঁদপুরের গুরুত্ব ।অনেক যা অনেক আগে থেকে। ইলিশ বাংলাদেশের নদ-নদীসমূহে জন্মানো একটি স্বাদু পানির মাছ হলেও এটি সমুদ্রেও বিচরণ করে। প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে হাজার হাজার ইলিশ প্রজননের জন্য নদীতে ফিরে আসে।  চাঁদপুর জেলা পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনার অবস্থান হওয়ায় এখানেই সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। “চাঁদপুরের ইলিশ” নামেই সারাদেশে এই মাছ সুপরিচিত। ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে চাঁদপুরের হাট-বাজার ছিল ইলিশে সয়লাব।  দাম ছিল তুলনামূলক কম।  সাধারণ নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষও সহজে কিনে খেতে পারত।  কিন্তু এখন সে চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে।
ইলিশ ধরা মৌসুমভিত্তিক এবং বয়সভিত্তিক হওয়া উচিত হলেও অনেক সময় মাছের প্রজনন মৌসুমেও মাছ ধরা হয়। জাটকা নিধন, অর্থাৎ ছোট ইলিশ ধরা এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এতে ভবিষ্যতের ইলিশ উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ে। পদ্মা ও মেঘনাসহ দেশের বড় নদীগুলোর পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। শিল্পকারখানা থেকে নিঃসৃত বর্জ্য, কীটনাশকের ব্যবহার এবং নদীর তীরে অপরিকল্পিত স্থাপনার কারণে ইলিশের প্রজননের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে অত্যাধুনিক ফাইন জাল ব্যবহার করা হয় যা ছোট মাছসহ সব ধরণের মাছ ধ্বংস করে দেয়। বড় নৌকার মালিকরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরে ফেলেন, ফলে নদীতে মাছের প্রবেশ কমে যায়। চাঁদপুরের বহু জেলে পরিবার সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে ৬৫ দিনের মাছ ধরার মৌসুমে বিরত থাকেন। কিন্তু এই সময় তারা পর্যাপ্ত সহযোগিতা পান না। ফলে তাদের জীবিকা সংকটে পড়ে এবং অনেক সময় নিরুপায় হয়ে নিয়ম ভেঙে মাছ ধরতে বাধ্য হন। বাজারে ইলিশের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সিন্ডিকেটরা দাম বাড়িয়ে দেয়। একটি কিলো ইলিশের দাম অনেক সময় দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষের কেনা সম্ভব হয় না।
ইলিশের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছের বাজারে অন্য মাছের দামও বেড়ে যায়।  ফলে পুরো বাজার ব্যবস্থায় চাপ পড়ে এবং ভোক্তারা ভোগান্তির শিকার হন। ইলিশ বাঙালি সংস্কৃতির অংশ।  পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপূজা, ঈদ কিংবা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ইলিশের ব্যবহার ঐতিহ্যবাহী। ইলিশের অভাবে এই ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। যেসব পরিবার ইলিশ আহরণের ওপর নির্ভরশীল, তারা মাছ না পেয়ে ভিন্ন পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন।  কেউ কেউ শহরে এসে রিকশা চালান, আবার কেউ দিনমজুরের কাজ করেন।  চাঁদপুরের পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ হলো “ইলিশ ভোজন”।  দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে মোলহেডে এসে ইলিশ খেতেন।  এখন ইলিশের দাম ও প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
চাঁদপুরবাসী এখন কষ্ট পায় যখন শুনে, চাঁদপুরের মানুষই ইলিশ খেতে পায় না! স্থানীয় একজন গৃহিণী জানান, আগে প্রতি সপ্তাহে একবার ইলিশ রান্না করতাম, এখন ঈদ ছাড়া খাওয়াই হয় না।
একজন প্রবীণ জেলে বলেন, জীবনটা কাটাইলাম নদীতে, এখন নদীই আমাদের কিছু দেয় না। খালি পুলিশ-নিষেধ আর হুমকি। এমন অনেক গল্প রয়েছে যা বোঝায় চাঁদপুরবাসী কিভাবে নিজেদের ঐতিহ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষ করে জাটকা রক্ষা এবং প্রজনন মৌসুমে নজরদারি বাড়াতে হবে। মাছ ধরা নিষিদ্ধ মৌসুমে জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে—যেমন ক্ষুদ্র ব্যবসা, কৃষি, কিংবা নৌ-ভ্রমণ খাত। এতে তাদের জীবিকা সুরক্ষিত থাকবে। নদী দূষণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নদীর তীরে অবৈধ দখল ও শিল্প বর্জ্য নির্গমন বন্ধ করতে হবে। ইলিশের অভয়াশ্রম সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করতে হবে। ইলিশ বাজারে সিন্ডিকেট ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে। অনলাইন বাজার ব্যবস্থা উন্নত করলে মধ্যস্বত্বভোগী কমে যাবে।
চাঁদপুর—বাংলাদেশের ইলিশরাজ্য হিসেবে সুপরিচিত। এখানকার পদ্মা-মেঘনার মোহনা শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, এক বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রতি বছর লাখো কেজি ইলিশ আহরণ হয় এখান থেকে, যার একটি বড় অংশ চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাঁদপুরে ইলিশের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা সংকট, অসঙ্গতি ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মাছঘাট, পুরানবাজার, রাজরাজেশ্বর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও দক্ষিণসহ জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ইলিশ বাজার গড়ে উঠেছে। এখানে মাছ বিক্রেতা, আড়তদার, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সমন্বয়ে একটি বিশাল বাণিজ্যিক চক্র গড়ে উঠেছে। মাছ ধরা থেকে বিক্রি পর্যন্ত এই বাজার ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত রয়েছে হাজারো মানুষ।
তবে দুঃখজনকভাবে, বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও সুশাসনের অভাব প্রকট। প্রতি বছর ইলিশের মৌসুমে জেলে, আড়তদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের মধ্যে এক অস্বাভাবিক শক্তির ভারসাম্য তৈরি হয়, যেখানে প্রকৃত জেলেরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হন। তারা ন্যায্য দাম পান না, বরং আড়তদারদের খামখেয়ালিতে নির্ভরশীল থাকেন।
ইলিশের দাম নির্ধারণে সিন্ডিকেট ভূমিকা রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে। সকালেই নির্ধারিত হয় দিনের দাম, যা ক্রেতা বা জেলের হাতে প্রভাবিত হয় না। অনেক আড়তে ওজনে কম দেয়া হয়। আধুনিক ডিজিটাল স্কেল ব্যবহারের অভাব এবং মনিটরিংয়ের ঘাটতিতে এই সমস্যা রয়ে গেছে বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ দুর্বল। জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ বা ভোক্তা অধিকার সংস্থার তৎপরতা মৌসুমি এবং অল্প সময়ের জন্য কার্যকর হয়। জেলেরা সংগঠিত না থাকায় তারা দরকষাকষিতে পিছিয়ে পড়ে এবং দাম নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে না। জেলেদের সরাসরি বাজারে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এর জন্য মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিগুলোর সক্রিয়তা জরুরি। প্রতিনিয়ত ভোক্তা অধিকার সংস্থা ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। ইলিশ বিপণনে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন হাট ও ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে। নিষিদ্ধ মৌসুমে জেলেদের প্রণোদনা কার্যকরভাবে পৌঁছে দিতে হবে, যাতে তারা অবৈধভাবে মাছ ধরে বাজারকে প্রভাবিত না করে। চাঁদপুরের ইলিশ বাজার শুধু অর্থনৈতিকই নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ও গর্বের প্রতীক। এর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা ফিরিয়ে আনলে ইলিশ ব্যবসা আরও টেকসই ও লাভজনক হবে। সরকার, ব্যবসায়ী ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগেই সম্ভব একটি সুন্দর, ন্যায্য ও সুশাসনভিত্তিক ইলিশ বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
বর্তমান যুগ ডিজিটাল। গ্রাহক এখন ঘরে বসেই মোবাইল ফোনে একটি ক্লিক করে মাছ-মাংস কিনে ফেলছেন। এই প্রবণতা থেকে বাদ যায়নি ইলিশও। বিশেষ করে চাঁদপুরের ইলিশকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনলাইনে চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু এই চাহিদার সুযোগ নিয়ে গড়ে উঠেছে কিছু অসাধু প্রতারক চক্র, যারা অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ইলিশের মতো একটি উচ্চমূল্যের পণ্যের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে। বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট, ফেসবুক পেজ ও ব্যক্তিগত উদ্যোক্তারা এখন চাঁদপুর, ভোলা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ইলিশ সংগ্রহ করে দেশের শহরাঞ্চলে পৌঁছে দিচ্ছেন। এতে করে একদিকে যেমন শহরবাসী সহজে ইলিশ পাচ্ছেন, অন্যদিকে জেলেরা ও খুচরা বিক্রেতারা পাচ্ছেন লাভের নতুন পথ। বিশেষ করে প্যাকেটজাতকরণ, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ডেলিভারি এবং কাস্টমার রিভিউয়ের কারণে নির্ভরযোগ্য অনেক অনলাইন ব্যবসা সফলভাবে ইলিশ সরবরাহ করছে। তবে এই ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি এক অন্ধকার দিকও দেখা দিয়েছে—তা হলো প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য। ফেসবুকে “চাঁদপুরের আসল ইলিশ”, “ভেজালমুক্ত নদীর ইলিশ”, “ডাইরেক্ট নৌকা থেকে” ইত্যাদি আকর্ষণীয় প্রচার দিয়ে অনেকেই ফেসবুক পেজ বা অ্যাকাউন্ট খুলে মাছ বিক্রির নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য না পাঠিয়েই উধাও হয়ে যাচ্ছে। অত্যন্ত কম দামে ইলিশ বিক্রির প্রলোভন দেখানো (যেমন: ১ কেজি ইলিশ ৮০০ টাকা)। বিকাশ/নগদে অগ্রিম টাকা চাওয়া।  পণ্য না পাঠিয়ে মোবাইল বন্ধ করা বা ব্লক করে দেওয়া।  ভুয়া কুরিয়ার রশিদ পাঠানো।নকল ছবি বা পুরনো ভিডিও দিয়ে গ্রাহককে বিশ্বাসে আনা।  রাজধানীর এক শিক্ষক জানান, “একটি ফেসবুক পেজ থেকে ৪ কেজি ইলিশের অর্ডার দিই। ৩৫০০ টাকা বিকাশ করি। এরপর থেকে পেজ বন্ধ, মোবাইল বন্ধ—কোনো খোঁজ নেই।” চাঁদপুরের স্থানীয় এক ডেলিভারি কোম্পানি মালিক বলেন, “অনেক সময় প্রতারকরা আমাদের নাম ব্যবহার করেও ফেক ডেলিভারি দাবি করে গ্রাহকদের ঠকায়।”
অভিনব প্রচার দেখেই টাকা না পাঠানো-যাচাই-বাছাই ছাড়া অগ্রিম টাকা না দেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ। বিশ্বস্ত ও রিভিউযুক্ত পেজ ব্যবহার-যেসব অনলাইন ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে, কাস্টমার রিভিউ ভালো—তাদের কাছ থেকেই অর্ডার করা উচিত। প্রয়োজনে ক্যাশ অন ডেলিভারি-হাতে পণ্য পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা-ভুক্তভোগীরা পুলিশ সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ করলে প্রতারকদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করা সম্ভব। সচেতনতা বৃদ্ধি-সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে যেন কেউ এসব প্রতারক চক্রের ফাঁদে না পড়ে।
চাঁদপুরের ইলিশ অনলাইনে বিক্রির মাধ্যমে যেমন এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে, তেমনি প্রতারকদের দৌরাত্ম্য এই খাতকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। নিরাপদ ইলিশ কেনাবেচা নিশ্চিত করতে হলে যেমন ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা জরুরি, তেমনি গ্রাহকদের সচেতনতা ও সরকারের কার্যকর নজরদারি এখন সময়ের দাবি। ইলিশের জীবনচক্র নিয়ে গবেষণা বাড়ানো দরকার। কোথায়, কীভাবে তারা অবস্থান করে তা বোঝা গেলে আরও কার্যকর সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
ইলিশ শুধু মাছ নয়—চাঁদপুরের পরিচয়, গর্ব ও অস্তিত্বের প্রতীক। এই মাছের সংকট মানেই একটি সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সংকট। চাঁদপুরে যদি মানুষই ইলিশ না পায়, তবে “ইলিশের রাজ্য” নামে খ্যাতির কোনো মানে থাকে না।
সরকার, প্রশাসন, জেলে সম্প্রদায়, ব্যবসায়ী, গবেষক এবং সচেতন জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই সংকট কাটানো সম্ভব নয়। এখনই সময় এই ঐতিহ্য রক্ষা করার, নয়তো ভবিষ্যতের প্রজন্ম জানবে না—ইলিশের স্বাদ কেমন ছিল বা চাঁদপুরে একসময় কী ঐশ্বর্য ছিল।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।