খুঁজুন
                               
বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ৬ কার্তিক, ১৪৩২

‘নাটক কম করো পিও’, তিশার উদ্দেশে বললেন শাওন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ৯:১৪ পূর্বাহ্ণ
‘নাটক কম করো পিও’, তিশার উদ্দেশে বললেন শাওন

জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বর্তমানে পর্দায় সেভাবে দেখা না গেলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় সব সময়ই সরব তিনি। প্রায়ই বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন। শোবিজ অঙ্গন হোক বা রাজনীতি, শাওনকে প্রায়ই লিখতে দেখা যায় ফেসবুকে। এবার ‘মুজিব’ সিনেমায় শেখ ফজিলাতুননেসা চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশার সমালোচনা করে পোস্ট করলেন শাওন। তিশার একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন যেখানে তিশাকে ‘মুজিব একটি জাতির রুপকার’-তে অভিনয়ের বিষয়ে নিজের ভালোলাগা শেয়ার করতে দেখা গেছে। এছাড়াও শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও তিশার বেশ কিছু ছবি সেই ভিডিওতে দেখানো হয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করে শাওন লিখেছেন, ‘এই মেয়েটাকে ছোটবেলা থেকে চিনতাম। নতুন কুঁড়িতে আমার ছোট বোনের সঙ্গে এক ব‍্যাচে ছিল, একই গানের শিক্ষকের কাছে তালিম নিয়েছে।
আমার বোন আমাকে আপুনি ডাকে- এই চটপটে মেয়েটাও আপুনি ডাকত। আর আমিও তাকে আমার বোনের মতোই দেখতাম।’ তিশা প্রসঙ্গে শাওন আরো লেখেন, ‘১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদে আমার মায়ের সহকর্মী শাহিন মনোয়ারা হক (এমপি) ওর কেমন যেন আত্মীয় ছিল (খুব সম্ভবত খালা)। তখনো প্রায়ই কমন প্ল্যাটফরমে এই মিশুক মেয়েটার সঙ্গে দেখা হতো।
আমার পরিচালনায় ‘একলা পাখী’ ধারাবাহিকে অভিনয় করার সময় অনেকটা দিন কাছাকাছি ছিল। এফডিসির কোনো কোনো সভায় দেখতাম তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে ‘ইনু মামা ইনু মামা’ ডেকে শ্রদ্ধাভরে বিভিন্ন আবদার করছে। মন্ত্রী মহোদয়ও মেয়েটাকে বেশ স্নেহ করতেন।’ ‘মুজিব- একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিশা। তবে সেই সিনেমাটি এখনো দেখা হয়নি জানিয়ে শাওন আরো লেখেন, ‘ছবিটি দেখা হয়নি।
দেখার ইচ্ছাও নেই। বাস্তবজীবনে মেয়েটার যে অভিনয় দেখলাম! শখ মিটে গেছে।’ সবশেষে হ্যাশট্যাগ দিয়ে তিশার উদ্দেশে শাওন লেখেন, ‘নাটক কম করো পিও।’ উল্লেখ্য, ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। সিনেমাটি মুক্তির পর, বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিশাকে নানা ধরনের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। এটি মুক্তি পায় ২০২৩ সালে। সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন ভারতের খ্যাতনামা নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। শেখ মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ।

মাছ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : জেলেদের দখলে নদী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৪৮ অপরাহ্ণ
মাছ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : জেলেদের দখলে নদী

নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করে নদী থেকে অবাধে ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছুতেই দমাতে পারছে না তাদের। জেলেদের নৌকায় এখন ইট-পাথরের মজুত রাখা হয়। হাতে থাকে তাদের লাঠিসোটা। বাধা দিলে যুদ্ধংদেহী মনোভাবে পাল্টা আক্রমণ করেন তারা। গত ৪ অক্টোবরের পর দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশ বিচরণের নদীগুলো কার্যত চলে গেছে জেলেদের দখলে। ইলিশের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র মেঘনার অবস্থা আরও ভয়ংকর। সামাজিক মাধ্যমে যেসব ভিডিও ছড়াচ্ছে তাতে দেখা যায়, নদীর মধ্যে জেলেরা যেন শত্রুপক্ষের সঙ্গে লড়াই করছেন। তাদের শত্রু হলো ইলিশ সম্পদ রক্ষা করতে যাওয়া প্রশাসন। মেঘনায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর জাহাজ ও র‍্যাব দিয়ে অভিযান চালিয়ে নদী জেলেদের দখলমুক্ত করা যায়নি।
মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে গত ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন সাগর-নদীতে সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও নিষেধাজ্ঞার তৃতীয় দিন থেকেই নদী জেলেরা দখলে নিয়েছেন। দিনে পরিস্থিতি কিছুটা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাতে নদীতে চলে জেলেদের রাজত্ব। জেলেদের আক্রমণ প্রতিহত করতে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া মাছ শিকারে জেলেদের বাধা দিতে গিয়ে আনসার বাহিনীর একটি আগ্নেয়াস্ত্র খোয়া গেছে। এমনকি জেলেদের হামলায় স্পিডবোট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা কোস্টগার্ড সদস্যদেরও নাস্তানাবুদ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। মেঘনার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, গত সোমবার হিজলার জেলেদের হামলা প্রতিহত করতে মেঘনায় ফায়ার সার্ভিসের জলকামান ব্যবহার করতে হয়েছে।
বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে, এ বছর নিষেধাজ্ঞা চলার সময় গত ১৭ দিনে কমপক্ষে ১৫টি হামলা হয়েছে। এরমধ্যে গত ১৯ অক্টোবর বরিশালের মুলাদী উপজেলায় ৩টি হামলার ঘটনায় পৃথক ৩টি মামলা করা হয়।  গত রোববার বিকেলে হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নসংলগ্ন মেঘনা নদীতে জেলেদের হামলা ঠেকাতে আট রাউন্ড এবং শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল সদর ও মেহেন্দীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী কালাবদর নদীতে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হয়। দুটি অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ। এ ছাড়া ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে  হিজলা ও ভোলার মধ্যবর্তী মেঘনা নদীতে হামলার শিকার হয় মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ ও উপপরিচালক মো. নাসিরউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন টিম।
নিষেধাজ্ঞার শুরুর প্রথম রাতে অভিযানে নেমে হামলার শিকার হন বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর সানি। দড়িচর-খাজুরিয়া ইউনিয়নের গজারিয়া নদীতে এ হামলা হয়। ৭ অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নের আলীগঞ্জসংলগ্ন মেঘনা নদীতে জেলেদের হামলায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমসহ কোস্টগার্ডের চার সদস্য আহত হন। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদসংলগ্ন নদীতে হামলায় এক আনসার সদস্যের আগ্নেয়াস্ত্র নদীতে পড়ে যায়। অস্ত্রটি পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসাইন।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর ৪ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬ দিনে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় অভিযানে ৮৭০টি মামলা এবং কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৫৮৯ জনকে। একই সময়ে গত বছর ৭৬৯টি মামলা ও ৪৮২ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ বছর মামলা ও কারাদণ্ড বেশি হলেও পরিস্থিতি পুরোটাই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

কেন এই পরিস্থিতি 
মৎস্যজীবী সংগঠকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও হামলার ঘটনা হয়। তবে এ বছরের মতো পরিস্থিতি আগে দেখা যায়নি। তাদের মতে, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রশাসনের মাঠ কর্মকর্তাদের শিথিলতায় পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা জেলেদের নেপথ্য শক্তি হিসেবে কাজ করেন বলেও তাদের ধারণা।
ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার সামরাজ মাছঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আজিজ পাটোয়ারী স্বীকার করেন, এবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধন ও প্রশাসনের ওপর হামলার ঘটনা নজিরবিহীন। তিনি বলেন, ‘মৌসুমে নদীতে আকাল গেছে। এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে জেলেরা কোনো আইন মানতে চান না।’ জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ইকবাল হোসেন মাতুব্বর বলেন, ‘ইলিশ সম্পদ রক্ষা নির্ভর করে মেঘনাতীরের রাজনৈতিক নেতা ও মাছঘাট মালিকদের ওপর। তারা যতক্ষণ আইনের উল্টো পথে হাঁটবেন, কোনো আইন দিয়ে ইলিশ সম্পদ রক্ষা করা যাবে না।’ জাতীয় ক্ষুদ্র জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল মীর বলেন, ইলিশ নিধনকারী জেলেদের পেছনে প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। জেলেদের ভ্রাম্যমাণ আদালত কারাদণ্ড দিলে জামিনের ব্যবস্থা ও জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন প্রভাবশালীরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বেশির ভাগ সাধারণ জেলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত না। কিছু ডাকাতের মতো, অপেশাদার লোকজন ইলিশ নিধনে যুক্ত। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এর মদদ দিচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অপরাধীদেরে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান প্রয়োজন। জনবল এবং বড় স্পিডবোট আরও দরকার।

আরসিডিএস-এর উদ্যোগে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৩৫ অপরাহ্ণ
আরসিডিএস-এর উদ্যোগে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন

২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সদস্য সংগঠনগুলো সারা দেশব্যাপী প্রতি বছর ৯ অক্টোবর জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন করে আসছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে : “কৃষি জমিতে তামাক চাষ, খাদ্য নিরাপত্তায় সর্বনাশ” অবিলম্বে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হোক” এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আরসিডিএস-এর উদ্যোগে চাঁদপুরে জন সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারাভিযান পরিচালনা করা হয় এবং ইতিমধ্যে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। আরসিডিএস নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ সাদেক সফিউল্লাহ বলেন, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের ইতিবাচক নীতিগত পদক্ষেপসমূহ প্রশংসার দাবীদার হলেও কোম্পানিগুলোর কৌশলের কারণে কৃষকরা তামাক চাষের চক্র থেকে বের হতে পারছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক চাষে স্বাভাবিক ফসলের তুলনায় ৮–১০ গুণ বেশি রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, যা মাটি ও পরিবেশকে দূষিত এবং জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। ফলে রবি মৌসুমে খাদ্য ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ায় কৃষকরা আটকা পড়ছে ঋণের ফাঁদে। অন্যদিকে, কীটপতঙ্গ, গবাদিপশু ও জীববৈচিত্র্যের ওপর তামাক চাষের নেতিবাচক প্রভাব দেশের কৃষি জমি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশকে হুমকির সম্মুখীন করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমাগত তামাক চাষ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন কৌশল, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন বিধান না থাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যথাযথ উদ্যোগের অভাব, দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি চুড়ান্তকরণে বিলম্ব এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নীতির অসামঞ্জস্যতা। উল্লেখ্য তামাক রপ্তানিতে শুল্ক ছাড়ের কারণে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেশে প্রায় ৫০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। উক্ত সংকট থেকে উত্তোরণে দ্রুত “তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া)” চূড়ান্ত করা জরুরী। উল্লেখ্য, সংবিধান ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষ ধীরে ধীরে বন্ধ করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
এ মতাবস্থায়, আমাদের প্রস্তাবনা : সরকার কর্তৃক প্রণীত “তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া)” অবিলম্বে চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিকল্প ফসল চাষে কৃষকদের কারিগরি সহায়তা, উন্নত বীজ, সার ও স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান নিশ্চিত করা। তামাক চাষের জমিতে দ্বিগুণ হারে ভূমি কর আরোপ করা। সংরক্ষিত বনভূমি ও সরকারি খাসজমিতে তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা। তামাক পাতার উপর মওকুফকৃত ২৫% রপ্তানি শুল্ক পুনর্বহাল করা।

নদীকেন্দ্রিক জেলে জীবন : সংগ্রাম, স্বপ্ন ও টিকে থাকার লড়াই

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ
নদীকেন্দ্রিক জেলে জীবন : সংগ্রাম, স্বপ্ন ও টিকে থাকার লড়াই

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ অসংখ্য নদী এ দেশের বুক চিরে বয়ে চলেছে। নদী শুধু ভূপ্রকৃতির অংশ নয়, এটি মানুষের জীবন, জীবিকা ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। বিশেষ করে জেলে সমাজের জীবন নদীকেন্দ্রিক। ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগেই যখন নদীর বুক চিরে নৌকা ভেসে ওঠে। তখন বোঝা যায় নদী ও মানুষের সম্পর্ক কতটা গভীর। তবে এই সম্পর্কের ভেতরে যেমন আছে সৌন্দর্য ও আশা, তেমনি আছে বেদনা, সংগ্রাম ও বেঁচে থাকার যুদ্ধ।
জেলেদের প্রধান জীবিকা হলো নদীতে মাছ ধরা। পদ্মা-মেঘনার বুকে ভেসে ওঠা তাদের নৌকা যেন তাদের ভাসমান সংসার। সারাদিন জাল পেতে, কখনো ভোরে কখনো গভীর রাতে, তারা নদীতে পাড়ি জমায়। কখনো প্রচুর মাছ ধরা পড়ে, আবার কখনো জাল ফাঁকা ওঠে। মাছের উপর নির্ভর করেই তাদের সংসার চলে।
তবে এই জীবিকার পথ একেবারেই অনিশ্চিত। কখনো মৌসুম ভালো গেলে পরিবারের চাহিদা কিছুটা পূরণ হয়, আবার দুর্ভাগ্যজনক সময়ে ধার-দেনা করেই দিন কাটাতে হয়। নদীর মাছ এখন আর আগের মতো নেই। অতিরিক্ত জাল পাতা, অবৈধ জাল ব্যবহার, নদী দূষণ এবং প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে মাছের উৎপাদন অনেক কমে গেছে। ফলে জেলেদের জীবন প্রতিনিয়ত কঠিন হয়ে উঠছে।
মাছ ধরা ও অনিশ্চয়তার পথবাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের নদী, খাল, বিল ও সমুদ্র উপকূলের সঙ্গে জেলেদের জীবিকা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মাছ ধরা শুধু তাদের জীবিকার মাধ্যম নয়, এটি একদিকে সংস্কৃতি, অন্যদিকে হাজার বছরের ঐতিহ্যের অংশ। কিন্তু সময়ের পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সরকার নির্ধারিত বিধিনিষেধ ও আধুনিক চাহিদার চাপে জেলেদের জীবন এখন অনিশ্চয়তার পথে এগোচ্ছে।
গ্রামের অধিকাংশ জেলে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত নদীতে বা সমুদ্রে জাল ফেলেন। ঝড়-বৃষ্টি, প্রচণ্ড রোদ কিংবা কনকনে শীত সব কিছুর মধ্যেই তাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকে। প্রতিদিন মাছ ধরতে গিয়ে কখনো তারা শূন্য হাতে ফিরে আসেন, আবার কখনো সামান্য মাছের আয়ে সংসারের নুন-ভাত চলে। অথচ এই জীবিকার ওপর নির্ভরশীল হাজারো পরিবার।
জেলেদের জীবনে বড় একটি সংকট হলো মৌসুমি নিষেধাজ্ঞা। জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজনন মৌসুমে সরকার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিঃসন্দেহে এটি মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয়, কিন্তু এর ফলে জেলেরা দীর্ঘদিন বেকার হয়ে পড়েন। সরকারি ত্রাণ পেলেও তা অনেক সময় যথেষ্ট হয় না। ফলে পরিবার চালাতে গিয়ে তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন, কেউ কেউ বিকল্প পেশায় যেতে বাধ্য হন।
অন্যদিকে, নদী ও সমুদ্রের অস্থিতিশীল আবহাওয়া জেলেদের জীবনে বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করে। অনেক সময় ঝড়ের কবলে পড়ে জেলে নৌকা ও জাল হারান, এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। এছাড়া নদীতে দস্যুতা, চাঁদাবাজি ও অবৈধ ট্রলার মালিকদের চাপও তাদের নিরাপদ জীবিকা হুমকির মুখে ঠেলে দেয়।
আধুনিক বাজার ব্যবস্থায় জেলেদের অবস্থানও দুর্বল। তারা সরাসরি মাছ বিক্রি করতে পারেন না; আড়তদার ও মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদের কষ্টার্জিত মাছ কম দামে কিনে নেন। ফলে জেলেরা প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। অনেক সময় বাজারে চাহিদা থাকলেও জেলেদের হাতে তেমন আয় থাকে না।
এত কিছুর পরও জেলেরা হাল ছাড়েন না। মাছ ধরা তাদের কাছে শুধু পেশা নয়, জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা বিশ্বাস করেন নদী বা সমুদ্রই তাদের রুজির পথ দেখাবে। তবে টেকসই সমাধানের জন্য সরকারকে জেলেদের জন্য কার্যকর সহায়তা, সহজ শর্তে ঋণ, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে জেলেদের অবদান অপরিসীম। তাদের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষিত না হলে মাছের উৎপাদন টেকসই হবে না। তাই আজ প্রয়োজন জেলেদের জীবনে স্থায়ী নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা, যাতে তারা আর অনিশ্চয়তার পথে নয়, নিশ্চিন্ত জীবিকার পথে হাঁটতে পারেন।
জেলেদের পরিবারে প্রাচুর্য নেই। অধিকাংশ পরিবার নিম্ন আয়ের হওয়ায় সংসারের চাহিদা পূরণ করা কষ্টকর। সন্তানদের পড়াশোনার খরচ, খাবার, পোশাক, চিকিৎসা সবকিছুই এক বিশাল চাপ। অনেক সময় জেলের স্ত্রীরা পরিবারের খরচ চালাতে ছোটখাটো কাজ করেন।
তাদের পরিবারের ভেতরে ভালোবাসা ও মমতা থাকলেও অভাবের কারণে প্রায়শই কলহ দেখা দেয়। সন্তানরা অনেক সময় পড়াশোনা শেষ করতে পারে না; ছোটবেলাতেই বাবার নৌকায় জাল ফেলতে শেখে। দারিদ্র্যের কারণে শিশুশ্রম, অল্প বয়সে বিয়েÑএসব সামাজিক সমস্যা তাদের পরিবারেও বিদ্যমান।
বাংলাদেশের নদী-নির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতিতে জেলেদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নদী ও সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এই জীবনের পেছনে লুকিয়ে আছে এক অজানা কষ্ট, অপূর্ণতা আর সংগ্রামের গল্প। বিশেষ করে জেলেদের পারিবারিক জীবনে অর্থনৈতিক সংকট, অনিশ্চয়তা এবং সামাজিক বৈষম্য এক অদৃশ্য শৃঙ্খল হিসেবে কাজ করে।
জেলেদের পরিবারের নারী ও শিশুরা প্রতিদিন অজানা দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটান। যখন স্বামী সমুদ্রে বা নদীতে মাছ ধরতে যান, তখন পরিবারের সদস্যরা ভয়ে অপেক্ষা করেনÑতারা নিরাপদে ফিরবেন তো? ঝড়-বৃষ্টি কিংবা দুর্ঘটনা প্রায়ই প্রাণ কেড়ে নেয় বহু জেলের। ফলে অসংখ্য পরিবার অকালেই স্বজন হারানোর শোক নিয়ে বেঁচে থাকে।
অর্থনৈতিক অনটন জেলেদের সংসারের সবচেয়ে বড় সমস্যা। মাছ না পেলে আয় হয় না, আয় না হলে সংসার চলে না। ফলে পরিবারে চাহিদা পূরণ হয় না, শিশুদের শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয়। অনেক জেলে পরিবার তাদের সন্তানদের স্কুল থেকে ঝরে পড়তে বাধ্য করে, কারণ সংসার চালাতে শিশুকেও শ্রমে যুক্ত হতে হয়। এর ফলে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে একটি বড় প্রজন্ম দারিদ্র্যের চক্রেই বন্দি হয়ে পড়ে।
নারীদের সংগ্রামও নেহাত কম নয়। স্বামী যখন নদীতে, তখন সংসার সামলানো, সন্তান লালনপালন, কখনো কখনো বাজার থেকে মাছ বিক্রি করা সব দায়িত্বই নিতে হয় তাদের। অনেক নারী বলেন, স্বামী যদি মাছ না আনতে পারে, তাহলে সংসারে কী রান্না হবে, তা নিয়েই চিন্তা করতে হয়। অর্থকষ্টের কারণে তারা প্রায়ই চিকিৎসা বা পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হন।
সামাজিক বৈষম্যও জেলেদের জীবনে বড় এক বাধা। সমাজে তারা প্রায়শই প্রান্তিক শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত হন। উন্নত সুযোগ-সুবিধা কিংবা সরকারি সহায়তার ক্ষেত্রেও তাদের বঞ্চনার অভিযোগ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার যে ত্রাণ দেয়, তা অনেক সময় সবার কাছে পৌঁছায় না। ফলে পরিবারগুলো আরও বিপদে পড়ে।
তারপরও জেলেদের পরিবার আশা ছাড়ে না। তারা বিশ্বাস করেন, নদী একদিন তাদের ভাগ্য বদলাবে। সন্তানদের পড়াশোনার মাধ্যমে জীবনের কষ্ট ঘোচানোর স্বপ্ন দেখেন। অনেক পরিবার বিকল্প আয়ের পথ খুঁজতে চেষ্টা করছে কেউ কৃষিকাজে, কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসায়, আবার কেউ নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করছেন।
তবে টেকসই সমাধানের জন্য জেলে পরিবারের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। শিশুদের শিক্ষায় প্রণোদনা, নারীদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ, জেলেদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারলে পরিবারগুলো কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে জেলেদের অবদান অমূল্য। অথচ তাদের পরিবার আজও দারিদ্র্য, অনিশ্চয়তা ও অপূর্ণতার ছায়ায় ঢাকা। তাই রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব হলো জেলে পরিবারের জীবনে স্থায়ী নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা, যাতে তারা কেবল সংগ্রামের গল্প নয়, পূর্ণতার জীবনও গড়ে তুলতে পারেন।
জেলেদের সামাজিক জীবন অন্য পেশার মানুষের তুলনায় ভিন্ন। তারা নদীকেন্দ্রিক বসতিতে বসবাস করেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা গুচ্ছগ্রামে বা নদীর তীরে ছোট ছোট ঝুপড়িতে বাস করেন। সমাজে প্রায়শই তারা অবহেলিত। অন্যদের মতো জমি বা স্থায়ী আয় তাদের নেই। ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকে।
তবুও তাদের মাঝে একধরনের ঐক্য রয়েছে। একজন জেলের বিপদে অন্যরা এগিয়ে আসে। ঝড়-বৃষ্টি বা দুর্ঘটনায় কারো নৌকা ভেসে গেলে, সবাই মিলে তাকে সাহায্য করে। উৎসব-অনুষ্ঠানও তারা মিলেমিশে পালন করে।
নদীর বুক শুধু মাছের ভাণ্ডার নয়, এটি এক বিপদের জায়গাও। হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়, বজ্রপাত, তীব্র স্রোত কিংবা বর্ষার বন্যা জেলেদের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি। প্রায়ই শোনা যায় নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনা। অনেক জেলে নদীতে নিখোঁজ হন, তাদের আর খোঁজ মেলে না। তখন অসহায় পরিবার সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই শুরু করে।
বৃষ্টির দিনে কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের সময় তারা নদীতে যেতে ভয় পেলেও জীবিকার তাগিদে অনেকেই ঝুঁকি নেন। কারণ, মাছ না ধরলে পরিবার না খেয়ে থাকে।
দেশের নদী ও সমুদ্রপাড়ের জীবনে জেলেরা অন্যতম প্রধান পেশাজীবী। তাদের প্রতিদিনের সংগ্রাম নদীর খামখেয়ালি স্বভাব আর প্রকৃতির অনিশ্চয়তার সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঝড়-বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় কিংবা হঠাৎ জলোচ্ছ্বাসÑএসব দুর্যোগ যেন জেলেদের জীবনের স্থায়ী সঙ্গী।
ভোর হতে না হতেই অনেক জেলে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে নদীতে নামেন। আকাশ পরিষ্কার থাকলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা বদলে যেতে পারে। কালো মেঘ জমে ওঠে, ঝোড়ো বাতাস শুরু হয়, নদী ফুলে-ফেঁপে ওঠে। এ সময় ছোট নৌকা চালিয়ে মাঝনদীতে থাকা জেলেরা মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই টিকে থাকার লড়াই চালান। অনেক সময় জাল, নৌকা, এমনকি জীবনও হারাতে হয়।
নদীর এই খামখেয়ালিপনা শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগেই সীমাবদ্ধ নয়। শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যায়, মাছের প্রাচুর্য কমে যায়। আবার বর্ষাকালে অতিরিক্ত স্রোত ও প্লাবনে জাল ফেলাই কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে জেলেদের আয় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। একদিন ভালো মাছ পেলে কয়েকদিন সংসার চলে, আবার টানা কয়েকদিন শূন্য হাতে ফিরতে হয়।
ঝড়ের সময় জেলে পরিবারের কষ্ট আরও বেড়ে যায়। স্বামী-সন্তান নদীতে থাকায় নারী ও শিশুরা উদ্বেগে দিন কাটান। ঝড়ের খবর শুনলেই তারা দোয়া করতে থাকেন, প্রিয়জন নিরাপদে ফিরে আসবেন কি না সেই উৎকণ্ঠা ঘিরে ধরে সবাইকে। অনেক সময় কোনো পরিবার তাদের স্বজনকে হারিয়ে সারাজীবন দুঃখে দিন কাটান।
সরকারি দপ্তরগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে নদীতে নামতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রচার করে। তবে সব জেলে তা মানতে পারেন না। কারণ, না গেলে আয় হবে না, সংসার চলবে না। তাই তারা জানেন ঝুঁকি আছে, তবুও নদীতে নামতে বাধ্য হন। অনেক জেলে বলেন, পেটে ভাত না থাকলে ঝড়-বৃষ্টি আর নদীর ভয় দেখলে কী হবে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আধুনিক নৌকা, নিরাপত্তা সরঞ্জাম, সহজ যোগাযোগব্যবস্থা ও বিকল্প কর্মসংস্থান দরকার। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ মৌসুমে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিলে জেলেরা প্রাণহানির ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নামতে বাধ্য হবেন না।
বাংলাদেশের অর্থনীতি ও খাদ্যচাহিদা পূরণে জেলেদের অবদান অনস্বীকার্য। অথচ তারা প্রতিদিন ঝড়-বৃষ্টি ও নদীর খামখেয়ালি স্বভাবের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছেন। তাই তাদের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
বন্যা ও খরার এই বৈপরীত্য তাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। একদিকে অতিরিক্ত পানি, অন্যদিকে পানির অভাব দুই অবস্থাতেই তাদের জীবন দুর্বিষহ।
অভাব-অনটনের কারণে জেলেদের পরিবারে স্বাস্থ্যসেবা প্রায় অপ্রতুল। অপুষ্টি, ডায়রিয়া, জ্বর, চর্মরোগসহ নানা রোগ তাদের পরিবারে ঘন ঘন দেখা দেয়। মহামারীর সময় যেমন কোভিড-১৯ এ অনেক জেলে নদীতে যেতে পারেননি। মাছ ধরার উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের জীবন আরও কঠিন হয়েছে। চিকিৎসার খরচ বহন করা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
জেলে পরিবারের শিশুরা অন্য শিশুদের মতো স্বপ্ন দেখতে জানে। তারাও স্কুলে যেতে চায়, পড়াশোনা করে বড় হতে চায়। কিন্তু অভাব তাদের স্বপ্নকে ভেঙে দেয়। অনেক শিশু অল্প বয়সেই পড়াশোনা ছেড়ে বাবার সাথে নদীতে নামে। কেউ আবার মাছ বিক্রি করতে বাজারে যায়। ফলে তাদের শৈশব কেটে যায় শ্রমের ভেতরে।
বাংলাদেশ সরকার জেলেদের সহায়তার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ইলিশ প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে তাদেরকে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে চাল দেওয়া হয়। তবে এই সহায়তা সব জেলের কাছে পৌঁছায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় তারা বঞ্চিত হন রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের কারণে।
এছাড়া এনজিওগুলো মাইক্রোক্রেডিট বা ছোট ঋণের মাধ্যমে তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করে। তবে ঋণ শোধ করতে গিয়ে অনেক সময় তারা নতুন করে কষ্টে পড়ে।
নদীকে ঘিরে তাদের মাঝে রয়েছে নানা বিশ্বাস ও সংস্কৃতি। কেউ নদীকে মায়ের রূপে কল্পনা করে। মাছ ধরা শুরু করার আগে প্রার্থনা করে। বিশেষ উৎসবে তারা নৌকা সাজায়, গান গায়, নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা করে। এসব তাদের জীবনে আনন্দের রঙ যোগ করে।
সব সংগ্রামের মাঝেও জেলে সমাজের মানুষ স্বপ্ন দেখে। তারা চায় সন্তানরা পড়াশোনা করে যেন ভিন্ন পেশায় যেতে পারে, অভাবের দুষ্টচক্র ভাঙতে পারে। তারা চায় নদীর মাছ আবার বেড়ে উঠুক, তাদের জীবিকা টেকসই হোক। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন, নদী ভাঙন, দূষণ ও অব্যবস্থাপনার কারণে সেই স্বপ্ন প্রতিদিনই কঠিন হয়ে উঠছে।
নদীকেন্দ্রিক জীবন মানেই সৌন্দর্যের সঙ্গে সংগ্রামের এক মিশ্র বাস্তবতা। নদী যেমন দেয়, তেমনি কেড়ে নেয়। জেলে সমাজের জীবন আমাদের সামনে তুলে ধরে মানুষ কীভাবে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকে। তাদের চোখে ভোরের নদীর আলো যেমন নতুন আশার প্রতীক, তেমনি রাতের অন্ধকার ঝড়ো হাওয়া এক অনিশ্চিত জীবনের প্রতিচ্ছবি।
তাদের গল্প শুধু জেলের গল্প নয়, এটি মানবজীবনের অদম্য সংগ্রামের গল্প। সঠিক সহায়তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও জীবিকার বিকল্প সুযোগ পেলে এই মানুষগুলো দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। নদীর মতোই তারা তখন হবে অবারিত, স্বপ্নময় ও আশাবাদী।
উজ্জ্বল হোসাইন : প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।