খুঁজুন
                               
শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১১ শ্রাবণ, ১৪৩২

কবি নজরুলের রাজনৈতিক ও সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:১৬ অপরাহ্ণ
কবি নজরুলের রাজনৈতিক ও সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য কবি, যিনি কেবল সাহিত্যিক সৃষ্টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং তাঁর রচনাগুলোর মাধ্যমে সমাজ ও রাজনীতির পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন। তিনি ছিলেন বিদ্রোহী, মানবতাবাদী এবং সাম্যবাদী চিন্তাধারার এক উজ্জ্বল প্রতিনিধি। তাঁর সাহিত্য, গান ও বক্তৃতায় শোষণ, সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ, নারীর প্রতি বৈষম্য এবং ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ প্রকাশ পেয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সাহিত্য ও কর্মের মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর বিখ্যাত কবিতা “বিদ্রোহী” (১৯২২) উপনিবেশবাদী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের এক অনন্য দলিল। তিনি ব্রিটিশ শাসনের নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলেছিলেন এবং তাঁর সাহিত্য জনগণের মাঝে চেতনা ছড়িয়ে দেয়। তাঁর “আনন্দময়ীর আগমনে” কবিতায় তিনি ব্রিটিশদের তুলনা করেছেন অত্যাচারী শক্তির সঙ্গে এবং ভারতকে মায়েরূপে কল্পনা করে ব্রিটিশ শাসকদের নির্মমতার চিত্র এঁকেছেন। এজন্য তাঁকে কারাবরণও করতে হয়েছে। নজরুল কেবল কলম দিয়েই নয়, তরুণ বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯১৭ সালে তিনি ব্রিটিশ ভারতের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং সামরিক জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিপ্লবী চেতনার উন্মেষ ঘটান। বিপ্লবের ডাক দিয়ে তিনি লিখেছিলেন “চল্ চল্ চল্”, যা পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রণসঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তাঁর বিভিন্ন গান ও কবিতায় তিনি যুবসমাজকে স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করেছেন। নজরুল ইসলাম ছিলেন মেহনতি মানুষের কবি। তিনি সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিলেন এবং সমাজতন্ত্রের আদর্শকে সমর্থন করতেন। তাঁর কবিতা “দুর্দিনের যাত্রী”, “কাণ্ডারী হুঁশিয়ার” ও “সমবেত বিদ্রোহী রণধ্বনি” তে তিনি শোষিত মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন।
তিনি বলেছিলেন
গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।
এই চেতনা সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতিফলন। তিনি মনে করতেন, শ্রমিক, কৃষক ও নিম্নবর্গের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা উচিত।
নজরুলের সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা : কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি শুধু কবি বা সাহিত্যিকই ছিলেন না, বরং ছিলেন এক সমাজচিন্তক ও সংস্কারক। তাঁর সাহিত্য, কবিতা, গান, প্রবন্ধ ও উপন্যাসের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে সমাজ পরিবর্তনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি শুধু রাজনৈতিক বিদ্রোহেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার, অসাম্য, নারীর প্রতি বৈষম্য, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। নজরুলের সাহিত্যিক কর্মজীবন ছিল বৈচিত্র্যময়, যেখানে তিনি সমকালীন সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা মূলত মানবতাবাদ, সাম্য, স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার মতো বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। এই প্রবন্ধে তাঁর সমাজ সংস্কারমূলক দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হবে। নজরুলের সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সাম্য ও মানবতা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সমাজে কেউ ছোট-বড় নয়, ধর্ম-বর্ণ-জাতিগত পরিচয় মানুষের প্রকৃত পরিচয় নয়, বরং মানবতাই মানুষের প্রকৃত পরিচয়।
তিনি বলেছিলেন-
গাহি সাম্যের গান,
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।
এই পংক্তির মাধ্যমে তিনি ঘোষণা করেছেন যে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। তিনি সমাজের ধনী-গরিব, জাত-পাতের বিভেদকে অস্বীকার করেছেন এবং প্রত্যেক মানুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন।
তাঁর কবিতা ও গানে বারবার ফুটে উঠেছে সামাজিক সাম্যের চেতনা। “সাম্যবাদী” কবিতায় তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন
আমি সেই দিন হবো শান্ত, যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল
আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ
ভীম রণভূমে রণিবে না!
এই কবিতায় তিনি সমাজের সব শোষিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে শোষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক অনন্য প্রতিভূ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ধর্ম মানুষের কল্যাণের জন্য, বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য নয়। তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন এবং তাঁর লেখায় উভয় ধর্মের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সমন্বয় ঘটিয়েছেন।
তিনি লিখেছিলেন-
মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম, হিন্দু-মুসলমান,

হিন্দু আর মুসলমান, মুসলমান আর হিন্দু,
এই সত্য জেনে গিয়েছে বিশ্ব, জানে ভারত-ভূ।
এই ধরনের বক্তব্য ও সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তিনি বারবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন। তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলতেন, ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো মানবতার সেবা, কিন্তু সমাজে এটি প্রায়ই ভুলভাবে ব্যবহৃত হয়। “ধর্ম ও মানবতা” শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি বলেছেন-
মানুষের কল্যাণই যদি ধর্ম না হয়, তবে সে ধর্ম ধর্ম নয়—সেটা অধর্ম।
তাঁর রচিত গজল, শ্যামাসংগীত ও হামদ-নাতের মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় সংগীতের এক অনন্য সমন্বয় ঘটিয়েছেন, যা আজও অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির উজ্জ্বল উদাহরণ।
নারী মুক্তি ও নারীর অধিকারের পক্ষে তাঁর অবস্থান
নজরুল ছিলেন নারীর অধিকারের অন্যতম শক্তিশালী প্রবক্তা। তিনি মনে করতেন যে সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার থাকা উচিত এবং নারীকে অবদমিত রেখে সমাজ কখনো উন্নত হতে পারে না।
তাঁর কবিতায় নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সমতার ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে। “নারী” কবিতায় তিনি লিখেছেন-
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
তিনি নারীর স্বাধীনতার জন্য জোর দাবি তুলেছিলেন এবং নারীকে শুধু সংসারের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ না রেখে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
“বিদ্রোহী নারী” কবিতায় তিনি নারীর শক্তি ও স্বাধীনতার কথা বলেছেন-
আমি চির বিদ্রোহিনী বীর
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!
এছাড়াও, নজরুল কন্যাসন্তানকে অবহেলা করার প্রবণতার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন এবং নারীশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের পক্ষে কথা বলেছেন। তাঁর অনেক গান ও কবিতায় নারীর প্রতি সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠে এসেছে।
নজরুল ছিলেন শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর। তিনি কৃষক, শ্রমিক, মজুর, দারিদ্র্যপীড়িত সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন এবং তাঁদের অধিকার আদায়ের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন।

তাঁর কবিতা “দুর্দিনের যাত্রী”, “কাণ্ডারী হুঁশিয়ার” ও “সাম্যবাদী” তে তিনি সমাজের বঞ্চিত শ্রেণির দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন।
তিনি লিখেছেন-
ওরে চাষী, জাগরে তোরা!
মাটির বুকের প্রাণের ধন
লুটেরারা লুটে খায়!
ওরে মজুর, কুলি, মাল্লা,
সকল শোষিত, নিপীড়িত, নিঃস্ব জাতি
জেগে ওঠো! লও শক্তি হাতে!
এই কথাগুলো প্রমাণ করে যে তিনি শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য সাহিত্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
নজরুল এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে কোনো জাতিভেদ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, লিঙ্গবৈষম্য কিংবা অর্থনৈতিক শোষণ থাকবে না। তিনি সমাজের সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং একটি মানবিক ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি ঘোষণা করেছেন-
দেখিনু সেদিন রেলে
কুলি বলে এক বাবু বসাতে চায়নি সাথে
কহিলাম আমি, আছে নাকি মোর চামড়া তার চেয়ে খাঁটি?
এই ধরনের সাহিত্যকর্ম তাঁর সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক
কাজী নজরুল ইসলামের সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা কেবল তাঁর সময়ের জন্য নয়, বরং আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তিনি মানবতার কবি, যিনি অন্যায়, শোষণ, সাম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন।
তাঁর সাহিত্য আমাদের শিখিয়েছেন-
সাম্যের জন্য লড়াই করা উচিত
ধর্মকে বিভেদ নয়, ঐক্যের মাধ্যম হিসেবে দেখা উচিত
নারীর অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন
শ্রমিক ও কৃষকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি

তাঁর আদর্শ আজও আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। সমাজকে বদলাতে হলে নজরুলের মতো বিদ্রোহী মনোভাব ধারণ করাই হবে প্রকৃত শ্রদ্ধার প্রকাশ।
কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক ও সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা আজও প্রাসঙ্গিক। তাঁর সাহিত্য, কবিতা ও গান আমাদের স্বাধীনতা, সাম্য, মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়ের জন্য সংগ্রামের শিক্ষা দেয়। তিনি কেবল একজন কবি ছিলেন না, ছিলেন এক সমাজচেতক, যিনি নিজের কলমকে অস্ত্র বানিয়ে শোষিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। নজরুলের ভাবনা আমাদের বর্তমান সমাজেও আলো ছড়ায়। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করলেই আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক, সাম্যভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে পারব।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।