খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

কবি নজরুলের রাজনৈতিক ও সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:১৬ অপরাহ্ণ
কবি নজরুলের রাজনৈতিক ও সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য কবি, যিনি কেবল সাহিত্যিক সৃষ্টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং তাঁর রচনাগুলোর মাধ্যমে সমাজ ও রাজনীতির পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন। তিনি ছিলেন বিদ্রোহী, মানবতাবাদী এবং সাম্যবাদী চিন্তাধারার এক উজ্জ্বল প্রতিনিধি। তাঁর সাহিত্য, গান ও বক্তৃতায় শোষণ, সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ, নারীর প্রতি বৈষম্য এবং ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ প্রকাশ পেয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সাহিত্য ও কর্মের মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর বিখ্যাত কবিতা “বিদ্রোহী” (১৯২২) উপনিবেশবাদী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের এক অনন্য দলিল। তিনি ব্রিটিশ শাসনের নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলেছিলেন এবং তাঁর সাহিত্য জনগণের মাঝে চেতনা ছড়িয়ে দেয়। তাঁর “আনন্দময়ীর আগমনে” কবিতায় তিনি ব্রিটিশদের তুলনা করেছেন অত্যাচারী শক্তির সঙ্গে এবং ভারতকে মায়েরূপে কল্পনা করে ব্রিটিশ শাসকদের নির্মমতার চিত্র এঁকেছেন। এজন্য তাঁকে কারাবরণও করতে হয়েছে। নজরুল কেবল কলম দিয়েই নয়, তরুণ বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯১৭ সালে তিনি ব্রিটিশ ভারতের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং সামরিক জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিপ্লবী চেতনার উন্মেষ ঘটান। বিপ্লবের ডাক দিয়ে তিনি লিখেছিলেন “চল্ চল্ চল্”, যা পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রণসঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তাঁর বিভিন্ন গান ও কবিতায় তিনি যুবসমাজকে স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করেছেন। নজরুল ইসলাম ছিলেন মেহনতি মানুষের কবি। তিনি সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিলেন এবং সমাজতন্ত্রের আদর্শকে সমর্থন করতেন। তাঁর কবিতা “দুর্দিনের যাত্রী”, “কাণ্ডারী হুঁশিয়ার” ও “সমবেত বিদ্রোহী রণধ্বনি” তে তিনি শোষিত মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন।
তিনি বলেছিলেন
গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।
এই চেতনা সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতিফলন। তিনি মনে করতেন, শ্রমিক, কৃষক ও নিম্নবর্গের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা উচিত।
নজরুলের সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা : কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি শুধু কবি বা সাহিত্যিকই ছিলেন না, বরং ছিলেন এক সমাজচিন্তক ও সংস্কারক। তাঁর সাহিত্য, কবিতা, গান, প্রবন্ধ ও উপন্যাসের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে সমাজ পরিবর্তনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি শুধু রাজনৈতিক বিদ্রোহেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার, অসাম্য, নারীর প্রতি বৈষম্য, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। নজরুলের সাহিত্যিক কর্মজীবন ছিল বৈচিত্র্যময়, যেখানে তিনি সমকালীন সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা মূলত মানবতাবাদ, সাম্য, স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার মতো বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। এই প্রবন্ধে তাঁর সমাজ সংস্কারমূলক দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হবে। নজরুলের সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সাম্য ও মানবতা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সমাজে কেউ ছোট-বড় নয়, ধর্ম-বর্ণ-জাতিগত পরিচয় মানুষের প্রকৃত পরিচয় নয়, বরং মানবতাই মানুষের প্রকৃত পরিচয়।
তিনি বলেছিলেন-
গাহি সাম্যের গান,
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।
এই পংক্তির মাধ্যমে তিনি ঘোষণা করেছেন যে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। তিনি সমাজের ধনী-গরিব, জাত-পাতের বিভেদকে অস্বীকার করেছেন এবং প্রত্যেক মানুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন।
তাঁর কবিতা ও গানে বারবার ফুটে উঠেছে সামাজিক সাম্যের চেতনা। “সাম্যবাদী” কবিতায় তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন
আমি সেই দিন হবো শান্ত, যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল
আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ
ভীম রণভূমে রণিবে না!
এই কবিতায় তিনি সমাজের সব শোষিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে শোষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক অনন্য প্রতিভূ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ধর্ম মানুষের কল্যাণের জন্য, বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য নয়। তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন এবং তাঁর লেখায় উভয় ধর্মের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সমন্বয় ঘটিয়েছেন।
তিনি লিখেছিলেন-
মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম, হিন্দু-মুসলমান,

হিন্দু আর মুসলমান, মুসলমান আর হিন্দু,
এই সত্য জেনে গিয়েছে বিশ্ব, জানে ভারত-ভূ।
এই ধরনের বক্তব্য ও সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তিনি বারবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন। তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলতেন, ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো মানবতার সেবা, কিন্তু সমাজে এটি প্রায়ই ভুলভাবে ব্যবহৃত হয়। “ধর্ম ও মানবতা” শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি বলেছেন-
মানুষের কল্যাণই যদি ধর্ম না হয়, তবে সে ধর্ম ধর্ম নয়—সেটা অধর্ম।
তাঁর রচিত গজল, শ্যামাসংগীত ও হামদ-নাতের মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় সংগীতের এক অনন্য সমন্বয় ঘটিয়েছেন, যা আজও অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির উজ্জ্বল উদাহরণ।
নারী মুক্তি ও নারীর অধিকারের পক্ষে তাঁর অবস্থান
নজরুল ছিলেন নারীর অধিকারের অন্যতম শক্তিশালী প্রবক্তা। তিনি মনে করতেন যে সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার থাকা উচিত এবং নারীকে অবদমিত রেখে সমাজ কখনো উন্নত হতে পারে না।
তাঁর কবিতায় নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সমতার ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে। “নারী” কবিতায় তিনি লিখেছেন-
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
তিনি নারীর স্বাধীনতার জন্য জোর দাবি তুলেছিলেন এবং নারীকে শুধু সংসারের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ না রেখে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
“বিদ্রোহী নারী” কবিতায় তিনি নারীর শক্তি ও স্বাধীনতার কথা বলেছেন-
আমি চির বিদ্রোহিনী বীর
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!
এছাড়াও, নজরুল কন্যাসন্তানকে অবহেলা করার প্রবণতার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন এবং নারীশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের পক্ষে কথা বলেছেন। তাঁর অনেক গান ও কবিতায় নারীর প্রতি সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠে এসেছে।
নজরুল ছিলেন শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর। তিনি কৃষক, শ্রমিক, মজুর, দারিদ্র্যপীড়িত সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন এবং তাঁদের অধিকার আদায়ের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন।

তাঁর কবিতা “দুর্দিনের যাত্রী”, “কাণ্ডারী হুঁশিয়ার” ও “সাম্যবাদী” তে তিনি সমাজের বঞ্চিত শ্রেণির দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন।
তিনি লিখেছেন-
ওরে চাষী, জাগরে তোরা!
মাটির বুকের প্রাণের ধন
লুটেরারা লুটে খায়!
ওরে মজুর, কুলি, মাল্লা,
সকল শোষিত, নিপীড়িত, নিঃস্ব জাতি
জেগে ওঠো! লও শক্তি হাতে!
এই কথাগুলো প্রমাণ করে যে তিনি শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য সাহিত্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
নজরুল এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে কোনো জাতিভেদ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, লিঙ্গবৈষম্য কিংবা অর্থনৈতিক শোষণ থাকবে না। তিনি সমাজের সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং একটি মানবিক ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি ঘোষণা করেছেন-
দেখিনু সেদিন রেলে
কুলি বলে এক বাবু বসাতে চায়নি সাথে
কহিলাম আমি, আছে নাকি মোর চামড়া তার চেয়ে খাঁটি?
এই ধরনের সাহিত্যকর্ম তাঁর সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক
কাজী নজরুল ইসলামের সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা কেবল তাঁর সময়ের জন্য নয়, বরং আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তিনি মানবতার কবি, যিনি অন্যায়, শোষণ, সাম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন।
তাঁর সাহিত্য আমাদের শিখিয়েছেন-
সাম্যের জন্য লড়াই করা উচিত
ধর্মকে বিভেদ নয়, ঐক্যের মাধ্যম হিসেবে দেখা উচিত
নারীর অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন
শ্রমিক ও কৃষকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি

তাঁর আদর্শ আজও আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। সমাজকে বদলাতে হলে নজরুলের মতো বিদ্রোহী মনোভাব ধারণ করাই হবে প্রকৃত শ্রদ্ধার প্রকাশ।
কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক ও সমাজ সংস্কারমূলক ভাবনা আজও প্রাসঙ্গিক। তাঁর সাহিত্য, কবিতা ও গান আমাদের স্বাধীনতা, সাম্য, মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়ের জন্য সংগ্রামের শিক্ষা দেয়। তিনি কেবল একজন কবি ছিলেন না, ছিলেন এক সমাজচেতক, যিনি নিজের কলমকে অস্ত্র বানিয়ে শোষিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। নজরুলের ভাবনা আমাদের বর্তমান সমাজেও আলো ছড়ায়। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করলেই আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক, সাম্যভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে পারব।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়েও জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ১০৪ জন। তাদের ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা বলছেন আন্দোলনে সম্পৃক্তকারীরা। এসব ভুয়া ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে সরকার। তাদের নামের গেজেট বাতিল করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের আট বিভাগে ১০৪ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ছাড়াও একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, এমন ২৩ জনের একটি গেজেট রেখে অন্যটি বাতিল করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের প্রকাশিত গেজেট তালিকায় তারা আহত জুলাই-যোদ্ধা। কিন্তু তারা আসলে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে আহত হয়নি। তারা প্রতারণা করেছেন এবং কয়েকজনের নামে একাধিক গেজেট প্রকাশিত হওয়ার গেজেট বাতিলের জন্য জেলা কমিটির সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন ভুয়া ও ১ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে, সিলেট বিভাগ ২৬ জন ও ১ জনের দুবার গেজেট, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৪ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, খুলনা বিভাগে ৫ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, রংপুর ২ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা, ঢাকা বিভাগে ৭ জন ও ৭ জনের নামে দুবার গেজেট, রাজশাহী বিভাগে ৯ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, বরিশাল বিভাগের ২ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে।

সব মিলিয়ে ১২৭ জনের গেজেট বাতিল করবে সরকার। তাদের মধ্যে দুবার করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে ২৩ জনের। বাকি ১০৪ জন অহত নন ও আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে গেজেট-ভুক্ত হয়েছে। তাই নামের গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

যেসব জুলাই-যোদ্ধার গেজেট বাতিল করতে সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি, এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের ২০ জন হলেন নেত্রকোনার সৈয়দ তরিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৮০; মোহাম্মদ নুরুল আমিন, গেজেট নম্বর ৮৮; তানভীর আহমেদ, গেজেট নম্বর ১২১; আছিয়া খাতুন গেজেট, নম্বর ১২৩; রুহুল আমিন, গেজেট নম্বর ১২৭; মো. আমি হাসান রুপম, গেজেট নম্বর ১২৯, মোহাম্মদ আকিব তালুকদার, গেজেট নম্বর ১৪৬; মো. সুজন মিয়া, গেজেট নম্বর ১৫৫; মো. ইমন শাহারিয়া, গেজেট নম্বর ১৬৫; আশরাফুল ইসলাম জাসাম, গেজেট নম্বর ১৭২; মুশফিকুর রহমান, গেজেট নম্বর ১৯৭; মো সজিব, গেজেট নম্বর ১৯৮; সোহাগ মিয়া, গেজেট নম্বর ১৯৯; রুবেল মিয়া, গেজেট নম্বর ৩৬২; মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৩৬৩; রাব্বি হাসান শ্রীনি, গ্যাজেট নম্বর ৫৬৫; মোহাম্মদ আজহারুল ইসলামিক, গেজেট নম্বর ৫৬৬; মো. আবু ফরিদ আহামেদ, গেজেট নম্বর ৫৬৭; আফরিনা জান্নাত, গেজেট নম্বর ৫৭০; মাজহারুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৬৪৮।
ঢাকা বিভাগে ৭ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ও ৭ জনের নাম দুবার গেজেট-ভুক্ত হয়েছে, রাসেলে, গেজেট নম্বর ৬৭০; খন্দকার রাজ, গেজেট নম্বর ১০৬৩; রাফিউল নাঈম, গেজেট নম্বর ১১৬১; রাশেদুল ইসলাম অনিক, গেজেট নাম্বার ১১৬৩, আব্দুল্লাহ আল রাহাত, গেজেট নম্বর ১১৬৬; মো. মঞ্জমুল আলম, জিসান গেজেট নম্বর ১৯৩২; মো. সাইফুল ইসলাম শুভ, গেজেট নম্বর ২৬৮২; রিয়াজুল হাসান, গেজেট নম্বর ২৮৩৮; বেলায়াত হোসেন শাহীন, গেজেট নম্বর ২৮৩৯; মুজবর মৃধা, গেজেট নম্বর ৩৯৬৪; জিহাদ, গেজেট নম্বর ৩৪১৩; মো. রফিকুল সরদার, গেজেট নম্বর ৭৩৩; মো. মাসুদুর রহমান, গেজেট নম্বর ৬৪৫; মোছা রুমি, গেজেট নম্বর ৩৪৩১; মো. রিয়াজ শরীফ, গেজেট নম্বর ১৩৮২।
চট্টগ্রাম বিভাগ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ৩৫জন তারা হলেন, চট্টগ্রাম জেলার মো. শাগর, গেজেট নম্বর ৩২৮; আবদুল্লাহ আল নোমান গেজেট নম্বর ৪৬৯; নাইম উদ্দীন শাঈদ, গেজেট নম্বর ৪৯২; মোহা. শরিফুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫১৫; শাহাদাত ইকবাজ তাহনি, গেজেট নম্বর ৫২১; তাহমিনা ইকরার তারকি, গেজেট নম্বর ৫২২; মাহাবী তাজওয়ার, গেজেট নম্বর ৫৩৪; জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৫৪২; মো. আতিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৫২; মো. ইয়াছিন, গেজেট নম্বর ৫৬০; আরফাতুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৯৫; ফরহাদ আলম, গেজেট নম্বর ৬০১; মোদাসাদ সাহাদ কবির এমরান, গেজেট নম্বর ৬০৩; মুনজামিরুল হক চৌধুরী মামুর, গেজেট নম্বর ৬১৬; পঠন চন্দ্র নাথ, গেজেট নম্বর ৬২২; মিশকাত-আলম রিয়াদ, গেজেট নম্বর ৬৭৫; মো. এমরান, গেজেট নম্বর ৭৯৭; মাহাম্মদ সাগর, গেজেট নম্বর ৭৬৮; নুরুল্লাহ, গেজেট নম্বর ৭৮৯; সোহাম্মদ রাফি, গেজেট নম্বর ৭৯৯; ফয়সাল মোহাম্মদ শিয়াস, গেজেট নম্বর ৮০২; মোছা. ইছনিয়া আকতার, গেজেট নম্বর ৮২৪; মো. মাঈনুদ্দীন, গেজেট নম্বর ৮২৫; সাইমন, গেজেট নম্বর ৯৭৩; মো. আরিফ, গেজেট নম্বর ১৯৭৬; রাসেল, গেজেট নম্বর ১৯৮৬; রমজান আলী, গেজেট নম্বর ৯৮৭; মাহিম চৌধুরী, গেজেট নম্বর ৯৯৯; রিফাত বিন আল, গেজেট নম্বর ১৯৯৯।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে অনেকেই জুলাই যোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে, এমন অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এরপর ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই-যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া কথা বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তথ্যমতে, ক শ্রেণিতে অতি গুরুতর আহত ৬০২ জন, খ শ্রেণিতে গুরুতর আহত ১১১৮ জন, গ শ্রেণিতে আহত ১২০৮০ জন। নিহত ৮৪৪ জন। যার মধ্যে ৮ জনের গেজেট বাতিল করা হয়েছে। মোট ১৪ হাজার ৬৩৬ জনের নামে গেজেট করা প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব (জুলাই গণ অভ্যুত্থান অধিদপ্তর) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, যাদের নামে অভিযোগ ছিল সেসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের গেজেট বাতিল করা হবে এবং গেজেট বাতিল করার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গেজেট বাতিলের কাজ চলমান আছে।
জুলাই-যোদ্ধা না হয়েও যারা এককালীন অর্থসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগে গেজেট বাতিল করি, তারপর সবই পাওয়া যাবে।