খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

তৈলবাজ-তৈলসংস্কৃতি সামাজিক ও নৈতিকতার অবক্ষয়

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:৩৩ অপরাহ্ণ
তৈলবাজ-তৈলসংস্কৃতি সামাজিক ও নৈতিকতার অবক্ষয়

তৈলমর্দন এক অত্যন্ত পরিচিত সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, যা যুগে যুগে বিভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতিতে বিদ্যমান ছিল এবং এখনও রয়েছে। এটি মূলত ক্ষমতাসীন বা উচ্চপদস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা লাভের জন্য তাদের চাটুকারিতা, প্রশংসা বা অহেতুক প্রশংসার মাধ্যমে নিজের স্থান সুসংহত করার কৌশল। তৈলমর্দনের প্রক্রিয়া কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়েই নয়, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং পেশাগত ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তৈলমর্দন বলতে বোঝানো হয় এমন এক ধরণের আচরণ, যেখানে একজন ব্যক্তি নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অন্য একজনের প্রতি অতিরিক্ত প্রশংসা বা চাটুকারতা প্রদর্শন করে। সাধারণত, এটি করতে দেখা যায় এমন ব্যক্তিকে যিনি কোনো না কোনো সুবিধা পাওয়ার আশায় থাকেন। তৈলমর্দনের পেছনে লুকিয়ে থাকা প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো, নিজেকে উচ্চতর অবস্থানে নিয়ে যাওয়া বা নিজস্ব সমস্যার সহজ সমাধান লাভ করা। বাংলা ভাষায় তৈলমর্দন শব্দটি অত্যন্ত কৌতুকপূর্ণ অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটি এমন এক সামাজিক ব্যাধি, যা ব্যক্তি বা সমাজের স্বাভাবিক বিকাশে অন্তরায় সৃষ্টি করে। এ ধরনের আচরণ ব্যক্তিগত নীতিবোধ এবং আত্মসম্মানের পরিপন্থী।

মানবসভ্যতার প্রাচীন যুগ থেকেই তৈলমর্দনের উপস্থিতি লক্ষণীয়। প্রাচীন রাজা-রাজড়া বা সম্রাটদের দরবারে চাটুকারদের অস্তিত্ব ছিল খুবই সাধারণ। এদের কাজ ছিল রাজা বা শাসককে তুষ্ট করা এবং নিজের সুবিধা অর্জন করা। এ ধরনের আচরণ রাজদরবারে বা শাসনব্যবস্থার মধ্যে একধরনের গোষ্ঠীগত প্রভাব সৃষ্টি করত। শাসকগণ তৈলমর্দকদের আশীর্বাদে নিজের ক্ষমতা সুসংহত করতেন এবং তৈলমর্দকগণ সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত হতেন। আধুনিক যুগে তৈলমর্দন কেবল রাজনীতি নয়, কর্মক্ষেত্র, ব্যবসা, শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এখন এর রূপ ও মাত্রা কিছুটা পরিবর্তিত হলেও মূল ধারণাটি একই রয়ে গেছে।

তৈলমর্দন সাধারণত দুইভাবে প্রকাশ পায়-প্রশংসা বা চাটুকারিতা-একজন ব্যক্তিকে অহেতুক প্রশংসা করা বা তার কাজকে বাড়িয়ে দেখানো। বশ্যতা প্রদর্শন-ক্ষমতাসীন বা প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রতি অতিরিক্ত নম্রতা বা বিনয় প্রদর্শন করা। এ ধরনের আচরণে তৈলমর্দকের মধ্যে আত্মসম্মানের অভাব পরিলক্ষিত হয়। অনেকে মনে করেন, এটি একটি সামাজিক কৌশল, যা ব্যক্তিকে সুবিধাপ্রাপ্তির পথ সুগম করে। অন্যদিকে, এটি একটি নেতিবাচক মনোভাব, যা নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

তৈলমর্দনের প্রভাব ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রের উপর বহুমুখী। এর মধ্যে কিছু ইতিবাচক এবং বেশিরভাগই নেতিবাচক। তৈলমর্দনকারী ব্যক্তি অল্প সময়ে সুবিধা অর্জন করলেও তার দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য প্রায়শই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে, তার স্বভাব চাটুকার বা স্বার্থপর হিসেবে পরিচিতি পায়, যা সামাজিক অবস্থানকে দুর্বল করে।সমাজে তৈলমর্দনের কারণে প্রকৃত মেধা এবং যোগ্যতার অবমূল্যায়ন হয়। তৈলমর্দকরা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মন জয় করে, ফলে প্রকৃত মেধাবী এবং সৎ মানুষ প্রায়শই উপেক্ষিত হয়। এটি সমাজে বৈষম্য ও অবিচারের জন্ম দেয়। কর্মক্ষেত্রে তৈলমর্দনের ফলে যোগ্য ব্যক্তির পরিবর্তে চাটুকারদের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়। এতে প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা কমে যায় এবং কাজের পরিবেশে একধরনের নেতিবাচক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। যোগ্য কর্মীদের অবমূল্যায়ন কর্মক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি করে।

রাজনীতিতে তৈলমর্দনের ফলে শাসকগণ প্রকৃত সমস্যাগুলো থেকে দূরে সরে যান। তৈলমর্দকরা তাদের চাটুকারিতার মাধ্যমে শাসকদের ভুল পথে পরিচালিত করে। এতে জনগণের সমস্যা সমাধানে বিলম্ব হয় এবং শাসনব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারায়। তৈলমর্দনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করে। সেগুলো হলো : স্বার্থসিদ্ধি- ব্যক্তিগত বা পেশাগত সুবিধা অর্জনের উদ্দেশ্যে। আত্মবিশ্বাসের অভাব-নিজের যোগ্যতায় বিশ্বাসের অভাব থাকলে মানুষ অন্যের তুষ্টির মাধ্যমে নিজের অবস্থান তৈরি করতে চায়। ক্ষমতায় আসীনদের প্রভাব-ক্ষমতাসীন ব্যক্তির প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা তৈলমর্দনের প্রধান কারণ।
৪. নৈতিকতার অভাব: চাটুকারিতার পেছনে প্রায়শই নৈতিক মূল্যবোধের অভাব লক্ষ্য করা যায়।

তৈলমর্দনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। সেগুলো হলো : ব্যক্তি এবং সমাজের মধ্যে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। যোগ্যতা এবং দক্ষতার ভিত্তিতে মূল্যায়নের সংস্কৃতি গড়ে তোলা। জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে তৈলমর্দনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা। প্রশাসন ও রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

তৈলমর্দনের ধারণা আরও বিশদে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি মূলত এক প্রকার মানসিক কৌশল, যা মানুষ তার নিজের সুবিধার জন্য ব্যবহার করে। এই চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এবং প্রতিটি সময়ে এর ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখা গেছে। তবে এটি সর্বত্রই এক ধরনের স্বার্থপরতা এবং মানসিক দাসত্বের প্রতীক হিসেবে কাজ করেছে। প্রাচীন ভারতীয় রাজসভা থেকে শুরু করে রোমান সাম্রাজ্যের দরবার এবং চীনের সম্রাটদের প্রাসাদ পর্যন্ত সর্বত্র তৈলমর্দনের অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল। এ সময়ে রাজসভায় চাটুকাররা রাজা-রাজড়ার মনোরঞ্জনের জন্য গান গাওয়া, কবিতা রচনা এবং কল্পিত প্রশংসা করতেন। রাজদরবারে মিথ্যা প্রশংসা রাজাকে বাস্তবতা থেকে দূরে রাখত এবং এর ফলে রাজ্যের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতো। উপনিবেশিক শাসনামলে শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে সুযোগ পাওয়ার জন্য স্থানীয় মানুষদের একাংশ তৈলমর্দনের আশ্রয় নিত। ব্রিটিশদের প্রতি দাসত্ব প্রদর্শন করে অনেকেই ব্যক্তিগত ও পেশাগত সুবিধা আদায় করত। আধুনিক কালে এই চর্চাটি রাজনীতি ও কর্পোরেট সংস্কৃতিতে বিশেষভাবে দৃশ্যমান। এখন এটি কিছুটা পরিশীলিত হয়েছে, তবে মূল উদ্দেশ্য একদমই বদলায়নি।

তৈলমর্দনের সামাজিক প্রভাব সর্বব্যাপী। এটি সমাজের প্রতিটি স্তরে বিদ্যমান এবং ভিন্ন ভিন্ন রূপে দেখা যায়। অনেক সময় পরিবারের মধ্যে একজন সদস্য অন্য সদস্যের প্রশংসা বা চাটুকারতা করেন তার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। যেমন, অনেক সময় বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের মন জয় করতে তাদের প্রশংসা করা হয়। শিক্ষক বা প্রভাষকের কাছ থেকে ভালো গ্রেড বা সুবিধা পেতে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই তৈলমর্দনের আশ্রয় নেয়। এতে প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কর্পোরেট জগতে তোষামোদের প্রবণতা খুবই সাধারণ। কর্মক্ষেত্রে বস বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মনোরঞ্জনের জন্য তৈলমর্দন করার সংস্কৃতি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্কৃতিকে দুর্বল করে। রাজনীতিতে তৈলমর্দন সবচেয়ে বিপজ্জনক। নেতাদের চাটুকারিতা করা এবং তাদের ভুল সিদ্ধান্তকে সমর্থন করা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

তৈলমর্দন একটি নৈতিক সংকট সৃষ্টি করে। এটি ব্যক্তির নৈতিকতাবোধকে দুর্বল করে এবং তাকে এক ধরনের স্বার্থপরতার পথে পরিচালিত করে। নৈতিকভাবে শক্তিশালী সমাজ তৈলমর্দনের চর্চা কমিয়ে আনতে পারে। তৈলমর্দক ব্যক্তি নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের প্রতি অসৎ আচরণ করে। এটি অন্যের প্রতি ঈর্ষা, অবিশ্বাস এবং হিংসার জন্ম দেয়। একজন তৈলমর্দক ব্যক্তি কেবল নিজের উন্নতির জন্য কাজ করে, ফলে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং সামাজিক বন্ধন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়া তৈলমর্দনের একটি নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছে। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় উচ্চপদস্থ ব্যক্তি বা জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের পোস্টে অহেতুক প্রশংসা করেন, যাতে তারা সেই ব্যক্তির মনোযোগ পান। ইনফ্লুয়েন্সার বা জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের পোস্টে অসংখ্য চাটুকার মন্তব্য দেখা যায়, যা এক ধরনের ভার্চুয়াল তৈলমর্দনের উদাহরণ। কর্পোরেট সোশ্যাল মিডিয়ায় কর্মচারীরা অনেক সময় তাদের বস বা সহকর্মীদের প্রশংসা করে সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা করেন।

তৈলমর্দনের কিছু সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে, যা ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। তৈলমর্দনের কারণে প্রকৃত মেধাবী এবং যোগ্য ব্যক্তিরা প্রায়শই অবমূল্যায়িত হন। শাসকগোষ্ঠী বা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তৈলমর্দকদের আশ্রয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন। এটি সমাজে একধরনের অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে, যা বৈষম্যের জন্ম দেয়। তৈলমর্দন ব্যক্তির নৈতিক মূল্যবোধকে দুর্বল করে এবং তাকে আত্মকেন্দ্রিক করে তোলে। তৈলমর্দনের চর্চা নির্মূল করতে হলে নৈতিক শিক্ষা, সঠিক মূল্যবোধ এবং যোগ্যতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তৈলমর্দনের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। প্রতিভা ও মেধার যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে, যাতে তৈলমর্দকরা সুযোগ না পায়। শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যা তরুণ প্রজন্মকে সৎ এবং নীতিনিষ্ঠ হতে সাহায্য করবে। কর্মক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে হবে, যাতে তৈলমর্দকরা অন্যায় সুবিধা না পায়।

তৈলমর্দন একধরনের সামাজিক ব্যাধি, যা ব্যক্তি ও সমাজের অগ্রগতির পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। এটি কেবলমাত্র সাময়িক সুবিধা প্রদান করে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব সুদূরপ্রসারী। ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রের যৌথ প্রচেষ্টায় এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাই তৈলমর্দনের পরিবর্তে নৈতিকতা, সৎকর্ম ও যোগ্যতার ভিত্তিতে একটি সুষম সমাজ গঠনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তৈলমর্দন একটি সামাজিক ব্যাধি, যা সমাজের বিকাশ এবং নৈতিকতার উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। এটি ক্ষণস্থায়ী সুবিধা প্রদান করলেও দীর্ঘমেয়াদে ব্যক্তি এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের সবার উচিত, তৈলমর্দনের বদলে সৎকর্ম, যোগ্যতা এবং ন্যায়বিচারের উপর গুরুত্বারোপ করা। এ ধরনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সমাজকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে একটি সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে তুলবে।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও সংগঠক, চাঁদপুর।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।