খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতায় আমাদের করণীয়

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫, ১২:৩৫ অপরাহ্ণ
জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতায় আমাদের করণীয়

গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ। এটি যেমন জনমত গঠনে ভূমিকা রাখে, তেমনি সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিকেও প্রভাবিত করে। আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজে সাংবাদিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো বৈচিত্র্য, সাম্য ও মানবাধিকারের প্রশ্নে সত্যনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও সংবেদনশীল প্রতিবেদন প্রকাশ করা। জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতা এই বৃহত্তর নৈতিক ও পেশাগত দায়িত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বর্তমানে নারী, তৃতীয় লিঙ্গ এবং অন্যান্য লিঙ্গ বৈচিত্র্যের মানুষ সমাজে নানা ধরনের বৈষম্য, নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হন। সাংবাদিকতা যখন এই বৈষম্যগুলোকে তুলে ধরার পরিবর্তে তা আরও তীব্র করে তোলে, তখন সেটি সমস্যার অংশ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে, সাংবাদিকতা যদি জেন্ডার সংবেদনশীল হয়, তবে সেটি সমাজ পরিবর্তনের শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতা হলো এমন একটি পদ্ধতিগত দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে সংবাদ সংগ্রহ, লেখা, উপস্থাপন এবং বিশ্লেষণের প্রতিটি পর্যায়ে লিঙ্গ বৈচিত্র্য, সমতা ও মর্যাদার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। এটি কেবল পুরুষ-নারী বিভাজনের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সকল লিঙ্গ পরিচয় ও অভিজ্ঞতাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এই ধরনের সাংবাদিকতা সমাজে প্রচলিত লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য, সহিংসতা ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে চায়। জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতা তথ্য উপস্থাপন করে এমনভাবে, যা কাউকে অপমান করে না, লিঙ্গ পরিচয়কে হাস্যরসের বিষয় করে তোলে না, এবং যা নারীর কিংবা অন্যান্য লিঙ্গ পরিচয়ের ব্যক্তির প্রতি অবমাননাকর ভাষা বা দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করে না।
বাংলাদেশসহ অনেক দেশে গণমাধ্যমে জেন্ডার সংবেদনশীলতা এখনো পুরোপুরি গৃহীত হয়নি। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, অনলাইন পোর্টাল এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও আমরা প্রায়ই দেখি। ভিকটিম-ব্লেমিং-ধর্ষণ বা যৌন সহিংসতার ঘটনার বর্ণনায় অনেক সময় ভুক্তভোগীকেই দোষারোপ করা হয়। তার পোশাক, চলাফেরা বা নিয়ম না মানার বিষয় তুলে ধরা হয়। ক্লিকবেইট শিরোনাম ও যৌন উত্তেজক উপস্থাপনা। নারীর শরীর বা যৌনতা নিয়ে চটকদার শিরোনাম, ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করা হয় যা মূল বিষয় থেকে পাঠক/দর্শককে অন্যদিকে আকর্ষণ করে। তৃতীয় লিঙ্গ/হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করা হয়। এখনও অনেক সংবাদমাধ্যমে উভলিঙ্গ, হিজড়া সমস্যা বা পুরুষ-না-নারী-না ধরনের শব্দ ব্যবহার করা হয় যা গভীরভাবে অসম্মানজনক। নারীর সফলতাকে পারিবারিক অবদানের মাধ্যমে খাটো করা হচ্ছে। একজন নারী যখন কোনো ক্ষেত্রে সফল হন তখন সেটিকে তাঁর স্বামী বা পরিবারের সহযোগিতার ফল হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়।
তাই জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতা বাস্তবায়নে আমাদের বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নিতে হবে। সাংবাদিকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সংবাদ কর্মীদের জেন্ডার বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। কীভাবে লিঙ্গ বৈষম্য ঘটে কোন শব্দগুলো অবমাননাকর বা স্টেরিওটাইপ তৈরি করে এসব বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা দরকার। জেন্ডার-বিষয়ক নীতিমালা মেনে চলার জন্য নিউজরুমে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকা উচিত। আমাদের ভাষা ও উপস্থাপনা সচেতন হতে হবে। সংবাদে কোন শব্দ ব্যবহারে নারীর প্রতি অবমাননা হবে সেটি ত্যাগ করতে হবে। সংবাদ পরিবেশনে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ ভাষা ব্যবহার করা উচিত। যেমন-অভিযুক্ত ব্যক্তি বলা যেতে পারে ধর্ষক, ধর্ষিতার ছবি প্রকাশ না করা যেতে পারে। আমরা প্রায়ই সময় দেখি দোষী প্রমাণিত না হওয়ার আগেই ধর্ষক, হত্যাকারী, মাদক ব্যবসায়ী, পতিতা, চোর, ডাকাত ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়। এসব শব্দ দোষী প্রমাণ সাপেক্ষে উপস্থাপন করা যেতে পারে।
আবার অন্য দিকে নারী চিকিৎসক বা মহিলা ইঞ্জিনিয়ার বলার পরিবর্তে শুধু চিকিৎসক বা ইঞ্জিনিয়ার বলে সংবাদে উপস্থাপন করলে উহা শ্রুতিমধুর ও যথার্থতা প্রকাশ প্রায়। লিঙ্গ বৈচিত্র্যের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদমাধ্যমে নারী, তৃতীয় লিঙ্গ, লিঙ্গ-বিচারভিত্তিক সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। টক শো, সাক্ষাৎকার, প্যানেল আলোচনায় শুধু পুরুষদের না এনে নারী ও অন্যান্য লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষদেরও সমান সুযোগ দিতে হবে। প্রসঙ্গভিত্তিক গভীরতর বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে হবে। ধর্ষণ, যৌন হয়রানি বা বৈষম্যের ঘটনাগুলো কেবল ঘটনাভিত্তিক না করে তার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আইনি প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে পরিবেশন করতে হবে। নারী ও লিঙ্গ সংখ্যালঘুদের সাফল্য, সংগ্রাম ও অবদান নিয়েও নিয়মিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। যে কোনো মিডিয়ায় সম্পাদকীয় দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।
অনেক সময় সাংবাদিক সঠিক রিপোর্ট তৈরি করলেও সম্পাদকীয় পর্যায়ে সেটি পরিবর্তিত হয়ে যায়। তাই সম্পাদকদেরও এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সংবেদনশীল হতে হবে। সাংবাদিকদের লেখা রিপোর্টে কেউ যদি জেন্ডারবিরোধী উপাদান টেনে আনেন, সেটি যেন সম্পাদনা করে অপসারণ করা হয়। নৈতিকতা ও মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে কাজ করতে হবে। সাংবাদিকদের উচিত ‘ডু নো হার্ম’ নীতিতে বিশ্বাস রাখা। কোনো সংবাদের ফলে যেন ভুক্তভোগীর দ্বিতীয়বার ক্ষতি না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সবার মর্যাদা ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য সাংবাদিকদের প্রতিটি শব্দ, ছবি ও ব্যাখ্যার প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে।

যে কোনো ঘটনা বিশ্লেষনে ইতিবাচক হতে হবে। তবে আশার আলো হলো-বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যম ইতোমধ্যে জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতার দিকে ধাবিত হয়েছে। যেমন : প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র (ইঘঔঈ) জেন্ডার সচেতনতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কিছু অনলাইন পোর্টাল নারী নেতৃত্ব, কর্মজীবী নারীর সংগ্রাম উদ্যোক্তাদের জীবন-জীবিকা ও তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। তৃতীয় লিঙ্গ শব্দ না লিখে হিজড়া, মহিলা শব্দ না লিখে নারী শব্দে বদলে ফেলা হয়েছে অনেক পত্রিকায়।
একজন সাংবাদিক কেবল তথ্য পরিবেশনের কাজ করেন না; তিনি সমাজ গঠনেরও অংশ। একজন সত্যনিষ্ঠ ও সংবেদনশীল সাংবাদিক সমাজে ইতিবাচক আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেন। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে এবং নীতিনির্ধারণে সাংবাদিকতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতা কেবল একটি নৈতিক দাবি নয়, এটি মানবিকতার এবং পেশাগত দায়িত্বের অংশ। সাংবাদিকদের উচিত লিঙ্গ বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, সংবেদনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা। এর মাধ্যমে গণমাধ্যম সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবে এবং একটি অধিকতর ন্যায়ভিত্তিক ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনে অবদান রাখতে পারবে।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় মাস্টার্স (ব্যাচ-২০২১), প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ।

উত্তাল সাগর, শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ
উত্তাল সাগর, শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শক্তি সঞ্চয় করছে। এটি ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৮ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সোমবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা অথবা রাত নাগাদ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর (পুন.) ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্য কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।

হাঁটা বন্ধ করবেন না, কেনো হাঁটবেন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ
হাঁটা বন্ধ করবেন না, কেনো হাঁটবেন

হাঁটা বন্ধ করবেন না যেন, মস্তিষ্ক নয়, ডিমেনশিয়া শুরু হয় আপনার পা থেকে! বিশ্বজুড়ে বয়স্ক মানুষের অক্ষমতা ও নির্ভরশীলতার প্রধান কারণ হিসেবে ডিমেনশিয়া এখন এক ভয়াবহ বাস্তবতা। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন, এবং প্রতিবছর নতুন করে আরও প্রায় ১ কোটি মানুষ এতে ভোগেন। অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, মস্তিষ্ক সচল রাখাই ডিমেনশিয়া প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। কিন্তু ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) প্রশিক্ষিত স্নায়ুশল্য বিশেষজ্ঞ ডা. অরুণ এল. নাইক জানালেন চমকপ্রদ তথ্য—ডিমেনশিয়ার সূত্রপাত নাকি মস্তিষ্কে নয়, পা থেকেই!
ডিমেনশিয়া কী?
ডিমেনশিয়া কোনো একক রোগ নয়; এটি স্মৃতি, চিন্তাশক্তি ও দৈনন্দিন কাজের সক্ষমতাকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করে এমন একাধিক স্নায়ুরোগের সামষ্টিক নাম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও জটিল হয়ে ওঠে এবং জীবনের মান নষ্ট করে দেয়। তবে সময়মতো নির্ণয়, যত্নশীল পরিচর্যা, জীবনযাপনে পরিবর্তন ও চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর অবস্থা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডিমেনশিয়া শুরু হয় পা থেকে
ডা. নাইক এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আপনি কি জানেন, ডিমেনশিয়া আসলে শুরু হয় আপনার পা থেকে? শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা পায়ের পেশিকে দুর্বল করে, যার ফলে স্যারকোপেনিয়া বা পেশি ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে। এখানেই শুরু হয় বিপদ। গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্বল পায়ের কারণে জ্ঞানগত ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায় এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, শরীরের সক্রিয় পেশি এমন রাসায়নিক উৎপাদন করে যা মস্তিষ্ককে সচল রাখে। এই রাসায়নিকগুলোর নাম ব্রেইন-ডিরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF), যা মস্তিষ্কের স্মৃতিনির্ভর অংশ হিপোক্যাম্পাসে সংযোগ বৃদ্ধি করে। শক্তিশালী পা শুধু ভারসাম্য বজায় রাখে না, বয়স বাড়লেও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমায়। “৬৫ বছরের পর পড়ে যাওয়াই সবচেয়ে বিপজ্জনক,” বলেন ডা. নাইক।
তিনি ২০২০ সালের Neurology সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণার উদাহরণ দেন, যেখানে দেখা গেছে, যাদের হাঁটার গতি কম, তাদের মস্তিষ্কের আকারও ছোট এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকি বেশি। “হাঁটা শুধু শরীরচর্চা নয়, এটি পুরো মস্তিষ্কের এক অনুশীলন,” যোগ করেন তিনি।
কীভাবে হাঁটা মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখে
হাঁটা এমন এক সহজ ব্যায়াম যা শরীর ও মস্তিষ্ক দুটিকেই সক্রিয় রাখে। ডা. নাইক বলেন, “প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্ত থাকে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব, সেরিবেলাম, স্পাইনাল কর্ড ও স্নায়ু প্রতিক্রিয়ার সমন্বয়।” হাঁটা রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ সরবরাহ করে এবং টক্সিন দূর করে। তিনি আরও বলেন, “হাঁটার ধরনে বা ভারসাম্যে পরিবর্তন দেখা গেলে সেটি মস্তিষ্কের আগাম সতর্ক সংকেত। এটি প্রায়ই স্মৃতি সমস্যার বছরখানেক আগেই দেখা দেয়।” হাঁটা নিউরোপ্লাস্টিসিটির এক জীবন্ত উদাহরণও বটে। “হাঁটার সময় শরীরে BDNF সক্রিয় হয়, যা নিউরনগুলোর সংযোগ শক্তিশালী করে,” বলেন ডা. নাইক।
কীভাবে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করবেন ডা. নাইক কয়েকটি সহজ অভ্যাসের পরামর্শ দিয়েছেন, যা নিয়মিত চর্চা করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বজায় থাকে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন। ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম যেমন এক পায়ে দাঁড়ানো বা সরলরেখায় হাঁটার অভ্যাস করুন। হাঁটার সময় কথা বলা বা হালকা মানসিক কাজ করুন—এটি মস্তিষ্কের সমন্বয় ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত পায়ের পেশির ব্যায়াম করুন, এটি মস্তিষ্কের জন্য একপ্রকার ‘বিমা’।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা পরিহার করুন; প্রতি ঘণ্টায় কিছুটা নড়াচড়া করুন। তিনি বলেন, “যখন আপনার পা ধীরে ধীরে কাজ হারায়, তখন মস্তিষ্কও তার পথ অনুসরণ করে। আপনার হাঁটার গতি বজায় রাখুন, তাহলেই সুরক্ষিত থাকবে মস্তিষ্ক।”
ডা. নাইক আরও পরামর্শ দেন, পেশির গঠন রক্ষায় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। তার মতে, কখনোই দেরি হয়ে যায় না। “গবেষণায় দেখা গেছে, ষাট বছর বয়সেও হাঁটা ও ব্যায়াম শুরু করলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। মনে রাখবেন, শক্ত পা মানেই তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক। স্যারকোপেনিয়া মাথা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই সচেতন হোন—চল্লিশের কোঠা থেকেই শুরু করুন।”
সর্বোপরি, সক্রিয় থাকা শুধু চলাফেরার বিষয় নয়; এটি মস্তিষ্ককে তরুণ রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম ও সুষম খাদ্য—এই তিন অভ্যাসই হতে পারে বার্ধক্যের ডিমেনশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ।

বন্ধ হচ্ছে সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ
বন্ধ হচ্ছে সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। সোমবার (২৭ অক্টোবর) এ-সংক্রান্ত এক পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ। পরিপত্রে বলা হয়েছে, কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চাইতে পারবে না। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, চলমান সংকোচনমূলক নীতির প্রেক্ষাপটে গত কয়েক বছরের মতো সংশোধিত বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অব্যাহত রাখতে হবে। এর আওতায় বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি কেনাসহ বেশ কিছু ব্যয় বন্ধ থাকবে। এ নীতি অনুসরণ করে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন আগামী ৯ নভেম্বরের মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই মূল বাজেটে বরাদ্দের মধ্যেই থাকতে হবে। কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। তবে সরকারের অগ্রাধিকার কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রয়োজনে মূল বাজেটে বরাদ্দের ব্যয়সীমার মধ্যে থেকে একই ধরনের বিভিন্ন কাজে বরাদ্দ কমানো বা বাড়ানো যাবে। কিন্তু উন্নয়ন ব্যয়ের অর্থ অব্যয়িত থাকবে বলে অনুমিত হলে ওই অর্থ কোনোক্রমেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।
এতে আরও বলা হয়, সংশোধীত বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আওতায় সরকারি খরচে সব ধরনের বৈদেশিক ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিদেশ ভ্রমণ করা হবে। তা ছাড়া কেনা যাবে না গাড়ি, জাহাজ ও বিমান। তবে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে পরিচালন বাজেটের আওতায় ১০ বছরের পুরোনো গাড়ির প্রতিস্থাপন হিসেবে নতুন গাড়ি কেনা যাবে। এমনকি পরিচালন বাজেটে আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচও বন্ধ রাখতে হবে। তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় শর্তসাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে। আরও কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় স্থগিত রাখা হয়েছে আবার গুরুত্ব বিবেচনায় এসব ক্ষেত্রে ব্যয়ে কিছুটা ছাড়ও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখাসহ ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে সরকারি ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই কোনো খাতে ব্যয় সাশ্রয়ের সুযোগ রয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে সংশোধিত বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। সাধারণত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিশেষ করে মার্চে সরকার জাতীয় বাজেট সংশোধন করে। তবে এবার ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় আগেভাগে বাজেট সংশোধন করা হচ্ছে।